১৯৭০ সালের নির্বাচনের গুরুত্ব ও তাৎপর্য বা ফলাফল ও পটভূমি সম্পর্কে জেনে নিন

১৯৭০ সালের নির্বাচনের গুরুত্ব ও তাৎপর্য রয়েছে, কারণ এই নির্বাচনের মাধ্যমে বাঙালি জাতির মধ্যে জাতীয়তাবাদ সৃষ্টি হয়েছিল এবং বাংলাদেশ স্বাধীন করেছে। চলুন, এই সাধারণ নির্বাচন সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
ছবি
এই সাধারণ নির্বাচনের ফলে বাংলাদেশের জনগণ আন্দোলনের মাধ্যমে ১৯৭১ সালে দীর্ঘ নয় মাস সংগ্রামের ফলে বাংলাদেশ নামের দেশটি বিশ্বের মানচিত্রে পৌঁছে দিয়েছিলেন। তাই ১৯৭০ সালের নির্বাচনের গুরুত্ব ও তাৎপর্য সম্পর্কে জানতে আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।

পোস্টসূচিপত্রঃ১৯৭০ সালের নির্বাচনের গুরুত্ব ও ফলাফল, পটভূমি সম্পর্কে জেনে নিন

১৯৭০ সালের নির্বাচনের পটভূমি

এই সাধারণ নির্বাচনের পূর্বে অনেকগুলো নির্বাচন হয় কিন্তু কোন নির্বাচনেই পূর্ব বাংলার লোকজন বিজয় লাভ করতে পারে না। এর পেছনে কিছু কারণ বা পটভূমি রয়েছে, তাই ১৯৭০ সালের নির্বাচনের পটভূমি সম্পর্কে নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট ২৩৭ টি আসনের মধ্যে ২২৩টি আসন পেয়ে বিজয় লাভ করলেও মন্ত্রিসভা সহ গঠন করার ক্ষেত্রে পাকিস্তান সরকার মন্ত্রিসভা ভেঙ্গে দিয়েছিল। ১৯৫৬ সালের পাকিস্তানে প্রথম সংবিধানে রচনা করা হয় কিন্তু এই সংবিধানও বাতিল করে। ১৯৫৮ সালের ৭ই অক্টোবর প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইস্কান্দার মির্জা সামরিক শাসন জারি করেছিলেন।
২৭ অক্টোবর তাকে উৎখাত করে সেনা প্রধান জেনারেল আইয়ুব খান তিনি সামরিক শাসন জারি করেছিলেন। ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত চলতে থাকে ১৯৬৯ সালে ২৬ শে মার্চ জেনারেল ইয়াহিয়া খানের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে চলে যান এবং ইয়াহিয়া সাহেব আবার যখন ক্ষমতা পেলেন তখন তিনি নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছিলেন।

১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচন অবিভক্ত পাকিস্তানের একটি নির্বাচন ছিল। ১৯৫৬ সালের সংবিধানের নির্বাচনের কথা উল্লেখ ছিল কিন্তু ১৯৫৮ সালের স্থগিত হওয়ার কারণে পরবর্তীতে যাহোক ১৯৬৯ সালের ২৮শে জুলাই নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দেওয়া হয় এবং নির্বাচনের ঘোষণা দিয়ে থাকে।

নির্বাচনে আওয়ামীলীগ জাতীয় প্রাদেশিক ক্ষেত্রে বিজয় লাভ করেছিলেন, এই বিজয়ার ফলে পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠীর পুর্ব পাকিস্তানের উপর কর্তৃত্ব হারিয়ে ফেলে। এতে তারা পুর্ব পাকিস্তানের স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ অবধ্যায়ের পথ সৃষ্টি হয়েছিল।

১৯৭০ সালের নির্বাচন

১৯৭০ সালের নির্বাচনের গুরুত্ব ও তাৎপর্য রয়েছে। চলুন, জেনে নেওয়া যাক। এই সাধারণ নির্বাচন সম্পর্কে ইয়াহিয়া খানের সামরিক শাসন কালে ১৯৭০ সালের পাকিস্তানের প্রথম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। পুর্ব পাকিস্তান ১৯৭০ সালের অক্টোবরে নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও বন্যার কারণে ডিসেম্বরে এই নির্বাচন হয়েছিল। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে আবার জানুয়ারি তো হয়েছিল।

এই নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছিলেন এবং কতটি দল ছিল সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। নির্বাচনে মোট ২৪টি দল অংশগ্রহণ করেছিল এবং ৩০০ টি আসনে মোট ১৯৯৭ জন প্রার্থী অংশগ্রহণ করেছিল। মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছিল তবে কিছুই প্রার্থী তা বাতিল হয়ে ১৫৭৯ জন প্রার্থী নির্বাচনের জন্য নির্বাচিত হয়েছিল।

আওয়ামী লীগ ১৭০ আসনে প্রার্থী দিয়েছিলেন তার মধ্যে ১৬২ আসন পুর্ব পাকিস্তানের এবং অবশিষ্ট বাকি আসনগুলো পশ্চিম পাকিস্তানি দিয়েছিলেন। জামাত ইসলামের সবচাইতে দ্বিতীয় পজিশনে প্রার্থী দিয়েছিলেন তাদের এবং প্রার্থীর সংখ্যা ছিল ১৯১ জন, তাছাড়া পাকিস্তান পিপলস পার্টি ১২০ টি আসন প্রার্থী দিয়েছিল এর মধ্যে ১০৩ টি ছিল পাঞ্জাব ও সিন্ধু প্রদেশগুলোতে।

পুর্ব পাকিস্তানের এরা কোন প্রার্থী দিতে পারেনি। এছাড়াও পিএমএল ১২৪টি আসনে প্রার্থী দিয়েছিল। জনগণ ব্যাপকভাবে নির্বাচনে ভোট দেওয়ার জন্য অংশগ্রহণ করেছিল এবং সর্বমোট ৫ কোটি ৬৯ লাখ ৪১ হাজার ৫০০ ভোটারের মধ্যে তিন কোটি বারো লাখ ১১ হাজার ২২০ জন পূর্ব পাকিস্তানের এবং দুই কোটি ৩৭ লাখ ৩০হাজার ২৮০ জন পশ্চিম পাকিস্তানের ভোটার ছিল।

ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে আওয়ামীলীগ ১৬০ টি আসনের মধ্যে একটি ১৬০ টি আসনে বিজয় লাভ করেছিল। তাছাড়া আওয়ামীলীগ পূর্ব পাকিস্তান এসেম্বলিতে ৩০০ আসনের মধ্যে ২৮০ টি জয় লাভ করে, যাহোক আর অন্যান্য বাকি দলগুলো ভোট পেয়েছিল।

১৯৭০ সালের নির্বাচনের গুরুত্ব ও তাৎপর্য

যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনের পর ১৯৭০ সালের এই নির্বাচনে ছিল নিরপেক্ষ। তাই ১৯৭০ সালের নির্বাচনের গুরুত্ব ও তাৎপর্য রয়েছে। নিম্নে এর গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো তুলে ধরা হলো,
ছবি
বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিজয়ঃ ভারতের উপমহাদেশের বিভক্তি হওয়ার পর পশ্চিম পাকিস্তান শাসকগণ বাঙ্গালীদের উপর বিভিন্ন ক্ষেত্রে বৈষম্য সৃষ্টি করে। এর কারণে বাঙালি জাতি তাদের ন্যায্য অধিকার এর জন্য আন্দোলন করে কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগণ তাদেরকে বিভিন্নভাবে দমিয়ে রাখে। বাঙালিরা সকল কিছুর জবাব দিয়েছিল ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে বিজয় লাভ করে।

স্বায়ত্তশাসনের দাবির বৈধতা প্রমাণঃ বাঙালিরা দীর্ঘদিন যাবত তাদের আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের জন্য দাবী ছিল এবং বিভিন্ন সময় আন্দোলন করেছিল। তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের সরকার এই আন্দোলন দাবীকে তারা অবৈধ বলে ঘোষণা করেছিল। যার ফলশ্রুতিতে ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচন জনগণ ভোট দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন যে তারা স্বায়ত্তশাসন চায়।

ছয় দফা দাবিকে স্বীকৃতি দানঃ ১৯৬৬ সালের ছয় দফা দাবি আওয়ামীলীগ তাদের নির্বাচনে ইশতেহারে ঘোষণা দিয়েছিল। ১৯৭০ সালের এই নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ ব্যাপকভাবে ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগের ছয় দফা দাবি হিসেবে মেনে নিয়েছিল।

বাঙালি জাতীয়তাবাদ সুদৃঢ়করণঃ ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের থেকে শুরু করে যতগুলো আন্দোলন করেছিল সকল আন্দোলনের মাধ্যমে জাতীয়তাবাদ গড়ে উঠেছিল। যার কারণেই ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমেই বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ সুদৃঢ় হয়েছিল।

পাকিস্তানিদের শোষণ থেকে মুক্তির চেতনা অর্জনঃ পাকিস্তান জন্মের পর থেকেই পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী পুর্ব বাংলার মানুষ জনের উপর বিভিন্ন ধরনের শাসন নিপীড়ন অত্যাচার শুরু করেছিল। এই সকল কারণেই ১৯৭০ সালের নির্বাচনে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।এ নির্বাচনে বিজয়ের মাধ্যমে পুরো বাংলার জনগণ এর দাবি এবং তাদের অধিকার আদায়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।
পশ্চিম পাকিস্তানের কর্তৃত্ব হ্রাসঃ ২৪ বছর পশ্চিম পাকিস্তান পূর্ব পাকিস্তানকে ইচ্ছামতো শাসন করেছিল কিন্তু ১৯৭০ সালের এই সাধারণ নির্বাচনে বিজয় লাভ করার মাধ্যমে তাদের এই দীর্ঘদিনের রাজত্বকে অশনি সংকেত দেখিয়েছিল। তাদের কর্তৃত্ব হ্রাস পেয়েছিল, এই নির্বাচন ছিল তাদের কাছে একটি অপমানজনক।

সংগ্রামী মনোভাব সৃষ্টিঃ এই নির্বাচনের আওয়ামী লীগের জয় লাভের পর ইয়াহিয়া ভুট্টো সরকার ক্ষমতা হস্তান্তরের বিভিন্ন ধরনের টালবাহানা শুরু করেছিল। ইয়াহিয়া জাতীয় পরিবেশ অধিবেশন করেছিলেন সেটা স্থগিত ঘোষণা করেছিলেন। যার ফলে পুরো পাকিস্তানের জনগণ সংগ্রামী হয়ে উঠেছিল, এর পরিপ্রেক্ষিতে অসহযোগ আন্দোলন শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের রূপ নিয়েছিল।

অধিকার আদায়ঃ সামাজিক রাজনৈতিক অর্থনৈতিক সাংস্কৃতিক সকল দিক থেকেই পূর্ব বাংলার মানুষ বৈষম্য সৃষ্টি হয়েছিল এবং লাঞ্ছিত বঞ্চিত হয়েছিল। যার কারণে ১৯৭০ সালের এই নির্বাচনের বিজয়ের মাধ্যমে পুর্ব বাংলার মানুষ উদযাপিত হয়েছিল এবং তাদের অধিকার আদায়ের একটি সূচনা হয়েছিল। যার বিনিময়ে তারা ১৯৭১ সালে দীর্ঘ নয় মাসের রক্ত ক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে এদেশ স্বাধীন করেছিল।

নিরপেক্ষ নির্বাচনঃ ১৯৭০ সালের এই সাধারণ নির্বাচন ক্ষমতাসীন সরকারের প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণ, কোন রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করে নাই। যার কারণে এটা একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন ছিল এবং এই নির্বাচনটি গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সুষ্ঠু পরিবেশে নির্বাচন হয়েছিল।

পাকিস্তানের দুই অঞ্চল এর স্বার্থ ও আশা আকাঙ্ক্ষা ভিন্নতার দেখা দিয়েছিল, যার কারণে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হয় সামরিক আমলাচক্রের কারণে বাঙালি জনগণ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসুবিধায় পড়েন। এর ফলশ্রুতিতে এই নির্বাচনের কারণে পাকিস্তানের দুই অঞ্চলের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে গিয়েছিল।

সংবিধান প্রণয়নঃ একটি দেশ পরিচালনা করার জন্য যে সকল জিনিস প্রয়োজন হবে, তার জন্য একটি সংবিধান থাকা দরকার। তাই ১৯৭০ সালের এই নির্বাচনের জনপ্রতিনিধিরা জনগণের আশা পূরণ করার জন্য এ নির্বাচন করেছিলেন এবং এই নির্বাচনে বিজয় লাভ করার ফলে নির্বাচনী ইশতেহারে বলা হয়েছিল ৬ দফা ও ১১ দফার ভিত্তিতেই সংবিধান প্রণয়ন করা হবে।

যেহেতু এই নির্বাচনে জয়লাভ করেছিল এজন্য সরকার গঠনের জন্য আওয়ামী লীগ সরকার সংবিধান প্রণয়নের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এরপর ১৯৭২ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশের সংবিধান কার্যকারী করা হয়েছিল।

স্বাধিকার ও মুক্তি লাভের বহিঃপ্রকাশঃ এই নির্বাচনের কারণে বাঙালি জাতির নিকট খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এই নির্বাচনে আওয়ামীলীগ বিজয় লাভ করার ফলে দীর্ঘ ২৫ বছরের পশ্চিমা শাসকদের দুঃশাসন ও শোষণের হাত থেকে বাঙালি জাতি মুক্তি পেয়েছিল।

১৯৭০ সালের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা

১৯৭০ সালের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ। ১৯৭০ সালের ৬ জানুয়ারিতে বঙ্গবন্ধু পুনরায় আওয়ামী লীগের সভাপতি হয়েছিলেন। এরপরে তিনি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। ৭ জুন ময়দানে একজন সভায় ছয় দফা দাবি নিয়ে ইস্তেহার দিয়ে তিনি নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন এবং দেশবাসীর নিকট আহবান করেছিল।

এরপর ১৭ই অক্টোবর বঙ্গবন্ধু নির্বাচনী নৌকা প্রতীক হিসাবে পছন্দ করেছিলেন এবং ঢাকার ধুলায় খালে প্রথম নির্বাচনে জনসভার নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছিলেন। ১৯৭০ সালের ২৮ শে অক্টোবর জাতির উদ্দেশ্যে বেতার টিভিতে তিনি ভাষণ দিয়েছিলেন এবং ছয় দফা বাস্তবায়নের জন্য তিনি প্রার্থীদের কে জয়যুক্ত করার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন।

১২ ই নভেম্বর গুর্কি উপকূলীয় এলাকায় প্রায় দশ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়, এতে বঙ্গবন্ধু নির্বাচনী প্রচারণা বাতিল করেছিলেন এবং এই সকল অঞ্চলে তিনি গিয়েছিলেন এবং জনমানুষের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। শাসকদের উদাসীনতার তীব্র নিন্দা প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন মানুষের ত্রানের ব্যবস্থা করার জন্য বিশ্ববাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন।

সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতার সাথে অর্জন করেছিলেন। ওই সময়ে তিনি পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে ১৮৯ টি আসনের মধ্যে ১৬৭ আসন পেয়ে বিজয় লাভ করেছিলেন এবং প্রাদেশিক পরিষদ গুলোতে ৩০০ টা আসন এর মধ্যে ২৮৮ টি আসন পেয়ে বিজয় লাভ করেছিলেন।

১৯৭০ সালের নির্বাচনের ফলাফল

ইতোমধ্যে ১৯৭০ সালের নির্বাচনের গুরুত্ব ও তাৎপর্য সম্পর্কে জেনেছি, এখন জানবো এই নির্বাচনের ফলাফল সম্পর্কে চলুন জেনে নেওয়া যাক। এ নির্বাচনের ফলে বাঙালি জাতির মধ্যে জাতীয়তাবাদের ঐক্যবোধ সৃষ্টি হয়। যার ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশ স্বাধীন করার অনুপ্রেরণা তারা পেয়েছিল।
ছবি
৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের পাকিস্তানের সামরিক শাসক আইয়ুব খানের পতন ঘটেছিল। যার ফলে পরবর্তীতে আরেক সামরিক শাসন শাসক ইয়াহিয়া খান পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের আন্দোলনের কারণে ২৬শে মার্চ ১৯৬৯ সালে তিনি ১৯৭০ সালের প্রাদেশিক ও জাতীয় পরিষদের নির্বাচন করার জন্য ঘোষণা দিতে বাধ্য হয়েছিলেন।

যার ঘোষণা অনুযায়ী জাতীয় পরিষদের নির্বাচন হয়েছিল ৭ই ডিসেম্বর ১৯৭০ সালের প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে পাকিস্তানের ইতিহাসে এটাই ছিল সাধারণ নির্বাচন। ১৯৫৪ সালের নির্বাচন ছিল শুধুমাত্র প্রাদেশিক নির্বাচনী হয়েছিল। ১৯৭০ সালে প্রাদেশিক এবং কেন্দ্রীয় পরিষদের নির্বাচন হয়।
জাতীয় পরিষদের নির্বাচনে সমগ্র পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের আসন ছিল ৩১৩ টি তার মধ্যে সাধারণ আসন ৩০০ আর মহিলাদের সংরক্ষিত আসন ছিল ১৩ টি। ৩১৩ টি আসনের মধ্যে পুর্ব পাকিস্তানের জন্য ১৫৯ টি আসন পশ্চিম পাকিস্তানের জন্য নির্ধারিত।

১৪৪ টি আসন নির্বাচনের ফলাফল অনুযায়ী আওয়ামী লীগ পুর্ব পাকিস্তানের ১৫৯ টি আসনের মধ্যে ১৬৭ টি আসন পেয়েছিল। আর পশ্চিম পাকিস্তানের পিপলস পার্টি ১৩৮ টি সাধারণ আসনের মধ্যে মহিলা আসন নিয়ে ৮৮ টি আসন পেয়েছিল।

প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে মোট আসন সংখ্যা ৬২১। ১৯৭০ সালের নির্বাচনের ফলাফল বলা যেতে পারে এভাবে যে আওয়ামী লীগ ৩০০ টি আসনের মধ্যে ২৮৮ টি এবং ১০ টি মহিলা সংরক্ষিত আসন সহ ২৯৮ আসন পায়।

পিডিপি তারা ১৪৪ টি আসনের মধ্যে ২ টি সাধারণ আসন পেয়েছিল, জামাত ইসলামী ১৭৪ আসনের মধ্য সাধারণ ১ টি আসন পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছিল। ম্যাপ ন্যাপ ১০৭ টি আসনের মধ্যে মাত্র ১ টি আসন পেয়েছিল। স্বতন্ত্র ৪০ টি আসনের মধ্যে ৮ টি আসন পেয়ে উত্তীর্ণ হয়।

সর্বমোট এই ফলাফলের ভিত্তিতে বলা যেতে পারে যে ১৯৭০ সালের এই নির্বাচনে জনগণ তাদের মনের খুব দুঃখ বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছিল যার কারণে আওয়ামীলীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতার সহ বিজয় লাভ করেছিল। এই নির্বাচনের ফলাফলের মাধ্যমেই মূলত স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের সূচনা হয়েছিল।

লেখকের শেষ কথা

পরিশেষে বলা যায় যে ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ ভাবে বিজয় লাভ করেছিল। এই বিজয়ের মাধ্যমেই পরবর্তীতে বাংলাদেশ স্বাধীন করার অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল পুর্ব পাকিস্তানের জনগণকে। তাই ১৯৭০ সালের নির্বাচনের গুরুত্ব ও তাৎপর্য রয়েছে। এই পোস্টটি যদি আপনার কাছে ভালো লাগে তাহলে আপনার বন্ধু-বান্ধবের নিকট শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এম আর মাহমুদ ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪