জুমার নামাজ এক রাকাত ছুটে গেলে কি করবেন, এ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন

অনেকেই জানেনা জুমার নামাজ এক রাকাত ছুটে গেলে কি করবেন, তাদের জন্য আজকের এই আর্টিকেলটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা মহান আল্লাহ তা'আলা জুমার দিনকে অন্যান্য দিনের চাইতে গুরুত্ব দিয়েছেন। চলুন, জুমার নামাজ সম্পর্কে আলোচনা করা যাক।
ছবি
অনেকে ইচ্ছাকৃতভাবে জুমার নামাজ পড়তে যায় না কিন্তু তারা আসলে জানে না যে জুমার নামাজ না পড়লে কতটা শাস্তি হতে পারে। তাই জুমার নামাজ এক রাকাত ছুটে গেলে কি করবেন, সম্পর্কে জানতে পোস্টে মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।

পোস্টসূচিপত্রঃজুমার নামাজ এক রাকাত ছুটে গেলে কি করবেন, এ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন

জুমার নামাজ কত রাকাত

অনেকেই প্রশ্ন করে যে জুমার নামাজ কত রাকাত আসলে ইসলামের শরীয়ত মতে জুমার নামাজ প্রধানত দুই রাকাত ফরজ। এতে কোন দ্বিমত নাই কিন্তু এই ফরজ নামাজের আগে চার রাকাত এবং ফরজ নামাজের পরেও চার রাকাত সুন্নত পড়তে হয়।

অধিকাংশ মুসলমানই এই দশ রাকাত নামাজ সাধারণত জুমার দিন পড়ে। আবার অনেকে জুমার নামাজের আগে আরো দুই রাকাত নামাজ পড়ে সুন্নত নামাজ হিসেবে। তবে এতে অনেকেই মতামত রয়েছে। আশা করি বুঝতে পেরেছেন জুমার নামাজ কত রাকাত।

যোহরের নামাজের পরিবর্তে এ জুমার নামাজ পড়া হয়। তবে জোহরের নামাজের সাথে জুমার নামাজের পার্থক্য হলে এতটুকু তা হল এটা একটি সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিন অর্থাৎ শুক্রবার দিন করা হয় এবং সকল মুসলমান একসাথে একই নির্দিষ্ট স্থানে জামাতের সাথে এই দিনটা যোহরের নামাজের পরিবর্তে দুই রাকাত জুমার ফরজ নামাজ আদায় করে।

জুমার নামাজ এক রাকাত ছুটে গেলে

জুমার নামাজ এক রাকাত ছুটে গেলে যা করবেন সে বিষয়ে বিস্তারিত নিম্নে আলোচনা করা হলো,

মুসলমানদের শুক্রবারের দিন বা জুমার দিন টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই এই দিনটাতে মুসলমানরা সকল ধরনের কাজকর্ম বন্ধ করে নামাজের সময় নামাজ পড়তে যায়। কেননা এই দিনটা অনেক ফজিলতপূর্ণ এবং সাপ্তাহিক ঈদের দিন বলা হয়ে থাকে মুসলমানদের জন্য।

এই দিনের ফজিলত সম্পর্কে অনেক হাদিস কোরানে বর্ণনা রয়েছে। তাই এই দিনের আমলটা মহান আল্লাহতালা খুবই পছন্দ করে এবং বান্দারা যখন নামাজ পড়তে যায় আল্লাহতালা তখন অত্যন্ত খুশি হন।

পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে যে হে মুমিনগণ তোমরা জুমার দিন নামাজের যখন আজান দেবে তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণ করো। সকল ব্যবসা-বাণিজ্য বেচাকেনা বন্ধ করে আল্লাহকে স্মরণ করার জন্য আসো। এজন্য তোমাদের উত্তম হবে যদি তোমরা বুঝে পারো। সূরা আল জুমা, আয়াত নাম্বার ০৯

এ সম্পর্কে রাসূল সাঃ বলেছেন জুমার দিন আজান হওয়ার সাথে সাথে সকল প্রকার কাজকর্ম থেকে বিরত থাকো। তোমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করার জন্য নামাজ পড়তে যাবে। কেননা দিনটা মহান আল্লাহর কাছে অনেক প্রিয় এবং বছরে যে দুইটা ঈদ থাকে ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আযহা এই দিনের থেকেও অনেক মহান জুমার দিনটা। সুনানে ইবনে মাজাহ

শুক্রবারের দিনটা জোহরের নামাজের পরিবর্তে আমরা সাধারণত জুমার দুই রাকাত ফরজ নামাজ পালন করে থাকি এবং আর বাকি জোহরের নামাজ চার রাকাতের পরিবর্তে দুই রাকাত জুমার নামাজ এবং দুই রাকাত এর পরিবর্তে ইমামের খুতবা আমরা শুনে থাকি। যা আমাদের উপর ওয়াজিব এই খুতবা।
দুই রাকাত ফরজ নামাজ পালন করার জোহরের চার রাকাত ফরজের পরিবর্তে পালন করা হয়ে থাকে। এই দিনটা মমিনরা যাবতীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজকর্ম বাদ দিয়ে পবিত্র করানো হাদিসের আলোকে বিভিন্ন ধরনের কথা বলে থাকে মসজিদে ইমাম সাহেব এই কথাগুলো শুনতে হবে। এতে খুতবার মধ্যে এই ধরনের আলোচনা হয়ে থাকে।

যদি এক রাকাত ছুটে যায় এক্ষেত্রে আপনি যদি এক রাকাত পেয়ে থাকেন তাহলে ইমাম সাহেব সালাম ফিরানোর পর বাকি এক রাকাত আপনি একা একা পড়ে নিবেন। তাহলে জুমার নামাজ হয়ে যাবে।

আর যদি দ্বিতীয় রাকাত এর রুকুর আগ পর্যন্ত আপনি যেতে পারেন। তাহলে এক রাকাত ইমাম সাহেবের সাথে পড়ে আরেক রাকাত একা একা পড়লেও নামাজ হয়ে যাবে। আর যদি দ্বিতীয় রাকাত রুকু শেষ হওয়ার পর নামাজে দাঁড়ায় তাহলে সেটা জুমার নামাজ হবে না সে ক্ষেত্রে জোহরের চার রাকাত নামাজ তাকে পড়তে হবে।

আপনি মসজিদে গিয়ে দেখলেন যে জুমার নামাজ শেষ হয়ে গেছে সেই ক্ষেত্রে আপনি জোহরের চার রাকাত নামাজ পড়ে নিবেন কেননা জামাতের সাথে জুমার নামাজ পড়তে না পারলে তাহলে জুমার নামাজ হবে না।

এ সম্পর্কে হাদিসে বলা হয়েছে ইবনে মাসউদ রাঃ বলেছেন, যে ব্যক্তি জুমার এক রাকাত পেল সে ব্যক্তি যেন আরো এক রাকাত নিজে নিজে পড়ে নিবে কিন্তু যদি দ্বিতীয় রাকাত রুকু পর্যন্ত না পায় তাহলে জোহরের নামাজ আদায় করবে।

জুমার নামাজের নিয়ম

সাপ্তাহিক একদিন জুমার নামাজ হওয়ার কারণে অনেকেই জুমার নামাজের নিয়ম সম্পর্কে জানেনা নিম্নে সম্পর্কে বলা হল,

জুমার নামাজ সাধারণত ফরজ দুই রাকাত পড়তে হয়। তাছাড়া এর নামাজের পূর্বে ৪ রাকাত কাবলাল জমা এবং এই ফরজ নামাজের পর ৪ রাকাত বাদাল জুমা সুন্নাত নামাজ পড়তে হয়। আপনি যদি চান তাহলে যোহরের নামাজের পর যে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়তে হয় সেটা ও এই জুমার নামাজের পরে পড়তে পারবেন।

আবার এ জুমার নামাজের পূর্বে আরো দুই রাকাত সুন্নত নামাজ পড়া যেতে পারে। তবে এটা বাধ্যবাধকতা নেই পরলে সওয়াব পাবেন এ নামাজ পড়ার জন্য কোন ব্যক্তি বাধ্যবাধকতা নেই স্বেচ্ছায় পড়তে পারবে। না পড়লে তেমন কোন দোষ নেই। তবে জুমার নামাজের নিয়ম হলো অবশ্যই জামাতের সাথে পড়তে হবে।
আর যদি জামাতের সাথে আদায় করতে না পারেন তাহলে অবশ্যই একাকী এটা আদায় করা যাবে না।

কোরআন শরীফে বর্ণনা করা হয়েছে যে জুমার দিনে সকল প্রকার কাজকর্ম বন্ধ রেখে মসজিদে নামাজ পড়তে যেতে হবে। এ বিষয়ে জরুরিভাবে তাগিদ দেওয়া আল্লাহ তাআলা জরুরিভাবে বলেছেন যদি কোন ব্যক্তি যুক্তিসঙ্গত ভাবে অনেক অসুস্থ থাকলে যদি মসজিদে যাওয়ার মত শক্তি সামর্থ্য না থাকে সেই ক্ষেত্রে সে যোহরের নামাজ পড়ে নিতে পারবে।

তাছাড়াও কোন ব্যক্তির যদি সে কোথাও ভ্রমণ করতে যায় মুসাফির অবস্থায় থাকে তাহলে তার উপর জুমার নামাজ আবশ্যক নেই। সে ক্ষেত্রে সে জহর নামাজ পড়লেও নামাজ হবে। ভ্রমণকারী বা মুসাফিরের জন্য জুমার নামাজ সে ইচ্ছা করলে পড়ে নিতে পারবে।

জুমার নামাজের ফজিলত

কোরআন ও হাদিসে জুমার নামাজের ফজিলত সম্পর্কে গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। কেননা এই দিনটা মুসলমানদের কাছে সাপ্তাহিক ঈদের দিন তারা এই দিনটা আনন্দের সাথে সকলে একসাথে নামাজ পড়বে। এটা মহান আল্লাহতালা খুবই খুশি হন এবং পছন্দ করেন। তাই এই নামাজের ফজিলতপূর্ণ রয়েছে।
ছবি
মহান আল্লাহতালা বলেন হে মুমিনরা জুম্মার দিন যখন মসজিদে আজান দেবে তখন তোমরা আল্লাহকে স্মরণ করার জন্য চলে যাবে এবং বেচাকেনা বন্ধ করে দিবে এটা তোমাদের জন্য উত্তম যদি তোমরা বুঝতে পারো।

এরপরে নামাজ শেষ হয়ে গেলে তোমরা জমিনে ছড়িয়ে পড়তে পারো তাহলে আল্লাহতালা তোমাদের রিজিকের ব্যবস্থা করে দিবেন এবং তোমরা জীবিকা উপার্জনের জন্য চেষ্টা করা আল্লাহ তায়ালা ব্যবস্থা করে দিবেন। তোমরা সফলকাম হবে। সূরা জুমা আয়াত নম্বর ৯-১০

জুমার দিন জুমার নামাজের অবশ্যই তাড়াতাড়ি যাওয়ার চেষ্টা করবেন। কেননা যত তাড়াতাড়ি মসজিদে যেতে পারবেন তত বেশি সওয়াব পাবেন।

জুমার নামাজ সম্পর্কে রাসূল সাঃ বলেছেন যখন জুমার দিন আসে তখন ফেরেশতারা মসজিদে দাঁড়িয়ে থাকে এবং যে প্রথমে আসে তার নাম লিপিবদ্ধ করা হয় যে সবার আগে মসজিদে প্রবেশ করবে ওই ব্যক্তির নাম লেখা হবে এবং ওই ব্যক্তির জন্য একটি উট সদকার সম পরিমাণ সে সওয়াব পাবে।

তার পরে যে ব্যক্তি আসবে একটি গাভী সদকার সমমর্যাদা সওয়াব পাবেন। তারপরে আগমন ব্যাক্তি একটি মুরগি সদকা কারীর মত সওয়াব পাবে। এরপর যখন ইমাম খুতবা দেওয়া শুরু করবে তখন ফেরেশতারা সকল দরজা বন্ধ করে দেবে কেননা ঐ সময় তারা মনোযোগ দিয়ে খুতবা শুনবে। বুখারী শরীফ

হাদিসগুলো জুমার দিনে আরও বেশি আমলের কথা চমৎকারভাবে উপস্থাপন করে থাকে ইমাম সাহেব। তাই এই দিনে আপনারা খুতবা শুনবেন এর ভিতরে পুরো সাপ্তাহিক যে আমরা দিনগুলো পালন করব সেগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়ে থাকে। হযরত ইবনে আউস রাঃ থেকে বর্ণনা করা হয়েছে রাসূল সাঃ বলেছেন, যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করার পর নামাজের সময় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মসজিদে যদি প্রবেশ করে।

তাহলে তার আসার সময় যে হেঁটে আসবে তার প্রত্যেক কদমে সওয়াব রয়েছে। ইমামের কাছাকাছি বসবে এরপর দুটি খুতবায় মনোযোগ সহকারে শুনবে কোন অনর্থক কাজকর্ম এবং কথাবার্তা বলবে না সে ক্ষেত্রে মসজিদে আসার পর থেকে এতক্ষণ পর্যন্ত এই কাজগুলো যদি পরিচালনা করে থাকে সেই ক্ষেত্রে এক বছরের নফল রোজা ও এক বছরের নফল নামাজের সম এর পরিমাণ সওয়াব তিনি পাবেন। আবু দাউদ হাদিস নাম্বার ৩৪৫

রাসূল সাঃ আরো বলেছেন জুমার দিনে কোন ব্যক্তি গোসল করল এবং সাধ্যমত পবিত্রতা অর্জন করে এরপর সুগন্ধি লাগিয়ে মাঝে বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি যদি না করে তারপরে ধার্যকৃত নামাজ আদায় করে এবং ইমামের খুতবাও শুনে সেই ক্ষেত্রে তার এক জুমা থেকে পরবর্তী জমা পর্যন্ত যত সগিরা গুনাহ রয়েছে সবকিছু আল্লাহ তাআলা মাফ করে দিবেন। বুখারী শরীফ হাদিস নাম্বার ৮৮৩

জুমার দিন অন্যান্য দিনের চাইতে সবচাইতে বেশি সওয়াব রয়েছে। তাই এই দিনে বেশি বেশি দরুদ পড়া দরকার আর রাসূল সাঃ বলেছেন তোমাদের মধ্যে যে দিনগুলো রয়েছে তার মধ্যে সর্বোত্তম দিন হলো জুমার দিন। এই দিন হযরত আদম আঃ কে তৈরি করা হয়েছে। আর এই দিন সিঙ্গায় ফুৎকার দিয়ে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে এবং এই দিন সবার জ্ঞান থাকবে না। তাই এই দিন বেশি বেশি দরুদ পাঠ করবেন। আবু দাউদ হাদিস নাম্বারঃ১০৮৯

জুমার দিনের সূরা কাহাফ তেলাওয়াত করা অনেক ফজিলত আছে কেননা রাসূল সাঃ বলেছেন, "যে ব্যক্তি জুমার দিন সূরা কাহাফ বেশি বেশি পাঠ করবে আল্লাহ তা'আলা আল্লাহ তাকে বিশেষ নুর দান করবে।" বাইহাকি হাদিস নাম্বার ৬২০৯

এছাড়া জুমার দিন আরো বিশেষ কিছু কাজ করতে পারেন যেটা ফজিলত রয়েছে তাহলো,
জুমার দিন অবশ্যই উত্তম ভাবে গোসল করবেন এবং নখ যদি বড় হয়ে থাকে নখ কাটবেন, চুল যদি বড় হয়ে থাকে সে ক্ষেত্রে চুল কাটতে পারেন এবং সুগন্ধি ব্যবহার করতে পারেন। মেসওয়াক করা যেতে পারে, ভালো পোশাক পরিধান করা যেতে পারে যদি আপনার থাকে।

পায়ে হেঁটে যাওয়া সওয়াব রয়েছে এবং বেশি বেশি দরুদ পাঠ করা, সামনে কাতারে বসা, সুযোগ যদি থাকে তাহলে দুই রাকাত তাহিয়াতুল মসজিদ নফল নামাজ পড়তে পারেন। সূরা কাহাফ পাঠ করা জুমার নামাজের ফজিলত।

জুমার নামাজ না পড়ার শাস্তি

যদি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে জরুরি বা খুবই অসুস্থ না হলে জুমার নামাজ না পড়লে তার এ কারণে জুমার নামাজ না পড়ার শাস্তি রয়েছে। কি শাস্তি হবে সে সম্পর্কে নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো,

প্রত্যেকটা মুসলিমের উপর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া অবশ্যই কর্তব্য। কেননা একজন মুসলমান ও কাফেরের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করা হয় নামাজের মাধ্যমে। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে তৈরি করেছেন তার এবাদত ও প্রার্থনা করার জন্য। তাই মানুষ হিসাবে এবং মুসলিম হিসাবে আমাদের দায়িত্ব হল আল্লাহর প্রত্যেকটি বিধান মেনে চলা।

তার মাঝে শুক্রবারের দিনটাও জোহরের নামাজের পরিবর্তে আমাদের উপর ফরজ করা হয়েছে এজন্য আমরা আল্লাহর এই দিনে অবশ্যই তার ডাকে সাড়া দেবো। এর ভিতর অনেক আল্লাহর রহমত রয়েছে। একজন মুসলমান হিসেবে নামাজ পড়া খুবই প্রয়োজন। তার মধ্যে জুমার নামাজ তো অবশ্যই পড়তে হবে।
যদি কেউ জুমার নামাজ না পড়ে অন্য কাজে ব্যস্ত থাকে তাহলে আল্লাহতালা তার দিক থেকেও মুখ ফিরিয়ে নিবেন। মহান আল্লাহতালা এই পৃথিবী শুক্রবারে সৃষ্টি করেছেন এবং হযরত আদম ও হাওয়া আঃ কে জান্নাতে একসাথে মিলিয়ে দিয়েছিলেন। এছাড়াও এই দিন মুসলমানদের জন্য ঈদের দিন আর সকল এবাদত এর চাইতে দিনের এবাদত সবচাইতে উত্তম। আল্লাহতালা অনেক খুশি হন।

রাসূল সাঃ বলেছেন যে ব্যক্তি পরপর তিনটি জুমার নামাজ কোন যৌক্তিকতা কারণ ছাড়া থাকি তো ভাবে নামাজ পড়ে নাই আল্লাহতালা সেই ব্যক্তির অন্তরে মোহর মেরে দেয়। তিরমিজি শরীফ, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ।

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণনা করা হয়েছে তিনি বলেন রাসূল সাঃ বলেছেন যে ব্যক্তি পর পর তিনটি জুমা নামাজ পড়লো না। সে ব্যক্তি ইসলামকে পিছনের দিকে ফেলে দিল। মুসলিম শরীফ।

বর্ণনা করা হয়েছে যে চার শ্রেণীর লোক ব্যতীত জুমার নামাজ যদি না পড়ে তাহলে সে কবিরা গুনাহ করলো। আর চার শ্রেণীর লোক হলো তারা, ক্রীতদাস, নারীরা, অপ্রাপ্তবয়স্ক বালক, মুসাফির এবং যে অত্যন্ত অসুস্থ যিনি। আবু দাউদ।

উপরোক্ত হাদিস গুলো দ্বারা প্রমাণিত হয় যে জুমার নামাজ না পড়ার শাস্তি কি হতে পারে। আশা করি বুঝতে পেরেছেন।

জুমার নামাজ ফরজ নাকি ওয়াজিব

অনেকেই জানতে চায় যে জুমার নামাজ ফরজ নাকি ওয়াজিব এ বিষয়ে কোরআন হাদিসের আলোকে নিম্ন বিস্তারিত আলোচনা করা হলো,

জুমার দিন দুই রাকাত ফরজ নামাজ পড়তে হয়। কোরআন শরীফের সূরা জুমার ৯ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে যে, "হে ঈমানদারগণ তোমরা জুমার নামাজের জন্য সকল কিছু কেনাবেচা বন্ধ করে মসজিদের দিকে অগ্রসর হবে, আল্লাহকে স্মরণ করার জন্য। কেননা এই দিনটা তোমাদের জন্য অনেক উত্তম যদি তোমরা বুঝতে পারো।"
ছবি
এই আয়াতের দ্বারা জুমার নামাজের প্রতি গুরুত্ব আরো বেশি করা হয়েছে এবং ফরজের কথাই বলা হয়েছে।

জুমার নামাজ সম্পর্কে আবু হুরায়রা রাঃ হতে বর্ণিত রাসূল সাঃ বলেছেন, যে ব্যক্তি জুমার দিন জামাতে উপস্থিত হল এবং মসজিদে নীরবের সাথে ইমাম সাহেবের খুতবা শুনবে তার জন্য দুই জুমার মধ্যবর্তী সময়ের যতগুলো গুনাহ রয়েছে আল্লাতালা মাফ করে দিবেন। বুখারী ও মুসলিম শরীফ। তাই জুমার নামাজ ওয়াজিব নয় জুমার নামাজ সবার জন্য ফরজ এ বিষয়ে কোন মতভেদ নেই সবাই একমত প্রকাশ করেছেন।

এ বিষয়ে আরো কিছু হাদিস রয়েছে যেমন আব্দুল্লাহ বিন মাসুদ রাঃ হতে বর্ণনা রাসূল সাঃ বলেছেন, যে ব্যক্তি জুমার নামাজ পড়লো না আমার ইচ্ছে হয় একজনের এই নামাজ দায়িত্ব দিয়ে সেই মুসল্লির বাড়িতে গিয়ে তার বাড়ি আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেই কিন্তু সেই ঘরেতে নারী এবং শিশু থাকার কারণে জ্বালিয়ে দেওয়ার কথা না করেছেন। মুসলিম শরীফ, হাদিস নাম্বার ৬৫২

আরেকটা হাদিসে বর্ণনা করা হয়েছে যে ব্যক্তি অলসতার কারণে পরপর তিন জুমা নামাজ পড়লো না তার অন্তরে মহান আল্লাহতালা মোহর মেরে দেন। ইবনে মাজাহ, হাদিস নাম্বার ১১২৫

উপরোক্ত কোরআন ও হাদিস এর আলোকে জুমার নামাজ ফরজ নাকি ওয়াজিব এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে আশা করি বুঝতে পেরেছেন।

লেখকের শেষ কথা

পরিশেষে বলা যায় যে জুমার নামাজ মুসলমানদের জন্য সাপ্তাহিক ঈদের দিন। তাই এদিন সকল কাজকর্ম বন্ধ করে মহান আল্লাহতালা ডাকে সাড়া দেওয়ার জন্য গুরুত্ব দিয়েছেন। যদি কারো জুমার নামাজ এক রাকাত ছুটে গেলে কি করবেন, সম্পর্কে এই প্রশ্নের সুন্দর করে আলোচনা করা হয়েছে আশা করি বুঝতে পারবেন। যদি এই পোস্টটা ভাল লাগে তাহলে আপনার বন্ধু-বান্ধবের মাঝে শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এম আর মাহমুদ ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪