ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দেওয়ানি লাভ করার ফলে দ্বৈত শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন হয়
পলাশীর যুদ্ধের পর ইংরেজরা এদেশের শাসনকার্য শুরু করেছিল। আর ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দেওয়ানি লাভ করার ফলে এদেশের অর্থনৈতিক অবস্থার উপর প্রভাব পড়েছিল। চলুন, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দেওয়ানি লাভের পটভূমি সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
ভারতীয় উপমহাদেশে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এ দেশের জনগণের উপর অনেক অত্যাচার-নিপীড়ন এবং অর্থনৈতিকভাবে লাজুক অবস্থায় রেখেছিল। তাই ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দেওয়ানি লাভ সম্পর্কে জানতে আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
পোস্টসূচিপত্রঃইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দেওয়ানি লাভ করার ফলে দ্বৈত শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন হয়
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দেওয়ানি লাভের পটভূমি
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দেওয়ানি লাভের পটভূমি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিম্নে এই কোম্পানির দেওয়ানি লাভের পটভূমি সম্পন্ন বিস্তারিত আলোচনা করা হলো,
১৭৬৫ সালে কোম্পানি বাংলার দেওয়ানি লাভ করেন কিন্তু এই দেওয়ানি লাভ করার পূর্বে কোম্পানিকে অনেক ধাপ অতিক্রম করতে হয়েছে। এ ধাপগুলোর আলোচনায নিম্নে বর্ণনা করা হলো,
মোঘল আমলে ইংরেজদের আগমনঃ মোঘল আমলে বাণিজ্যের সূত্র ধরে ইংরেজরা প্রথমে ভারতবর্ষে এসেছিলেন এবং ধীরে ধীরে তারা বাণিজ্য শুরু করে। ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি প্রথমে হরিপুর একটি কুটির স্থাপন করেছিলেন। পরবর্তীতে ইংরেজ বণিকরা হুগলি পাটনা কাশিমবাজার প্রভূতি স্থানে বাণিজ্যকুঠির ঘুরে তুলেছিলেন।
ইঙ্গ মুঘল সংঘর্ষঃ মোগল আমলে ইংরেজদের বিনাশুল্কে বাণিজ্য অধিকার দেওয়া হলেও কোম্পানির কর্মচারীদের অন্যায় ভাবে বাণিজ্যের জন্য বিশৃঙ্খলা বা গোলযোগাযোগ সমস্যা দেখা দেয়। এই অবস্থায় ১৬৮৬ সালে তারা হুগলী আক্রমণ করলে মুঘল ও ইংরেজদের মধ্যে একটি সংঘর্ষ শুরু হয়। শায়েস্তা খান তার আওতাভুক্ত সমস্ত ইংরেজ কুঠি দখল করে ইংরেজদের হুগলি থেকে বিতাড়িত করেছিলেন।
কিন্তু জব চানক নামক জনক দূরদর্শী ও বিচক্ষণ ইংরেজ কর্মচারী মোগল সম্রাটের অনুমতিক্রমে প্রধান সুতানুটি নামক স্থানে ফিরে আসেন। এক বছর পর ক্যাপ্টেন উইলিয়াম হিথ একটি নৌবহর সহ ইংল্যান্ড থেকে ভারতে এসে চট্টগ্রামে আক্রমণ করলে ইঙ্গ মুঘল সংঘর্ষ শুরু হয়।
সংঘর্ষে উইলিয়াম হিথ পরাজিত হয় ফলে ইংরেজদের সাথে মুঘলদের সম্পর্কের অবনতি ঘটে। অবশেষে বোম্বাইয়ের ইংরেজ পক্ষের সাথে আওরঙ্গজেবের একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। এই চুক্তির ফলে ইংরেজরা আবার বাণিজ্য করার অধিকার পেয়েছিলেন।
ইংরেজদের জমিদারী লাভঃ ১৬৯৬ সালে ইংরেজরা সুতানুটি নামক যে নবকুঠির নির্মাণ করেছিলেন। তা সুরক্ষিত করার জন্য অধিকার লাভ করেছিলেন। দু বছর পর ইংরেজরা বাৎসরিক বারোশো টাকা খাজনা দেওয়ার শর্তে কলকাতা সুতানুটি ও গোবিন্দপুর লাভ করেছিলেন।
এই জমিদারি নিঃসন্দেহে বাংলায় কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে প্রশস্ত করেছিল। ১৭০০ সালে ইংরেজরা কলকাতায় একটি দুর্গ নির্মাণ করে। ইংল্যান্ডের রাজা তৃতীয় উইলিয়ামের নাম অনুসারে নাম রেখেছিলেন ফোর্ট উইলিয়াম।
আলীবর্দী খানের নীতিঃ মুর্শিদকুলি খানের ন্যায় শাসনকার্যে হিন্দুদের নিয়োগ করার পক্ষপাতী ছিলেন। ঐতিহাসিকরা বলেন নবাব আলীবর্দী খান রাজকার্য ব্যবসায় ক্ষেত্রে হিন্দুদের প্রাধান্য দিয়েছিলেন এবং এর ফলে শাসনকার যে হিন্দুদের প্রভাব প্রতিপত্তিস্থাপিত হয়েছিল। এই নীতি অনুসরণ করেছিলেন ফলে সমাজের সকল ক্ষেত্রে হিন্দুদের প্রাধান্যই বেশি পেয়েছিল।
ফাররুখ শিয়ারের ফরমানঃ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দেওয়ানি লাভের পটভূমি হলো ১৭১৩ সালে গৃহযুদ্ধের মাধ্যমে বাহাদুর সাহেবের পৌত্র ফাররুখ শিয়ার সিংহাসন আরোহন করেছিলেন। ১৭১৪ সালে কলকাতা থেকে জন সারমান নামে জনক ইংরেজ দুত বাণিজ্যিক সুযোগ সুবিধার জন্য মোগল সম্রাট শিয়ারের সাথে সাক্ষাৎ করেছিলেন।
ইংরেজদের ওপর সন্তুষ্ট হয়ে মোগল সম্রাট ১৭১৭ সালে এক ফরমান দ্বারা বাংলা মাদ্রাজ ও বোম্বাই বিনাশুল্কে বাণিজ্য অধিকার প্রদান করেছিলেন। ইংরেজরা বাৎসরিক মাত্র তিন হাজার টাকা খাজনা প্রদানের অঙ্গীকারে বাংলায় একচেটিয়া ব্যবসার করার অধিকার পেয়েছিলেন। মুর্শিদাবাদ টাকশালে কোম্পানি তার নিজস্ব টাকা তৈরি করার অনুমতি পেয়েছিল।
মুর্শিদকুলি খানের নীতিঃ ফাররুখ শিয়ারের রাজত্বকালে মুর্শিদ কুলি খান বাংলার সুবেদার ছিলেন। তিনি নিজ রাজ্যে বিদেশীদের প্রাধান্য পছন্দ করতেন না। তারা বলে ইংরেজরা বিনাশুলকে বাণিজ্য করার অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছিল। তিনি ইংরেজদেরকে অন্যান্য বাণিজ্য প্রতিনিধি দলের নেয় শুল্ক দিয়ে বাণিজ্য করতে বলেছিলেন।
এরপর আলীবর্দী খানের মৃত্যুর পর নবাব সিরাজউদ্দৌলা বাংলায় শাসন কার্য পরিচালনা করেন। এছাড়াও তার রাজ্যের মধ্যে অভ্যন্তরের ষড়যন্ত্রের কারণে পলাশীর যুদ্ধে নবাব সিরাজউদ্দৌলা পরাজয় বরণ করেন। এর কারণে ইংরেজরা তারা এই যুদ্ধে বিজয় লাভ করে।
কোম্পানির শাসনের পথ সুচনা শুরু করেন। এভাবেই তারা আধিপত্য বিস্তার শুরু করে এবং পরবর্তীতে বক্সারের যুদ্ধের বিজয়ের মাধ্যমে ইংরেজরা আরো সুনিশ্চিত ভাবে এ দেশে শাসন কার্য পরিচালনা করে।
ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দেওয়ানি লাভ
ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দেওয়ানি লাভ করার ফলে ইংরেজরা এদেশে দ্বৈত শাসন ব্যবস্থা ও প্রবর্তন করেন। তাই এই দেওয়ানি লাভ তাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নিম্নে বিষয়ে আলোচনা করা হলো,
বক্সারের যুদ্ধোত্তর অবস্থায় মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলম ছিলেন রাজনৈতিকভাবে ব্যতিব্যস্ত এবং
আর্থিক দিক দিয়ে অনেক কষ্টে দুর্দশা গ্রস্থ ছিলেন। রবার্ট ক্লাইভ দিল্লিতে উপস্থিত হয়ে মোগল সম্রাট কে প্রচুর পরিমাণে অর্থ উপহার স্বরূপ প্রদান করেন। অর্থ কষ্টে দিন যাপন করত সম্রাট শাহ আলম তাই রবার্ট ক্লাইভের প্রতি খুবই সন্তুষ্ট হন।
তার প্রস্তাবে রাজি হন রবার্ট ক্লাইভের প্রস্তাব ছিল যে মোগল সম্রাট বাৎসরিক ২৬ লক্ষ টাকা রাজস্ব হিসেবে নিয়মিত লাভ করবেন।
বাংলা সুবা হতে অর্থ প্রাপ্তির গ্যারান্টি থাকবে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হাতে, পরিবর্তে কোম্পানিকে বাংলা বিহার ও উড়িষ্যার দেওয়ান হিসেবে নিযুক্ত করবেন। মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলম এর সাথে এলাহাবাদে চুক্তি স্বাক্ষর করেন। ১৭৬৫ সালের ১২ ই আগস্ট এভাবেই ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি মুঘল সম্রাটের কাছ থেকে দেওয়ানি লাভ করে।
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দেওয়ানি লাভের গুরুত্ব
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দেওয়ানি লাভের গুরুত্ব রয়েছে। তাই ইংরেজরা এই দেওয়ানি লাভের মাধ্যমেই তারা পরবর্তীতে বাংলার উপর আধিপত্য বিস্তার শুরু করে। নিম্নে বিষয় বিস্তারিত আলোচনা করা হলো,
হস্ত পুত্তলিকা নবাবঃ ইংরেজরা দেওয়ানি লাভ করার ফলে বাংলার নবাব এখন কোম্পানির পুতুল সরকার। কারণ নবাবের নিজের সৈন্য ছিল না। কোম্পানি নবাবের শাসন পরিচালনার জন্য যে অর্থ প্রদান করবে কিন্তু নবাব তো সেটা আয় করে দিতে পারবে না।
কোম্পানির রাজস্ব আদায়কারীঃ কোম্পানি ছিল একটি বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান অন্য আর কোন কাজের সাথে তারা যুক্ত থাকে নি। কিন্তু দেওয়ানি লাভ করার পর কোম্পানি এখন কোম্পানির রাজস্ব আদায় করতে শুরু করেছিল। তাই ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দেওয়ানি লাভের গুরুত্ব রয়েছে।
বিচার ক্ষমতাঃ কোম্পানি দেওয়ানে লাভ করার পর থেকে তারা রাজস্ব আদাই তো করতই তারপর বিচারকার্য পরিচালনা করত এজন্য তারা সারা বাংলাতে এই বিষয়ে পারদর্শী ছিল বিচারকার্য পরিচালনার ক্ষেত্রে কেউ বাধা দিত না।
কোম্পানির আর্থিক সমাধানঃ কোম্পানি যখন থেকে দেওয়ানি লাভ করল তখন থেকে তারা এদেশের রাজস্ব আদায় করা শুরু করেছিল এবং এই টাকা তারা ইংল্যান্ডে পাচার করে দিত। আর ইংল্যান্ডের তখন অর্থনৈতিক সমস্যা থাকার কারণে এখান থেকে পরিপূর্ণতা লাভ করে। তাই দেওয়ানি লাভের আর্থিক সমাধান মোটামুটিভাবে হয়েছিল।
ভারতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অবসান ঘটে
ইস্ট ইন্ডিয়া ইন্ডিয়া কোম্পানি তারা অনেকদিন যাবত এ দেশে শাসন কার্য পরিচালনা করেছিলেন। কিন্তু অবশেষে ভারতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অবসান ঘটে তার বিস্তারিত আলোচনা করা হলো,
পলাশীর যুদ্ধের পরাজয়ের মধ্যে দিয়ে এদেশে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি শাসন কার্য পরিচালনা করেছিলেন। প্রায় ১০০ বছর তারা এ দেশে শাসন কার্য পরিচালনা করে অর্থাৎ ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহে পর্যন্ত। ১৮৫৭ সালের যুদ্ধের পরে কোম্পানি শাসনের অবসান ঘটে যদিও তারা এ দেশে অনেক ভাবে শাসন কার্য পরিচালনা করেছিলেন।
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দেওয়ানি লাভ করার ফলে দ্বৈত শাসন ব্যবস্থা চালু করেছিল। কিন্তু পরবর্তীতে মহাবিদ্রোহের মাধ্যমে তাদের অবসান ঘটেছিল। কোম্পানির এই অবসান ঘটনার পিছনে যে কারণ রয়েছে নিম্নে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
সিপাহী বিদ্রোহ ছিল ভারতবর্ষের জন্য এক আশীর্বাদস্বরপ ভারতীয় এই উপমহাদেশের জনগণ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসন মেনে নিতে পারছিলেন না। যার কারণে তারা এই যুদ্ধের মাধ্যমে প্রতিবাদ করেছিলেন।
কিন্তু তারা ইংরেজরা একের পর এক অন্যায় এই জনগণের উপর চাপিয়ে দিচ্ছিলেন। এ সময় কোম্পানির শাসনের প্রতি সবাই অসন্তুষ্টির প্রকাশ করে যার ফলে ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহর মাধ্যমে ইংরেজদের কোম্পানির অবসান হয়েছিল।
সিপাহী বিদ্রোহের পর যখন কোম্পানির শাসন অবসান ঘটলো তখন ১৮৫৮ সালে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ভারত শাসন আইন পাস করেছিলেন। তার ভিত্তিতেই রানী সেখান থেকেই শাসনবার্য কার্য পরিচালনা করেছিলেন।
মহারানী ভিক্টোরিয়া ১৮৫৮ সালের দিকে তিনি এই ঘোষণা করেছিলেন এবং সেই ঘোষণায় কিছু কথা বলেছিলেন তা নিম্ন আলোচনা করা হলো,
মহারানী ভিক্টোরিয়া বলেছিলেন ভারতীয়দের ধর্মীয় সামাজিক ব্যাপারে ব্রিটিশ সরকার কোনরকম হস্তক্ষেপ করা যাবে না।
যাদের যোগ্যতা আছে তারা সবাই সরকারি চাকরি করতে পারবে এবং ভারতীয় যারা বসবাস করেন তাদের ধর্মীয় স্বাধীনতা দিতে হবে।
ব্রিটিশ সরকার রাজনীতির পরিত্যাগ করেছিল এবং অভ্যন্তরীণ রাজ্যের বিষয়ে কোন রকম হস্তক্ষেপ করা থেকে বিরত থেকে ছিলেন।
সিপাহী বিদ্রোহের সময় যে সকল ব্রিটিশ নাগরিক হত্যাকাণ্ড জড়িত ছিল তারা সকলকে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা হবে এরকম তিনি কথা বলেছিলেন।
সামরিকের ক্ষেত্রে তিনি যে নীতি পরিবর্তন করেছিলেন তা হলো কোম্পানি ভারতের বিভিন্ন ধর্মীয় আঞ্চলিক জাতি গোষ্ঠী থেকে সিপাহী নিয়োগ দিয়ে তারা সেভাবে সামরিক গঠন করবে। এতে কোন রানী ভিক্টোরিয়ার কোন আপত্তি থাকবে না তাছাড়া সেনাবাহিনীতে ইউরোপে এবং গোলন্দাজ বাহিনীতে ভারতীয়দের নিয়োগ দেওয়া বন্ধ করতে হবে। এসব কারণে ভারতের সেনাবাহিনী তাদের পতন ও ঘোষণা করেছিল।
১৮৩৩ সালে মাদ্রাজ ও বোম্বাই এই আইন প্রণয়নের ক্ষমতা তারা ঠিকই রেখেছিলেন যার কারণে ধীরে ধীরে কোম্পানির শাসনের পতন হয়েছিল।
এই আইন পাস করার ফলে মুঘল সাম্রাজ্য পতন হয়। ইংরেজরা মুঘল সুলতান দ্বিতীয় বাহাদুর শাহকে রেঙ্গনে নির্বাসন দিয়েছিলেন এবং তারা সরাসরি ভারতের শাসন ক্ষমতা নিজের হাতে পরিচালনা করেছিল।
অর্থনৈতিক সংকটের কারণে ভারতের অবস্থা নাজুক অবস্থা ছিল এর কারণে কৃষির উৎপাদন ক্ষমতাও কমে গিয়েছিল। কোম্পানির পরিচালনার জন্য তাদের বড় অর্থের মেটাতে হতো যা কৃষকগণ তারা এটা প্রার্থনা যার কারণে কোম্পানির শাসন ধীরে ধীরে পতন হতে থাকে। এতে করে কৃষকদেরকে শোষণ করে নিয়ে অর্থনৈতিক সমস্যায় ফেলেছিল।
ভারতে যখন কোম্পানির পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে তারা পারলো না। তখন ব্রিটিশ সরকার ক্ষমতায় গ্রহণ করেছিল এবং ১৭৭৩ সালে রেগুলেটিং অ্যাক্ট এবং ১৭৮৪ সালের উইলিয়াম পিটের ইন্ডিয়া এক্টর মাধ্যমে কোম্পানি ক্ষমতা ব্রিটিশ পার্লামেন্টের নিয়ম অনুযায়ী পরিচালনা করেছিল। যার ফলশ্রুতিতে পরবর্তীতে ভারতে কোম্পানির শাসন আবার পুনরায় শুরু করেছিল।
বিংশ শতকের প্রথম দিকে ভারতের অর্থনীতি খুবই শোচনীয় অবস্থা ছিল। কৃষির উন্নয়নের জন্য কোন বিনিয়োগ করা ছিল না এবং কোন ভূমিকা ছিল না কোম্পানির। এজন্য ভারতের বিভিন্ন অসন্তোষ লক্ষ্য করা গিয়েছিল জনগণ কোম্পানির উপর ক্ষিপ্ত ছিল।
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি পতনের জন্য আরেকটি সমস্যা হল তারা দুর্নীতি পরায়ণ ছিল। কোম্পানির নিয়ন্ত্রণ সবার কাছেই কমে গিয়েছিল এবং কর্মচারীদের দুর্নীতির বৃদ্ধি পেয়েছিল এজন্য পতন ঘটেছিল।
ভারতীয় জনগণ সিপাহী বিদ্রোহের মাধ্যমে যদিও তারা বিজয় লাভ করতে পারে নাই কিন্তু কোম্পানির শাসনকে অবসান করেছিল। ব্রিটিশ সরকার বাধ্য হয়েছিল তার হাতে ক্ষমতা নিয়ে সেখান থেকে সরাসরি শাসন কার্য পরিচালনা করা। এভাবেই ভারতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অবসান ঘটে।
দ্বৈত শাসন ব্যবস্থা
ইংরেজদের দ্বৈত শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন করার ফলে এদেশের লোকজনের অসুবিধা হয়েছিল। তা হল বক্সারের যুদ্ধে মীর কাসেমের সাথে সম্মিলিতভাবে অযোদ্ধার নবাব সুজাউদ্দৌলা ও মোগল বাদশা আলম পরাজিত হয়। ঠিকই পরাজয়ের পর শাহ আলমের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক শূন্যতা দেখা দিয়েছিল।
ঠিক এই সময় রবার্ট ক্লাইভ কৌশল প্রয়োগ করে শাহ আলম কে অর্থ সাহায্যের প্রস্তাব দিয়েছিল। তবে শর্ত ছিল এই যে কোম্পানিকে বাংলা বিহার উড়িষ্যার দেওয়ানেই প্রদান করতে হবে। এর বিনিময়ে সম্রাটকে রাজস্বের নিশ্চয়তা দেবে ফলের সাহা আলম কে বাৎসরিক ২৬ লক্ষ টাকা প্রদানের বিনিময় ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দেওয়ানি লাভ করেছিলেন।
কিন্তু দেওয়ানি লাভ করার পর কোম্পানি এক অভিনব কৌশল প্রয়োগ করেছিলেন। কৌশলটি হল কোম্পানির সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে যুক্ত হবে না কারণ তাদের ধারণা ছিল কোম্পানি প্রত্যক্ষ শাসন প্রবর্তন করলে ভারতে বানিজ্য রতন কোম্পানির সমালোচনা করতে পারে।
এছাড়াও কোম্পানিকে ইংল্যান্ডের ডাইরেক্টর সবার কাছে জবাবদিহিত করতে হবে। তাই রবার্ট ক্লাইভ এক অভিনব ব্যবস্থা প্রবর্তন করেছিলেন যা ইতিহাসে দ্বৈত শাসন ব্যবস্থা নামে পরিচিত।
শাসন ক্ষেত্রে কোম্পানির মর্যাদা বৃদ্ধিঃ পূর্বে কোম্পানি ছিল মাত্র একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান কিন্তু দেওয়ানি লাভ করার পর কোম্পানির শুধু আর বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে ছিল না তারা শাসনক্ষেত্রে পরোক্ষভাবে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করবে। ফলে পূর্বের থেকে কোম্পানির মর্যাদা আরো বৃদ্ধি পায়।
দেশীয় শাসনের কুফল তুলে ধরার সুবিধাঃ কোম্পানির দেওয়ানে লাভ করার ফলে কোম্পানি কৌশলে দেশীয় শাসন যে ভারতবর্ষের মঙ্গল সাধন করতে পারেনা। এই কথা তুলে ধরেছিল ফলে দেখা যায় জনসাধারণ অন্তর্নিহিত তাৎপর্য বুঝতে চেষ্টা না করে দেশীয় শাসনের প্রতি বিতশ্রদ্ধ হন।
মুঘল সম্রাট ও নবাবের ক্ষমতাখর্বঃ ১৭৬৫ সালে কোম্পানির দেওয়ানি লাভ করার ফলে ইংরেজরা মোগল সম্রাট শাহ আলম ও অযোধ্যা কে পুতুল সরকারে পরিণত করেছিল। যার কারণে তারা কোম্পানির সাথে চুক্তির মাধ্যমে অর্থনৈতিক ক্ষমতা কোম্পানির হাতে তুলে দেয়। তাই অর্থের জন্য তাদেরকে কোম্পানির উপর নির্ভর করতে হতো। সামরিক দিক থেকে নবাবের কোন ক্ষমতা ছিল না সকল ক্ষমতাই ছিল কোম্পানির হাতে।
প্রশাসনিক জটিলতা বৃদ্ধি হয়ঃ দেওয়ানি লাভ করার মাধ্যমে প্রশাসনিক ক্ষেত্রে কোম্পানি হস্তক্ষেপ করে কারণ সম্রাট ছিলেন কিন্তু কোম্পানির দেওয়ানে লাভ করলে সম্রাট দেওয়ানের হাতে পুতুলে পরিণত হয়। কোম্পানির হাতে অর্থ ও দেশ রক্ষার ক্ষমতা ছিল ফলে প্রশাসনের ক্ষেত্রে অস্থিতিশীলতা দেখা দেয়। তাই দীর্ঘদিন থেকে এখন বাংলার নবাবী কোম্পানি না অন্য কেউ এই প্রশ্ন সমাধানও হয়নি।
কোম্পানির দুর্নীতি বৃদ্ধিঃ দেওয়ানী লাভ করার মাধ্যমে কোম্পানি অন্যায়ভাবে নিয়ন্ত্রণ প্রচেষ্টার স্বীকৃতি লাভ করে। তাই তারা নিজ নিজ স্বার্থ হাসিলের জন্য দুর্নীতির আশ্রয় গ্রহণ করেছিল। এই দুর্নীতির কারণে জনসাধারণের দুর্ভোগ বেড়ে যায় ফলে একদিকে দেশীয় জনসাধারণ দুর্ভোগ অন্যদিকে কোম্পানির অত্যাচার শোষণ নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হচ্ছিল।
আইন-শৃঙ্খলার অবনতিঃ লাভের পর আইন-শৃঙ্খলার চরম অবনতি হয়েছিল আইন শৃঙ্খলার অবনতিতে প্রেরণা যোগায় ছিল। কোম্পানি কারণ এই ক্ষেত্রে কোম্পানির স্বার্থ ছিল যে ওয়েস্ট বেঙ্গল অপরাধী ঘটলে দেশীয় শাসকদের প্রতি জনসাধারণের শ্রাদ্ধ হবে।
যার ফলে জনমত ইংরেজদের অনুকূলে চলে যায় সুতরাং এই ধরনের উদ্দেশ্য থেকে তারা দেওয়ানে লাভ করার পর কৌশলে। এই কাজগুলো করতে থাকে মূলত ইংরেজরা এভাবেই দ্রুত শাসন দ্বৈত শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন করেছিলেন।
এম আর মাহমুদ ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url