মুহাম্মদ বিন কাসিমের সিন্ধু বিজয় এর কারণ ও ফলাফল সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
মুহাম্মদ বিন কাসিমের সিন্ধু বিজয় এর কারণ ও ফলাফল ইসলামের ইতিহাসে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই এই সিন্ধু বিজয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানা খুবই প্রয়োজন। চলুন, আরবদের সিন্ধু বিজয়ের কারণ সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
হাজ্জাজ বিন ইউসুফ এই সিন্ধু কে দখল করার জন্য কয়েকবার অভিযান প্রেরণ করেছিলেন কিন্তু তিনি বারে বারে ব্যর্থ হয়েছিলেন। তাই তিনি মোহাম্মদ বিন কাসিমকে এই দায়িত্ব দিয়েছিলেন। তাই মুহাম্মদ বিন কাসিমের সিন্ধু বিজয় সম্পর্কে জানতে আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়তে থাকুন।
পোস্টসূচিপত্রঃমুহাম্মদ বিন কাসিমের সিন্ধু বিজয় এর কারণ ও ফলাফল সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
মুহাম্মদ বিন কাসিম কে ছিলেন
এখন আমরা জানবো মুহাম্মদ বিন কাসিম কে ছিলেন। মোহাম্মদ বিন কাশেম এর পূর্ণ নাম হল ইমাম উদ্দিন মুহাম্মদ বিন কাসিম আসসাকাফি। তবে মুহাম্মদ বিন কাসিম হিসেবে সবার কাছে পরিচিত। ৬৯৫ খ্রিস্টাব্দে সৌদি আরবের সাকি্ফ গোত্রে তার জন্ম হয়। অনেক ছোটবেলায় তার পিতা মারা যায় এরপর তিনি চাচার কাছে লালিত পালিত হয়।
তার চাচার নাম হাজ্জাজ বিন ইউসুফ যিনি উমাইয়া গভর্নর ছিলেন। যাহোক তার চাচাতো বোন জোবাইদা কে বিবাহ করেন। তার চাচার তত্ত্বাবধানে থাকার কারণে তিনি যুদ্ধ বিষয়ে পারদর্শী হন এবং পারস্যের গভর্নর দেওয়া হয়। ৭১২খ্রিস্টাব্দে মাত্র ১৭ বছর বয়সে তিনি সিন্ধু বিজয় সহ আরো বিভিন্ন অভিযান পরিচালনা করেন।
তিনি সিন্ধু নদসহ সিন্ধু ও মুলতান এবং অন্যান্য অঞ্চলে জয় করেন। তিনি একজন চৌকস এবং পারদর্শী যোদ্ধা ছিলেন। যার কারণে তিনি বিভিন্ন অঞ্চল দখল করেন যুদ্ধ করার মাধ্যমে। সিন্ধু অভিযান শেষ করার পর তিনি দেশে ফিরে আসেন কিন্তু সেখানে সোলায়মান ইবনে আব্দুল মালেক সিংহাসনে গ্রহণ করে নেন।
মুহাম্মদ বিন কাসিমকে তখন কারাগারে বন্দি করা হয় এবং কারাগারেই মাত্র চব্বিশ বছর বয়সেই মৃত্যুবরণ করে। তিনি ছিলেন একজন মুসলিম সেনাপতি এবং শাসক হিসেবে সবার কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তবে তার মৃত্যু নিয়ে একটি কাল্পনিক গল্প রয়েছে, পিতার মৃত্যুর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য রাজা দাহিরের দুইজন কন্যা ছিল সূর্যদেবী ও পরিমল দেবী।
তারা দুজনে কাশেমের হাতে অপমানিত লাঞ্ছিত হওয়ার কথা খলিফার নিকট অভিযোগ দেয়। তখন খলিফা কাসিমকে বস্তায় বন্দি করে ঘোড়ার পিছনে বেধে টেনে নিয়ে যেতে বলে। এভাবে তার মৃত্যুর কথা বর্ণনা আছে, যদিও এই দুই কন্যা মিথ্যা কথা বলেছিল। এই ঘটনাটি ঐতিহাসিকরা ভিত্তিহীন বলে উল্লেখ করেছেন। কেননা এটার কোনো প্রমাণ নেই। যাহোক আশা করি মোটামুটি ধারণা পেয়েছেন যে মুহাম্মদ বিন কাসিম কে ছিলেন।
আরবদের সিন্ধু বিজয়ের কারণ
আরবদের সিন্ধু বিজয়ের কারণ গুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা আরবের মুসলমানদের সিন্ধু বিজয়য়ের পেছনে অনেক কারণ রয়েছে। নিম্নে কারণগুলো বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
ইসলাম ধর্মের প্রসার ও প্রচারঃ প্রত্যেক খলিফাই নিজেকে ইসলামের ধারক ও বাহক হিসেবে ইসলাম ধর্ম প্রচার ও প্রসারের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর রাঃ সর্বপ্রথম ইসলাম প্রচারের সাথে খেলাফতের বিস্তৃতি ঘটিয়েছিলেন এবং সেই সময় পারস্য বিজিত হলে পার্শ্ববর্তী ভারতীয় উপমহাদেশ অভিযানের পরিকল্পনা করেছিলেন। খলিফা ওয়ালিদ সেই পরিকল্পনা প্রকৃতপক্ষে বাস্তবায়ন করেছেন।
ধন সম্পদের প্রতি আকর্ষণঃ অনেক আগে থেকেই আরব সব বিভিন্ন দেশের বণিকগণ সাগর পাড়ি দিয়ে ভারতে ব্যবসা-বাণিজ্য করত। ভারতের ধন-সম্পদ আরবদের কাছে আকর্ষণ করেছিল। যার ফলে তারা সিন্ধু অভিযান করেন ঐতিহাসিক দের মতে রাজ্য বিজয় নয় বরং ধন সম্পদ অর্জন করার লোভী তারা এই অভিযান করেছিলেন।
আরব বিদ্রোহীদের আশ্রয় দানঃ আরবদের সিন্ধু বিজয়ের কারণ গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ইরাকের শাসনকর্তা হাজ্জাজ বিন ইউসুফ তার কঠোর শাসনে অতিষ্ঠ হয়ে কিছু লোক বিদ্রোহ করে হিন্দুতে আশ্রয় নিয়েছিল। তৎকালীন সিন্ধু রাজা দাহির তাদের আশ্রয় দিলেও হাজাজ বিন ইউসুফ তাদেরকে ফেরত চায় কিন্তু রাজা দাহির তা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। তাই হাজ্জাজ বিন ইউসুফ রাজা দাহের সময় উচিত শাস্তি দেওয়ার জন্য এই অভিযান প্রেরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
অরক্ষিত সীমান্তঃ পারস্য বিজয়ের ফলে মুসলিম সাম্রাজ্যের সীমানা সিন্ধুর সীমানার সাথে মিলিত হয়েছিল। রাজা দাহিরের সাহায্য নিয়ে ইরাকি বিদ্রোহীরা প্রায় মুসলিম সীমান্তে হানা দিয়েছিল। তাই অরক্ষিত সীমান্ত সুরক্ষিত করার জন্য আরবরা সিন্ধু আক্রমণ করেছিলেন।
মুসলমানদের রাজ্য বিস্তার নীতিঃ সিন্ধু দেশের অধিকারের প্রাক্কালে আরব সাম্রাজ্য আটলান্টিক মহাসাগর হতে ভারতের সীমান্ত এবং কাস্পিয়ান সাগর হতে মিশর পর্যন্ত বিস্তার লাভ করেছিল। খলিফা আল ওয়ালীদের সময়ে মুসলিম সাম্রাজ্য সম্প্রসন চূড়ান্ত পর্যায়ে যখন যায়।
তারই সূত্র ধরে হাজ্জাজ বিন ইউসুফ খলিফার অনুমতি নিয়ে পূর্ব দিকে সাম্রাজ্য সম্প্রসনের অংশ হিসেবে সিন্ধু অভিযান করেছিলেন। এক্ষেত্রে ঐতিহাসিকগণ বলে থাকেন ভারতের বাইরে সামরিক সাফল্য আরব গনকে রাজযোগ করেছিল এবং ভারতের আক্রমণের পর সাথে আরবদের লক্ষ্য ছিল রাজ্য বিস্তার করা।
সিন্ধু অভিযানের প্রত্যক্ষ কারণঃ অনেক কারণে আরবদের সাথে সুন্দর সম্পর্ক যখন অবনতি ঘটতে থাকে। সেই মুহূর্তে সিন্ধুর দেবল বন্দরে নিকট জলদস্যু কর্তৃক আরবদের বাণিজ্য জাহাজ লন্ঠিত হলে মুসলমানদের দ্বারা সিন্ধু আক্রমণের মূল কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
উল্লেখ্য যে সিংহলে বসবাসরত আরব বণিকদের বাণিজ্য দ্রব্য মৃত বণিকদের পরিবার পরিজনসহাজ বিন ইউসুফের জন্য সিংহলের রাজা কর্তৃক প্রেরিত মূল্যবান কিছু উপঢৌকন আটটি জাহাজ আরবের দিকে রওনা হয়েছিল কিন্তু সেই জাহাজগুলো দেবল বন্দরে আসার পর জলদস্যুরা লন্ঠিন করে নেয়।
বিন ইউসুফ রাজা দাহীরের নিকট ক্ষতিপূরণ ও জলদস্যদের শাস্তি দাবি করলে উক্ত দাবি তিনি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।
মুহাম্মদ বিন কাসিমের সিন্ধু বিজয়
মুহাম্মদ বিন কাসিমের সিন্ধু বিজয় ইসলামের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। কেননা ভারতীয় উপমহাদেশে প্রথম মুসলিম শাসক হিসেবে সিন্ধু বিজয় লাভ করেছিলেন মোহাম্মদ বিন কাসিম। তিনি হাজ্জাজ বিন ইউসুফ এর জামাতা ছিলেন। তাই হাজ্জাজ বিন ইউসুফ যখন রাজা দাহিরের জবাবে ক্রদ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। তখন তিনি ওবায়দুল্লাহ ও বুদাইলের নেতৃত্বে পরপর দুটি অভিযান প্রেরণ করেছিলেন।
কিন্তু তারা সাফল্য অর্জন করতে পারে নাই। অবশেষে সে ভাতিজা ও জামাতা মোহাম্মদ বিন কাশেম এর নেতৃত্বে তৃতীয় অভিযান পাঠান। ১৮ বছর বয়সের এই তরুণ সেনাপতি মোহাম্মদ বিন কাসিম ৭১২ খ্রিস্টাব্দে মেকরানের মধ্য দিয়ে সিন্ধুর দেবল বন্দরে দিকে রওনা হয়েছিলেন। খুব সহজেই মুহাম্মদ বিন কাসিম সিন্ধু বিজয় তার অধিকার নিয়ে এসেছিলেন। এই ধরনের জয় করে রাওয়ারের দিকে অগ্রসার হন।
রাওয়ারের রাজা তার সমস্ত সৈন্য বাহিনীর সমাবেশ করেও এই যুদ্ধে পরাজিত নিহত হয়েছিলেন। রাজা দাহীরের স্ত্রী ও পুত্র রাওয়ারের দুর্গে আশ্রয় গ্রহণ করেছিলেন কিন্তু তারপরও রক্ষা হয়নি বিজয় উল্লাহ সে মুহাম্মদ বিন কাসেম ব্রাক্ষণ্যবাদের দিকে অগ্রসর হন এবং বিনা যুদ্ধে এই নগরী অধিকার করেছিলেন।
তারপর তিনি ৭১৩ খ্রিস্টাব্দে এর মধ্যে সমগ্র বলতে অধিকার করে পাঞ্জাবের কিছু অংশ জয় করেন। এভাবে রাজা দাহিরের সমস্ত রাজ্য মুসলমানদের হাতে চলে এসেছিল।
আরবদের সিন্ধু বিজয়ের প্রাক্কালে ভারতের সামাজিক অবস্থার বিবরণ
আরবদের সিন্ধু বিজয়ের প্রাক্কালে ভারতের সামাজিক অবস্থার বিবরণ নিম্নে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো,
জাতিভেদ প্রথার অভাবঃ মুসলিম বিজয়ের প্রাক্কালে ভারতীয় উপমহাদেশে হিন্দুদের অবস্থান ও প্রভাব ছিল স্পষ্ট। প্রাথমিক অবস্থায় হিন্দু সমাজে উদারতা বিদ্যমান ছিল কিন্তু পরবর্তীকালে তাদের ভেতরের সংকীর্ণতা দাম্ভিকতা ও জাতিভেদ প্রথার বিস্তার লাভ করে।ব্রাহ্মণ ক্ষত্রিয় শুদ্র বিভিন্ন ধরনের শ্রেণীতে ভাগ হয়ে যায়। এই চার ধরনের লোক সামাজিক মেলামেশায় তেমন একটা মিলতো না।
ব্রাহ্মণ ক্ষত্রিয়দের সুবিধাঃ ব্রাহ্মণ ও ক্ষত্রিয়তা অধিকাংশ সুবিধা প্রাপ্ত হয় এবং উচ্চ জাতি হিসেবে পরিচিত লাভ করে। তাদের সুবিধার্থে অন্যান্য সম্প্রদায়কে ব্যবহার করা হতো পৃথিবীর যেখানে যা কিছু আছে। তা ব্রাহ্মণদের সম্পত্তি বলেই পরিগণিত হবে এরকম একটি তাদের বৈশ্য ও শুদ্র জাতি সমাজের নিম্ন স্তরে বলে তাদের বিবেচিত করা হতো।
সতীদাহ প্রথা ও অস্পৃশ্যতাঃ আরবদের সিন্ধু বিজয়ের প্রাক্কালে ভারতের সামাজিক অবস্থার বিবরণ গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো নারীদের অপমান করার প্রথা ছিল। সেটা শাসকগোষ্ঠীও ধর্মীয় নেতারা চাপিয়ে দিয়ে সতীদাহ প্রথা যা স্বামীর মৃত্যু হলে স্ত্রী কেউ তার সাথে জ্বলন্ত আগুনে পুড়ে ফেলা হতো। সমাজে অস্পৃশ্যতার ধরনও ছিল এক রকম যে অধিকাংশ লোক নিরামিষ এবং তারা পিয়াজ ও রসুন খেত না।
নিম্ন জাতির লোকদের দুরবস্থাঃ নিম্ন জাতির লোক যারা ছিল তারা অধঃপতিত বলে বিবেচিত হতো এমনকি ধর্ম-কর্ম পর্যন্ত তাদের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছিল। ঐতিহাসিক আলবেরুনী তার কিতাবুল হিন্দে বলেন হিন্দুদের এই রূপ সংকীর্ণ ভাবকে কঠোর ভাষায় সমালোচনা করেছিলেন।
তিনি বলেছেন যে কোন বৈশ্য এবং সূত্র বেদ অধ্যায়ন করলে শাস্তি হিসেবে তার জিবা কেটে দেওয়া হতো ভিন্ন জাতির মধ্যে অন্তর বিবাহিত পানাহার নিষিদ্ধ ছিল এমনকি সূত্র গ্রহণের স্পর্শ অপবিত্র বলে গণ্য করা হতো জাতীয় মন্দ ছিল তাদের।
দাসপ্রথাঃ ভারতবর্ষের দাসপ্রথা নামে আরেকটি লজ্জা জনক ও হীন প্রথা ছিল এই প্রধানমন্ত্রী অনেক নিরীহ লোক নির্যাতিত হতো যারা দাস হিসেবে সমাজে। পরিচিত ছিল তাদের সামাজিক মর্যাদা দূরের কথা ন্যূনতম অধিকারটুকু ছিল না
নারীর অবস্থাঃ সমাজে নারীর অধিকার ছিল অত্যন্ত সীমিত নারীদেরকে সাধারণত ভোগের সামগ্রী হিসেবে ব্যবহার করা হতো। সমাজের পুরুষদের বহুবিবাহ প্রথার প্রচলন ছিল কিন্তু নারীদের দ্বিতীয় বিবাহের কোন বিধান ছিল না। বিধবাদের সম্পত্তি বিক্রয় করা বন্ধক দেওয়া বা দান করার কোন অধিকারও ছিল না। নারীদেরকে সম্পত্তির একটা নির্দিষ্ট অংশ ভোগ করার অধিকার দেওয়া হতো। একে হিন্দু সমাজে ত্রিধন বলা হতো
কু-প্রথাঃ অনেকগুলো কুপ্কেরথা সমাজে ধর্মের মর্যাদা দেওয়া হত নরবলি কন্যা শিশু সন্তানকে গঙ্গার জলে ভাসিয়ে দেওয়া সতীদাহ প্রদাহ ইত্যাদি ধর্মের কাজ বলে গণ্য করা হতো।
তাই মোহাম্মদ কাসেমের এই পরিস্থিতিতে গুরুত্ব আলোচনা প্রেক্ষিতে বলা যায় যে মুসলিম বিজয়ের প্রাক্কালে ভারতীয় উপমহাদেশের অনৈক্য ও যুদ্ধবিগ্রহ মুসলমানদেরকে ভারতীয় উপমহাদেশে জোয়ার পথ সুগাম করে দিয়েছিল।
অধিকাংশ ভারতীয় উপমাদের সামাজিক শ্রেণীবৈষম্য ভেদাবৎ হিন্দুদেরকে অতিশয় দুর্বল করে ফেলেছিল। ফলে বৈদেশিক শক্তি তথা মুসলিম শক্তির সহজে ভারতীয় উপমহাদেশে রাজ্য স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছিল।
আরবদের সিন্ধু বিজয় একটি নিষ্ফল উপাখ্যান উক্তিটি কার
আরবদের সিন্ধু বিজয় একটি নিষ্ফল উপাখ্যান উক্তিটি কার তাহলে এই উক্তিটি করেছিলেন ঐতিহাসিক লেনপুল। যিনি বলেছিলেন ভারতবর্ষ ইসলামের ইতিহাসে আরবদের সিন্ধু বিজয় ছিল একটিভ্যান যা নিষ্ফল বিজয় এ প্রসঙ্গে ঈশ্বরী প্রসাদও বলেছিলেন আরব দেশের রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে একটি অক ইঞ্চিৎকর ঘটনা যা তাৎক্ষণিক স্বীকার করা যেতে পারে।
প্রথমতঃ মুহাম্মদ বিন কাসিমের সিন্ধু বিজয় এর ফলে সুবিশাল ভারতবর্ষের সিন্ধু মুলতান ছাড়া উত্তর ভারতের অন্যান্য রাজ্য এবং সমগ্র দক্ষিণ ভারতে মুসলিম বিজয়ের কোন প্রতিক্রিয়ায় অনুভূত দেখা যায়নি। এছাড়া আরবদের ক্ষমতা কর্তৃত্ব কেবলমাত্র উপমহাদেশের অত্যন্ত ক্ষুদ্র পরিসরে বিদ্যমান শুরু হয়েছিল।
দ্বিতীয়তঃ আরবেদের ভারতে অভিযানের সাফল্য ৭১৫ সালে মুহাম্মদ বিন কাসিমের অভিযানে মৃত্যুর মধ্যে সিন্ধু দেশ কতগুলো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্বাধীন রাজ্যে বিভক্ত হয়ে গেছিল। আর একজন সিন্ধু বিজয়ের পর সেখানে যেসব রাস্তাঘাট দালানকোঠা নির্মাণ করেন তা অল্পকালের মধ্যেই আবার ধ্বংস হয়ে যায়।
তৃতীয়তঃ আরবদের সিন্ধু বিজয় ইসলামী খেলাফতের জন্য সফল বয়ে আনতে পারে নাই। এই বিজয়ের ফলে ভারতবর্ষে ধর্ম হিসেবে ইসলাম প্রসার লাভ করে নাই এ বিষয়ে ঐতিহাসিকগণ বলেছেন ইসলামকে ভারতবর্ষে একটি রাজনৈতিক শক্তিতে উন্নত করা হলেও আরব তেমন একটা ধর্মীয় বিষয়ে কাজ করতে পারেনি সিন্ধু বিজয় সাংস্কৃতিক তাৎপর্য যাই হোক না কেন রাজনৈতিক ক্ষেত্রে হিন্দু ঘটনার একটি নিষ্ফল পরিসমাপ্তি ঘটেছিল।
তাই উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষাপটে বলা যেতে পারে যে আরব দেশ হিন্দু বিজয় ভারতের রাষ্ট্র ইসলামের ইতিহাসে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে কিঞ্চিত কর অকিঞ্চিত কর ছিল আশা করি বুঝতে পেরেছেন যে আরবদের সিন্ধু বিজয় একটি নিষ্ফল উপাখ্যান উক্তিটি কার।
আরবদের সিন্ধু বিজয়ের ফলাফল
আরবদের সিন্ধু বিজয়ের ফলাফল ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভারতীয় উপমহাদেশের জন্য। তাই আরব দেশের ফলাফল ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ নিম্নে এ বিষয় বিস্তারিত আলোচনা করা হলো,
রাজনৈতিক ফলাফলঃ রাজনৈতিক দিক দিয়ে আরব দেশ হিন্দু বিজয় তেমন একটা সাফল্য করতে পারে নাই। কেননা এই অভিযান শুধু সিন্ধু মুলতানি সীমাবদ্ধ ছিল মুসলমানগণ পরবর্তীতে সামনে অগ্রসর হননি।
যা সিন্দুতে স্থায়ী মুসলমান শাসন ধরে রাখতে পারেনি মূলত এটা খলিফাদের অভ্যন্তরীণ কোন দলের কারণে সম্ভব হয়নি। ঐতিহাসিক নেলপুল বলেন আরবের মাত্র এটি একটি নিষ্ফল বিজয় তবে এ কথাটা ঠিক যে সিন্ধু বিজয় ফলে ভারতের মুসলিম সমাজের স্থাপনের একটি সম্ভাবনায় ভবিষ্যতের হয়েছিল
সামাজিক ফলাফলঃ মুহাম্মদ বিন কাসিমের সিন্ধু বিজয় এর ফলে সর্বপ্রথম আরববাসী ভারতীয়দের সংস্পর্শ এসেছিলেন। আরব সৈনিকদের অনেকেই এখানে ধর্মান্তরের মাধ্যমে হিন্দু রমণীদের কে বিবাহ করে বসতি স্থাপন করেছিলেন। ফলে একে অপরের ভাবের আদান-প্রদান ও অবস্থানের মাধ্যমে এক নতুন কৃষ্টি কালচারের সভ্যতায় সৃষ্টি হয়েছিল।
ধর্মীয় ফলাফলঃ ধর্মীয় দিক দিয়ে ফলাফল ছিল সবচেয়ে আশাবাদী মুসলিম সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার অসংখ্য পীর দরবেশ এখানে ধর্ম সভ্যতার বাণী বহন করে নিয়ে এসেছিলেন এবং ইসলামের সাম্য মাত্র উদারতা একত্ববাদে আকৃষ্ট হয়ে নির্যাতিত হিন্দ ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন।
অর্থনৈতিক ফলাফলঃ সিন্ধু মুলতানে আরব প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হলো দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার উপকূলে আরবদের সামগ্রিক বাণিজ্যের গুরুত্ব বৃদ্ধি পেয়েছিল। তাঁর সিন্ধু বিজয় এর ফলে মালাবার উপকূলে এবং সিংহলে আরব্য উপনিবেশ গড়ে উঠেছিল এবং বাণিজ্যিক অর্থনৈতিক উন্নতি ক্ষেত্রে একে অপরের হিসেবে সম্ভাবনামায় দ্বার খুলে গিয়েছিলাম।
সংস্কৃতিক ফলাফলঃ সিন্ধু বিজয় ভারতীয় উপমহাদেশে একটি নতুন সংস্কৃতিক অঙ্গন গড়ে উঠেছিল। এর ফলে ভারতবর্ষের সর্বোত্তম দুটি ভিন্ন পন্থী ধর্মীয় মতবাদ সভ্যতা মুখোমুখি হয়। সখ্যতা ও হৃদ্রতা গড়ে ওঠে উভয়ের মতবাদীদের মধ্যে ভারতীয়রা পূর্ববর্তী দর্শন চিকিৎসা স্বাস্থ্য জ্যোতির্বিদ্যা স্থাপত্য প্রগতিতে বিশেষ স্থান দখল করে আসছিলেন।
এখন মুসলমানরা তাদের সংস্পর্শে এসে এসব কেন আহরণের সুযোগ লাভ করেছিল অন্যদিকে আরবি ও মুসলমানগণ পূর্ব হতেই প্রাচীন গ্রিক মিশরীয় মেসোপটেমীয় ও পারস্য সংস্কৃতির সাথে পরিচিতি ছিল। ফলে তাদের কাছ থেকেও ভারতীয়রা নতুন সংস্কৃতির তথ্য সংগ্রহ করতে পেরেছিলেন।
মুলতান বিজয়ঃ সিন্ধু মুলতান ছিল দুটি পাশাপাশি রাজ্য তিনি মুলতানের দিকে নজর দিয়েছিলেন। মুলতান ছিল একটি স্বাধীন রাজ্য কিন্তু এখানে শাসন ক্ষেত্রে তেমন একটা স্থিতিশীলতা বিরাজমান ছিল না। তাই মোহাম্মদ বিন কাসেম মুলতানা আক্রমণ করে অতি সহজেই তাও অধিকার করেছিলেন।
মুলতান বিজয়ের ফলে এখানে ইসলাম ধর্মের বেশি বিকাশ সাধিত হয়েছিল। আমরা নিঃসন্দেহে বলতে পারে যদিও রাজনৈতিক দিক ছিল কিন্তু স্থায়ী ফল তেমন একটা লাভ করেনি। তারা ভারতীয় উপমহাদেশে পরবর্তী মুসলিম শাসনের ভিত রচিত হয়েছিল ধর্মীয় সামাজিক অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে। এটা ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করতে সমর্থ হয় তাই ঐতিহাসিকগণ বলেন যে আরবদের সিন্ধু বিজয়ের ফলাফল শুধুমাত্র অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক ক্ষেত্র গুরুত্ব বেশি হয়েছিল।
আজকের এই আর্টিকেলটি যিনি লিখেছেন তার পরিচয় হলো
মোঃ মাহমুদুল ইসলাম
বি, এ অনার্স, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা
এম,এ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।
আমাদের শেষ কথা
রিশেষে বলা যায় যে মুহাম্মদ বিন কাসিমের সিন্ধু বিজয় এর ফলে ভারতীয় উপমহাদেশে ইসলামের একটি প্রবেশদ্বার বলা হয়ে থাকে। এর পরবর্তীতে মুসলিমরা এ দেশে বসবাস করা শুরু করে এবং সেখানে স্থায়ীভাবে ইসলাম প্রচার করতে থাকে। তাই সিন্ধু বিজয় ইসলামের ইতিহাসে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি আজকের এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনি উপকৃত হয়েছেন। যদি আজকের এই পোস্টটি আপনার ভালো লাগে তাহলে আপনার বন্ধু বান্ধবের মাঝে শেয়ার করবেন।ধন্যবাদ
এম আর মাহমুদ ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url