সাপে কামড়ালে কি করা উচিত নয়, এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
গ্রামের অধিকাংশ মানুষ সাপে কামড়ালে কি করা উচিত নয়, এ বিষয়ে তারা না জেনে সাপুড়ে বা ওঝার কাছে নিয়ে যায়। সাপুড়ে বা ওঝা অবৈজ্ঞানিক উপায়ে বিষ নামানোর চেষ্টা করে, যা করা উচিত নয়।
সাপে কামড়ানোর একমাত্র চিকিৎসা হলো এন্টিভেনাম দেওয়া। কবিরাজ বা ওঝা কখনোই সাপের বিষ নামাতে পারে না। তাই সাপে কামড়ালে কি করা উচিত নয়,সেগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে কনটেন্ট টা মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
পোস্টসূচিপত্রঃসাপে কামড়ালে কি করা উচিত নয়, এ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন
বিষধর সাপে কামড়ানোর লক্ষণ সমূহ
বাংলাদেশে মাত্র ৭ থেকে ৮% সাপ বিষধর। আর বাকি সাপ গুলো বিষহীন। তাই বিষধর সাপের কিছু লক্ষণ থাকে, নিম্নে বিষধর সাপে কামড়ানোর লক্ষণ সমূহ বর্ণনা করা হলো।
- যে স্থানে কামড় দিয়েছে সেখান থেকে অনবরত রক্ত বের হতে থাকবে এবং বড় আকারে ফুলে উঠবে
- ব্যথার যন্ত্রণা সহ্য করার মতো নয় অনেক ব্যাথা হয়
- অনেক সময় শরীর ফুলে ওঠে
- খাবার খেতে বা ঢোক গিলতে অনেক সমস্যা হয়
- প্রচন্ড শ্বাসকষ্ট শুরু হয়
- চোখে ঝাপসা দেখতে পারে এবং চোখ লেগে আসা বা বন্ধ হয়ে যায়
- বিষধর সাপে কামড়ানোর লক্ষণ হলো, যে জায়গায় কামড় দিয়েছে সেখানে দুইটা দাঁত বসে যাবে।
- ঘুম ঘুম মনে করা
- হাত পা অবশ মনে হবে
- অজ্ঞান হয়ে যাওয়া
- ঘাড় ও মাথা সোজা করতে না পারে
- প্রসব হয় না
- বমি করা শুরু করে
- গলা আটকে আসবে
- মুখ দিয়ে লালা আসতে পারে
- শরীর ঘামা শুরু করে
- প্রেসার কম হতে পারে
- ডায়রিয়া হওয়া শুরু করে
- জ্বর আসতে পারে
- খিচুনি দেওয়া শুরু করে
সাপে কামড়ালে কি করা উচিত নয়
এখন আমরা জানবো সাপে কামড়ালে কি করা উচিত নয়, সে সম্পর্কে বিস্তারিত নিম্নে আলোচনা করা হলো।
- রোগীর আক্রান্ত স্থানে শক্তভাবে বাধা যাবে না। হালকাভাবে বাধতে হবে, কোন প্রকার দড়ি, নাইলন বা স্যালাইনের নল এই সকল জিনিস ব্যবহার করা উচিত নয়। এ ধরনের কাজগুলো করলে রোগী যদি পরবর্তীতে সুস্থও হয়। তবে বাধার স্থানে প্যারালাইজড হয়ে যায় এবং অনেক জায়গায় পচন ধরে যায়।
- ক্ষতস্থানে কোন প্রকার কাটাছেঁড়া করা যাবে না
- আক্রান্ত স্থানে মুখ দিয়ে চোষা যাবে না
- কাউকে সাপে কামড় দিলে ওঝা বা সাপুরের কাছে নেওয়া উচিত নয়।অপেক্ষা না করে তাকে যত দ্রুত সম্ভব নিকটস্থ উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে বা হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। কারণ যত তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া যাবে তত তাড়াতাড়ি রোগী সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকবে।
এরপর সাপুড়ে বীণ বাজায়, বিভিন্ন পানি পড়া দিয়ে থাকে কিন্তু অবৈজ্ঞানিক উপায়ে এ ধরনের কোন চিকিৎসা করা উচিত নয়। কেননা সাপের কোন কান নেই, যে সে বীণ এর শব্দ শুনতে পাবে। সাপ জিহবা দিয়ে অনুভূতি নেয়।সাপুড়ে বিভিন্ন ধরনের কুসংস্কার মূলক কাজ করে রোগীকে বাঁচিয়ে তোলার চেষ্টা করে। কিন্তু বাঁচানোর পরিবর্তে রোগী টা দেরি হওয়ার কারণে উপযুক্ত চিকিৎসার অভাবে মারা যায়।
আমরা অনেকে বিশ্বাস করি যে সাপে কামড়ালে সাপুড়ের চিকিৎসার মাধ্যমে রোগী ভালো হয় কিন্তু এটা ভুল ধারণা। কারণ বাংলাদেশের মাত্র ৭ বা ৮ প্রকার বিষধর সাপ। বিষধর সাপ কামড়ালে অ্যান্টিভেনাম ছাড়া রোগীকে বাঁচানো কঠিন। সাপে কামড়ানোর পর যে সমস্ত রোগী বেঁচে যায়। আসলে সে সমস্ত সাপগুলো ছিল বিষহীন যা বেচে যাওয়া রোগীকে কামড় দিয়েছিল।
সাপে কাটলে করণীয় কি
সাধারণত বিষধর সাপগুলো গ্রাম অঞ্চলেই বেশি দেখা যায়। আর গ্রামের লোকজন কৃষিকাজ করার কারণে, তারা বিভিন্ন বন জঙ্গলে যায়। অনেক সময় অসাবধানতার কারণে সাপ কামড় দেয়। তখন তারা বুঝতে পারে না যে সাপে কাটলে করণীয় কি।
এ সম্পর্কে না জানার কারণে তারা বিভিন্ন ধরনের কুসংস্কার মূলক কাজ করে থাকে। এতে রোগীর অনেক ক্ষতি হয়ে যায়। তাই সাপে কাটলে আমাদের করণীয় কি, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন।
সাপে কামড় দেওয়া ব্যক্তিটিকে প্রথমে আলো-বাতাস লাগে সে রকম স্থানে শুয়া দিতে হবে। তারপর আশেপাশে জনগণকে সরিয়ে দিন। এতে রোগীর শরীরে আলো বাতাস লাগবে।
আরো পড়ুনঃ বিষ খেলে মানুষ মারা যায় কেন, জেনে নিন
রোগীর জ্ঞান আছে কিনা যাচাই করুন, জ্ঞান থাকলে কথা বলে তাকে সান্ত্বনা দিতে থাকুন।
দংসনের স্থান ভালোভাবে পরীক্ষা করে জেনে নিন, সাপটি বিষধর কিনা।সাধারণত বিষধর সাপ হলে একবার দুই দাঁতের কামড়ের চিহ্ন থাকবে। দুইয়ের অধিক দাঁতের কামড় থাকলে সাপটি আসলে বিষধর নয়।
- কামড়ের স্থান থেকে দুই থেকে তিন ইঞ্চি উপরে হালকা করে কমপক্ষে দুটি বাঁধন দিন এবং স্থানটি যেন নড়াচড়া না হয়। কামড়ানোর ৩০ মিনিটের মধ্যে এই কাজটা করতে হবে।
- যত নড়াচড়া করবেন বিষ তত দ্রুত ছড়াতে পারে। তাই রোগী যেন নড়াচড়া না করে,সে দিকে খেয়াল রাখুন।
- সাবান ও পরিষ্কার পানি দিয়ে রোগীর ক্ষতস্থানটি ভালোভাবে ধূয়ে নিতে হবে। বিশেষ করে ক্ষার যুক্ত সাবান ধুয়ে দিলে ভালো হবে।
- গ্রামের অনেক মানুষ এই বিষয়ে না জেনে তারা আক্রান্ত স্থানটিতে বিভিন্ন প্রকার লতা পাতা বা ঘি জাতীয় জিনিস লাগায়। এই ধরনের জিনিস লাগানো ঠিক নয়।
- হাত বা পায়ে কামড় দিলে যা করবেন,দংসিত অংশ বাঁশ বা কাঠের চটা দিয়ে হালকাভাবে বাধুন যাতে আক্রান্ত অঙ্গ নড়াচড়া করতে না পারে।
- সাপে কাটলে রোগীর হাতে বা পায় কোন অলংকার থাকলে তা খুলে ফেলুন।
- সাপে কাটা ব্যক্তিকে সারাক্ষণ সজাগ রাখার চেষ্টা করবেন এবং সান্ত্বনা দিতে থাকবেন।
সাপে কাটার ভ্যাকসিন এর নাম
প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষগুলো সাপে কাটার ভ্যাকসিন এর নাম সম্পর্কে তেমন জানেনা। কিন্তু বাজারে বিভিন্ন নামে সাপে কাটার ভ্যাকসিন পাওয়া যায়। তার মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ভ্যাকসিন হলো এন্টিভেনাম। কোন সাপের বিষ কেমন তার উপর ভিত্তি করে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়। সাপে কাটার ভ্যাকসিন এন্টিভেনাম নিয়ে বিশদ বর্ণনা করা হলো;
অ্যান্টিভেনাম যৌগিক শব্দ। ভেনাম অর্থ বিষ আর এন্টি অর্থ বিরুদ্ধে কাজ করে অর্থাৎ বিষধর সাপের বিরুদ্ধে যে ভ্যাকসিন দেওয়া হয় তার নাম এন্টিভেনম। সাপে কাটা রোগীর জন্য একমাত্র চিকিৎসা দেওয়া হয় এন্টিভেনাম দিয়ে।
কিন্তু গ্রাম অঞ্চলের অধিকাংশ মানুষ, ভ্যাকসিন সম্পর্কে এবং সাপে কামড়ালে কি করা উচিত নয় সে সম্পর্কে তেমন জানে না। যার কারণে তাদের কাউকে সাপে কামড়ালে তারা প্রাচীন যুগের সেই কুসংস্কার সাপুড়ে বা ওঝার মাধ্যমে চিকিৎসা করাতে চায়।
যা কখনোই এ ধরনের অবৈজ্ঞানিক চিকিৎসা করা উচিত নয়। সাপে কাটা রোগীর জন্য এন্টিভেনাম দিয়ে চিকিৎসা করাতে হবে। এছাড়া আর কোন বিকল্প বুদ্ধি নেই। তবে বর্তমানে গবেষণা চলছে মুখে খাওয়ার ওষুধ তৈরি করার জন্য এবং ভারতে কিছু স্থানে এটা প্রয়োগ করা হয়েছে।
বাংলাদেশেও হয়তো কিছুদিনের মধ্যেই মুখে খাওয়ার ওষুধ দেওয়া শুরু করবে। তবে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের লোকগুলো সাপে কাটলে ভ্যাকসিনের জন্য যেতে হয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যা অনেক দূরে হয়ে যায়। তাই সরকার যদি গ্রাম অঞ্চলে কমিউনিটি ক্লিনিক হাসপাতালে সাপে কাটা রোগীদের জন্য অ্যান্টিভেনোম দেয়।
তাহলে ওই সকল লোকদের অনেক সুবিধা হবে এবং অনেক রোগী মৃত্যুর মুখে থেকে রক্ষা পাবে। এন্টিভেনাম সাপে কাটা রোগীকেই শুধু দেওয়া হয় না, আরো অন্যান্য প্রাণীর বিষের বিরুদ্ধে এই অ্যান্টিভেনাম দেওয়া হয়। সেই প্রাণীগুলো যেমন ব্লাক মাকড়সা, জেলিফিশ ইত্যাদি প্রাণী।
উপরোক্ত বিষয়গুলো থেকে আমরা সাপে কাটার ভ্যাকসিনের নাম সহ আরো অন্যান্য ব্যবস্থাগুলো সম্পর্কে জানতে পারলাম, আশা করি অনেক উপকার হবে।
সাধারণত এন্টিভেনাম দুই ধরনের হয়ে থাকে
১।মনোভ্যালেন্ট অ্যান্টিভেনাম
২। পলিভ্যালেন্ট অ্যান্টিভেনাম
মনোভ্যালেন্ট অ্যান্টিভেনাম দিয়ে চিকিৎসা করা হয় শুধু একটি মাত্র সাপের বিষের বিরুদ্ধে প্রয়োগ করার জন্য।
পলিভ্যালেন্ট অ্যান্টিভেনাম দিয়ে চিকিৎসা করা হয় অনেক প্রজাতির সাপের বিষের বিরুদ্ধে প্রয়োগ করার জন্য।
এক ফাইল এর মূল্য প্রায় এক হাজার টাকা যা ভারত থেকে নিয়ে আসতে হয়। তবে বর্তমান বাংলাদেশের এই এন্টিভেনাম বানানোর তৈরি করার প্রস্তুতি শুরু করেছে।
একজন সাপে কাটা রোগীর .১০ টি অ্যান্টিভেনাম লাগে, অনেকের ২০ টি লাগতে পারে। এন্টিভেনাম ছাড়াও বাজারে আরো অনেক বিভিন্ন নামে এই ভ্যাকসিন পাওয়া যায়। তাই সাপে কামড়ালে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া বাজার থেকে নিজে ভ্যাকসিন নিয়ে এসে প্রয়োগ করা উচিত নয়। অবশ্যই চিকিৎসকের মাধ্যমে হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নিতে হবে।
বাংলাদেশের সবচেয়ে বিষাক্ত সাপের নাম কি
বাংলাদেশের সবচেয়ে বিষাক্ত সাপের নাম কি, এ সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানিনা। তাই এ সম্পর্কে বিস্তারিত আমাদের সবারই জানা উচিত। বিশেষ করে গ্রাম অঞ্চলের লোক গুলো বিষাক্ত সাপ ও বিষহীন সাপ মিলিয়ে ফেলে। যার কারণে অনেক সময় কাউকে সাপে কামড়ালে সে ভয় পেয়ে স্ট্রোক করে।
কোনটা বিষাক্ত সাপ আর কোনটা বিষহীন সাপ এটা আমাদের জানা উচিত। অনেকে সাপ মেরে ফেলে এবং সেই সাপ নিয়ে হাসপাতালে যায়। যদিও চিকিৎসকের চিকিৎসা করতে সুবিধা হয় কিন্তু কাউকে সাপে কামড়ালে এ ধরনের কাজ করা উচিত নয়,কেননা যে মারতে যাবে তাকেও কামড় দিতে পারে। তাই এ সকল কাজ থেকে বিরত থাকবেন।
বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় প্রায় ৮০ থেকে ৯০ প্রজাতির সাপ রয়েছে। তার মধ্যে অধিকাংশ বিষাক্ত সাপ সমুদ্রে থাকে। বাকি .৭ বা ৮ প্রকার সাপ বিষধর। স্থল ভুমিতে বসবাস করে যা মানুষকে কামড়ালে মানুষ মারা যায় সেগুলো হল;
নায়া নায়াঃ বৈজ্ঞানিক নাম হল নায়া নায়া কিন্তু বাংলাদেশে গোগরা বা কোবরা নামেই পরিচিত বেশি। বিষাক্ত সাপের মাঝে এটি একটি অন্যতম। এই সাপ স্থল ভূমিত থাকতে পছন্দ করে। এরা ফনা তুলে থাকে, চশমার মত দুটি চোখ রয়েছে। এই সাপগুলো রাজশাহীতে বেশি দেখা যায়।
নায়া কাউচিয়াঃ এইসব সাপ গোখরা নামে পরিচিত। তবে আঞ্চলিক ভাষায় বলে জাত সাপ। এই সাপ ফণা তুলে থাকে। এদের কামড়ে বাংলাদেশের অনেক মানুষ মারা যায়। এরা সাধারণত সিলেট নোয়াখালী এই অঞ্চলগুলোতে সবচেয়ে বেশি বসবাস করে।
কিং কোবরা বা শঙ্খ চূড়াঃ এইসব সাপ কে রাজ গোগরা বলা হয়। এই সাপ গুলো অনেক বিষধর সাপের চাইতে অনেক লম্বা হয়ে থাকে। যদি আপনাকে প্রশ্ন করা হয় যে, বাংলাদেশের সবচেয়ে বিষাক্ত সাপের নাম কি,
তাহলে এই প্রশ্নের উত্তরে কিং কোবরা বিষাক্ত সাপটির নাম প্রথমে আসবে। এই সাপ ফণা তুলতে পারে, চশমার মত বলায় দেখায় না। এই সাপ বাংলাদেশ ও বিশ্বের অন্যান্য বিভিন্ন দেশে বসবাস করে।
শঙ্খনীঃ এই সাপ বিশ্বের প্রায় ৮ প্রজাতির রয়েছে, তার মাঝে বাংলাদেশে ৫ প্রজাতির মত দেখা যায়। এই সাপকে আঞ্চলিক ভাষায় কেউটে বলা হয়। যা সাধারণত লাকড়ির ভিতর বা জঙ্গলে শুকনা পাতার মধ্যে লুকিয়ে থাকতে পছন্দ করে। এই বিষাক্ত সাপ কামড়ালে মানুষকে বাঁচানো কঠিন।
কালো নাইজারঃ কালো নাইজার সাপ দেখতে প্রায় শঙ্খিনের মতই। বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি রয়েছে এই সাপ। সাধারণত চট্টগ্রাম সিলেট, নোয়াখালী ও সুন্দরবন অঞ্চলে বেশি থাকে।
চন্দ্রবোড়া বা রাসেল ভাইপারঃ বাংলাদেশের যত সাপ আছে তার মাঝে সবচেয়ে বিষধর রাসেল ভাইপার। বাংলাদেশ থেকে প্রায় ১০০ বছর আগে এই সাপ চলে গেছিল কিন্তু আবার ১০ থেকে ১২ বছর যাবত দেখা যাচ্ছে।
রাসেল ভাইপার সাপে কামড়ালে কি করা উচিত নয়, সেটা অনেকেই জানেনা তা হলো; এই সাপে কামড়ের কারণে কিডনি বিকল হয়ে যায় এবং রক্ত জমাট হয়। তাই এই রোগী সেই হাসপাতালে নিতে হবে যে হাসপাতালে কিডনি ডায়ালাইসিস এর ব্যবস্থা রয়েছে। এই সাপের কামড়ে মানুষ অতি দ্রুত গতিতে মারা যায়।
সবুজ বোড়াঃ এইসব সাপ কে গ্রীন ভাইপার বলা হয়। এই সাপের মাথা মোটা হয় এবং এরা সাধারণত ছয় প্রজাতির মত। বাংলাদেশে বসবাস করছে যা সুন্দরবনের ও পাহাড়ি অঞ্চলগুলোতে বেশিরভাগ বসবাস করে থাকে। এরা মানুষের মুখে এবং মাথায় কামড় দেয় বেশি।
বিষহীন সাপ কামড়ালে কি হয়
বিষহীন সাপ কামড়ালে কি হয়, সে সম্পর্কে আমরা এখন জানবো। বাংলাদেশের যত সাপ বাস করে তার মাঝে অধিকাংশ সাপ বিষহীন। মাত্র ৭ থেকে ৮ প্রজাতির সাপের মাঝে বিষ আছে। বিষহীন সাপগুলো হল অজগর সাপ, দারাশ সাপ, ঘর গিন্নি ইত্যাদি। নিম্নে বিষহীন সাপ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
ঢোড়াঃ এই সাপ সাধারণত বিষ নেই। এরা পানিতে থাকে বেশি মাছ, ব্যাঙ, পোকামাকড় খেয়ে বেঁচে থাকে। মানুষের তেমন ক্ষতি করে না, এই সাপ সাধারণত এত সহজে মানুষকে কামড়ায় না। উত্তেজিত হলে কামড় দেয়। কিন্তু এই সাপ কে আমরা মেরে ফেলি যা করা উচিত নয়।
অজগর সাপঃ অজগর সাপ দেখতে অনেক বড় কিন্তু তার বিষ নেই। বিষ না থাকলেও এর দক্ষতা রয়েছে অনেক এবং সেই দক্ষতা দিয়েই সে শিকার করে এবং শিকারকে শ্বাস রুদ্ধ করে মেরে ফেলে। এই সাপ এর ওজন প্রায় ৩২ কেজির মতন হয়।
সাধারণত এই সাপ কামড় দিলে মানুষ মারা যায় না। এই সাপ সাধারণত পাহাড়ি অঞ্চলে বসবাস করে। এরা বছরে ৫ বার খাদ্য খেতে বাইরে আসে। সাধারণত পশুপাখি খেয়ে বেঁচে থাকে।
গুইসাপঃ নাম সাপ হলেও এটা দেখতে টিকটিকির মত। এর কোন বিষ নেই কিন্তু এদের জিহবা দেখতে সাপের মতো দুই খন্ডিত। এগুলো সাধারণত বাংলাদেশ থেকে বিলুপ্ত প্রায়। কেননা মানুষ এদেরকে হত্যা করে চামড়া পাচার করে দেয় অথচ এদেরকে মেরে ফেলা উচিত না।এই সাপ মানুষের কোন ক্ষতি করে না বরঞ্চ মানুষকে উপকার করে এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা রাখে।
দাঁড়াশ সাপঃ যত সাপ রয়েছে তার মাঝে সবচাইতে উপকারী সাপ দারাশ। যা কৃষকের বন্ধু বলা হয়ে থাকে।এরা কৃষি খেতে বেশিরভাগ থাকে, ক্ষতি কারক ইঁদুর কে মেরে ফেলে এবং শস্যকে রক্ষা করে কিন্তু মানুষ ভুল বুঝে এ সাপ কে মেরে ফেলে। যার কারণে এ সাপ এখন বিলুপ্তি দিকে। এর কোন বিষ নেই এরা মানুষের উপকার করে থাকে। এই সাপে কামড়ালে মানুষ মারা যাবে না।
কালনাগিনীঃ কাল নাগেনি সাপ এর নাম অনেকেই জানে বিষাক্ত সাপ কিন্তু আসলেই এই সাপের কোন বিষ নেই। মানুষ বাংলা সিনেমাতে দেখেছে কালনাগিনী কামড় দিলে মানুষ মারা যায়। কিন্তু ইতিপূর্বে হয়তো আপনি জানতে পেরেছেন যে বিষহীন সাপ কামড়ালে কি হয়, কখনোই মানুষ মারা যায় না।
মানুষ অধিকাংশ ভয়তেই স্ট্রোক করে মারা যায়। কালনাগেনির কোন বিষ নেই, তারা শান্ত প্রকৃতির একটি সাপ। দেখতে অত্যন্ত সুন্দর এরা মানুষের কোন ক্ষতি করে না কিন্তু মানুষ ভুলভাবে এদেরকে মেরে ফেলা উচিত নয়। যার কারণে বর্তমানে এই সাপ এখন বিলুপ্তপ্রায়।
এ সাপ সাধারণত দেখা যায় বন অঞ্চলে এরা টিকটিকি পোকামাকড় ইঁদুর ইত্যাদি খেয়ে বেঁচে থাকে।
দুধরাজ সাপঃ দুধরাজ সাপ এর নাম শুনলেই মানুষ মনে করে এরা দুধ খেয়ে বেঁচে থাকে। গ্রাম অঞ্চলে অনেকে বলে মানুষের দুধ খায় গরু-ছাগলের দুধ খেয়ে এই সাপ বেঁচে থাকে কিন্তু সাপ কখনো দুধ খায় না, দুধ দিতেও পারে না। তাই মানুষ ভুলভাবে একে মেরে ফেলে। এরা সাধারণত ইঁদুর টিকটিকি পোকামাকড় খেয়ে বেঁচে থাকে।
বিষাক্ত সাপ চেনার উপায় জেনে নিন
- এদের চোখের মনি হয় দেখতে লম্বা
- এদের লম্বা লম্বা দাঁত আছে
- লম্বা দাঁতের মাধ্যমে মানুষের শরীরে বিষ ঢুকিয়ে দিতে পারে
বিষহীন সাপ দেখতে কেমন
- এই সাপের দাঁত আছে কিন্তু দাঁতে বিষ নাই
- এই সাপের চোখের আকার গোল হয়
- এদের বড় বড় দাঁত নেই যার মাধ্যমে বিষ ঢুকিয়ে দিতে পারবে
অতি দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে এবং এমনভাবে বাঁধন দেওয়া যাবে না, যেন সেখানে পচন ধরে যায় পরবর্তীতে। আশা করি এই বিষয়গুলো মেনে চললে রোগী অনেকটাই সুস্থতা বোধ করবে।
চন্দ্রবোড়া সাপের কামড়ের লক্ষণ
রাসেল ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া সাপের কামড়ের লক্ষণ গুলো জানা খুবই প্রয়োজন।চন্দ্রবোড়া সাপ বা যাকে আমরা বলে থাকি রাসেল ভাইপার।এরা সাধারণত বাংলাদেশের রাজশাহী অঞ্চলে বেশি দেখা যায়।
এরা অত্যন্ত অলস প্রকৃতির সাপ এবং অন্যান্য সাপের মত অতি দ্রুত গতিতে পালায় না।তারা বিপদজনক দেখলে ক্ষিপ্র হতে থাকে এবং অনেক দ্রুত গতিতে কামড়ানো শুরু করে।
চন্দ্রবোড়া বা রাসেল ভাইপার সাপের ছবি
চন্দ্রবোড়া বা রাসেল ভাইপার অনেক বিষাক্ত সাপ যা কোন মানুষকে কামড় দিলে ১০০ মিনিটের মধ্যে চিকিৎসা না নিলে মারা যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। আপনি যদি বাংলাদেশের রাজশাহী অঞ্চলের লোক হন,
তাহলে আপনার সবচাইতে আগে জানতে হবে, এই সাপ কামড় দিলে সাধারণত রক্ত জমাট হয়ে যায় এবং কিডনি বিকল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই এই সাপে কামড়ালে সব হাসপাতালেই যাওয়া যাবে না।যে হাসপাতালে ডায়ালাইসিস এর ব্যবস্থা রয়েছে সেই হাসপাতালে যেতে হবে।
কেননা এই সাপে কামড়ালে কিডনি বিকল হয়ে যায়। যার কারণে ডায়ালিসিসের প্রয়োজন হয়। এই সাপের কামড়ে প্রায় ৯০ ভাগ মানুষ মারা যায়। এটা দেখতে প্রায় মোটাসোটা এবং লেজ ছোট চিকন হয়ে থাকে। সাধারণত মাথা দিকে চ্যাপ্টা আগার হয় ও ত্রিকোণমিতির মতন দেখতে, গায়ের রং হলদে বাদামী হয়। এই সাপ বিষের দিক দিয়ে বিশ্বের মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে আপনি হয়তো জানতে পেরেছেন যে রাসেল ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া সাপের কামড়ের লক্ষণ গুলো অন্যান্য বিষাক্ত সাপের চাইতে খুবই মারাত্মক। যা ৯০% মৃত্যু হয় এই সাপের কামড়ে। তাই এই সাপ থেকে সাবধান থাকবেন। এসব কামড় থেকে বাঁচার জন্য কিছু পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে।
শক্ত বুট জুতা পড়া যেতে পারে এবং এমন কিছু পোশাক পড়তে হবে যেটা সারা শরীর ঢেকে থাকে। মোটা কাপড় হতে হবে যেন এই সাপ কামড় দিলেও তার বিষাক্ত দাত শরীরের মধ্যে ঢুকে না যায়। তাই আপনি যখন কৃষি কাজে যাবেন তখন এই ব্যবস্থাগুলো নিয়ে যাবেন। তাহলে কিছুটা হলেও উপকার হবে।
আমাদের শেষ কথা
পরিশেষে বলা যায় যে, সাপে কামড়ালে তাৎক্ষণিক হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। তাই সাপে কামড়ালে কি করা উচিত নয়, তা এতক্ষণে আমার এই কনটেন্ট এর মাধ্যমে জানতে পেরেছেন তা হলো; কখনোই ওঝা বা কবিরাজের কাছে নিয়ে যাবেন না। আমার এই পোস্টটি পড়ে যদি আপনি একটুও উপকার পান,তাহলে আপনার বন্ধু-বান্ধবের মাঝে পোস্টটি শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ
এম আর মাহমুদ ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url