হযরত মুহাম্মদ (স) এর হিজরতের কারণ ও ফলাফল আলোচনা কর, এ সম্পর্কে জেনে নিন
হযরত মুহাম্মদ (স) এর হিজরতের কারণ ও ফলাফল আলোচনা কর, সম্পর্কে মুসলমানদের জানা খুবই প্রয়োজন। কারণ মহানবী (স) ইসলাম প্রচারের সুবিধার্তে মদিনায় হিজরত করেন। চলুন, হিজরতের কারণ ও ফলাফল সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
হযরত মুহাম্মদ (স) মক্কার কুরাইশদের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে এবং মক্কায় ইসলাম প্রচারের পরিবেশ না থাকায় হিজরত করেন। তাই হিজরতের কারণ ও ফলাফল আলোচনা কর, এ সম্পর্কে জানতে পোস্টটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
পোস্টসূচিপত্রঃহযরত মুহাম্মদ (স) এর হিজরতের কারণ ও ফলাফল আলোচনা কর, এ সম্পর্কে জেনে নিন
হিজরত কাকে বলে
হিজরত শব্দের অর্থ দেশ ত্যাগ করা, ছেড়ে দেওয়া, বর্জন করা, স্থানান্তরিত হওয়াকে বোঝায়। চলুন, হিজরত কাকে বলে? জেনে নেওয়া যাক।
সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য মাতৃ ভূমি ত্যাগ করে অন্য দেশে চলে গেলে বা স্থানান্তরিত হওয়াকে হিজরত বলে। আল্লাহ তাআলার নির্দেশে ৬২২ খ্রিস্টাব্দে হযরত মুহাম্মদ সাঃ মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করেছিল।
মক্কার কাফেররা দারুন নাদওয়া নামক বৈঠকে রাসূল সাঃ কে হত্যা করার পরিকল্পনা করেছিল। আর এই কথা আল্লাহতালা ওহীর মাধ্যমে জানিয়ে দেয়। তাই হযরত মুহাম্মদ সাঃ, হযরত আবু বকর রাঃ কে এই বিষয়টি জানিয়ে রাখেন।
দারুন নাদওয়া এর বৈঠক অনুযায়ী সিদ্ধান্ত হয়েছিল যে কোরাইশরা হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর ঘর ঘেরাও করবে এবং সেই রাতেই তাঁকে হত্যা করা হবে কিন্তু ওই রাত্রিতেই হযরত আলী রাঃ কে নিজ বিছানায় শুইয়ে রেখে রাসুল সাঃ হযরত আবু বকর রাঃ কে সাথে নিয়ে মদিনার দিকে রওনা হন। এভাবেই হযরত মুহাম্মদ সাঃ মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করেছিলেন।
হিজরতের কারণ ও ফলাফল আলোচনা কর
অনেকে হিজরতের কারণ ও ফলাফল আলোচনা কর? সম্পর্কে জানতে চায়। চলুন, হিজরতের কারণ ও ফলাফল সম্পর্কে নিম্ন আলোচনা করা হলো,
হিজরতের কারণ কে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে; প্রত্যক্ষ কারণ ও পরোক্ষ কারণ।
পরোক্ষ কারণ সমূহ নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো;
ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতাঃ নবী করীম সাঃ এর পূর্বেও অনেক নবী রাসুল তাওহীদের দাওয়াত দেওয়ার জন্য মাতৃভূমি ছেড়ে অন্য জায়গায় ধর্ম প্রচার করেছেন। তারা নিজের এলাকায় ধর্ম প্রচার করতে না পেরে অন্য এলাকায় হিজরত করেছেন। তারই ধারাবাহিকতায় আমাদের নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ তিনিও মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করেছিল।
মক্কাবাসী মেনে নিতে পারেনিঃ হযরত মুহাম্মদ সাঃ ইসলামের দাওয়াত দিয়েছিলেন তার নিজের সম্প্রদায়ের মাঝে এবং কুরাইশদের মাঝে। মক্কায় তিনি ইসলামের প্রচার করতে থাকেন কিন্তু কুরাইশরা তার এই সত্য ধর্ম ইসলামকে সহ্য করতে পারছিল না।
যার কারণে তারা রাসূল সাঃ কে মেনে নেননি তাই রাসূল সাঃ নিজ জন্মভূমি ছেড়ে আল্লাহর নির্দেশে মদিনায় হিজরত করতে বাধ্য হয়েছিলেন এবং তিনি হিজরত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
পৌরহিত্যের লড়াইঃ কুরাইশদের মধ্যে যারা পুরহিত ছিল। তারা ইসলাম প্রচারে বাধা দিয়েছিল, তারা কাবা ঘরের রক্ষণাবেক্ষণ ও মক্কার শাসন কার্য কে দেখাশোনা করত। যার কারণেই তাদেরকে পরহিত বলা হতো। রাজনৈতিক কর্তৃত্ব পাশাপাশি ধর্মীয় ক্ষেত্রেও তারাই এটাকে ধরে রাখতে চেয়েছিল।
কিন্তু হযরত মুহাম্মদ সাঃ ইসলাম ধর্ম প্রচারের মাধ্যমে পুরোহিতদের স্বার্থে আঘাত লাগে। এজন্য তারা ইসলামের আদর্শকে বাস্তবায়ন হতে দেয়নি। এটা যদি বাস্তবায়ন হয় তাহলে তাদের পুরোহিতের অবসান হয়ে যাবে। তাই তাদের ধর্ম রক্ষা করার জন্য তারা রাসূলের বিরুদ্ধে কাজ করতেছিল।
ধর্ম বিশ্বাসে আঘাতঃ মক্কা বাসিরা তারা পত্তলিক মূর্তিপূজারী ছিল। তারা লাত মানাত হুবল উয্যা সহ আরো প্রায় ৩৬০ টি মূর্তির দেবতা মনে করে বিশ্বাস করত। এই মূর্তিগুলোকে তারা দেবতা মনে করতে এবং সৃষ্টিকর্তা মনে করত।
সেই হিসেবে তারা ধর্মীয় বিশ্বাসী হিসেবে মনে করে, ইসলাম প্রচারের কারণে এই ধর্মে বিশ্বাস ভঙ্গ হয়ে যাবে বা নষ্ট হয়ে যাবে এবং ধর্মীয় পার্থক্যের জন্যই রাসূল সাঃ বিরুদ্ধে তারা বিরুদ্ধে শুরু করেছিল। তাঁকে নির্যাতন এবং ষড়যন্ত্র শুরু করে যার কারণে তিনি হিজরত করতে বাধ্য হন।
মক্কার বিরূপ পরিবেশঃ নবুয়ত প্রাপ্তির পর ইসলাম প্রচারের জন্য মক্কায় তেমন পরিবেশ ছিল না। তাই রাসূল সাঃ ও তাঁর মুসলিম অনুশাসীরা ইসলাম প্রচার করতে বাধা-বিপত্তি সম্মুখীন হয়। মক্কা বাসীরা রুক্ষ এবং উগ্র মেজাজির ছিল এছাড়াও ইসলাম গ্রহণ করার মত তাদের মন-মানসিকতা নেই বললেই চলে। তাই রাসূল সাঃ কে কেউ সান্ত্বনা দিতে আসেনি এজন্য তিনি হিজরত করতে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
অত্যাচারের মাত্রা বৃদ্ধিঃ মক্কা যারা ইসলাম গ্রহণ করেছে তাদেরকে কুরাইশরা অমানুষিকভাবে নির্যাতন করছিল। মহানবী সাঃ ও সাহাবীদের উপর অত্যাচার শুরু করেছিল এবং অত্যাচারের মাত্রা বৃদ্ধি করতে ছিল।
আবু তালিবের ইন্তেকালের পর এই অত্যাচারের মাত্রা আরো বেশি বাড়িয়ে দেয় এবং যা অসহনীয় হয়ে পড়েছিল। তাই রাসূল সাঃ ও তার সাহাবীকে নিয়ে হিজরতের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তাছাড়া আল্লাহর পক্ষ থেকেও নির্দেশ এসেছিল।
মদিনার অনুকূল পরিবেশঃ মদিনা ছিল বাণিজ্যিক একটি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ একটি দেশ এবং আবহাওয়া ভৌগোলিক দেখেও খুবই মনোরম পরিবেশ। ওখানকার অধিবাসীগন ছিল নম্র, ভদ্র এবং সহজেই তারা মানুষকে ভালবাসত, বিশ্বাস করত। হযরত মুহাম্মদ সাঃ মদিনার লোকদের সাথে কথা বলে এবং সাক্ষাৎ করেছিল।
তাছাড়াও হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর নানা বাড়ি মদিনা হওয়ায় সেখানকার লোকজন তাকে অত্যন্ত সম্মান ভালোবাসতো সব মিলিয়েই সেখানকার পরিবেশ অনেক ভালো ছিল। ইসলাম প্রচার করার মত গুরুত্বপূর্ণ জায়গা ছিল এবং অনুকূল পরিবেশ থাকার কারণেই হযরত মুহাম্মদ সাঃ হিজরত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
মদিনায় ইহুদি খ্রিস্টানদের ব্যর্থতাঃ তখন আরবের ইহুদি খ্রিস্টানরা ধর্মের মূল আদর্শ থেকে বিচ্যুতীয় হয়েছিল। যার কারণে মদিনার ইহুদী ও খ্রিস্টান আদর্শ বিকৃতি ধর্ম মদিনা বাসীদের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি।
যার কারণে মদিনা বাসীরা একজন আদর্শ নেতার প্রয়োজন মনে করছিল। এজন্য মক্কা থেকে রাসূল সাঃ কেই আদর্শিক হিসাবে তারা মেনে নিয়েছিল এবং হযরত মুহাম্মদ সাঃ এই দৃষ্টিকোণ তিনি হিজরত করেছিলেন।
মদিনার সাথে আত্মীয়তার সম্পর্কঃ মহানবী সাঃ এর নানা বাড়ি মদিনায় ছিল। সেখানে আত্মীয়তার সম্পর্কের কারণে তাকে অত্যন্ত শ্রদ্ধা এবং সম্মান করতো। যার কারণে ইসলাম প্রচারের ক্ষেত্রে ভালো একটি অনুকূল পরিবেশ ছিল এবং তাদের সহযোগিতা পেলে তিনি ইসলাম প্রচার করতে পারবেন। এই মনস্থির করেই তিনি মদিনায় হিজরত করেন।
অর্থনৈতিক কারণঃ কুরাইশরা কাবাঘর রক্ষণাবেক্ষণ করার দায়িত্ব তারাই পালন করেছিল। প্রতি বছর হজ পালনের সময় ও হজ ব্যবস্থাপনার সময় প্রচুর পরিমাণ অর্থ সম্পত্তি তারা অর্জন করত। আর এই মক্কার বাইরে তেমন একটি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব ছিল না।
হযরত মুহাম্মদ সাঃ ধর্মপ্রচার প্রতিষ্ঠার দিকে অর্থনৈতিকভাবে অনেকটাই ক্ষতিগ্রস্ত হন। যার কারণে মহানবী সাঃ মদিনায় হিজরত করতে সিদ্ধান্ত নেন।
হিজরতের প্রত্যক্ষ কারণঃ
মদিনা বাসীদের আমন্ত্রণঃ হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর আদর্শ সততা সকল কিছুই মদিনা বাসীরা অবগত ছিল। এছাড়া প্রতিবছর হজ্জের সময় হাজীদের মাধ্যমে তার সুনাম শুনতে পেয়েছিল। মদিনা বাসীগণ হজ করতে এসে হযরত মুহাম্মদ সাঃ আদর্শ ও ধর্ম প্রচারের দেখে তারা মুগ্ধ হয়ে যান।
তাঁর ভালবাসা এবং মহত্ব দেখে ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকল মদিনা বাসীগণ তাঁকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। আল্লাহ নির্দেশে তিনি তাদের আহবানে সাড়া দিয়ে মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করেন।
আকাবার শপথঃ হজ্জের মৌসুমে আকাবার প্রথম ও দ্বিতীয় শপদে মক্কার ৮০ জন মানুষ ইসলাম গ্রহণ করেন। নবীজি সাঃ এর ভালোবাসায় মুগ্ধ হয়ে তাকে মদিনায় হিজরত করার জন্য পরামর্শ দেন এবং তার সকল নিরাপত্তার দায়িত্ব তারা নেবে এরকম আশ্বাস দিয়েছিলেন।
তাছাড়া ইসলাম প্রচারের ক্ষেত্রে মদিনা খুবই আগ্রহী ছিল এবং ইসলাম গ্রহণের ক্ষেত্রে খুবই আগ্রহ থাকেন যার কারণেই মহানবী সাঃ মদিনায় হিজরত করেন।
মদিনায় সরকারের অভাবঃ ওই সময় মদিনায় কেন্দ্রীয় রাজনৈতিক এর অভাব ছিল, নেতার অভাব ছিল। মদিনার আউজ ও খাজরাজ নামে দুটি গোত্র ছিল সেখান থেকেই মূলত তাদের মাঝে শত্রুতা পরস্পর যুদ্ধবিগ্রহ এবং ধ্বংস পর্যায়ে গিয়েছিল।
এ সময় নবীজির আদর্শ নীতি-নৈতিকতা ধর্ম প্রচারের কথা সবাই জেনেছিল, যার কারণে তাঁকে মধ্যস্থতা ব্যক্তি হিসেবে পছন্দ করে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। তাই নবী করীম সাঃ মদিনায় হিজরত করেন।
মুসয়াবের অনুকূল রিপোর্টঃ আকাবার শপথের সময় মদিনাবাসীর আমন্ত্রণ পেয়ে হযরত মুহাম্মদ সাঃ মদিনার পরিবেশ পরিস্থিতি জানার জন্য এবং মদিনার মানুষকে কোরআন শিক্ষা দেওয়ার জন্য মদিনায় মুসয়াবকে প্রেরণ করা হয়েছিল।
ইসলাম প্রচারের পাশাপাশি দীর্ঘদিন তিনি সেখানে মদিনার পরিবেশ পরিস্থিতি অনুকূল রিপোর্ট প্রদান করেন যার কারণেই মহানবী সাঃ হিজরত করেন।
মদীনার ভৌগোলিক গুরুত্বঃ ওই সময় মদিনায় ব্যবসা ক্ষেত্র সবচাইতে বিখ্যাত ছিল। আরবের মধ্যে মদিনার সাথে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কাফেলার সম্পর্ক ভালো ছিল। মদিনা ইহুদি খ্রিস্টানরা বসবাস করতে ছিল ইয়ামিন থেকে সিরিয়া এবং সিরিয়া থেকে ইয়ামেন বাণিজ্যক কাফেলার পথ ছিল মদিনা।
যাতায়াতের মাধ্যম ছিল মদিনার এই পথ। তাই ইসলাম প্রচার করতে হলে এই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতে হবে এবং এখান থেকেই সুন্দর মত ইসলাম প্রচার করা যাবে। তাই রাসূল সাঃ এটা মনে করেও তিনি হিজরত করেন।
রাসূল সাঃ কে হত্যার ষড়যন্ত্রঃ হযরত মুহাম্মদ সাঃ কে হত্যা করার জন্য কোরাইশরা ষড়যন্ত্র করতেছিল এবং একটি বৈঠক বসেছিল। ওই রাত্রিতেই রাসূল সাঃ কে তাঁর বাড়ি ঘেরাও করা হবে এবং তাকে হত্যা করার পরিকল্পনা করা হয়েছিল এই সিদ্ধান্তটি নিয়েছিল আবু জেহেল।
আবু জাহেল বলেছিল আমাদের প্রত্যেক গোত্র থেকে একজন শক্তিশালী সম্ভ্রান্ত যুবক বাছাই করতে হবে। প্রত্যেকেই একটা করে ধারালো তরবারি নিতে হবে এবং যুবকরা একযোগে হামলা চালাবে হযরত মুহাম্মদ সাঃ কে হত্যা করার পরিকল্পনা করেছিল। এ সিদ্ধান্ত হযরত মুহাম্মদ সাঃ জানার পরে তিনি মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করার পরিকল্পনা করেন।
আল্লাহর নির্দেশঃ সর্বোপরি উপরোক্ত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহতালা তার সবচেয়ে পছন্দের প্রেরিত নবী ও রাসূল হযরত মুহাম্মদ সাঃ কে হিজরত করতে বলেছিলেন, ওহীর মাধ্যমে জিব্রাইল আঃ এর মাধ্যমে হিজরত করার নির্দেশ দেন। তাই হযরত মুহাম্মদ সাঃ আল্লাহর নির্দেশেই ৬২২ খ্রিস্টাব্দে মদিনায় হিজরত করেন।
হিজরতের ফলাফল বা গুরুত্বঃ হিজরতের ফলাফল ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর জীবনের একটি নতুন অধ্যায় শুরু হয়েছিল। তিনি নিপীড়িত অত্যাচার সকল কিছু সহ্য করে অবশেষে তিনি মক্কায় থেকে মদিনায় হিজরত করেন।
তাঁকে মদিনা বাসী সম্মানিত আসনে অধিষ্ঠিত করেন এবং এখান থেকেই তিনি ইসলামের বার্তা পৌঁছাতে পারেন। এছাড়াও আরো গুরুত্বপূর্ণ কিছু ফলাফল রয়েছে, নিম্নে আলোচনা করা হলো।
নবযুগের সূচনাঃ হিজরত করার মাধ্যমে মক্কার কষ্ট অত্যাচারিত জীবনের অবসান হয় এবং ইসলামের নতুন জীবনের সূচনা ঘটে। এখান থেকে শুরু করে মহানবী সাঃ ইসলাম প্রচার করার ক্ষেত্রে নিরাপদ একটি আবাসস্থল পেয়েছিলেন।
নির্যাতনের অবসানঃ মহানবী সাঃ এবং তার সাহাবীরা মক্কায় যে নির্যাতিত অত্যাচারিত ছিল। সেই জীবনের অবসান ঘটিয়ে এই হিজরতের মাধ্যমে মুসলিমরা মদিনায় এসে সম্মানিত হয়েছিল। তাছাড়াও আর তাদেরকে অত্যাচার নিপীড়নের ভয়ে থাকতে হবে না। তাদের একটা কাজই ছিল ইসলাম প্রচার করা।
মদিনার নামকরণঃ মদিনার পূর্বে নাম ছিল ইয়াসরিব। মদিনা এসে রাসুল সাঃ এর হিজরতের পর এই ইয়াসরিবের নাম পরিবর্তন করে মদিনাতুন নবী বা নবীর শহর হিসাবে নামকরণ করে। সেই থেকে আজ পর্যন্ত মদিনা নামে পরিচিত এবং পবিত্র শহর বলা হয়ে থাকে।
ইসলামী রাষ্ট্র গঠনঃ হিজরতের পরে মহানবী সাঃ মদিনার সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী হয়েছিলেন।ইসলাম প্রচার করার ক্ষেত্রে একটি সুন্দর সুযোগ সুবিধা পেয়েছিলেন। মদিনা বাসি ইহুদী-খ্রিষ্টান পৌত্তলিক মুসলমান আনসার মুজাহির সবাই সুন্দর মতে একটি রাষ্ট্র গঠন করেছিলেন। যার নাম দিয়েছিল মদিনা প্রজাতন্ত্র সবার জন্য স্বাধীনতা দিয়েছিলেন।
মদিনার সনদ প্রণয়নঃ সকল ধর্ম ও জাতি গোষ্ঠী সঠিকভাবে যেন জীবন পরিচালনা করতে পারে সেজন্য একটি সংবিধান বা আইন কানুন প্রণয়ন করা দরকার ছিল। তাই রাসূল সাঃ সকল সম্প্রদায়ের যেন সার্থ সংরক্ষণ করে এবং কারো যেন স্বার্থ বিরোধী না হয়।
সেই কথা বিবেচনা করে একটি গণপ্রজাতন্ত্রী মদিনা রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার জন্য তিনি ৪৭ বা ৫৩ বা ৫৭ ধারা বিশিষ্ট একটি সনদ তৈরি করেছিলেন। যা ইতিহাসে মদিনার সনদ নামেই পরিচিত লাভ করে। এটা পৃথিবীর প্রথম লিখিত সংবিধান হিসেবে বলা হয়ে থাকে।
গোত্রীয় বিবাদের অবসানঃ মদিনাবাসীদের মাঝে আউজ ও খাজরাজ গোত্রের মাঝে সবসময় যুদ্ধ লেগেই থাকতো এবং দীর্ঘদিন যাবত এই যুদ্ধ চলতে থাকতো। পরিস্থিতি ভয়ানক ধারণ করত তাই নবী করীম সাঃ তাদের মাঝে মীমাংসা করে দেন।
সকল শত্রুতা দূরীভূত করে তারা যেন ভ্রাতৃত্ববোধের জীবন যাপন করতে পারেন সেই ব্যবস্থা করে দেন। তিনি তাদের মাঝে এমনভাবে মীমাংসা করে দেন যেন হিংসা বিদ্বেষ ভুলে গিয়ে তারা ভাই ভাই হিসাবে জীবন যাপন করে এবং মদিনার সমাজ মুক্ত একটি আদর্শ সমাজ গঠন হয়।
মসজিদে নববী প্রতিষ্ঠাঃ হযরত মুহাম্মদ সাঃ আবু আইয়ুব আনসারীর বাড়িতে প্রথমে অবস্থান করেছিলেন এবং প্রথমে সেই স্থানই বসে ছিল যার কারণে স্থানটিতে মসজিদ নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
নবীজি নিজে সেখানে কাজ করেছেন এবং সাহাবীদেরকে সহযোগিতা করেছিলেন। সাহাবীরাও তাকে সহযোগিতা করে এই মসজিদ নির্মাণ করেন। যার নাম দিয়েছিলেন মসজিদে নববী, এটি ছিল নবীজির প্রশাসনিক কেন্দ্র এখান থেকে তিনি সকল কিছু দেখাশোনা করতেন।
ইসলাম প্রচারের ক্ষেত্রে সুযোগঃ মদিনায় হিজরতের ফলে ইসলাম প্রচারের ক্ষেত্রে তেমন কোন বাধা সৃষ্টি হয়নি বরং সবাই ইসলামের প্রচারের ক্ষেত্রে সহযোগিতা করেছে। অনেকেই ইসলামের ছায়াতলে চলে এসেছে যার কারণে মানুষের দ্বারে দ্বারে ইসলাম প্রচার করতে সুযোগ-সুবিধা পাওয়া গিয়েছে এবং সুন্দর মতে ইসলাম প্রচার করতে পেরেছিলেন।
বিশ্ববিজয় ইসলামঃ মক্কাতে ইসলাম নিজের শক্তিতে প্রকাশিত করতে না পারার কারণে মহানবী সাঃ বিভিন্ন বাধা বিপদের সম্মুখীন হয়েছিলেন যার কারণে তিনি হিজরত করেন। মদিনায় এসে তিনি খুব সুন্দরভাবে ইসলাম প্রচার করেছেন এতে কোন বাধা বিপত্তির সম্মুখীন হয়নি।
বিশেষ করে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কাফেলাদের মাঝেও তিনি ইসলাম প্রচার করেন। মদিনায় ব্যবসা-বাণিজ্য করার পথ ছিল একমাত্র মদিনা এই পথে আসা যাতায়াত করার কারণে তাদেরকে ইসলামের দিকে আহবান করলে, তারা ইসলাম গ্রহণ করে সারা বিশ্ব প্রচার করা শুরু হয়ে যায় এভাবেই ইসলাম সারা বিশ্ব প্রচারিত হয়েছিল।
রাসূল সাঃ এর রাজনৈতিক বহিঃপ্রকাশঃ নবী করীম সাঃ নবুওত প্রাপ্তির পর মক্কার কাফেররা তাকে পাগল নির্বোধ ইত্যাদি বলে অপপ্রচার করেছিল কিন্তু রাসূল সাঃ হিজরতের পর মদিনার সর্বোচ্চ ক্ষমতা লাভ করেন।
প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন মদিনার সনদ প্রণয়ন ইসলামী রাষ্ট্র গঠন কর্মকাণ্ড শুধু একজন ধর্ম প্রদানই নয় বরং বিশ্ব বিখ্যাত একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে সারা বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরেছিলেন। ইসলাম প্রচারের ক্ষেত্রে আমল পরিবর্তন হয়েছিল এবং হিজরত করার কারণেই পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা এবং ধর্মীয় বিধান প্রতিষ্ঠা করতে সফলতা লাভ করেছিলেন।
পাশাপাশি তিনি একজন বিশ্ব বিখ্যাত নেতা রাজনীতিবিদ হিসেবে প্রমাণিত হয়েছিলেন। বিশ্ববাসীর কাছে মক্কাতে ১৩ বছর তিনি যা করতে পারেনাই সেটা মাত্র ১০ বছরের মধ্যেই মদিনাতে এসে পৃথিবীর বুকে শ্রেষ্ঠ রাজনীতিবিদ হিসেবে এবং নেতা হিসাবে প্রচারিত হয়েছিল।
হিজরতের ঘটনা
এতক্ষণে আমরা হিজরতের কারণ ও ফলাফল আলোচনা কর, সম্পর্কে জেনেছি। চলুন, হিজরত এর ঘটনা সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। এই হিজরতের কারণেই বহির বিশ্বে মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ এবং তার ইসলাম ধর্ম প্রচারিত হয়েছিল। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে হযরত মুহাম্মদ সাঃ জন্মভূমি মক্কা তাগের ঘটনা।
এই হিজরতের সাথে আরো ঘটনা রয়েছে তার অত্যাচারিত জীবন মহানবী সাঃ ৬১০ খ্রিস্টাব্দে আল্লাহর পক্ষ থেকে নবুয়ত প্রাপ্ত হওয়ার পর ইসলামের দাওয়াত যখন মক্কাতে শুরু করলেন কিন্তু মক্কাবাসীরা এই দাওয়াতকে অস্বীকার করে এবং রাসূল সাঃ কে বিভিন্ন ধরনের কটুক্তি করে এবং পাগল নির্বোধ বলে উপাধি দান করে।
তাছাড়াও তারা ইসলাম ধর্ম প্রচার করার ক্ষেত্রে বিরোধিতা করেছিল, তারপরও কিছু মুসলিম এবং রাসূল সাঃ তিন বছর দাওয়াত দিচ্ছিলেন এর পরেও তারা বাধা বিপত্তি করেন। মহান আল্লাহ তাআলা নির্দেশে সাফা পাহাড়ে আল্লাহর উপর ঈমান আনয়ন করেছিলেন।
এবং তখন থেকেই হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর প্রচন্ড নির্যাতন শুরু করে দেয় কুরাইশবাসীরা। তাঁকে নিধারূন ভাবে আহত করে অপমান করে লাঞ্ছিত করা হয়েছিল, তাছাড়া তিনি ধৈর্য ও সাহসিকতার সাথে মহানবী সাঃ মক্কার কাফেরদেরকে দাওয়াত দিতেই থাকেন।
কিন্তু অবশেষে মক্কার কুরাইশরা তাকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে নদওয়ায় একটি ষড়যন্ত্র শুরু করে এবং তাকে হত্যা করার পরিকল্পনা করে। এই সংবাদ পেয়ে হযরত মুহাম্মদ সাঃ তিনি হযরত আলী রাঃ কে তার নিজের বিছানায় শুয়ে হযরত আবু বকর রাঃ সঙ্গে করে নিয়ে মদিনার দিকে রওনা দেন।
তাই হযরত মুহাম্মদ সাঃ আল্লাহর নির্দেশে ৬২২ খ্রিস্টাব্দের ১২ ই সেপ্টেম্বর মক্কা থেকে মদিনার দিকে রওনা হয়েছিলেন। ২৩ শে সেপ্টেম্বর ৬২২ খ্রিস্টাব্দের ৮ই রবিউল আউয়াল মদিনার পার্শ্ববর্তী কোবায় তাঁরা পৌছিয়েছিলেন। ৬২২ খ্রিস্টাব্দ মোতাবেক ১২ই রবিউল আউয়াল মদিনায় মহানবী সাঃ পৌঁছান। সেখানে গিয়ে অবস্থান করেন এভাবেই হযরত মুহাম্মদ সাঃ মদিনায় হিজরত করেছিলেন।
হিজরতের গুরুত্ব আলোচনা করো
ইতোমধ্যে আমরা জেনেছি হিজরতের কারণ ও ফলাফল আলোচনা কর, সম্পর্কে এখন জানব হিজরতের গুরুত্ব সম্পর্কে চলুন, জেনে নেওয়া যাক।
পরিবেশ যদি সুন্দর না হয় সেখানে কোন কিছুই প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব না, মক্কার পরিবেশ তেমন ইসলাম প্রচারের জন্য যথেষ্ট পরিমাণ পরিবেশ ছিল না। এজন্যই মহানবী সাঃ মদিনায় পরিবেশ ভালো থাকার কারণে সেখানে হিজরত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
বিশ্বাসের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় কারণ মানুষ যদি কাউকে বিশ্বাস করতে না পারে তাহলে সেখানে ইসলাম প্রচার করা সম্ভব না। হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর চাচা আবু তালিব বেঁচে থাকার কারণে তিনি বিভিন্ন বিপদের সম্মুখীন হলেও তার চাচা তাকে আগলে রেখেছিল।
কিন্তু তার ইন্তেকালের পর রাসূল সাঃ এতিম হয়ে যান এজন্য তার ওপর যখন নির্যাতন অত্যাচার শুরু হয়েছিল। তাঁর পাশে দাঁড়ানোর মত কেউ ছিলনা রক্তের সম্পর্কের ক্ষেত্রে। তাই রাসূল সাঃ মদিনায় হিজরত করতে সিদ্ধান্ত নেন।
গঠন এর ক্ষেত্রে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ইসলামিক খেলাফত প্রতিষ্ঠা করা মক্কার বিরুদ্ধে থাকার কারণে হযরত মহাম্মদ সাঃ মদিনা থাকার কারণে অনুকূল পরিবেশ থাকার কারণে মদিনায় দিকে সবচাইতে গুরুত্ব দিয়েছিলেন।
এই হিজরত হওয়ার কারণে ইসলামী বিধানসমূহ প্রতিষ্ঠা লাভ করেছিল, ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভ প্রতিষ্ঠা এবং তিনটি ফরজ প্রতিষ্ঠা করার জন্য অনুকূল পরিবেশ ছিল। মদিনা এজন্য এই হিজরত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
ইসলামের সামাজিক রাজনৈতিক অর্থনৈতিক বিধান সকল কিছুই মদিনায় প্রতিষ্ঠা লাভ করা সম্ভব ছিল তাই এই হিজরতের অত্যন্ত গুরুত্ব রয়েছে।
হযরত ওমর রাঃ এই হিজরতকে হক ও বাতিলের পার্থক্যকারী হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন। যার কারণে এই হিজরত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যা পরবর্তীতে হিজরী বর্ষ গণনার নিয়ম পালন করার করা হয়। এই দিন অনুযায়ী ৬২২ খ্রিস্টাব্দে থেকেই গণনা করা হয়েছিল। সকলেই নতুন একটি পরিবেশ এবং কোন অসুবিধা হয়নি।
তারা ইসলামের দাওয়াত ও প্রচার প্রসারের ক্ষেত্রে সুযোগ সুবিধা পেয়েছিলেন। ইহুদি খ্রিস্টান রাষ্ট্র ছিল মদিনা সেখানে যদি ইসলাম প্রচার করতে গিয়ে কোনো বাধা বিপত্তি না হয় তাহলে এর চেয়ে তার ভালো পরিবেশ কোথায় পাওয়া যাবে। তাই এই মদিনা হিজরত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইসলামের জন্য ছিল।
লেখকের শেষ মন্তব্যঃ হযরত মুহাম্মদ (স) এর হিজরতের কারণ ও ফলাফল আলোচনা কর, এ সম্পর্কে জানুন
পরিশেষে বলা যায় যে হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর হিজরত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কারণ মদিনায় ইসলাম প্রচার এর জন্য অনুকূল পরিবেশ ছিল এবং আল্লাহ তায়ালা নির্দেশেই মহানবী সাঃ হিজরত করেছিলেন। আশা করি হিজরতের কারণ ও ফলাফল আলোচনা কর, এ সম্পর্কে বুঝতে পেরেছেন। পোস্টটি যদি ভালো লাগে তাহলে আপনার বন্ধু-বান্ধবের মাঝে শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ
এম আর মাহমুদ ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url