1857 সালের সিপাহী বিদ্রোহের কারণ ও ফলাফল সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
ভারতীয় উপমহাদেশের জনগণের জন্য 1857 সালের সিপাহী বিদ্রোহের কারণ ও ফলাফল সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ। কেননা এর মাধ্যমেই তারা স্বাধীনতা ফিরিয়ে পেয়েছিলেন। চলুন, সিপাহী বিদ্রোহ সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
ভারতীয় উপমহাদেশ সকল শ্রেণীর লোকজন এই বিদ্রোহে অংশগ্রহণ করার পরেও এই মহাবিদ্রোহ হতে তারা পরাজয় বরণ করেছিল। কারণ তাদের মাঝে ঐক্যের অভাব ছিল। তাই 1857 সালের সিপাহী বিদ্রোহের কারণ সম্পর্কে জানতে পোষ্টটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
পোস্টসূচিপত্রঃ1857 সালের সিপাহী বিদ্রোহের কারণ ও ফলাফল সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
সিপাহী বিদ্রোহ
১৮৫৭ সালের ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সেনাবাহিনীর সিপাহীদের মধ্যে যে বিদ্রোহ হয় প্রকৃতপক্ষে তার নামই সিপাহী বিদ্রোহ। এই বিদ্রোহ উত্তর প্রদেশ মধ্যপ্রদেশ দিল্লি অঞ্চল সহ আরো অনেকগুলো অঞ্চলে শুরু হয়েছিল। এসব অঞ্চলগুলোতে সাধারণত ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সৈন্য বাহিনীরা তারা বিদ্রোহীদের দমন করতে অনেক কষ্ট হয়েছিল।
১৮৫৮ সালের গোয়ালিয়র যুদ্ধের বিজয় করার পর এটা বিদ্রোহ অনেকটা কমে গিয়েছিল। এই বিদ্রোহকে অনেকে ভারতের স্বাধীনতা বিদ্রোহ মনে করে কেউবা জাতীয়তাবাদী বিদ্রোহ অথবা মহাবিদ্রোহ মনে করে।
আবার অনেকে গণঅভ্যুদান আন্দোলনও মনে করে। এই বিদ্রোহের বড় বড় নেতা ছিল যাদের নাম মঙ্গল পান্ডে নানাসাহ তাতিয়া টুপি ঝাসির রানী লক্ষ্মীবাঈ ইত্যাদি।
সিপাহী বিদ্রোহের কারণ হিসাবে মনে করা হয় যে, এক ধরনের রাইফেল ছিল যাতে এর গুলিতে ব্যবহার করা হয়েছিল গরুর চর্বি ও শুয়োরের চর্বি। যা তারা প্রচারণা শুরু করে এতে করে হিন্দু এবং মুসলমানরা যেন এটা ব্যবহার না করে।
কেননা রাইফেলের গুলি তুলতে এর কার্তোজ গুলো দাঁত দিয়ে ছিড়তে হতো হিন্দু ও মুসলিমদের ক্ষেত্রে এই কার্তুজের গুলি দাঁত দিয়ে খুলতে গেলে তাদের ধর্মীয় ক্ষেত্রে হারাম হয়ে যাবে বা নিষিদ্ধ হয়ে যাবে।
এরকম একটি প্রচারণা শুরু করেছিল ১৮৫৭ সালে সিপাহীরা এই কার্তুজ ব্যবহার করার না করার দাবি তারা বিদ্রোহ শুরু করেছিল যা। এই বিদ্রোহের ফলে কোম্পানির শাসনের ইতি ঘটে এবং ব্রিটিশ মহারানী ভিক্টোরিয়া সরাসরি ভারতীয় উপমহাদেশের শাসন কার্য পরিচালনা করেছিলেন।
1857 সালের সিপাহী বিদ্রোহের কারণ
1857 সালের সিপাহী বিদ্রোহের কারণ গুলোর মধ্যে তেমন কোন নির্দিষ্ট কারণ ছিল না। নিম্নে এর কারণগুলো বর্ণনা করা হলো,
রাজনৈতিক কারণঃ ভারতবর্ষে কোম্পানিগুলো যে শাসন কার্য পরিচালনা করেছিল তা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন শাসক এদেশে এসে শাসন কার্য পরিচালনা করে। তাদের মধ্যে কেউ ভারতবর্ষের প্রতি উদারতা দেখিয়েছেন নামে মাত্র আবার কেউবা কঠোরতা অবলম্বন করেছেন কেউ সাম্রাজ্যবাদী প্রকৃতির ছিলেন।
এই ধরনের শাসকের মধ্যে একজন হলেন লর্ড ডালহৌসি। তার স্বত্ববিলোপ নীতি প্রয়োগ করে সাতারা ঝাঁসি নাগপুর সম্বলপুর সাম্রাজ্যভুক্ত করেছিলেন। ১৮৫৪ সালে কর্ণাটকের নবাব পদ বিলুপ্ত করেন। পেশবা দ্বিতীয় বাজিরাও এর দত্তপুত্র নানা সাহেবের ভাতা বন্ধ করে করেছিলেন। ১৮৫৬ সালে অপশাসনের অভিযোগে অযোধ্যা ব্রিটিশ সাম্রাজ্য ভুক্ত করেছিলেন।
এছাড়াও কোম্পানির অযোধ্যা দখল করার পর যে রাজস্ব ব্যবস্থার প্রচলন করেন তা জনসাধারণের সাধ্যের বাইরে ছিল। এভাবে দেশীয় রাজা দেশীয় সিপাহী ও জনসাধারণ ব্রিটিশ সরকারের শাসনের অবসানের জন্য একই জায়গায় এসে সম্ভবত হন। ফলে সংঘটিত হয় ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহ।
অর্থনৈতিক কারণঃ সিপাহী বিদ্রোহের কারণ গুলোর মধ্যে অন্যতম কারণ হলো অর্থনৈতিক কারণ। এতে জনসাধারণ অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছিল। ব্রিটিশ শাসনের পূর্বে এ দেশে কৃষি ক্ষেত্রের সবচাইতে বিখ্যাত ছিল এবং শিল্পক্ষেত্রে। কিন্তু কোম্পানির যখন এ দেশকে শাসন করলো তখন থেকেই এ দেশে কৃষি এবং শিল্প ক্ষেত্রে ধ্বংস হওয়ার দিকে ধাবিত হয়।
তারা এ দেশের অর্থনৈতিক শাসন করে নিয়ে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে নিয়ে যান। আর এ দেশের লোকজন দরিদ্র হতে থাকে কোম্পানির এই সকল রাজস্ব নীতির ফলের কারণে পথে বসে যায়। ১৮৫৭ সালের এই সিপাহী বিদ্রোহের কারণে অর্থনৈতিকভাবে এ দেশের লোকজন অসহায় হয়ে পড়ে।
চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত এই আইন পাশ করার কারণে এ দেশের দরিদ্র কৃষকরা তারা অসহায় পড়ে এবং কর আদায় করতে পারে না জমিদাররা কৃষকদের উপর অধিক পরিমাণে কর আরোপ করে যা তাদের দেওয়া সম্ভব হয়নি।
কোম্পানির যে রাজস্ব আদায় করত তা কৃষিক্ষেত্রে তেমন একটা ব্যয় করতো না। এর কারণে সেচ ব্যবস্থা তেমন ভালো ছিল না। এছাড়াও স্থানীয় যে শিল্প ব্যবস্থা ছিল সেগুলো ধ্বংস হয়ে যায়। কেননা ব্রিটিশ পণ্য এ দেশে ভরপুর হয়ে যায় এবং তারা জোর করে বাজার দখল করে নিয়েছিল।
এছাড়াও কৃষকদের উপর বিভিন্ন রকম অত্যাচার শুরু করেছিল। এই ধরনের অসন্তুষ্টির প্রকাশের কারণে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে প্রকাশের কারণে কৃষক রাও বিদ্রোহ শুরু করেছিল।
সামাজিক কারণঃ সিপাহী বিদ্রোহের কারণ গুলোর মধ্যে সামাজিক কারণ অন্যতম। সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর লোকজন ব্রিটিশ কোম্পানির শাসনের প্রতি অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে এবং তাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেন। কেননা এই ব্রিটিশ কোম্পানি ভারতীয়দের উপর এমন ভাবে অত্যাচার করে যা তাদের মনের ভিতর ঘৃণা সৃষ্টি হয়।
তাদের প্রতি কোম্পানির মাঝে এই ধরনের বিভিন্ন শ্রেণীর লোকদের সাথে তাদের কোন সম্পর্ক ভালো ছিল না। তারা এদেশের মানুষকে বর্বর বলে অবহিত করেছিল এবং খ্রিস্টান ধর্ম যাজজ্ঞান প্রকাশে হিন্দুদের মূর্তি পূজা সকল ধরনের ধর্মীয় কার্যক্রম ভালো চোখে দেখত না। তাদের নিন্দা করত এছাড়াও অত্যাচার করেছিলেন যা বড়লাট করেন ওয়ারেন হেস্টিং এই কথা তিনি ভুল স্বীকার করেছিলেন।
ধর্মীয় কারণঃ এই সিপাহী বিদ্রোহের অন্যতম কারণ ধর্মীয় ক্ষেত্রে ভারতীয়রা ব্রিটিশদের প্রতি অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে। খ্রিস্টান মিশনারীদের তৎপরতায় তারা ভারতীয় দের মনে এমন কিছু প্রশ্নবিদ্ধ করেছিলেন ইংরেজ শাসনে তারা ধর্মান্তর করার জন্য চেষ্টা করেছিলেন তাছাড়া বিদ্যালয় হাসপাতাল জেলখানায় খ্রিস্টান পাদ্রীদের কে যাওয়ার জন্য সুযোগ করে দিয়েছিল।
হিন্দু মুসলমানদের মনে এমন আশঙ্কা সৃষ্টি করেছিল যে তারা বাধ্যকতা ভাবে মন্দির মসজিদ পরিচালনার জন্য নির্দিষ্ট ভূমি ও দাতব্য প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর এগুলোর উপর তারা কর আরোপ করেন। এছাড়াও এই জিনিসটা ধর্মীয় ক্ষেত্রে হিন্দু মুসলিমদের অত্যন্ত খারাপ লেগেছিল। এমনকি তারা আইন পাস করেছিলেন যে হিন্দু মুসলমান নিজ নিজ ধর্মের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে তেমন কিছু বলতে পারবে না।
সামরিক কারণঃ পূর্বে ভারতীয়দের মধ্যে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে নিয়োগ দিত কিন্তু সেনাবাহিনীতে ছিল চরম বৈষম্য বৈ আচরণ করেছিল তারা সেনাবাহিনীতে শ্বেতাঙ্গ ভারতীয়দের মধ্যে যারা পাশ্চাত্য বা তাদের ধর্ম দিকে ধাবিত হবে শুধু তাদেরকে নিয়োগ দেওয়া হবে ৩ লক্ষ ১৫ হাজার ৫০০ জন ভারতীয় সৈনিকের জন্য বার্ষিক ব্যয় ছিল।
৯৮ লক্ষ পাউন্ড অথচ একান্ন হাজার ৩১৬ জন ইউরোপীয় অফিসার ও সৈনিকদের জন্য খরচ হতো ৫৬ লক্ষ ৬০ হাজার পাউন্ড এছাড়াও সেনাবাহিনীতে উন্নতির ক্ষেত্রে ছিল বিশাল পার্থক্য সামরিক বাহিনীদের। নিকৃষ্ট শ্রেণীর জীব তাদেরকে তাদের সাথে অশ্লীল ভাষায় কথা বলতো এছাড়া কোম্পানির বাজে ব্যবহারের কারণে ভারতের সিপাহীদের মধ্যে চরম অসন্তুষ্টি প্রকাশ পায়।
এর কারণে প্রচন্ড তাই একপর্যায়ে সিপাহীদের কপালে তিলক কাটা নিষিদ্ধকরণ দাড়ি কামানো পুরনো পাগড়ীর ব্যবহারের জন্য চাপ প্রয়োগ করেছিল। যা ভারতের সিপাহীদের মনে অসন্তুষ্টি প্রকাশ পেয়েছিল। এভাবে সিপাহীদের মনে যখন রাজনৈতিক অসন্তুষ্টি বিরাজমান করে তখন ব্রিটিশ সরকার রাইফেল এর ব্যবহার শুরু করেছিল।
এতে একপ্রকার গুজব ছড়িয়ে ছিল যে ইনফিল্ড রাইফেল এর কার্তুজে গরু ও শুকরের চর্বি মাখানো হয়েছে। এঁচোড়বি দাঁত দিয়ে কেটে বন্ধুকে তুলতে হয় যার কারণে সিপাহীরা প্রত্যক্ষ এটা করতে রাজি হয়েছিল না পরবর্তীতে ১৮৫৭ সালের এসিবা ও বিদ্রোহ শুরু হয়। তাই এ বিদ্রোহের কারণ গুলোর মধ্যে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ হলো সামরিক কারণ।
সিপাহী বিদ্রোহের প্রকৃতি
সিপাহী বিদ্রোহের প্রকৃতি নির্ণয় করতে গিয়ে দুই ধরনের মতামত দেখা দেয় প্রথমে একদল মনে করে ভারতীয় বাসীর প্রথমে এটা একটি স্বাধীনতা স্বাধীনতা সংগ্রাম বলে অবহিত করেন।
আবার কেউ কেউ মনে করেন এই যুদ্ধ ছিল সিপাহীদের একটি বিদ্রোহ তবে সর্বোপরি বলা যেতে পারে ১৮৫৭ সালের এই বিদ্রোহ প্রথমদিকে জাতীয় সংগ্রাম ছিল না। সিপাহী বিদ্রোহী ছিল নিম্নে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো,
ইংরেজি লেখক জেবি নটন মনে করেন ১৮৫৭ সালের এই বিদ্রোহ একটি সিপাহী বিদ্রোহ ছিল না বিদ্রোহ গণবিদ্রোহে রূপান্তরিত হয়েছিল।
আর একজন ঐতিহাসিক বলেন এ বিদ্রোহ ইংরেজদের ভারতবর্ষ থেকে বিতাড়িত করার জন্য একটি সবাই মিলে সংঘটিত হয়ে আন্দোলন করেছিল। কারণ ইংরেজরা পুরো ভারতীয় জনগণের প্রত্যাচার বেশি করে করেছিল।
রজনীকান্ত গুপ্ত তিনি তার গ্রন্থে বলেন জাতীয়তাবাদী আদর্শ একত্রিত হয়ে ইংরেজদের শাসন ব্যবস্থাকে করার জন্যই আন্দোলন করেছিল।
কাল মার্কস থেকে এক পত্রিকায় সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন এই বিদ্রোহ ভারতের জনগণের নিকট প্রথমে স্বাধীনতা সংগ্রাম হিসাবে বলা হয়ে থাকে। কিন্তু পরবর্তীতে এটা একটি সিপাহীদের বিদ্রোহ বলা আখ্যায়িত করেছে কিন্তু সিপাহী বাহিনী হত্যা করল।
তাদের ইউরোপে অফিসারদেরকে মুসলমানের হিন্দু পারস্পরিক বিদ্বেষ ভুলে গিয়ে তারা মিলিত হয়ে এদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিল এবং আন্দোলন কয়েকটি অঞ্চলের সীমাবদ্ধ না করে বিভিন্ন অঞ্চলে তারা আন্দোলন করেছিল।
ঐতিহাসিক শশীভূষণ চৌধুরী তিনি বলেন এই বিদ্রোহ সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী জাতীয় যুদ্ধ বলে ছিলেন এবং তিনি বিদ্রোহকে গুণ বিদ্রোহ হিসেবেই আখ্যায়িত করেন।
কজন ইংরেজি বিচারপতি তিনি তার পুস্তকে লেখেন ১৮৫৭ সালের এই বিদ্রোহ প্রকৃতপক্ষে ব্রিটিশ সরকাররা তারা ভারতীয় উপমহাদেশের জনগণের উপর অত্যাচার করেছিল তাই তারা এই অশান্তি থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য মাথা ছাড়া দিয়ে উঠেছিলেন।
কিশোরী চাঁদ মিত্র বলেন এই বিদ্রোহ শুধুমাত্র সিপাহীদের বিদ্রোহী ছিল না। কেননা এখানে প্রায় এক লক্ষ সিপাহী এই বিদ্রোহে অংশ নেয় যা একটি গণ বিদ্রোহের সেটা ভোটাও ছিল না।
এই বিদ্রোহ ধর্মান্ধ হিন্দু মুসলমানদের কে খ্রিস্টান ধর্ম রূপান্তরিত করার চেষ্টা করেছিল। আর যারা খ্রিস্টান ধর্ম বিরোধিতা করেছিল তাদেরকে অত্যাচার এবং তাদের নির্যাতন করেছিল।
উপরোক্ত এই মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় যে এ বিদ্রোহের কারণ গুলোর মধ্যে অন্যতম হল যখন ব্রিটিশরা এদেশের লোকজনের উপর অত্যাচার করে তখন তারা ক্ষিপ্ত হয়ে যায় এবং ধর্মীয় ক্ষেত্রে চিন্তাভাবনা না করে হিন্দু মুসলিম কৃষক তাঁতি জেলে সকলে মিলেই এই ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিল।
যার কারণে এটা একটি মহাবিদ্রোহ হিসেবে বলা হয়ে থাকে। যদিও এটা সিপাহীদের দ্বারা শুরু হয়েছিল কিন্তু পরবর্তীতে সবার সম্ভবত আন্দোলনে হয়েছিল। যা ঐতিহাসিকরা এটাই প্রাধান্য দিয়ে থাকে তাই সিপাহী বিদ্রোহের প্রকৃতি ও গুরুত্ব রয়েছে।
সিপাহী বিদ্রোহের ব্যর্থতার কারণ
সিপাহী বিদ্রোহের ব্যর্থতার কারণ গুলো মধ্যে বেশ কিছু কারণ ছিল, নিম্নে এই বিদ্রোহের ব্যর্থ হওয়ার জন্য যে সকল কারণগুলো দেয় তা আলোচনা করা হলো,
১৮৫৭ সালের এই বিদ্রোহের পরাজয়ের কারণ হলো বিদ্রোহীদের কর্ম পন্থা সময় প্রভৃতি সম্পর্কে উপযুক্ত যোগাযোগ ছিল না। যার কারণে সকল স্থানে বিদ্রোহ যেমন একসাথে শুরু হয় নাই। তেমনি একই নীতি কোথাও পালন করা হয়নি যার কারণে তাদের মাঝে অক্ষের অভাব ছিল ঐক্যের অভাব ছিল।
নানা সাহেব ও বাহাদুর সাহেব শাহ এর মধ্যে যে নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছিল যার কারণে নানা সাহেব পেশোয়া ও মারাঠারা পুনঃস্থাপনের জন্য চেষ্টা করতেছিল। আর অপরদিকে বাহাদুর শাহ তিনি মনে প্রাণে চাইতেন মুঘল সাম্রাজ্য প্রাধান্য পায়।
বিভিন্ন অঞ্চলে এই যুদ্ধ সীমাবদ্ধ হয় প্রথমে দক্ষিণ ভারতের বিদ্রোহ উত্তর ভারতে বিদ্রোহ শুরু হলে দক্ষিণ ভারতে কিন্তু বিদ্রোহ হয়নি। আবার এখন চলে বিদ্রোহ শুরু হলেও যোগ্য নেতার অভাব ছিল যার কারণে সেখানে বিদ্রোহ বিজয় লাভ করতে পারে নাই।
ঝাঁসির রানী নানা সাহেব এরা নিজ নিজ এলাকায় সুযোগ্য নেতৃত্ব পরিচয় দিয়েছিল কিন্তু এই সামরিক পরিচালনায় তেমন একটা দক্ষ ছিল না। এটি একটি সিপাহী বিদ্রোহের ব্যর্থতার কারণ।
এই বিদ্রোহের পরাজয়ের আরো একটু অন্যতম কারণ হলো ব্রিটিশদের কুটকৌশলীর কারণে এদেশের লোকজন হেরে যায়। এছাড়াও তারা ভীতি প্রদর্শন করেছিল এবং কিছু পুরস্কারের লবও দেখিয়েছিল। যার কারণে অনেকেই তাদের পক্ষে অবলম্বন করে এজন্য এই বিদ্রোহ তেমন একটা কার্যকরী হয়নি এদেশের শিখদের শক্তি পরাজিত করে তারা এটি দখল করে নিয়েছিলেন।
ব্রিটি সেনাবাহিনীরা অনেক দক্ষ ছিল তাদের গোলাবারদের প্রাচুর্য ছিল এছাড়াও সেনাবাহিনীদের পরিচালনার জন্য দক্ষ অভিজ্ঞ সামরিক নেতা ছিল কিন্তু ভারতের সিপাহীদের মধ্যে তেমন দক্ষ সৈন্য ছিল না এবং শৃঙ্খলা ছিল না দূরদর্শিতা এবং উন্নত ধরনের সেনাবাহিনীতে ছিল না যার কারণে তারা পরাজয় লাভ করে।
সিপাহীদের ভারতীয় সিপাহীদের সংগঠনের অভাব ছিল। তারা কেন্দ্রীয় সংগঠন না থাকার কারণে এলোমেলোভাবে বিদ্রোহ শুরু করেছিল যার কারণে এই যুদ্ধে তারা পরাজিত লাভ করেন।
ব্রিটিশ সেনাবাহিনী যাতে দিল্লিতে অবরোধ করতে না পারে সেদিকে প্রয়োজনে ব্যবস্থা না নেওয়ার কারণে কিভাবে সিপাহী বিদ্রোহীরা অনেক ভুল করেছিল। এছাড়া দিল্লি যখন শূন্য বৃটিশ অবরুদ্ধ করে রেখেছিল তখন তাদের অবরোধকারীদের আক্রমণ করার চেষ্টা না করেও তাদের বিরাট একটা ভুল ছিল।
সিপাহী বিদ্রোহের ফলাফল
ইতিপূর্বে আমরা জেনেছি 1857 সালের সিপাহী বিদ্রোহের কারণ সম্পর্কে। এখন জানবো এর ফলাফল সম্পর্কে নিম্ন বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
ভারতবর্ষের এই বিদ্রোহ ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় এই বিদ্রোহের দুর্বলতা থাকা সত্ত্বেও ব্রিটিশরা এদেশ থেকে কোম্পানির শাসন তুলে নিয়েছিল এবং ভারতীয় জনগণ মোটামুটি ভাবে তারা স্বাধীনতা সংগ্রাম করেছিল। জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের পথ পরিষ্কার হয়েছিল এই বিদ্রোহের আদর্শ পরিকল্পনা পরবর্তীতে কাজে লেগেছিল।
এই বিদ্রোহের কারণে এদেশ থেকে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি চলে যেতে বাধ্য হয় এবং ব্রিটিশ মহারানী ভিক্টোরিয়া সরাসরি এদেশের শাসন কার্য পরিচালনা ভারত শাসন আইন প্রণয়ন করে ভারতের কোম্পানির শাসনের অবসান ঘটিয়েছিলেন এবং তিনি নিজেই এদেশের শাসনভার দায়িত্ব নিয়েছিলেন
মহারানী ভিক্টোরিয়া তিনি যে ঘোষণা করেছিলেন তা হলো
- স্বত্ববিলোপ নীতি পরিত্যাগ করেছিলেন
- দেশীয় রাজ্য পুত্র গ্রহণের অনুমতি দেওয়া হয় এবং তাদের সাথে কোম্পানির সকল চুক্তি রক্ষা করা হবে এরকম তিনি দিয়েছিলেন নিশ্চয়তা তিনি দিয়েছিলেন।
- ব্রিটিশ সরকার রাজ্য বিস্তার করবে না এরকম তিনি নিশ্চয়তা দেন।
- যোগ্যতা অনুযায়ী সবাই সরকারি চাকরি করতে পারবে এই বিষয়ে নিয়োগ দিতে কোন ব্রিটিশদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে না সবাই সমান অধিকার পাবে।
- ধর্মীয় ক্ষেত্রে স্বাধীনতা দেওয়া হবে কারো ধর্ম কেউ হস্তক্ষেপ করতে পারবে না।
- ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে যে সকল ভারতীয় যুদ্ধ অংশগ্রহণ করেছিল তাদের কেউ তিনি ক্ষমা করে দিয়েছিলেন।
এই বিদ্রোহের ফলে ব্রিটিশ সরকার ভারতের প্রত্যক্ষ শাসনকার্য তিনি নিজে হাতে পালন করেছিলেন। ১৮৬১ সালে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ভারতীয় আইন পরে আইন পাস করেন এর মাধ্যমে তিনি ভারতীয় আইন পরিষদে ভারতীয়দের অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন।
১৮৩৩ সালে সনতাইনে গভর্নর জেনারেল ও পরিষদের হাতে মাত্র মুম্বাই মাদ্রাজ ও বোম্বাই এ শহরের প্রেসিডেন্টের আইন প্রণয়ের ক্ষমতা। তিনি করে দিয়েছিলেন ১৮৬১ সালের আইনে এই মাদ্রাসা বোম্বাই প্রেসিডেন্টের আইন পুনরায় আবার ফিরিয়ে দিয়েছিলেন।
ভারতীয় সামরিক বাহিনীতে পরিবর্তন করা হয়ে থাকে যারা বিদ্রোহ করেছিল অযোধ্যার কিছু আর্মির পরিবর্তে ভারতীয় বিভিন্ন ধর্মীয় অঞ্চলের জাতি গোষ্ঠীদেরকে এই সিপাহীতে নিয়োগ দেওয়া হয়। ইউরোপের সেনাবাহিনী করা হয়েছিল এবং গোলন্দাজ বাহিনীতে ভারতীয়দের কে নিয়োগ দেওয়ার ক্ষেত্রে নিষিদ্ধ করেছিল। ইংরেজরা সেনাবাহিনীর এছাড়া অন্যদিকে ভারতীয়দের হাতে নিম্নমানের অস্ত্র প্রদান করেছিলেন
এই বিদ্রোহের পর ব্রিটিশ সরকার তাদের নীতির পরিবর্তন করেছিলেন তাদের নীতি সমগ্র ভারত আধিপত্য বিস্তার করবে। এই বিদ্রোহের পর ব্রিটিশ সরকার দেশীয় রাজ্যগুলোর সাথে বন্ধুত্বসুলভ সম্পর্ক করে তুলেছিলেন এবং ভারতবাসীর কিছুটা হলেও উপকারে এসেছিল তাই সিপাহী বিদ্রোহের ফলাফল অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
এই বিদ্রোহের ফলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ না হলেও একটা জিনিস গুরুত্বপূর্ণ ছিল সেটা হল ভারতবর্ষ থেকে মোগল শাসনের অবসান ঘটেছিল। ইংরেজ সরকার বাহাদুর শাহ কে বন্দি করেছিলেন এবং মোগল বাদশা দেরকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছিলেন এবং নির্বাচনও দিয়েছিলেন নির্বাচনে নির্বাসন দিয়েছিলেন।
১৮৬২ সালে তার মৃত্যু হয়েছিল এভাবে মুঘল সম্রাট বংশের গৌরব চিরতরে চলে যায়।
এই বিদ্রোহের ফলে ব্রিটিশ সরকার তাদের নীতির পরিবর্তন করেছিলেন এবং ভারতের সংস্কারমূলক কাজ করার জন্য পরিকল্পনা করেছিলেন। এ জন্য তারা বিভিন্ন সংস্কার কাজের পদক্ষেপও গ্রহণ করেন।
আমাদের শেষ কথা
পরিশেষে বলা যায় যে 1857 সালের সিপাহী বিদ্রোহের কারণ ও ফলাফল অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভারতীয় জনগণের জন্য যদিও এটি সিপাহীরা এই বিদ্রোহী টা শুরু করেছিল কিন্তু পরবর্তীতে সকল শ্রেণীর মানুষ একসাথে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিরুদ্ধে এই বিদ্রোহ শুরু করেছিল। আশা করি পোস্টটি থেকে উপকৃত হয়েছেন। যদি ভালো লাগে তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধু-বান্ধবের নিকট এই পোস্টটি শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ
এম আর মাহমুদ ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url