রূপচর্চায় বা চুলের জন্য পুদিনা পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন
রূপচর্চার ক্ষেত্রে অথবা চুলের যত্নে পুদিনা পাতা ব্যবহার করতে পারেন, কারণ চুলের জন্য পুদিনা পাতার উপকারিতা রয়েছে এবং পুদিনা পাতা খেলে শরীরে অনেক উপকার হয়। চলুন, পুদিনা পাতার উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
যারা চা খেতে পছন্দ করেন তারা যদি পুদিনা পাতার চা খেতে পারেন, তাহলে অনেক উপকার পাওয়া যাবে। কেননা এর মাঝে অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে। তাই পুদিনা পাতার চা এর উপকারিতা সম্পর্কে জানতে আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
পোস্টসূচিপত্রঃরূপচর্চায় বা চুলের যত্নে পুদিনা পাতার উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন
চুলের জন্য পুদিনা পাতার উপকারিতা
কমবেশি অনেকেরই চুল পড়ে থাকে, তাই চুলের জন্য পুদিনা পাতার উপকারিতা রয়েছে। আপনার যদি চুল পড়া এবং চুলের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হয়ে থাকে, এর সমাধান সম্পর্কে নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
অনেকের চুল পড়ে থাকে তবে এর পিছনে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে, পরিবেশ দূষণ আবহাওয়া পরিবর্তন চুলের যত্ন না নেওয়া ইত্যাদি কারণে চুল পড়তে পারে, এই চুল পড়া কমানোর জন্য মাথার ত্বক এর যত্ন নিতে হবে এবং মাথাকে ঠান্ডা রাখতে হবে। তার জন্য কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে যা আপনার হাতের কাছেই রয়েছে। তা হলো পুদিনা পাতা ব্যবহার করতে পারেন, এই পাতার হেয়ার প্যাক তৈরি করে আপনার চুলে ব্যবহার করলে ভালো উপকার পাবেন।
পুদিনা পাতার মধ্যে থাকে এন্টিব্যাকটিরিয়াল উপাদান যা আমাদের মাথার ত্বকের জ্বালাপোড়া দূর করতে পারে। মাথার তাকে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি করতে পারে এবং চুলও বৃদ্ধি পায়। এজন্য পুদিনার পাতা ব্যবহার করতে পারেন।
পুদিনা পাতা দিয়ে যেভাবে হেয়ার প্যাক তৈরি করবেন, তার জন্য এক কাপ পুদিনা পাতা নেবেন এর সাথে এক কাপ দই, এক চামচ মধু এবং এক চামচ জলপাইয়ের তেল নিবেন। প্রথমত পুদিনা পাতা গুলো ব্লেন্ডার করে নিবেন এরপর দুই ও মধু এবং জলপাই তেল মিক্সড করে নিবেন। সবগুলো উপাদান মিক্স করে একটি হেয়ার প্যাক তৈরি করুন।
তারপর এই প্যাকটি মাথার ত্বকে লাগিয়ে দিন হালকাভাবে মালিশ করতে পারেন। তারপর ১৫ মিনিট অপেক্ষা করার পর হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। পুদিনা পাতার এই হেয়ার প্যাকটি চুল পড়া কমাতে সাহায্য করে, তাই এই হেয়ার প্যাকের সাথে কয়েক ফোটা তেল মিক্স করতে পারেন এর কারণে চুল বৃদ্ধি পাবে।
পুদিনা পাতার হেয়ার প্যাক নিয়মিতভাবে চুলে ব্যবহার করুন, এতে আপনার ত্বক ঠান্ডা রাখবে এবং পুদিনা পাতার পুষ্টিগণ উপাদানের মধ্যে রক্ত বৃদ্ধি পাবে। এর কারনে চুলের ফলিকল গুলো পুষ্ট করতে পারবে এবং এটা ব্যবহার করার কারণে চুল মজবুত হবে। চুলের গোড়ালি পুষ্টি শক্ত হবে, পুদিনা পাতা যদি আপনি সপ্তাহে দুই দিন ব্যবহার করতে পারেন।
পুদিনা পাতার উপকারিতা
পুদিনা পাতার মানুষের শরীরে বিভিন্ন ধরনের উপকার করে থাকে। তাই পুদিনা পাতার উপকারিতা সম্পর্কে নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে,
পুদিনা পাতার মধ্যে থাকে পলিফেনাল যা ঔষধি গুণ রয়েছে। এটা দিয়ে হাঁপানি পেটের ভিতরের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। তাছাড়া এর মধ্যে ক্যালরি প্রোটিন চর্বি খুবই কম আছে। এর মধ্যে ভিটামিন এ সি ও বি রয়েছে, যা ত্বকের জন্য রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পেতে পারে।
তাছাড়া এর মধ্যে লৌহ, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ইত্যাদি রয়েছে। এর মধ্যে খনিজ উপাদান আছে যার রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে এবং মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা ভালো রাখে।
এর মধ্যে এক্সিডেন্ট থাকার কারণে এবং ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট থাকার কারণে হজমের কাজ করতে পারে। এঞ্জাইম তৈরি করে এর মধ্যে এসেনশিয়াল অয়েল এর থাকার কারণে জীবাণুনাশক প্রতিরোধ করতে পারে।
তাছাড়া পাকস্থলীতে ঠান্ডা রাখে অম্লীয় খাবার প্রতিরোধ করতে পারে। যার কারণে পেটের সমস্যা দূর হয়ে যায়, পেটের সমস্যার পাশাপাশি পুদিনা পাতা ত্বক বা চুলের জন্য ভালো কাজ করে। কারণ ত্বক এবং চুলের জন্য পুদিনা পাতার উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ আছে।
হাঁপানি দূর করেঃ আপনি যদি নিয়মিত পুদিনা পাতা খেতে পারেন, তাহলে আপনার বুকে যদি কফ জমে থাকে, সেগুলো দূর হবে। তাছাড়া ফুসফুসে যদি সমস্যা হয় সে ক্ষেত্রেও এটা বের করতে সাহায্য করে। তাছাড়া নাক ফুলে ওঠা মেমব্রেন কে দূর করতে পারে, এর মধ্যে মেন্থল থাকার কারণে এগুলো দূর করতে সাহায্য করে। শ্বাসকষ্ট যাদের সমস্যা রয়েছে তারা এটা খেতে পারেন। এতে শ্বাসকষ্ট কম হবে, তবে এটা অতিরিক্ত খাওয়া যাবে না। কারণ শ্বাসনালীতে অস্বস্তি হতে পারে।
মাথা ব্যথা দূর করাঃ পুদিনা পাতার মধ্যে যে মেন্থল থাকে এবং ব্যথা কমিয়ে নিয়ে আসে। এই পাতার নির্যাস থেকে তৈরি করা মলম যদি ব্যবহার করতে পারেন, তাহলে মাথা ব্যাথা দূর হবে। যদি মলম ব্যবহার করতে না চান, সে ক্ষেত্রে পুদিনা পাতার রস কপালে লাগিয়ে দিলেও ব্যথা মাথা ব্যথা সেরে যাবে। কেননা পুদিনা পাতার উপকারিতা রয়েছে।
স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করেঃ মস্তিষ্কের স্মৃতিকে বৃদ্ধি করার জন্য পুদিনা পাতা খেতে পারেন, এতে অনেক উপকার রয়েছে। এটা যদি আপনি নিয়মিত খান সেক্ষেত্রে আপনার বুদ্ধি এবং সতর্কতা সাথে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পাবে।
ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে পারেঃ পুদিনা পাতার মধ্যে এসেনশিয়াল অয়েল থাকার কারণে এটা হজমশক্তি বৃদ্ধি করতে পারে এবং বর্জ্য পদার্থ অপসারণ করতে পারেন। খাবার থেকে পুষ্টি ও গ্রহণ করতে পারে এতে ওজন নিয়ন্ত্রণ এবং পুষ্টির অভাব পূরণ করে।
ঠান্ডা কাশি দূর করেঃ যাদের ঘন ঘন ঠান্ডা কাশি সর্দি জ্বর নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া, এ ধরনের সমস্যা থাকে তারা পুদিনা পাতা খেতে পারেন। এর মধ্যে যে উপাদানগুলো রয়েছে সেগুলো কাশি কমাতে এবং গলার ব্যথা সারাতেও ভালো কার্যকারিতা রয়েছে। তাই আপনি পুদিনার পাতা খেতে পারেন এবং পাশাপাশি চুলে ব্যবহার করতে পারেন।
পুদিনা পাতার ক্ষতিকর দিক
পুদিনা পাতার উপকারিতা যেমন রয়েছে তেমনি পুদিনা পাতার ক্ষতিকর দিক আছে। নিম্নে এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো,
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বাড়িয়ে দেয়ঃ যদি এটা পরিমাণে বেশি খেয়ে ফেলেন তাহলে হজমের সমস্যা দেখা দিতে পারে, বদহজম হতে পারে, পেট ফুলে যেতে পারে এবং অতিরিক্ত গ্যাস হবে। কারণ পুদিনা পাতার মধ্যে যে উপাদান রয়েছে তা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা আরো বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই এটা অতিরিক্ত না খাওয়াই ভালো পরিমাণ মতো খাবেন।
এলার্জি সমস্যাঃ যাদের পূর্বে থেকে এলার্জির সমস্যা রয়েছে, তারা পুদিনা পাতা অতিরিক্ত খেলে এলার্জি সমস্যাগুলো দেখা দেয়, যেমন ত্বকে ফুসকুড়ি ওঠা, চুলকানি ফুলে যাওয়া, শ্বাসকষ্ট লক্ষণ, হাঁচি কাশি ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই এই পুদিনা পাতা খাওয়ার পরে এলার্জি সমস্যা দেখা দেয় তাহলে পরবর্তীতে এটা না খাওয়াই ভালো।
নির্দিষ্ট ওষুধের সাথে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াঃ পুদিনা পাতার মধ্যে যে পুষ্টি উপাদান রয়েছে, তা ওষুধের সাথে খেলে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। যেমন পুদিনা পাতার যে ওষুধগুলোর সাথে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে পারে তা হল এন্টাসিড, রক্তচাপের ওষুধ, লিভারের সমস্যার ওষুধ ইত্যাদি এ ধরনের ওষুধ গুলোর সাথে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।
তাই যদি আপনি কোন ঔষধ নিয়মিত গ্রহণ করেন, সে ক্ষেত্রে পুদিনা পাতা না খাওয়াই ভালো। আর যদি খেতে চান তাহলে একজন চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে খাবেন।
গর্ভাবস্থায় সমস্যা হয়ঃ একজন গর্ভবতী মা যদি পুদিনা পাতা অতিরিক্ত খেয়ে ফেলে, সে ক্ষেত্রে জরায়ুসহ পেশীতে সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই গর্ভাবস্থায় পুদিনা পাতা খাওয়ার সময় অবশ্যই একজন চিকিৎসকের নিকট পরামর্শ নেবেন। কারণ আপনি যদি এটা অতিরিক্ত খেয়ে ফেলেন, তাহলে সে ক্ষেত্রে গর্ভপাত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
কারণ পুদিনা পাতার মধ্যে যে উপাদান গুলো রয়েছে তা একজন গর্ভবতী মায়ের স্বাস্থ্য ঝুঁকি রয়েছে। তবে যদি আপনার সমস্যা হয় সে ক্ষেত্রে এটা না খাওয়াই ভালো, যাইহোক এটার উপকারিতা বেশি তবে অতিরিক্ত খেলে ক্ষতি হতে পারে, সে ক্ষেত্রে এটা বন্ধ করে দিতে পারেন। কারণ পুদিনা পাতার ক্ষতিকর দিক রয়েছে।
রূপচর্চায় পুদিনা পাতার ব্যবহার
অনেকের ত্বকে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হয়ে থাকে, তাই রূপচর্চায় পুদিনা পাতার ব্যবহার করলে আপনার ত্বকের সমস্যাগুলো দূর হবে। বিশেষ করে ত্বকে ব্রণ, ব্ল্যাকহেডস ত্বকের সুস্থতা এই ধরনের সমস্যা বেশি হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে আপনাকে সহযোগিতা করতে পারে এই পুদিনা পাতা। এর মধ্যে যে উপাদান গুলো রয়েছে তা ত্বকের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে থাকে। নিম্নে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো,
ব্রণ কমাতে পারেঃ যারা ব্রণের সমস্যায় ভুগছেন, তারা পুদিনা পাতা ব্যবহার করতে পারেন। কারণ এর মাঝে স্যালিসিলিক এসিড এবং ভিটামিন-এ, থাকার কারণে ত্বকের সেবাময়েল নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। ত্বকের তৈলাক্ত ভাব দূর করতে পারে, কারণ তৈলাক্ত ত্বক হওয়ার কারণেই ব্রণ উঠে আর এই তৈলাক্ত ভাব দূর করার জন্য পুদিনা পাতা ব্যবহার করতে পারেন।
কারণ এর মাঝে এন্টিব্যাকটেরিয়াল এবং এন্টিফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য থাকে, যা ত্বকের প্রদাহ দূর করতে পারে। পাশাপাশি ব্রণ দূর করতে সাহায্য করে, এজন্য আপনি পুদিনা পাতার পেস্ট তৈরি করে এটি ব্যবহার করতে পারেন এবং আপনার ব্রণের উপরে লাগিয়ে দিতে পারেন। যখন এটা শুকিয়ে যাবে তখন ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলবেন।
এটা আপনার ব্রণের দাগ দূর হয়ে যাবে এবং সুন্দর থাকবে। তাই আপনার ত্বকে ব্যবহার করার পাশাপাশি চুলে এটি ব্যবহার করতে পারেন, ভালো উপকার পাবেন। কেননা রূপচর্চায় বা চুলের জন্য পুদিনা পাতার উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ রয়েছে।
ক্ষত দূর করেঃ ত্বকের বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণের কারণে ক্ষত হতে পারে এজন্য আপনি পুদিনা পাতা ব্যবহার করতে পারেন। এর মধ্যে এন্টি ইনফ্লামেটরি থাকার কারণে ত্বকের ক্ষত কাঁটা ছেঁড়া, মশার কামড় চুলকানি ইত্যাদি যেকোনো ধরনের সমস্যা হোক না কেন এটা দূর করতে সাহায্য করে। এজন্য আপনি প্রথমে পুদিনা পাতার রস বের করে নিবেন, তারপর সেই রস আক্রান্ত স্থানে লাগিয়ে দিতে পারেন। এতে দ্রুত ক্ষত সেরে উঠবে এবং তাকে জ্বালাপোড়া করবে না।
ত্বককে আর্দ্র ও কোমল রাখেঃ ত্বকের মধ্যে আর্দ্রতা ও কোমলতা রাখতে চাইলে পুদিনা পাতা ব্যবহার করতে পারেন। কারণ মাইন্ড এসপিরিজেন্ট হিসেবে ভালো উপকারিতা রয়েছে,যার কারণে ত্বকে প্রাকৃতিকভাবে কোমল হয়ে উঠতে পারে, এবং পুদিনা পাতা ব্যবহারের কারণে ত্বকের ছিদ্র থেকে ময়লা বের হয়ে যাবে।
এটা ব্যবহার করার কারণে ত্বকে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়, এর কারণে ত্বক সুন্দর উজ্জ্বল দেখায়। এজন্য পুদিনা পাতার পেস্ট করে নিয়ে মুখে লাগাতে পারেন, কিছুক্ষণ রাখার পর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলবেন। ভালো ফলাফল পাবেন তাই রূপচর্চায় পুদিনা পাতার ব্যবহার করতে পারেন।
ডার্ক সার্কেল দূর করেঃ যাদের চোখের নিচে কালি পরে বা কালো দাগ দেখায়, এটা রাত জাগার কারণেই বেশিরভাগ হয়ে থাকে এবং দুশ্চিন্তা ও মানসিক কারণে হতে পারে। এর কারণে আপনার মুখের সৌন্দর্যটা নষ্ট হয়ে যায়, এজন্য পুদিনা পাতার ব্যবহার করতে পারেন।
এতে চোখের নিচের কালো দাগ দূর হবে, চোখের নিচে কালো দাগ দূর করার জন্য পুদিনা পাতার পেস্ট তৈরি করে চোখের নিচে লাগাবেন এবং সারারাত রাখতে পারেন তারপর সকালে উঠে ঠান্ডা পানি দিয়ে পরিষ্কার করে নিবেন। এভাবে নিয়মিত ব্যবহার যদি করতে পারেন তাহলে আপনার চোখের নিচের কালো দাগ দূর হয়ে যাবে।
ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে দেয়ঃ পুদিনা পাতা নিয়মিত ব্যবহার করলে আপনার ত্বকের উজ্জ্বলতা দেখাবে। এর মাঝে অ্যান্টিসেপটিক বৈশিষ্ট্য থাকার কারণে ত্বকের ভিতরে দাগ ও র্যাশ যদি থাকে সেটা দূর করতে সাহায্য করে, তাছাড়াও সূর্যের আলোর কারনে অনেকের ত্বকের ক্ষত কমাতে পারে।
এজন্য পুদিনার পাতা রস আপনি ব্যবহার করতে পারেন, মাসে একবার হলেও এটি ব্যবহার করে দেখতে পারেন অনেক ভালো ফলাফল পাবেন। তবে ত্বকে ব্যবহার করার পাশাপাশি চুলেও ব্যবহার করতে পারবেন, চুল সুন্দর এবং ঘন কালো, চুল পড়া বন্ধ হবে।
পুদিনা পাতা খাওয়ার নিয়ম
পুদিনা পাতা খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়, তবে পুদিনা পাতা খাওয়ার নিয়ম অনুযায়ী খেতে হবে। নিম্নে এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো,
পুদিনা পাতা শরীরের জন্য ভালো কাজ করে থাকে, অনেকে গরমের দিনে এই পুদিনা পাতা খেয়ে থাকে এতে শরীর ও মন দুটি সতেজ থাকে। এটার সুগন্ধটা অনেক সুন্দর যা আপনার ভালো লাগবে। এটা শরবত চাটনি বোরহানি কিংবা জিরা পানির সাথে আপনি পুদিনা পাতা খেতে পারেন।
তাছাড়া আরো খাবারের সাথে আরো অনেক কিছুই খেতে পারেন, এর কারণে আপনার বাড়তি ভুরি কমাতে কাজ করবে।চলুন, কিভাবে কার সাথে খেলে এটা উপকারিতা বেশি রয়েছে নিম্ন আলোচনা করা যাক,
পুদিনা পাতা ও দইঃ অনেকে দই খেতে পছন্দ করে এর সাথে যদি আপনি সামান্য পুদিনা পাতা কুচি করে মিক্সড করে খেতে পারেন। এতে আপনার পেটের সমস্যা দূর করবে হজম শক্তি বৃদ্ধি করবে, ওজন নিয়ন্ত্রণ করবে। তাই আপনি এভাবে খেতে পারেন, তবে মিষ্টি দই খেলে আপনার হয়তো অসুবিধা লাগতে পারে। তাই টক দই খাওয়াই ভালো, টক দই এর সাথে মিক্স করে খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। আপনার ওজন আরো বাড়তে পারে সে ক্ষেত্রে টক দই খাওয়ার চেষ্টা করবেন।
পুদিনা পাতা ও চাঃ অনেকেই চা নিয়মিত ভাবে খেয়ে থাকে, তাই যদি আপনি পুদিনা পাতার চা খেতে পারেন। সেই ক্ষেত্রে আপনার পেটের চর্বি ও মেদ কমতে দারুন কাজ করবে। তাই এটা হজমের ক্ষেত্রে ভালো কাজ করে, এজন্য পুদিনা পাতা পরিষ্কার করে নিয়ে শুকাতে দেবেন।
শুকানোর পর এই পাতাগুলো পানিতে ফুটিয়ে নিবেন, এরপরে দশ মিনিট পর চুলা বন্ধ করে দিবেন। তারপর একটু মধু দিয়ে মিক্স করে সকাল বিকাল খেতে পারেন। তাহলে অনেক উপকার পাবেন, তাই পুদিনা পাতা খাওয়ার নিয়ম অনুযায়ী পরিমাণ মত খাবেন।
পুদিনা ভেজানো পানিঃ প্রথমে পুদিনা পাতা কুচি কুচি করে নিবেন এরপরে পানিতে ভিজিয়ে রাখবেন, পাঁচ মিনিট ভিজা রাখার পর এই পানি পান করতে পারেন। এছাড়াও পাতা সহ পানি ফ্রিজে রাখতে পারেন, যদি সারারাত রেখে দেন এবং পরের দিন স্বাভাবিক তাপমাত্রা হলে এটা খেয়ে নিতে পারেন। তবে সাথে লেবুর, শসা মিক্স করে খেলে পেটের মেদ কমবে এবং মনকে সতেজ করবে। পুদিনা পাতার চা খাওয়ার পাশাপাশি আপনি চুলে ব্যবহার করতে পারেন, কারণ চুলের জন্য পুদিনা পাতার উপকারিতা রয়েছে।
পুদিনা পাতার চা এর উপকারিতা
যারা এমনিতেই পুদিনা পাতা খেতে পারেন না, তারা পুদিনা পাতা চা খেতে পারেন। কারণ পুদিনা পাতার চা এর উপকারিতা রয়েছে নিম্নের সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো,
পুদিনা পাতার চা একটি প্রাকৃতিক উপাদান যেটি আমাদের শরীরে অনেক কাজ করে থাকে। পুদিনা পাতার গুনাগুন রয়েছে, তাই পুদিনা পাতার চা অনেক সুস্বাদু এবং প্রাকৃতিক ওষুধ হিসেবেও কাজ করে। গবেষণায় দেখা গেছে পুদিনা পাতার মধ্যে রোম্যারিনিক অ্যাসিড এবং ফ্ল্যাভোনয়েড আছে, যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পারে। তাছাড়া এর মধ্যে এন্টি মাইক্রোবিয়াল এবং এন্টিভাইরাল, অ্যান্টিএক্সিডেন্ট, এন্টিঅ্যালার্জেনিক থাকার কারণে এই সমস্যাগুলো দেখা দেয়।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পারে এই প্রাকৃতিক চা তাই প্রতিদিন এক কাপ পুদিনা পাতার চা খেতে পারেন এর ভিতর মেন্থল থাকার কারণে ক্যান্সারের বিরুদ্ধে কাজ করে, প্রোস্টেট ক্যান্সার থেকে দূর করতে পারে।
এই পুদিনা পাতার প্রাকৃতিক গুণ কঠিন ধরনের রোগ থেকে মুক্তি দিতে পারে। তাই প্রতিদিন এক কাপ চা খেতে পারেন। মানুষের শরীরের এই পুদিনা পাতার উপকার করে থাকে ঠিক তেমনি চুলের ক্ষেত্রে ভালো উপকার করে থাকে, কারণ চুলের জন্য পুদিনা পাতার উপকারিতা রয়েছে।
পুদিনা পাতা মানসিক চাপ এবং বিভিন্ন ধরনের উপকার করে থাকে যেমন অফিসের কাজের চাপের ক্ষেত্রে পারিবারিক অশান্তি টাকা-পয়সার চিন্তাভাবনা ইত্যাদি অনেকেই টেনশন করে থাকে। এই ধরনের টেনশন থেকে মুক্তি পেতে নিয়মিত এক কাপ করে পুদিনা পাতার চা খেতে পারেন। এটা মানসিক চাপটা অনেকটাই কমে যাবে তাছাড়া আরও বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সমাধান করবে।
গা হাত পায়ে ব্যথা দূর করার জন্য পাতা খেতে পারেন চা খেতে পারেন। পুদিনা পাতার ডিটেক্স ওয়াটার খেলে আপনার পেশির ব্যথা দূর হয়ে যাবে, এছাড়াও শরীরের বিভিন্ন ধরনের ব্যথা দূর হবে, অনেকের এজমার সমস্যা থাকতে পারে এজন্য পুদিনা পাতার চা খেতে পারেন।
পুদিনা পাতার চা খাওয়ার কারণে শরীরে জীবাণু সংক্রমণ করতে পারে না, এজমা বা শ্বাসকষ্ট যদি থাকে সেটা দূর করতে সাহায্য করে এই পুদিনা পাতা চা। এ জন্যই চা পান করলে শরীর ভালো থাকবে এবং মন ফ্রেশ থাকবে। কেননা পুদিনা পাতার চা এর উপকারিতা রয়েছে।
উচ্চ রক্তচাপ এর সমস্যায় যারা ভুগছেন তারা পুদিনা পাতার চা খেতে পারেন, এতে পটাশিয়াম আছে যা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এজন্য এক কাপ করে চা খেতে পারেন এটা শরীর স্বাস্থ্য এবং অনেক উপকার করে থাকে।
যারা অনিদ্রা সমস্যায় ভুগছেন তারা এই পুদিনা পাতার চা খেতে পারেন। কারণ এর মধ্যে যে উপাদান আছে তা মানসিক চাপ কমাতে পারে, এর কারণে সুন্দর ঘুম হতে পারে এজন্য আপনি পুদিনা পাতা ফুটিয়ে ছেকে নিয়ে তার সাথে মধু মিক্স করেও খেতে পারেন।
যাদের ঠান্ডা সর্দির কাশি রয়েছে তারা ঘুমানো যাওয়ার আগে একটা পুদিনা পাতা খেতে পারেন, এতে করে কাশি এবং নাক বন্ধ হওয়ার সমস্যা দূর হবে। পুদিনার পাতা তেল বানিয়ে ব্যবহার করতে পারেন বিশেষ করে যাদের চুলের সমস্যা রয়েছে তারা খাওয়ার পাশাপাশি যাদের চুলের সমস্যা রয়েছে, তারা পুদিনা পাতার তেল ব্যবহার করতে পারেন।
যাদের ঠান্ডা ঘনঘন লাগে এবং গলায় ঘা হয়ে যায় তারা কোন কিছু খেলে গলায় কাটার মত বেঁধে যায় মনে হয়, এজন্য গরম পানিতে কয়েক ফোটা পুদিনা পাতার তেল দিতে পারেন এবং সেটার ভাব নিবেন এতে তাড়াতাড়ি আরাম পাবেন।
মাথাব্যথা যাদের রয়েছে তারা চাইলে এই পুদিনা পাতার চা খেতে পারেন এতে আপনার স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করবে এবং মাথা ব্যাথা দূর করবে মাইগ্রেনের সমস্যা থাকলে সেটাও আরোগ্য লাভ করবেন।
পুদিনা পাতার চা বানানোর নিয়মঃ ১০ থেকে ১৫ টি পুদিনা পাতা নিতে পারেন দুই থেকে তিন কাপ পানিও নিতে পারেন, অল্প একটু মধু নিবেন একটি সসপ্যান নিবেন।
প্রথমে সসপ্যানে পানি ফুটিয়ে নিবেন এরপরে পুদিনা পাতা দিবেন, কিছুক্ষণ এই পানিটুকু ফুটিয়ে নিয়ে চুলাটি বন্ধ করে দিবেন এবং পানিতে ঢেকে দিবেন। পানি টুকু ঢেকে দিবেন এরপর কয়েক মিনিট পর এই চা ফিলটারে তুলবেন। আপনি আরো বেশি স্বাদ করতে চাইলে মধু দিতে পারেন। আপনি এটা খেতে পারেন এটা আরো অনেক মিষ্টিটা করা হবে এভাবে খেলে আপনি অনেক উপকার পাবেন।
উপসংহারঃ রূপচর্চায় বা চুলের জন্য পুদিনা পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন
পরিশেষে বলা যায় যে পুদিনা পাতা মানুষের শরীরের জন্য অনেক উপকার করে থাকে, তাই আপনি যদি প্রাকৃতিক ভাবে কোন চিকিৎসা করতে চান তাহলে সে ক্ষেত্রে পুদিনা পাতা খেতে পারেন। তাছাড়া ত্বক ও চুলের ব্যবহার করতে পারেন। পোস্টটি যদি আপনার কাছে ভালো লাগে তাহলে আপনার বন্ধু-বান্ধবের নিকট শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ
এম আর মাহমুদ ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url