ছোট বাচ্চাদের পাতলা পায়খানা হলে করণীয় কি, জেনে নিন

পরিবারের কারো ডায়রিয়া বা ছোট বাচ্চাদের পাতলা পায়খানা হলে করণীয় কি, এ সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। ২৪ ঘন্টায় তিন বা তার বেশি বার পাতলা পায়খানা হওয়াকে ডায়রিয়া বলে। যদি শিশুর ডায়রিয়া দুই সপ্তাহ বা তার বেশি সময় ধরে চলতে থাকে, তাহলে শিশুর দীর্ঘমেয়াদী ডায়রিয়া বলা হয়।
ছবি
আপনার শিশুর ডায়রিয়ার লক্ষণ যদি জটিল আকার ধারণ করে যেমন; চোখ বসে গেছে,পেটের চামড়া টেনে ধরে ছেড়ে দিলে খুব ধীরে ধীরে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যায়, এ সকল সমস্যা যদি দেখা দেয় তাহলে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।

পোস্টসূচিপত্রঃছোট বাচ্চাদের পাতলা পায়খানা হলে করণীয় কি, বিস্তারিত জানুন

শিশুর ডায়রিয়ার লক্ষণ

ছোট বাচ্চাদের পাতলা পায়খানা বা শিশুর ডায়রিয়ার লক্ষণ গুলো বুঝবেন কিভাবে নিম্নে সে বিষয়ে বর্ণনা করা হলো,
  • ২৪ ঘন্টা তিন বা তার বেশিবার পাতলা পায়খানা হাওয়াকে ডায়রিয়া বলে
  • একাধিকবার বমি হতে পারে
  • পেট ব্যাথা, পেট ফাঁপা দেওয়া
  • রক্ত মিশ্রিত পায়খানা হতে পারে
  • এই ডায়রিয়া দুই সপ্তাহ যাবত হতে পারে
পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া আক্রান্ত শিশু পানি পান করতে পারেনা, পানি গিলতে পারে না ,
যদি শিশু আগ্রহের সাথে পানি পান করছে, এজন্য কাপ বা গ্লাস ধরতে চায় অথবা পানি দিলে মুখ খুলে বা পানি সরিয়ে নিলে কাঁদে। এর অর্থ শিশু পানি পান করে, এটা পানি স্বল্পতা বা শিশুর ডায়রিয়ার লক্ষণ। 
যদি শিশুটির স্বাভাবিকভাবে পানি পান করে বা মা যদি পানি পান করাতে পারে তাহলে শিশুর পানি স্বল্পতা নেই।
পেটের চামড়া টেনে ধরে ছেড়ে দিয়ে তা পূর্বস্থানে ফিরে যাওয়া, যাচাই করুন বা পানির স্বল্পতা যাচাই করতে পেটের চামড়া পরীক্ষা করুন।

পেটের চামড়া টেনে ধরুন এবং এক সেকেন্ড পর ছেড়ে দিন
ডায়রিয়া বা ছোট বাচ্চাদের পাতলা পায়খানা হলে শিশুর পেটের চামড়া পরীক্ষা করার জন্য শিশু এমন ভাবে ধরতে হবে, যাতে শিশু চিত হয়ে মায়ের কোলে শুয়ে থাকে।

নাভি ও পেটের পাশের মধ্যবর্তী একটি জায়গা বেছে নিন। এখন বৃদ্ধাঙ্গুল ও তর্জনী আঙ্গুলের সাহায্যে পেটের চামড়া এক সেকেন্ড টেনে ধরুন এবং এক সেকেন্ড পর চামড়া ছেড়ে দিন। চামড়া টানার সময় বৃদ্ধাঙ্গুলের অগ্রভাগ ব্যবহার করবেন না। কারণ এতে শিশু ব্যথা পাবে, চামড়া টেনে ছেড়ে দেওয়ার পর লক্ষ্য করুন। চামড়া কত তাড়াতাড়ি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে 

যায়। চামড়া যদি খুব ধীরে ধীরে ফিরে আসে অর্থাৎ ফিরে আসতে দুই সেকেন্ডের বেশি সময় নেয়। তাহলে চামড়া ফিরে আসা খুব ধীরে ধীরে এটা চরম পানি স্বল্পতার একটি লক্ষণ। যদি পেটের চামড়া টেনে ধরে ছেড়ে দিলে তা তাৎক্ষণিকভাবে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে না যায় কিন্তু দুই সেকেন্ডের আগে যায় সে ক্ষেত্রে চামড়া ধীরে ধীরে ফিরে যাচ্ছে এবং চামড়া ধীরে ধীরে ফিরে যাওয়া কিছু পানি স্বল্পতার একটি লক্ষণ। পেটের চামড়া টেনে ছেড়ে দিলে সাথে সাথে ফিরে গেলে তা স্বাভাবিক।

উপরোক্ত লক্ষণ গুলো দেখা দিলে বুঝতে হবে শিশুর ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা হয়েছে। আসলে ছোট বাচ্চাদের পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া যদি স্বাভাবিক হয় তাহলে খাওয়ার স্যালাইন খাওয়াতে হবে। আর যদি মারাত্মক লক্ষণ দেখা দেয় তাহলে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে।

দীর্ঘমেয়াদী ডায়রিয়া কাকে বলে

অনেকেই দীর্ঘমেয়াদী ডায়রিয়া কাকে বলে জানেনা। দীর্ঘমেয়াদি ডায়রিয়ায় ১৪ দিন বা তার বেশি যদি ডায়রিয়া হয় তাকে দীর্ঘমেয়াদী ডায়রিয়া বলা হয়। দীর্ঘমেয়াদি ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশুকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে যেতে হবে।

ডায়রিয়া আক্রান্ত যে শিশুর মলের রক্ত আছে সে আমাশয় ভূগছে। এই শিশুকে কোট্রামাক্সাজল বড়ি দিয়ে বাড়িতে চিকিৎসা এবং বাড়িতে যত্ন নেওয়া যেতে পারে। আর আপনি কোট্রামাক্সাজল ট্যাবলেট কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে সংগ্রহ করতে পারবেন।

ডায়রিয়া আক্রান্ত শিশু পান করতে পারেনা বা কম পান করে অথবা যার চামড়া টেনে ছেড়ে দিলে খুব ধীরে ধীরে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যায় অথবা নেতিয়ে পড়েছে বা অজ্ঞান বা চোখ বসে গেছে এই চারটি লক্ষণের যে কোন দুটি লক্ষণ থাকলে, সেই শিশুর চরম পানি স্বল্পতা আছে। এই শিশুকে হাসপাতালে পাঠাতে হবে।

ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশু আগ্রহের সাথে পান করে অথবা পেটের চামড়া টেনে ছেড়ে দিলে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যায়, অস্থির বা খিটখিটে বা চোখ বসে গেছে এই চারটি লক্ষণের যেকোনো দুটি লক্ষণ থাকলে, সেই শিশুর কিছু পানি স্বল্পতা আছে।এই শিশুকে চিকিৎসার জন্য নিকটবর্তী স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে যান অথবা খাবার স্যালাইন খাওয়াতে থাকুন।

যে শিশুর পানি স্বল্পতার লক্ষণ নেই এবং ডায়রিয়ার মেয়াদ দুই সপ্তাহের কম তাকে বাড়িতে বেশি বেশি তরল খাবার,খাবার স্যালাইন ও জিংক বড়ি দিন। এক্ষেত্রে অবশ্যই আপনার শিশুর যত্ন নেবেন।
দীর্ঘমেয়াদী ডায়রিয়ায়য় আক্রান্ত সকল শিশুকে নিকটবর্তী স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া।

তাহলে ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা হলে করণীয় হলো; ৬ মাস থেকে ৫ বছর বয়সী সকল ডায়েরিয়া আক্রান্ত শিশুকে জিংক খাওয়াবেন ২০ মিলিগ্রাম একটি ট্যাবলেট রোজ একবার পানিতে গুলে ১০ দিন খাওয়াতে থাকুন। ডায়রিয়া ভালো হয়ে গেলেও দশ দিন পর্যন্ত বড়ি খাওয়াতে হবে।

শিশুর পানি শূন্যতার লক্ষণ

পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়ায় শিশুর পানি শূন্যতার লক্ষণ বেশি দেখা দিয়ে থাকে। নিম্নে ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানায় আক্রান্ত শিশুর পানি শূন্যতার লক্ষণ গুলো দেওয়া হলো,

যদি শিশুর ডায়রিয়া হয় তাহলে কতদিন হলো ডায়রিয়া হচ্ছে সেটা খেয়াল করতে হবে এবং লক্ষ্য রাখুন শিশুর পায়খানার সাথে রক্ত যাচ্ছে কিনা এবং আরও লক্ষ্য রাখুন শিশুর ডায়রিয়া দুই সপ্তাহ বেশি কিনা 
যদি লক্ষণ গুলো একটা থাকে তাহলে ধরে নিতে হবে।

দুই সপ্তাহের অধিক সময় ধরে ডায়রিয়া হলে সেটা দীর্ঘমেয়াদী ডায়রিয়া বলা হয়। হাসপাতালে যেতে হবে আর শিশুর পায়খানায় যদি রক্ত যায় তাহলে সেটা আমাশয় বলা হয় সে ক্ষেত্রে কোট্রামাক্সাজল বড়ি দিয়ে পাঁচ দিন চিকিৎসা করুন এবং বাড়িতে যত্নের রাখুন।
পানির স্বল্পতা নির্ণয় করুন, শিশুটা নেতিয়ে পড়েছে কিনা বা অস্থির থাকে কিনা,খিটখিটে ও চোখ বসে গেছে কিনা খেয়াল করুন।

লক্ষ্য করুন শিশু নীতিয়ে পড়েছে কিনা, শিশু পানি পান করতে পারে কিনা,চোখ বসে গেছে ,পেটের চামড়া টেনে ধরে ছেড়ে দিলে খুব ধীরে ধীরে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যায় এটা শিশুর পানি শূন্যতার লক্ষণ বলা যায়। সে ক্ষেত্রে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যান।

শিশুর অস্থির বা খিটখিটে মেজাজ আগ্রহের সাথে পানি পান করে, চোখ বসে গেছে, পেটের চামড়া টেনে ধরে ছেড়ে দিলে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যায় এরকম লক্ষণ দেখা দিলে সেটা কিছু পানি সল্পতা বলা হয়ে থাকে।

সেই ক্ষেত্রে খাবার স্যালাইন ও জিংক বড়ি বা সিরাপ দিয়ে চিকিৎসা করুন। সিরাপ এর ভেতর নির্দেশিকা অনুযায়ী অথবা একজন চিকিৎসকের পরামর্শে খাওয়াবেন।

উপরের যে কোন একটি বা কোন চিহ্ন নাই তাহলে পানি সল্পতা নাই। তাই আপনি বাড়িতে শিশু যত্নের ব্যাপারে সচেতন হোন। বেশি বেশি তরল খাবার খেতে দিন সাথে খাবার স্যালাইন খেতে দিন।

ছোট বাচ্চাদের পাতলা পায়খানা হলে করণীয় কি

যে সকল শিশুর মারাত্মক ডায়রিয়া হয়নি সেই সকল ছোট বাচ্চাদের পাতলা পায়খানা হলে করণীয় কি, তা হল;

শিশুকে বেশি বেশি তরল খাবার দিতে হবে। ৬ মাস বয়স পর্যন্ত শিশুকে শুধুমাত্র মায়ের দুধ দিতে হবে বার বার এবং অনেকক্ষণ ধরে শিশুকে মায়ের দুধ দিতে হবে। শিশু যদি মায়ের দুধ ছাড়া অন্যান্য খাবার খায়, তবে মায়ের দুধের পাশাপাশি বাড়িতে তৈরি অন্যান্য তরল খাবার দিন। যেমন নিরাপদ পানি, ওআরএস, ভাতের মাড়,চিড়ার পানি,ডাবের পানি দিন।

পানি সল্পতার কারণের করণীয়  হল;  ২ বছরের নিচের শিশুদের প্রতিবার পায়খানার পর ১০ থেকে ২০ চা চামচ ওআরএস খেতে দিন বাড়িতে এবং দুই বৎসরের উপরে শিশুদের প্রতিবার পায়খানার পর ২০ থেকে ৪০ চা চামচ ওআরএস খাওয়াতে থাকুন। বাড়িতে পাওয়া যায় এমন তরল খাবার বার বার শিশুকে দিন। তরল খাবারের সাথে ডায়রিয়া আক্রান্ত শিশুকে স্বাভাবিক খাবার খাওয়াতে হবে।

শিশুর পাতলা পায়খানা বন্ধ করার ঘরোয়া উপায়

শিশুর পাতলা পায়খানা বন্ধ করার ঘরোয়া উপায় হল,  প্রথমত খাবার স্যালাইন ও তরল খাবার যেমন ডাবের পানি,  এছাড়া প্রচুর পরিমাণে পানি পান করাতে হবে। তাছাড়া কিছু খাবার খাওয়ানো যেতে পারে,

পেঁপেঃ পেপেতে রয়েছে এনজাইম যা হজম শক্তিতে কাজ করে। তাই শিশুর ডায়রিয়ার সময় পেঁপে খাওয়ালে হজম শক্তি বৃদ্ধি পাবে ডায়রিয়া সেরে উঠবে।

আদার রসঃ আদার রস পেট খারাপ হলে,এটা খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। তাই শিশুকে আদার রস চায়ের সাথে মিশিয়ে দিতে পারেন।

জিরার পানিঃ জিরা পানি পেট খারাপের জন্য অনেক উপকার করে থাকে। তাই শিশুকে জিরার পানি খাওয়াতে থাকুন ডায়রিয়া কমে যাবে।

কলাঃ কলায় প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম থাকে যা ডায়রিয়া সারাতে পটাশিয়াম প্রয়োজন হয়। তাই আপনার শিশুর পাতলা পায়খানা বন্ধ করার ঘরোয়া উপায় হিসেবে কলা খেতে দিতে পারেন। সেটা পাকা কলা হতে পারে অথবা কাঁচা কলা হতে পারে দুটোই ডায়রিয়ার জন্য অনেক উপকার।

ইসবগুলের ভুষিঃ ইসবগুলের ভুষি ডায়রিয়া সারাতে অনেক উপকার করে থাকে। পায়খানা শক্ত হতে পারে তাই ইসবগুলের ভুষি পরিমাণ মত পানিতে মিশে শিশুকে খাওয়াতে পারেন।

বাচ্চাদের পাতলা পায়খানা হলে

বাচ্চাদের পাতলা পায়খানা হলে যে ওষুধ খেতে হবে এটা নিয়ে আমরা চিন্তায় পড়ে যায়। আসলে পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশুকে খাবার স্যালাইন এবং সাথে জিঙ্ক ট্যাবলেট দিয়ে চিকিৎসা দেওয়া যেতে পারে।

এছাড়া ছোট বাচ্চাদের পাতলা পায়খানা হলে করণীয় কি, এ ক্ষেত্রে করণীয় হল; খাবার স্যালাইন তৈরি করার জন্য প্রথমে হাত পরিষ্কার করে নিতে হবে সাবান দিয়ে। হাত পরিষ্কার করে নিতে হবে একটা প্যাকেট থেকে সম্পূর্ণ পাউডার পরিষ্কার পাত্রে গলাতে হবে আধা লিটার বা আধা কেজি পানির পরিষ্কার পানির 
মধ্যে পুরো ওআরএস পাউডার যতটুকু আছে সম্পূর্ণ ঢেলে নিতে হবে। পাউডার সম্পন্ন গোলে নেওয়া যাবে ১২ ঘন্টা পর্যন্ত ব্যবহার করা যাবে এবং ঘন ঘন খাওয়াতে থাকুন। 

বিশেষ করে যতবার পায়খানা করবে ততবার ১০ থেকে ২০ চামচ করে বয়সের উপর নির্ভর করে খাওয়াতে থাকুন।ডায়রিয়া না কমলে পুনরায় শিশুকে পরীক্ষার জন্য স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে যান

নিম্নের লক্ষণ গুলো যদি দেখতে  পান তাহলে বাচ্চাকে হাসপালে নিয়ে যেতে হবে।
  • বাচ্চা তার মা এর দুধ বা জল খেতে না পারে
  • শিশুর অবস্থা যদি আরো খারাপ হয়
  • যদি পায়খানার সাথে রক্ত যায়
  • যদি পানি কম খায়
ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশুকে খাবার স্যালাইন এর সাথে জিংক ট্যাবলেট দিয়ে চিকিৎসা করুন
বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় দেখা গেছে যে ডায়রিয়া আক্রান্ত শিশুকে খাবার স্যালাইন এর সাথে জিংক দিয়ে চিকিৎসা করলে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশু দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠে। এছাড়া জিংক ডায়রিয়াতে তীব্রতা কমাতে সাহায্য করে। শিশুদের শরীরের জিংকের স্বল্পতা কারণে অন্যান্য অসুখ বিশেষ করে নিউমোনিয়া ও ম্যালেরিয়ার শিশু মৃত্যুর ঝুঁকি বেড়ে যায়।

জিংক ট্যাবলেটের ডোজ
৬ মাস থেকে ৫ বছর পর্যন্ত একটি ট্যাবলেট প্রতিদিন ১০ দিন
৬ মাসের নিচে অর্ধেক ট্যাবলেট প্রতিদিন ১০ দিন
শিশুরা যদি কিছু পানি স্বল্পতা থাকে সেই ক্ষেত্রে চিকিৎসা হলো প্রথমত কোন নিকটস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে যান, যেমন কমিউনিটি ক্লিনিক হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারেন। যদি যাওয়া সম্ভব না হয় তাহলে ৪ ঘন্টা খাওয়াতে হবে। চার ঘন্টার জন্য কতটুকু প্রয়োজন

প্রথম চার ঘন্টা যে পরিমাণ ওআরএস দিতে হবে
  • ১ চামচ সমান ৫ মিলি, ৪ মাস বয়স পর্যন্ত শিশুর জন্য ২০০ থেকে ৪০০ মিলি
  • ৪ মাস থেকে ১২ মাস পর্যন্ত ৪০০ থেকে ৭০০ মিলি
  • ১২ মাস থেকে ২ বছর পর্যন্ত ৭০০ থেকে ৯০০ মিলি
  • ২ বৎসর থেকে ৫ বছর পর্যন্ত ৯০০ থেকে ১৪ ০০ মিলি
তবে শিশুর বয়স ৬ মাসের নিচে হলে এবং যদি মায়ের দুধ না খায় তবে তাকে ওআরএস এর সাথে ২০ থেকে ৪০ চা চামচ অর্থাৎ ১০০ থেকে ২০০ মিলি নিরাপদ পানি দিতে হবে।

বাচ্চাদের পাতলা পায়খানা ও বমি হলে করণীয়

বাচ্চাদের পাতলা পায়খানা ও বমি হলে করণীয় হলো, আপনাকে ১০ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে এবং তারপর পূর্বের চেয়ে ধীরে ধীরে ওআরএস দিতে থাকুন।

৪ ঘন্টা ওআরএস খাওয়ানোর পর পুনরায় শিশুর পানি স্বল্পতা নিরূপণ করুন। যদি শিশু পূর্বে সে সুস্থ হয় তবে আপনি বাড়িতে অন্যান্য তরল খাবার একইভাবে শিশুকে দিতে থাকুন। পানি স্বল্পতা থাকলেও শিশুকে খাবার দিন এবং ওআরএস খাওয়ানো চালু রাখুন।

যদি শিশুর কোন উন্নতি না হয় তবে তাকে হাসপাতালে যান। হাসপাতালে যাওয়ার পথে ওআরএস চালু রাখতে হবে। অনেকে বলতে পারেন যে শিশুর পায়খানার সাথে যদি রক্ত আসে তাহলে সেই ক্ষেত্রে ছোট বাচ্চাদের পাতলা পায়খানা হলে করণীয় কি, সেই ক্ষেত্রে করণীয় হলো কোট্রামাক্সাজল ট্যাবলেট দিয়ে ৫ দিন চিকিৎসা করুন। .২ দিন পর ফলোআপের জন্য স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যাবেন। সেক্ষেত্রে শিশুর স্বাভাবিক খাবার অবশ্য চালিয়ে যেতে হবে।

আপনার বাচ্চাদের পাতলা পায়খানা ও বমি হলে করণীয় হিসেবে উপরোক্ত ঔষধ গুলো ও খাবার স্যালাইন প্রয়োগ করতে পারেন। তাহলে দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবে। তারপরও যদি সুস্থ না হয় তাহলে অবশ্যই হাসপাতালে নিয়ে যাবেন।

শিশুর ডায়রিয়া পরবর্তী খাবার

শিশুর ডায়রিয়া পরবর্তী খাবার কখনোই ক্ষতিকারক তরল খাবার দিবেন না, নিচে কিছু উপকারী এবং ক্ষতিকারক তরল খাবারের তালিকা দেওয়া হলো
উপকারী তরল খাবারঃ
  • নিরাপদ পানি
  • চিড়ার পানি
  • ডাবের পানি
  • ভাতের মাড়
  • ডালের পানি
  • ঘোল
  • টাটকা ফলের রস
  • সবজির সুপ
  • ওআরএস
ক্ষতিকারক তরল খাবারঃ
  • হালকা পানীয় পেপসি,কোক
  • কৌটায় ভরা ফলের রস
  • টেস্টি স্যালাইন
  • দুধ ও দুগ্ধজাত খাবারগুলো এই সময় এড়িয়ে চলতে হবে
  • চর্বিযুক্ত খাবার, মসলাযুক্ত খাবার মাখন ঘি, ভাজি পড়া ইত্যাদি
শিশুর ডায়রিয়া পরবর্তী খাবার এর ক্ষেত্রে কাঁচা শাক সবজি কাঁচা মাংস কাঁচা মাছ এ ধরনের খাবার খেলেও ডায়রিয়া বেড়ে যেতে পারে। তাই এ ধরনের খাবার দিবেন না।
শিশুকে যতটুকু খেতে পারে তা খেতে দিন যদি শিশু খাবার প্রতি অনীহা দেখায় তবে বারবার শিশুকে খাবার দিন। শিশু সুস্থ হয়ে উঠলে বেশি পরিমাণ খাবার দিতে থাকুন। যেন অসুস্থ অবস্থায় যে ঘাটতি হয়েছে সেটা পূরণ হয়ে যায়।

বাচ্চাদের সবুজ পাতলা পায়খানা কেন হয়

অনেকেই জানে না যে বাচ্চাদের সবুজ পাতলা পায়খানা কেন হয়, মায়ের দুধে প্রচুর পরিমাণ ল্যাকটোজ থাকে যার কারণে শিশুর ছয় মাসের নিচে যে শিশু শুধু মায়ের বুকের দুধ খায় তার পায়খানা হয়তো বা সবুজ হতে পারে এতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই।

খাদ্যে এলার্জি যেমন গরুর দুধের, বাচ্চাদের দুই বছরের নিচে গরুর দুধ খাওয়ালে পায়খানা সবুজ হতে পারে এবং পায়খানা ফেনা ফেনা হতে পারে।কারণ গরুর দুধের মাঝে প্রচুর পরিমাণ এলার্জি রয়েছে এছাড়া ডিম, গম এ ধরনের খাবার খেলেও পেট ফাপা ও পেট খারাপ হতে পারে
সংক্রমণের কারণে হতে পারে ভাইরাস ব্যাকটেরিয়ার কারণে হতে পারে

এছাড়াও কিছু এন্টিবায়োটিকের কারণে হতে পারে কেননা এন্টিবায়োটিক ভালো খারাপ দুই ধরনের ব্যাকটেরিয়া কে মেরে ফেলে। আমাদের পেটের ভিতরে ভালো ব্যাকটেরিয়া আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকার।শিশুদের অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ানোর ফলে সেই ভালো ব্যাকটেরিয়া গুলো মারা গেলে তখন পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া বেশি হতে থাকে।

তাই শিশুদের ডায়রিয়া হলে অবশ্যই প্রোবায়োটিক খাওয়ানো দরকার অথবা যদি ছয় মাসের বেশি বয়স হয়ে থাকে তাহলে তাকে হালকা দই খাওয়ানো যেতে পারে কেননা দই এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে প্রোবায়োটিক থাকে। ভালো ব্যাকটেরিয়া থাকে যেটা শরীরের জন্য অনেক উপকার তবে সরাসরি দুধের তৈরি খাবার গুলো খাওয়ানো যাবেনা।

যদি আপনার শিশুর বয়স তিন মাসের কম হয় তাহলে এই ধরনের পায়খানা যদি করে তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে নিতে হবে
শিশুর ডায়রিয়ার সাথে সবুজ পায়খানার সাথে যদি রক্ত আসে বমি করে পানি শূন্যতা হয় তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের নিকট যেতে হবে

যদি আপনার শিশু ২৪ ঘন্টার বেশি একটানা এই ধরনের পায়খানা করে তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে
আপনার শিশু যদি খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দেয় এবং নেতিয়ে পড়ে তাহলে অবশ্যই চিকিৎসার কাছে নিতে হবে

বাচ্চাদের পাতলা পায়খানার সিরাপ নাম

আপনি হয়তো চিন্তায় পড়ে গেছেন যে আপনার ছোট বাচ্চাদের পাতলা পায়খানা হলে  করণীয় কি অর্থাৎ কি ওষুধ খাওয়াবেন ইত্যাদি। নিম্নে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ এর নাম দেওয়া হল এই ওষুধগুলো আপনার বাচ্চাকে খাওয়ালে আশা করি সুস্থ হয়ে যাবে
  • জিংক সিরাপ
  • এমোডিস সিরাপ
  • ফিলমেট সিরাপ
  • মেট্রিল সিরাপ
  • জক্স সিরাপ
  • নাইটানেট সিরাপ
উপরোক্ত সিরাপ গুলো অবশ্যই একজন চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে খাওয়াতে হবে অথবা সিরাপের ভিতরে যে নির্দেশিকা রয়েছে বাচ্চার ওজন এবং বয়স অনুযায়ী নির্দেশিকা অনুযায়ী খাওয়ানো যেতে পারে। এই সিরাপ গুলো মোটামুটি নিরাপদ রয়েছে তবে সবগুলো খাওয়ানোর পূর্বে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।এই সিরাপের যেকোনো একটি খাওয়ালেই চলবে তারপরও যদি কাজ না করে, তবে এর সাথে পাশাপাশি ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়াতে হবে।

লেখকের শেষ কথা

পরিশেষে বলা যেতে পারে শিশুর ডায়রিয়া একটি মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে যদি আপনি সচেতন না হন। আপনার ছোট বাচ্চাদের পাতলা পায়খানা হলে করণীয় কি, আসলে এই ক্ষেত্রে করণীয় হলো;  উপরুক্ত বিষয়গুলো আপনার শিশুর প্রাথমিক চিকিৎসার ক্ষেত্রে উপকার হবে।আমার পোস্টটা পড়ে যদি আপনি একটু উপকৃত হন। তাহলে আপনি আপনার বন্ধু বান্ধবের মাঝে পোস্টটি শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এম আর মাহমুদ ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪