পেটে কৃমি হওয়ার কারণ সমূহ ও কৃমির চিকিৎসা পদ্ধতি জেনে নিন
প্রতিটা মানুষের পেটে কৃমি হওয়ার কারণ ও কৃমির চিকিৎসা সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। সব এলাকার মাটি পানি ও খাদ্যে কৃমি থাকতে পারে। দূষিত খাদ্য বা পানীয় বা চামড়ার মধ্যে দিয়ে কৃমি শরীরে প্রবেশ করে। চলুন, কৃমি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা যাক।
একটা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পরিবারের সকলকে নিয়ে ওষুধ খাওয়া। যে বাচ্চার কৃমি আছে এবং পেটে প্রচন্ড ব্যথা হয় তাকে অবশ্যই স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে যেতে হবে। তাই পেটে কৃমি হওয়ার কারণ সম্পর্কে জানতে আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
পোস্টসূচিপত্রঃপেটে কৃমি হওয়ার কারণ সমূহ ও কৃমির চিকিৎসা পদ্ধতি জেনে নিন।
বড়দের কৃমি হওয়ার লক্ষণ
সাধারণত যে লক্ষণগুলো দেখা যায় তা হল
- পেটের ভিতরে বিভিন্ন জায়গায় ব্যথা করে বিশেষ করে পেটের নিচে বেশি ব্যথা করে
- যাদের কৃমি হয়েছে তারা খাবারের প্রতি তেমন একটা আগ্রহ থাকে না
- কৃমি হওয়ার আরেকটা লক্ষন হল সার্বক্ষণিক বমি বমি হবে এবং বমি হতে পারে
- কৃমি রোগীদের প্রতিনিয়ত পাতলা পায়খানা এবং ডায়রিয়া হতে পারে
- অনেক দুর্বল থাকে, শরীরে শক্তি পায় না, মুখ ও ঠোঁট ফ্যাকাসে হয়ে যায় এবং রক্তশূন্যতা দেখা দেয়
- কৃমি রোগীদের দেখবেন ওজন কমে যাবে
- তাদের ঘুম কম হবে এবং ঘুম আসবে না
- শরীরের বিভিন্ন জায়গায় চুলকানি হয়
- সবসময় মাথা ব্যথা করে
- পায়খানার রাস্তায় সবসময় চুলকায় এবং জ্বালাপোড়া করে
- সাধারণত পেট ফুলে থাকে, গ্যাস হয়
- খিদে কম লাগে, খাইতে মন চায় না
- ঘুমের মধ্যে সাধারণত দেখা যায় দাঁত কির্মীরানো কিড়মিড় করে
- মানসিকভাবে অস্বস্তি বোধ করে এবং সার্বক্ষণিক বিষন্নতায় ভোগে
- শিশুদের নাক দিয়ে মল বের হয়, নখ কামড়ায় ঘুমের মধ্যে হাঁটা চলাফেরা করে রাতে ঘুমের মধ্যে চিৎকার শুরু করে
পেটে কৃমি হওয়ার কারণ
নিম্নে পেটে কৃমি হওয়ার কারণ গুলো আলোচনা করা হলো,- খাওয়ার আগে ও মল ত্যাগের পর হাত ভালো করে না ধোয়া
- শাকসবজিও ফলমূল না ধুয়ে খাওয়া কারণ ধুলাবালির মধ্যে কৃমির ডিম থাকে এবং শাকসবজি ও ফলমূলকে দূষিত করে
- অর্ধ সিদ্ধ অথবা ভালো ভাবে রান্না না করা মাংস খাওয়ার কারণে অনেক সময় মাংসের ভিতর কৃমি থাকতে পারে
- খোলা খাবার খাওয়া
- ময়লা পানি পান করা
- লোকজন মলত্যাগ করে এমন স্থানে খালি পায়ে চলাফেরা করা।
- নিয়মিত হাত পায়ের নখ না কাটা
- অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে মানুষ বসবাস করলে কৃমি বিস্তার বেশি হয়
- শিশুরা খেলাধুলা করার সময় মাটিতে হাত পা মাখিয়ে খেলার কারণে কৃমির ডিম বা লার্ভা শরীরের মধ্যে প্রবেশ করে
কৃমির চিকিৎসা পদ্ধতি
আগে কৃমির ধরনটা বুঝতে হবে, কৃমি বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে
- কেঁচোর মত লম্বা গোলাকার
- সুতার ন্যায় পাতলা ও ছোট কৃমি
- ফিতার মতো চ্যাপ্টা ও খন্ডে বিভক্ত কৃমি
গুড়া কৃমিঃ সবচাইতে সাধারণ একটা বিষয়, গোড়া কৃমি হলে, পেটের মধ্যে ব্যথা করে, পাতলা পায়খানা হয়,ডায়রিয়া হয়, মলদ্বারে চুলকায়, ওজন কমে যায় ইত্যাদি
গোল কৃমিঃ সাধারণত লম্বা হয় এবং অনেক চিকন তার মধ্যে লক্ষণগুলো হল পেট ব্যথা, বমি বমি ভাব, বমি হওয়া, কাশি, জ্বর ইত্যাদি
ফিতা কৃমিঃ এই কৃমি অনেক লম্বা এর লক্ষণ গুলো হলো পেট ব্যথা ওজন কমে যাওয়া দুর্বলতা এবং রক্তশূন্যতা হয়
কৃমির চিকিৎসার ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের ঔষধ ব্যবহার করে থাকে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো
অ্যালবেনডাজলঃ সবচাইতে বেশি ব্যবহৃত হয় কৃমির জন্য অ্যালবেনডাজল ট্যাবলেট বা এক সপ্তাহ ধরে নেওয়া যেতে পারে
মেবেনডাজলঃ আরেকটি কৃমিনাশক ওষুধ, এই ওষুধটি তিন দিন ধরে নেওয়া যায়। তিন দিনে একটানা খাওয়া যায়
পায়রানটেল পামায়েটঃ এই ওষুধটি গোল ক্রিমের জন্য ব্যবহৃত হয় গোল কৃমি এক ডোস দেওয়া যায়
পেটে কৃমি কেন হয়
পেটে কৃমি হওয়ার কারণ বিভিন্নভাবে হতে পারে, তার মধ্যে কৃমি শরীরের অভ্যন্তরে ডিম পাড়ে যা রোগীর মলের সাথে বেরিয়ে আসে। কৃমি আছে এমন ব্যক্তি যখন পথে ঘাটে মল ত্যাগ করে, তখন কৃমি
ঘরোয়া উপায়ে কৃমি দূর করার উপায়
ঘরোয়া উপায়ে কৃমি দূর করা যায় নিম্নের সেসব বিষয় দেওয়া হলোএছাড়াও কৃমি নিয়ন্ত্রণের জন্য আরো কিছু ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে
- স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা ব্যবহার করা
- মলত্যাগ কাজকর্ম অথবা খেলাধুলার পর এবং খাওয়া-দাওয়ার আগে সাবান ও পানি দিয়ে ভালোভাবে হাত দিয়ে নেওয়া
- ফল মূল্য শাকসবজি পরিস্কার পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে নেওয়া হয়
- ভালোভাবে সিদ্ধ করে রান্না করা মাংস খাওয়া
- জুতা বা স্যান্ডেল পড়ে চলাফেরা করা
- পরিষ্কার পানি পান করা এবং রান্নার কাজে ব্যবহার করা
তবে মনে রাখতে হবে ছোট মাছ কলা চিনি বা মিষ্টি খেলে কৃমি হয় এটা ভুল ধারণা
কৃমির চিকিৎসা করা ভালো কিন্তু তার চেয়ে ভালো কৃমির যাতে না হয় তার ব্যবস্থা নেওয়া
কৃমির ওষুধের বিষয়ে কিছু সতর্কতা রয়েছে
গর্ভবতী এবং দুগ্ধ দানকারী মায়েরা উপরোক্ত ঘরোয়া গুলো খাবারগুলো ব্যবহার করার পূর্বে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে
দুই বছরের কম বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে এই ঘরোয়া পদ্ধতি ব্যবহার করা উচিত নয়বাংলাদেশ সরকার কৃমি সংক্রমনের বিরুদ্ধে কার্যকর কর্মসূচি গ্রহণ করেছে ।এই কর্মসূচির আওতায় প্রতিবছর দুইবার
জাতীয় টিকা দিবস ও ভিটামিন এ প্লাস ক্যাম্পেইনের সময় ২ থেকে ৫ বছরের নিচে দেশের সকল শিশুদের কৃমিনাশক ঔষধ খাওয়ানো হয়।
যদি কৃমি অনেক দিন যাবত হয়ে থাকে তাহলে সব ঘরোয়া চিকিৎসায় কাজ হবে না ডাক্তারের পরামর্শক্রমে ওষুধ খেতে হবে
এই ঘরোয়া পদ্ধতি গুলো ব্যবহার করার পাশাপাশি নিয়মিত ভাবে হাত ধোয়া খাবার পরিষ্কার করে খাওয়া এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা কৃমি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে
কৃমির ট্যাবলেট এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
কৃমির ট্যাবলেট গুলো সাধারণত নিরাপদ আছে তবে কিছু ট্যাবলেটের পার্শ্বপ্রতিকরা গুলো নিম্নে দেওয়া হল
- পেটে ব্যথা করতে পারে
- বমি বমি ভাব বা বমি হতে পারে
- পাতলা পায়খানা হতে পারে বা ডায়রিয়া হতে পারে
- মাথাব্যথা হতে পারে
- শরীর দুর্বল এবং ক্লান্তি বোধ লাগতে পারে
- এই সমস্ত পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সাধারণত তেমন একটা ক্ষতি হয় না ।একা একাই এগুলো সেরে যায় তবে যদি এই পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াগুলো বেশি দেখা যায়, তাহলে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে
- অনেকের ট্যাবলেটটা আরো বড় ধরনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে পারে যেমন
- লিভারের ক্ষতি করতে পারে
- এলার্জি হতে পারে যেমন ফুসকুড়ি ওঠে চুলকায় শ্বাসকষ্ট হতে পারেতাহলে অবশ্যই হাসপাতালে অথবা নিকটবর্তী চিকিৎসকের কাছে যাবেন
পিরিয়ডের সময় কৃমির ওষুধ খাওয়া যায়
কৃমির ওষুধ খাওয়ার পর কি ভিটামিন খেতে হয়
কৃমি ওষুধ খাওয়ার পর ভিটামিন খেতে হবে এরকম কোন ধরা বাধা নিয়ম নেই, তবে ভিটামিন যখন খেতে হবে তা হল
যখন আপনার পুষ্টির ঘাটতি হবে তখন আপনি চিকিৎসকের পরামর্শে ভিটামিন খাবেন
কিভাবে ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলে যেমন বমি হওয়া, বমি বমি ভাব, পেট খারাপ হওয়া, ডায়রিয়া হওয়া, পাতলা পায়খানা হয় ইত্যাদি এই ধরনের সমস্যা হলে ভিটামিন না খাওয়াই ভালো
যে সকল সময় ভিটামিন খাওয়া উচিত নয়
- কৃমির ওষুধ খাওয়ার পর একসাথে ভিটামিন খাওয়া যাবেনা এতে ওষুধের কার্যক্ষমতা কমে যাবে
- অতিরিক্ত ভিটামিন খেলে শরীরে মধ্যে বিষক্রিয়া হতে পারে
- তার চেয়ে বরং ভিটামিন যুক্ত খাবার খাওয়া আমাদের জরুরী
- ভিটামিন এ জাতীয় খাবার খাওয়া তার মধ্যে গাজর, মাছ, ডিম, শাকসবজি ইত্যাদি
- ভিটামিন বি জাতীয় খাবার খাওয়া যেমন বাদাম, মাংস, মাছ, ডিম, বীজ ইত্যাদি
- ভিটামিন সি কমলা লেবু, লেবু ,আঙ্গুর ,পেঁপে ইত্যাদি
- ভিটামিন ডি সূর্যর আলো প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ডি রয়েছে,ডিমের কুসুম, মাছ
- ভিটামিন ই জাতীয় খাবার বাদাম, শাকসবজি,বীজ
কৃমির ট্যাবলেট খাওয়ার আগে না পরে খেতে হবে
অ্যালব্যনডাজল কৃমির ট্যাবলেট খাওয়ার আগে না পরে খেতে হবে এটা নির্ভর করে কৃমির ঔষধের ধরনের উপরে সাধারণত খাবার দুই ঘন্টার পরে অ্যালব্যনডাজল খাওয়া দরকার
মেবেনডাজল এটি খাবারের সাথে বা খাবারের পর পরই খাওয়া প্রয়োজন
তবে কোন ওষুধ টা কখন খেতে হবে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে খেলে ভালো হয়
তবে কৃমির ওষুধ খেলে পরিবারের সবাই একসাথে খেতে হবে
কৃমির ওষুধ কতদিন পর পর খেতে হয়
অনেকেই এই প্রশ্নের উত্তর জানতে চায় যে কৃমির ওষুধ কতদিন পর পর খেতে হবে
কৃমির ধরনের উপর নির্ভর করে কোন ঔষধ কত দিন খেতে হবে
- গোল কৃমির জন্য ৬ মাস পর পর ওষুধ খেতে হবে
- ফিতা কৃমির জন্য ৩ মাস পর পর
- সুতা কৃমির জন্য ১ বছর পর পর
- এরপর বয়সের উপর নির্ভর করে
- ২ বছরের কম শিশু হলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খেতে হবে
- ২ বছরের বেশি শিশু এবং প্রাপ্তবয়স্ক হলে ছয় মাস পর পর কৃমির ওষুধ খাবেএছাড়া পরিবেশের উপর নির্ভর করে
আর যদি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা হয় তাহলে ৬ মাস পর পর খেলেও চলবে
তবে সাধারণত কৃমির ওষুধ ৩ মাস পর পর বাড়ির সব সদস্য খাওয়াই ভালো
পেটে কৃমি হওয়ার কারণ গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো যাদের ঘন ঘন ডায়রিয়া হয় এবং পাতলা পায়খানা হয়ে থাকে যেটাকে আইবিএস বলা হয়ে থাকে, এই ধরনের রোগীরা প্রতি ২ মাস পর পর ডোজ মেনে নিয়মিত কৃমির ওষুধ খাবে।
বিশেষ সতর্কতা হল গর্ভবতী মায়েরা কৃমির ওষুধ খেতে পারবে কিনা অবশ্যই একজন রেজিস্টার চিকিৎসকের পরামর্শ মতে হবে খেতে হবে।
আমাদের শেষ কথা
পরিশেষে বলা যায় যে, উপরে আলোচনা থেকে পেটে কৃমি হওয়ার কারণ গুলো সম্পর্কে জেনেছেন। তাই কৃমি প্রতিরোধের জন্য পরিবারের সবাইকে ব্যবস্থা নিতে হবে। তাই আমরা কৃমি প্রতিরোধ করার জন্য সবাই সচেতন হব। কেননা কৃমি মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে। যদি আমার এই পোস্টটি পড়ে আপনি একটু উপকৃত হন, তাহলে আপনার বন্ধুদের মাঝে পোস্ট শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ
এম আর মাহমুদ ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url