আইবিএস রোগীর ওজন বাড়ানোর উপায়-আইবিএস থেকে মুক্তির ৫টি উপায়

যদি আপনি আইবিএস রোগী হয়ে থাকেন, তাহলে আইবিএস রোগীর ওজন বাড়ানোর উপায় গুলো জানতে হবে। কেননা আইবিএস রোগীগুলো অনেক খাবার খায় না, যার কারণে পুষ্টির অভাবে তাদের ওজন কমতে থাকে। চলুন, আইবিএস রোগ সারাতে আইবিএস এর ওষুধ সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
ছবি
অনেকে আইবিএস এর চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন ধরনের ওষুধ খেয়ে থাকেন কিন্তু কোনমতেই কমছে না। তাকে খাবার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। তাই আইবিএস রোগীর ওজন বাড়ানোর উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আজকের আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

পোস্টসূচিপত্রঃআইবিএস রোগীর ওজন বাড়ানোর উপায়-আইবিএস থেকে মুক্তির ৫টি উপায়

আইবিএস কি

আইবিএস কি, তা হলো ইরিটেবল বাউয়েল সিনড্রোম যা এক কথায় বলা হয় পেটের অস্বস্তিকর অবস্থা। পেটের মাঝে বুদবুদ শব্দ করা, পেট ফাঁপা দিয়ে থাকা, অল্প অল্প পায়খানা হওয়া, পেটে ব্যথা করা, গ্যাস্টিকের সমস্যা হওয়া, ডায়রিয়া হওয়া ইত্যাদি সমস্যা হওয়া।

অনেকের কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে, পায়খানার নিয়ম পরিবর্তন হওয়া,আগে দেখা যেত পায়খানা দিনে দুইবার হতো এবং কলার মত পায়খানা হত এটাই ছিল একজন সুস্থ মানুষের পায়খানার ধরন কিন্তু একজন আইবিএস এর রোগীর পায়খানা সাধারণত নরম হয়, ঘন ঘন হয়।
সাধারণত ২০-৪০ বছর বয়স এর লোকদে সেই বেশি হয়ে থাকে। বিশেষ করে নারীদের বেশি হয় কারণ যারা পরিশ্রম কম করেন তাদেরই বেশি হয়ে থাকে এবং যারা মানসিক টেনশন করেন। আই বি এস এর কারণে অনেক সময় ওজন কমে যায়।

আজ পর্যন্ত আইবিএস এর কোন নির্দিষ্ট কারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি, এটা একটি পরিপাকতন্ত্রের উপকারী ব্যাকটেরিয়া কমে যাওয়ার কারণে খাদ্য হজম শক্তি কমে যায়। যার কারণে এই ধরনের সমস্যাটা হয়ে থাকে, আশা করি হয়তো এতক্ষণে বুঝতে পেরেছেন আইবিএস কি।

আইবিএস কত প্রকার

এখন আমরা জানবো আইবিএস কত প্রকার আইবিএস মূলত ৩ প্রকার। নিম্নে আইবিএস এর প্রকারভেদ গুলো আলোচনা করা হলোঃ

১। আইবিএস ডি (IBS-D)
২। আইবিএস সি (IBS-C)
৩। আই বি এস এম (IBS-M)
এই তিন প্রকার আইবিএস এর চিকিৎসা দেওয়া হয়ে থাকে এর নির্দিষ্ট কোন চিকিৎসা নেই।

১। আইবিএস ডি (IBS-D) হলো এই ধরনের রোগীগুলো সাধারণত বেশিরভাগ পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া হয় এবং বদহজম হয়, ঘন ঘন নরম পায়খানা হয় এটাকেই আইবিএস-ডি বলে।

২। আইবিএস সি (IBS-C) হলো যাদের প্রচন্ড পরিমাণ পেটের ব্যথা করে, পায়খানা পরিষ্কারভাবে হয় না, যাকে কোষ্ঠকাঠিন্যে বলা হয়।

৩। আই বি এস এম (IBS-M) আইবিএস-এম এটা হল কখনো রোগীর কোষ্ঠকাঠিন্য হচ্ছে আবার কয়েকদিন পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া হচ্ছে দুইটাই সমস্যা থাকে এই ধরনের আইবিএসকে আই বি এস এম বলে।

উপরোক্ত ৩ প্রকার আইবিএস এর কারণে রোগীরা খেতে পারে না, কেননা যা কিছুই খায় শুধু পায়খানা হয়ে থাকে। যার কারণে তারা অনেক পুষ্টিকর খাবার খেতে পারে না এজন্য তাদের ওজন কমে যায়। যে কোন কোন খাবারে তার সমস্যা হচ্ছে সেই খাবারগুলো বাদ দিয়ে তার পরিপূরক যে খাবারটা খেলে পেটের সমস্যা হবে না এ ধরনের খাবার খেলেই সে শরীরে পুষ্টি পাবে এবং ওজন বাড়বে। আশা করি বুঝতে পেরেছেন আইবিএস কত প্রকার।

আইবিএস রোগের লক্ষণ

আইবিএস রোগের লক্ষণ গুলো সাধারণত দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। একটি হলো কোষ্ঠকাঠিন্য দ্বিতীয়টি হল পাতলা পায়খানা অথবা ডায়রিয়া এর উপর ভিত্তি করে লক্ষণ গুলো প্রকাশ পায়। নিম্নে আইবিএস রোগের লক্ষণ গুলো আলোচনা করা হলোঃ

  • আইবিএস রোগীর সাধারণত পেটে ব্যথা করে এবং পেটে মোচড় দিয়ে পায়খানা হলে ভালো লাগে অথবা বায়ু দিলে ভালো লাগে।
  • ঘন ঘন ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা হয়ে থাকে।
  • পায়খানার সঙ্গে আমের রসের মত বিজল বের হয়।
  • প্রায় যে কোন খাবার খেলেই পেট ফাঁপা দিয়ে থাকে গ্যাস হয়ে থাকে।
  • যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য তাদের পায়খানা অল্প অল্প করে শক্ত গুটিগুটি মল বের হয়।
  • পায়খানা করার পরও মনে হয় ভিতরে আরো কিছু রয়েই গেছে।
  • সকালে খাবার খাওয়ার পর পায়খানা চাপ দেয় এবং মল ত্যাগ করলে ভালো লাগে।
  • সব সময় পেটের মাঝে অস্বস্তি মনে হয়।
  • পেটের মাঝে বুদবুদ শব্দ করতে থাকে।
  • পেটে প্রচন্ড ব্যথা হয় অনেকের গলা, বুক জ্বালাপোড়া করে।
  • প্রচন্ড গ্যাস হয়ে থাকে এবং ঘন ঘন বায়ু হয়।
  • খাওয়ার পরপরই পায়খানার চাপ দেয় পেটে মোচড় দিয়ে পায়খানা হয় পায়খানার পর ভালো লাগে।
  • পায়খানার বেগ ধরে রাখতে পারেনা।
  • শরীর দুর্বল হয়ে যায় এবং মনটা বিষন্ন থাকে কাজে মন বসে না।
  • ওজন কমতে থাকে কেননা সে পরিমাণ মতো খেতে পারে না যা কিছুই খাওয়া-দাওয়া করুক না কেন পায়খানা শুরু হয়। এতে তার ওজন কমতে থাকে। মনে রাখতে হবে কোন কোন খাবার খেলে সমস্যা হয় সেগুলো খাবার তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে তাহলেই সুস্থ থাকবেন এবং ওজন বাড়বে।
  • অনেক সময় পায়খানার সাথে সাদা সাদা ফেনার মত বের হয়।
  • পেটের মাঝে কামড়ানি শুরু হয় এবং বমি বমি লাগে, খেতে মন চায় না।
  • পেটের এই সমস্যার কারণে ঘুম কম হয় এবং যৌন চাহিদাও কমে যায়।

আইবিএস থেকে মুক্তির উপায়

এখন আমরা জানবো আইবিএস থেকে মুক্তির উপায় গুলো সম্পর্কে। পাঁচটি উপায়ে আপনি আইবিএস থেকে মুক্তি পেতে পারেন নিম্নে সে পাঁচটি নিয়ম বর্ণনা করা হলোঃ

১। মানসিক প্রশান্তিঃ আইবিএস রোগীর প্রধান কাজ হল মানসিক টেনশন থেকে মুক্ত থাকা। তাহলেই খাদ্য হজম হবে এবং পায়খানা কম হবে সুস্থ থাকবেন। আপনাকে সবসময় আইবিএস নিয়ে টেনশন করা যাবে না। আপনি সবসময় যে কোন কাজের মাঝে ব্যস্ত থাকবেন, অন্যদিকে মন স্থির করবেন। তাহলে আপনার বারে বারে টয়লেটে যেতে হবে না।

এছাড়াও মনের প্রশান্তি আনার জন্য প্রত্যেকেই তার ধর্মীয় প্রার্থনা করতে থাকবে যেমন মুসলমানরা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়বে, কোরআন তেলাওয়াত করবে, এর মাঝে তার নিজের প্রশান্তি ফিরে পাবে। এতে করে আইবিএস কমে যাবে।

এছাড়াও আইবিএস থেকে মুক্তির উপায় হল সব সময় পরিবারের সাথে হাসিখুশি থাকতে হবে এবং বিভিন্ন হাসি মূলক নাটক, গান ইত্যাদি এগুলো দেখলে টেনশন মুক্ত থাকতে পারবেন।

২। পুষ্টিকর খাবার খেতে হবেঃ যে খাবার গুলো খেলে আপনার আইবিএস এর সমস্যা হয় সেইগুলো আপনার খাবার তালিকা থেকে বাদ দিয়ে দিবেন। বাকি অন্য খাবারগুলো যেগুলোতে পুষ্টি বেশি সেগুলো খাবার খাবেন।

এতে আপনার শরীর স্বাস্থ্য ভালো থাকবে এবং সুস্থ থাকবেন এটাই হলো আইবিএস রোগীর ওজন বাড়ানোর উপায় এর মধ্যে অন্যতম মাধ্যম। যেমন পুষ্টিকর খাবারের মধ্যে দুধের তৈরি দই খেতে পারেন।
এতে প্রচুর পরিমাণে ভালো ব্যাকটেরিয়া থাকে যা আপনার খাদ্য হজমে সাহায্য করবে।প্রচুর পরিমাণে সবুজ সবজি খেতে পারেন।

যেগুলোতে আপনার পেটের সমস্যা না হয় এবং যেগুলো মসলাযুক্ত, তৈলাক্ত, বেকারির খাবার, এবং ক্যাফইন এই জাতীয় খাবার গুলো এড়িয়ে চলবেন। একসাথে খাবার বেশি করে না খেয়ে অল্প অল্প করে দিনে ৪- ৫ বার আপনি খেতে পারেন, এতে আপনার শরীর স্বাস্থ্য ভালো থাকবে।

৩। নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম করতে হবেঃ প্রতিদিন আপনাকে কমপক্ষে সকাল বিকাল ২ ঘন্টা শরীর ঘামিয়ে ব্যায়াম করতে হবে। এতে আপনার হজম শক্তি বৃদ্ধি পাবে এবং ক্ষুধা লাগবে। কেননা যারা পরিশ্রম করে তাদের আইবিএস হয় না যেমন দিনমজুর, রিক্সাচালক, কৃষক যারা প্রচুর পরিমাণ পরিশ্রম করেন, এদের কিন্তু আইবিএস হয় না। যারা পরিশ্রম করে না, শারীরিক ব্যায়াম করে না তাদের সাধারণত আই বি এস হয়ে থাকে।

৪। পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমাতে হবেঃ রাত্রি দশটা থেকে ফজরের আযান দেওয়া পর্যন্ত আপনি ঘুমাবেন ৬ থেকে ৮ ঘন্টা এতে আপনার শরীর স্বাস্থ্য ভালো থাকবে, খাদ্য হজম হবে। রাত জাগলে কখনোই আইবিএস ভালো হবে না, পেটে গ্যাস হবে এটা আপনার খাদ্য হজমের ব্যাঘাত ঘটবে এবং ঘন ঘন পাতলা পায়খানা বা কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে তাই নিয়মিত ঘুমাতে হবে।

৫। মানসিক টেনশন থেকে দূরে থাকবেনঃ আইবিএস থেকে মুক্তির উপায় হলো বিভিন্ন যোগ ব্যায়াম, মেডিটেশন রয়েছে এগুলো করতে পারেন। এছাড়াও ওষুধের মাধ্যমেও আপনি সুস্থ হতে পারেন। এর জন্য একজন গ্যাস্ট্রোলিভার ডাক্তারের মাধ্যমে আপনার শরীরে বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পরীক্ষা নিরীক্ষা করে তারপরে ওষুধ খেলে এবং উপরক্ত নিয়মগুলো মেনে চললে অবশ্যই আপনি কয়েক মাসের মধ্যেই আইবিএস থেকে মুক্তি পাবেন।

আইবিএস রোগীর ওজন বাড়ানোর উপায়

আইবিএস রোগীর ওজন বাড়ানোর পূর্বে তার আগে আই বি এস কে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। তাহলে এমনি ওজন বাড়বে। তাই আইবিএস রোগীর ওজন বাড়ানোর উপায় গুলো নিম্নে বর্ণনা করা হলোঃ

আপনি যে সকল খাবার গুলো খাবেন সেটা যেন প্রাকৃতিক নির্ভেজাল খাবার হয়। পরিমাণ মতো খাবেন
কখনো পেট ভরে খাবেন না। পেটে একটু খালি রাখবেন তাহলে আইবিএস অনেকটা নিয়ন্ত্রণ থাকবে।
তৈলাক্ত খাবারগুলো খাওয়া যাবে না।
ছবি
ফ্রিজের খাবার যতটুক পারেন না খাওয়াই ভালো, টাটকা খাবার খাওয়ার চেষ্টা করবেন।
একই তেলে বারে বারে যে ধরনের খাবারগুলো তৈরি করা হয় সেগুলো বাদ দিবেন যেমন পেজি, সিঙ্গারা পুরি এগুলো খাবেন না।

সবুজ শাকসবজি বেশি বেশি খাবেন।
প্রতিদিন নিয়মিতভাবে ২-৩ চামচ করে টক দই খেতে পারেন।
খাবার এক ঘন্টা আগে এবং খাওয়ার এক ঘণ্টা পরে পানি খাবেন এর মাঝে কোন বেশি করে পানি খাবেন না। এছাড়া বেশি বেশি পানি খাবেন দিনে ৮ থেকে ১০ গ্লাস।

মোবাইল ফোন চালানো থেকে বিরত থাকতে হবে।
যে পানি খাবেন সে পানির মাঝে যেন জীবাণু না থাকে এবং আয়রনযুক্ত পানি না হয়। পানিটা ফ্রেশ হতে হবে।

উপরোক্ত এই বিষয়গুলো মেনে চললে অবশ্যই আপনার আইবিএস দূর হবে এবং  ওজন বৃদ্ধি পাবে।

আইবিএস এর ঔষধ

এখন পর্যন্ত নির্দিষ্ট করে আইবিএস এর ঔষধ আবিষ্কার হয়নি। কেননা একেক জন লোকের একেক রকম উপসর্গ বা লক্ষণ দেখা দেয় তার উপর ভিত্তি করেই চিকিৎসকগণ ওষুধ দিয়ে থাকেন। তাই একজন মানুষের যদি উপরোক্ত লক্ষণগুলো দীর্ঘ ছয় মাস বা তার বেশি হতে থাকে তাহলে ধরে নেওয়া হয় তার আইবিএস হয়েছে।

তবে এর আগে সবচাইতে মূল কারণ ধরে নেওয়া হয় মানসিক টেনশন। এরপরও ডাক্তাররা কিছু ওষুধ দিয়ে থাকেন। চিকিৎসার প্রথম কাজ হল আগে রোগ নির্ণয় করা কারণ তার পেটের ভিতরে কোন বড় ধরনের কোন সমস্যা আছে কিনা সেজন্য পরীক্ষা নিরীক্ষা করে থাকেন।

আর কোন সমস্যা না থাকলে যদি পাতলা পায়খানা বা কোষ্ঠকাঠিন্য বা ঘন ঘন পায়খানা এই ধরনের লক্ষণ দেখা যায় তাহলে সেটাকেই আইবিএস বলা হয়ে থাকে। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক আইবিএস এর ঔষধ গুলো সম্পর্কে,

যাদের পেটের মাঝে ব্যথা করে এবং বুদবুদ শব্দ করে তাদের জন্য সাধারণত ডাক্তাররা মেভেরিন, অ্যালভেরিন এ জাতীয় ওষুধগুলো দিয়ে থাকে।

যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য রয়েছে তাদেরকে সাধারণত ফাইবারযুক্ত খাবার খেতে বলে। বিশেষ করে ইসুবগুলের ভুষি, প্রতিদিন আপনি এক গ্লাস পানির মাঝে ২ চামচ পরিমাণ ইসবগুলের ভুষি দিয়ে সঙ্গে সঙ্গে খেয়ে নেবেন এবং এক ঘন্টার মধ্যে বেশি বেশি পানি খাবেন তা না হলে ক্ষতি হতে পারে। এছাড়া প্রচুর পরিমাণ শাকসবজি এবং ল্যাকট্রোজ জাতীয় খাবার খেতে হবে।

এছাড়া যাদের নরম পায়খানা হয়ে থাকে একেবারে ডায়রিয়া নয় জাতীয় পায়খানার জন্য সাধারণত অনেকের মেট্রোনিডাজল গ্রুপের ওষুধ খেলে সেরে যায়। বেক্সিমকোর ফিলমেট এটা অনেক ভালো কাজ করে থাকে। এই জাতীয় ওষুধগুলো দিনে তিনবার পাঁচ দিন খেতে হবে। পাশাপাশি গ্যাসের ওষুধ খেতে হবে।

তবে এই ক্ষেত্রে যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য তারা গ্যাসের ওষুধ খাবে ক্যাপসুলগুলো। আর যাদের ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা তারা ট্যাবলেট জাতীয় গ্যাসের ওষুধ খেলে উপকার পাবেন। যাদের ডায়রিয়া হয় তারা যতবার টয়লেটে যাবে ততবার ইমোটিল ওষুধটা খেতে পারেন অনেক ভালো উপকার দিতে পারে। 
এছাড়া আরো একটা গুরুত্বপূর্ণ ঔষধ হলো যাদের দীর্ঘদিন যাবত ডায়রিয়া হতে থাকে এই ধরনের আইবিএস এর ক্ষেত্রে সাধারণত আমাদের পেটের ভিতরে অন্ত্রের যে ভালো ব্যাকটেরিয়াগুলো থাকে সেগুলো মারা যায়।

এর কারণে খাদ্য হজম হতে পারে না এর কারণেই পাতলা পায়খানা শুরু হয়। তাই ভালো ব্যাকটেরিয়া উৎপাদনের জন্য আপনি প্রোবায়োটিক প্রায় দুই মাস খেতে পারেন বাজারে এ ধরনের প্রভাটিকে অনেক পাওয়া যায় যেমন একটি হল ক্যাপসুল প্রোলাক্টো।

এছাড়া আরো অনেক কোম্পানি রয়েছে আপনি এগুলো খেতে পারেন তবে। প্রাকৃতিক উপায়ে প্রোবায়োটিক খাওয়ার সবচাইতে বেটার। তার মধ্যে আপনি খেতে পারেন টক দই, দই, পনির, ঘি এ জাতীয় খাবার গুলো খেলে আপনার শরীরে ভালো ব্যাকটেরিয়া উৎপাদন হবে।

সাধারণত গ্যাস্ট্রোলিভার ডাক্তাররা সাধারণত সাত দিন এবং ১৪ দিনের একটি অ্যান্টিবায়োটিক ঔষধ দিয়ে থাকেন সেটি হল রিফাক্সিমিন। এটি খেলেও অনেক সময় সাময়িকভাবে পায়খানা সুন্দর হয় কিন্তু পরবর্তীতে যদি আপনি খাবার নিয়ন্ত্রণ করতে না পারেন, তাহলে আবার পুনরায় এই সমস্যা দেখা দেয়। সেই ক্ষেত্রে খাবার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

তাই আইবিএস রোগীরা না খাওয়ার কারণে ওজন কমে যায়। পাশাপাশি ঔষধ গুলো খেতে হবে তাহলে সে সুস্থ থাকবে এবং ওজন বাড়তে থাকবে, মানসিক চাপটাও কমিয়ে নিয়ে আসতে হবে। সাধারণত চিকিৎসকরা মানসিক টেনশন থেকে মুক্ত রাখার জন্য একটি ট্যাবলেট লেগে থাকেন তা হল এমিলিন ১০ এমজি।

এছাড়াও আপনি একটি আইবিএস এর ঔষধ হিসেবে হোমিও ওষুধ খেতে পারেন নাক্স ভূমিকা ৩০ অথবা ২০০, ৫০০ পাওয়ার পর্যন্ত আছে। এই ওষুধটার দাম মাত্র ৫০ টাকা। আপনি যেকোনো হোমিও দোকান থেকে নিতে পারেন। এই ওষুধটা প্রথমে আপনি কম পাওয়ার দিয়ে শুরু করবেন।

খাবার আধা ঘন্টা পূর্বে জিহবা এর নিচে ৪-৫ ফোটা করে দিনে তিনবার খাবেন এতে আপনার পেটে গ্যাস দূর হবে এবং পাশাপাশি পাতলা পায়খানা হলে ইমোটিল খেতে পারেন। আশা করি এইটা যদি ফলো করেন, তাহলে যাদের আইবিএস ডি বা পাতলা পায়খানা রয়েছে এটা সেরে যাবে।

তবে উপরুক্ত ওষুধগুলো আমার অভিজ্ঞতার আলোকে লিখেছি মাত্র কিন্তু আপনি একজন গ্যাসটোলিভার চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধগুলো খাবেন।

আইবিএস কি মানসিক রোগ

আপনি হয়তো প্রশ্ন করতে পারেন যে আইবিএস কি মানসিক রোগ হ্যাঁ আইবিএস এক ধরনের মানসিক রোগ। আইবিএস এর পিছনের মূলত প্রধান কারণ হলো মানসিক টেনশন টা সবচাইতে বেশি কাজ করে। আইবিএস এর ক্ষেত্রে তাই আপনি যদি কোন একটা বিষয় নিয়ে টেনশন করেন তার প্রভাবটা পেটে যায় পড়বে। এতে পেটের ভিতর মোচড় দিয়ে পায়খানার চাপ দেবে।

এক গবেষণায় দেখা গেছে যে সকল নারী-পুরুষরা অল্পতেই বেশি টেনশন, হতাশা করে তাদেরই এই ধরনের আইবিএস এর সমস্যা বেশি দেখা দেয়। তাই এই মানসিক দুশ্চিন্তা থেকে নিজেকে দূরে রাখতে হবে তাহলে মুক্তি পাবেন।

কারণ এই মানসিক টেনশনের কারণে মানুষের অনেক ওজন কমে যায়। তাই চিকিৎসকরা আইবিএস রোগের ইতিহাস আগে জানে যদি সে মানসিক কোন টেনশন করে থাকে তাহলে তাকে মানসিক ডাক্তার দেখানোর পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

আইবিএস রোগীর খাবার তালিকা

আইবিএস থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল আইবিএস রোগীর খাবার তালিকা তৈরি করা। আপনি প্রথমে দেখবেন কোন কোন খাবারে সমস্যা হয় সেই খাবারগুলো তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে। এরপরে যে খাবারগুলো খেলে তার সমস্যা হয় না সেই খাবারগুলো কন্টিনিউয়াসলি খেতে হবে।

যে খাবারগুলো বাদ দেওয়া হল তার পরিবর্তে পরিপূরক হিসেবে অন্য খাবার খেলে সমস্যা যদি না হয় তাহলে সেটা খেতে হবে। যেমন দুধ খেলে আইবিএস রোগের বেশি সমস্যা হয় তাই দুধের পরিবর্তে আপনি দই, ঘোল, পনির, ঘি খেয়ে দেখতে পারেন এতে আপনি দুধের যে পুষ্টি সেই পুষ্টিটাও পেয়ে গেলেন।
ছবি
তাছাড়া আপনার পরিপূরক খাবার যদি না খান তাহলে আপনার পুষ্টির অভাবে ওজন কমে যাবে এবং অসুস্থ হয়ে পড়বেন। আর এই আইবিএস রোগীর ওজন বাড়ানোর উপায় হল খাদ্য তালিকা তৈরি করা এবং সেভাবে জীবন যাপন করা। নিম্নে আইবিএস রোগীর খাবার তালিকা সম্পর্কে বর্ণনা করা হলোঃ

  • আপনি সয়াবিন তেলের পরিবর্তে নারিকেল তেল দিয়ে রান্না করে খেতে পারেন এতে অনেক উপকার হবে।
  • ফাইবার যুক্ত খাবার বেশি খাবেন এতে আইবিএস এর হজম শক্তি বৃদ্ধি করবে।
  • আঁশবিহীন সবজি যেগুলোর আঁশ নেই সেগুলো খেতে পারেন।
  • ভাতের সাদা চালের পরিবর্তে লাল চালের ভাত খেতে পারেন। লাল চালে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার থাকে।
  • গমের আটার ভিতরে এক ধরনের ব্লু টিন থাকে এর জন্য পেটের সমস্যা হয়, আপনি এই গমের রুটি খাওয়ার পরিবর্তে চালের গুড়ার রুটি খেতে পারেন এতে সমস্যা হবে না।
  • মাছ খেতে পারবেন, তবে তৈলাক্ত মাছ নয়, ডাল খেতে পারবেন কিন্তু শুধুমাত্র মুগ ডাল খাওয়া যেতে পারে। অন্য ডাল খেলে প্রচুর পরিমাণে পেটে গ্যাস হবে।
  • গরুর মাংস খেলে অনেকের সমস্যা হয় অনেকের সমস্যা হয় না। অধিকাংশই সমস্যা হয় সে ক্ষেত্রে আপনি মুরগির মাংস কম করে খেতে পারেন।
  • অনেকে ডিম খেতে পারে না এটা খেলেও পাতলা পায়খানা হয় সে ক্ষেত্রে আপনি ডিমের কুসুম বাদে সাদা অংশ অল্প করে খেতে পারেন অথবা ভরা পেটে না খেয়ে হালকা পেটে কোয়েল পাখির ডিম দুইটা করে খেতে পারেন দিনে দু-তিনবার এভাবে পাঁচ সাতটা ডিম খেতে পারেন।
  • অতিরিক্ত চর্বি জাতীয় খাবার খাওয়া যাবে না এবং মিষ্টি জাতীয় খাবার বন্ধ করতে হবে।
  • যখন খাবার খাবেন ভাত অথবা রুটি সে ক্ষেত্রে অনেকক্ষণ চিবিয়ে চিবিয়ে খেলে লালার সাথে এভাবে খাদ্য হজমে সহযোগিতা করে অতি তাড়াতাড়ি হজম হয়।
  • চা কফি যতটা পারেন না খাওয়াই ভালো।
  • প্রতিদিন চেষ্টা করবেন কাঁচা পেঁপে চিবিয়ে চিবিয়ে খাওয়ার জন্য।
  • বাসি খাবার খাবেন না এতে পেটের সমস্যা হতে পারে।
  • প্রবায়োটিক হিসাবে প্রতিদিন তিন চার চামচ করে দই খেতে পারেন।
  • অত্যাধিক মসলা জাতীয় খাবার বাদ দিতে হবে বিরিয়ানি, পোলাও এই সকল খাবার বাদ দিতে হবে।
  • রাত জাগা যাবে না রাত জাগলে পেটে গ্যাস হবে এবং পেট ফাপা দিয়ে থাকবে খাদ্য হজম হবে না, পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া শুরু হবে।
  • প্রক্রিয়াজাত খাবারগুলো খাওয়া যাবে না যেমন সিগারেট কোলড্রিংস কোকাকোলা এই খাবারগুলো খাওয়া যাবে না। প্যাকেটজাত খাবার গুলো খাওয়া যাবে না ধুমপান করা যাবে না।
  • অ্যালকোহল জাতীয় খাবার খাওয়া যাবে না, তামাক জাতীয় খাবার খাওয়া যাবে না। মদ্যপান করা যাবে না।

আমাদের শেষ কথা

পরিশেষে বলা যেতে পারে যে, যদি আপনি এগুলো মেনে চলতে পারেন আশা করি কিছুদিনের মধ্যেই আপনার আইবিএস ভালো হয়ে যাবে। এতে করে আপনি সুস্থ হবেন, ওজন বৃদ্ধি পাবে। উপরোক্ত আলোচনা থেকে আইবিএস রোগীর ওজন বাড়ানোর উপায় সম্পর্কে জানতে পেরেছেন আশা করি উপকৃত হবেন। পোস্টটি ভালো লাগলে আপনার বন্ধু-বান্ধবের নিকট শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এম আর মাহমুদ ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪