ডায়াবেটিসে ঢেঁড়স এর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
ঢেঁড়সের পুষ্টিগুণ এবং ঢেঁড়স এর উপকারিতা ও অপকারিতা রয়েছে। তাই ঢেঁড়স নিয়মিত খেলে শরীর-স্বাস্থ্য ভালো থাকে। তবে যাদের এলার্জি সমস্যা রয়েছে তারা ঢেঁড়স খেলে চুলকানি হতে পারে। চলুন, ঢেঁড়সের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
ঢেঁড়সের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টিগুণ আছে যা শরীরের খারাপ কোলেস্টেরল দূর করতে পারে এবং রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এজন্য ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য অনেক উপকার। তাই ডায়াবেটিসে ঢেঁড়স এর উপকারিতা সম্পর্কে জানতে আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
পোস্টসূচিপত্রঃডায়াবেটিসে ঢেঁড়স এর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
ঢেঁড়স এর উপকারিতা
ঢেঁড়স এর উপকারিতা অনেক রয়েছে, বিশেষ করে বিভিন্ন ধরনের রোগ ব্যাধিতে ঢেঁড়সের উপকারিতা রয়েছে। নিম্নে এর উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো,
রক্তশূন্যতা দূর করেঃ ঢেঁড়সের মধ্যে ভিটামিন কে থাকার কারণে দেহের কোথাও কেটে গেলে রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে। এছাড়াও রক্তের হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধি করে আয়রন ও ভিটামিনের কাজ করে থাকে। রক্তের লাল প্লাটিলেট তৈরি করে। তাই রক্তশূন্যতা দূর করার জন্য ঢেঁড়স এর উপকারিতা আছে।
ওজন কমাতে সাহায্য করেঃ ঢেঁড়সের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে। যা খেলে পেট ভরা মনে হয় এবং ভিটামিনের কাজ করে দেহে অনেকক্ষণ এই ঢেঁড়স খাবারটা থাকার কারণে অন্য খাবার খাওয়ার প্রতি আগ্রহ জাগে না। যার কারণে ওজন কমতে সাহায্য করে।
এছাড়াও এর মাঝে ক্যালরি খুবই কম থাকে। যার কারণে শরীরের চর্বি জমে না। তবে ঢেঁড়স এর উপকারিতা ও অপকারিতা উভয় রয়েছে। কেননা এটা অনেক উপকারী কিন্তু যাদের এলার্জি সমস্যা রয়েছে এবং পেটে গ্যাসের সমস্যা থাকে তারা পরিমানে খুবই কম খাবেন।
খারাপ কোলেস্টেরল কমায়ঃ শরীরে যদি কোন খারাপ কোলেস্টেরল বৃদ্ধি পায় সে ক্ষেত্রে নিয়মিত ভাবে ঢেঁড়স খেলে কোলেস্টেরল কমে যাবে। হার্টকে সুস্থ রাখে, কেননা এর মাঝে ফাইবার রয়েছে যে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে পারে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়ঃ ঢেঁড়সের মধ্যে ভিটামিন সি ও অ্যান্টি এক্সিডেন্ট থাকার কারণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দিতে পারে। বিভিন্ন সংক্রমণকে থেকে রক্ষা করতে পারে এছাড়া এটা রক্তের হোয়াইট ব্লাড সেল তৈরি করতে পারে। যার কারণে রোগ শরীরে প্রবেশ করতে পারে না।
বিষন্নতা দূর করেঃ ঢেঁড়সের মধ্যে যে উপাদান রয়েছে তা আমাদের শরীরে বিষন্নতা দুর্বলতা এবং অবসাদ ইত্যাদি কাটিয়ে তুলতে পারে।
চোখের দৃষ্টি ভালো রাখেঃ ঢেঁড়সের মধ্যে আছে বেটা ক্যারোটিন ভিটামিন এন্টি এক্সিডেন্ট লিউটিন যেটা আমাদের চোখে বিভিন্ন ধরনের সমস্যার প্রতিরোধ করতে পারে। চোখে ছানি পড়া থেকেও রক্ষা করতে পারে।
হজম শক্তি বাড়িয়ে দেয়ঃ যাদের হজমের সমস্যা রয়েছে তারা নিয়মিতভাবে ঢেঁড়স খেতে পারেন। কেননা এর মাঝে ফাইবার এবং আঁশযুক্ত খাবার হওয়ার কারণে এটা হজমের ক্ষেত্রে অনেক উপকার করে।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করেঃ যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা রয়েছে তারা নিয়মিতভাবে ঢেঁড়স খেতে পারেন।কেননা এর মাঝে প্রচুর আঁশ থাকে এবং এটা কোষ্ঠকাঠিন্য ক্ষেত্রে অনেক ভালো কাজ করে। খাবার হজমেও সাহায্য করতে পারে।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে বলা যেতে পারে যে ঢেঁড়স উপকারিতা অনেক রয়েছে। যাদের প্রচুর পরিমাণে এলার্জি সমস্যা আছে তারা পরিমাণে খুবই কম খেলে সমস্যা হবে না।
ঢেঁড়স খাওয়ার অপকারিতা
আমরা এতক্ষণ জেনেছি ঢেরসের উপকারিতা সম্পর্কে এখন জানব ঢেঁড়স খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে তাই নিম্নে এ সম্পর্কে বর্ণনা করা হলো,
অন্যান্য সবজির চাইতে ঢেঁড়সের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান থাকার কারণে এটা অনেক রোগব্যাধির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে পারে। তাই এই ঢেঁড়স খেলে মানুষের স্বাস্থ্যের উন্নত হয়। তবে উপকারিতা থাকার পাশাপাশি কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বা অপকারিতা রয়েছে।
ঢেঁড়স খেলে অনেকের শরীরে এলার্জি সমস্যা হতে পারে তবে সবার যে হবে তা কিন্তু নয়। যাদের পূর্বে এলার্জির সমস্যা রয়েছে তাদের এই সাধারণত ঢেরস খেলে শরীর চুলকায়। তারপরও খেয়ে দেখতে পারেন যদি সমস্যা না হয় তাহলে খেতে পারেন। কেননা যাদের এই সমস্যা আছে তাদের জন্য ঢেঁড়স খাওয়ার অপকারিতা রয়েছে।
আবার অনেকের এলার্জি নেই তবু এই ঢেঁড়স খেলে শরীরে চুলকায় সে ক্ষেত্রে ঢেঁড়স না খাওয়াই ভালো।
এছাড়া অনেক ধরনের রোগ থাকতে পারে যাদের ঢেঁড়স খাওয়ার পর সমস্যা হয় তারা ঢেরস না খাওয়াই ভালো। অনেকের পেটের সমস্যা থাকতে পারে যা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হতে পারে পেট ফাঁপা দিতে পারে। যদি আপনি খাওয়ার পরে এ সকল সমস্যা দেখতে পান তাহলে ঢেঁড়স খাবেন না।
যদিও ঢেঁড়স খেলে তেমন একটা ক্ষতি হয় না তারপরও যদি কারো সমস্যা হয়। তাহলে না খাওয়াই ভালো। তবে ঢেঁড়স এর উপকারিতা ও অপকারিতা উভয় ই আছে। তাই আপনার শরীরে যদি সমস্যা না হয় তাহলে নিয়মিতভাবে খেতে পারেন।
ঢেঁড়সের পুষ্টিগুণ
প্রচুর পরিমাণে ঢেঁড়সের পুষ্টিগুণ রয়েছে অর্থাৎ এর মধ্যে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টিগুণ আছে তার মধ্যে প্রোটিন ক্যালসিয়াম ম্যাগনেসিয়াম লৌহ ভিটামিন এ সি ইত্যাদি। আরো অনেক উপাদান রয়েছে যেমন বেটা ক্যারোটি ন ফলিক এসিড থায়ামিন অ্যামাইনো এসিড ইত্যাদি ধরনের যা উপকার করে থাকে। অন্যান্য সবজির চাইতে ঢেঁড়সের মধ্যে রিবাফ্লাবিন রয়েছে যা আমাদের মুখের ঘা সারাতে কাজ করে থাকে।
১০০ গ্রাম ঢেঁড়স এর মধ্যে ৬৬ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম এবং ১.৫ মিলিগ্রাম লৌহ ৫২ মিলিগ্রাম ক্যারোটিন এছাড়াও থায়ামিন ভিটামিন আরো অন্যান্য উপাদান মিলে রয়েছে।
ভিটামিন সি থাকার কারণে রোগ ব্যাধি থেকে মুক্তি দেয় এছাড়াও ক্যালসিয়াম ম্যাগনেসিয়াম থাকার কারণেও ম্যাঙ্গানিজ থাকার কারণে রোগ প্রতিরোধ বাড়িয়ে দেয়।
ঢেড়সের মধ্যে ক্যালসিয়াম ম্যাগনেসিয়াম থাকার কারণে দাঁতের হাড় মজবুত করতে পারে এবং দাঁতকে মজবুত রাখে।
এছাড়াও ঢেঁড়সের পুষ্টিগুণ হলো ফাইবার যা হজম শক্তি বৃদ্ধি করে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে পারে। যাদের শ্বাসকষ্টের সমস্যা রয়েছে তারা ঢেঁড়স খেতে পারেন। কারণ এর মধ্যে ভিটামিন সি থাকে এবং এন্টি ইনফ্লামেটরি থাকার কারণে শ্বাসকষ্ট থেকে রক্ষা করতে পারে।
যাদের কোলেস্টেরলের সমস্যা তারা নিয়মিত পেলে খারাপ কোলেস্টেরল গুলো দূর হয়ে যায়। ভিটামিন বি পটাশিয়াম আয়রন ফলিক এসিড ইত্যাদি থাকার কারণে শরীরে অনেক উপকার করে থাকে। ঢেঁড়সের মধ্যে ফলিক এসিড ভিটামিন থাকার কারণে হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে পারে।
তাছাড়া এটা ম্যাগনেসিয়াম থাকার কারণে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। তাই যাদের এই ঢেঁড়স খাওয়ার পর অসুবিধা হয় তারা না খাওয়াই ভালো।
ঢেঁড়স দিয়ে চুল সোজা
ঢেঁড়স দিয়ে চুল সোজা করা করা যায় তা আমাদের চুলের জন্য খুবই উপকার এবং এর মধ্যে প্রচুর পুষ্টি থাকার কারণে চুল ও পুষ্টি পেতে থাকে। তাই আপনার চুলের যত্ন করার জন্য শ্যাম্পু করার পর নিয়মিতভাবে ঢেঁড়সের কন্ডিশনার দিতে পারেন।
কেননা বাজারে বিভিন্ন ধরনের কন্ডিশনার পাওয়া যায় কিন্তু সেগুলো বিভিন্ন ক্ষতিকারক। যা চুলের ক্ষতি হতে পারে, এজন্য ঢেঁড়স থেকে বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কন্ডিশনার বানিয়ে আপনার চুলে ব্যবহার করতে পারেন। এতে আপনার চুল হবে সিল্কি এবং ঢেঁড়স দিয়ে চুল সোজা করা যায়।
যেভাবে ব্যবহার করতে পারেন তাহলো ২৫০ গ্রাম ঢেঁড়স প্রথমে নিবেন এরপরে ছোট ছোট করে কেটে নিবেন তারপরে এক গ্লাস পানি নিতে পারেন তারপরে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রাখবেন। দেখবেন পানিটা অনেকটা আঠালো হয়ে গেছে সেই পানি চুলে হালকা করে লাগিয়ে দিবেন। এতে যে ঢেঁড়সের রসগুলো চুলের ভিতর প্রবেশ করবে এবং দেখবেন চুলগুলো অনেক পিচ্ছিল হবে কন্ডিশনার এর মত কাজ করবে।
চুলের পুষ্টিও পাবে চুল বড় হবে, এরপর আপনি দিতে পারবেন ভেজানোর পর যে পানি বের হল সেটাই আপনি চুলে ব্যবহার করবেন। এভাবে কিছুদিন ব্যবহার করলে আপনি নিজেই দেখতে পারবেন উপকারিতা। তবে ঢেঁড়স এর উপকারিতা ও অপকারিতা দুটোই আছে আপনি অতিরিক্ত ব্যবহার করবেন না। এতে ক্ষতিকর হতে পারে তাই পরিমান মত নিয়মিত ব্যবহার করবেন। দেখবেন আপনার চুল সুন্দর এবং উজ্জ্বল দেখাবে।
ডায়াবেটিসে ঢেঁড়স এর উপকারিতা
ডায়াবেটিসে ঢেঁড়স এর উপকারিতা রয়েছে। যারা ডায়াবেটিসের সমস্যায় ভুগছেন তারা অনেক খাবার নিয়ন্ত্রণ করে খায়। তবে আপনি প্রাকৃতিক সবজি হিসাবে ঢেঁড়স খেতে পারেন। এতে ডায়াবেটিস কে নিয়ন্ত্রণ করবে।
বিশেষ করে ঢেঁড়স পানিতে ভিজিয়ে রাখবেন এর পরে যে পানিটুকু বের হবে। সেই পানিটুকু যদি আপনি খেতে পারেন তাহলে আপনার রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। যার কারণে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকবে। আর সেটা কিভাবে তৈরি করবেন তাহলো প্রথমত চার থেকে পাঁচটি ঢেরস ভালো করে পরিষ্কার করে টুকরো করে নেবেন।
এরপরে কাচের জগে কয়েক কাপ পানি নিবেন পানির ভিতরে টুকরাগুলো সারারাত ভিজিয়ে রাখবেন। সকালবেলা সেই পানিটুকু যদি আপনি খেতে পারেন তাহলে আপনার ডায়াবেটিস অনেকটা নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। তবে অতিরিক্ত খাওয়া যাবে না এতে ক্ষতি হতে পারে কেননা ঢেঁড়স এর উপকারিতা ও অপকারিতা উভয় রয়েছে। তাই আপনি নিয়মিত পরিমাণ মতো খাবেন এতে উপকার পাবেন।
ঢেঁড়স রক্তের গ্লুকোজ কে কমিয়ে নিয়ে আসে এবং স্থিতিশীল রাখে। এতে ফাইবার থাকার কারণে অন্ত্রের ট্র্যাক থেকে চিনির পরিমাণ কমাতে পারে এর কারণে রক্তের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণ থাকে। তাই ডায়াবেটিসে ঢেঁড়স এর উপকারিতা রয়েছে।
বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে দেখেছেন যে মানুষের শরীরে সুগার লেভেল যদি বাড়তে থাকে সেক্ষেত্রে ঢেঁড়সের বীজ যদি খায় তাহলে সুগারের পরিমাণ অনেক কমে আসে। কেননা ঢেরসের মাঝে ক্যালরির পরিমাণ খুবই কম আছে। তাই যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে প্রথম স্টেজে তারা নিয়মিতভাবে ঢেরস খেলে শর্করা পরিমাণ অনেকটা কমে যাবে এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ থাকবে।
অন্যান্য খাবার খেলে রক্তের সুগার লেভেল বেড়ে যেতে পারে। তাই নিয়মিতভাবে আপনি ঢেঁড়স খেতে পারেন। তবে পরিমাণে এবং নিয়মিতভাবে খেতে হবে।
উপসংহারঃ ডায়াবেটিসে ঢেঁড়স এর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
পরিশেষে বলা যায় যে ঢেঁড়সের উপকারিতা অনেক রয়েছে। বিশেষ করে ডায়াবেটিসের রোগীদের ক্ষেত্রে ঢেঁড়সের গুণাগুণ রয়েছে। তাদের রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। ঢেঁড়স আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ উপকার করে থাকে তবে ঢেঁড়সের যেমন উপকার আছে তেমন ক্ষতি থাকতে পারে। এর জন্য এটা পরিমাণ মতো নিয়মিতভাবে খেতে পারেন। পোস্টটি পড়ে যদি ভালো লাগে তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধু-বান্ধবের মাঝে শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ
এম আর মাহমুদ ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url