ফরায়েজি আন্দোলন দুর্বল হয়ে পড়ে যেসব কারণে তা বিস্তারিত জানুন
ফরায়েজি আন্দোলন দুর্বল হয়ে পড়ে যাওয়ার কারণ হলো কিছু নেতারা সফলভাবে নেতৃত্ব দিতে পারে নাই। এজন্য এ আন্দোলনে তারা ব্যর্থ হয়। চলুন, ফরাজি আন্দোলনের কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
ফরায়েজি আন্দোলন মুসলমানদের জন্য অনেক উপকার ছিল কিন্তু হিন্দুরা এ আন্দোলনের বিরোধিতা করেছিল এবং তাদের সাথে ইংরেজরা আন্দোলন করেছিল। তাই ফরায়েজি আন্দোলন দুর্বল হয়ে পড়ে যেসব কারণে তা জানতে আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
পোস্টসূচিপত্রঃফরায়েজি আন্দোলন দুর্বল হয়ে পড়ে যেসব কারণে তা বিস্তারিত জানুন
ফরায়েজি আন্দোলন
ফরায়েজি আন্দোলন হলো হাজী শরীয়তুল্লাহর একটি গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলন। ফরায়েজি আন্দোলন অর্থ হলো ইসলামের যে যাবতীয় বিষয়গুলো রয়েছে যা আল্লাহর হুকুম সেগুলো অবশ্যই মুসলমানদেরকে পালন করতে হবে। এই বিষয়টি হাজী শরীয়তুল্লাহ মুসলমানদেরকে মানার জন্য তাগিদ দিয়ে থাকেন এবং তাদের উপর যে ফরজ ও কর্তব্য সেটা পালন করার জন্য বলেন।
কেননা তিনি বলে থাকেন যে ইসলামের মৌলিক বিধান যে পাঁচটি রয়েছে নামাজ রোজা হজ যাকাত ও কালিমা এ বিষয়গুলো অবশ্যই একজন মুসলমান হিসাবে তা পালন করতে হবে। এছাড়াও ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলো ও ইসলামের বিধানগুলোর উপরে তখনকার মুসলমানরা তেমন একটা গুরুত্ব দিতো না। সেজন্য হাজী শরীয়তুল্লাহ আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য ছিল এই ফরজগুলো যেন তারা পালন করে। শুধু মৌখিকভাবে বিশ্বাস করলে হবে না।
এটা বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করতে হবে। এজন্য তিনি তাদের উপরে গুরুত্ব আরোপ করেছেন। আল্লাহর ও রাসূলের বিধান আমাদের উপর পালন করার জন্য বলা হয়েছে। সেগুলো অবশ্যই পালন করতে হবে এবং এগুলোর বাহিরে যে কাজ বর্জন করতে বলা হয়েছে সেগুলো পালন করা যাবে না। অনেকেই বলে থাকে হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর যুগে মহরম উৎসব পালন করা হতো এবং পয়গাম্বর গণ পালন করেছেন।
ফরায়েজরা মহররম মাসের ১০ তারিখ তারা মহরম উৎসব পালন করতো। তাছাড়া অন্যান্য দিবস তেমন একটা তারা পালন করত না। আকিকা উৎসব নিয়মিত পালন করতে দেখা যেত। তাছাড়া তারা বিভিন্ন ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ মেনে চলত। এছাড়াও তারা কিছু হিন্দু জমিদারদের ক্ষতি করেছিলেন। এজন্য হিন্দু জমিদাররা, ইংরেজরা এই আন্দোলনের বিরোধিতা করে পরবর্তীতে ফরায়েজি আন্দোলন দুর্বল হয়।
ফরায়েজি আন্দোলন দুর্বল হয়ে পড়ে
ফরায়েজি আন্দোলন দুর্বল হয়ে পড়ে যেসব কারণে তা নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো,
ফরায়েজি আন্দোলন অনেকেই সমর্থন করেছিল, যদিও সমর্থন শ্রেণীর লোকেরা ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন গড়ে তুলেছিল কিন্তু এই ফরায়েজদের কিছু ত্রুটি থাকার কারণে তারা সফলতা করতে পারে নাই। তাই নিম্নে ব্যর্থতার কারণগুলো বা ফরায়েজি আন্দোলন কেন পরাজয় হল এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
কিছু একঘেয়েমিতা মুসলমান ছিল যারা ফরায়েজি আন্দোলনকে তেমন একটা সমর্থন করেনি এবং তারা বিরোধিতা শুরু করেছিল। তারা তো সমর্থন করেই নেই বরং এই রক্ষণশীল মুসলমানরা ফরায়েজিদের বিরুদ্ধে শায়েস্তা করার জন্য হিন্দু জমিদারদের কাছে অভিযোগ দেন। এই রক্ষণশীল মুসলিমদের বিরোধিতার কারণে ফরায়েজী আন্দোলন দুর্বল হয়ে পড়েছিল।
ফরায়েজি আন্দোলনের সমর্থন করেনি হিন্দুরা তারা ফরায়েজীদের বিরুদ্ধে কাজ করেছিল। কেননা ফরায়েজীরা একটি ধর্ম সংস্কার করার জন্যই এই আন্দোলন করেছিল। যেন ইসলামকে জনসাধারণ বিশুদ্ধ হিসাবে গ্রহণ করে। এজন্যই তারা আন্দোলন করেছিলেন কিন্তু তাদের এই আন্দোলনে বাধা দিয়েছিল কিছু রক্ষণশীল মুসলিম এবং হিন্দুরা।
কিছু বিত্তশালী জমিদার নীলকর মহাজনরাও এই ফরায়েজি আন্দোলনের বিরুদ্ধে বিরোধিতা করেছিল। এছাড়াও এই তিন শ্রেণীর লোকেরা ইংরেজ সরকারের সাথে তারা মিলিত হয়ে ফরায়েজীদের শায়েস্তা করার জন্য সব ধরনের সহযোগিতা করবে বলে প্রতিশ্রুতি দেয়।
ফরায়েজিদের যে নীতি নির্ধারণ বা আদর্শ ছিল তা তিতুমীরের যে সম্প্রদায় তা গ্রহণ করেনি এবং তাদের নীতি নৈতিকতার সাথে মিলে নাই। এজন্য তিতুমীরের সম্প্রদায়ের লোকজনও সমর্থন করেনি। এই ফরায়েজি আন্দোলনের পক্ষে তারা সরকার ও সমাজের উচ্চ স্তরের লোকদের সাথে পক্ষপাতিত্ব করে ফরায়েজি আন্দোলনের বিরোধিতা করে এটাও ব্যর্থতার অন্যতম কারণ।
ফরায়েজিদের বিরোধিতা করেন হিন্দু, রক্ষণশীল মুসলমানরা এছাড়াও ইংরেজ সরকার ও পুলিশ বাহিনী এরাও এই ফরায়েজি আন্দোলনের বিরোধিতা করেছিল। এছাড়াও ফরাজী আন্দোলনের নেতারা সাধারণত ইংরেজ সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলতে পারে নাই এবং তারা এদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার জন্য সাহস পায়নি। এই নেতা গুলো ফরায়েজিদের শৃঙ্খলা নষ্ট করে দিয়েছিল এবং মামলা মোকদ্দমা এগুলো করে তাদের বিরুদ্ধে কাজ করেছিল।
ফরাজি আন্দোলনের কারণ
ফরাজি আন্দোলনের কারণ গুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নিম্নে এর কারণগুলো বিস্তারিত আলোচনা করা হলো,
ফরায়েজি আন্দোলন ইসলামী সংস্কার করার জন্য এই আন্দোলনটা শুরু করা হয়েছিল কিন্তু ধর্ম আন্দোলন অপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ছিল ফরায়েজীদের পবিত্রতা এবং সমতার আদর্শ নিয়ে। তারা ঢাকা ফরিদপুর অঞ্চলের মুসলিম কৃষকদের ফরায়েজি আদর্শ গ্রহণ করার জন্য উৎসাহিত করেছিলেন।
একজন ইংরেজ লেখক বলেছিলেন যে বর্তমান বাংলাদেশের অন্তর্গত ফরিদপুর বাখরগঞ্জ ময়মনসিংহ জেলার মুসলমানদের এক বিরাট অংশ হাজী শরীয়তুল্লাহর ফরায়েজী সমর্থন করেছিল। যা পরবর্তীতে এরা সংখ্যাও বেশি হয়েছিল এই ধর্মীয় কারণেও আন্দোলন হয়েছিল।
হাজী শরীয়তুল্লাহ তিনি বলেছিলেন যে হিন্দু সমাজে যে তারা অনুষ্ঠান বা সংস্কৃতি পালন করে থাকে তা আমাদের মুসলমানদের মাঝেও প্রবেশ করেছে। তাই এগুলো বর্জন করতে হবে তাছাড়া ধর্মীয় বিশুদ্ধতা অর্জন হবে না। আর তার এই ধরনের নির্দেশনার কারণে হিন্দুরা বিরোধীতা শুরু করেছিল।
এছাড়াও কিছু এলাকার হিন্দু জমিদাররা মুসলিমদের কাছ থেকে অনেকদিন যাবত হিন্দু পূজা দুর্গা পূজা কালী পূজা সকল পূজার জন্য তারা অর্থ আদায় করে নিতেন। এজন্য হাজী শরীয়তুল্লাহ মুসলিমদের কাছ থেকে হিন্দু পূজা পার্বণের যে অর্থ দিতে মানা করেছিলেন,এ জন্য এ সকল গরিব মুসলিমরা এ আন্দোলনের প্রতি আকর্ষণ করেছিল। আর এই হিন্দুদের বিরোধিতা ও একটি ফরাজি আন্দোলনের কারণ।
ফরায়েজে আন্দোলনের অন্যতম কারণ ছিল ফরায়েজী নেতাদেরকে একত্রিত করা। হাজী শরীয়তুল্লাহ ফরায়েজীদের বলেছিলেন যে তোমরা পরিশ্রমের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন কর। এছাড়া তিনি সৎ পথে অর্থ উপার্জন করতে বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন জুলুমবাজি দ্বারা বা অত্যাচারের মাধ্যমে যারা অর্থ সংগ্রহ করবে তাদেরকে আল্লাহ তা'আলা পছন্দ করেন না।
শ্রমের মর্যাদার সৃষ্টির লক্ষ্য সকল পেশার মানুষকেই শ্রমিক বলে সম্মান জানানো হতো। এসব আদর্শ পালনের মধ্যে দিয়ে ফরায়েজীদের মধ্যে এক প্রকার ভ্রাতৃত্ব সৃষ্টি হয়েছিল। আর এই ভ্রাতৃত্ববোধের কারণেই অন্যান্য সম্প্রদায়ের মানুষেরা তাদের বিরোধিতা শুরু করেছিল। এটি একটি অন্যতম কারণ।
ফরায়েজীদের পঞ্চায়েতে ব্যবস্থা ছিল যার মাধ্যমে তারা বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গদের থেকে অর্থ নিতেন এবং সেখানে অর্থ দান করতেন। হাজী শরীয়ত উল্লাহ এই প্রথম মুসলিম সমাজে পঞ্চায়েতি ব্যবস্থা চালু করেছিলেন। যা পরবর্তীতে তার পুত্র দুদুমিয়াও পূর্ববঙ্গের যে এলাকাগুলো রয়েছে সকল এলাকায় তিনি এই ব্যবস্থাটা গড়ে তুলেছিলেন সরকারিভাবে কিন্তু এই সময় ইংরেজ সরকার এই পঞ্চায়েত ব্যবস্থার বিরুধিতা করেছিল। যদিও গ্রামবাসীরা এটাকে পছন্দ করেছিল এবং তারা এখানে অনেকে অর্থ প্রদান করত।
ফরায়েজের আন্দোলনের অন্যতম কারণ ছিল ফরায়েজীদের কে হিন্দু জমিদারগণ এবং ইংরেজ সরকার ও নীলকর সাহেবরা বিরোধিতা করেছিল। এছাড়া ফরিদপুরের অত্যাচারিত যে সকল জমিদার ছিল তাদের সাথে দুদুমিয়ার সংঘর্ষ হয়। এর কারণে তার সাথে আরো কিছু ফরায়েজীদের আসামি করে ইংরেজ সরকার আদালতে পেশ করে।
যদিও প্রমাণ না থাকার কারণে দুদুমিয়া ছাড়া পেয়েছিলেন। যার কারণে তার জনপ্রিয়তার বৃদ্ধি পেয়েছিল। ফরিদপুরের সেই নীলকর জমিদার ডানলপের অত্যাচারের বিরুদ্ধে তিনি ফরায়েজীদের কে আন্দোলন করতে বলেছিলেন এবং ডানলোপের নীলকুঠির পুড়ে ছারখার করে দিয়েছিলেন।
দুদুমিয়া এবং ও তার সরকারীরা অত্যাচারীদেরকে শায়েস্তা করার জন্য বিভিন্ন ধরনের আক্রমণ চালানো শুরু করেছিল। যা ইংরেজ সরকার ফরায়েজীদের নিয়ে বেশ আতঙ্কিত হয়েছিল এবং ভয় পেয়েছিল এর কারণে দুদুমিয়াকে কারারুদ্ধ করেছিলেন। এটি ফরাজী আন্দোলনের জন্য একটি অন্যতম কারণ। যার কারণে ফরায়েজি আন্দোলন দুর্বল হয়ে পড়ে।
ফরাজি আন্দোলনের গুরুত্ব
ফরাজি আন্দোলনের গুরুত্ব রয়েছে নিম্নে এ আন্দোলনের গুরুত্ব সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো,
দেশে ফেরার পর দুদুমিয়া ফরায়েজী আন্দোলনকে আরও বেগবান করার জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকেন। তিনি ছোটবেলা থেকেই আন্দোলনের বিভিন্ন লক্ষ্য করতে পারেন এবং সেটার ভালো প্রস্তুতি নিতে পারেন। তার পিতার থেকে তিনি এই সকল বিষয় ভালোভাবে রপ্ত করেছিলেন কিভাবে ফরায়েজীদেরকে একত্রিত করে।
আবার একটি শক্তিশালী সংগঠন তৈরি করা যায় সে বিষয়টা তিনি ভালোভাবে উপলব্ধি করতে পারেন। তাই তিনি প্রতিপক্ষের সাথে মোকাবেলা করার জন্য নিজের দলকে শক্তিশালী করে গড়ে তুলেছিলেন। তিনি নিজে লাঠি চালানোর শিক্ষা গ্রহণ করেছিলেন এবং একটি শক্তিশালী লাঠিয়াল বাহিনী গড়ে তুলেছিলেন।
দুদুমিয়া ফরায়েজী আন্দোলনের নেতৃত্ব গ্রহণ করার পর জমিদারদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রথম বাধা দিয়েছিলেন এবং তাদের সাথে সংঘর্ষ লিপ্ত হয়েছিলেন। ফরাজী আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে প্রজারা পূজা কর দিতে অস্বীকৃতি জানালে জমিদার এবং তাদের প্রতি নির্যাতনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা শুরু করেন।
ফরায়েজীদের প্রকাশ্যে গরু কোরবানি তারা সহজভাবে মেনে নিতে পারেনি। এজন্য জমিদাররা তাদের প্রজাদের কে আন্দোলনে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকার জন্য অনেক চেষ্টা করেন। কিন্তু তারা তাদের আনুগত্য স্বীকার করেনি এবং শাস্তি অপেক্ষা করে দুদুমিয়ার সাথে যোগদান করেন।
তার লাঠিয়াল বাহিনী নিয়ে তাদের শায়েস্তা করার জন্য অগ্রসর হন। জমিদাররা দুদুমিয়ার বিরুদ্ধে বল প্রয়োগ করার চেষ্টা করেন কিন্তু তাতে কাজ হয়নি। বরঞ্চ তারা আপোষ করেছিলেন জমিদাররা সকল প্রকার সকল ধরনের অর্থ আদায় থেকে বিরত থাকার জন্য সম্মত রাজি হয়েছিলেন।
১৮৪২ সালে দুদুমিয়া ফরিদপুরের ঘোষ পরিবারের বিরুদ্ধে আক্রমণ শুরু করেছিলেন। ফরায়েজীরা জমিদারদের বাসগৃহ বিধস্ত করে এবং জমিদারদের ভ্রাতা মদন নারায়ণ ঘোষ কে বন্দি করে ছিলেন। এই ঘটনার জন্য দুদুমিয়ার দলের ১১৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল কিন্তু সাক্ষ্য প্রমাণের অভাবে তিনি বেকসুর খালাস পেয়েছিলেন।
অত্যাচারী জমিদারদের বিরুদ্ধে যখন ছড়িয়ে পড়তে ছিল জনগণের মধ্যে তারা আন্দোলনের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ শুরু হয়েছিল। ফরিদপুর পাবনা বাকেরগঞ্জ ঢাকা ও নোয়াখালী জেলার তার নাম উচ্চারণ শুরু হয়। তার পতাকা তলে আসতে শুরু করে। দম নার্তেথ হিন্দু জমিদাররা নীলকরদের উৎসাহিত করেছিল এক্ষেত্রে প্রভাবশালী নীরকর এন্ডারসন ডানলপের ভূমিকা বিশেষ উল্লেখযোগ্য দেখা গিয়েছিল। এজন্য ফরাজি আন্দোলনের গুরুত্ব রয়েছে।
কালীপ্রসন্ন কাঞ্জিলাল নামক একজন ব্রাহ্মণ মিস্টার ডানলোপের নীলকর কোঠির দেখাশোনা করে আসতেছিল। ইংরেজদের এই ধরনের গোমস্তাদের শায়েস্তা করার জন্য দুদুমিয়া প্রতিবাদ করেছিলেন। নীল চাষে বাধ্য করে আসতেছিল, এবং দুদুমিয়ার বাড়িতে ডাকাতি ও লন্ঠন শুরু করেছিল। চারজন চৌকিদারকে হত্যা করেছিল।
কিন্তু ডানলপের প্রভাবের ফলে পুলিশ ও ম্যাজিস্ট্রেট এই অন্যায় কাজের প্রতি কোন গুরুত্ব আরব দেখায়নি। বরঞ্চ দুদুমিয়া নিজেই এদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য পরিকল্পনা করেছিলেন। তাই তিনি এক বিরাট সশস্ত্র বাহিনী পাচ চরের কুঠি আক্রমণ করার জন্য অগ্রসর হয় এবং সেই কুঠিরকে ধ্বংস করে দেয়।
পার্শ্ববর্তী গ্রাম লন্ঠন করে এবং ব্রাহ্মণ গোমস্তা আটক করে নিয়ে আসে পরে বাকেরগঞ্জ জেলায় থাকে নির্মমভাবে মেরে ফেলা হয়। এ ব্যাপারে তার বিরুদ্ধে মামলা করে সাব্যস্ত হলে তিনি পরের সদর আদালতে আপিল করে খালাস হয়ে গিয়েছিলেন।
এই ঘটনার পর থেকে ইংরেজরা তাদের তাকে দেখে ভয় পেতেন এবং তাকে সম্মান করে চলতেন। কৃষকরাও অবৈধ কর প্রদান থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন।
ফরাজি আন্দোলনের ফলাফল
ফরাজি আন্দোলনের ফলাফল ইসলামের ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তাই নিম্নে এ আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ ফলাফল গুলো আলোচনা করা হলো,
১৮ শতকের শেষার্ধে যেসব আন্দোলন বাংলার সামাজিক ধর্মীয় রাজনৈতিক জীবনে বিপুল প্রভাব বিস্তার করেছিল তার মধ্যে অন্যতম হলো ফরায়েজী আন্দোলন। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে বলা যায় যে একেবারে মুসলিম সমাজের পতন হয়েছিল সেখান থেকে পুনরায় ফিরে নিয়ে আসার জন্য আফরান চেষ্টা করেছিলেন হাজী শরীয়ত উল্লাহ।
কিন্তু ধর্মীয় আন্দোলন হিসেবে শুরু হলেও মুসলিম সমাজে যেসব কুসংস্কার ধর্মবির বিরুদ্ধে সামাজিক অনাচার অনুষ্ঠান অনুপ্রবেশ ঘটেছিল। হাজী শরীয়তুল্লাহ তার এই ধরনের কুসংস্কার গুলো বর্জন করার জন্য চেষ্টা করেছিলেন। তিনি এমন একটি আদর্শ সমাজ ব্যবস্থা গঠন করতে চেয়েছিলেন যেখানে অন্যায় অবিচার থাকবে না।
মানুষ সমান সাম্যের ভিত্তিতে জীবন যাপন জীবন যাপন করবে। এজন্য বিদ্যমান সমাজ ব্যবস্থার অসঙ্গতি সমূহ দূর করার জন্য তিনি চেষ্টা করেছিলেন। তার চেষ্টার বাংলার মুসলমানগণ অধিকার সচেতনতা ও মর্যাদা ব্যক্তিত্বের প্রতি সজাগ হয়ে উঠতে শুরু করেছিল এবং তার মৌলিক অধিকারের উপর অন্যের হস্তক্ষেপ সম্পর্কে সচেতন হয়ে ওঠা শুরু করেছিল।
তিনি ইসলাম সাম্রাজ্যবাদের যে আদর্শ প্রচার করেছিলেন তার স্বাভাবিকভাবে নিম্নবিত্ত নির্যাতিত পেশাজীবী শ্রেণী সম্পর্কে বেশি আকৃষ্ট করেছিল। তারা মুক্তির আলোর সন্ধান পেয়েছিল এবং ঐক্যবদ্ধ হয়ে উঠেছিল শক্তিশালী শাসক শ্রেণীর প্রবল আক্রমণে আন্দোলন স্থিমিত হয়ে পড়লেও ১৮৬৯ সনের খাজনা আইন ও ১৮৮৫ সালের প্রজাস্বত্ব আইন পাশের মধ্যবর্তী সময়ে এই আন্দোলন বেশি অনুপ্রেরণা জাগিয়ে ছিল।
ধর্মীয় সমাজ জীবন থেকে ইসলামিক রীতিনীতি দূর করে ইসলামী আদর্শ পরিচালিত হওয়ার জন্য দুদুমিয়া যে প্রতিবাদ ও আন্দোলন করে তুলেছিলেন তা পরবর্তীকালে সামাজিক রাজনৈতিক বাংলা মুসলমানদের অনুপ্রেরণা করেছিল। সংগ্রামী হওয়ার জন্য তাদেরকে তৎকালীন আন্দোলন নেতারা প্রভাব বিস্তার করেছিল। এজন্য ফরাজি আন্দোলনের ফলাফল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
দুদুমিয়ার মৃত্যুর পর নেতৃত্বের অভাবে আন্দোলন হয়ে গেলেও অত্যাচারী জমিদার নীলকরদের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ সংগ্রাম পদ্ধতি এবং কৃষক প্রজা আন্দোলন পূর্ব বাংলার সংগ্রামী মানুষের পথ প্রদর্শক রূপে সুদূরপ্রসারী প্রভাব বিস্তার লাভ করেছিল।
আমাদের শেষ কথা
পরিশেষে বলা যায় যে ফরায়েজী আন্দোলন ছিল মূলত অনেক মুসলমান হিন্দু কালচারগুলো তাদের মাঝে নিয়ে এসেছিল এবং তারা সেগুলো পালন করতে ছিল। কিন্তু কিছু রক্ষণশীল মুসলিম এবং ইংরেজরা এর বিরোধিতা করেছিল। এর কারণে ফরায়েজি আন্দোলন দুর্বল হয়ে পড়ে। যা হোক, পোস্টটি পড়ে যদি উপকৃত হন, তাহলে পোস্টটি আপনার বন্ধু-বান্ধবের মাঝে শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ
এম আর মাহমুদ ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url