ম্যালেরিয়ার পরজীবীর নাম কী ও ম্যালেরিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত
ম্যালেরিয়ার পরজীবীর নাম কী, তা জানা খুবই প্রয়োজন। ম্যালেরিয়া এক প্রকার পরজীবী দ্বারা সংঘটিত সংক্রামক রোগ। স্ত্রী এনোফিলিস মশা দ্বারা ম্যালেরিয়া ছড়ায়। চলুন, ম্যালেরিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
স্ত্রী এনোফিলিস মশা দ্বারা এই ম্যালেরিয়া ছড়ায়। তাই আমাদেরকে মশার কামড় থেকে বিরত রাখার জন্য যেগুলো পদক্ষেপ নেওয়া দরকার সেগুলো পদক্ষেপ নিতে হবে। চলুন, ম্যালেরিয়ার পরজীবীর নাম কী, সম্পর্কে জানতে আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
পোস্টসূচিপত্রঃম্যালেরিয়ার পরজীবীর নাম কী? ম্যালেরিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত
ম্যালেরিয়া কি
ম্যালেরিয়া এক প্রকার পরজীবী দ্বারা সংঘটিত সংগ্রামক রোগ। স্ত্রী এনোফিলিস মশা দ্বারা ম্যালেরিয়া ছড়ায়। পৃথিবীর দরিদ্র দেশগুলোর মধ্যে ম্যালেরিয়া আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বেশি।
ম্যালেরিয়া পরজীবীর নাম কি, জেনে নিন
ম্যালেরিয়ার পরজীবীর নাম কী, তা হল ম্যালেরিয়া রোগটি প্লাজমোডিয়াম এককোষীয় পরজীবী দ্বারা গঠিত। প্লাজমোডিয়াম পরজীবী মানুষের মধ্যে সংক্রমণ ঘটায়। তাই বলা যেতে পারে ম্যালেরিয়া পরজীবের নাম হলো প্লাজমোডিয়াম। কয়েক ধরনের প্লাজমোডিয়াম রয়েছে তার মধ্যে প্লাজমোডিয়াম ফ্যালসেপিরাম পরজীবী সবচাইতে বেশি প্রভাবিত করে।
ম্যালেরিয়া কত প্রকার ও কি কি
ম্যালেরিয়া সাধারণত প্লাজমোডিয়াম পরজীবী দ্বারা গঠিত।সেই হিসেবে বলা যেতে পারে ম্যালেরিয়া চার ভাগে ভাগ করা হয়েছে। নিম্নে দেওয়া হল
- প্লাজমোডিয়াম ফ্যালসেপিরাম
- প্লাজমোডিয়াম ভাইভ্যাক্স
- প্লাজমোডিয়াম ওভাল
- প্লাজমোডিয়াম ম্যালেরি
ম্যালেরিয়া রোগের কারণগুলো হলো
মশার কামড় ম্যালেরিয়া পরজীবী বাহক মশা যে সকল মানুষকে কামড়াবে তাদের মাঝেই ম্যালেরিয়া হতে পারে
ভ্রমণ যেসব অঞ্চলে ম্যালেরিয়ার প্রভাব বেশি সেসব অঞ্চলে আপনার ভ্রমণ না করাই উত্তম।বিশেষ করে পাহাড়ি অঞ্চল গুলোতে পার্বত্য চট্টগ্রাম, সিলেট, কক্সবাজার এ অঞ্চলের সবচাইতে ম্যালেরিয়ার পাদুর্ভাব বেশি।
সূচ ব্যবহার ম্যালেরিয়া আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত নেওয়ার জন্য যে সূচ ব্যবহার করা হয়।সেটা যদি আবার সুস্থ মানুষের জন্য ব্যবহার করা হয়,তাহলে ম্যালেরিয়া আক্রান্ত হতে পারে।
ম্যালেরিয়া কিভাবে ছড়ায় জানুন
প্লাসমোডিয়াম জাতীয় পরজীবীর শরীরে প্রবেশ করলে ম্যালেরিয়া রোগ হয়।এই প্লাজমোডিয়াম একজন রোগী হতে আর একজন সুস্থ লোকের শরীরে একপ্রকার এনোফিলিস জাতীয় স্ত্রী মশা দ্বারা সংক্রমিত হয়।
ভেক্টরমশা ম্যালেরিয়া রোগীকে কামড়ানোর সময় রক্তের সাথে পরজীবী গ্রহণ করে এবং ১০ থেকে
১৪ দিনের মধ্যে মশার দেহে জীবাণুর বংশ বৃদ্ধি হয় এবং মশাটি সংক্রমণক্ষম হয়ে পড়ে। ম্যালেরিয়ার পরজীবীর নাম কী, এ সম্পর্কে আমাদের জানা দরকার।
ম্যালেরিয়া মশা যদি আপনাকে কামড়ায় তাহলে আপনি ৮ থেকে ১০ দিনের মধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়বেন। অসুস্থ ব্যক্তি চিকিৎসা প্রাপ্ত না হলে বাহক রোগীতে পরিণত হয় কামড়াবার সময় ম্যালেরিয়া পরজীবী গ্রহণ করে। চলতে থাকে আমাদের দেশের সারা বছরই কমবেশি ম্যালেরিয়া বিস্তার লাভ করে থাকে। তবে বর্ষা মৌসুমের শুরু ও শেষ দিকে ম্যালেরিয়া বিস্তার বেশি হয়ে থাকে।
ম্যালেরিয়া রোগের উপসর্গ কি কি
ম্যালেরিয়া রোগ ধরা পড়লে যে উপসর্গ লক্ষ্য করা যায় সেগুলি হচ্ছে
- সাধারণত ডায়রিয়া হয়
- জ্বর হয়
- ক্ষুধা মন্দ হয়
- অল্প প্রবল অনিহা
- হৃদপিন্ডের ব্যথা অবস্থিত করে
- অত্যন্ত দুর্বল হয়
- শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে সমস্যা
- স্মৃতিশক্তি কমে যায়
জটিলতা বিহীন ম্যালেরিয়া
ম্যালেরিয়া প্রবণ এলাকায় যদি কোন রোগীর গত ৪৮ ঘন্টার মধ্যে জ্বর বা জ্বরের ইতিহাস থাকে এবং জ্বরের অন্য কোন গ্রহণযোগ্য কারণ না থাকে, তখন ফ্যালসিপেরাম ম্যালেরিয়া হিসাবে ধারণা করা হয়ে
থাকে। এক্ষেত্রে রোগীকে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠাতে হবে। যদি ব্লাড ইসলাইড এক্সামিনেশন বা রেপিড ডায়াগনস্টিক টেস্ট ম্যালেরিয়ার জন্য পজেটিভ হয়, তবে রোগীকে আনকমপ্লিকেটেড ম্যালেরিয়া হিসেবে চিহ্নিত করতে হয়।
ম্যালেরিয়া রোগের লক্ষণ গুলো কি
ম্যালেরিয়া উপদ্রুত এলাকায় কোন রোগের গত ৪৮ ঘন্টার বেশি জ্বর অথবা জ্বরের ইতিহাসের সাথে উল্লেখিত লক্ষণসমূহের যেকোনো এক ব্য একাধিক লক্ষণ উপস্থিত থাকলে তাকে মারাত্মক ম্যালেরিয়া বলে সনাক্ত করতে হবে।
- রোগী অস্বাভাবিক আচরণ করছে বা অজ্ঞান অথবা খিচুনি হচ্ছে
- দাঁড়াতেও হাঁটতে পারছে না
- বমি হচ্ছে, মুখে খেতে পারছে না
- মারাত্মক রক্তস্বল্পতায় ভুগছে
- শরীরের যে কোন স্থান থেকে রক্তক্ষরণ হচ্ছে
- শ্বাসকষ্ট আছে
- প্রসবের পরিমাণ খুব কমে যাওয়া
- এ সকল রোগীকে জরুরি ভিত্তিতে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠাতে হবে
ম্যালেরিয়া হলে করণীয় গুলো কি
- দ্রুত রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা প্রদান
- মশার কামড় হতে আত্মরক্ষা করা
- এলাকাতে মশার জন্ম ও বংশবিস্তার রোধ করা
- দ্রুত মহামারী চিহ্নিত করে তা নিয়ন্ত্রণ করা
- ঘুমানোর সময় মশারি ব্যবহার করা
- মশা তাড়াবার ধোয়া যেমন মশার কয়েল ধোয়া ইত্যাদি ব্যবহার করা
- যতটুকু সম্ভব শরীর ঢেকে রাখা ফুল হাতা শার্ট বা জামা পরিধান ইত্যাদি
- সম্ভব হলে সবার ঘরে দরজা জানালায় প্রুফ নেট ব্যবহার করা
এডিস মশার বংশবিস্তার রোধে কোথাও জমানো পানি থাকলে তা পরিষ্কার করতে হবে ও প্রতিরোধ
ম্যালেরিয়া রোগ এবং এর বিস্তার সম্বন্ধে জনপ্রতিনিধি ও জনগণকে বাস্তব ধারণা দিয়ে প্রতিরোধ কার্যক্রমে সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা
- যেমন অপ্রয়োজনে ডোবা, গর্ত , নর্দমা ইত্যাদি (যেখানে মশা ডিম পাড়ে এবং বংশবিস্তার করে) ভরাট করে ফেলা
- স্থায়ী আবদ্ধ জলা চাষ করা ও পানির কিনারায় ঘাস পরিষ্কার করা
- বিশেষ ক্ষেত্রে মশা ধ্বংসকারী কীটনাশক সিটির মশা ধ্বংস করা
- বসতবাড়ি ও চারপাশে বেড়ে ওঠা অপ্রয়োজনীয় ঝোপঝাড় কেটে পরিষ্কার করা
- ম্যালেরিয়া উপ দ্রুত অঞ্চলের জনগণকে উপযুক্ত স্বাস্থ্য শিক্ষা প্রদান করা
- বিভিন্ন প্রকার পোস্টার , ব্যানার , বিলবোর্ড ও অন্যান্য প্রচার মাধ্যমের সহায়তা নেওয়া।
- এবং জানালার সাথে মশা মারার সুন্দর নেট পাওয়া যায় সেই নেট লাগিয়ে রাখবেন
- রাতে ঘুমানোর সময় বা ঘরের ভিতর মশা মারা ক্রিম অথবা ধূপ লাগাতে পারেন
ম্যালেরিয়া হলে কি খাবার খাওয়া উচিত জেনে নিন
- ম্যালেরিয়া রোগীর শরীর প্রোটিনের প্রয়োজনীয়তা বাড়ায় মাংস , মাছ , ডিম , পনির সহায়তা প্রোটিন প্রাপ্তি করা যাবে
- প্রচুর পরিমাণে ফল এবং সবজি খাওয়া উচিত। ফলে ভিটামিন খনিজ এবং প্রয়োজনীয় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় রোগের সময়ে স্বাস্থ্য বজায় রাখে
- পানি, ম্যালেরিয়া রোগের শরীর প্রতিদিন যত্ন নেওয়া উচিত তারা পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে যাতে শরীরের তরলতা বজায় রাখা যায়
- শীতকালীন সূর্যালোকে থেকে ভিটামিন ডি প্রাপ্তি করা যেতে পারে
- আর এর জন্য হাই ক্যালোরি খাবার গ্রহণ করা উচিত জলের সাথে মিশিয়ে খাওয়া উচিত।
এছাড়াও রোগীদের ডাক্তারের পরামর্শ নরম করা অনুসরণ করা উচিত। যাতে করে তারা সঠিক পুষ্টি সম্পর্কে জানে এছাড়াও ম্যালেরিয়া রোগের সঠিক চিকিৎসা এবং পরামর্শের জন্য নিয়মিত ভাবে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করা উচিত।
ম্যালেরিয়া পরীক্ষার প্রক্রিয়া
- রক্ত পরীক্ষা ম্যালেরিয়া পরীক্ষায় একটি সাধারণ পদ্ধতি যা ব্যবহার করা হয়। রোগীর রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে রক্ত পরীক্ষা দ্বারা ম্যালেরিয়া জীবাণুগুলো উপস্থিতি ও প্রকার নিশ্চিত হয়। এই পরীক্ষার রক্তের নমুনা লেভেল করা এবং জীবণু গুলো পরীক্ষা করা হয়।
- টিস্যু পরীক্ষা কৃষি ক্ষেত্রে ম্যালেরিয়ার পরীক্ষার জন্য অন্যান্য নমুনা ব্যবহার করা হতে পারে। যেমন শরীরে অন্যান্য সংস্থাগুলো বা প্রতিস্থাপনের নমুনা নমুনাগুলো থেকে ম্যালেরিয়া জীবন গুলো প্রতিরোধ হতে পারে।
- রোগীর সাধারণ অবস্থা ও রোগের ইতিহাস ম্যালেরিয়া পরীক্ষার করার সময় রোগীর সাধারণ অবস্থা এবং রোগের ইতিহাস গভীরভাবে বিবেচনা করা হয় এ তথ্যের ভিত্তির ম্যালেরিয়া পরীক্ষা নির্ণয় হতে পারে।
ম্যালেরিয়া রোগের চিকিৎসা সমূহ
ম্যালেরিয়া চিকিৎসা প্রাথমিকভাবে জ্বর থেকে রোগীকে উদ্ধার করা এবং প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করা চিকিৎসার জন্য এন্টি ম্যালেরিয়া ও প্রতিরোধামূলক ঔষধ ব্যবহৃত করা চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে চিকিৎসা এবং আত্মীয়কে মানসিকভাবে ও শারীরিকভাবে সাহায্য করা।
উপসংহারঃ ম্যালেরিয়ার পরজীবীর নাম কী ও ম্যালেরিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত
ম্যালেরিয়া একটি জীবাণুতে সংক্রমিত রোগ যা মশার কামড় দ্বারা ছড়ায় এ রোগের প্রতিরোধ চিকিৎসা এবং ব্যবস্থাপনার জন্য বিভিন্ন উপায় আছে যা ম্যালেরিয়ার প্রতি লড়তে সহায়ক হবে। আশা করি ম্যালেরিয়ার পরজীবীর নাম কী, বুঝতে পেরেছেন। যদি পোস্টটি ভালো লাগে, তাহলে আপনি আপনার বন্ধুদের নিকট পোস্টটি শেয়ার করুন। ধন্যবাদ
এম আর মাহমুদ ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url