বক্সারের যুদ্ধের কারণ ও গুরুত্ব, ফলাফল সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন

ইংরেজরা এদেশে স্বাধীনভাবে কর্তৃত্ব পরিচালনা করেন বক্সারের যুদ্ধের পর। তাই বক্সারের যুদ্ধের কারণ ও গুরুত্ব রয়েছে। চলুন, বক্সারের যুদ্ধের পটভূমি সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
ছবি
বক্সারের যুদ্ধে মীর কাসিম পরাজয় করার ফলে ইংরেজরা এদেশে সরাসরি অর্থনৈতিক শোষণ করে নেয় এবং মীর কাসিমের করুন মৃত্যুর মধ্য দিয়ে ভারতবর্ষের স্বাধীনতা অস্থিমিত হয়। তাই বক্সারের যুদ্ধের কারণ ও গুরুত্ব সম্পর্কে জানতে পোষ্টটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।

পোস্টসূচিপত্রঃবক্সারের যুদ্ধের কারণ ও গুরুত্ব, ফলাফল সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন

বক্সারের যুদ্ধ কাকে বলে

এখন আমরা জানবো বক্সারের যুদ্ধ কাকে বলে তাহলে ১৭৬৪ সালের ২২ শে অক্টোবর বিহার এর বক্সার নামক স্থানে মোগল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলম মীর কাসিম ও নবাব সুজাউদ্দৌলার যৌথ বাহিনী ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি অর্থাৎ ইংরেজদের মধ্যে যে যুদ্ধ হয়েছিল তাকেই মূলত বক্সারের যুদ্ধ বলা হয়ে থাকে। 

পলাশীর যুদ্ধ শুরু হয়েছিল ইংরেজদের জন্য শুভকামনা এবং তার পুরোপুরি ফলাফল পেয়েছিল এ বক্সারের যুদ্ধের বিজয় লাভের পর এবং সকল সুযোগ তারা গ্রহণ করে নেয়। এ যুদ্ধে ইংরেজরা বিজয় লাভ করে এবং মীর কাসেম এই যুদ্ধ থেকে পালিয়ে যায় পরবর্তীতে তিনি ১৭৭৭ সালের দিকে তার মৃত্যু হয়।

বক্সারের যুদ্ধের কারণ ও গুরুত্ব

বক্সারের যুদ্ধের কারণ ও গুরুত্ব সম্পর্কে নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো,

চুক্তির বিপরীতঃ মীরজাফরের যোগ্যতা না থাকার কারণে এবং ইংরেজদের যে প্রতিশ্রুতি অর্থ আদায়ের অক্ষমতা বিলুপ্ত হয়ে ইংরেজ কোম্পানি তাকে অপসারিত করার জন্য সিদ্ধান্ত নেয়। ইংলিশ কোম্পানির কলকাতা প্রেসিডেন্সির গভর্নর ভ্যানটাট ও মীর কাশেম এর মধ্যে গোপন পরামর্শের মাধ্যমে একটি সন্ধিপত্র চুক্তি হয়।

সন্ধি শর্ত মোতাবেক মীরজাফফর নামে মাত্র নবাব থাকবে এবং মীর কাসিম নায়েক সুবেদার হবেন। শাসন সংক্রান্ত ব্যাপার তার পূর্ণ কর্তৃত্ব থাকবে কিন্তু বাস্তব ক্ষেত্রে দেখা গেল যে তার বিপরীত হয়ে যাচ্ছে। যার কারণে মীর কাশেমের উপর ইংরেজরা তখন থেকেই খুব প্রকাশ শুরু করে।

ফরমানের অবমাননাঃ ১৬৫৬ খ্রিস্টাব্দে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এক চুক্তি অনুযায়ী বাংলা সরকারকে বাৎসরিক ৩০০০ টাকা দেওয়ার বিনিময়ে শতকরা আড়াই ভাগ বাণিজ্য শুল্ক হতে মুক্তি পায়। কিন্তু ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ও এর কর্মচারীরা কয়েকটি বিশেষ ক্ষেত্রে এই দস্তকের অপব্যবহার শুরু করে।

ফলে নবাবের ২৫ লক্ষ টাকার মতো লোকসান হয়। ভারতীয় বণিকরাও প্রায় সর্বশ্রান্ত হয়ে পড়ে এর ফলের দেশীয় প্রজাদের উপর থেকেও শুল্ক উঠিয়ে দিয়ে বাণিজ্য করার অধিকার দেয়। এতে ইংরেজ কোম্পানির চরমভাবে তার ওপর রাগান্বিত হয়।

অপমান ব্যক্তিগত অপমানঃ দেখা যায় যে মীর কাসিম বাংলার স্বাধীন নবাব তো নয়ই বরং তিনি ইংরেজি পাত্র হিসেবে পরিগণিত হয়। বিহারের নায়েব সুবেদার নারায়ণ ও ফৌজদার রায় বল্লভ ছিলেন। ইংরেজদের অনুগ্রহিত ও আশ্রিত ফলে তারা নবাবের আদেশ-নির্দেশের মোটেই তোয়াক্কা করত না। ইংরেজ সিফাহ শালার কর্নেল ইস্টু যত্রতত্ত্ব মীর কাশিমকে অপমান করতে থাকে। ফলে ইংরেজদের সাথে তার সম্পর্ক ছেদ হয়।

প্রজাদের উপর অত্যাচারঃ নবাবের উপর ব্যক্তিগত অপমান ছাড়াও কোম্পানির কর্মচারীরা বাংলার জনগণের উপর অত্যাচারণে উৎপিরন শুরু করে। দেশীয় বণিকদের নিকট হতে পণ্য দ্রব্য কিনতে তারা ন্যায্য দামের চেয়ে অনেক কম দাম দিত। অনেক সময় এই কম মূল্যেও দেশীয় লোকেরা পেতনা তাদের নিকট হতে চড়া দামে দেশীয় বণিকদেরকে পণ্য কিনতে বাধ্য করতো।

মীর কাশেমের বিরুদ্ধে অভিযানঃ মীর কাসেমের বিরুদ্ধে গৃহীত নীতি ইংরেজদের মানবতা হয় না। ফলে তারা নবাব মীর কাশেমের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণে একমাত্র পন্থা বলে মনস্থির করেন। পার্টনার ইংরেজ বাণিজ্যকুঠির এলিজ সবচেয়ে বিরক্ত হয়ে ঐতিহাসিক মূর স্পষ্ট বলেছেন এলিজ নিজের এবং বন্ধুবান্ধবের অবৈধ অর্থ উপার্জনের পথের বাধা দূর করার জন্য মীর কাসেমের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণের করতে বদ্ধপরিকর ছিল।

ষড়যন্ত্রকারীদের গৃহবন্দীঃ সিংহাসনের আরোহনের পর তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারী মুরলীধর রাজ বল্লভ জগত শেঠ প্রমুখের কার্যকলাপে অতিষ্ঠ হয়ে তাদেরকে বন্দি করেন। ইংরেজদের স্বার্থের পরিপন্থী হওয়ায় নবাব মীর কাশেম এর বিরুদ্ধে তারা ষড়যন্ত্র করে।
এ যুদ্ধের গুরুত্ব
পলাশীর যুদ্ধের পর তার চূড়ান্ত ফলাফল হিসেবে বক্সারের যুদ্ধের মাধ্যমেই চূড়ান্ত ফলাফল পাওয়া যায়।
মীরজাফর ইংরেজদের হাতে পুতুল সরকার হিসেবে পরিগণিত হয়। কেননা তার হাতে ক্ষমতা ছিল না সে নামে মাত্র সরকার ছিল।

এ যুদ্ধের পর কোম্পানি দেওয়ানি লাভ করে যার কারণে তারা দ্বৈত শাসন নীতি ব্যবস্থা চালু করে।
এই যুদ্ধের ফলে কোম্পানি অর্থনৈতিক রাজনৈতিক প্রশাসনিক সকল দিক দিয়ে শক্তিশালী হয়।
ঐতিহাসিক স্মিথ বলেন পলাশীর যুদ্ধ ছিল একটি কামানের খেলা আর বক্সারের যুদ্ধ তার চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে পৌঁছায়।

বক্সারের যুদ্ধে মীর কাসেম পরাজয় বরণ করে যার কারণে বাংলার নবাবী আমলের শেষ হয়ে যায়।
১৭৬৫ সালে এলাহাবাদের চুক্তি দ্বারা ইংরেজরা এই অঞ্চল দখল করে নেয় এবং ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৫০ লক্ষ টাকা আদায় করে নেয়।

ব্রিটিশ বাহিনী মোতায়েন করার ফলে তাদের ব্যয়ভারও এদেশীয় রাজাদের করতে হতো।
শাহ আলম প্রতিবছরের ২৬ লক্ষ টাকা দেওয়ার বিনিময় বাংলা বিহার উড়িষ্যার দেওয়ানি কার্যক্রম শুরু করে।

এই যুদ্ধের পর থেকে ইংরেজ সরকার প্রশাসনিকভাবে সকল প্রকার দায়িত্ব নিয়ে নেয়।
উপরোক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যেতে পারে যে বক্সারের যুদ্ধের গুরুত্ব রয়েছে। কেননা এই যুদ্ধের ফলেই ইংরেজরা এদেশে পাকাপোক্তভাবে শাসন কার্য পরিচালনা শুরু করে।
বক্সারের যুদ্ধ

১৭৬৩ সালে মেজর অ্যাডামসের নেতৃত্বে ১০ হাজার ইউরোপীয় ও ৪ হাজার দেশীয় সৈন্য নিয়ে ইংরেজ বাহিনী মীর কাশেমের বিরুদ্ধে অগ্রসর হয়। মীর কাশেমের অধীনে প্রায় ২০ হাজার সৈন্য ছিল। অধিকাংশ সৈন্য থাকা সত্ত্বেও তাদের কোন সামরিক দক্ষতা ও পারদর্শী ছিল না। মীর কাশেম কটোয়া গিরিলা উদয়নালা প্রভৃতি যুদ্ধে ইংরেজদের নিকট পরাজিত হয়।

এরপর মেজর অ্যাডামসের মঙ্গরের দিকে অগ্রসর হলে মীর কাসিম পাটনায় পালিয়ে যায়। এতে করে সমস্ত ইংরেজ বন্দিকে নিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে। মঙ্গরের অভিমুখী অগ্রসর হলে মীর কাসিম নিরুপায় হয়ে অযোধ্যায় পলায়ন করে। নবাব সুজাউদ্দৌলার আশ্রয় নেয় এ সময় মীর কাসেম সুজাউদ্দৌলার সহ সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলম এর সাহায্য প্রার্থনা করেন।

তিনি আশা করেছিলেন যে অযোধ্যার নবাব সিংহাসন পুনরোদ্ধারে তাকে সাহায্য করবেন কিন্তু ১৭৬৪ সালে বক্সারের যুদ্ধ এ ইংরেজ সেনাপতি মেজর হেক্টর মনরোর নিকট সম্মিলিত বাহিনীর শোচনীয় ভাবে পরাজিত হয়। শাহ আলম ইংরেজদের পক্ষে যোগ দিলে এবং সুজাউদ্দৌলা শর্তসাপেক্ষে সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করলেন।

মীর কাসিম আত্মগোপন করেন সম্ভবত ১৭৭৭ সালে অতি দরিদ্র অবস্থায় দিল্লির কোন এক যেন কুঠিরে তার মৃত্যু হয়েছিল। 

বক্সারের যুদ্ধ কবে কাদের মধ্যে হয়েছিল

অনেকেই জানতে চায় যে বক্সারের যুদ্ধ কবে কাদের মধ্যে হয়েছিল তাহলে ২২শে অক্টোবর দিকে ১৭৬৪ সালে যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। ইংরেজদের সাথে বাংলার নবাব মীর কাসেম ও অযোধ্যার নবাব সুজাউদ্দৌলার এবং সম্রাট শাহ আলমের মধ্যে এই যুদ্ধ হয়েছিল।

ইংরেজরা বিজয় লাভ করে নেয় এবং মীর কাশেম গোপন করে দেশ থেকে পলায়ন করে। অপরদিকে অযোদ্ধা দখল করে নিলে সুজাউদ্দৌলা রোহিলা খন্ড সেখানে তিনি আশ্রয় নিয়েছিলেন এবং সম্রাট শাহ আলম তিনি ইংরেজদের মধ্যে একটি চুক্তি সম্পাদন করে। আশা করি বুঝতে পেরেছেন যে বক্সারের যুদ্ধ কবে কাদের মধ্যে হয়েছিল।

বক্সারের যুদ্ধের সময় বাংলার নবাব কে ছিলেন

এখন আমরা জানবো বক্সারের যুদ্ধের সময় বাংলার নবাব কে ছিলেন তাহল এ যুদ্ধের সময় বাংলার স্বাধীন নবাব হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন নবাব মীর কাশেম।

পলাশীর যুদ্ধে যখন ইংরেজরা বিজয় লাভ করল তখন পুতুল সরকার হিসেবে মীরজাফরকে নবাব বানিয়ে ছিলেন। কিন্তু মীরজাফরের তেমন কোন দায়িত্ব ছিল না। তার কোন ক্ষমতাও ছিল না দায়িত্বহীন ক্ষমতা বলা হয়ে থাকে। তাই নতুন নবাব কোম্পানির প্রাপ্য অর্থ প্রদানের ব্যর্থ হয়ে যায় এবং দেউলিয়া হয়ে যায়। এছাড়াও এই পুতুল সরকার ক্ষমতার রক্ষা করতে পারে নাই।
রবার্ট ক্লাইভ এর উপরে নির্ভর করতে হয়েছে। রবার্ট ক্লাইভ বারে বারে তাকে চাপ সৃষ্টি করে এজন্য নবাব পছন্দ করে নাই। ইংরেজরা মীরজাফরকে বিদেশি কোম্পানিগুলোর সাথে বন্ধুত্ব করতে বলে। এই বিষয়টি মীরজাফর এর বিরুদ্ধে অযোগ্যতা এবং অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় হচ্ছে। সেই হিসাবে অভিযোগ তুলে তাকে ক্ষমতা ছোট করা হয়।

১৭৬০ সালের দিকে ইংরেজ গভর্নর মীরজাফরকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয় এবং সেখানে মীর কাশেমকে শর্ত দিয়ে সিংহাসনে বসিয়ে দেন ক্ষমতা পাওয়ার পর মির কাসেম স্বাধীনভাবে শাসন কার্য পরিচালনা শুরু করেন। কিন্তু ইংরেজরা এমন ব্যবহার করে যার কারণে তাদের সাথে যুদ্ধ করা জরুরি ছিল। এজন্য বক্সারের যুদ্ধের কারণ ও গুরুত্ব অনেক রয়েছে।

বক্সারের যুদ্ধের পটভূমি

অনেকে প্রশ্ন করে যে বক্সারের যুদ্ধের পটভূমি কি ছিল তা হল পলাশীর যুদ্ধের পর মীরজাফর ইংরেজদের হাতে খেলনা হিসেবে বাংলার শাসনে সিংহাসনে বসেন। ইংরেজদের ক্রমবর্ধমান অর্থের চাহিদা মিটানোর সামর্থ্য পালন করতে মীরজাফর ব্যর্থ হয়ে যায়। এর ক্ষেত্রে আদায়ের ক্ষেত্রে ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করতে পারেনা।
ছবি
এর কারণে ইংরেজরা তাকে ওলন্দাজ ও আরমিনিয়াদের সাথে গোপনে ষড়যন্ত্র করছে এই অজুহাত দেখিয়ে তাকে পদচ্যুত করে এবং তার জামাতা মেয়ের কাসেমকে ক্ষমতায় মনোনীত করে।

তিনি ছিলেন একজন দূরদর্শী রাজনৈতিক স্বাধীনচেতা ও প্রকৃত দেশপ্রেমিক শাসন মন্ত্রকের পাশাপাশি তিনি অদ্য বিদ্রোহী জমিদারদেরকে আনুগত্য শিকারে বাধ্য করেছিল।আসলে এটাই বক্সারের যুদ্ধের পটভূমি সম্পর্কে।

বর্ধমান মেদিনীপুর ও চট্টগ্রাম এই তিনটি জেলা প্রদান করে ইংরেজদের নিকট হতে ঋণ মুক্ত হয়েছিলেন।

শাসন ব্যাপারে যথাসম্ভব ব্যয় সংকোচন করেন এবং কয়েকটি নতুন কর স্থাপন করে রাষ্ট্রীয় রাজস্ব ব্যবস্থাকে মজবুত করেছিলেন।

জমিদারদের নিকট হতে বকেয়া রাজস্ব আদায় করে অর্থনৈতিক কাঠামো সাজিয়েছিলেন।
ইংরেজ ষড়যন্ত্রের বেড়াজালে আবদ্ধ রাজধানী মুর্শিদাবাদ তিনি স্থানান্তর করেন।

তিনি ইংরেজদের কর্তৃপক্ষের দৃষ্টির আড়ালে নিজ দেশীয় সৈন্যদের ইউরোপীয় কায়দায় প্রশিক্ষণ দিতে চাইছিলেন।

বিহারের শাসনকর্তা রাম নারায়নকে ইংরেজ প্রীতি এবং স্বাধীনতার জন্য বরখাস্ত করেছিলেন।
তিনি কামান ও বন্দুক নির্মাণের ব্যবস্থাও করেছিলেন।

কিন্তু এইসব আয়োজন শেষ হওয়ার পূর্বেই ইংরেজদের সঙ্গে তার সম্পর্কের অবনতি হয় এবং বছরের প্রান্তরে গিয়ে মুখোমুখি হয়।

পলাশী ও বক্সারের যুদ্ধের ফলাফল তুলনামূলক আলোচনা করো

আপনি হয়তো প্রশ্ন করতে পারেন যে পলাশী ও বক্সারের যুদ্ধের ফলাফল তুলনামূলক আলোচনা করো সেক্ষেত্রে নিম্নে পলাশীয় বক্সারের যুদ্ধের তুলনা করা হলো,

প্রেক্ষাপটঃ পলাশী ও বক্সারের যুদ্ধের প্রেক্ষাপট ছিল ভিন্ন ভিন্ন পলাশীর যুদ্ধের প্রেক্ষাপট ছিল ইংরেজদের আধিপত্য বিস্তার ও ঘরোয়া ষড়যন্ত্র কিন্তু বক্সারের যুদ্ধের ক্ষেত্রে ইংরেজদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করা ছিল তাদের মূল উদ্দেশ্য। পলাশীর যুদ্ধ ইংরেজদের পক্ষে রবার্ট ক্লাইভ এবং প্রাসাদের মধ্যে মীরজাফর জগত সেট রাজ বল্লভ রায় দুর্লভ এরা সবাই মিলে প্রাসাদ ষড়যন্ত্র শুরু করেছিলেন।

যার কারণে পরবর্তীতে তারা পলাশীর যুদ্ধে ইংরেজদের পক্ষ নিয়েছিলেন। অপরদিকে বক্সারের যুদ্ধে নবাব মীর মানিককে সাহায্য করেন। অযোধ্যায় নবাব সুজাউদ্দৌলা ও দ্বিতীয় শাহ আলম কে সাহায্য করেছিলেন।

যুদ্ধের প্রকৃতিঃ পলাশীর যুদ্ধ এটা যুদ্ধ নাকি অনেক প্রাসাদ ষড়যন্ত্র এটা নিয়ে অনেক ঐতিহাসিক মতবিরোধও করেন। অনেকের মতে পলাশীর যুদ্ধ এটা কোন যুদ্ধ নয় এটা একটা ষড়যন্ত্র। কারণ যুদ্ধ হলে চূড়ান্ত শক্তি পরীক্ষায় ফলাফল। অবশ্যই নবাব সিরাজউদ্দৌলা বিজয় লাভ করতেন। অন্যদিকে বক্সারের যুদ্ধ ছিল প্রকৃতপক্ষে যুদ্ধ।

কারণ এই যুদ্ধে মীর কাসেম একাধিকবার বিভিন্ন স্থানে পরাজিত হন বা শক্তি পরীক্ষায় তিনি উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। এমনকি অযোধ্যার নবাব সুজাউদ্দৌলা ও দিল্লির সম্রাট শাহ আলমের সাহায্যে সম্মিলিত বাহিনীর গড়ে তুলেছিলেন যেটা ব্যর্থ হয়।

ইংরেজ আধিপত্য প্রতিষ্ঠাঃ ইংরেজ আধিপত্য প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে পলাশীর যুদ্ধ ছিল কেবলমাত্র শুরু আর এই যুদ্ধ কোম্পানি কেবল সন্ধি মোতাবেক অর্থ প্রতিভা সুবিধা কিন্তু বক্সারের যুদ্ধের পর ইংরেজরা রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ডিসিশন মেকার হিসাবে কাজ করে। সকল ক্ষেত্রে কোম্পানির সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হিসেবে পালন করা হয়।

সামরিক শক্তিঃ পলাশীর যুদ্ধের কোন পক্ষের সামরিক শক্তির তেমন কোন প্রতিফলন দেখা যায়নি কিন্তু বক্সারের যুদ্ধে ইংরেজ সামরিক শক্তি চূড়ান্ত উপস্থাপনা ছিল।

যুদ্ধ পরিকল্পনাঃ পলাশীর যুদ্ধে কোন পক্ষের সামরিক শক্তির তেমন কোন প্রতি পলাশীর যুদ্ধ ছিল পরিকল্পনাহীন পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য সংঘটিত একটি যুদ্ধ কিন্তু ছিল পূর্ব পরিকল্পনা সম্পন্ন চূড়ান্ত একটি শক্তির পরীক্ষা।
অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতিঃ পলাশীর যুদ্ধের প্রাক্কালে অভ্যন্তরীণ রাজনীতির পরিবেশ ছিল ষড়যন্ত্র ও সন্দেহমূলক। অন্যদিকে বক্সারের যুদ্ধের প্রাক্কালে রাজনৈতিক পরিবেশ ছিল ইংরেজ আধিপত্য প্রতিষ্ঠার উচ্চ আকাঙ্ক্ষার বাস্তব প্রতিফলন ঘটিয়েছিলেন।

মীরজাফরের ক্ষমতা লাভঃ পলাশী যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলার নবাব হয়েছিলেন চুক্তি মোতাবেক মীরজাফর কিন্তু বক্সারের যুদ্ধের পর ইংরে জাফরকে নবাবী প্রধান করেছিলেন।

ব্রিটিশদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠাঃ পলাশীর যুদ্ধের পর ব্রিটিশদের তথা বেনিয়াদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠার কেবল যাত্রা শুরু করেছিলেন। অন্যদিকে বক্সারের যুদ্ধের পর কোম্পানি বা ব্রিটিশ শক্তি বাংলা নিয়ন্ত্রণের ভূমিকা অবতীর্ণ হয়।

অর্থনৈতিক সুবিধা লাভ করেঃ পলাশীর যুদ্ধের পর কোম্পানি মাত্র শর্ত মোতাবেক অর্থ বাণিজ্য সীমিত সুযোগ-সুবিধা কিন্তু বক্সারের যুদ্ধের পর কোম্পানি অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বেশ লাভবান হয়েছিলেন। কারণ ১৭৬৫ সালে কোম্পানির নামমাত্র শর্ত বাংলা বিহার উড়িষ্যার দেওয়ানি ক্ষমতা লাভ করেছিলেন।

সমগ্র ভারতবর্ষে ইংরেজ শক্তির প্রাধান্য প্রতিষ্ঠাঃ পলাশীর যুদ্ধ নবাব সিরাজউদ্দৌলা পরাজিত হয় যার কারণে ভারতীয় উপমহাদেশে ইংরেজদের প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হয়েছিল। অন্যদিকে বক্সারের যুদ্ধে যেহেতু নবাব মীর কাসিম নবাব সুজাউদ্দৌলা সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমের মধ্যে সম্মিলিত বাহিনীর পরাজয় হয়েছিল।

তাই ইংরেজরা প্রায় গোটা ভারতবর্ষে আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় তেমন কোন বাধা আর রইলো না। ফলে ভারতবর্ষ ছাড়াও ইংরেজরা উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

রাজনৈতিক ক্ষেত্রে পরিবর্তনঃ পলাশীর যুদ্ধের ফল রাজনৈতিক ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এজন্য বাংলার ইতিহাসে সমাজের রচিত হয়েছিল অতীত ঐতিহ্যের যাত্রা সূচিত হয় এবং নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়েছিল। অন্যদিকে বক্সারের যুদ্ধের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল পলাশীর যুদ্ধের মাধ্যমেই এই পরিবেশটা সৃষ্টি হয়। কেননা বক্সারের যুদ্ধে পরাজয় বাংলার নবাবী হয় ইংরেজদের ইশারা ইঙ্গিতের পরিবর্তনের সমতুল্যর মত।

যুগের পরিবর্তনঃ পরিবর্তনের দিক থেকে পলাশীর যুদ্ধের মধ্যযুগের অবসান হয়েছিল এবং যাত্রা হয় আধুনিক যুগের অন্যদিকে বক্সারের যুদ্ধের পর আধুনিক যুগের উপাদান সময়ের বিকাশ সাধিত হতে থাকে।

সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেঃ পলাশীর যুদ্ধের পর ইংরেজরা বাংলার সামাজিক সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার লাভ করেছিল এবং তেমন কোনো সুযোগ সুবিধা ও তারা পায়নি কিন্তু বক্সারের যুদ্ধের পর ইংরেজরা বাংলার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষভাবে হস্তক্ষেপ করে এবং তারা সুযোগ-সুবিধা লাভ করে।

সিরাজউদ্দৌলা ও মীর কাসেম এর পতনঃ পলাশীর যুদ্ধের পর সিরাজউদ্দৌলার দেশ প্রেমিক হওয়ার শর্তও তিনি পরাজয় বরণ করেছিলেন কিন্তু বক্সারের যুদ্ধের পর পতন হয় বাংলার শেষ ঐতিহ্য ও শক্তির আধার মীর কাশেমের যিনি চেয়েছিলেন কৌশলে কিভাবে ইংরেজদের বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে আসা যায় এবং ইংরেজদেরকে প্রতিহত করা যায়।

বক্সারের যুদ্ধের ফলাফল

ইতিপূর্বে আমরা জেনেছি বক্সারের যুদ্ধের কারণ ও গুরুত্ব সম্পর্কে। এখন জানব এর ফলাফল সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলো,

ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠাঃ পলাশীর যুদ্ধের পর সিরাজউদ্দৌলার পরাজয়ের ফলে ভারতে ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠার পথ সূচনা হয়েছিল কিন্তু বক্সারের যুদ্ধের জয় লাভের পর ইংরেজরা তারা এদেশের শাসন দণ্ড হাতে নিয়ে নেয় এবং পরিচালনা করতে থাকে।
ছবি
উপনিবেশ প্রতিষ্ঠাঃ এ যুদ্ধের ফলে বাংলা বিহার উড়িষ্যার রাজ ক্ষমতা ইংরেজদের হাতে চলে যায় এবং রবার্ট ক্লাইভ গভর্নর হয়ে এদেশে আসে অল্প কিছুদিনের মধ্যে তারা গোটা ভারতবর্ষের ইংরেজ উপনিবেশ গড়ে তোলে। ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত প্রায় পৌনে দুই শত বছর তারা এদেশের রাজত্ব করে। ঐতিহাসিকরা বলেন বক্সারের যুদ্ধের ফলাফলের উপর ভারতবর্ষের ভাগ্য নির্ভর করেছিল।

মুসলিম শক্তির অধঃপতনঃ বছরের যুদ্ধে পরাজয়ের সাথে সাথে মুসলিম শক্তির ধ্বংস এবং ইংরেজদের ক্ষমতা বৃদ্ধি পেতে থাকে। শিক্ষা-সংস্কৃতি প্রভৃতি ক্ষেত্রে মুসলমানরা এক চরম অধঃপতনের শিকার হয়ে যায়।

হিন্দুদের উত্থানপর্বঃ এই যুদ্ধে মুসলমানদের পরাজয়ের ফলে হিন্দুগণ ইংরেজদের সাথে ঘনিষ্ঠতা শুরু করে এবং ইংরেজদের সহযোগিতায় শিক্ষা-দীক্ষায় তারা এগিয়ে যায়।

আমাদের শেষ কথা

পরিশেষে বলা যায় যে পলাশীর যুদ্ধের পর ইংরেজরা এদেশে শাসন করার শুরু করেছিল এবং বক্সারের যুদ্ধের পর তারা এদেশে স্থায়ীভাবে শাসন কার্য পরিচালনা করে। তাদের হাতে পরিচালনা কার্যক্রম চলে যায়। তাই বক্সারের যুদ্ধের কারণ ও গুরুত্ব রয়েছে। আজকের পোস্টটি পড়ে যদি আপনি উপকৃত হয়ে থাকেন। তাহলে আপনার বন্ধু-বান্ধবের মাঝে পোস্টটি শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এম আর মাহমুদ ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪