ইখতিয়ার উদ্দিন মোহাম্মদ বখতিয়ার খলজির বাংলা বিজয় এর কারণ ও ফলাফল সম্পর্কে জেনে নিন
ইখতিয়ার উদ্দিন মোহাম্মদ বখতিয়ার খলজির বাংলা বিজয় ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে মুসলিমদের ক্ষেত্রে ইসলাম প্রচার করা সহজ হয়েছিল। তাই চলুন, বখতিয়ার খলজির বাংলা বিজয়ের সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
বখতিয়ার খলজি অত্যন্ত সাহসিকতার সাথে এবং তার অশ্বারোহী বাহিনী নিয়ে সুকৌশলে লক্ষণ সেনকে হটিয়ে বাংলা বিজয় করেছিলেন। তাই ইখতিয়ার উদ্দিন মোহাম্মদ বখতিয়ার খলজির বাংলা বিজয় সম্পর্কে জানতে পোস্টটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
পোস্টসূচিপত্রঃইখতিয়ার উদ্দিন মোহাম্মদ বখতিয়ার খলজির বাংলা বিজয় এর কারণ ও ফলাফল সম্পর্কে জেনে নিন
বখতিয়ার খলজি
বখতিয়ার খলজি তুর্কি বংশভূত মুসলিম খলজি উপজাতির সদস্য ছিলেন। বখতিয়ার খলজির পূর্ণ নাম হলো মালিক গাজী। বখতিয়ার খলজী তিনি আফগানিস্তানের গরমশির অঞ্চলের অধিবাসী। বাল্যকাল সম্পর্কে তেমন কিছু জানা যায়নি, তবে ইতিহাস থেকে বোঝা যায় যে তিনি ছিলেন ভাগ্য অন্বেষী বীর সৈনিক কিন্তু তার দরিদ্রতার কারণে নিজ দেশ ছেড়ে বিভিন্ন জায়গায় কাজের সন্ধান করতেন।
গজনির সুলতান মোহাম্মদ ঘুরীর সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার জন্য বিভিন্ন ধরনের ব্যবস্থা করেছিলেন কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী সামর্থ্যর অভাবে সৈনিক হিসেবে যোগদান করতে নিজের ঘোড়া থাকতে হবে ও যুদ্ধ অস্ত্রের ব্যবস্থা থাকতে হবে। তাছাড়া তিনি আকারে খাটো ছিল, কুৎসিত চেহারা থাকার কারণে যোগদান করতে পারেননি। পরবর্তীতে দিল্লির সম্রাট তার নিকটে গেলেও ব্যর্থ হয়, এভাবে তিনি বিভিন্ন জায়গায় কাজের সন্ধানে গেলে তার কোন কাজের ব্যবস্থা হয়নি।
বখতিয়ার খলজির বাংলা বিজয়ের কারণ ও ফলাফল
বখতিয়ার খলজি বিভিন্ন জায়গায় কাজের সন্ধান করতে করতে করতে একসময় তিনি বাংলা বিজয় করেন। তাই ইখতিয়ার উদ্দিন মোহাম্মদ বখতিয়ার খলজির বাংলা বিজয় এর কারণ ও ফলাফল এর গুরুত্ব রয়েছে। নিম্নে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো,
বখতিয়ার খলজির বাংলা বিজয়ের কারণঃ বখতিয়ার খলজির বাংলা বিজয়ের পেছনে অনেক কারণ আছে। তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কারণগুলো নিম্নে বর্ণনা করা হলো,
বাংলার মুসলিম আধিপত্য প্রতিষ্ঠাঃ বখতিয়ার খলজী বাংলা বিজয়ের জন্য মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠা করা জরুরি ছিল। তাই তিনি বাংলায় মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠা করার জন্যই দিল্লির সুলতান কুতুবউদ্দিনের অনুমতি নিয়েছিলেন। এরপরে বাংলা অভিযান শুরু করেছিলেন।
লক্ষণ সেনের দুর্বলতাঃ বখতিয়ার খলজি বাংলা বিজয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কারণ ছিল। তখনকার বাংলার সেন বংশের লক্ষণ সেন ছিলেন শাসক যিনি তার শাসন কার্য পরিচালনা করতে দুর্বলতা ছিল। আর এই দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে বখতিয়ার খলজি বাংলায় অভিযান করতে সাহস পেয়েছিলেন।
অরক্ষিতঃ লক্ষণ সেনের সময় উপ-রাজধানী বলা হতো নদীয়া কে, এজন্য সামরিক ক্ষেত্রে নদীয়া ছিল অরক্ষিত আর লক্ষণ সেনের মন্ত্রীগণ আগেই জানতো যে বখতিয়ার খলজী কর্তৃক নদীয়া আক্রমণ হতে পারে এজন্য তারা নদীয়া থেকে পলায়ন করেছিল।
লক্ষণ সেনের বার্ধক্যঃ লক্ষণ সেন এর বয়স বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে তিনি সিংহাসনে আরোহন করেছিলেন। কিন্তু প্রথম থেকে ভালো কার্য পরিচালনা করলেও পরবর্তীতে তার এই দাপটটা কমে যায়।তিনি ধর্ম কর্মে মনোযোগী হয়েছিলেন যার কারণে বখতিয়ার খলজি বাংলা অভিযান করতে সাহস পেয়েছিলেন।
তুর্কি সেনাবাহিনীর শ্রেষ্ঠত্বঃ বখতিয়ার খলজি তুর্কি সেনাবাহিনীরা অত্যন্ত শক্তিশালী এবং সুকৌশলী বহু গুণে গুণান্বিত ছিল। যার কারণে অতর্কিত আক্রমণের প্রতিরোধ করার মত ক্ষমতা লক্ষণ সেনের সেনাবাহিনী সাহস পেতনা।
জনগণের অসন্তোষঃ লক্ষণ সেন শাসন পরিচালনা করেছিলেন জনগণের উপর বেশিরভাগ অত্যাচার করতেন। যার কারণে জনগণ ও তার প্রতি সন্তুষ্ট ছিল না, এজন্য তারা এই রাজার শাসন থেকে মুক্তি পেতে চেয়েছিল। তাই জনগণ তাকে সাহায্য করতে পারে নাই এই সময় কি কাজে লাগিয়ে বখতিয়ার খলজি বাংলা আক্রমণ করেছিলেন।
বাংলায় ইসলাম ধর্ম প্রচারঃ বখতিয়ার খলজি অন্যতম কারণ ছিল ইসলাম ধর্ম প্রচার করা এজন্য বখতিয়ার খলজি বাংলার হিন্দু শাসন কে বিতাড়িত করার জন্য এই অভিযান টা করেছিলেন।
পরিচিত পথ পরিহারঃ বখতিয়ার খলজী বাংলা বিজয়ের আরো একটি কারণ ছিল তিনি যে সকল রাস্তা দিয়ে গেলে তারা বুঝতে পারবে এজন্য তিনি দুর্গম পথ দিয়ে বাংলায় আক্রমণ করেছিলেন, এর কারণে লক্ষণ সেনের সেনাবাহিনী বুঝতে পারে নাই।
বণিকের ছদ্মবেশ ধারণঃ বখতিয়ার খলজি বাংলা বিজয়ের উদ্দেশ্য এসেছিলেন তারা বুঝতে পারে নাই। একপ্রকার ঘোড়া ব্যবসায়ী হিসেবে তিনি রাজপ্রাসাদের ভিতরে প্রবেশ করেছিল এবং অতর্কিত হামলা চালিয়েছিল।
মূল সেনাবাহিনীর তড়িত আক্রমণঃ বখতিয়ার খলজি মাত্র ১৮ জন সৈন্য নিয়ে লক্ষণ সেনের রাজ্যে আক্রমণ করেছিলেন এবং অল্প সময়ের মধ্যেই এই মূল বাহিনী উপস্থিত হয়েছিলেন। এই জন্য লক্ষণ সেন কোন প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে নাই, প্রাণের ভয়ে তিনি পালিয়ে গিয়েছিলেন।
বখতিয়ার খলজির বাংলা বিজয়ের ফলাফলঃ বখতিয়ার খলজি অতি সহজেই বাংলা বিজয় করেছিলেন এবং হিন্দু শাসনের অবসান ঘটিয়েছিল। এজন্য তিনি মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, নিম্নে বখতিয়ার খলজির বাংলা বিজয়ের ফলাফল সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠাঃ এই বিজয়ের মধ্য দিয়ে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছিলেন এজন্য বখতিয়ার খলজি প্রথম বাংলার মুসলিম শাসক হিসেবে ধরে নেওয়া হয়। তাছাড়া বাংলা অভিযানের মাধ্যমে তিনি হিন্দু শাসন কার্য চিরতরের জন্য অবসান ঘটিয়েছিলেন।
হিন্দু শাসনের অবসানঃ বখতিয়ার খলজির বাংলা বিজয়ের ফলে হিন্দু শাসনের অবসান ঘটেছিল এবং তার পরিবর্তে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠা হয়। বাংলা লক্ষণ সেনের শাসন কার্য শেষ হয়ে যায়।
মুসলিম আধিপত্য প্রতিষ্ঠার সূচনাঃ বখতিয়ার খলজি বাংলা বিজয়ের ফলে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠা করার পথের সৃষ্টি হয়েছিল এবং এই অঞ্চলের রাজনীতির সংস্কৃতি ধর্মীয় ক্ষেত্রে মুসলমানরা সুন্দরভাবে জীবন যাপন করেছিল। প্রায় ৫৫০ বছর এই বাংলার মুসলিম শাসন কার্য পরিচালিত হয়।
ইসলাম প্রচার বৃদ্ধিঃ বখতিয়ার খলজি বাংলা বিজয়ের ফলে উপমহাদেশে ইসলাম প্রচারের একটি ব্যাপক সাড়া ফেলেছিল এবং ইসলাম প্রচারের ক্ষেত্রে বৃদ্ধি পেয়েছিল। যদিও বাংলার মুসলমানরা বাংলা বিজয়ের পূর্বেও অনেক সূফী সাধক বাংলায় ধর্ম প্রচার করতে এসেছিলেন কিন্তু সুফি সাধকদের প্রচার আরো বৃদ্ধি করার জন্য এই বাংলা বিজয় করেছিলেন এবং তারা খুব সুন্দর মতে ইসলাম প্রচার করতে পেরেছিলেন।
ধন সম্পদ লাভঃ বাংলা বিজয়ের ফলে লক্ষণ সেনের অনেক সম্পদ ছিল সেগুলো বখতিয়ার খলজী দখল করে নেয় এবং বিপুল সম্পদের মালিক হন।
রাজ্য সীমা নির্ধারণঃ বখতিয়ার খলজির বাংলা বিজয়ের কারণে উত্তরের রাজ্য সীমানা পূর্ণিয়া দেবকোট ও রংপুরের পূর্বে তিস্তা ও করতোয়া নদীর এবং পশ্চিমে কুশী নদীর থেকে রাজমহল পর্যন্ত এই সীমানা নির্ধারণ করা হয়েছিল।
ইখতিয়ার উদ্দিন মোহাম্মদ বখতিয়ার খলজির বাংলা বিজয়
ইখতিয়ার উদ্দিন মোহাম্মদ বখতিয়ার খলজির বাংলা বিজয় ভারতীয় উপমহাদেশে মুসলমানদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কারণ তারা নির্দ্বিধায় ইসলাম প্রচার করতে পারত, তাই এই অত্যাচারী শাসক লক্ষণ সেন কে তার শাসন কার্য দূরীভূত করার জন্যই বখতিয়ার খলজী মাত্র ১৭ জন সৈনিক নিয়ে ১২০৪ খ্রিস্টাব্দে ঘোরা ব্যবসায়ী হিসেবে সেজে তিনি নদীয়ার রাজা লক্ষণ সেনকে পরাজিত করেছিলেন।
বাংলা বিজয় করেন ইতিহাসের পাতায় এটা লেখা থাকবে এবং ইসলামের ইতিহাসে তার এই বিজয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাহলে এই বখতিয়ার খলজি কিভাবে মাত্র ১৭ জন সৈনিক নিয়ে বাংলা বিজয় করেছিলেন সেই সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
ত্রয়োদশ শতকে বাংলাদেশ শাসন কার্য পরিচালনা করেছিলেন সেন বংশের রাজা লক্ষণ সেন। এছাড়াও তিনি নদিয়ায় বসবাস করছিলেন। এমত অবস্থায় তার দরবারের পন্ডিতরা বলেছিল তাদের প্রাচীন গ্রন্থে লিপিবদ্ধ আছে যে বাংলা তুর্কিরা এই অঞ্চল দখল করে নেবে। যার কারণেই হয়তো ভবিষ্যৎ বাণী অনুযায়ী ভারতে উত্তর ভারত করেছিল দখল করে নিয়েছিল এবং বখতিয়ার খলজি বিহার জয় করেছিলেন।
ব্রাহ্মণ পন্ডিতরা তারা জানতে চেয়েছিলেন যে প্রাচীন গ্রন্থে বাংলা আক্রমণকারীর দেহবয়ব সম্পর্কে তেমন কোন ইঙ্গিত ছিল না কিন্তু জবাবে পন্ডিতগুণ বলেছিলেন যে তুর্কি বাংলা তুর্কিরা বাংলা জয় করবে। তিনি আকৃতিতে খাটো হবে এবং দেখতে কুৎসিত হবে, তার হাতগুলো লম্বা হবে।
বিশ্বস্ত লোক দিয়ে রাজাকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল লক্ষণ সেনকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। বিহার বিজয় বখতিয়ার খলজির সাথে প্রায় মিলে গিয়েছিল। তুর্কি আক্রমণ একপ্রকার লক্ষণ সেন বুঝতে পারছিলেন কিন্তু তারপরও তিনি আমলে নেননি এজন্য ব্রাহ্মণ পণ্ডিতগণ রাজার অনুমতি ছাড়াই নদীয়া থেকে পালিয়ে গিয়েছিল।
এছাড়া ঐতিহাসিক মিনহাজ উদ্দিন সিরাজ তার 'তবকাদ ই নাসিরি' গ্রন্থে তিনি এই কথাগুলো বলেছিলেন। ঘটনাটি পরবর্তীতে সত্যি হয়েছিল কিন্তু তিনি জোর করে বলতে পারেন না, যার কারণে পরবর্তীতে বখতিয়ার খলজি নদীয়া আক্রমণ করেছিলেন এবং বাংলায় মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠা করেন।
উপমহাদেশে এই মুসলিম সাম্রাজ্য বিস্তারের জন্য তিনটি স্তর লক্ষ্য করা যেত, প্রথমে আর একজন মোহাম্মদ বিন কাসেম তার নেতৃত্বে ৭১২ খ্রিস্টাব্দে সিন্দু ও মুলতান জয় করেছিলেন। ও তার পুত্র সুলতান মাহমুদ তিনিও বারবার উপমহাদেশে আক্রমণ করেছিলেন। তিনি লাহোরের সাথে যে পরিবেশিত এলাকা গুলো আছে সেগুলো তার গজনের সাথে অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন।
তৃতীয় পর্যায়ে তুর্কিরা এই বাংলা আক্রমণ করেছিলেন এবার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন মোহাম্মদ ঘুরি এ আক্রমণের তুর্কিরা দিল্লিকে কেন্দ্র করে উপমহাদেশে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল এবং মুসলিম শাসনকে স্থায়ী রূপে পরিগণিত করেন বখতিয়ার খলজি এই আক্রমণের মধ্যে দিয়ে তৃতীয় পর্যায়ে পরিপূর্ণ হয়।
বখতিয়ার খলজী বিভিন্ন জায়গায় চাকরির জন্য ঘোরাঘুরি করে যখন ব্যর্থ হয়ে যান। সর্বশেষ অযোধ্যার শাসক হাসাম উদ্দিন বখতিয়ার খলজির প্রতিভা দেখে তাকে দুটি পরগনার জায়গীর প্রদান করেছিলেন এবং মুসলিম রাজ্যের সীমান পূর্ব সীমান্ত রক্ষির কাজে তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল।
তার ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল এর সম্ভাবনা দেখতে পেয়েছিলেন বখতিয়ার খলজি যখন দেখলেন এই সীমান্তহওয়ার কারণে পার্শ্ববর্তী হিন্দু রাজ্য গুলো সংস্পর্শ পেয়েছিলেন। এই রাজ্যগুলো বিস্তারের পরিকল্পনা তিনি করেছিলেন পার্শ্ববর্তী হিন্দু রাজ্য গুলোতে পূর্বে থেকে তুর্কি আক্রমণের ভয় তারা পেতো।
পারস্পরিক অন্তর বিরোধী লেগেই থাকতো সঙ্গবদ্ধ তাদের মাঝে ছিল না এই সুযোগটাই নিয়েছিলেন তিনি কিছু সৈন্যকে সংগ্রহ করে এক এক করে হিন্দু রাজ্য গুলো আক্রমণ করেছিল এবং লুট করে নেন। এই সময় ঠিক রাজ্য বিস্তার করার উদ্দেশ্য তার তেমন একটা ছিল না তিনি বরং সম্পদকে লন্ডন করা বা তার নিজের হাতে নিয়ে আসা সৈন্যবাহিনী বড় করা এই ধরনের পরিকল্পনায় তার ছিল।
যখন তার খ্যাতি সরিয়ে পড়লো তখন ওই সম্প্রদায়ের লোক গুলো মুসলিম জনগণ তার সাথে যোগ দিয়েছিল। এভাবে তিনি সামনের দিকে অগ্রসর হতে লাগলেন, একদিন প্রাচীর বেষ্টিত দূর্গের নেয় একটি স্থানে এসে তিনি উপস্থিত হয়েছিলেন। সেখানে স্বভাবসুলভ চড়াও হয়ে তিনি এর বাহু অধিবাসীকে হত্যাাও করেছিলেন এবং কোনো বাধা ছাড়াই জায়গাটি দখল করেছিল।
সেখানকার অধিবাসীরা সকলেই মন্দিত মস্তক তারা ছিল তারা অধিকাংশ ছিল বৌদ্ধ ভিক্ষুক এবং স্থানটি ছিল বই পুস্তকে পরিপূর্ণ করা। আর জিজ্ঞাসাবাদ করে তিনি জানতে পারলেন যে এখানে কোন দূর্গ নাই এটা হল একটি বৌদ্ধ বিহার। বিহার টির নাম দেওয়া হয়েছিল উদন্তপুরী বিহার। জায়গাটি মুসলমানরা নাম দিয়েছিলেন বিহার শরীফ, এই জন্যই সেই নামই এখনো পর্যন্ত পরিচিত লাভ করে আসছে।
এই বিহার জয় করে নিয়েছিলেন বখতিয়ার খলজি নামে একটি জায়গা এখনো খুঁজে পাওয়া যাবে। তাছাড়া লাগামহীন ঐতিহাসিক নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় ধ্বংস করে দিয়েছিল। তারপরে তিনি বিপুল সংখ্যক সৈন্য নিয়ে নদীয়া আক্রমণ করেছিলেন এভাবে তিনি সাহসিকতার সাথে ঘোড়া চালনায় পারদর্শী থাকার কারণে মাত্র ১৮ জন সেনা নিয়ে সেখানে উপস্থিত হয় এবং পরবর্তীতে ১৭ জন ঘোড়া নিয়েই কিন্তু বাংলা বিজয় করেছিলেন।
তবে কথাটি যে ঐতিহাসিকভাবে পরিচিত বা অনেকেই জানে কিন্তু মিনহাজ উদ্দিন স্পষ্টভাবে বলেছিলেন বখতিয়ার খলজি ১৮ জন ঘোড়া নিয়ে নদীয়া পৌঁছেছিলেন ঠিকই এবং তার মূল বাহিনী পিছনে ফলো করে আসছে ছিল।
তাছাড়া সুকৌশলী বখতিয়ার খলজি যে পথে পাহারা দেওয়া রয়েছে সেই পথে না গিয়ে জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে ঝাড়খণ্ডের মধ্যে দিয়ে তিনি এখানে পৌঁছেছিলেন এবং তার ছোট দলে ভাগ করা ছিল এ ফলে তিনি নদীয়া পৌঁছে যাওয়ার পর তুর্কি বাহিনী বখতিয়ার খলজি বাংলা বিজয় করতে পেরেছিলেন।
মনে করেছিল কিন্তু তিনি লক্ষণ সেনের প্রাসাতে উপস্থিত হয়েছিল এবং দারোয়ানকে হত্যা করেছিলেন, তখন রাজা দুপুরের খাবার খাচ্ছিলেন এই সংবাদ পেয়ে নগ্ন পথে প্রাসাদের পিছন দিয়ে তিনি পালিয়ে ছিলেন। এবং বিক্রমপুর গিয়ে আশ্রয় গ্রহণ করেছিলেন বখতিয়ার খলজির তিনদিন যাবত নদীয়ায় সকল কিছু লুটপাট করে নিয়েছিলেন।
এবং লক্ষণ সেনের বিপরীত সম্পত্তিরি হস্তান্তর করেছিল এভাবে তিনি বাংলা বিজয় করে সেখানে নাম দিয়েছিলেন লখনৌতি। এভাবে তিনি সুশাসন নব রাজ্য তিনি সুশাসন ব্যবস্থা চালু করেছিলেন এবং পরবর্তীতে যত অভিযান শুরু হয়েছিল মুসলিমদেরকে নিয়ে তিনি প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন তাদের জন্য মুসলমানদের বসবাসের জন্য তিনি মসজিদ মাদ্রাসা খানকা বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করে দিয়েছিলেন।
সেজন্য তিনি শৃঙ্খলা বদ্ধ জীবন যাপনের জন্য প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন এছাড়া তিনি হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের কাছে বখতিয়ার শুধু একজন খুনি হিসেবেই পরিচিত। তবে এটা বলা ঠিক হবে না ইতিহাসের একটি অংশের ধ্বংস তার হাতে হয়েছিল ঠিক এবং পরবর্তীতে আরেকটি সৃষ্টিও করেছিলেন বাংলাদেশের বিখ্যাত কবি আল মাহমুদ বখতিয়ারের ঘোড়া তার এই গ্রন্থটিতে বক্তিয়ার খলজিকে একজন প্রশংসনীয় বীর হিসাবে চিহ্নিত করেছিলেন
বখতিয়ার খলজির তিব্বত অভিযান
ইতিমধ্যে ইখতিয়ার উদ্দিন মোহাম্মদ বখতিয়ার খলজির বাংলা বিজয় সম্পর্কে আমরা জেনেছি এখন জানবো বখতিয়ার খলজি তিব্বত অভিযানের দিকে নজর দিয়েছিলেন তাই এ সম্পর্কে নিম্ন বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
মুসলমানরা ১১৯৮ সাল থেকে ১২০২ সালের মধ্যে সেন রাজবংশের উৎপাত করার জন্য বাংলা জয় করেছিল কিন্তু পরবর্তীতে বাংলার গভর্নর বখতিয়ার তিনবার জয়ের জন্য আকাঙ্ক্ষা করেছিল তিব্বত হয়েছে ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলেই তিনি বাংলার ঐতিহ্যবাহী বাণিজ্য রোড থাকার কারণে সেগুলোতে স্বর্ণের উপর খনি ছিল যার কারণে তিনি তিব্বত দখল করতে পারলে ইউরোপের মধ্যে একটি শিল্প রোড নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে ।
বখতিয়ার খলজি ১০ হাজার ঘোড়া পারদর্শী সৈন্যবাহিনী নেতৃত্ব দিয়ে তিনি উত্তর দিকে অগ্রসর হয়েছিলেন। এরপর তিনি একটি প্রাচীন পাথর সেতু দেখতে পেয়েছিলেন, বখতিয়ার খলজি কামরূপের রাজা কে সমর্থন করে এজন্য বাঙালি বাহিনীকে তার অঞ্চল দিয়ে যেতে দেওয়ার অনুমতি দিয়েছিল এরপর যেখান দিয়ে গেলে তিব্বতের সাথে কাছাকাছি সংযোগ ছিল তারপর তিনি এই গ্রামগুলোতে লন্ডন করে আক্রমণ করার ফলে তার বাহিনীকে পিছনে হঠাৎ নির্দেশ দিচ্ছিলেন।
পরবর্তীতে পাহাড়ি পালানোর পথেই মুসলিম সেনাবাহিনীকে আক্রমণ করে যাওয়ার পথে বাধা দিয়েছিল এবং বখতিয়ার খলজি খলজী চেষ্টা করেও তিনি ব্যর্থ হয় পরবর্তীতে পরাজয় বরণ করার কারণে প্রত্যাবর্তনের সময় আঘাত পেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। এর পরবর্তীতে অসুস্থ হয়ে থাকার কারণে তাছাড়া অন্য একটা বর্ণনায় পাওয়া যায় যে বাংলার দেবকটে ফিরে আসার পরে আলী মর্দন খলজি কে হত্যা করেছিল।
বখতিয়ার খলজি কোথায় মারা যায়
বখতিয়ার খলজির বাংলা বিজয় করার ফলে দাপটের সাথে তিনি শাসন কার্য পরিচালনা করেছিলেন কিন্তু এরপরও তিব্বত আক্রমণ করে তিনি ব্যর্থ হন। তাই এই শোকেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো
১২০৬ খ্রিস্টাব্দে বখতিয়ার খলজির তিব্বতের অভিযান করেছিল সে অভিযানে উপজাতিদের বিশ্বাসঘাতকতার কারণে এবং কৌশলের কাছে পরাজিত হয়। এতে তার সেনা দলের অনেক অংশই ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। পরবর্তীতে তিব্বত বিপর্যয়ের পরেই ব্যর্থতার গ্লানি নিয়ে শোকে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন।
বর্তমান দিনাজপুরে ফিরে আসলেন এখানেই তার মৃত্যু হয়েছিল। তবে কেউ বলেন মীর মর্দান এর হাতে তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন। ইতিহাসের পাতায় অনেকটাই নাম লিখেছিলেন কিন্তু পরবর্তীতে অবহেলিত ও অজ্ঞতাবীর হওয়ার কারণে সমাধিস্থলটা তেমন একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় হয়নি। বখতিয়ার খলজি কবর যে এখনো চিহ্নিত আছে তাও হয়তো অনেক মানুষ জানে না।
মুসলিম শাসনের এই প্রতিষ্ঠাতা বখতিয়ার খলজি বর্তমানে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায় সম্মানিত এই জেলার বালুরঘাট মহকুমার গঙ্গারামপুর থানায় পীরপালে তার সমাধি রয়েছে মুসলিম এই শাসনামলের বহু স্থাপনার মতই অযত্নে অবহেলায় ধ্বংসের দিকে যাচ্ছেবখতিয়ার খলজি এই সমাধি স্থলে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের মধ্যে বারদুয়ারি ও দিঘির ঘাট রয়েছে।
যা পথে বা ধ্বংস হওয়ার পথে তোমাদের কোন কিছু নেই আর এছাড়াও বারদুয়ারি নামে চিহ্নিত স্থাপনেরটি মূলত একটি মসজিদ আছে সেই মসজিদে মুসল্লী ও কবর জিয়ারতকারীদের ওযুর জন্য পাথর বাঁধানো ঘাট তৈরি করা হয়েছে। সমাজে ও বারদুয়ারি পাথরের দেওয়াল দিয়ে ঘেরা থাকার কারণে ব্রিটিশ সার্বিয়ার হ্যামিলটন যিনি ১৮০৭ খ্রিস্টাব্দে উত্তরবঙ্গ অভিহারের জরিপ কাজে নিযুক্ত হন।
কারণে তিনি বখতিয়ার খলজি সমাজের বিবরণ বারদুয়ারির ভিতরে একটি কবর আছে বলে উল্লেখ করেছিলেন। তাছাড়া খতিয়ার খলজি এই সমাজের সহধর সামনে টানানো বর্তমান নাম ফলকে স্যার হ্যামিলটনের ধারণাকে মেনে নেওয়া হয়নি এবং এই শব্দটি বখতিয়ার খলজির বলে দাবি করা হয়েছিল স্থানীয় প্রশাসন ও রাজনৈতিকদের বখতিয়ার খলজি অবহেলার পাত্র হওয়ার কারণে।
সাধারণ মানুষ এটা দেবতুল্য হিসাবে মেনে নিত।বখতিয়ার খলজি মাটিতে শুয়ে আছেন বলে অনেক মানুষ খাট বা চকিতে ঘুমাতে চায় না পিরপালের মানুষরা তারা খাট বা চকিতে ঘুমাতে ইচ্ছুক নয় বা রাতে ঘুমাতে চায় না। এই মাটিতে তারা এই অঞ্চলের পিরপালের মানুষগুলো তারা আজও পর্যন্ত মাটিতেই ঘুমায় বিস্ময়কর ব্যাপার হল মাটিতে ঘুমানো মানুষদের বেশির ভাগই সনাতন হিন্দু ধর্মের ছিলেন আর কি ছিলেন।
লেখকের শেষ কথা
অবশেষে বলা যায় যে ইখতিয়ার উদ্দিন মোহাম্মদ বখতিয়ার খলজির বাংলা বিজয় ছিল ইসলামের ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ তিনিই প্রথম হিন্দুরা যাদেরকে হটিয়ে হিন্দ রাজাকে রাজ্য ছোট করে আর রাজ্যকে দূর দূর করে। হিন্দু রাজ্য কে দূর করে তিনি মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠা করেছিল এজন্য ইসলামের প্রচার প্রসারের ক্ষেত্রে উন্নতি ঘটেছিল এবং শত শত মানুষ ইসলামের ছায়াতলে আসতেছিল। তাই এই বাংলা বিজয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আজকের এই পোস্টটি যদি ভালো লাগে তাহলে আপনার বন্ধু-বান্ধবের মাঝে শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ
এম আর মাহমুদ ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url