মিল্ক শেক কি দিয়ে তৈরি হয় ও গোপন উপকারিতা সম্পর্কে জানুন
মিল্ক শেক সম্পর্কে অনেকে জানেনা তাই মিল্ক শেক কি দিয়ে তৈরি করা হয় এবং এর উপকারিতা সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। চলুন, মিল্ক শেক কিভাবে তৈরি করবেন সে সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
মিল্ক শেক পরিমাণ মতো খেলে শরীরের শক্তি যোগায় ও দুর্বলতা দূর করে। এছাড়াও শরীরে বিভিন্ন ধরনের উপকার করে থাকে। তাই মিল্ক শেক কি দিয়ে তৈরি হয় সে সম্পর্কে জানতে আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
পোস্টসূচিপত্রঃমিল্ক শেক কি দিয়ে তৈরি হয় ও গোপন উপকারিতা সম্পর্কে জানুন
মিল্ক শেক কি দিয়ে তৈরি
অনেকেই জানতে চায় মিল্ক শেক কি দিয়ে তৈরি হয়, এটা তৈরি করতে বিভিন্ন ধরনের উপাদান লাগতে পারে আবার অনেকে শুধু দুই একটা ফল দিয়েও তৈরি করতে পারেন। নিম্নে এ বিষয়ে আলোচনা করা হলো।
প্রথমত ভালো মানের দুধ নিতে হবে কারণ দুধের মাঝে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম থাকে। তাই ভেজাল দুধ থেকে সতর্ক থাকবেন, এর পরে ফল নিবেন ফলটাও যেন বিশুদ্ধ হয়। কারণ উপকার করতে গিয়ে যেন ক্ষতি না হয়। এজন্য আপেল, কলা, আঙ্গুর, স্ট্রবেরি এই ধরনের ফল আপনি নিতে পারেন।
তাছাড়া আরও নিতে পারেন গ্রিন টি, বাদাম ইত্যাদির মাধ্যমে মিল্ক শেক তৈরি করতে পারেন। এতে খুবই সুস্বাদু ও পুষ্টিকর হবে। তবে মিষ্টি খুবই কম দেবেন, বেশি মিষ্টি দিলে ক্ষতি হতে পারে। সে হিসেবে চিনি বা মধু দিতে পারেন, যাদের চিনি খেতে সমস্যা তারা মধু দিতে পারেন।
আরো বিভিন্ন পদ্ধতিতে মিল্ক শেক তৈরি করা যায়, অনেকেই ফলের সাথে দুধ এবং আইসক্রিম দিয়ে মিল্ক শেক খেতে পছন্দ করে। তবে চিনি ছাড়া খেলে সবচাইতে ভালো হয় এবং স্বাস্থ্যের জন্য উপকার।
মিল্কশেক বানানো তেমন কঠিন নয়, এটা নির্ভর করে কে কি রকম সুস্বাদু খেতে পছন্দ করে তার উপরে এবং যে ব্যক্তি যেরকম বানাতে পছন্দ করে। দুধের পানি বানানোর সময় কয়েকটি দিকে খেয়াল রাখতে হবে, তাহলে সুস্বাদু বেশি হবে।
এই দুধের পানি সবচাইতে ভালো হয় যদি ঘনত্ব হয় কারণ ঘনত্বের উপরে নির্ভর করে স্বাদের। এজন্য অন্যান্য উপাদান গুলো মিশিয়ে নিতে হবে তবে তার আগে আইসক্রিম ঢালার আগে অল্প সময়ের জন্য ফ্রিজে রেখে দিবেন। ব্যালেন্ডার করার সময় খেয়াল রাখবেন যেন শক্ত না হয়।
অনেকে থকথকে মিল্ক শেক পছন্দ করে সে ক্ষেত্রে দুধ কম দিবেন, তাহলেই থকথকে হবে এবং সুস্বাদু হবে। কারণ অতিরিক্ত পাতলা করলে তেমন একটা স্বাদ পাওয়া যায় না।
ব্লেন্ডারে বেশিক্ষণ রেখে দিলে টলটল হয়ে যায়, যার কারণে এটা স্বাদ হয় না। এক্ষেত্রে আপনি আইসক্রিম ব্যবহার করতে পারেন এতে পানিটুকু ঘন হবে।
একটি পাত্রের মধ্যে দুধ এবং চিনি ভালো করে মিক্স করে নিতে হবে। আপনার পছন্দের যে কোন একটি ফল বা বাদাম নিতে পারেন, এরপর ব্লেন্ডার করে মিশ্রণ করে নিবেন।
মিল্ক শেক খাওয়ার নিয়ম
মিল্ক শেক অতিরিক্ত খেলে পেটের সমস্যা হতে পারে, তাই মিল্ক শেক খাওয়ার নিয়ম অনুযায়ী খাবেন। তাহলে শরীরে উপকার পাবেন, নিম্নে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
মিল্ক শেক নিয়মিত না খেয়ে সপ্তাহে এক থেকে দুইবার খেতে পারেন, এতে উপকার পাবেন। আর অতিরিক্ত খেলে ক্যালরি বেশি খাওয়া হয়ে যাবে এজন্য ওজন বৃদ্ধি পাবে।
মিল্ক শেক খাওয়ার নিয়ম হলো ব্রেকফাস্টে মিল্ক খেতে পারেন, এতে আপনার শক্তি বৃদ্ধি পাবে এবং দৈনন্দিন যে পুষ্টির প্রয়োজন সেটা সরবরাহ করবে।
ব্যায়ামের পরে মিল্ক শেক খেলে ভালো উপকার পাওয়া যায়, এতে আপনার প্রোটিন এবং কার্বোহাইড্রেট সরবরাহ করবে।
এছাড়া আপনার যদি ওজন কম হয়ে থাকে, যদি বৃদ্ধি করতে চান সেক্ষেত্রে মিল্ক শেক খেতে পারেন। এতে খাদ্য ক্যালোরি এবং চিনির পরিমাণ দিকে খেয়াল রাখতে হবে, তা না হলে ক্ষতি হতে পারে।
মিল্ক শেক খাওয়ার উপকারিতা
ইতিমধ্যে জানতে পেরেছেন যে মিল্ক শেক কি দিয়ে তৈরি হয়, এখন আমরা এর উপকারিতা সম্পর্কে জানব, নিম্নে এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো,
বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে এই মিল্ক শেক তৈরি করা যায়, একেক রকমের ফল একেক রকম সুস্বাদু লাগে, কেউ কলা খেতে পছন্দ করে কেউ আপেল খেতে পছন্দ করে। যে যেটা খেতে পছন্দ করেন না কেন সেটা দিয়েই আপনি তৈরি করতে পারেন। আম দিয়ে অনেক মিল্ক শেক খেতে পছন্দ করে, এর মধ্যে ক্যারোটিন, ভিটামিন এ, আছে।
যা চোখের দৃষ্টি শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে এবং রাতকানা রোগ থেকে রক্ষা করে। চোখ ভালো থাকে মিল্ক শেকে ভিটামিন বি থাকার কারণে শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ করতে পারে এবং শরীরকে ভালো রাখে, সুন্দর ঘুম হয়।
মিল্ক শেক এর মধ্যে বিটা ক্যারোটিন, ভিটামিন ই ও সেলেনিয়াম থাকার কারণে হার্টের সমস্যা প্রতিরোধ করতে পারে। এর মধ্যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকার কারণে ক্যান্সার সারাতে উপকার করতে পারে। খনিজ লবণের কারণে দাঁত, নখ চুল মজবুত করতে পারে, কেননা আমের মধ্যে প্রচুর পরিমাণ খনিজ লবণ থাকে তাই মৌসুমী ফল হিসাবে মিল্ক শেক খেতে পারেন।
এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে এনজাইম থাকে যা শরীরে প্রোটিন এর অণুগুলো ভেঙে দিতে সাহায্য করতে পারে। যার কারণে হজম শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং মিল্ক শেক খেলে শরীরের বিভিন্ন ধরনের উপকার করে থাকে। তাছাড়া স্থূলতা কমাতেও সাহায্য করে, মিল্ক শেক এর উপকারিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যা পুষ্টিকর হিসাবে কাজ করে থাকে। যাদের ওজন খুবই কমে গেছে তারা নিয়মিতভাবে খেলে ওজন বৃদ্ধি পাবে।
মিল্ক শেক আপনার শরীরের পুষ্টির অভাব পূরণ করতে পারে। মিল্ক শেক চিকন শরীরকে মোটা করতে খেতে পারেন, দাঁত ও হাড়কে মজবুত করতে পারে। কারণ মিল্ক শেক খাওয়ার উপকারিতা রয়েছে। পেশির গঠন ও আকৃতি পারফেক্ট রাখতে পারে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়, শরীরের প্রচুর পরিমাণে এনার্জি নিয়ে আসে, স্থায়ীভাবে স্বাস্থ্যের উন্নতি হতে পারে।
শরীরের জন্য ভিটামিন ক্যালসিয়াম এর চাহিদা পূরণ করে, মুখের রুচি বৃদ্ধি করে, মানসিক প্রশান্তি নিয়ে আসে। তাছাড়া অনেকের কাছে জনপ্রিয় এজন্য আপনি এটা খেতে পারেন, এটা যদি প্রাকৃতিক উপায় আপনি তৈরি করে থাকেন সেক্ষেত্রে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হবে না এবং শরীরের উপকার হবে, তাই আশা করি মিল্ক শেক এর উপকারিতা আছে।
মিল্ক শেক এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
মিল্ক শেক প্রায় সবাই খেলে কোন ক্ষতি হয় না, তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ক্ষতি হতে পারে। তাই মিল্ক শেক এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো,
দুগ্ধজাত খাবারে এলার্জিঃ যাদের পেটের সমস্যা বা আইবিএস সমস্যা তারা সাধারণত ল্যাকটোজ জাতীয় খাবার গুলো খেলে,বা দুগ্ধজাত খাবার খেলে এলার্জি শুরু হয়। তাদের ক্ষেত্রে মিল্ক শেক খেলে হজমের অসুবিধা হয় ও অন্যান্য সমস্যা দেখা দেয়। তাই যারা ল্যাকটোজ জাতীয় খাবার সহ্য করতে পারে না। তাদের ক্ষেত্রে এই সমস্যাটা দেখা দিতে পারে, কারণ দুধে ল্যাকটোজ থাকে যা হজম করতে সমস্যা হতে পারে।
এছাড়া পেটে গ্যাস হতে পারে, পেট ফোলা ভাব ডায়রিয়া ভাব বমি বমি ভাব এ ধরনের সমস্যা গুলো দেখা যায়। খাবার খেলে এলার্জি যাদের হয় তারা এ খাবার থেকে বিরত থাকতে হবে। মিল্ক শেক এর মাঝে প্রোটিন থাকে যা শরীরে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়, তবে তারা দুধের পরিবর্তে দই খেতে পারেন। এতে প্রোবায়োটিক থাকে যা হজম শক্তি করতে বৃদ্ধি করে এবং আইবিএস এর সমস্যা দূর হতে পারে।
চিনির উপাদানঃ মিল্ক শেক সাধারণত চিনি বা মিষ্টি জাতীয় খাবার দিয়ে তৈরি করা হয়ে থাকে। অতিরিক্ত চিনি খেলে সাধারণত রক্তের শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে এজন্য ওজন বৃদ্ধি পায়, ডায়াবেটিস এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে।
তাই অতিরিক্ত চিনি দিয়ে মিল্ক শেক তৈরি করা যাবে না। এক্ষেত্রে যে ফলগুলো অতিরিক্ত মিষ্টি নেই সেগুলো দ্বারা মিল্ক শেক তৈরি করতে পারেন, তাহলে শরীরে ক্ষতি হবে না।
অন্যান্য সমস্যাঃ অনেক ক্ষেত্রে মিল্ক শেক খাওয়ার বিভিন্ন ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ থাকতে পারে, তাহলো
ওজন বৃদ্ধি পেতে পারে, কেননা এর মাঝে প্রচুর পরিমাণ ক্যালরি আছে, যার কারণে নিয়মিত এটা অতিরিক্ত খেলে ওজন বৃদ্ধি পেতে পারে।
মিল্ক শেক অতিরিক্ত খেলে চর্বি এবং কোলেস্টেরল বৃদ্ধি পেতে পারে এর জন্য অতিরিক্ত খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন, এর কারণে হৃদরোগ এবং হার্টের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
অতিরিক্ত পরিমাণ খাওয়ার কারণে এর ভিতর চিনি থাকে যার কারণে ডায়াবেটিস রোগীদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ রাখা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
মিল্ক শেক খাওয়ার পরে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া গুলোর লক্ষণঃ মিল্ক শেক এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এর কারণে সাধারণত যে লক্ষণ গুলো দেখা দেয় তা নিম্নে দেওয়া হল,
- পেটে গ্যাস হওয়া
- পেট ফোলা ভাব
- ডায়রিয়া হতে পারে
- বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া এর মধ্যে এলার্জি থাকার কারণে এই সমস্যা হয়
- অনেকের চুলকানি শুরু হয়
- ফুসকুড়ি উঠতে পারে
- এবং শ্বাসকষ্ট হতে পারে
মিল্ক শেক খেলে কি ওজন বাড়ে
অনেকেই জানতে চায় যে মিল্ক শেক খেলে কি ওজন বাড়ে এ সম্পর্কে নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো,
হ্যাঁ, সাধারণত ওজন বাড়ে কারণ এর মাঝে ক্যালরি থাকে এবং অতিরিক্ত চিনি থাকার কারণে যদি কেউ অতিরিক্ত খেয়ে থাকে, সে ক্ষেত্রে ওজন বাড়তে পারে। তাছাড়া মিল্ক শেক আইসক্রিম বা দুধ দিয়ে দিয়ে তৈরি হওয়ার কারণেই এই সমস্যাটা সৃষ্টি হয়। এ দুটো খাবারের মাঝেই ক্যালোরি এবং চর্বি থাকে এর কারণে শর্করা বৃদ্ধি পায় এবং ওজনও বৃদ্ধি পেতে পারে।
তাহলে যাদের ওজন বেশি সে ক্ষেত্রে দুধ ও চিনি ছাড়া বিভিন্ন ধরনের ফল দিয়ে মিল্ক শেক তৈরি করে খেতে পারেন। তাহলে ওজন নিয়ন্ত্রণ থাকবে অথবা পরিমাণে খুবই কম খেতে হবে, তাহলে ওজন বৃদ্ধি পাবে না।
মিল্ক শেক ক্যালোরি পরিমাণ প্রায় ৫০০ ক্যালোরি হতে পারে, এজন্য ৫০০ ক্যালোরের মিল্ক শেক খেলে আপনার শরীরের প্রয়োজনে বেশি ক্যালোরি গ্রহণ করে ফেললেন। এজন্য ওজন বাড়তে পারে চিনির পরিমাণ বেশি থাকে। তাছাড়া ডায়াবেটিস টাইপ-২, যাদের রয়েছে এবং হৃদরোগ সহ অন্যান্য সমস্যা দেখা দিতে পারে এই পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসেবে।
তাই যারা এমনিতে অনেক স্বাস্থ্যবান এবং মোটা তারা মিল্ক শেক না খাওয়াই ভালো, যাদের ওজন কম তারা খেতে পারেন। তবে পরিমাণে অতিরিক্ত খাওয়া যাবেনা এবং চিনির পরিমাণ এবং ক্যালরির দিকে খেয়াল রাখতে হবে। আর যারা ওজন কমাতে চান না, তারা এই মিল্ক শেক খেলে ওজন বৃদ্ধি পেতে পারে সে ক্ষেত্রে না খাওয়াই ভালো। আশা করি বুঝতে পেরেছেন যে মিল্ক শেক খেলে কি ওজন বাড়ে।
লেখকের শেষ কথা
পরিশেষে বলা যেতে পারে যে মিল্ক শেক একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, যা শরীরের জন্য উপকার করে থাকে। তবে যাদের পেটের সমস্যা রয়েছে তারা খেলে সমস্যা বেশি দেখা দিতে পারে। তবে মিল্ক শেক কি দিয়ে তৈরি করার নিয়ম অনুযায়ী খেতে হবে। আশা করি আজকের পোস্টটি আপনার কাছে ভালো লাগতে পারে। তাই পোস্টটি আপনার বন্ধু-বান্ধবের নিকট শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ
এম আর মাহমুদ ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url