যক্ষা রোগ কিভাবে ছড়ায় জেনে নিন -যক্ষা রোগের চিকিৎসার নাম কি, বিস্তারিত জানুন
যক্ষা একটি সংক্রামক রোগ। তাহলে যক্ষা রোগ কিভাবে ছড়ায়? এটা আমাদের জানা প্রয়োজন। এটা শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে একজন সুস্থ মানুষের ফুসফুসে প্রবেশ করে। চলুন, যক্ষা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
বাংলাদেশের দরিদ্র অঞ্চল গুলোতে যক্ষা রোগের প্রকোপ বেশি দেখা যায়। কারণ তারা যক্ষা সম্পর্কে তেমন একটা জানেনা, যার কারণে হাচি -কাশির মাধ্যমে খুব দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে পড়ে। তাই যক্ষা রোগ কিভাবে ছড়ায়? এ সম্পর্কে জানতে পোস্টে মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
পোস্টসূচিপত্রঃযক্ষা রোগ কিভাবে ছড়ায় জেনে নিন -যক্ষা রোগের চিকিৎসার নাম কি
যক্ষা রোগ কি
অনেকেই জানেনা যক্ষা রোগ কি, যক্ষা রোগ একটি সংক্রামক রোগ। এ রোগের জীবাণু শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে মানুষের ফুসফুসে প্রবেশ করে এবং সেখানে বংশবৃদ্ধি করে ফুসফুসের ক্ষতিসাধন করে।
সময়মতো চিকিৎসা না করলে ফুসফুসের ক্ষতির কারণে মৃত্যু হতে পারে।
যক্ষা রোগটা দুই সপ্তাহের বেশি কাশি হলে এবং বিকালে যদি জ্বর আসে তাহলে আমরা মনে করি, তার যক্ষা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যার যক্ষ্মা হয়েছে তার হাচি কাশির মাধ্যমে একজন সুস্থ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে।
যক্ষা কত প্রকার
আসলে যক্ষা কত প্রকার হতে পারে, প্রধানত যক্ষা দুই প্রকার হয়।
- ফুসফুসের রক্ষা
- ফুসফুসের যক্ষা সবচেয়ে বেশি হয়
- ফুসফুসের যক্ষা ছোয়াচে
- ল্যাটেন্ট যক্ষা পরবর্তীতে একটিভ হতে পারে
- ল্যাটেন্ট যক্ষা ছোয়াচে নয়
- এ যক্ষা ফুসফুস ছাড়া অন্য অঙ্গেও হতে পারে
- হাড়, মেরুদন্ড, মস্তিষ্ক, লসিকা গ্রন্থী, লিভার, প্রজনন অঙ্গ, ত্বক, প্লিহা, চোখ ইত্যাদি জায়গায় হতে পারে
- ল্যাটেন্ট যক্ষা একটিভ হতে পারে, এছাড়া যখন কোন যক্ষা রোগী ওষুধ খেতে থাকে, কখনো কখনো ওষুধ বিরুদ্ধে কাজ করে। আশা করি বুঝতে পেরেছেন যক্ষা কত প্রকার হতে পারে।
যক্ষা রোগের জীবাণু আবিষ্কার করেন কে
যক্ষা রোগের জীবাণু আবিষ্কার করার ফলে মানুষ সুস্থ হওয়া শুরু করেছেন। তাহলে অবশ্যই আমাদের জানা দরকার যক্ষা রোগের জীবাণু আবিষ্কার করেন কে, তিনি হলেন জার্মানি বিজ্ঞানী রবার্ট কখ।
১৮৮২ সালের রবার্ট কখ এই জীবানুকে মাইক্রোব্যাকটেরিয়াম টিউবারকিউলোসিস নাম দেন।
তার এই আবিষ্কার যক্ষা রোগের প্রতিরোধের ক্ষেত্রে ও চিকিৎসার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
যক্ষা রোগ কিভাবে ছড়ায়
মূলত যক্ষা রোগ কিভাবে ছড়ায়? তাহলে জেনে নিন, যক্ষা বাতাসের মাধ্যমে ছড়ায়। এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির হাচি কাশির মাধ্যমে জীবাণু বাতাসের মাধ্যমে সুস্থ মানুষের ভিতরে প্রবেশ করে যক্ষা রোগ সৃষ্টি করে। নিম্নে বর্ণনা করা হলো,
- যক্ষা রোগী যখন হাচি-কাশি দেয় তখন তার ফুসফুস থেকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জীবণু গুলো বাতাসের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
- যক্ষা রোগী যখন কথা বলে তখন তার মুখ থেকেও জীবাণু বায়ুর সাথে মিশে যায়।
- যদি গরু যক্ষায় আক্রান্ত হয় তাহলে সেই গরুর দুধ খেলে যক্ষা হতে পারে, তবে পাস্তুরাইন করে দুধ পান করলে জীবাণু শরীরে প্রবেশ করতে পারে না।
- যক্ষা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি তাদেরই
- যারা দীর্ঘক্ষন সময় যক্ষা রোগের পাশাপাশি থাকে
- যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা খুবই কম
- যারা ধূমপান ও মধ্যপান করে
- অপুষ্টিতে ভোগে যারা
- ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তি
- এইচআইভি বা এইডস রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি
যক্ষা রোগ কেন হয়
যক্ষা জীবাণু মাইক্রো ব্যাকটেরিয়াম টিউবারকুলোসিস দিয়ে এই রোগ হয়। আসলে যক্ষা রোগ কেন হয়, যক্ষা রোগ সাধারণত বাতাসের মাধ্যমে ছড়ায়, যক্ষা রোগের জীবাণু একজন আক্রান্ত রোগীর হাঁচি- কাশি বা কফ থেকে বাতাসে মিশে গিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে সুস্থ লোকের ফুসফুসে প্রবেশ করে। এভাবেই যক্ষা রোগ হয়ে
থাকে এবং সে যদি কোন কারনে যক্ষা সংক্রমিত রোগীর সাথে দীর্ঘ সময় থাকেন তাহলে যক্ষা রোগীর হাঁচি- কাশি মাধ্যমে তারও যক্ষা হতে পারে। যক্ষা রোগ আরো বিভিন্ন কারণে হতে পারে তার মধ্যে
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে,
- প্রচুর পরিমাণে অ্যালকোহল জাতীয় খাবার গ্রহণ করলে বা মদ গ্রহণ করলে,
- সংক্রামিত ব্যক্তির সাথে সহবাস করলে বা বসবাস করলে এবং এমন একটি জায়গা যেখানে লোকজনের ভিড় বেশি সেখানে গেলেও এই যক্ষা রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
- একজন যক্ষায় আক্রান্ত ব্যক্তি তার এই জীবাণু শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে বছরে প্রায় ১০ জন ব্যক্তিকে আক্রমণ করতে পারে
- শরীরের অন্যান্য স্থান
- মস্তিষ্ক
- ফুসফুস- শতকরা ৮৫ ভাগের উর্ধ্বে
- ফুসফুসের আবরণী
- লসিকা গ্রন্থি
- হাড়
- অন্ত্র
যক্ষা রোগের লক্ষণ
দুই সপ্তাহের বেশি কাশি ও সাথে জ্বর থাকলে, খাবার অরুচি হলে, তাহলেই তার মাঝে যক্ষা রোগের লক্ষণ রয়েছে নিম্নে আরো বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
- একনাগারে দুই সপ্তাহের অধিক সময় পর্যন্ত কাশি
- প্রতিদিন সন্ধ্যায় বা রাতে জ্বর আসা
- ওজন কমে যাওয়া
- বুকে ব্যথা
- অল্প শ্রমই ক্লান্তি বোধ করা
- মাঝে মাঝে কাশি বা কফ এর সাথে রক্ত আসা, এটাও যক্ষা রোগের লক্ষণ।
- ক্ষুধামান্দা
- রাতের ঘাম
- শরীর ঠান্ডা হয়ে যাওয়া
- এমনকি যক্ষা রোগে প্রসাবের সাথেও রক্ত বের হতে পারে
- মলত্যাগের অভ্যাসে পরিবর্তন হতে পারে
- বুকে বা পেটে পানি জমা
- অজ্ঞান বা কিছু নিয়ে হতে পারে
যক্ষা রোগের প্রতিরোধ
ইতিমধ্যে আমরা জেনেছি যে, যক্ষা রোগ কিভাবে ছড়ায়? সম্পর্কে চলুন, যক্ষা রোগ প্রতিরোধ করার পদ্ধতি সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। নিম্নের এ বিষয়ে আলোচনা করা হলো,
যক্ষা রোগীকে হাচি-কাশির সময় রুমাল বা কাপড়ের টুকরো ব্যবহার করতে হবে। যেখানে সেখানে কফ ও থুতু ফেলা থেকে বিরত থাকতে হবে। আপনি আমি এই বিষয়গুলো যদি মানতে পারি তাহলে যক্ষা রোগের প্রতিরোধ করা সম্ভব।
"যক্ষা হলে রক্ষা নাই এই কথার ভিত্তি নাই" কারণ দেশ এখন অনেক উন্নত হয়েছে,উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা রয়েছে তাই সঠিকভাবে নিয়মিত চিকিৎসা নিলে যক্ষা রোগ ভালো হয়। জন্মের পর ৪৫ দিনের মধ্যে শিশুকে বিসিজি টিকা দিতে হবে, তাহলে যক্ষা থেকে অনেকটাই রক্ষা পাবে।
যক্ষা রোগ বেশি আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা হল হাসপাতালে যারা কর্মরত রয়েছে, ডাক্তার নার্স ইত্যাদি এবং স্বাস্থ্যকর্মী।ডায়াবেটিসের রোগী বিভিন্ন বড় ধরনের রোগী যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, এইচআইভি রোগী। তাই এদের সবসময় সতর্ক থাকতে হবে।
টিবি রোগের পরীক্ষা
টিবি রোগের পরীক্ষা কখন করাবেন। যখন কোন ব্যক্তি দুই সপ্তাহের অধিক সময় কাশি বা উপরে উল্লেখিত ১ বা একাধিক লক্ষণ থাকলে তাকে যক্ষা রোগী বলে সন্দেহ করা হয়। পরীক্ষার মাধ্যমে তার রোগ নির্ণয়ের ব্যবস্থা করতে হবে প্রথম দিন সন্দেহজনক রোগীকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স বা টিবি ক্লিনিক ও বক্ষব্যাধি হাসপাতাল বা এনজিও ক্লিনিক এ গিয়ে পরীক্ষা করতে হবে।
দ্বিতীয় দিন বাড়ি থেকে সারা রাতের অথবা সকাল বেলার পাত্র সংগ্রহ করে চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে আসতে হবে এবং কেন্দ্রে আসার পর আরো একবার কফ দিতে হবে। মোট তিনবার টিবি রোগের পরীক্ষা রিপোর্টের উপর ভিত্তি করেই যক্ষা রোগ নির্ণয় করা হয়।
যদি কোন ব্যক্তির মধ্যে যক্ষার লক্ষণ সুস্পষ্ট থাকে অথচ পরীক্ষায় কোন জীবাণু না পাওয়া যায়, তবে সেই ব্যক্তির রোগ নির্ণয়ের দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট চিকিৎসা কেন্দ্রের চিকিৎসকের।
তা হল হাঁচি কাশীর মাধ্যমে স্বামী স্ত্রীর মেলামেশার মাধ্যমে যখন হাসি বা কাশি দেয় এর মাধ্যমে স্ত্রীর মধ্যেও প্রবেশ করে থাকে তাই যক্ষার লক্ষণ দেখা মাত্রই খুবই ঘনিষ্ঠ হওয়া থেকে বিরত থাকুন। আপনি নিকটস্থ কমিউনিটি ক্লিনিকে গেলেও ওখানে যিনি স্বাস্থ্যকর্মী রয়েছেন ,সেখান থেকেও আপনি এই যক্ষা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
যক্ষা রোগের টিকার নাম কি
যক্ষা রোগের টিকার নাম কি, তা হলো "বিসিজি" যার পূর্ণরূপ হল (ব্যাসিলাস ক্যালমেট গুয়েরিন)। শিশুর জন্মের দুই সপ্তাহের মধ্যে বিসিজি টিকা দিলে ভালো হয়, তবে ৪৫ দিনের মধ্যে দেওয়া যাবে। একজন শিশুকে যদি বিসিজি টিকা দেওয়া হয় তাহলে সে যক্ষা রোগ থেকে অনেকটাই নিরাপদ থাকবে।
তবে এই টিকায় যে যক্ষা রোগের প্রতিরোধ করতে পারবেন তা কিন্তু নয় বলা যেতে পারে ৫০% কমিয়ে রাখতে পারবে।
আরো পড়ুনঃ আয়োডিনের অভাবজনিত রোগ, সম্পর্কে বিস্তারিত
আপনার শিশুকে পাঁচ বছরের মধ্যেও এই টিকা দিতে পারবেন।
শিশুকে টিকা দেওয়ার কারণে যদি কোন শিশুর সমস্যা হয়, ভয় পাওয়ার কিছু নেই , বিসিসি টিকার দেওয়ার পরে দেওয়ার স্থানে ৮ থেকে ১২ সপ্তাহের মধ্যে প্রথমে ফোড়া ও পরে ঘাঁ দেখা দিতে পারে এতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই । যদি টিকা দেওয়ার স্থানে ঘা না হয় হয়, তাহলে পরবর্তীতে আবার ১২ সপ্তাহ পর তাকে দ্বিতীয়বার "বিসিজি" টিকে দেওয়া উচিত।
যক্ষা রোগের চিকিৎসা
ইতিপূর্বে আমরা জেনেছি যে,যক্ষা রোগ কিভাবে ছড়ায়? এখন জানবো এর চিকিৎসা ব্যবস্থা সম্পর্কে। নিম্নে এ বিষয় বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
যক্ষা রোগের চিকিৎসা ব্যবস্থাকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে,
ক্যাটাগরি ১- নতুন রোগী যাদের কফ পরীক্ষায় যক্ষা রোগের জীবাণু পাওয়া গেছে অথবা কফে জীবাণু পাওয়া যায় নাই কিন্তু ফুসফুসে যক্ষা আছে এবং গুরুতর অসুস্থ নতুন রোগী চিকিৎসার পরামর্শ অনুযায়ী অথবা মিলিয়ারি বা মস্তিষ্কের যক্ষা রোগী
ক্যাটাগরি ২- ভালো হয়ে যাওয়ার পর স্বল্পমেয়াদি চিকিৎসায় পুনরায় যক্ষা রোগে আক্রান্ত জীবাণুযুক্ত কম এবং নতুন যক্ষা রোগের চিকিৎসা চলাকালীন সময়ে পঞ্চম মাসেও যদি কফে যক্ষা জীবাণু পাওয়া যায়।
যক্ষা রোগের চিকিৎসা করা অবস্থায় যদি যক্ষা রোগী নিয়মিত ওষুধ না খায় তাহলে তার যক্ষার জীবাণু অন্যান্য সদস্যদের মাঝেও ছড়াতে থাকবে। তাই চিকিৎসা চলাকালীন সময় কখনোই ওষুধ মিস করা যাবে না।
যক্ষা রোগের চিকিৎসার নাম কি
যক্ষা রোগের চিকিৎসা নাম কি, জেনে নিন। তা হলো DOTS পদ্ধতিতে চিকিৎসা দেওয়া হয়। DOTS এর পূর্ণরূপ হলো Directly Observed treatment, Short-course
এই পদ্ধতিতে রোগীকে নিয়মিত ওষুধ খাওয়ানোর জন্য একজন স্বাস্থ্য কর্মীকে নিয়োগ দেওয়া হয়। সে
এই পদ্ধতিতে .৬ মাস থেকে ৯ মাস পর্যন্ত ওষুধ খাওয়াতে থাকে। তবে কিছু ক্ষেত্রে যদি রোগী ওষুধ মিস করে,তাহলে তাকে পুনরায় আবার ওষুধ খেতে হয় এবং দীর্ঘদিন যাবত ওষুধ খাওয়া লাগতে পারে।
টিবি রোগের ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
প্রায় সব ওষুধেরই পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া আছে, তাই টিবি রোগের ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে। নিম্নে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া গুলো বর্ণনা করা হলো,
- ক্ষুধা মন্দা, পেটে ব্যথা হতে পারে
- হাত ও পায়ে অবশ ভাব বা অবশ হয়ে যাওয়া। জন্ডিস, চুলকানি ও চামড়ায় দানা বের হতে পারে। জ্বর হতে পারে
- গিরায় ব্যাথা হতে পারে
- কানে ঝিনঝিন শব্দ হওয়া , মাথা ঘুরানো
- চোখে ঝাপসা দেখা
যক্ষা রোগীর ওষুধ খাওয়ার ফলে পায়খানা ওষুধের রঙের মতো হতে পারে, প্রসাব ওষুধের রঙের মতো হতে পারে ।এতে নিয়ে কোন টেনশন এর কিছু নাই। ওষুধের কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
যক্ষা রোগের ঔষধ খাওয়ার নিয়ম
যক্ষা রোগের ঔষধ খাওয়ার নিয়ম হলো, জীবণুযুক্ত যক্ষা রোগীদের স্বাস্থ্যকর্মীদের সম্মুখে প্রতিদিন দুই বা তিন মাস ওষুধ সেবন করায় নাম হচ্ছে ডটস। এভাবে একজন স্বাস্থ্যকর্মীর মাধ্যমে যদি যক্ষা রোগী ওষুধ খায় তাহলে অতি দ্রুত গতিতে সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
আর যে সকল রোগী যক্ষার ওষুধ খেতে মিস করেছে তাদেরকে ফেইলর কেস বলা হয়। আর তারা স্বাস্থ্যকর্মীর কাছে আট মাস যাবত নিয়মিত ওষুধ খাবে। এছাড়াও যক্ষা রোগীকে আরো বেশ কিছু বিষয় মেনে চলতে হবে। নিম্নে সে বিষয়গুলো দেওয়া হল।
তিন সপ্তাহের অধিক কাশি এমন সন্দেহজনক যক্ষা রোগীদের স্বাস্থ্য কেন্দ্রে বা বক্ষব্যাধি ক্লিনিক বা এনজিও ক্লিনিকে উপস্থিত হয়ে পরীক্ষার মাধ্যমে যক্ষা রোগ হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করতে হবে। যক্ষা রোগ নিয়ন্ত্রণের রাজনৈতিক বা সরকারি বা বেসরকারি অঙ্গীকার অব্যাহত ও অন্যান্য লজিস্টিক সরবরাহ
জীবাণুযুক্ত যক্ষা রোগীদের সরাসরি তদারকিতে ওষুধ খাওয়ানো
মানসম্মত রেকর্ডিং ও রিপোর্টিং সিস্টেম চালু করা।
ক্যাটাগরি ১- এর চিকিৎসা ক্ষেত্রে প্রথম দুই তিন মাস সরাসরি তদারকিত ওষুধ খাওয়ানোর জন্য নিম্নলিখিত যে কোন একটি পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে
রোগীকে প্রতিদিন ইউনিয়ন সাব সেন্টার বা এফ ডব্লিউ সি বা কমিউনিটি ক্লিনিকে এসে ওষুধ খেতে হবে
রোগীকে প্রতিদিন চিকিৎসা কেন্দ্রে ওষুধ খেতে হবে।
গুরুতর অসুস্থ রোগী অথবা যাদের নিয়মিত স্বাস্থ্য কেন্দ্রে উপস্থিত হওয়ার সম্ভবপর নয় তাদের হাসপাতালে ভর্তির মাধ্যমে চিকিৎসার ব্যবস্থা।
করাস্বাস্থ্য কর্মীর বাড়িতে স্বাস্থ্যকর্মী কর্তৃক রোগীকে প্রতিদিন ওষুধ খাওয়ানো।
রোগের কোন আত্মীয় বা দায়িত্বশীল কোন ব্যক্তি কর্তৃক প্রতিদিন রুগীকে ওষুধ খাওয়ানো।
পরবর্তী ছয় মাস রোগী নিজেই রোজ একবার ওষুধ সেবন করবেন।
এক মাস অথবা ১৫ দিন অন্তর চিকিৎসা কেন্দ্র হতে ওষুধ সংগ্রহ করবেন। রোগী নিয়মিত ওষুধ খাচ্ছে কিনা স্বাস্থ্যকর্মীরা মাঝে মাঝে রোগীর বাড়িতে গিয়ে সে সম্পর্কে খোঁজ নিবেন।
ক্যাটাগরি ২- এর ক্ষেত্রে চিকিৎসার পুরো সময়ই রোগীকে সরাসরি তদারকিতে ওষুধ খেতে হবে। আশা করি উপরোক্ত পদ্ধতি গুলোর মাধ্যমে যক্ষা রোগের ঔষধ খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।
যক্ষা হলে করণীয় কি
যক্ষা হলে করণীয় কি? তা হলো; আপনি সতর্ক থাকবেন। কেননা আপনার মাধ্যমে পরিবারের অন্যজনের রোগটা ছড়িয়ে যেতে পারে। তাই যতটা সম্ভব আপনি নিজেকে একটু আলাদা করে রাখবেন এবং মাক্স পরিহিত অবস্থায় সবসময় পরিবারের সকলের কাছে যাবেন । যতটুকু পারেন আপনি সকলের থেকে একটু আলাদা থাকবেন।
এছাড়াও হাচি -কাশির যে কোন জায়গায় থুতু খেলা যাবে না , ছোট বাচ্চা থাকলে তার থেকে অবশ্যই দূরে থাকার চেষ্টা করবেন ।কারণ আপনার মাধ্যমে সেও আক্রমণিত হতে পারে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ঔষধ খাওয়ার কয়েক সপ্তাহের মধ্যে আপনি সুস্থতা অনুভব করবেন। এই সুস্থতা অত্যন্ত সাময়িক ও আপেক্ষিক, কারণ এই সময় রোগীর শরীরে যক্ষার জীবাণু বিদ্যমান থাকে।
রোগ সম্পূর্ণ নিরাময়ের জন্য চিকিৎসক ঔষধ বন্ধ করে দেওয়ার পরামর্শ না দেওয়া পর্যন্ত চালিয়ে যেতে হবে। তা না হলে রোগী পুনরায় অসুস্থ হয়ে পড়বে এবং রোগ জটিল আকার ধারণ করে জীবনের প্রতি হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে।
আরো পড়নঃ রক্তশূন্যতার কারন কি বিস্তারিত জানুন
যক্ষা রোগী নিজের করণীয় এর পাশাপাশি পরিবার বা সমাজের লোকের সকল স্তরে জনগণকে যক্ষা রোগের সম্বন্ধে নিম্নলিখিত তথ্য জানাতে হবে এবং এই রোগ নিয়ন্ত্রণে তাদের সহযোগিতা কামনা করতে হবে।
নিয়ন্ত্রণ না করলে প্রচুর পরিমাণে ছড়িয়ে যাবে। তাই একজন যক্ষা রোগীর পাশে সমাজের লোক এবং পরিবারের লোকজনও তাকে উৎসাহিত করবে এবং তার সাথে ভালো ব্যবহার করবে, তাহলেই রোগীটা দ্রুত গতিতে সেরে উঠবে।
নিম্নে পরিবার ও সমাজের লোকজন যেভাবে একজন যক্ষা রোগীকে উদ্বুদ্ধ করণ করবে বা উৎসাহিত করবে এবং যক্ষা হলে করণীয় কি সে সম্পর্কে মানুষকে বলতে হবে নিচে সেগুলো দেওয়া হল।
রোগ নিরাময়ের জন্য প্রয়োজন নিয়মিত ক্রমাগত ও সঠিক মাত্রায় ওষুধ খাওয়া,রোগীর জন্য দামি খাবারের কোন প্রয়োজন নেই।
সকল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স বা বক্ষব্যাধি ক্লিনিক বা এনজিও ক্লিনিকে বিনামূল্যে যক্ষা রোগের চিকিৎসা করা হয় ।তাই টাকা দিয়ে কোন ওষুধ কেনার প্রয়োজন নেই। বর্তমান চিকিৎসা ব্যবস্থা যক্ষা রোগ ৮ মাসে সম্পূর্ণ ভালো হয়ে যায়।
এ রোগের সংক্রমণ ক্ষমতা চিকিৎসা শুরু করার কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই আর থাকে না, তাই এই রোগে ভয় পাওয়ার কোন কারণ নেই। জানাশোনা বা আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে কারো যক্ষা রোগ হলে, সে যাতে নিয়মিত চিকিৎসা গ্রহণ করে সেজন্য উৎসাহ প্রধান বা ব্যবস্থা গ্রহণ করা। কোন ব্যক্তির তিন সপ্তাহের বেশি কাশি থাকলে তাকে স্বাস্থ্য কেন্দ্রে পরীক্ষার জন্য পাঠানো।
যক্ষা রোগীর খাবার তালিকা
যক্ষা রোগীর খাবার তালিকা সম্পর্কে জানা উচিত। তাই নিম্নে যক্ষা রোগের খাবার সম্পর্কে বর্ণনা করা হলো,
যক্ষা রোগীর সাধারণত ওজন কমে যায়, তার জন্য তার প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ক্যালোরিযুক্ত খাবার খাওয়া প্রয়োজন। তাই ক্যালোরি নির্ভর খাবার গুলো হলো- কলা, বাদাম, গম এগুলোতে প্রচুর পরিমাণ ক্যালরি রয়েছে। এগুলো যদি খাবার খায় তাহলে অনেকটা সুস্থ হয়ে উঠবে এবং তার ওজন বাড়বে।
ভিটামিন( এ, সি, ই )রয়েছে এমন খাবার যক্ষা রোগীর খাবার তালিকা তে রাখা উচিত যেমন; আম,লেবু ,কমলা, গাজর, টমেটো, পেয়ারা ,বাদাম ,আমলকি খাওয়া টিবি রোগের জন্য অনেক উপকারী।প্রোটিন যুক্ত খাবার খুবই দরকার যেমন- মাছ ও মুরগি থাকে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স এছাড়া এগুলো খেলে প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন পাবে।উপরোক্ত খাবারগুলো খেলে আপনার ওজন বৃদ্ধি পাবে এবং সুস্থ থাকবেন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।
লেখকের শেষ কথা,
পরিশেষে বলা যেতে পারে যে প্রতিদিন বিশ্বের প্রায় ৫০০০ এর মত লোক যক্ষায় মারা যাচ্ছে। তাহলে বুঝতেই পারছেন যে যক্ষা রোগ কিভাবে ছড়ায়, প্রচুর পরিমাণে ছড়াচ্ছে। বিশেষ করে আমাদের বাংলাদেশে এই রোগ বেশি ছড়াচ্ছে। তাই আপনি আপনার পরিবার, সমাজের লোক, সবাই সচেতন থাকবেন। পোস্টটি যদি ভালো লাগে তাহলে আপনার বন্ধু- বান্ধবের সাথে শেয়ার করবেন।
এম আর মাহমুদ ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url