হাই প্রেসার হলে কি কি খাওয়া যাবে না,বিস্তারিত জানুন

আপনার হাই প্রেসার হলে কি কি খাওয়া যাবে না, তা জানা খুবই প্রয়োজন। কেননা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরিপে বলা হয়েছে যে,বিশ্বে প্রায় ১৫০ কোটির মত মানুষ উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হচ্ছে। চলুন উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
ছবি
বাংলাদেশের স্বাস্থ্য জনমিতি জরিপে বলা হয়েছে বাংলাদেশের প্রায় প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতি চারজনের একজন উচ্চ রক্তচাপে ভুগছে। তাই হাই প্রেসার হলে কি কি খাওয়া যাবে না, সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে কনটেন্ট টি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

পোস্টসূচিপত্রঃহাই প্রেসার হলে কি কি খাওয়া যাবে না,জেনে নিন।

উচ্চ রক্তচাপ কি

এখন আমরা জানবো উচ্চ রক্তচাপ কি, তা হলো হৃদপিন্ডের ধমনীতে রক্ত প্রবাহের চাপ স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকলে তাকে উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন বলা হয়। রক্তচাপ পরিমাপের দুটি একক অর্থাৎ সিস্টোলিক প্রেসার, সহজভাবে যাকে প্রেসারের উপরের পরিমাপক বলা হয় এবং ডায়াস্টোলিক প্রেসার, সহজভাবে যাকে প্রেসারের নিচের দিকের পরিমাপক বলা হয়।

একজন মানুষের যদি পরপর তিনদিন এক সপ্তার ব্যবধানে প্রেসার ১৪০ মিলিমিটার মার্কারি বা এর বেশি এবং ডায়াস্টোলিক প্রেসার ৯০ মিলিমিটার মার্কারি এর বেশি থাকে, তখন সেটাকে উচ্চ রক্তচাপ বলে চিহ্নিত করা হয়। যেমন লাল মাংস, চর্বিযুক্ত খাবার, অতিরিক্ত লবণ, প্রসেসিং খাবার ইত্যাদি।

উচ্চ রক্তচাপ কেন হয়

আসলে উচ্চ রক্তচাপ কেন হয় তা হলো, ৯৫ ভাগের বেশি রোগীর ক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপে নির্দিষ্ট কোন কারণ পাওয়া যায় না। সে সকল রোগী এসেনসিয়াল হাইপারটেনশন এ আক্রান্ত বলে ধরে নেওয়া হয়। 

এদের মধ্যে ৭০ ভাগের ক্ষেত্রে পরিবারের অন্য একজন উচ্চরক্তচাপে ভোগে এবং বংশগত ইতিহাস থাকে। শতকরা পাঁচ ভাগের ক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপের কারণ পাওয়া যায়। নিম্নে উচ্চ রক্তচাপ কেন হয় সে সম্পর্কে বর্ণনা করা হলো,
  • কিডনির বিভিন্ন রোগ যেমন কিডনির প্রদাহ, কিডনিতে পাথর, কিডনির ক্যান্সার ও কিডনির ধমনীর অস্বাভাবিকতা
  • শরীরে বিশেষ বিশেষ হরমোনের পরিমাণ বেড়ে গেলে
  • কিছু ওষুধ দীর্ঘদিন ধরে খাবার ফলে
  • জন্ম নিরোধক বড়ি খেলে
  • করটিকোস্টোরয়েড যেমন ডেকাশন, ডেক্সামিন ইত্যাদি
  • বাতের ঔষধ যেমন- ইনডোমেট, আইবুপ্রফেন,ইনডোমেথাসিন
  • গর্ভাস্থায় প্রি একলামশিয়া দেখা দিলে।

উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ

উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ গুলো মূলত দেখা যায় না। কারণ এটি একটি উপসর্গবিহীন রোগ। হৃৎপিণ্ড নিরবে বহুদিন ধরে এ রোগের ধকল সামনে চললেও রোগী কিছু বুঝতে পারেনা। মজার বিষয় হচ্ছে সুস্থ স্বাভাবিক লোককেও যদি বলে দেওয়া হয় যে তার উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে।

তবে কয়েকদিন পর দেখা যায় সেও উচ্চ রক্তচাপ সমস্যা নিয়ে ডাক্তারের কাছে গেছে।
যেমন- মাথা ঘোরা, ঘাড়ে ব্যথা,ঘাড়ের শিরা ধবধব করা ইত্যাদি।

আবার একজন সত্যিকারের উচ্চ রক্তচাপের রোগীকে যদি বলা হয় যে, তার রক্তচাপ স্বাভাবিক রয়েছে তাহলে তিনি খুব বেশি অসুবিধার কথা বলেন না, দিব্যি ঘুরে ফিরে বেড়ান। তবে কিছু লক্ষণ বোঝা যায় নিম্নে উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ গুলো আলোচনা করা হলো,

চোখে ঝাপসা দেখাঃ সাধারণত উচ্চ রক্তচাপের কারণে চোখে কম দেখা বা কোন কিছু কালো রংয়ের বিন্দুর মত দেখা। অথবা কুয়াশার মতো দেখা কোন কিছুর অল্প অল্প করে দেখা। হালকা বা আংশিক দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া,উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ।

মাথা ব্যাথাঃ বারবার মাথাব্যথা হলে এবং মাথার পিছনের দিকে বেশি ব্যথা হলে, চিকিৎসকের নিকট পরামর্শ নেওয়া উচিত।

বুকে ব্যথাঃ বুকে ব্যথা হৃদযন্ত্রের কারণ হতে পারে। কেননা রক্ত চলাচলের সমস্যার কারণেই বুকে ব্যথা শুরু হতে পারে। তাই বারবার যদি বুকে ব্যথা হয় এটা অবহেলা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

নাক দিয়ে রক্ত পড়াঃ নাক দিয়ে রক্ত পড়াও উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ হতে পারে কেননা রক্ত চলাচল যখন সমস্যা হয় তখন নাক দিয়ে রক্ত বের হতে পারে।

দুশ্চিন্তাঃ অযথা কোন বিষয় নিয়ে চিন্তাভাবনা করলে প্রেশার বাড়তে থাকে।তাই সকল প্রকার দুশ্চিন্তায থেকে বিরত থাকবেন।

ক্লান্ত বোধ করাঃ অল্প একটু কাজ করলেই হাপিয়ে যাওয়া বা শরীর দুর্বল লাগে এবং ক্লান্ত বোধ মনে করে, এটা উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ।

শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়াঃ যদি আপনি শ্বাস নিতে কষ্ট হয়, অল্পতেই শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে যায়।তাহলে বুঝতে পারবেন আপনার উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ রয়েছে।

মাথা ঘোরাঃ অনেকের সব সময় মাথা ঘুরাতে থাকে, মাথা ব্যথা করতে থাকে অথবা মাথা ঘুরানি দিয়ে পড়ে যায়।

উপরোক্ত আলোচনা থেকে বোঝা গেল যে প্রকৃতপক্ষে হাই প্রেসার এর কোন নির্দিষ্ট লক্ষণ নেই। তাই এটি একটি জটিল রোগ। একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে এর চিকিৎসা করতে হবে।

যেমন একজন চিকিৎসক সাধারণত হাই প্রেসার রোগীকে খেতে নিষেধ করেন, লাল মাংস, অতিরিক্ত লবণ, চর্বিযুক্ত খাবার, প্রসেসিং খাবার, তৈলাক্ত খাবার ইত্যাদি। তবে একজন চিকিৎসক সবার জন্য একই খাবার নিষেধ করেন না। তাই চিকিৎসক যেভাবে বলবেন সেভাবে মেনে চলার চেষ্টা করবেন।

প্রেসার হাই হলে কি কি সমস্যা হয়

উপসর্গ বিহীন এই অবস্থায় নীরবে শরীরের ক্ষতি সাধন করে চলে। চিকিৎসক অন্য রোগের জন্য আগত রোগের রক্তচাপ পরীক্ষা করতে গিয়ে এই রোগ শনাক্ত করেন অথবা হঠাৎ করে জটিলতা নিয়ে এই রোগটি আত্মপ্রকাশ করে এই সময় রোগীর নানা উপসর্গের কথা বলতে পারে। নিম্নে প্রেসার হাই হলে কি কি সমস্যা হয় তার আলোচনা করা হলো,

শ্বাসকষ্টঃ প্রথম দিকে হাঁটা চলাফেরা করার ফলে শ্বাসকষ্ট হয় পরে ঘরে বসে থাকা অবস্থায় শ্বাসকষ্ট হতে পারে। মাঝরাতে শ্বাসকষ্টের ধরন রোগীর ঘুম ভেঙ্গে যায় এবং রুগী উঠে বসলে এর কিছুটা উপশম হয়।হৃদপন্ডের কার্যহীনতা হারিয়ে ফেলে।

বুকে ব্যথাঃ হৃদপিন্ডের করোনারি ধমনীতে রক্ত চলাচল ব্যাহত হলে বুকে ব্যথা হয়।

পক্ষাঘাত বা স্ট্রোকঃ মস্তিষ্কে রক্ত চলাচলে বিঘ্ন হলে কিংবা রক্তনালী ছিড়ে গেলে স্ট্রোক হয়। এরকম হলে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ অবশ হয়ে যাওয়া থেকে অন্ধত্ব এমনকি রোগীর মৃত্যুর সম্ভাবনা পর্যন্ত থাকে।

কিডনির রোগ বা বিকলতাঃ প্রসব বন্ধ হয়ে যাওয়া ,শরীরে পানি আসা, অস্বাভাবিক দুর্বলতা বোধ করা রক্তস্বল্পতা বা শরীর ফেকাশে হয়ে যাওয়া, বমি বমি ভাব হওয়া।

প্রেসার হাই হলে কি কি সমস্যা হয় তা হলো কিডনি বিকল হয়ে যেতে পারে, এজন্য নিয়মিত ব্যয়বহুল ডায়ালাইসিস চালিয়ে যেতে হতে পারে।
দৃষ্টিশক্তির অস্পষ্টতাঃ চোখের রেটিনা ক্ষতিগ্রস্ত হলে চোখে দেখতে অসুবিধা হয়

খিচুনিঃ মারাত্মক উচ্চ রক্তচাপের ২২০ থেকে ১৩০ মিঃ মিঃ মার্কারি রোগীর হঠাৎ করে খিচুনি শুরু হতে পারে, দৃষ্টি শক্তি কমে যেতে পারে এবং সর্বোপরি অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে। হার্ট অ্যাটাক আক্রান্ত হয়ে হৃদ যন্ত্রের কার্যক্ষমতা কমে যেতে পারে এবং হৃদযন্ত্র বিকল হয়ে যেতে পারে। এছাড়াও কিছু খাবারের কারণে অনেক সময় প্রেসার হাই হয়ে যায়।

ব্লাড প্রেসার মাপার সঠিক নিয়ম

আমরা অনেকেই ব্লাড প্রেসার মাপার সঠিক নিয়ম জানি না। তাই সঠিকভাবে রক্তচাপ পরিমাপ করা হলে আমরা সহজেই উচ্চ রক্তচাপ শনাক্ত করতে পারি এবং প্রয়োজনের সঠিক চিকিৎসা নিতে পারি। উচ্চ রক্তচাপের জন্য যেসব ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয় তা অনেকাংশে প্রতিরোধ করা যায়, যদি আমরা নিয়মিত রক্তচাপ পরিমাপ করে থাকি।

রক্তচাপ পরীক্ষা করা হলো প্রধান শারীরিক পরীক্ষা। রোগী কক্ষে ঢুকার সঙ্গে সঙ্গে রোগীর রক্তচাপ পরীক্ষা করা উচিত নয়। ৫ থেকে ১০ মিনিট বিশ্রাম নেওয়ার পর রক্তচাপ পরিমাপ করা উচিত। দুইভাবে রক্তচাপ পরিমাপ করা উচিত, বসিয়ে এবং শোয়ান অবস্থায়।

(কনুইয়ের অর্ধেক ইঞ্চি অথবা এক ইঞ্চি ওপরের রক্তচাপ মাপার যন্ত্রের কাফটি বাধতে হয় এবং ঠিক কনুইয়ের ভাজের উপরে স্টেথোস্কোপ রেখে রক্তচাপ মাপা উচিত) প্রথমবার রোগীর রক্তচাপ স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি পাওয়া গেলে রোগীর রক্তচাপ কিছুক্ষণ পর ১০ মিনিট পর আবার মাপতে হবে। 

উচ্চ রক্তচাপের চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদী এবং ব্যয়বহুল হওয়ায় রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে সমান সতর্ক হওয়া জরুরী। রক্তচাপ পরিমাপ সঠিকভাবে নির্ণয় না হয়ে যদি তারতম্য হয় তাহলে উচ্চ রক্তচাপ নির্ণয় ভুল হতে পারে। সঠিকভাবে রক্তচাপ পরিমাপের জন্য প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য সেবা দানকারীর শরণাপন্ন হতে হবে। তাই ব্লাড প্রেসার মাপার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে নিম্নে দেওয়া হল,
  • রক্তচাপ নির্ণয় পরীক্ষা করুন
  • প্রসব পরীক্ষাঃ এলবুমি, সুগার
  • রক্তের ইউরিয়াঃ কোলেস্টরল, সুগার
  • বুকের এক্সরে
  • ইসিজি
উপরোক্ত ল্যাবরেটরী পরীক্ষাগুলোর জন্য শুধু ডাক্তার পরামর্শ দিতে পারবেন। চিহ্নিত পরীক্ষার জন্য ডাক্তার ও প্যারামেডিক উপায় পরামর্শ দিতে পারবেন।

উচ্চ রক্তচাপের চিকিৎসা 

উচ্চ রক্তচাপের চিকিৎসা এর মূল উদ্দেশ্য কোন শারীরিক অসুবিধা দূর করা নয়। চিকিৎসা করার মূল লক্ষ্য হচ্ছে এর জটিলতা গুলো প্রতিরোধ করা। যেসব রোগ একবার হলে সারা জীবন ধরে মানুষকে ভুগায়,উচ্চ রক্তচাপ তার মধ্যে অন্যতম।

একবার কারো উচ্চ রক্তচাপ হলে সারা জীবন উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার ব্যবস্থা নিতে হবে। চিকিৎসার ফলে এটা নিরাময় হয় না কিন্তু নিয়ন্ত্রণে থাকে। শুধু উচ্চ রক্তচাপ চিকিৎসা করা নয় পুরো মানুষটিকে চিকিৎসা করাটাই মুখ্য। উচ্চ রক্তচাপের চিকিৎসা করার কয়েকটি ধাপ আছে। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য সাধারণ কিছু ব্যবস্থাপনা নিম্নে দেওয়া হল, 

বিশ্রামঃ কাজের ফাঁকে ফাঁকে উপযুক্ত বিশ্রাম নিতে হবে

ধূমপানঃ হাই প্রেসার হলে কি কি খাওয়া যাবে না, তা হলো; ধূমপান বন্ধ করা তামাক জাতীয় দ্রব্যাদি বর্জন করা, চর্বি জাতীয় খাবার কমানো।

ব্যায়ামঃ নিয়মিত হালকা ব্যায়াম এবং হাটাহাটি করা

খাদ্যঃ মোটা অতিরিক্ত ওজনের রোগীদের ওজন কমানো। স্বাভাবিক সব খাবার খাবে, শাকসবজি বেশি খাবে এবং মদ্যপান বন্ধ করা, নিষিদ্ধ করা, অতিরিক্ত লবণ, পাতে লবণ খাওয়া নিষেধ। ডায়াবেটিস থাকলে খাবার ধরন সেই অনুযায়ী পরিবর্তন করতে হবে।

প্রেসারের ওষুধ খাওয়ার নিয়ম

আপনি প্রেসারের ওষুধ খাওয়ার নিয়ম টা একজন চিকিৎসক অথবা স্বাস্থ্যকর্মী থেকে জেনে নিবেন।বাংলাদেশ সরকার উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে কাজ করে চলেছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এনসিডি কর্নার ও কমিউনিটি ক্লিনিক হতে নির্ণয়কৃত উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস রোগীদের বিনামূল্যে রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস পরিমাপ এবং ওষুধ প্রদান করা হয়।

উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না রাখলে এবং নিয়মিত ওষুধ সেবন না করলে সম্ভাবনা মৃত্যু ঝুঁকি থাকে।উচ্চ রক্তচাপের চিকিৎসায় রক্তচাপে তারতম্যের অর্থাৎ ওঠা নামের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন ধরনের ঔষধ বিভিন্ন মাত্রায় দেওয়া হয়। তাই প্রেসারের ওষুধ খাওয়ার নিয়ম হলো, এটা একমাত্র একজন চিকিৎসকের মাধ্যমে ঔষধ খেতে হবে। ১৪০ সিস্টোলিক এবং ৯০ ডাস্টলিক (মিঃমিঃ মার্কারি) বেশি হলে উচ্চ রক্তচাপ বলা হয়।

ঔষধ স্বল্পতার কারণে এনসিডি কর্নার থেকে ওষুধ না পাওয়া গেলে ফার্মেসি থেকে ক্রয় করে উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসের ঔষধ সেবন করতে হবে ও নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। এনসিডি কর্নারে এসে প্রতি মাসে একবার রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস পরিমাপ করতে হবে। নিম্নে হাই প্রেসার সম্পর্কে কিছু পরামর্শ দেওয়া হলো,
  • মৃদু উচ্চ রক্তচাপের ব্যবস্থাপনা
  • পরিমাণ মত বিশ্রাম নিতে হবে
  • দুশ্চিন্তা এড়িয়ে থাকার পরামর্শ দিতে হবে
  • তার মধ্যে অন্যতম হলো ধূমপান ও তামাক জাতীয় দ্রব্যাদি ছেড়ে দিতে হবে।
  • নিয়মিত রক্তচাপ পরীক্ষা করাতে হবে
  • ১৫ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে আবার রক্তচাপ পরীক্ষা করাতে হবে
  •  যদি উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ না হয়, ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।

উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধের উপায়

উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধের উপায় হিসেবে চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে কিছু পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে।  এছাড়াও রোগীদের কিছু নিয়ম অবশ্যই মেনে চলতে হয় যেমন
চিকিৎসক যেভাবে বলবে সেইভাবে চলতে হবে।

জটিলতা দেখা দিলেই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ বন্ধ না করা বা না বদলানো।

যে সকল পরিবারের উচ্চ রক্তচাপের বংশগত ইতিহাস আছে অথবা পরিবার কোন সদস্যের রক্তচাপে আক্রান্ত আছে সেসব ক্ষেত্রে অন্য সদস্যদের নিয়মিত রক্তচাপ পরীক্ষা করা এবং ধূমপান, মদ্যপান, তৈলাক্ত খাবার, গরু বা খাসির মাংস, ডিম এবং অতিরিক্ত লবণ খাওয়া অবশ্যই নিয়ন্ত্রণ করা।

মনে রাখা উচিতঃ উচ্চ রক্তচাপ নিরাময় হয় না, উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধের উপায় জানতে হবে তাহলে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। অতএব নিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন ও চিকিৎসকের নির্দেশ মোতাবেক ঔষধ খাওয়া উচিত।

ওষুধ ছাড়া উচ্চ রক্তচাপ কমানোর উপায়

ওষুধ ছাড়া উচ্চ রক্তচাপ কমানোর উপায় গুলো নিম্নে বর্ণনা করা হলো,

পটাশিয়ামযুক্ত খাবার খাওয়াঃ আমেরিকার শিকাগো এক বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণায় বলা হয়েছে আলু, মিষ্টি আলু, কলা, মটরশুটি, টমেটো ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণ পটাশিয়াম রয়েছে ।এই খাবারগুলো খেলে উচ্চ রক্তচাপ কমে আসবে।

অতিরিক্ত ওজন কমিয়ে ফেলাঃ অতিরিক্ত ওজন কমিয়ে ফেললে সুস্থ থাকবেন এবং উচ্চ রক্তচাপ কমিয়ে নিয়ে আসতে যথেষ্ট পরিমাণ সহযোগিতা করবে।

ব্যায়াম করুনঃ আপনি ওষুধ ছাড়া উচ্চ রক্তচাপ কমানোর উপায় হিসেবে, প্রতিদিন চেষ্টা করবেন ৩০ মিনিট স্বাভাবিক হাঁটাহাঁটির মাধ্যমে ব্যায়াম করতে। ব্যায়ামের মাধ্যমে হার্ট শক্ত হয় এবং উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সহযোগিতা করে সাহায্য করে।

চর্বিযুক্ত খাবার পরিহার করুনঃ গরুর মাংস,খাসির মাংসের প্রচুর পরিমাণ চর্বিযুক্ত থাকে এটা পরিহার করে, এর পরিবর্তে শাকসবজি এবং প্রচুর পরিমাণে সামুদ্রিক মাছ খেতে পারেন। এতে করে অনেক উপকৃত হবেন।

লবণ কম খাওয়াঃ আপনার হাই প্রেসার হলে খাবারের কাঁচা লবণ খাওয়া যাবেনা কেননা লবণে প্রচুর পরিমাণে সোডিয়াম থাকে। আর সোডিয়াম উচ্চ রক্তচাপের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর। তাই যতটা পারেন রান্না করা খাবারেও কম লবণ দেওয়ার চেষ্টা করবেন।

মদ্যপান পরিহার করুনঃ মদের ভিতর অ্যালকোহল থাকে অ্যালকোহল প্রচুর পরিমাণে হাই প্রেসার এর জন্য ক্ষতি করে, তাই যত দ্রুত সম্ভব মদ্যপান পরিহার করুন।

হঠাৎ উচ্চ রক্তচাপ কমানোর উপায়

কোন সুস্থ ব্যক্তির রক্তচাপ বেড়ে যায়, তাহলে এই হঠাৎ উচ্চ রক্তচাপ কমানোর উপায় হলো বিশ্রাম নিতে হবে। অনেকে মাথায় পানি, বরফ দিলে হয়তো একটু উপশম হয়। অথবা অনেকে জানেনা যে হাই প্রেসার হলে কি কি খাওয়া যাবে না। তাই তারা না জেনে তেঁতুল খেয়ে প্রেসার কমাতে চায়।

আসলে এগুলো দিয়ে কখনো রক্তচাপ কমে না। আপনার হঠাৎ রক্তচাপ বেড়ে গেলে, ডাক্তারের পরামর্শ নিন, বিশ্রাম নিন এবং ডাক্তার যদি কোন ওষুধ দেয় তাহলে সেটা ওষুধ সেবন করবেন। আর যাদের আগে থেকেই উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে তাদের যদি হঠাৎ করে রক্তচাপ বেড়ে যায়, তাহলে তাদেরকে যে ওষুধ দেওয়া হয়েছে।

সেই ওষুধটা সেবন করবেন,বিশ্রাম নিবেন। তাতেও যদি সুস্থ না হয়, তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের কাছে যাবেন। তারপর তিনি যে ওষুধ দিবেন সেটা খাবেন। কখনই ভুলেও নিজেই ওষুধ পরিবর্তন করে খাবেন না।

কি কি ফল খেলে প্রেসার কমে

কি কি ফল খেলে প্রেসার কমে তা নিম্নে দেওয়া হল,

কমলা লেবুঃ কমলা লেবুতে এন্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন সি,ফাইবার রয়েছে। যা উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে থাকে।এছাড়াও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে। সর্দি, কাশি, ঠান্ডা ইত্যাদি থেকে রক্ষা করে। তাই কমলা লেবু জুস করে অথবা যে কোনোভাবে পরিমাণ মতো খেতে পারেন।

তরমুজঃ গ্রীষ্মকালে তরমুজ একটি লোভনীয় ফল যার মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে খাইবার, পটাশিয়াম ভিটামিন এ, অ্যামানোএসিড। যা আমাদের হার্ট কে সুস্থ রাখে এবং উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।

বেদানাঃ বেদানাতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট অ্যামানোএসিড ,ভিটামিন সি, পটাশিয়াম ইত্যাদি যা ব্লাড প্রেসার কমাতে সাহায্য করে।

কলাঃ কি কি ফল খেলে প্রেসার কমে তার মধ্যে অন্যতম হলো, কলা এমন একটি ফল যা সারা বছরই পাওয়া যায়। কলার মধ্যে রয়েছে পটাশিয়াম, সোডিয়াম কমাতে সাহায্য করে। তাই উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে কলা।তাই আপনি কলা বিভিন্ন উপায়ে খেতে পারেন।
ফল খেলে যেমন প্রেসার কমে।

হাই প্রেসার হলে কি কি খাওয়া যাবে না

হাই প্রেসার হলে কি কি খাওয়া যাবে না তা নিম্নে বর্ণনা করা হলো,

লবণঃ লবণে রয়েছে সোডিয়াম আর উচ্চ রক্তচাপের জন্য দায়ী হলো সোডিয়াম। সোডিয়াম এর কারনে উচ্চ রক্তচাপ হয়ে থাকে। বিশেষ করে কাঁচা লবণ খাওয়া হতে বিরত থাকতে হবে। এছাড়াও রান্না করা খাবারের কম লবণ দিতে হবে।

বিট লবণ বিভিন্ন ফলের সাথে মিশ্রণ করে যে খাওয়া হয়, সেটাও বিরত রাখতে হবে। যাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে , তারা অবশ্যই অতিরিক্ত লবণ খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন।

কফিঃ কফিতে রয়েছে ক্যাফিন। আর ক্যাফেইন রক্তনালিকে সংকোচিত করে, এতে রক্তচাপ বৃদ্ধি পায় এবং হৃদরোগের ঝুঁকি রয়েছে। তাই আপনি কফি বা চা না খেয়ে, তার পরিবর্তে গ্রিন ট্রি খেতে পারেন। এতে উচ্চ রক্তচাপ থেকে অনেকটা রক্ষা পেতে পারেন। তাই আপনি যদি উচ্চ রক্তচাপের রোগী হন, তাহলে আজ থেকেই শুরু করে দিন গ্রিন টি খাওয়া।

লাল মাংসঃ আপনার হাই প্রেসার হলে গরুর মাংস বা মহিষের মাংস প্রচুর পরিমাণ খারাপ কলেস্টরল থাকে। আর এই খারাপ কলেস্টেরল হৃদরোগ এবং উচ্চরক্তচাপের কারণ হতে পারে।

আপনি যদি উচ্চ রক্তচাপে রোগী হন তাহলে লাল মাংস না খেয়ে আজ থেকে সামুদ্রিক মাছ খাবেন। সামুদ্রিক মাছে ওমেগা -৩, রয়েছে যা আপনার উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করবে।

ডিমের কুসুমঃ মুরগির চামড়া ও ডিমের কুসুমে প্রচুর পরিমাণ চর্বি থাকার কারণে খারাপ কোলেস্টেরল থাকে। যা হৃদরোগের কারণ হতে পারে। উচ্চ রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে এবং আস্তে আস্তে আপনাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিবে।

চিনি যুক্ত খাবারঃ অতিরিক্ত চিনি থাকে এ ধরনের খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। কেননা চিনিতে প্রচুর পরিমাণ চর্বি থাকে যা আমাদের শরীরে ওজন বৃদ্ধি করে। আর ওজন বৃদ্ধি হওয়ার ফলে উচ্চ রক্তচাপ হতে থাকে, তাই আপনি চিনির পরিবর্তে মধু খেতে পারেন।

কোক, সেভেন আপ ও অন্যান্য কোমল পানীয় জাতীয় খাবার এতে প্রচুর পরিমাণে চিনি যুক্ত রয়েছে। তাই মিষ্টি জাতীয় খাবার, লবণ ইত্যাদি আমাদের খাবারের তালিকায় সবসময় কম রাখতে হবে।

অ্যালকোহলঃ অ্যালকোহল বা মধ্য পান করা থেকে বিরত থাকতে হবে।কারণ এগুলো প্রচুর পরিমাণে খারাপ কোলেস্টেরল থাকে, যেটা আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর এবং উচ্চ রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়।এছাড়াও স্ট্রোকের ঝুঁকি রয়েছে।তাই অ্যালকোহলের পরিবর্তে আমরা বিভিন্ন ধরনের ফলের জুস পান করতে পারি, যেটা আমাদের শরীরের জন্য উপকার।

চর্বিযুক্ত খাবারঃ অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার খেলে শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি পায়।উচ্চ কোলেস্টেরলের কারণে উচ্চ রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়। গরুর মাংস, খাসির মাংস,বাদাম, চর্বিযুক্ত খাবার খেলে উচ্চ রক্তচাপ বেড়ে যায়।

প্যাকেটজাত খাবারঃ প্রক্রিয়াজাত খাবারগুলোতে লবণ,চিনি, চর্বিযুক্ত দ্রব্য বেশি থাকায়,যার কারণে সুস্বাদু হয়।, যেটা উচ্চ রক্তচাপের জন্য ক্ষতিকর।যেমন ফাস্টফুড জাতীয় খাবার,নুডুলস,স্যান্ডউইচ, বার্গার, চিকেন ফ্রাই ইত্যাদি।

প্যাকেট জুসঃ বাজারে যত ধরনের প্যাকেটজাত জুস রয়েছে সবগুলোর মধ্যেই চিনির পরিমাণ বেশি রয়েছে।চিনি রক্তচাপ বৃদ্ধি করে তাই প্যাকেটজাত জুসের পরিবর্তে বাড়িতে বানানো জুস খাওয়া ভালো।

ধূমপানঃ ধূমপান করলে রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়,তাই ধূমপান করা থেকে বিরত থাকুন।

আমাদের শেষ কথা

উপরোক্ত বিষয়গুলো আলোচনা করে সর্বশেষ আমরা বলতে পারি যে, উচ্চ রক্তচাপ থেকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য উপরোক্ত বিষয়গুলো মেনে চলতে হবে। বিশেষ করে হাই প্রেসার হলে কি কি খাওয়া যাবে না, যে খাবার গুলো খেলে আমাদের উচ্চ রক্তচাপ বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেগুলো খাবার তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে। যদি পোস্টটি পড়ে একটু উপকৃত হন, তাহলে পোস্টটি আপনার বন্ধু- বান্ধবের মাঝে শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এম আর মাহমুদ ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪