আম গাছের পাতা, ছাল বা আম বীজ চূর্ণ খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
আম একটি সুস্বাদু ফল সবাই পছন্দ করে কিন্তু আম বীজ চূর্ণ খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে অনেকে জানেনা অথচ এটা খাওয়ার ফলে বিভিন্ন রোগ ব্যাধি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। চলুন, আমের বিচির পাউডার সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
যাদের পুরাতন আমাশয় সমস্যা রয়েছে তারা আম গাছের ছালের রস করে খেতে পারেন। এতে অনেক উপকার পাওয়া যায়। তাই আম বীজ চূর্ণ খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানতে পোস্টটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
পোস্টসূচিপত্রঃআম গাছের পাতা, ছাল বা বীজ চূর্ণ খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
আম বীজ চূর্ণ খাওয়ার উপকারিতা
আম এর মধ্যে প্রচুর পুষ্টি রয়েছে এবং আমের বীজ এর উপকারিতা আছে। তাই আম বীজ চূর্ণ খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো,
আমরা সাধারণত আম খেতে পছন্দ করি কিন্তু আমের ভিতর যে আটি থাকে সেটা দিয়ে যে অনেক উপকার হয়, অনেকে হয়তো জানে না। এর মধ্যে প্রচুর পুষ্টি আছে তাই আমের আটি ফেলে দিবেন না। বিভিন্ন প্রক্রিয়া করন করে আপনি খেলে বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি পাবেন। আমের মধ্যে প্রচুর পুষ্টি আছে যা মানব শরীরের জন্য উপকার করে থাকে।
আমের মধ্যে আন্টিএক্সিডেন্ট থাকে যা স্তন ক্যান্সার প্রোস্টেট ক্যান্সার এবং কোলন ক্যান্সার সহ আরো বিভিন্ন ধরনের রোগ ব্যাধি থেকে রক্ষা করে। তাছাড়া অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকার কারণে নিউকেমিয়া রোগের বিরুদ্ধে কাজ করতে পারে। তাই আম খাওয়ার পাশাপাশি আপনি আমের বীজ চূর্ণ করে খেতে পারেন। এতে অনেক উপকার পাবেন।
আমের মধ্যে আছে ভিটামিন 'এ" যা দৃষ্টিশক্তি ভালো করতে পারে, রাতকানা রোগ প্রতিরোধ করতে পারে। এছাড়া আমার মধ্যে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার থাকে এবং ভিটামিন সি রয়েছে। যার কারণে লিপোপ্রোটিনের ঘনত্ব কম করতে পারে, যার কারণে কোলেস্টরেলের নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
আমের আঁটি অনেক উপকার করে থাকে, বিভিন্ন ধরনের রোগ ব্যাধি সরাতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে যে আমের বীজ চূর্ণ করে খাওয়ার ফলে অনেক রোগ ব্যাধি থেকে মুক্তি পাওয়া গেছে। কেননা আমার মধ্যে যে পুষ্টি উপাদান আছে তা শরীরের রক্তের শর্করা বৃদ্ধি করতে পারে।
কিন্তু আমের আটি খেলে বৃদ্ধি পায় না। বরঞ্চ নিয়ন্ত্রণে থাকে এছাড়াও কয়েকটি রোগ সারাতে কাজ করে। তাহলে চলুন, এ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
চুলের খুশকি দূর করেঃ যাদের চুলের প্রচুর পরিমাণ খুশি থাকে তারা আমের আটি শুকিয়ে গুড়ো করে নিবেন। তারপর মাথার ত্বকে পানির সাথে মিশিয়ে লাগাবেন, এতে আপনার খুশকি দূর হয়ে যাবে।
চুল পড়া বন্ধ করেঃ মাথার ত্বকে যদি শুষ্কভাবে রেখে দিতে পারেন সে ক্ষেত্রে চুল পড়া বন্ধ হয়ে যাবে।
অতিরিক্ত ওজনঃ যাদের অতিরিক্ত ওজনের সমস্যা রয়েছে, তারা কাঁচা আমের আটি খেলে ফ্যাট বার্ন করে ওজন কমাতে সাহায্য করবে।
ডায়রিয়াঃ যারা দীর্ঘদিন যাবত ডায়রিয়ায় ভুগছেন, আমের আটি শুকিয়ে গুড়ো করে নিবেন এবং পানির সাথে মিশিয়ে খাবেন এতে ডায়রিয়ায় ভালো কাজ করে থাকে।
এছাড়া কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে পারে আমের আটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ তবে কাঁচা আমের আটি আপনি ইচ্ছা করলে কামড়িয়ে খেতে পারবেন, এতে কোন ক্ষতি হবে না। এছাড়াও আমের আটি আপনি শুকিয়ে নিয়ে গুড়ো করে দুধের সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন। এতে অনেক উপকার পাবেন।
আমের বিচির পাউডার
আম খাওয়ার পরে বিচি ফেলে দিবেন না, এটা পাউডার করে খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। তাই আমের বিচির পাউডার সম্পর্কে নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো,
বিভিন্ন রোগের কারণে যেমন ডায়াবেটিসের রোগীরা বেশি আম খেতে পারে না। ডায়াবেটিস বেড়ে যাওয়ার ভয়ে আবার অনেকে হাই প্রেসার থাকার কারণে ও বেশি আম খেলে সমস্যা হতে পারে। এছাড়া আরো বড় ধরনের রোগের কারণে আম বেশি খেলে সমস্যা হয়। অনেকের পেটের সমস্যা থাকতে পারে এরা অতিরিক্ত আম খেলে ডায়রিয়া হতে পারে।
যা হোক যাদের ডায়রিয়ার সমস্যা রয়েছে তারা আমের আটি শুকিয়ে আমের বিচির পাউডার করে নেবেন এরপরে আমের গুড়ো দিনে দুইবার পানির সাথে মিশিয়ে খেলে অনেক উপকার পাবেন। যারা দীর্ঘদিন যাবত আমাশরের সমস্যায় ভুগছেন তারাও এই আমের বীজ খেতে পারেন, আমের বীজের খাওয়ার নিয়ম জানা খুবই দরকার।
প্রথমে কাঁচা আম নিবেন কাঁচা আমগুলো যার মধ্যে আটি হয়েছে কিন্তু শক্ত হয়নি এই ধরনের আমগুলো বেছে নিবেন। এর পর আঁটিগুলো বের করে মাঝখানের যে নরম অংশটুকু রয়েছে সেটুকু শুকাতে দিবেন। এরপর শুকিয়ে গেলে সুন্দর করে বেলেন্ডার করে গুড়োকরে নেবেন। তারপর পানির সাথে অথবা দুধের সাথে মিক্স করে খেতে পারেন।
এর মধ্যে একটু মধু দিলে আরো উপকার পাবেন, এভাবে যদি আপনি নিয়মিত খান তাহলে আপনার পেটের সমস্যা এবং অন্যান্য রোগ থেকেও রক্ষা পাবেন। কেননা আম বীজ চূর্ণ খাওয়ার উপকারিতা ও পুষ্টিগণ রয়েছে।
আম গাছের ছালের উপকারিতা
আম গাছের ছাল খাওয়া শরীরের জন্য অনেক ভালো, তাই আম গাছের ছালের উপকারিতা সম্পর্কে নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
পা ফাটার ক্ষেত্রেঃ যাদের শীতকাল এবং গরমকাল দুই অবস্থাতে পায়ের গোড়ালি ফেটে যায় এবং অনেক ব্যথা করে, রক্ত বের হয়। এই ধরনের সমস্যা যাদের রয়েছে তারা আম গাছের আঠা এর সাথে কিছু ধনিয়ার গুড়া মিক্স করে লাগাবেন দেখবেন ভালো হয়ে গেছে।
রক্ত আমাশয়ঃ যারা দীর্ঘদিন যাবত রক্ত আমাশয় ভুগতেছেন তারা আম গাছের ছালের রস বের করে ১ থেকে ২ চামচ এর সাথে আধা কাপ ছাগলের দুধ মিশিয়ে যদি খেতে পারেন। তাহলে রক্ত আমাশয় দূর হয়ে যাবে। তবে এর সাথে যদি একটু মধু মিশিয়ে খেতে পারেন।
এটা আরো ভালো উপকার পাওয়া যাবে তবে যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে তারা খাবেন না। তবে যাদের ডায়াবেটিস নেই তাদের জন্য খুবই উপকার করে থাকে, এজন্য আম গাছের ছালের উপকারিতা রয়েছে।
নখকুনিতে সমস্যাঃ যাদের পায়ের নখে বা হাতের নখকুনির সমস্যা রয়েছে প্রচন্ড ব্যথা করে, লাল হয়ে যায় পুজ বের হয়। এই ধরনের যাদের সমস্যা আছে তারা আম গাছের নরম আঠা এর সাথে ধনিয়ার গুড়া মিশিয়ে নখের মধ্যে টিপে টিপে দিতে পারেন, এতে অনেক উপকার পাবেন।
রক্ত পড়াঃ যাদের নাক দিয়ে রক্ত পড়ে এই ধরনের সমস্যার জন্য আপনি আমের আঁটির শাস এর রস নেবেন অথবা গুড়ো করে যদি নিঃশ্বাস নিতে পারেন, সে ক্ষেত্রে রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে যাবে। তবে ব্লাড প্রেসার এর যে রক্ত পড়ে সেটা কিন্তু বন্ধ হবে না।
খোস পাঁচড়ায় উপকারঃ যাদের ঘন ঘন খোস পাঁচড়া বা চুলকানি হয়ে থাকে বিখাউজ হয়ে থাকে, তারা আমের আঠা এবং লেবুর রস এর সাথে তেল মিশিয়ে খোস পাঁচড়ায় দিতে পারেন, তাহলে অনেক উপকার পাবেন।
আম পাতার রসের উপকারিতা
আম পাতা অনেক উপকার করে থাকে আমাদের শরীরের জন্য। তাই আম পাতার রসের উপকারিতা সম্পর্কে নিম্ন বিস্তারিত আলোচনা করা হলো,
আম পাতার মধ্যে ভিটামিন এনজাইম অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট খনিজ পদার্থসহ আরো অনেক পুষ্টি উপাদান থাকে। এছাড়াও এই পাতার মধ্যে মেঞ্জিফিরিন নামক একপ্রকার উপাদান থাকে। যা আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকার, তাহলে এ সম্পর্কে নিম্ন আলোচনা করা হলো।
বাত ব্যথাঃ যাদের বাত ব্যথার সমস্যা রয়েছে তারা আমের কচি পাতা পানিতে ফুটিয়ে নিয়ে সেই পানি পান করলে অনেক উপকার পাবেন এবং এই বাত ব্যথা দূর হয়ে যাবে।
ক্ষত নিরাময়ঃ শরীরের কোথাও ক্ষত থাকলে সেই ক্ষত সারাতে আম পাতা ব্যবহার করতে পারেন। এজন্য আম পাতা পুড়িয়ে নিয়ে ছাই বানাবেন এরপরে ক্ষতস্থানে লাগিয়ে দিবেন দেখবেন অনেক ভালো কাজ করছে এবং উপকার করবে। তাছাড়া আমের বীজ চূর্ণ করেও লাগিয়ে দিতে পারেন, এতে উপকার পাবেন। কারণ আম বীজ চূর্ণ খাওয়ার উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ আছে।
কিডনি স্টোনঃ যাদের কিডনি স্টোনের সমস্যা আছে তারা আম পাতা চিকিৎসা নিতে পারেন। এজন্য আম পাতা ভালো করে শুকিয়ে নেবেন, তারপর গুড়ো করে প্রতিদিন সকালবেলা এক গ্লাস পানির মধ্যে মিক্সড করে খেতে পারেন। এভাবে নিয়মিত খেলে প্রসাবের সাথে স্টোন বা পাথর শরীর থেকে বের করে দেবে।
ডায়রিয়া প্রতিরোধঃ আম পাতা শুকিয়ে গুঁড়ো করে দিনে দুই থেকে তিনবার খেলে ডায়রিয়া দূর করতে সাহায্য করে এবং নিয়মিত খেলে রক্ত আমাশা দূর করতে সাহায্য করে।
ডায়াবেটিস প্রতিরোধঃ আম পাতার মধ্যে টেনিনস ও আন্থসায়ানিন থাকার কারণে রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ করে, এজন্য ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে। তাই আম পাতার চা প্রতিদিন খেতে পারেন কয়েক দিনের মধ্যেই আপনি উপকার বুঝতে পারবেন।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণঃ তাদের রক্ত চাপের সমস্যা রয়েছে এবং হাই প্রেসার রয়েছে তারা প্রাকৃতিকগতভাবে যদি চিকিৎসা নিতে চান তাহলে প্রতিদিন এক কাপ করে আম পাতার চা খেতে পারেন। এতে রক্তনালী প্রসারিত করবে এবং ব্লাড প্রেসার কে নিয়ন্ত্রণে রাখবে। চিকিৎসকরা আম পাতার চা খেতে পরামর্শ দেন।
শ্বাসকষ্ট সমস্যাঃ যাদের ঘন ঘন ঠান্ডা কাশি ব্রংকাইটিস হাঁপানি এজমা এই ধরনের সমস্যা আছে এর কারণে দেখা যায় শ্বাসকষ্ট হয়। রোগীর অনেক কষ্ট হয় এ সকল রোগীর জন্য আমের পাতা পানিতে সিদ্ধ করে মধু দিয়ে মিশিয়ে খেলে ভালো উপকার পাবে। তাই এভাবে আপনি খেতে পারেন, এতে অনেক উপকার। কেননা আম পাতার রসের উপকারিতা রয়েছে।
আমাদের শেষ কথা
পরিশেষে বলা যায় যে, আমের মধ্যে প্রচুর পুষ্টি রয়েছে, তবে বেশি পুষ্টি থাকার কারণে অনেকে পেটের সমস্যা হয়ে থাকে অথবা বিভিন্ন ধরনের রোগ ব্যাধির ক্ষতি করতে পারে। তাই আমের আটিতে সবচাইতে বেশি উপকার পাওয়া যায়। এজন্য আপনি আমের বীজ পূর্ণ করে খেতে পারেন, কারণ আম বীজ চূর্ণ খাওয়ার উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ রয়েছে। তাই আম গাছের পাতা, ছাল, বীজ সকল কিছুর উপকারিতা আছে। পোস্টটা যদি ভালো লাগে তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধু-বান্ধবের মাঝে শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ
এম আর মাহমুদ ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url