পলাশীর যুদ্ধের কারণ ও তাৎপর্য বা ফলাফল এবং নবাবের পরাজয়ের কারণ
অনেকে পলাশীর যুদ্ধের কারণ ও তাৎপর্য সম্পর্কে তেমন জানে না। তাই এই যুদ্ধের কিছু ভুলের কারণে নবাবের পরাজয় বরণ করতে হয়েছিল এবং ইংরেজরা এ দেশ শাসন করেছিল। চলুন, পলাশীর যুদ্ধের ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
আমরা অনেকেই জানিনা যে পলাশীর যুদ্ধে যারা বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল তাদের শেষ পরিণতি কি হয়েছিল এবং তাদের মৃত্যু কি স্বাভাবিকভাবে হয়েছিল। তাই পলাশীর যুদ্ধের কারণ ও তাৎপর্য সম্পর্কে জানতে পোস্টটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
পোস্টসূচিপত্রঃপলাশীর যুদ্ধের কারণ ও তাৎপর্য বা ফলাফল এবং নবাবের পরাজয়ের কারণ
পলাশীর যুদ্ধের কারণ ও তাৎপর্য
পলাশীর যুদ্ধের কারণ ও তাৎপর্য সম্পর্কে আমাদের জানা খুবই প্রয়োজন। কেননা পলাশী যুদ্ধের কারণেই প্রায় ২০০ বছর এদেশে ইংরেজরা শাসন করেছে। কি কারণে এই যুদ্ধ হয়েছিল এবং কেনই বা এই যুদ্ধে ব্যর্থতা হল এজন্য এখান থেকে আমাদের অনেক শিক্ষা নেওয়া দরকার। পলাশী যুদ্ধের কারণ সমূহ বিস্তারিত আলোচনা করা হলো
রাজনৈতিক কারণঃ নবাব আলীবর্দী খান ইংরেজ ও ফরাসীদেরকে বানিজ্য করার অনুমতি দিয়েছিলেন। যার কারণে তারা এ দেশে দুর্গ নির্মাণ ও যুদ্ধ করা নিষেধ ছিল কিন্তু নবাবের মৃত্যুর পর ইংরেজি ফরাসিগণ চন্দননগরের দুর্গ নির্মাণ করেছিল।
নবাব সিরাজউদ্দৌলা তাদের এই কাজ বিরত থাকার জন্য নিষেধ করেছিলেন। ফরাসিরা এই আদেশ মেনে নিয়েছিল কিন্তু ইংরেজরা এই আদেশটা মানে নাই। যার কারণে নবাব সিরাজউদ্দৌলা তাদের উপর ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন।
অর্থনৈতিক কারণঃ ইংরেজরা অর্থনৈতিক দিক দিয়ে যেসব বাণিজ্যিক সুযোগ-সুবিধা নিচ্ছিল তারা এই সুযোগ সুবিধার অপব্যবহার শুরু করে। যার কারণে নবাব তাদের উপর বিদ্বেষী ভাব পোষণ করে।
অভ্যন্তরীণ ষড়যন্ত্রঃ নবাব আলীবর্দী খানের কোন ছেলে সন্তান ছিল না যার কারণে আমির ওমরাগণ পরবর্তী নবাব হওয়ার জন্য গোপন ষড়যন্ত্র শুরু করে। তাদের ইচ্ছা ছিল বৃদ্ধ নবাবের মৃত্যু হলে মীরজাফর সিংহাসনে বসবেন। তাদের এই মনোবাসনা পরবর্তীতে ষড়যন্ত্রের রূপ নিয়েছিল।
ঘসেটি বেগম ও শওকত জং এর ষড়যন্ত্রঃ আলীবর্দী খানের মৃত্যুর পর তার উত্তর অধিকারের সূত্রে নবাব সিরাজউদ্দৌলা সিংহাসনে বসেন। এর কারণে তার খালা ঘসেটি বেগম ষড়যন্ত্র করতে থাকে। কারণ তার ইচ্ছা ছিল তার ছেলে এই সিংহাসনে বসবে।
আলীবর্দী খানের জ্যৈষ্ঠকন্যা ঢাকায় বসবাস করত বিধবা ঘসেটি বেগম। তার ছেলে শওকত জং পূর্ণিয়া শাসনকর্তা ইংরেজদের সাথে ষড়যন্ত্র লিপ্ত হয়। তারা নবাবের পতন ঘটানোর জন্য ষড়যন্ত্র করতে থাকে।
ইংরেজগণ কর্তৃক রাজবল্লবের পুত্র কৃষ্ণ দাস কে আশ্রয়দানঃ ইংরেজরা নবাব সিরাজউদ্দৌলার বিদ্রোহী কর্মচারী কৃষ্ণ দাস কে প্রচুর ধন রত্নের লোভ দেখিয়ে আশ্রয় দিলে। নবাব তাকে ইংরেজদের কাছ থেকে ফেরত চায় ইংরেজরা ফেরত দিতে অস্বীকৃতি জানায়। এতে ইংরেজরা নবাবের কাছে অপরাধী হিসেবে পরিচিত হয়।
ইংরেজগণ কর্তৃক কলকাতা পুনঃ দখলঃ নবাব কর্তৃক কলকাতা জয়ের খবর মাদ্রাজে পৌঁছালে রবার্ট ক্লাইভ ও নৌ সেনাপতি ওয়াটসন কলকাতা রওনা হয়। ১৭৫৭ সালের জানুয়ারি মাসের রবার্ট ক্লাইভ আবার খুব সহজে কলকাতা পুনর দখল করে নেন।
যার কারণে নবাব ইংরেজদের প্রতি অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে এবং নবাব তাদেরকে দমন করার জন্য সৈন্য পাঠান। কিন্তু নবাব দেখতে পেলেন চারিদিকে শুধু ষড়যন্ত্র তাই তিনি একটি সন্ধির প্রস্তাব দেন। আর এই সন্ধি আলিনগর সন্ধি নামে পরিচিত লাভ করে।
ইংরেজ কর্তৃক শওকত জং এর পক্ষ অবলম্বনঃ পূর্ণিয়ার শাসনকর্তা শওকত জংগ নবাবের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করে এবং নবাবের সিংহাসন প্রতিক কামনা করতে থাকে। এই সুযোগে ইংরেজরা তার প্রতিপক্ষ হিসেবে শওকত জনকে সমর্থন করে। ফলে নবাব ইংরেজদের প্রতি অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। পলাশীর যুদ্ধের কারণ গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো নবাবের খালাতো ভাই শওকত জং এর ষড়যন্ত্র।
সিরাজের প্রতি ইংরেজদের বৈরী মনোভাবঃ ইংরেজরা নবাবের অনুমতি ছাড়া অবৈধভাবে বানিজ্য কঠির নির্মাণ করে এবং নানা অস্ত্র সজ্জায় সজ্জিত করে এমনকি ইংরেজ বাহিনী নবাবের প্রতি কোনরূপ সৌজন্যমূলক আচরণ করেনি এবং কোন প্রকার উপঢৌ কোন পাঠায় নাই। তারা নবাবের আনুগত্য স্বীকার করে না।
নবাবের আদেশ অমান্য করাঃ নবাব ইংরেজ ও ফরাসি বাহিনীকে অবৈধভাবে দুর্গ নির্মাণ না করার জন্য নির্দেশ দেন। নবাবের এই আদেশ ফরাসিরা মান্য করে কিন্তু ইংরেজরা মান্য করে না। ইংরেজরা নবাবের দূতকে অপমান করে পাঠিয়ে দেয়। এসব দিক বিবেচনা করে নবাব ইংরেজদের সময় উচিত শাস্তি দেওয়ার জন্য ৫০০০০ সৈন্য নিয়ে কলকাতা আক্রমণ করেন।
নবাবের অদূরদর্শিতাঃ বাংলা বিহার উড়িষ্যার সিংহাসনে আরোহন করে নবাব বিচক্ষণতা দক্ষতার প্রদর্শনের পরিবর্তে উদারতা বেশি করেছিলেন। উদারতা ও বিশ্বাস তার সুযোগ নিয়ে বিরুদ্ধেপক্ষ তাকে পদচ্যুত করার ষড়যন্ত্র করতে থাকে কিন্তু সরল বিশ্বাসী নবাব ষড়যন্ত্রকারীদের কঠোর দমন করার কোন বলিষ্ঠ পদক্ষেপ না নেওয়ায় শত্রুপক্ষ আরো বেশি শক্তিশালী হয়ে পড়ে।
কলকাতা অধিকারঃ নবাব সিরাজউদ্দৌলা ইংরেজদের শাস্তি দেওয়ার জন্য হঠাৎ করে আক্রমণ পরিচালনা করলে ইংরেজ গভর্নর ও তার অনুসারীরা ভয় পেয়ে ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ পরিত্যাগ করে ফলতা নামক স্থানে আশ্রয় নেয়। নবাব ১৭৫৬ সালের ২০ শে জুন কলকাতা জয় করে তার নাম দেন আলিনগর।
কাল্পনিক কাহিনীঃ ফোর্ট উইলিয়াম দখল করলে ইংরেজ চিকিৎসক হলওয়েল নবাবের বিরুদ্ধে অন্ধকূপ হত্যা নামক এক কাল্পনিক কাহিনী সৃষ্টি করে। নবাবের চরিত্রকে কলঙ্কিত করার জন্য হলওয়েল এই কাহিনী রচনা করেন।
কাহিনীটা আছে ১৪৬ জন ইংরেজবন্দী কে ১৮ ফুট লম্বা ও ১৪ ফুট ১০ ইঞ্চি প্রশস্ত একটি ঘরের মধ্যে তাদেরকে বন্দী করে রাখা হয়েছে। ১৩৩ জনকে বন্দী করে শ্বাসরুদ্ধ করে মারা হয়েছে। এই মৃত্যুর তার কোন সত্যতা নেই এটি একটি কাল্পনিক কাহিনী।
পলাশীর যুদ্ধের ঘটনা
এখন আমরা জানবো পলাশীর যুদ্ধের ঘটনা সম্পর্কে যখন চারিদিকে ইংরেজরা ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার শুরু করল। তখন সিরাজউদ্দৌলার সরাসরি তাদের বিরুদ্ধে সংঘর্ষের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করলেন।
ষড়যন্ত্র যখন পরিপক্ষ হয়ে গেল তখন রবার্ট ক্লাইভ নবাবের বিরুদ্ধে সন্ধি ভঙ্গের মিথ্যা অভিযোগ তুলে যুদ্ধ ঘোষণা করলেন এবং ইংরেজরা তাদের সৈন্য মুর্শিদাবাদের দিকে অগ্রসর হলেন তার সৈন্য সংখ্যা ছিল ৩০০০ এর কিছু বেশি হতে পারে।
নবাব ইংরেজদের আক্রমণের খবর পেয়ে ৫০ হাজার পদাতিক ও ২৮ হাজার অশ্বারোহী বাহিনী নিয়ে ইংরেজদের মোকাবেলা করার জন্য সামনের দিকে অগ্রসর হলেন। ২৩শে জুন ১৭৫৭ সালে ভাগীরথী নদীর তীরে উভয় দলের মধ্যে সংঘটিত শুরু হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মীরজাফর এর ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে ও বিশ্বাসঘাতকতার কারণে নবাবের পরাজয় বরণ করে।
এজন্য ইতিহাসে পলাশীর যুদ্ধের ঘটনা স্মরণীয় হয়ে থাকবে। পরাজয় বরণ করতে হলো মোহনলাল ও মীর মদন যুদ্ধক্ষেত্রে প্রাণপণ চেষ্টা করার পরও নিহত হয়ে গেল হতভাগ্যের সিরাজউদ্দৌলা মীরজাফরের পুত্র মিরনের আদেশে মোহাম্মদ বেগ এর হাতে নিহত হলেন।
এজন্য পলাশীর যুদ্ধের কারণ ও তাৎপর্য এর অত্যন্ত গুরুত্ব রয়েছে এখান থেকে আমাদের শিক্ষনীয় বিষয় রয়েছে যে বিশ্বাসঘাতকতা কতটা ক্ষতি করতে পারে।
পলাশীর যুদ্ধ কবে কাদের মধ্যে হয়েছিল
পলাশীর যুদ্ধ কবে কাদের মধ্যে হয়েছিল সম্পর্কে আমাদের জানা দরকার। এই পলাশী যুদ্ধের মাধ্যমে ইংরেজরা বিজয় লাভ করে এদেশে প্রায় ২০০ বছর শাসন করেছিল।
বাংলাদেশ সহ পুরো ভারতীয় উপমহাদেশের যত অর্থ সম্পদ ছিল, সকল কিছু লুন্ঠন করে তারা তাদের দেশে নিয়ে যায়। এ দেশের মানুষদের শোষিত লাঞ্ছিত হতে ছিল।
বাংলার বাংলা বিহার উড়িষ্যার নবাব সিরাজউদ্দৌলা এর সাথে ইংরেজদের সাথে ইংরেজদের মধ্যে পলাশী নামক স্থানে যে যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল তাই আমরা ইতিহাসে পলাশীর যুদ্ধ। যা ১৭৫৭ সালের ২৩ শে জুন এই যুদ্ধটি সংঘটিত হয়েছিল।
এই যুদ্ধে নবাবের প্রধান সেনাপতি মীরজাফর সহ আরো কিছু সৈন্যকে ইংরেজরা অর্থের লোভ দেখিয়ে ক্ষমতার লোভ দেখিয়ে তাদের পক্ষে নিয়ে যায়। যার কারণে যুদ্ধের সময় তারা নবাবের পক্ষে কাজ করেনি এর জন্য নবাব কে এই যুদ্ধে পরাজয় বরণ করতে হয়। আশা করি বুঝতে পেরেছেন যে পলাশীর যুদ্ধ কবে কাদের মধ্যে হয়েছিল।
নবাব সিরাজউদ্দৌলার পতনের কারণ
নবাব সিরাজউদ্দৌলার পতনের কারণ গুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল নবাবের কাছে লোকদের প্রতি অঘাত বিশ্বাস ও উদারতা নিম্নে বিষয়ে আলোচনা করা হলো,
মীরজাফরের বিশ্বাসঘাতকতাঃ পলাশীর যুদ্ধে নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয়ের জন্য সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ হলো মীরজাফরের বিশ্বাসঘাতকতা। কারণ তিনি কোরআন হাতে শপথ করে নিজ স্বার্থকে হাসিল করার জন্য বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলেন।
তিনি যুদ্ধক্ষেত্রে গিয়ে নবাবের বিরুদ্ধে কাজ করেছিলেন। নবাব সিরাজউদ্দৌলার পতনের কারণ গুলোর মধ্যে অন্যতম কারণ হলো মীরজাফরকে বেশি বিশ্বাস করা।
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির উচ্চাকাঙ্ক্ষাঃ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতে বা বাংলায় বাণিজ্য করার জন্য এ দেশে এসেছিলেন। এ দেশের মানুষের মানসিকতা এবং দুর্বলতা দেখে তিনি এ দেশকে দখল করার জন্য আশা করে থাকে।
রবার্ট ক্লাইভ চতুরতাঃ পলাশীর যুদ্ধ নবাব সিরাজের সাথে যুদ্ধে যে ব্যক্তি বেশি লাভবান হন। রবার্ট ক্লাইভ তিনি ছিলেন কোম্পানির পক্ষে এই ঘটনার মূল নায়ক পলাশীর যুদ্ধে তার স্বার্থপরতা ও উৎকৌশলের ব্যস্ত বা প্রয়োগ হয়েছিল বাস্তবতা তিনি প্রয়োগ করেছিলেন। তার কৌশলের কাছে নবাব সিরাজউদ্দৌলা বুঝতে পারেনি।
ষড়যন্ত্রের পরিবেশঃ নবাব সিরাজের পতনের জন্য বাংলার সমকালীন পরিবেশ ও দায়ী ছিল। বাংলাদেশের সময় একদিকে কোম্পানি অন্যদিকে নবাবের নিজ আত্মীয়-স্বজনরা যেভাবে ষড়যন্ত্রলিপ্ত করা শুরু করেছিল। যা ইতিহাসে অন্যতম হিসেবে হয়ে থাকবে।
কেননা তারা পূর্বে থেকেই এই ষড়যন্ত্র করতে ছিল। এজন্য নবাবের এই বিষয়টির প্রতি গুরুত্ব এবং তাৎপর্য অনুধাবন করা উচিত ছিল। কেননা নিজ আত্মীয়-স্বজন যে তাদের ভিতরে ষড়যন্ত্র করছে সেটার দিকে তার খেয়াল রাখা দরকার ছিল।
নবাব সিরাজউদ্দৌলার রাজনৈতিক দূরদর্শীতার অভাবঃ নবাব সিরাজের রাজনৈতিক আদর্শ তার কারণে তিনি ইংরেজদের ষড়যন্ত্রের কাছে হেরে গিয়েছিলেন। তাই তাকে পরাজিত বরণ করতে হয়েছে।
নবাবের দেশ প্রেমঃ নবাব সিরাজউদ্দৌলা বাংলার মাটি এবং বাংলার মানুষকে অনেক ভালোবাসেন।
বিশ্বাস করতেন তিনি সবকিছুতেই ছাড় দিতে রাজি ছিলেন কিন্তু বাংলার স্বাধীনতার জন্য ছিলেন নিবেদিত প্রাণ।
বাংলাকে এত ভালোবেসে ছিলেন যে তার কাছে কোনো ষড়যন্ত্রের কথা বিশ্বাস নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারেনি। এই অতিরিক্ত স্বদেশ প্রীতির কারণেই তার এই পরাজয় বরণ করতে হয়। এজন্য নবাবের এই পরাজয়ের পেছনে পলাশীর যুদ্ধের কারণ ও তাৎপর্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
অর্থনৈতিক ও অস্বচ্ছলতাঃ নবাব সিরাজউদ্দৌলা সিংহাসন লাভ করার পরে প্রথম অবস্থায় তার বাংলার অর্থনৈতিক অবস্থা তেমন ভালো ছিল না। তাই এই কারণে তাকে জগত শেঠের মতো বৃত্ত শালীদের ধারস্থ হতে হয়েছিল। এই অর্থনৈতিক দুর্বলতাকে পতনের জন্য দায়ী করা হয়ে থাকে। কারণ নবাব যদিও জগত সেটির চক্রান্ত বুঝতে পারেন কিন্তু তার করার কিছুই ছিল না।
সিরাজের সামরিক শক্তির মধ্যে ঐক্যের অভাবঃ সিরাজউদ্দৌলার সামরিক বাহিনীর মধ্যে ঐক্যের অভাব ছিল, এজন্য বিশাল সৈন্যবাহিনী থাকা সত্ত্বেও পলাশীর প্রান্তরে তাকে পরাজিত হয়। সৈন্যবাহিনীতে যদি মির মদন ও লাল মোহনলাল এর মত সুদক্ষ সেনাপতি প্রতিফলন যদি না ঘটাতো তাহলে হয়তোবা বাংলার ইতিহাসে আরও এটাকে অপমানজনক যুদ্ধ বলা হত।
নবাবের সিদ্ধান্তহীনতাঃ নবাব সিরাজউদ্দৌলার সিদ্ধান্তহীনতা পলাশীর পরাজয়ের জন্য বেশি দায়ী মনে করা হয়। তিনি ক্ষমতা গ্রহণ করা থেকে পতন পর্যন্ত প্রতিক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করেছিলেন। তিনি সিদ্ধান্ত হীনতার জন্য মীর জাফরকে পদর্শিত করা উচিত ছিল কিন্তু তিনি তাকে পদচিত করে নাই।
এছাড়াও যুদ্ধক্ষেত্রে ষড়যন্ত্রের পরিবেশ বিরাজমান ছিল তা উপলব্ধি করেও যুদ্ধবন্দের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এটাও একটি ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। কেননা ভুল সিদ্ধান্তের কারণে পরাজয় বরণ করতে হয়েছিল। নবাবের পরাজয় বরণ করতে হয়েছিল।
জনসাধারণের নির্লিপ্ততাঃ পলাশীর যুদ্ধ ছিল জনসাধারণের সমর্থন ও সহযোগিতাহীন সেনাবাহিনী ও বেনিয়াদের মধ্যে প্রতিযোগিতার সমতুল্যর মত কারণ এই যুদ্ধে জনসাধারণ বুঝতে পারেনি যে এটা কি হচ্ছে তাই পলাশীর পরাজয়ের পরও দীর্ঘকাল বাংলার জনগণ বুঝতে পারেনি।
যে এখন বাংলার নবাব ইংরেজি ওরা নাকি অন্য কেউ পলাশীর যুদ্ধের সময় যে জনগণ গুলো দাঁড়িয়ে ছিল এবং এই যুদ্ধক্ষেত্র দেখতে ছিল যদি প্রত্যেকটা ব্যক্তি শুধুমাত্র তাদের পায়ের জুতা দিয়ে ঢিল ছুড়তো তাহলেও ইংরেজরা পরাজয় বরণ করত কিন্তু এখানে জনগণ তারা স্তব্ধ কিছুই বলেনি তারা শুধু দর্শক হিসেবে যুদ্ধ উপভোগ করছেন।
পলাশীর যুদ্ধের গুরুত্ব
পলাশীর যুদ্ধের গুরুত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা এই যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়ে যায় এবং ইংরেজরা এদেশে শাসন করে থাকে। তাই এই পলাশীর যুদ্ধের গুরুত্ব অনেক রয়েছে।
এ পলাশীর যুদ্ধের কারণে অর্থনৈতিকভাবে এদেশের মানুষ জন অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইংরেজরা এদেশের ধনসম্পদ লুটে নিয়ে তাদের দেশে নিয়ে যাচ্ছিলেন। বিপুল প্রভাব বিস্তার শুরু করে এর ফলে বঙ্গদেশের সম্পদ অর্থ ইংরেজদের হাতে চলে যায়।
কর্ণাটকের যুদ্ধে এসব সম্পদ ফরাসিদের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হয়। এভাবে করনাটিকে তৃতীয় যুদ্ধে বঙ্গের সম্পদের বলে ইংরেজরা দাক্ষিণাত্য ফরাসিদের পরাজিত করে পলাশীর যুদ্ধ বঙ্গ দেশে এবং পরের সমগ্র ভারতীয় উপমহাদেশে ইংরেজরা বিজয়ের পথ প্রশস্ত করে দেয়।
পলাশীর যুদ্ধের পর দেশে মুঘল ও ভারতীয় শিক্ষা সভ্যতার স্থানে ইউরোপীয় সভ্যতা আত্মপ্রকাশ শুরু করে বাংলা তথা ভারতীয় উপমহাদেশে মুসলিম শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিপদের মধ্যে হতে থাকে।
পলাশীর যুদ্ধের ফলাফল
পলাশীর যুদ্ধের ফলাফল ইতিহাসের পাতায় লেখা থাকবে। যা ভারতীয় উপমহাদেশে এই পলাশীর যুদ্ধের কথা এর ফলাফল এবং নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয় সবার মনে দুঃখ থেকে যাবে। তাই এটা আমাদের মনে রাখা খুবই দরকার। পলাশীর যুদ্ধকে ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ। যুদ্ধ সময়ের অন্যতম বলা যেতে পারে।
এটা ভারতের রাজনৈতিক ভাগ্য পরিবর্তনের ইতিহাস অন্যতম। একটি ঘটনা এই যুদ্ধের পরিনাম ছিল সুদূর প্রসারী। এ প্রসঙ্গে ঐতিহাসিকরা বলে থাকেন যে ব্রিটিশদের ক্ষেত্রে এটা একটি সহজভাবে এ দেশকে জয় করেছিল।
তাদের শুধুমাত্র চিন্তা এবং বুদ্ধিমত্তার কারণে আমাদের ভারতীয় উপমহাদেশের মানুষজন সহজ সরল থাকার কারণে এই সুযোগ তারা কাজে লাগিয়েছিলেন। তাই এখান থেকে আমাদের শিক্ষা নেওয়া দরকার। তবে পলাশীর যুদ্ধের কারণ ও তাৎপর্য এই পলাশীর যুদ্ধের ফলাফলের ওপর প্রভাব পড়েছিল।
রাজনৈতিক ফলাফলঃ পলাশীর যুদ্ধের ফলে বাংলা বিহার ও উড়িষ্যার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়। পলাশীর যুদ্ধের ফলে ইংরেজরা কোম্পানির মর্যাদা লাভ করে। পলাশীর যুদ্ধের পর ইংরেজরা এদেশের নবাবের ক্ষমতা প্রাপ্তি কিংবা বিচ্যুতি তাদের মেজাজ-মর্যের উপর নির্ভর করতে থাকে। এছাড়াও বিশ্বাসঘাতকতার প্রতিদান মীরজাফর নবাবী লাভ করে কিন্তু ক্ষমতা থাকে রবার্ট ক্লাইভ হাতেই।
শুধুমাত্র পুতুল সরকার হিসেবে তাকে ব্যবহার করা হয়। স্বাধীনতা হারানোর পর এ দেশবাসী হারালো তাদের নাগরিক অধিকার এবং তাদের কথা বলার অধিকার এছাড়াও তারা বাক স্বাধীনতা বলতে তাদের কিছু ছিল না।
সম্প্রদায়গত ফলাফলঃ পলাশীর যুদ্ধের ফলে ভারতীয় মুসলমানগণ এতদিন প্রচন্ড প্রতাপ এ নিজেদের মর্যাদা সমুন্নত করেছিল। কিন্তু পলাশীর যুদ্ধের পর তাদের আধিপত্য প্রাধান্য ইংরেজরা ক্ষমতায় বসায় হিন্দুরা তাদের সমর্থন দানের প্রতিদান স্বরূপ নানা রকম সুযোগ সুবিধা পেলেও মুসলিমরা তেমন একটা সুযোগ সুবিধা পায়নি। এছাড়াও রবার্ট ক্লাইভ তারা হিন্দু মুসলিম এর মাঝে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করার জন্য বিভিন্ন কাজগুলো করতেন।
অর্থনৈতিক ফলাফলঃ মীরজাফরের সাথে চুক্তি মোতাবেক পলাশীর যুদ্ধের পর ইংরেজরা প্রচুর অর্থ সম্পত্তির অধিকার হয়ে যায়। তাদের ব্যবসা-বাণিজ্যের তখন চলতে থাকে এর ফলে এদের অর্থনৈতিক ভিত্তি সফল হতে থাকে।
তারা এ দেশ থেকে অর্থগুলো লুন্ঠন করে নিয়ে তাদের দেশে চলে যায়। যেহেতু মুসলমানরা ছিল ইংরেজদের বিরুদ্ধে পক্ষ তাই পলাশীর যুদ্ধের পর তারা ইংরেজদের রোশনলে পড়ে নাজুক হয়ে যায়। এজন্য পলাশীর যুদ্ধের কারণ এবং ফলাফল ভারত উপমহাদেশের প্রতিটা জনগণের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
পলাশীর যুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকদের পরিণতি
পলাশীর যুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকদের পরিণতি কি হয়েছিল তাদের এই বিশ্বাসঘাতকতার কারণে এদেশের মানুষ অশান্তিতে ছিলেন। যার পরিণতিতে সৃষ্টিকর্তা তাদের এই পৃথিবীতেই শাস্তি দিয়েছিলেন। পলাশীর যুদ্ধে যারা বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলেন তারা এই পৃথিবীতে বিভিন্ন ধরনের সমস্যায় জর্জিত হয়ে মৃত্যুবরণ করে।
মানুষ তাদেরকে ঘৃণার চোখে দেখে মানুষ তাদেরকে ভালোর চোখে দেখেনি। কেননা তারা ষড়যন্ত্র করেছিল পলাশীর যুদ্ধের সময়। এজন্য পলাশীর যুদ্ধের কারণ ও তাৎপর্য আমাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা তাদের এই ষড়যন্ত্র অন্যতম কারণ ছিল। নিম্নে তাদের বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হলো,
প্রত্যেকটা কাজের বিপরীত প্রতিক্রিয়া রয়েছে। তারা যে ষড়যন্ত্র করেছিল এর পরিণতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। পলাশীর যুদ্ধে সবচাইতে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলেন মীরজাফর আর মীরযাফর এর শেষ পরিণত হয়েছিল তার নিজ জামাতা মীর কাসেম তাকে ক্ষমতাচ্যুত করেছিলেন এবং পরবর্তীতে এই মীরজাফর দুরারোগে আক্রান্ত হয়ে বিনা চিকিৎসায় ভুগে ভোগে মারা যান।
এরপর সবচাইতে হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটিয়েছিলেন মির জাফরের পুত্র মিরন যে নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে হত্যা করেছিলেন। এজন্য নবাবের মা এমন অভিশাপ দিয়েছিলেন যার ধরণ সৃষ্টিকর্তা তার উপর সেই অভিশাপ বর্ষিত করেছিল মীর মিরন এর ওপর যে তাবুতে বজ্রপাতের মাধ্যমে পুড়ে গিয়ে মারা যায়।
মোহাম্মাদি বেগ যে নবাবের বিরুদ্ধে কাজ করেছিলেন তার মৃত্যুকরণ কাহিনী হয়েছিল তিনি মস্তিষ্ক বিকৃতি হয়ে কূপের ভিতর ঝাপ দিয়ে আত্মহত্যা করে মারা যায়। এরপর মীর কাসিম সে ইংরেজদের ভয়ে তিনি বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াতেন এবং রাস্তায় পারাপার হতে গিয়ে তিনি দুর্ঘটনায় মারা যান।
নবাব সিরাজউদ্দৌলার খালা ঘসেটি বেগম তার মৃত্যু হয়েছিল নৌকাডুবির মাধ্যমে আর এই ঘটনা ঘটিয়েছিলেন মীর মিরন। ইয়ার লতিফ নিরুদ্দেশে হারিয়ে গেছে আজ পর্যন্ত তার কোন খোঁজ খবর পাওয়া যায়নি। ধারনা করা হয় তাকে হত্যা করা হয়েছে। মহারাজ নন্দকুমার অর্থ তহবিল কেলেঙ্কারির কারণে তাকে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলিয়ে মারা হয়।
বিষাক্ত সাপের কামড় খেয়ে মারা যান দানা শাহ। রায় দুর্লভ যে জেলখানার ভিতরে কষ্ট ভোগ করতে করতে ভগ্ন স্বাস্থ্য নিয়ে মৃত্যুবরণ করেন। অমিত চাঁদ যিনি রাস্তায় ঘুরে বেড়াতেন পাগলের মত এবং রাস্তায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। ওয়াটসন দুরারোগ্যে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। স্ক্রাপটনের মৃত্যু হয় যখন তিনি জাহাজ আসতে ছিলেন কলকাতায় সেক্ষেত্রে জাহাজটি ডুবে মারা যান।
এই যুদ্ধের সবচাইতে মূল খলনায়ক রবার্ট ক্লাইভ যিনি এদেশ থেকে প্রচুর সম্পদ নিয়ে তার নিজ দেশে দিয়েছিলেন কিন্তু তার নিজ দেশের লোকজন তাকে অর্থ কেলেঙ্কারির দায়ে সংসদে তাকে দুর্নীতি হিসেবে আখ্যায়িত করলে সে এই অপমান সহ্য করতে না পেরে বাথরুমে ঢুকে খুর দিয়ে নিজের গলায় কেটে আত্মহত্যা করে।
এজন্য বলা যায় যে এভাবেই পলাশীর যুদ্ধের বিশ্বাসঘাতকদের করুন মৃত্যু হয়েছিল। যা স্বাভাবিক মৃত্যু নয় তাই বিশ্বাসঘাতকতার প্রতিফলন এই পৃথিবীতেই সৃষ্টিকর্তা দিয়ে থাকেন। এজন্য পলাশী যুদ্ধের কারণ ও তাৎপর্য আমাদের নিকট খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং শিক্ষনীয় বিষয়। যাতে করে এই ধরনের কেউ আর বিশ্বাসঘাতকতা না করে। কেননা পলাশীর যুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকদের পরিণতি শেষ পর্যন্ত করুন মৃত্যু হয়েছিল।
আজকের পোস্টটি লিখেছেন,
মোঃ মাহমুদুল ইসলাম
বি,এ অনার্স, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ,
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।
এম, এ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।
শেষ কথাঃ পলাশীর যুদ্ধের কারণ ও তাৎপর্য বা ফলাফল এবং নবাবের পরাজয়ের কারণ
পরিশেষে বলা যায় যে পলাশীর যুদ্ধে নবাবের কিছু ভুল থাকার কারণে হয়তো তিনি পরাজয় বরণ করেছিলেন কিন্তু যারা তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল তাদের শেষ পরিণতি বেশি ভালো হয়নি। এজন্য পলাশীর যুদ্ধের কারণ ও তাৎপর্য ফলাফল আমাদের নিকট খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং এখান থেকে শিক্ষা নিতে হবে। আশা করি আজকের এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনি উপকৃত হয়েছেন। যদি আজকের এই পোস্টটি ভাল লাগে তাহলে আপনার বন্ধু-বান্ধবের নিকট শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ
এম আর মাহমুদ ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url