প্রাক ইসলামী আরবের সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থা কেমন ছিল জেনে নিন
প্রাক ইসলামী আরবের সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থা তেমন একটা উন্নত মানের ছিল না। তারা কুসংস্কার বিশ্বাসে ছিল এবং নারীদেরকে মর্যাদা দিতো না। চলুন, তাদের সামাজিক অবস্থার পাশাপাশি রাজনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
প্রাক ইসলামী আরবের সমাজে সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে তারা অনেক উন্নত মানের চিন্তাভাবনা ছিল। তারা প্রতিবছর বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান ও মেলা পালন করত। তাই প্রাক ইসলামী আরবের সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
পোস্টসূচিপত্রঃপ্রাক ইসলামী আরবের সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থা কেমন ছিল জেনে নিন
প্রাক ইসলামী আরবের সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থা
প্রাক ইসলামী আরবের সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থা খুবই শোচনীয় ছিল। কেননা ঐ সময় ব্যভিচার, কুসংস্কার, জুয়া এই সকল নিয়ে সমাজের লোকজন বেশি আসক্ত থাকতেন। ঐ সময় আরবের লোকেরা সাধারণত পূজা করত এবং বিভিন্ন ধরনের মূর্খতা বর্বরতা কাজকর্ম করত। নিম্নে আরবের সামাজিক অবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
দাসপ্রথাঃ ঐ যুগে আরবের সমাজে দাস প্রথার ব্যবস্থা ছিল। আর এই দাস-দাসীদের উপর তারা অনেক অত্যাচার করত এবং দাসীদেরকে উপপত্নী হিসেবে ব্যবহার করতো। দাস-দাসীদের কে সাধারণত হাটে বাজারে পণ্য হিসাবে বেচা কেনা হতো, তাই তাদের কোন মূল্যায়ন করা হতো না।
নারীর মর্যাদাঃ প্রাক ইসলামী যুগে আরবের নারীদের মর্যাদা ছিল না। তাদেরকে ব্যবহার করা হতো ভোগের সামগ্রী হিসেবে। আর কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণ করলে তারা লজ্জা বা অপমান পাপ, ঘৃণার বস্তু হিসেবে মনে করত। এছাড়াও আরবের সামাজিক অবস্থা এতটাই খারাপ ছিল যে একজন বাবা তার কন্যা সন্তানকে জীবন্ত কবর দিয়ে দিত।
এ ধরনের দৃষ্টান্ত সাধারণত কুরাইশ ও বানু তামিম গোত্রের মধ্যে দেখা যেত। এক ব্যক্তি নিষ্ঠুরতার উদাহরণ হিসাবে বলা যেতে পারে সে ৫ কিংবা ৬ বছরের ১০ টি কন্যা সন্তানকে জীবন্ত কবর দিয়েছিল। স্বামীর বা পিতার সম্পত্তির উপর নারীদের কোন অধিকার ছিল না।
মদ পান করাঃ প্রাক ইসলামে যুগে আরবের সমাজে মদ পান করা যেন অভিজাত্যের পরিচয় মনে করত। তারা বৈধ মনে করে এই মদ পান করত। ঐতিহাসিক খোদাবক্স বলেন যে "আরবের সমাজের লোকেদের মদ এবং নর্তকি ছাড়া কোন উৎসব চলতো না"।
জুয়া খেলাঃ প্রাক ইসলামের যুগে জুয়ার খেলার একটা প্রচলন ছিল। ওই সমাজের লোকজন যারা জুয়া খেলতো না তাদেরকে কৃপণ বলা হতো। আর এই জুয়ার কারণে অনেক ভালো প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীরাও একেবারে ফকির হয়ে যেত। তারা জুয়া খেলতে খেলতে অনেক ঋণগ্রস্ত হয়ে যেত।
সুদপ্রথাঃ প্রাক ইসলামের যুগে আরবের মহাজনরা অর্থাৎ বিশেষ করে ইহুদি ব্যবসায়ীরা উচ্চ হারে সুদের ব্যবসা করতো। দরিদ্র লোক তারা সুদের টাকা দিতে পারতো না সে ক্ষেত্রে তাদের সম্পত্তি নিয়ে নিতো এর সাথে স্ত্রী কন্যা পুত্র যা ছিল সেগুলো বিনিময় নিয়ে নিতো এবং দাসী রূপে ব্যবহার করত এছাড়াও তাদেরকে বিক্রি করে টাকা নিতো।
বিবাহ প্রথাঃ আরবের সামাজিক অবস্থা এর মধ্যে বিবাহ ব্যবস্থা একটি জঘন্যতম প্রথা ছিল। এর মধ্যে কোন পবিত্রতা ছিল না।
ভাই তার বোনকে বিয়ে করত, পিতার মৃত্যুর পর সন্তানরা তার বিমাতা কে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করত। একই সময়ে একজন স্ত্রীলোককে একাধিক পুরুষ ব্যবহার করত।
কুসংস্কারঃ জাহেলিয়া যুগে আরবের লোকেরা কুসংস্কারের বিশ্বাসী ছিল। কোন কাজ করার আগে তারা তীরের সাহায্যে দেব মূর্তির থেকে অনুমতি নিত। কোন লোক মারা গেলে তার কবরের উপর উট আমৃত্যু বেঁধে রাখা হতো এবং মনে করত যে মৃত লোকটি উটের পিঠে চড়ে স্বর্গে চলে যাবে।
বংশ মর্যাদাঃ প্রাক ইসলামী আরব সমাজে সাধারণত বংশ মর্যাদা মূল্যায়ন করা হয় না। এ ব্যাপারে ঐতিহাসিকরা বর্ণনা করেন যে প্রাক ইসলামী যুগে বংশগত এবং গোত্রগত মর্যাদা তেমন ছিল না। এই সময় বংশ মর্যাদা নিয়ে বিভিন্ন গোত্রের লোকদের মধ্যে অহংকার ঘৃণা এবং হিংসা বিদ্বেষ প্রায় যুদ্ধ লেগে থাকতো।
নিষ্ঠুরতাঃ নারীদের সম্মান করা হতো না এবং নারীদেরকে সংখ্যা কমানোর জন্য দাসীদেরকে অভিজাত শ্রেণীর লোকেরা দ্রুতগামী ঘোড়ার লেজের সাথে বেঁধে জীবন্ত নারীদেরকে কষ্ট দিত। যতক্ষণ না মৃত্যু হতো ততক্ষণ পর্যন্ত তারা এইগুলো নিয়ে হাসি তামাশা করত।
বংশগত গোত্রগত প্রভাবঃ আরবের মধ্যে আরবের সমাজে বংশ গোত্রের অহংকার হিসেবে দেশ এতটাই খারাপ ছিল যে এর কারণে গোত্র গোত্রে বছরে পর বছর যুদ্ধ লেগে থাকতো।
সামাজিক শ্রেণীবিন্যাসঃ তাদের সামাজিক অবস্থা দুই ভাগে ভাগ করা ছিল। একটি হলে বেদুইন বা যাযাবর এবং আরেকটি শহরবাসী আরব। এই দুই সমাজের মধ্যে আসার আচরণ কার্যকলাপ ভিন্ন ছিল অনেক সময় প্রীতি এবং বৈবাহিক আত্মীয়তার বন্ধন থাকলেও শহরদের কাছে বেদুইনদের তেমন মূল্যায়ন করা হতো না এবং ঘৃণা করা হতো।
কাব্য প্রীতিঃ আরবের সমাজের লোকজন তারা কিছু ভালো গুণের অধিকারও ছিল। যেমন তারা কাব্যের প্রতি বেশি অনুরাগে ছিল। প্রতিবছর নির্দিষ্ট একটি সময়ে উকাজ মেলা বসাতো সেখানে কবি সাহিত্য কেন্দ্রের কবিতা এবং সকলেই এই কবিতাগুলো শুনতো।
বিচারক মন্ডলী গুলো তারা কবিতা শুনে প্রথম স্থান মনোনীত করত এবং কবিতার অক্ষরগুলো সোনার অক্ষরে লিখে পবিত্র কাবা ঘরে দেওয়ালে টাঙিয়ে রেখে দিত।
অতিথি পরায়ণঃ আর ওই সময়ের আরবের সমাজের লোকেরা তাদের একটি ভালো গুণ ছিল তারা অতিথি পরায়ণতা ছিল। তারা অতিথিদেরকে সেবা করত, কোন শত্রু যদি তাদের অতিথি হিসেবে গোত্রে আসতো। তাহলে তাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করত না এবং তাদেরকে নিরাপত্তা দিত।
লুটতরাজঃ ওই সময় সামাজিক অবস্থা এর অন্যতম সমস্যা ছিল লুটতোরাজ করা। মরুবাসী বেদুইনরা পাহাড়ের গুহায় ওত পেতে থাকতো এবং ওইখান দিয়ে যে বাণিজ্যিক কাফেলা যেত তাদেরকে আক্রমণ করে সর্বশ্রান্ত করে দিত।
প্রাক ইসলামী যুগে আরবের রাজনৈতিক অবস্থা
প্রাক ইসলামী যুগে আরবের রাজনৈতিক অবস্থা ছিল অত্যন্ত হতাশজনক। রোম আরবদের রাজনৈতিক অবস্থাও ছিল তমাসুন্য। সমাজ আরবের ওই সময়ের রাজনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে নিম্ন আলোচনা করা হলো,
কেন্দ্রীয় শাসনের অভাবঃ প্রাক ইসলামের যুগে আরবের উত্তর অংশের দুটি রাজ্য ছাড়া গোটা আরব দেশটাই ছিল স্বাধীন মুক্ত। গোত্র শাসন তাদের রাষ্ট্রীয় জীবনের মূল ভিত্তি ছিল। কেন্দ্রীয় শাসন ব্যবস্থার সম্পর্কে তেমন জ্ঞান ছিল না। বিভিন্ন গোত্রে বিভক্ত ভাগ করা ছিল এক গোত্রের প্রতি আরেক গোত্রের হিংসা বিদ্বেষ এবং রাজনৈতিক অবস্থা খুবই খারাপ ছিল।
শাসন পরিষদঃ মক্কা-মদিনায় ধর্মীয় বাণিজ্যিক কারণে নগর রাষ্ট্রগুলোতে উন্নয়ন ঘটে। এ সময় মোটামুটি রাজনৈতিক অবস্থার ভালো পরিস্থিতি দেখা যায়। এক ধরনের মালা নামের রাজনৈতিক সংগঠন ছিল এটা পরিচালনা করত এক ধরনের বয়জষ্ঠ লোক।
বিভিন্ন গোত্রের প্রধানদের নিয়ে একটা মন্ত্রিসভা গঠিত হতো। এই শাসন পরিষদের উদ্দেশ্য ছিল প্রত্যেকের মাঝে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং বন্ধুত্ব ভাব সৃষ্টি করা।
শেখ তন্ত্রঃ প্রাক ইসলামী যুগে আরবের রাজনৈতিক অবস্থা হলো আরবে শেখ বা গোত্রপতির মাধ্যমে গোত্রগুলো শাসন পরিচালিত হতো। বিভিন্ন গুণের ভিত্তিতে গণতান্ত্রিক উপায়ে তারা শেখ নির্বাচন করত। গোত্র ভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থার কারণে তারা শেখকে সবচাইতে সর্বোচ্চ মর্যাদা দিতো। তাদের শাসনব্যবস্থার কোন নির্দিষ্ট নিয়মিত ছিল না।
গোত্রীয় কমনওয়েলথঃ প্রাক ইসলামে যুগে গোত্রীয় কমনওয়েলথ গড়ে উঠেছিল। আবদে মানাফের পুত্র হাসিম সর্বপ্রথম গোত্র প্রদান দের নিকট এলাক নামক চুক্তি ব্যবস্থা করেছিলেন। আরবের বেদুইন গোত্রগুলো চুক্তিতে স্বাক্ষর করে তারা সেই নিয়ম মেনে চলতো।
গোত্রীয় কলহঃ গোত্রগুলোর সদস্য তারা সুন্দর ব্যবহার করত এবং সৎ ভাব বজায় রাখতো কিন্তু ভিন্ন গোত্রের মাঝে তারা বিবাদ কলহ সৃষ্টি করত। তারা জীবন এবং নৈতিকতা বিষয়ে যদিও তাদের ধারণা ছিল না। যার কারণে তাদের কোন আইন বিধি ব্যবস্থা ছিল না। এজন্য তারা বিশ্বাস করত জোর যার মুল্লুক তার এই নীতি তারা প্রচলন ছিল।
পানির নহর গবাদি পশু তৃণমূল ভুমি এইগুলো বিষয় নিয়ে তারা কি করতো যুদ্ধবাজ হত। এক গোত্রের সাথে আর গোত্রে যুদ্ধ লেগে থাকত, আবার কোন ব্যক্তির মান অপমান করলে এই বিষয়টা নিয়েও তারা ঝগড়া বিবাদে লিপ্ত থাকতো।
রক্ত ক্ষয়ী যুদ্ধঃ প্রাক ইসলামী যুগে আরবের গোত্রগুলোর মাঝে সংঘটিত অসংখ্য যুদ্ধ ছিল। তারা ঘন ঘন যুদ্ধ শুরু করত এবং দীর্ঘ সময় যুদ্ধ চালিয়ে যেত। ওই সময়ের সবচাইতে বেশি যুদ্ধ হতো ঘাবড়ার যুদ্ধ, দাবিসের যুদ্ধ ইত্যাদি। এগুলো বিখ্যাত ছিল শুরু হলে তারা এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্ম পর্যন্ত যুদ্ধ লেগে থাকত। ঐতিহাসিক গীবনের মতে জাহেলিয়া যুগে আরবের প্রায় ১৭০০ যুদ্ধ হয়েছিল।
বৈদেশিক সম্পর্কঃ মক্কার সাথে পারস্য ও বাইজেন্টাইন সম্রাজ্য এবং আবেসেনিয়া রাজ্যের যোগাযোগ ভালো ছিল। এই যোগাযোগের মাধ্যমে তারা বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সেই সময় বিভিন্ন দেশের সাথে বন্ধু ছিল।
তেমন বিশেষ সম্পর্ক না রেখে বাণিজ্যিক স্বার্থে তারা সৎ ব্যবহার করে চলত। যার কারণেই বিদেশীরা ইচ্ছা করলে সমগ্র আরব দেশ দখল করতে পারতো কিন্তু আরবের মরুভূমি এর অনুর্বরতা কারণে তারা দেশটি দখল করেনি।
প্রাক ইসলামি আরবের সাংস্কৃতিক অবস্থা
প্রাক ইসলামি আরবের সাংস্কৃতিক অবস্থা তেমন একটা উন্নত ছিল না। তবে তারা অধিকাংশ লোকই নিরক্ষর এরপরও তাদের স্মৃতিশক্তি অনেক ভালো ছিল। যার কারণে তারা লোক গাথা প্রবাদ বাক্য লোকশ্রুতি এগুলো ভালো মনে রাখতে পারতো এবং সেগুলো তারা সংগ্রহ করে রেখে দিত। নিম্নে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো,
সাহিত্য চর্চাঃ ঐতিহাসিক পিকে হিটটি বলেন পৃথিবীতে অনেক জাতি রয়েছে কিন্তু আরবদের মত এত সাহিত্যর অনুরাগী এবং স্বতঃস্ফূর্তভাবে সাহিত্যের প্রতি ভালোবাসা বা একাগ্রতা প্রকাশ করার মতন কোথাও দেখা যায়নি।
তারা সাধারণত কাশিদা রচনা করতো এবং এটা তাদের বিশেষ কৃতিত্ব ছিল। এছাড়াও তারা সাহিত্যে গদ্য রচনা করত খুবই কম, বেশিরভাগ তারা বংশবৃত্তান্ত ও যুদ্ধ বিগ্রহের ইতিহাস সম্পর্কে বেশি আগ্রহী ছিল। তারা আরবি প্রবাদ বাক্য গুলো সংগ্রহ করত এবং রচনা করতো।
বিজ্ঞান চর্চাঃ কাব্য চর্চার সাথে তারা বিজ্ঞান ও চর্চা করতো। বিশেষ করে চিকিৎসা বিদ্যা জ্যোতির্বিদ্যা বায়ুপ্রবাহের দিক নির্ণয় বৃষ্টিপাতের সময় নির্ণয় ইত্যাদি। এই সকল বিষয়ে তারা জ্ঞান আরোহণের চেষ্টা করত।
কাব্য প্রতিক্রিয়াঃ তৎকালীন আরবের কবিতায় শ্রেষ্ঠত্ব দেখা যেত এবং কবিতাগুলো সমাজের সর্বস্তরে প্রকাশিত হতো। কোন কোন কবিতায় অন্য গোত্রের প্রতি ঘৃণার বহিঃপ্রকাশও ঘটতো। আবার অনেক সময় রক্ত ক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটতো।
এমন কি উকাজের মেলায় সংঘর্ষ দেখা দিতো। এই কাব্য নিয়ে যুদ্ধ তারা সৃষ্টি করত। প্রাক ইসলামী আরবের সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থা এর পাশাপাশি সাংস্কৃতিক অবস্থা তেমন একটা রুচিপূর্ণ ছিল না। কারণ তারা কাব্য নেই ঝগড়া এবং যুদ্ধ শুরু করত।
গীতিকাব্যঃ সংস্কৃতির মধ্যে অন্যতম হলো গীতিকাব্য অথবা কাশিদা ইতিহাসের সবচাইতে বিখ্যাত ছিল। কবিতার আলোচনা করার সাবলীল গতি এবং স্বচ্ছ বাক্য বিন্যাসের বৈশিষ্ট্য থাকলেও তারা বিষয়বস্তু তেমন একটা ভালো ছিল না। যুদ্ধের ঘটনা বংশ গৌরব বীরত্বপূর্ণ কাহিনী এছাড়া নারীদের বিষয় নিয়ে গীতিকাব্য রচনা করত। ঐতিহাসিক পিকে হিট্টি বলেন কাব্য প্রীতি ছিল বিদুন্দের সাংস্কৃতিক অঙ্গণ।
কবিতা প্রতিযোগিতাঃ ঐ যুগে আরবদের মধ্যে কবিতার প্রতিযোগিতা হত। বিশেষ করে উকাজ মেলাতে প্রতিবছরের মেলায় কবিতা পাঠের জন্য প্রতিযোগিতা শুরু হতো। এই সাহিত্য কাব্য চর্চার ধারা সংশ্লিষ্ট কবিগণ নিজেদেরকে প্রমাণ করার জন্য কবিতার প্রতিযোগিতা হতো এদের মধ্যে বাছাই করে তাদেরকে পুরস্কার দেওয়া হতো এবং তাদের কবিতাগুলো বিভিন্ন জায়গায় সংগ্রহ করে রাখা হতো।
কাব্য চর্যাঃ প্রাক ইসলামি আরবের সাংস্কৃতিক অবস্থা হলো উকাজ মেলায় একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল। কাব্য চর্যা শাকিব গোত্রের ইবনে সালামাহ প্রতি সপ্তাহে সাহিত্যের আসর বসাত। সমাজে যত কবি ছিল তাদেরকে মর্যাদা দেওয়া হতো তাদের কবিতার জন্য উচ্চ মানের প্রশংসা করা হতো। তবে তাদের কবিতার মৌলিক চিন্তাভাবনার অভাব ছিল।
আরবি কবিতাঃ আরবদের কবিতার বিষয়বস্তু সাধারণত বেশি ভালো না হলেও তাদের কবিতার মাধ্যমে জাহিলি যুগের সমাজ ব্যবস্থা তুলে ধরা হয়েছে। তারা ব্যক্তির স্বাধীনতা গণতন্ত্র বিশ্বাসী ছিল মৃত্যুর ভয়ে কাপুরুষের মতো ভীত তারা ছিল না। সেসব বীরত্ব তারা কবিতায় উল্লেখ করেছে তাই কবিতাগুলোকে তারা বিবেচিত করত।
স্থাপত্য শিল্পঃ আরবের সংস্কৃতি অঙ্গনে শিল্পের প্রতিও তারা বেশি উন্নত ছিল। ইমারত নির্মাণের জন্য তারা সহজলভ্য উপাদান হিসেবে গ্রানাইট মার্বেল ব্যবহার শুরু করে। এছাড়াও ২০ তলা দুর্গ নয় মিটার মন্দির স্থাপত্য নিদর্শন ছিল। এছাড়া তাদের মুদ্রাও বেশ ভালো ছিল।
প্রাক ইসলামী যুগে আরবের সামাজিক ও ধর্মীয় অবস্থা
প্রাক ইসলামী যুগে আরবের সামাজিক ও ধর্মীয় অবস্থা তেমন একটা উন্নত ছিল না। তারপরও ধর্মে অবস্থা সম্পর্কে আমাদের জানা দরকার। উপরে সামাজিক অবস্থার কথা বর্ণনা করা হয়েছে। নিম্নে ধর্মী অবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো,
পৌত্তলকিতাঃ হযরত ইব্রাহিম আঃ ইসমাইল আঃ এবং পরবর্তীতে যে কয়েকজন নবী-রাসূল আরবের বুকে এসেছেন। তারা আল্লাহর একত্ববাদ প্রকাশ প্রচার করেছেন কিন্তু হযরত মুহাম্মদ সাঃ জন্মের পূর্বে সমগ্র আরবে পৌত্তলকিতা ভয়াবহ ছিল। কেননা তারা পৌত্তলকিতা প্রমাণস্বরূপ কোরআন শরীফে নামে তিনটি প্রস্তর মূর্তির কথা বলেছে।
তারা এমন অকাট্য প্রমাণ করতে চায় তাদের প্রাক ইসলামী আরবের সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থা যেমন খুবই শোচনীয় অবস্থা ছিল। ঠিক তেমনি ধর্মীয় বিষয়ক তারা অনেক নিচু মানের ছিল। কেননা তারা আল্লাহর কন্যা নামে বর্ণিত এইসব দেবদেবী প্রস্তর বানাতো এবং পূজা করত।
আদিম প্রকৃতির ধর্মীয় বিশ্বাসঃ তৎকালীন আরবের অধিকাংশ লোক ধর্মহীন ছিল তারা ধর্ম তেমন বসতো না তারা উদ্ভট আধ্যাত্মিক ধ্যান-ধারণা জড় পূজা, সৌর পূজা করত তাদের ধর্মবিশ্বাস ছিল। আদিম বাসীদের যেমন প্রকৃতি পূজা করত তারা এরকম প্রকৃতি পুজায় অভ্যাসটা ছিল।
তারা অধিকাংশই আধ্যাত্মিকতায় বিশ্বাস করতো কুসংস্কার বর্বরতার পাপাচার বিশ্বাস করে। তার ধর্ম ছিল পৌত্তলকিতা এবং বিশ্বাস ছিল যে আল্লাহর পরিবর্তে অদৃশ্য শক্তি তেমন কেউ কিছু নেই।
জড় উপাসনাঃ সেমেটিক ধর্ম মতে বেদুইনদের ধর্মবিশ্বাস ছিল অনেক প্রাচীন যুগের মত। তাদের মধ্যে সাধারণত জড় উপাসনার বেশি দেখা দিত। বেদইনদের জড়বাদীতার কারণে তারা প্রস্তরখন্ড বৃক্ষলতা পাহাড়-পর্বত গুহাকে তারা পবিত্র মনে করে পূজা করত।
প্রাণ রক্ষাকারী মরুভূমির কুয়া জীবনের সাথেও ভাবে জড়িত ছিল যার কারনে ঝরনার আত্মা নামে তারা ব্যবহার করত।
চন্দ্র ও সূর্য পূজাঃ রাজ্যগুলোতে সাধারণত সূর্য চন্দ্র দেবতার পূজা করত। বেদুইন গুলো বিভিন্ন গ্রহকেও পূজা করত। আরো বেদুইনরা সৌরজগতের প্রতি গভীরভাবে আকৃষ্ট ছিল। চন্দ্র পূজা বেদইনদের মাঝে এক ধরনের পরিচালনায় নিমত্ত ছিল। এছাড়াও রাজ্যের অধিবাসীরা সাধারণত সূর্য দেবতা উপাসনা করতো।
ভাগ্য গণনায় বিশ্বাস করতঃ প্রাক ইসলামী যুগে আরবের সামাজিক ও ধর্মীয় অবস্থা হলো মক্কার বুকে যত মন্দির রয়েছে কুরাইশরা সাধারণত পৌরহিত বিশ্বাস করত। এর ফলে বংশ মর্যাদা কল্যাণের দাবিদার করত পৌরহিত জীব জন্তু মন্ত্র যাদু প্রগতি কুসংস্কার এইগুলো ছিল আরববাসীদের নিয়মিত্তিক ব্যাপার। ভূত ভবিষ্যৎ বাণীতে তারা বিশ্বাস করত এছাড়াও ভবিষ্যৎ গণনা কে তারা ভবিষ্যৎ বক্তা নামে কাহিন নামে তাদের কাছে পরিচিত ছিল।
অন্ধ ধারণাঃ আরবের লোকেরা যে সকল শস্য উৎপাদন করত তার অর্ধেক সৃষ্টিকর্তার জন্য রেখে দিত। আর বাকি অর্ধেক নিজের জন্য রেখে দিত। তারা বিভিন্ন বিপদ আপাদ এবং প্রাকৃত থেকে মুক্তির জন্য দেবতার পূজা করত এবং পুত্র সন্তান লাভ হয় আশায় দেবতাদের বিভিন্ন ধরনের ভোগ দিয়ে খুশি করত।
হানিফ সম্প্রদায়ঃ ধর্মীয় কুসংস্কার ও অনাচারের যুগেও আরব দেশে একশ্রেণীর লোক এক ঈশ্বরের বিশ্বাসী ছিল। তারা মূর্তি পূজার বিরোধিতা করত এবং পূর্বপুরুষের নিয়মেই তারা নিয়ম মেনে চলতা। এদেরকে বলা হয় হানিফ সম্প্রদায়।
তারা সর্বশক্তিমান সৃষ্টিকর্তা আছে এটা বিশ্বাস করত এবং পরকালের দুঃখ সুখ এগুলো সম্পর্কে তাদের যথেষ্ট জ্ঞান ছিল হানিফ সম্প্রদায় ভালো ছিল এবং তাদের মর্যাদা ও ছিল।
ইহুদী সম্প্রদায়ঃ ইসলাম ধর্মের আবির্ভাবের পূর্বে আরবের পৌত্তলিকতা ছাড়াও ইহুদী সম্প্রদায়ের লোকজন বসবাস করত। তারা প্রায় ৭০০ বছর পূর্বে হিমারিও রাজা আবু কাদের আসাদ দক্ষিণারবের ইহুদি ধর্ম কে প্রবর্তন করেছিল। পরবর্তীতে রাজা জুনওয়াজ এর সময় ইহুদিরা মতামত প্রকাশ করত। শুরু করে মহানবী সা এর আবির্ভাবের পরে বিভিন্ন এলাকায় মদিনার ভূক কন্ঠে প্রকৃতি ইহুদি উপনিবেশ গড়ে উঠেছিল।
খ্রিস্টান সম্প্রদায়ঃ ঐ যুগে মক্কার আরবের ধর্মীয় রাজনৈতিক অবস্থা তেমন উন্নত ছিল না তারপরেও অনেক ধর্মের লোকজন তারা বসবাস করত। খ্রিস্টানরা তারা এক আল্লাহর পরিবর্তে তিত্ববাদে বিশ্বাসী ছিল। ধর্মীয় আধ্যাত্মিক ক্ষেত্রে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি তৈরি করেছিল।
আইয়ামে জাহেলিয়া বলতে কি বুঝায়
আইয়ামে জাহেলিয়া বলতে কি বুঝায় তাহলো আইয়াম শব্দের অর্থ যুগ এবং জাহিলিয়া অর্থ তামাশা অজ্ঞতা বর্বরতা কুসংস্কার ইত্যাদি। সুতরাং আইয়ামে জাহেলিয়া বলতে অজ্ঞতার যুগ বলা হয়।
যে যুগের আরবদের কোন প্রকার সংস্কৃতি সূক্ষ্ম ধর্মীয় অনুভূতি চেতনা ছিল না। সেজন্য ওই যুগে আইয়ামে জাহেলিয়া বলা হয়ে থাকে। এক কথায় ইসলামের আবির্ভাব পূর্ববর্তী যুগকে আমরা জাহেলিয়া বলতে পারি।
ঐতিহাসিকদের মতে একদিক দিয়ে হযরত আদম আঃ সৃষ্টি হতে শুরু করে হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর পূর্ব পর্যন্ত সবাইকে জাহেলিয়া বলা হয়ে থাকে। তবে এখানে বিশেষ করে ইসলামের ব্যবহৃত কি বুঝানো হয়। আবার কেউ কেউ বলেছেন ইসলামের আবির্ভাব এর পূর্ব সময়কে আইয়ামে জাহেলিয়া বলা হয়।
আইয়ামে জাহেলিয়া বলতে কি বুঝায় তাহলো ঐতিহাসিক বলেন ইসলামের আবির্ভাবকালের পূর্ববর্তী ১ শতাব্দী কালকে বলা হয়ে থাকে। তার মতে সমর্থন করেন ঐতিহাসিক পিকে হিট্টি বলেন সাধারণত জাহেলিয়া শব্দের অর্থ অজ্ঞতার বা বর্বরতার যুগ কিন্তু এটা সেই যুগকে বোঝায় যে আরবে কোন নিয়মকানুন ছিল না।
কোন নবীর আবির্ভাব ঘটে নাই এবং কোন ঐশি বা অবতীর্ণ হয় নাই সেই যুগকে সাধারণত জাহেলিয়া যুগ বলা হয়ে থাকে। এক কথায় প্রাক ইসলামি আরবের ওই সময় কি জাহিলের যুগ বলা হবে যে সময় এর সামাজিক অবস্থা তেমন একটা ভালো ছিল না এবং খুবই নিকৃষ্ট মানের ছিল।
প্রাচীন আরবের ভৌগলিক অবস্থান
প্রাচীন আরবের ভৌগলিক অবস্থান সম্পর্কে আমাদের জানা প্রয়োজন। কেননা একটি দেশের ভৌগোলিক অবস্থানের উপর নির্ভর করে তার সকল কিছু। তা নিম্নে প্রাচীন আরবের ভৌগোলিক অবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো,
ইসলামের জন্মভূমি আরব দেশ পৃথিবীর অন্যতম একটি বৃহত্তম উপদ্বীপ নামে পরিচিত। তিনটি দিক রয়েছে জলরাশি আর অন্য দিকগুলোতে বিস্তীর্ণ মরুভূমি। উত্তরের সিরিয়া মরুভূমি দক্ষিনে ভারত মহাসাগর পূর্বে পারস্য উপসাগর এবং পশ্চিমে লোহিত সাগর অবস্থিত। আরব দেশের তিন দিকে জল ও একদিকে স্থলভাগ দ্বারা বেষ্টিত।
আরববাসিরা এটাকে জাজিরাতুল আরব আরবের উপদ্বীপ বলে আখ্যায়িত করে। এশিয়া ইউরোপ আফ্রিকা এই তিনটি মহাদেশের সংযোগস্থল অবস্থিত। আমেরিকা অস্ট্রেলিয়া আবিষ্কারের পূর্বে আরব উপদ্বীপকে প্রাচীন বিশ্বের কেন্দ্রস্থল হিসেবে মনে করা হতো।
তাই তাদের স্থলভাগে মরুভূমি হওয়ার কারণে তাদের সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থা তেমন একটা ভালো ছিল তারা উগ্র এবং উগ্রভাবের মানুষ হওয়ার কারণে তারা সমাজের বুকে তেমন একটা ভালো কাজ করেনি। তারা বিশৃঙ্খলা এবং কুসংস্কার ইত্যাদিতে বিশ্বাসী ছিল।
প্রাচীন আরবের ভৌগলিক অবস্থান পাশাপাশি তাদের আয়তন প্রায় ১০ লক্ষ সাতাশ হাজার বর্গমাইলের মত।
আয়তনের সর্বমোট ১২ লক্ষ বর্গমাইল হতে পারে। আয়তনের দিক থেকে এটা ইউরোপ মহাদেশের চার ভাগের এক ভাগ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৃতীয় অংশের সমান হিসাবে বিবেচনা করা হয়। মরু অঞ্চল বলে এখানে আয়তনের তুলনায় লোক বসতি তেমন একটা বেশি নেই।
আরবের ভৌগোলিক অবস্থা বলতে গেলে তাদের জলবায়ু মরুময় এবং উষ্ণতা তাপমাত্রা বেশি রয়েছে। সারা বছর বৃষ্টি খুবই কম হয়, মরুভূমির প্রচন্ড হাওয়া এবং তাপমাত্রার কারণে লোকজন চলাফেরা করতে কষ্ট হয়। এখানকার জমি চাষাবাদ করা যায় না, মৌসুমী আবহাওয়া দক্ষিণ আরবের ভূমধ্যসাগের জলবায়ুর প্রভাবে কিছু একটা বৃষ্টি হয় কিন্তু খুবই কম।
এছাড়াও এখানে দুই তিন বছর ধরেও অনেক সময় বৃষ্টি হয় না। আবার কখনো কখনো অতিরিক্ত ঝড় বৃষ্টির ফলে জনসাধারণের ক্ষতি হয়। এ সকল জমিতে তেমন একটা চাষাবাদের উপযোগী নয়। এদের কৃষি ব্যবস্থা হল তারা খেজুর উৎপন্ন করে। গমের চাষ হয় এছাড়াও ঘোড়ার খাদ্যবস্তু হিসেবে তারা বার্লিন চাষ করে থাকে।
তাছাড়া আরও ধান হয়তো কিছু কিছু জায়গায় সামান্য ধান হলেও হতে পারে কিন্তু কোথাও আঙ্গুর ডালিম আপেল কমলা লেবু কলা তরমুজ সাধারণত কিছু কিছু জায়গায় উৎপাদন হয়। তবে অধিকাংশ মানুষের কাছে তাদের প্রিয় খাদ্য হলো খেজুর যা পৃথিবীর এমন সুস্বাদু খেজুর জন্ম নেবে না। এছাড়াও খেজুরের রস থেকে বিভিন্ন ধরনের খাদ্য তৈরি করতে পারে।
শেষ কথাঃ প্রাক ইসলামী আরবের সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থা কেমন ছিল জেনে নিন
পরিশেষে বলা যায় যে প্রাক ইসলামী আরবের সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থা সাংস্কৃতিক ধর্মীয় ইত্যাদি খুবই উন্নত মানের ছিল না। তারা বেশিরভাগ নিরক্ষর হওয়ার কারণে ইচ্ছামতো জীবন যাপন করত। তারা ছিল স্বাধীন মানুষ। যা হোক আরবের বুকে পরবর্তীতে আমাদের নবী করীম সাঃ জন্ম গ্রহণ করার পর পৃথিবীর অন্যর কোন একটি দেশ হিসেবে পরিচিত লাভ করে। তাই আজকের এই পোস্টটি থেকে যদি আপনি উপকৃত হন তাহলে আপনার বন্ধু-বান্ধবের মাঝে পোস্টটি শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ
এম আর মাহমুদ ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url