টক দই চুলে দেওয়ার নিয়ম-টক দই মুখে মাখার উপকারিতা
আমরা অনেকেই চুলে টক দই ব্যবহার করি কিন্তু টক দই চুলে দেওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানিনা। আবার টক দই মুখেও ব্যবহার করে থাকি। চলুন টক দই মুখে মাখার উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
আমাদের অনেকের চুল রুক্ষ ও খুশকিতে ভরপুর, তাই যত্ন নেওয়া উচিত কিন্তু চুলের যত্নে কিভাবে টক দই ব্যবহার করতে হয় সেটা জানিনা। তাই টক দই চুলে দেওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানতে আজকের আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
পোস্টসূচিপত্রঃটক দই চুলে দেওয়ার নিয়ম-টক দই মুখে মাখার উপকারিতা
চুলের যত্নে ডিম ও টক দই
চুলের যত্নে ডিম ও টক দই এর গুরুত্ব অনেক রয়েছে। ডিমের মধ্যে আছে প্রোটিন ও প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এবং মিনারেল। এ ডিম চুলকে উজ্জ্বল করে আর টক দই চুলের সৌন্দর্যকে ঠিক রাখে। তাই চুলের যত্নে ডিম ও টক দই, ডিম একসাথে মিক্সড করে দিলে প্রচুর পরিমাণে চুলে ভিটামিন পায় কিন্তু টক দই নিয়ম মতে দিতে হবে।
প্রথমে তিন চামচ টক দই নিবেন এবং এর সাথে একটি ডিম সাদা ও হলুদ অংশ সুন্দর করে মিশিয়ে নিবেন। এরপরে এই মিশ্রণটি চুলে সুন্দর করে লাগাবেন। অন্তত ৩০ মিনিট আপনার চুলে রেখে দিবেন, এরপরে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলবেন, শ্যাম্পু দিয়ে পরিষ্কার করে নিবেন এবং কন্ডিশন দিবেন তাহলে আর গন্ধ থাকবে না।
এরপরে শুকিয়ে গেলে দুই থেকে তিন চামচ এই মিশ্রণটি পুরো চুলে লাগাবেন এবং মাথার ভিতরে হালকা করে মেসেজ করতে হবে।
এরপরে চুলটা আপনি পেঁচিয়ে রাখতে পারেন ১৫ থেকে ২০ মিনিটের মত, রাখার পরে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলবেন এরপর শ্যাম্পু দেবেন তারপর কন্ডিশন দেবেন। কখনোই মেশিন দিয়ে চুল শুকাবেন না তাহলে চুল রুক্ষ হয়ে যাবে এবং এরপরে চুলটা সুন্দর করে চিরুনি দিয়ে আছড়ে নিবেন।
চুল যদি শুষ্ক হয় সেই ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনি এই মিশ্রণটির সাথে হালকা নারিকেলের তেল অথবা অলিভ অয়েল তেল দিতে পারেন। এতে চুলের শুষ্কতা দূর হয়ে যাবে।
তৈলাক্ত ত্বকের যত্নে টক দই
অনেকের ত্বক সাধারণত তৈলাক্ত হয়ে থাকে, তাই তৈলাক্ত ত্বকের যত্নে টক দই ব্যবহার করতে পারেন এতে অনেক উপকার পাবেন।
দই ও বেসনঃ তৈলাক্ত ত্বকে দই ও এবং বেসন এর মিশ্রণটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই মিশ্রণটি ত্বকের ময়লাকে দূর করে এবং উজ্জ্বলতা নিয়ে আসে। এক চামচ বেসন ও দুই চামচ টক দই মিশিয়ে নিবেন এবং মুখে লাগিয়ে দিবেন এরপরে শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা পানিতে ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত ব্যবহার করলে অনেক উপকার পাবেন।
দই এবং মুলতানি মাটিঃ তৈলাক্ত ত্বকের যত্নে টক দই খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা মুলতানি মাটি এবং টক দই ত্বকের মৃত চামড়া গুলো মসৃণ করে তোলে এবং উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে নিয়ে আসে। তাই পরিমাণ মতো টক দই এবং মুলতানি মাটি দিয়ে মিশ্রণটি তৈরি করুন এবং ২০ মিনিটের মত মুখে লাগাবেন এরপরে যখন শুকিয়ে যাবে এরপরে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলবেন।
দই ও মধুঃ দই ও মধুর মিশ্রণটা তৈলাক্ত ভাব খুবই কমাতে পারে। তাই এক চামচ দই এর মধ্যে এক চামচ মধু মিশিয়ে নিন এরপরে মুখে ও ত্বকে লাগিয়ে দিন। কিছুক্ষণ পর পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। এভাবে নিয়মিত ব্যবহার করলে তৈলাক্ত ভাব দূর হয়ে যাবে।
টক দই এর সাথে ডিমের সাদা অংশটুকু মিশিয়ে আপনার মুখে লাগাতে পারেন। এতে আপনার মুখে বিভিন্ন ধরনের ব্রণ অথবা র্যাশ উঠে থাকে। এ জন্য এক চামচ ডিমের সাদা অংশ নিয়ে এর ভিতর এক চামচ দই নিবেন এভাবে মিশ্রণটা তৈরি করে ব্যবহার করতে থাকুন এবং ১০ থেকে ১৫ মিনিট পর এটা ধুয়ে ফেলুন এতে উপকার পাবেন।
টক দই এর মধ্যে আছে ল্যাকটিক এসিড যা ত্বকের প্রদাহ এবং ব্রণ দূর করতে পারে এছাড়াও কোষগুলো মৃত কোষগুলো দূর করতে পারে। টক দই এর সাথে পিয়াজের রস ও ওটমিল এর গুড়া দিয়ে মিক্স করুন। এবারে মুখে লাগিয়ে রাখুন ১০ থেকে ২০ মিনিট পর পানি দিয়ে পরিষ্কার করুন।
টক দই চুলে দেওয়ার নিয়ম
টক দই নিয়ম ছাড়া চুলে দিলে ক্ষতি হতে পারে, তাই টক দই চুলে দেওয়ার নিয়ম সম্পর্কে নিম্ন বিস্তারিত আলোচনা করা হলো,
অলিভ অয়েল ও দইঃ অনেকের চুল ভেঙ্গে যায় আর এই চুল ভেঙ্গে যাওয়া সমস্যার সমাধান করার জন্য অলিভ অয়েল ও টক দই মিশ্রণটি ব্যবহার করতে পারেন। প্রথমে আপনি এক চামচ টক দই নিবেন।
এক কাপ টক-দই পর নেওয়ার পর এর সাথে ম্যাক চামচ অলিভ অয়েল মেশিয়ে নিয়ে মুখে লাগিয়ে দিন ২০মিনিট পর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ফেলুন এবং শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার দিয়ে পরিষ্কার করে নিন। লেবুর রস ও পানি দিয়ে সুন্দর করে ধুয়ে ফেলতে হবে।
অ্যালোভেরা ও দইঃ অ্যালোভেরা ও দই এর মিশ্রণটা চুলের জন্য খুবই উপকার। তাই দুই চামচ টক দই নিবেন এর সাথে তিন চামচ এলোভেরা জেল মিশিয়ে এর সাথে কিছু অলিভ অয়েল ও মধু সুন্দর করে মিশিয়ে নিবেন।
এরপর মিশ্রণটি চুলের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত সুন্দর করে লাগিয়ে দিবেন ৩০ থেকে ৪০ মিনিট পর শ্যাম্পু দিয়ে সুন্দর করে পরিষ্কার করে নেবেন।
চুল ভাঙ্গা প্রতিরোধ করতে টক দই ও কলাঃ চুল ভাঙ্গা প্রতিরোধ করতে টক দই ও কলার গুরুত্ব রয়েছে। কেননা কলার মধ্যে পটাশিয়াম থাকে ভিটামিন সি ইত্যাদি থাকে।
এর সাথে প্রথমে আপনি এক কাপ টক দই নিবেন এবং এর সাথে একটি কলা মিশিয়ে নিবেন টক দইটা ভালোভাবে মেশানোর পরে আপনার চুলার চুলে সম্পূর্ণ অংশে লাগাবেন এরপর ২০ থেকে ৩০ মিনিট পরে পানি ও শ্যাম্পু দিয়ে পরিষ্কার করে নেবেন।
টক দই ও মেহেদীঃ অনেকেই চুলে শুধু মেহেদী দিয়ে থাকে কিন্তু এ তো অনেক ক্ষতি হতে পারে চুল রুক্ষ হতে পারে তাই আপনি অবশ্যই মেহেদির সাথে টক দই মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। আর মেহেদী ও এর সাথে টক দই মিশিয়ে চুলে লাগাতে পারেন। এরপর দুই ঘন্টা রাখার পরে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন কিন্তু এই সময় শ্যাম্পু না দেয় ভালো পরের দিন শ্যাম্পু দিলে চুলের পুষ্টি নষ্ট হবে না।
টক দই এর ফেস প্যাক
টক দই বিভিন্ন বস্তু মিশিয়ে ফেসওয়াস হিসাবে ব্যবহার করা যায় তাই টক দই এর ফেস প্যাক ব্যবহারের নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো,
চালের গুড়া ও টক দই এক চামচ পরিমাণ নিয়ে মিশিয়ে মুখে লাগাতে পারেন এরপর ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ পরিষ্কার করে নেবেন।
টক দই এবং কফি এক মাস পরিমাণ নিয়ে কফি পাউডার এর সাথে মিশিয়ে মুখে দিন এরপর ঠান্ডা পানিতে দিয়ে পরিষ্কার করুন।
টক দই ও নারীকেল তেল গ্লিসারিন ভিটামিন ই ক্যাপসুল সুন্দর করে মিশিয়ে নিবেন এবং টক দই এর ফেস প্যাক টি মুখে মাখিয়ে নিবেন পানি দিয়ে পরিষ্কার করে ফেলুন।
টক দই ও লেবুর রস পরিমাণ মতো নিয়ে এর সাথে চিনি মিশিয়ে মুখে লাগাতে পারেন। সামান্য পরিমাণ চিনি নিবেন একসঙ্গে পরিমাণ নিয়ে এর সাথে চিনি মিশাতে পারেন এরপর মুখে লাগিয়ে রাখুন তারপর কিছুক্ষণ পর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেল। এছাড়াও এই মিশ্রণটি আপনি চুলে ও লাগাতে পারেন তাই এক চামচ লেবুর রস ও এর সাথে টক দই মিশিয়ে আপনি চলে লাগাতে থাকুন এতে উপকার পাবেন।
আপনার শরীরের বিভিন্ন অংশ যদি কালো হয়ে যায় সেটা হতে পারে হাঁটু ঘাড় ইত্যাদি জায়গায় সে ক্ষেত্রে এক চামচ টক দই একটুখানি হল ভালো করে মিশিয়ে নিবেন এরপরে মুখে বা আক্রান্ত স্থানগুলোতে লাগাবেন। এরপর পানি দিয়ে কালো দাগ গুলোতে লাগাবেন এই সকল দাগগুলো দূর হয়ে যাবে।
খুশকি দূর করতে টক দই
এতক্ষণ আমরা টক দই চুলে দেওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জেনেছি, এখন টক দই দিয়ে কিভাবে খুশকি দূর করা যায়। সে সম্পর্কে জানব নিম্নে এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
টক দইয়ের মাঝে জিং ভিটামিন ই প্রোটিন, ল্যাক্টিক এসিড রয়েছে যা চুলকে সুস্থ ও উজ্জ্বল করতে পারে। এছাড়াও মাথার ত্বকের ক্ষেত্রেও যদি কোন সমস্যা হয় সেটাও দূর করতে পারে। তাই টক দই চলে আপনি মেথি ফুটকি দৌড় করতে পারে এছাড়াও ত্বককে ভালো রাখে। আর টক দই বিভিন্ন ধরনের ফাঙ্গাস কে দমন করে।
আপনি মেথি ভিজিয়ে রেখে এরপরে গুড়া করে এর সাথে টক দই ও তেল মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। তারপর দুই ঘন্টা চুলে রাখার পরে সুন্দর করে পরিষ্কার করে নিবেন। তবে আরো বিভিন্নভাবে টক দই খুশকি দূর করতে টক দই ব্যবহার করতে পারেন তাহলে,
আধা কাপ টক দই নিবেন দুই চামচ লেবুর রস নিয়ে সুন্দর করে মেশাবেন পর তোলা দিয়ে সুন্দর করে চুলের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত লাগাবেন ২০ থেকে ২৫ মিনিট এভাবে রেখে দেওয়ার পর শ্যাম্পু দিয়ে পরিষ্কার করে নেবেন কিভাবে নিয়মিত ব্যবহার করলে উপকার পাবেন।
টক দই মুখে মাখার উপকারিতা
এতক্ষণ আমরা জানলাম টক দই চুলে দেওয়ার উপকার। এখন আমরা জানবো টক দই মুখে মাখার উপকারিতা সম্পর্কে তাই এ সম্পর্কে নিম্ন বিস্তারিত আলোচনা করা হলো,
টক দই লেবুর রস ও চিনিঃ এক চামচ টক দই লেবুর রস ও চিনি মিশিয়ে মুখে লাগালে ভালো উপকার পাওয়া যায়। এভাবে কিছুক্ষণ রাখার পরে যখন এগুলো মুখে শুকিয়ে যাবে তখন পানি দিয়ে পরিষ্কার করে নিবেন।
টক দই ও কফিঃ টক দই ও কফি এর পাউডার পরিমাণ নিয়ে সুন্দর করে মিক্স করে পুরো মুখেই ভালো করে লাগিয়ে নিবেন। এর পরে ১০ থেকে ১৫ মিনিট লাগানোর পর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলবেন।
টক দই নারিকেলের তেল গ্লিসারিন ও ভিটামিন ই ক্যাপসুল এক চামচ করে নিয়ে এবং ভিটামিন ই ক্যাপসুল ১ টি ট্যাবলেট নিয়ে সুন্দর করে মিশাবেন তারপর মিশ্রণটি মুখে লাগিয়ে দিবেন এভাবে মুখে কিছুক্ষণ রাখার পরে পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে ফেলবেন।
টক দই ও মধুঃ উপকারিতা অনেক রয়েছে তাই মুখে সুন্দর এবং উজ্জ্বল রাখতে পারে এজন্য এক চামচ পরিমাণ লাগানোর পরে ১০ থেকে ১৫ মিনিট পরে পরিষ্কার করে নিবেন। এতে অনেক উপকার পাওয়া যাবে। তবে এই মিশ্রণটি আপনি চলেও ব্যবহার করতে পারেন এতে অনেক উপকার পাওয়া যায়।
লেখকের শেষ কথা,
পরিশেষে বলা যায় যে টক দই উপকারিতা অনেক। এর মাঝে প্রচুর পরিমাণে ভালো ব্যাকটেরিয়া থাকে যা হজমের কাজ করবে। আবার টক দই চুলেও ব্যবহার করতে পারবেন। তবে টক দই চুলে দেওয়ার নিয়ম ও পরিমাণ মত ব্যবহার করবেন। আশা করি এই আর্টিকেলটি থেকে আপনার উপকার হবে। যদি আর্টিকেলটি ভালো লাগে, তাহলে আপনার বন্ধু-বান্ধবের নিকট শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ
এম আর মাহমুদ ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url