সুলতান মাহমুদের ভারত অভিযানের কারণ ও ফলাফল এবং উদ্দেশ্য সমূহ জানুন
সুলতান মাহমুদের ভারত অভিযানের কারণ ও ফলাফল গুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল ভারতবর্ষ থেকে ধন-সম্পদ নিয়ে তার গজনী কে শক্তিশালী সাম্রাজ্য তৈরি করা। চলুন,সুলতান মাহমুদের ভারত অভিযানের উদ্দেশ্য ও ফলাফল সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
সুলতান মাহমুদ ভারতে বারে বারে অভিযান করেছিলেন ধন সম্পত্তির জন্য। তার সেই স্বপ্নপূরণ হয়েছিল সোমনাথ মন্দির লুণ্ঠন করার ফলে। তাই সুলতান মাহমুদের ভারত অভিযানের কারণ ও ফলাফল সম্পর্কে জানতে আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
পোস্টসূচিপত্রঃসুলতান মাহমুদের ভারত অভিযানের কারণ ও ফলাফল এবং উদ্দেশ্য সমূহ জানুন
সুলতান মাহমুদের ভারত অভিযানের উদ্দেশ্য ও ফলাফল
সুলতান মাহমুদের ভারত অভিযানের উদ্দেশ্য ও ফলাফল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদিও সুলতান মাহমুদের ভারত অভিযানের উদ্দেশ্য বা কারণ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। এখন আপনাদের সম্মুখে আলোচনা করব ফলাফল সম্পর্কে নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা।
সুলতান মাহমুদ ছিলেন একজন পরাক্রমশালী ও অনেক দিগ্বিজয়ী সৈনিক। ১৭ বার ভারত আক্রমণ করেছিলেন এবং সাফল্য অর্জন করেন তার অভিযানগুলো সাধারণত অর্থ অর্জনের উদ্দেশ্যেই অভিযান শুরু করেছিলেন।
ফলাফল ভালো ছিল তাই সুলতান মাহমুদের বিজয় অভিযান ভারতের রাজনৈতিক অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক জীবনে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করে। এর ফলাফল গুলো নিম্নে বর্ণনা করা হলো।
মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠার পথ উন্মুক্তঃ সুলতান মাহমুদের ভারত বিজয়ের ফলে একমাত্র পাঞ্জাব চিরস্থায়ীভাবে গজনী সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল। অবশ্য পাঞ্জাব অধিকারের পরবর্তী মুসলমান সম্রাজ্য স্থাপনের পথ সহজ করে দিয়েছিল।
আর সি মজুমদার বলেছেন, গজনিদের পাঞ্জাব অধিকার ছিল ভারতের অভ্যন্তরের অনুপ্রবেশের চাবিকাঠি। সুলতান মাহমুদ সর্বপ্রথম খাইবার গিরিপথ দিয়ে ভারতে এসেছিলেন সেই পথ ধরেই মোহাম্মদ ঘুড়ি ও ভারত আক্রমণ করে সেখানে স্থায়ী মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
হিন্দুদের প্রতিপত্তি হ্রাসঃ বারবার পরাজয় বরণ করে হিন্দু বর্গের মধ্যে চরম অনেক রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। হিন্দু ধর্মের অন্যতম শ্রেষ্ঠ পণ্য স্থান সোমনাথ মন্দির পতনের মাধ্যমে তাদের মনোবল ও ভেঙে যায় এবং তাদের প্রতিপত্তি হ্রাস পায়।
ধর্মীয় ফলাফলঃ সুলতান মাহমুদের সাথে বহু ধর্মপ্রচারক এ দেশে আগমন করেছিল। তাদের প্রচারের মাধ্যমে এদেশে মুসলমানের সংখ্যাও বেড়ে যায়। পরবর্তীতে মোহাম্মদ ঘুরি এখানে যখন অভিযান করেন তখন স্থানীয় মুসলমানদের সহায় তিনি প্রতিপত্তি লাভ করেছিলেন।
এরপর অনেক পীর ফকির যোদ্ধাদের সাথে ভারতে আগমন করে এবং ইসলাম ধর্ম প্রচারে মনোনিবেশ করেন। এর ফলশ্রুতিতে ভারতে ইসলামের এক নতুন অধ্যায় শুরু হয় এবং ধর্মীয় দিক দিয়ে নতুন পথ সুগম হয়।
অর্থনৈতিক ফলাফলঃ সুলতান মাহমুদ এদেশ থেকে অর্থনৈতিক ধন-সম্পদ নিয়ে তার সাম্রাজ্যকে শক্তিশালী করা। সুলতান মাহমুদ তার বিজয় অভিযান এর মাধ্যমে ভারতীয় রাজ্যগুলোর আর্থিক বুনিয়াদি ধ্বংস করে এবং সে সকল সম্পদ নিয়ে তার দেশে চলে যান। এ দ্বারা তিনি তার গজনী সিংহাসন কে শক্তিশালী করেন এবং সামরিক বাহিনীকেও শক্তিশালী করে তোলেন।
এই উপমহাদেশের সাথে সকল সম্পদ তিনি যুদ্ধ এবং শান্তি কালীন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সহায়তাও করেছিলেন। সুলতান মাহমুদ যে পরিমাণ ধনরত্ন উত্তর ভারতের রাজ্যগুলো হতে নিয়ে গিয়েছিলেন। তার ফল উত্তর ভারতের রাজ্যগুলো অর্থনৈতিকভাবে শিথিল হয়ে গিয়েছিল। বারংবার ভারত আক্রমণের ফলে সঞ্চিত ধনসম্পদের দারুন ক্ষতি সাধন তিনি করেছিলেন।
এদেশের বিশাল ঐশ্বর্য দিয়ে গজনী সাম্রাজ্যের রাজনৈতিক শিল্প-সাহিত্য কাব্য ইতিহাস প্রগতির তিনি চর্যা সাহিত্য ও সাধিত করেছিলেন। আশা করি সুলতান মাহমুদের ভারত অভিযানের উদ্দেশ্য ও ফলাফল সম্পর্কে বুঝতে পেরেছেন।
সাংস্কৃতিক ফলাফলঃ সুলতান মাহমুদের বিজয় অভিযানের ভারতে সাংস্কৃতিক ক্ষেত্র বিরাট একটি প্রভাব ফেলেছিল। তার আক্রমণের মাধ্যমে বিজিত হিন্দু ও বিজেতা মুসলমানদের সভ্যতার সংস্কৃতি পরস্পরের সান্নিধ্য এসেছিল।
কারণ উভয় সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে এক নবযুগের সূচনা সৃষ্টি হয়। যাহোক সুলতান মাহমুদের ভারত অভিযান মূলত তিনি ধন সম্পদ লুণ্ঠন করে নিয়ে তার গজনী সম্রাজ্য কে শক্তিশালী করা এবং উন্নত করা।
সুলতান মাহমুদের ভারত অভিযানের কারণ ও ফলাফল
সুলতান মাহমুদ ভারতে বারে বার আক্রমণ করেছে কিন্তু প্রায় ব্যর্থ হয়ে ফিরে এসেছেন। তাই সুলতান মাহমুদের ভারত অভিযানের কারণ ও ফলাফল ও উদ্দেশ্য বিষয়ে অনেক ঐতিহাসিক গণ বলেন যে, ধর্ম প্রচার বা রাজ্য বিস্তার অপেক্ষা অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। সুলতান মাহমুদের অভিযানের কারণও উদ্দেশ্য গুলো নিম্নে বর্ণনা করা হল।
ধর্মীয় কারণ বা উদ্দেশ্যঃ অনেক সমালোচক মনে করেন সুলতান মাহমুদ ভারত আক্রমণের মূল উদ্দেশ্য ছিল ধর্মীয় কারণ কিন্তু নিরপেক্ষ বিচার করলে দেখা যায় সুলতান মাহমুদ পৌত্তলিকতা বিরোধী ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের জিহাদ পরিচালনা করা হয়নি। কারণ তিনি কখনোই ধর্মে উদ্দেশ্যে অভিযান প্রেরণ করেননি। নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো,
ধর্মপ্রচার অপরিহার্য রাজকার্য তা আব্বাসীয় প্রথম খলিফাদের সময় বিষয়টা সমাপ্ত হয়েছে। তিনি ধর্ম নিয়ে কখনো জিহাদ ঘোষণা করে নাই।
সুলতান মাহমুদ শুধু হিন্দুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেননি বরং মুসলমান রাজাদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছিলেন।
যদি ধর্ম অভিযান উদ্দেশ্যে তিনি অভিযান করতেন তাহলে সেনাবাহিনীতে শুধু মুসলিম সৈন্যই থাকতো কিন্তু তার সেনাবাহিনী বহু হিন্দু লোকও ছিল।
সুলতান মাহমুদ এর অভিযান গুলো যদি ধর্মেই যুদ্ধ হতো তাহলে এগুলো জয়লাভ করার পর তিনি আসলে গাজী উপাধি ধারণ করত কিন্তু তিনি আসলে গাজী উপাধি ধারণ করেন নাই।
সুলতান মাহমুদ মাঝে মাঝে মদ্য পান করতে দেখা গেছে, যা একজন প্রকৃত ধার্মিক ব্যক্তি এই সকল কাজ করতে পারে না।
ডক্টর নাজিম বলেছেন, তিনি রাজনীতি হিন্দু সংস্কৃত সাহিত্যের উৎকর্ষ সাধনের জন্য একটি কলেজ একটি বাজার নির্মাণ করেছিলেন। যদি তিনি ধর্মীয় বিষয় নিয়ে কাজ করতেন তাহলে এ সকল কাজ করতেন না।
রাজনৈতিক কারণঃ সুলতান মাহমুদ এর ভারত অভিযানের উদ্দেশ্য ছিল রাজনৈতিক কারণ। হিন্দু সন্ধির শর্ত ভঙ্গ করেছিল সুলতান প্রতি তারা আনুগত্য অস্বীকার করে। রাজনৈতিক বিশ্বাসঘাতকতা করে ভারতীয় উপমহাদেশের সীমান্ত রাজাদের বিদ্রোহ ইত্যাদি তাকে ভারতীয় উপমহাদেশে অভিযান করতে হয়েছিল।
তাছাড়া এ বিষয়ে তিনি একটি শক্তিশালী সাম্রাজ্য স্থাপনের স্বপ্ন ছিল। আর এটা বাস্তবায়নের জন্য তিনি ভারত বর্ষ অভিযান শুরু করেন। ঐতিহাসিক হাবিব ও নিজামি বলেছেন, সুলতান মাহমুদের প্রধান সংকল্প ছিল একটি তুর্কি পারস্য সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করা এবং এর বাস্তবায়ন করতে হবে ভারতবর্ষে।
অর্থনৈতিক কারণঃ ভারত অভিযানের কারণ গুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল অর্থনৈতিক কারণ। ঐতিহাসিকগণ মনে করেন এই সময় তুর্কি মুসলিম নেতা সুলতান মাহমুদ দেব মন্দির ও বিদ্রোহাদের ধ্বংস সাধন করে এবং তিনি মনস্থির করেন যেসব মন্দির আক্রমণ করেছিলেন তা বিপুল ও ধনরত পূর্ণ ছিল।
তাদের মধ্যে কয়েকটি রাজনৈতিক ক্রিয়াকলাপের কেন্দ্রস্থল ছিল। তিনি সব মন্দির ধর্ম বিদ্বেষ না হয়ে বরং অর্থনৈতিক লাভের উদ্দেশে আক্রমণ করেছিলেন। ভারত হতে তিনি প্রচুর পরিমাণ অর্থ নিয়ে তার রাজধানী গজনি উন্নতির জন্য ব্যয় করেন। সুলতান মাহমুদ এই অর্থ সম্পদ সংগ্রহের প্রয়োজন বিভিন্ন কারণ ছিল যেমন,
- গজনের শাসন ব্যবস্থাকে সুন্দরভাবে পরিচালনা যেন করা যায় সেজন্য অর্থনৈতিক দরকার ছিল।
- গজনিকে আকর্ষণীয় নগরীতে পরিণত করার জন্য এবং শক্তিশালী করার জন্য দরকার ছিল
- বিশাল সৈন্য বাহিনীর জন্য অর্থ দরকার ছিল কেননা তাদের রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে।
- মধ্য এশিয়ার শত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য অর্থনৈতিক দরকার ছিল
- জ্ঞান বিজ্ঞানের উন্নতি করার জন্য অর্থনৈতিক দরকার।
ডাক্তার ঈশ্বরী প্রসাদ বলেন, সুলতান মাহমুদ ভারতের মন্দিরগুলো আক্রমণ করেছিলেন শুধুমাত্র সেখানে বিপুল পরিমাণ ধনরত্ন ছিল। সেগুলো লন্ঠন করার জন্য এবং রাজনৈতিক ক্রিয়াকলাপের জন্য।
সামরিক উদ্দেশ্যঃ সুলতান মাহমুদ বার বার ভারতবর্ষে আক্রমণ করার উদ্দেশ্য ছিল সামরিক ক্ষমতার বৃদ্ধি করার জন্য। তিনি নিজের ক্ষমতা এবং সাংগঠনিক দক্ষতা বৃদ্ধি করার জন্য, আরো শক্তিশালী করতে চেয়েছিলেন এবং ভারতবর্ষে মুসলমান শাসনের পথ সৃষ্টি করা যায় এই উদ্দেশ্য তিনি ভারতবর্ষে আক্রমণ করেছিলেন।
সুলতান মাহমুদের সোমনাথ অভিযান
সুলতান মাহমুদের সোমনাথ অভিযান ছিল তার জীবনের উল্লেখযোগ্য অভিযান। যেখানে তিনি সোমনাথ মন্দির থেকে প্রচুর পরিমাণ ধনরত্ন লুন্ঠন করেছিলেন। সোমনাথ মন্দির ছিল কাথিওয়ারের সমুদ্র উপকূলে অবস্থিত অন্যতম শ্রেষ্ঠ মন্দির। এই মন্দিরে শিব উপাসকগণ শিব লিঙ্গম পূজা করত।
তাদের বিশ্বাস ছিল যে মৃত্যুর পর আত্মা এখানে এসে জমা হয়ে থাকবে। উত্তর ভারতের রাজন্যবর্গ সোমনাথকে যথেষ্ট শ্রদ্ধা মর্যাদা করতো। তাই প্রচুর ধন সম্পত্তি এখানে জমা ছিল। সুলতান মাহমুদ উত্তর ভারতের অন্যান্য মন্দির ধ্বংস করলেও এটা ছিল তার বাহিরে।
তাই সুলতান মাহমুদ ১৬ তম অভিযান পরিচালনা করার জন্য প্রস্তুতি নেন বা ১০২৬ খ্রিস্টাব্দ সুলতান মাহমুদের সোমনাথ অভিযান এ আসলে গুজরাটের রাজা ভীমদেব বাধা দিয়েছিলেন কিন্তু সুলতান ফৌজের প্রচণ্ড আক্রমণে রাজপুত বাহিনীকে পরাজিত করেছিলেন অথবা মুসলিম বাহিনী মন্দির ধ্বংস করে প্রচুর দৌলত মনি মানিক সকল কিছু লুন্ঠন করে নিয়ে গিয়েছিলেন।
সোমনাথ বিজয়ের পর প্রায় দুই কোটি স্বর্ণ মুদ্রা ও বহু অলংকার তার নিকটে চলে যায়। সোমনাথ মন্দির বিজয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে অনেক ঐতিহাসিকগণ বলেন যে এটা একটি ইসলামের ইতিহাসে অন্যতম সাহসিক কাজ ছিল। যা সুলতান মাহমুদ করেছিলেন। সুলতান মাহমুদের ভারত অভিযানের উদ্দেশ্য এই সোমনাথ মন্দির থেকে অর্থ নিয়ে তার গজনীতে ফিরে যাওয়া।
সুলতান মাহমুদ কে ছিলেন
সুলতান মাহমুদ গজনীর সুলতান সুবক্তগীনের পুত্র। পিতার মৃত্যুর পর রাজত্ব নিয়ে দুই ভাইয়ের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়। এরপর তারা পরস্পর বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়।
যুদ্ধে সুলতান মাহমুদ তার আপন ভাই কে পরাজিত করে এবং হত্যা করে। ৯৯৭ খ্রিস্টাব্দে গজনের সিংহাসনে বসেন। মুসলিম নিয়ে প্রতিদের মধ্যে তিনি সর্বপ্রথম সুলতান উপাধি নিয়ে নেন।
সিংহাসন আরোহণের পর উপজাতি ও আমিরদের দমন করার জন্য তার দুই বছর চলে গিয়েছিল। তিনি এক অসাধারণ সাহসী সুলতান ছিলেন।
তিনি তার রাজত্বকালে পারস্য মধ্যে এশিয়া ও ভারতীয় উপমহাদেশের সামরিক অভিযান পরিচালনা করেন। সুলতান মাহমুদের ভারত অভিযানের কারণ ও ফলাফল ছিল মূলত ধন-সম্পদ ওই দেশ থেকে নিয়ে এসে নিজের দেশে সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করা এবং নিজের দেশকে উন্নত করা।
সুলতান মাহমুদ কতবার ভারত আক্রমণ করেন
অনেকে প্রশ্ন করে থাকে যে সুলতান মাহমুদ কতবার ভারত আক্রমণ করেন? সুলতান মাহমুদ বারে বারে ভারত অভিযান করে ব্যর্থ হয়েছিলেন। তবে তিনি ১০০০ খ্রিস্টাব্দে থেকে ১০২৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ১৭ বার ভারত আক্রমণ করেছিলেন এরমধ্যে ১০২৫ খ্রিস্টাব্দে সবচাইতে তার বড় আক্রমণ ছিল।
তাহল; গুজরাটের সোমনাথ অভিযান, যেখানে তিনি প্রচুর ধনসম্পদ অর্জন করেছিলেন। এই অভিযানে অনেকগুলো রাজবংশ তার কাছে পরাজিত হয়েছিল। তাই সুলতান মাহমুদের সকল অভিযানের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো গুজরাটের সোমনাথ অভিযান।
সুলতান মাহমুদের ভারত অভিযান
সুলতান মাহমুদের ভারত অভিযান গুলো বিভিন্ন সময়ে ঘটেছিল। যা সুলতান মাহমুদের এক সাহসী যোদ্ধা হিসাবে এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষী পুরুষ হিসেবে পরিচয় দিয়েছিলেন। তিনি ভারতবর্ষে ধন-সম্পদের পাচর্যের আকৃষ্ট হয়ে পরপর ১৭ বার ভারতবর্ষ অভিযান শুরু করেন। নিম্নে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো,
প্রথম অভিযান সীমান্তবর্তী শহরের বিরুদ্ধেঃ সুলতান মাহমুদ ১০০০ খ্রিস্টাব্দে খাইবার গিরিপথ দিয়ে সীমান্তবর্তী কয়েকটি শহরকে আক্রমণ করেছিলেন। একজন শাসক নিযুক্ত করে পর্যাপ্ত পরিমাণ ধন দৌলত তিনি নিজের দেশে নিয়ে যান।
দ্বিতীয় অভিযান জয়পাল এর বিরুদ্ধেঃ সুলতান মাহমুদের ভারত অভিযান এর মধ্যে প্রথম অভিযান বিজয় লাভ করেন। যখন সুলতান মাহমুদ ১৫ হাজার বাছাই করা অসহায় সৈন্য কে নিয়ে তিনি যখন বিজয় লাভ করেছিলেন। তখন তিনি জয়পাল এর বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেন।
তিনি ১২০০০ অশ্বারোহী ৩০ হাজার পদাতিক বাহিনী ও ৩০০ হাতিসহ সিন্ধু নদী অতিক্রম করে তাদের বিরুদ্ধে আক্রমণ শুরু করে। পেশোয়ার উভয় পক্ষের সৈন্যদের মধ্যে ভীষণ যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। ১৫ হাজার হিন্দু সৈন্য এই যুদ্ধে নিহত হয় তারপরও সুলতান মাহমুদ যুদ্ধ বিজয় লাভ করে।
তৃতীয় অভিযান ভীর নামক শহরের বিরুদ্ধেঃ ১০০৪ খ্রিস্টাব্দে সুলতান মাহমুদ তার তৃতীয় অভিযান শুরু করেন জেলার নদীর তীরবর্তী ভীর নামক একটি শহরে। সেখানকার রাজা ছিলেন বাজি রায় তিনি প্রাণপণ যুদ্ধ করেও পরাজিত হয়। সুলতান মাহমুদের হাতে তিনি বন্দি হয়ে অপমান হতে রক্ষা পাওয়ার জন্য নিজে আত্মহত্যা করে মারা যায়।
চতুর্থ অভিযান মুলতানের বিরুদ্ধেঃ ১০০৬ খ্রিস্টাব্দে সুলতান মাহমুদ মুলতান জয় করার উদ্দেশ্যে চতুর্থবার অভিযান শুরু করে। পাঞ্জাব অঞ্চলের রাজা আনন্দ পালের রাজ্যের মধ্যে দিয়ে তিনি সৈন্য নিয়ে যার প্রস্তাব করেন মুলতান রাজ্যের অধিপতির সাথে আনন্দ পালের মিত্রতা ছিল। এজন্য মাহমুদ ছিল তার পূর্বসূত্র যার কারণেই তার রাজ্যের মধ্যে সুলতান মাহমুদকে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেননি।
সুলতান মাহমুদ আনন্দ পালের উপর প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য নিজেকে প্রস্তুত হন কিন্তু মুলতানি প্রাধান্য দিলে আনতে সুলতান মাহমুদকে বেশি একটা কষ্ট করতে হয়নি।
মুলতানের রাজা আবুল ফাতা দাউদ বাৎসরিক কর দানের স্বীকৃত হয়। সুলতান মাহমুদ মুলতানে থেকে অবরোধ তুলে নিয়ে নেন।
নওয়াজ শাহ এর বিরুদ্ধে অভিযানঃ ১০০৭ খ্রিস্টাব্দে ইতিমধ্যে কাশগরের রাজা গজনী রাজ্য আক্রমণ করার কারণে সুলতান মাহমুদ ভারত বিজিত স্থানগুলো নওয়াজ শাহ শাসনাধীন রেখে গজনিতে প্রত্যাবর্তন করার চিন্তা ভাবনা করেন। নওয়াজ শাহ ছিলেন জাতিতে হিন্দু তার নাম ছিল মূলত সেবক পাল।
মাহমুদ ভারতবর্ষ ত্যাগ করার সাথে সাথেই নওয়াজ শাহ ইসলাম ধর্ম পরিত্যাগ করে আবার সুলতান মাহমুদের আনুগত্য অস্বীকার করতে থাকে। এর কারণে সুলতান মাহমুদ তাকে অল্পকালের মধ্যে পরাজিত এবং বন্দী করেন।
পঞ্চম অভিযান আনন্দপাল এর বিরুদ্ধেঃ ১০০৮ খ্রিস্টাব্দে সুলতান মাহমুদ আনন্দ পালের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেন। আনন্দ পাল সুলতান মাহমুদের উদ্দেশ্যে পূর্ব হতেই সন্দেহ করেছিলেন। তিনি জানতেন যে তার বিরুদ্ধে সে কাজ করবে আনন্দ পালের সৌজন্যে কালীগঞ্জ কোলাজ দিল্লি আজমির রাজা গড়ার সাথে সম্মিলিতভাবে সুলতান মাহমুদ আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য প্রস্তুতি নেন। কাশ্মীরের পাদদেশে বসবাসকারী দূরদর্শ খোকুর জাতির সাহায্যে তিনি আনন্দপালকে সমর্থন করেছিল।
দশম অভিযান থানেশ্বরের বিরুদ্ধেঃ ১০১৪ খ্রিস্টাব্দে সুলতান মাহমুদের পরবর্তী উল্লেখযোগ্য অভিযান ছিল থানেশ্বরের আক্রমণ সুলতান এর জন্য প্রস্তুত হয়ে সংবাদ পেয়ে রাজার গজনিতে উত্তোলন করে বাৎসরিক ৫০টি হাতি কর এর জন্য প্রস্তাব দেন।
সুলতান মাহমুদ প্রত্যাখ্যান করে দেন এবং থানেশ্বরের দিকে অগ্রসর শুরু করেন। থানেশ্বরের উপস্থিত হয়ে তিনি সেখানকার সুবিখ্যাত হিন্দু মন্দিরটি ধ্বংস করে দেন। এক প্রকার বিনা বাধায় তিনি মন্দির থেকে চূর্ণ-বিচনা করে সেখানকার যত ধন-সম্পদ ছিল সকল কিছু লন্ডন করে নেন।
দ্বাদশ অভিযান কৌনজ ও মথুরার বিরুদ্ধেঃ ১০১৮ খ্রিস্টাব্দে সুলতান মাহমুদ ১২তম অভিযান কোন শুরু করেন কৌনজ রাজা রাজ্যপাল বিনা যুদ্ধে সুলতান মাহমুদের নিকট আত্মসমর্পণ করেছিলেন। সুলতান মাহমুদ কৌনজ এর সাতটি দুর্গ একে একে জয় করে নেন এবং যত ধন সম্পত্তি ছিল সেগুলো নিয়ে নেন। এখানকার বহু সংখ্যক লোককে তিনি বন্দি করে নেন।
সপ্তদশ ও সর্বশেষ অভিযান জাঠদের বিরুদ্ধেঃ ১০২৭ খ্রিস্টাব্দে সুলতান মাহমুদ নিজের দেশে ফিরে আসার পর জাঠদের আক্রমণ সুলতান মাহমুদকে যথেষ্ট ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিলেন। তাই জাঠদেরকে শাস্তি দেয়ার উদ্দেশ্যে তিনি ১০২৭ খ্রিস্টাব্দে সর্বশেষ অভিযান শুরু করেন। যুদ্ধ করে সুলতান মাহমুদের হাতে পরাজিত হয়ে সুলতান মাহমুদ স্বদেশী ফিরে যান।
শেষ কথাঃ সুলতান মাহমুদের ভারত অভিযানের কারণ ও ফলাফল, সোমনাথ অভিযান সম্পর্কে জানুন
পরিশেষে বলা যায় যে সুলতান মাহমুদের ভারত অভিযানের কারণ ও ফলাফল হল ভারত বর্ষ থেকে ধন-সম্পত্তি নিয়ে তার গজনী প্রতিষ্ঠা করা। সাম্রাজ্যকে শক্তিশালী করা তিনি ধর্মীয় বা অন্য কোন কারণে অভিযান করেননি। তবে তিনি ছিলেন অত্যন্ত সাহসী এবং শক্তিশালী সৈনিক।
দক্ষতার মাধ্যমে তিনি ভারতবর্ষে প্রায় অভিযান করে সফলতায় অর্জন করেছেন। যা হোক আজকের পোস্টের মাধ্যমে যদি উপকৃত হয়ে থাকেন। তাহলে আপনার বন্ধু-বান্ধবের মাঝে শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ
এম আর মাহমুদ ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url