হজের গুরুত্ব ও তাৎপর্য লেখ এবং এর ফরজ, প্রকারভেদ সম্পর্কে জানুন

হজের গুরুত্ব ও তাৎপর্য লেখ? এ সম্পর্কে মুসলমানদের জানা প্রয়োজন। কারণ যে সকল মুসলমানদের সামর্থ্য থাকার পরও হজ করল না, তাদের শাস্তি ভয়াবহ হবে। চলুন, হজের সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
ছবি
ইসলামের পাঁচটি মূল বিষয়ের মধ্যে অন্যতম হলো হজ। যা একজন সামর্থ্যবান ব্যক্তির উপর আল্লাহতালা ফরজ করেছেন। তাই হজের গুরুত্ব ও তাৎপর্য লেখ, এ সম্পর্কে জানতে আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।

পোস্টসূচিপত্রঃহজের গুরুত্ব ও তাৎপর্য লেখ এবং এর ফরজ, প্রকারভেদ সম্পর্কে জানুন

হজ্জ কাকে বলে

হজ্জ কাকে বলে? চলুন এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা যাক। হজ আরবি থেকে এসেছে, যার অর্থ নিয়ত করা, সংকল্প করা, ইচ্ছা করা, প্রতিজ্ঞা করা ইত্যাদি। পরিভাষায় বলা যেতে পারে নির্দিষ্ট দিনে নিয়ত সহ এহরাম অবস্থায় আরাফার ময়দানে অবস্থান করা এবং বাইতুল্লাহ শরীফকে তাওয়াফ করাকে হজ বলা হয়।

আবার অন্যভাবে বলা যেতে পারে জিলহজের ৯ তারিখ ইহরাম বাধা অবস্থায় আরাফাতের মাঠে অবস্থান করা, কয়েকটি নির্দিষ্ট কাজ এবং নির্দিষ্ট স্থানে পালন করা, কাবা গ্রেহ তাওয়াফ করাকে হজ বলা হয়।

হজ ইসলামের চতুর্থ স্তম্ভ বলা হয়ে থাকে, জিলহজ মাসের ৯ তারিখ পবিত্র মক্কা শরীফে পৌঁছে কাবা ঘর তাওয়াফ করা। সাফা মারওয়া পাহাড়ের মাঝে দৌড়াদৌড়ি করা, আরাফার ময়দানে অবস্থান করা এ সকল কাজ করাকে মূলত হজ্জ বলা হয়ে থাকে।
হজ্জ ফরজ হওয়া সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেছেন, আল্লাহতালার উদ্দেশ্যে মানুষের উপর হজ ফরজ করা হয়েছে, যাদের যাওয়ার মত সামর্থ্য আছে।

হাদীস শরীফে বর্ণনা করা হয়েছে, নবী করীম সাঃ বলেন যার উপর হজ ফরজ হয়েছে অথচ সে হজ করলো না। তাহলে সে যদি মারা যায় সে ক্ষেত্রে সে কাফের এর মত মরতে পারে।

পবিত্র হজ হলো মুসলমানদের জন্য পবিত্রতম শহর সৌদি আরবের মক্কায় অনুষ্ঠিত হয়। যা প্রতিবছরে এটা সকল মুসলিম এক জায়গায় একত্রিত হয়। হজ মুসলমানদের একটি বাধ্যতামূলক ধর্মীয় বিধান। যা মুসলমানদের জন্য বাধ্যতামূলক যাদের উপর সামর্থ্য রয়েছে।

তাদের জন্য শারীরিক আর্থিকভাবে যদি কেউ সক্ষম হয় সেক্ষেত্রে অবশ্যই তার পরিবারের সকল ভরণপোষণের যাবতীয় খরচ থাকার পর সে যদি প্রাপ্তবয়স্ক হয় এবং সামর্থ্য থাকে। তাহলে তার ওপর হজ একবার হলেও ফরজ এবং তাকে পালন করতে হবে।

হজের গুরুত্ব ও তাৎপর্য লেখ

হজের গুরুত্ব ও তাৎপর্য লেখ? চলুন এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা যাক।

পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহতালা আল কোরআনে বর্ণনা করেছেন, নিঃসন্দেহে মানুষের জন্য সর্বপ্রথম যে তাদের জন্য যে এবাদতের ঘরটি নির্মাণ করা হয়। সেটি মক্কায় অবস্থিত এর একটি কল্যাণ ও বরকত দান হিসেবে সৃষ্টি করা হয়েছে।

সমগ্র বিশ্ববাসীর হেদায়েতের কেন্দ্র এটা বলা হয়ে থাকে এর মধ্যে স্পষ্টভাবে নিদর্শন সমূহ এবং ইব্রাহিম আঃ এর এবাদতের স্থান বলা হয়ে থাকে। এই অবস্থায় যারা প্রবেশ করবে তাদের অত্যন্ত নিরাপত্তা রয়েছে। মানুষের মধ্যে যারা এই স্থানে পৌঁছানোর মতো সামর্থ্য আছে তারা অবশ্যই এই গ্রেহে হজ করা ফরজ করা হয়েছে।

বিশেষ করে মুসলমানদের ক্ষেত্রে এটা আল্লাহতালার উপর থেকে একটি সামর্থ্যবান ব্যক্তিদের উপর বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। যদি কেউ অস্বীকার করবে সে আল্লাহতালাকে বিশ্বাস করলো না এবং বিশ্ববাসীর নিকট তিনি অস্বীকারকারী হিসেবে পরিচিত হবেন। (সূরা আল ইমরান)

বিশ্বের প্রতিপালক মহান আল্লাহ তায়ালা হজের গুরুত্ব সম্পর্কে কোরআন শরীফে বর্ণনা করেছেন। প্রায় সাড়ে তিন হাজার বছর পূর্বে মুসলিম জাতির পিতা হযরত ইব্রাহিম আঃ কে লোকদের মাঝে হজের ঘোষণা দেওয়ার জন্য আল্লাহ তা'আলা নির্দেশ দিয়েছিল।

আল্লাহ বলেছিলেন মানুষের মাঝে হজের জন্য ঘোষণা দাও এবং প্রচারণা করো, তারা দূর দূরান্ত থেকে পায়ে হেঁটে এবং উটের পিঠে চড়ে আসবে। সূরা হজ্জ ২৭ নাম্বার আয়াত

হযরত মুহাম্মদ সাঃ হজ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেছেন এবং রাসূল সাঃ বলেন, ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে হজ। তাই এই হজ পালন করা সামর্থ্যবান মুসলমান ব্যক্তির উপর ফরজ করা হয়েছে।

এই হাদীস দ্বারা মহান আল্লাহর কথাটা রাসূল সাঃ তার হাদিসে বলেছেন যে তোমাদের উপর হজ ফরজ করা হয়েছে। সুতরাং তোমরা সবাই হজ পালন করবে। মেশকাত শরীফ

একজন সাহাবী রাসূল সাঃকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে, কোন আমল সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ বা উত্তম? রাসূল সাঃ বলেছিলেন আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনতে হবে, তারপর আবার যখন জিজ্ঞেস করলেন তারপরের আমল কোনটি?

তখন রাসূল সাঃ বললেন আল্লাহর পথে জিহাদ করা। আবার জিজ্ঞেস করা হলো এর পরের আমল কোনটি, তখন রাসূল সাঃ বললেন, হজ করা। বুখারী ও মুসলিম শরীফ

সঠিকভাবে নিয়ম কানুন মেনে যদি আপনি হজ্জ পালন করতে পারেন, তাহলে আপনি নিষ্পাপ শিশুর মত। হযরত আবু হুরায়রা রাঃ হতে বর্ণনা করা হয়েছে, তিনি বলেন রাসূল সাঃ বলেছেন যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে হজ করল এবং হজ সম্পাদন করে, সকল প্রকার অশ্লীল কথা কাজ থেকে এবং গুনাহ থেকে বিরত থাকলো। সে যেন নিষ্পাপ শিশুর মত হয়ে গেল। বুখারী ও মুসলিম শরীফ

রাসুল সাঃ বলেছেন যে, হজ্জের কবুল হয়েছে সেই হজের বিনিময়ে জান্নাত পাওয়া যাবে। মেশকাত শরীফ

হযরত মুহাম্মদ সঃ বলেন, হজ কারী ব্যক্তি সে আল্লাহ যাত্রীর দলের অন্তর্ভুক্ত হবে। কেননা হাদীস শরীফে আছে নবী করীম সাঃ বলেন, তিন শ্রেণীর মানুষ আল্লাহর যাত্রী দলভুক্ত হবে। তারা হলেন যোদ্ধা, হাজী ও ওমরাহকারী। মিশকাত শরীফ

হজের অন্যান্য মর্যাদার কারণে নবী করীম সাঃ বলেছেন হজ সম্পন্ন কারীর কাছে দোয়া চাওয়ার জন্য নির্দেশনা দেন। কেননা হাদীস শরীফে আছে নবী করীম সাঃ বলেন যখন তুমি কোন হাজীর সাথে সাক্ষাত করবে।

তখন তাকে সালাম দেবে মুসাফা করবে এবং তার গৃহে প্রবেশ করার পূর্বে আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাইতে হবে। কেননা একজন হাজীকে মহান আল্লাহতালা হজ করার কারণে ক্ষমা করে দিয়ে থাকেন।

হজ শুধু পরকালীন কল্যানী হবে তা কিন্তু নয় ইহকাল কল্যাণেও মর্যাদা রয়েছে। আমাদের নবী করীম সাঃ বলেছেন, তোমরা হজ ও ওমরা পালন করতে দেরি করো না। অতি তাড়াতাড়ি এটা পালন করবে। 

এর কারণ হলো দুটি এবাদত দারিদ্র্য ও পাপ সমূহকে এমন ভাবে দূর করে দেবে। যেভাবে একজন স্বর্ণকার তার বিশেষ যন্ত্র দিয়ে স্বর্ণ রূপার ময়লা দূর করতে পারে। মিশকাত শরীফ

হজ মুসলমানদের জন্য সৌভাগ্যর মতো পরশপাথরের ন্যায়। কারণ রাসূল সাঃ বলেন, হজ করার কারণে ব্যক্তির পূর্বের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।

এজন্য রাসূল সাঃ বলেন, যে ব্যক্তি হজের ইচ্ছা করলো সে যেন তাড়াতাড়ি করে। মেশকাত শরীফ

একটি গোটা মুসলিমের পক্ষের সম্মেলন যেখানে সমগ্র পৃথিবীর মুসলমানদের রক্ত বর্ণ ভাষা ও ভৌগোলিক সীমা রাখার বিভিন্নতা ভুলে গিয়ে একত্রিত হওয়ার একটি স্থান এবং সকল মুসলিমের একই উদ্দেশ্যে তারা সবাই ভ্রাতৃত্ব বন্ধন সাম্যের চিত্র ফুটে ওঠে। এটা যেন এক মুসলমানদের ইসলামী চেতনার উজ্জীবিত করে।

হজ্জ কখন ফরজ হয়

প্রত্যেক মুসলমানের জানা প্রয়োজন তা হল হজ্জ কখন ফরজ হয়। চলুন সে সম্পর্কে নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা যাক।
ছবি
হজ ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে অন্যতম। হিজরী সনের ৯ম বর্ষে হজ ফরজ করা হয়েছে। এটা আল্লাহর নির্দেশই করা হয় সব যুগের সকল ওলামায়ে কেরামগণ এই ব্যাপারে একমত পোষণ করেছেন। নবী করীম সাঃ প্রথম সফরে নিযুক্ত করেছিলেন তার প্রিয় সাহাবী হযরত আবু বকর রাঃ।

যখন মৌসুম আসলো তখন রাসূল সাঃ হজ্ব কাফেলার আমির হিসেবে মনোনীত করেছিলেন। ওই সময় হজ কাফেলার মোট ৩০০ জন মুসলমান অংশগ্রহণ করেন। এর আগে মুসলমানদের ওপর হজ্ব ফরজ করা হয়েছিল না। আবু বকর রাঃ সাহাবায়ে কেরামদেরকে নিয়ে হজের সফরে রওনা হন।
আল্লাহ রাসূল সাঃ ওপর সুরা তওবা নাযিল করেছিলেন। এই সূরার মধ্যে মুরশিকদের সাথে থাকা শান্তি চুক্তি তারা ভঙ্গ করতে পারবে, আল্লাহতালা প্রিয় নবী করীম সাঃ কে সে ব্যাপারে সতর্ক করেছিলেন এবং নির্দেশ দেন যে আজকের পর থেকে মুশরিকরা হারাম শরীফের সীমানায় প্রবেশ করতে সীমানায় যেন প্রবেশ না করে।

কেউ যেন হারাম মাসগুলোতে যুদ্ধ করতে না পারে, এজন্য রাসূল সাঃ হযরত আলী রাঃ কে ডেকে পাঠালেন এবং তাকে বলা হলো সূরা তাওবায় হজ বিষয় বিধানের ঘোষণা করা হয়েছে। তাই মুসলমানদেরকে বিষয়টি জানিয়ে দাও তখন আলী রাঃ সমবেত হয়ে মুসলমানদের মধ্যে মুরশিকদের ব্যাপারে পবিত্র কুরআনের কথা জানিয়ে দেওয়া হলো।

রাসূল সঃ নির্দেশে তিনি ভাষণ দিয়েছিলেন তিনি বলেছিলেন কোন কাফের জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। আজকের পর থেকে কোন মুশরিক ব্যক্তি হজ করতেও পারবেনা এবং বাইতুল্লাহ শরীফ তাওয়াফ করতে দেওয়া যাবে না। মুশরিকদের সাথে মুসলমানদের যে শান্তি চুক্তি ছিল সেটা ততক্ষণ পর্যন্তই থাকবে যতক্ষণ না তারা ভঙ্গ করে।

হযরত আলী রাঃ রাসূল সাঃ এর উটনিতে চড়ে বের হলেন, পথের মধ্যে দেখা হল হযরত আবু বকর রাঃ এর সাথে। তখন আবু বকর রাঃ তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কি আমিরের তত্ত্বাবধানে আছেন? আমি আমিরের তত্ত্বাবধানে আছি।

আল্লাহর রাসূল আমাকে কিছু বিধান এর কথা বলে পাঠিয়ে দিয়েছেন। এরপরে দুইজন সাহাবী সামনের দিকে অগ্রসর হলেন, হযরত আবু বকর রাঃ কোরবানির দিন মিনায় হযরত আলী রাঃ পক্ষ থেকে সবাইকে দিকনির্দেশনার মূলক কথা বললেন এবং নতুন বিধান সম্পর্কে জানিয়ে দিলেন।

হজ্জ কত প্রকার

ইতিমধ্যে আমরা হজের গুরুত্ব ও তাৎপর্য লেখ? সম্পর্কে জেনেছি। এখন আমরা জানবো, হজ্জ কত প্রকার? এবং এর বিস্তারিত সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলো।

হজ তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে; হজ্জে তামাত্ত, ইফরাত ও হজে কিরান। এর মধ্যে সর্বোত্তম এরপর তামাত্ত তারপরে হজে ইফরাত তবে হজ আদায় করার ক্ষেত্রে প্রথমে তামাত্ত তারপরে ইফারাদ এর পরে হজ্জে কিরান পালন করা হয়ে থাকে।

হজ তামাত্ত পালন করার খুবই সহজ, অধিকাংশ বাংলাদেশী এই হজ্জ পালন করে থাকে। যারা অন্যের বদলি হজ করতে যায় বা যাদের অবস্থান মিকাতের মধ্যে তারা সাধারণত অবস্থান করে থাকে, হজে কিরান পালন করে তবে এই সংখ্যা খুবই কম।

হজ্জে কিরান হল মিকাত থেকে একসঙ্গে ওমরাহ ও হজের নিয়ত করে তাকে কিরান বলা হয়ে থাকে। হজে কিরান হাজীগণকে মক্কায় পৌঁছে প্রথমে ওমরা করা লাগে। তারপরে ইহরাম অবস্থায় হজের জন্য অপেক্ষা করতে হয়।

১০ই জিলহজ দমে শুকরিয়া তথা কোরবানি না করা পর্যন্ত ইহরাম অবস্থায় থাকা লাগে কিরান হজের ক্ষেত্রে তাওয়াফে কদুম করতে হয়। যা একপ্রকার সুন্নত বলা হয় তাই ওমরা ও হজের মধ্যবর্তী সময় একজন হাজী কুদুম করতে হবে যদি সম্ভব হয় তাহলে সায়ী করবে।

যদি কোন কিরান হজ্জ তাওয়াফের সাথে সায়ী করে নেয় সে ক্ষেত্রে ১০ জিলহজ ফরজ তওয়াফের পর আর সায়ী করা লাগবে না। কারণ উমরাও হজের বিধানে একবার সায়ী করা ওয়াজিব। তাছাড়া ৮ জিলহজ থেকে ১২ জিলহজ পর্যন্ত হজের আহকাম গুলো সব হাজী একই ভাবে পালন করবে।

হজে ইফরাদ মিকাত থেকে হজের নিয়ত করে ইহরাম অবস্থায় ইফরাদ হজ বলা হয়ে থাকে। ইফরাদ হাজীগণ পবিত্র মক্কায় পৌঁছা ইহরাম অবস্থায় হজের জন্য অপেক্ষা করবে। তারপর মূল হজ্জ শুরু হওয়ার আগে যে কোন একদিন সুন্নতে তাওয়াফ করবে, সম্ভব হলো সায়ী করে নেবে।

কিরান হজ্জের মতো এক্ষেত্র তাওয়াফে কুদুমের সঙ্গে সায়ী করা যেতে পারে। ১০ জিলহজ ফরজ তাওয়াফের পর আর সায়ী করা লাগবে না।

৮ থেকে ১২ জিলহজ পর্যন্ত হজের আহকাম সবার জন্য একই শুধু পার্থক্য হল ১০ জিলহজ কঙ্কর নিক্ষেপের পর হাজীগণকে কিরান ও তামাত্ত হাজীগণকে হজের ওয়াজিব দমে কোরবানি করা লাগবে কিন্তু ইফরাদ হাজীগণ এই কোরবানি করবে না।

তামাত্ত মিকাত থেকে আর শুধুমাত্র ওমরাহোর নিয়ত করে, ইহরাম বাধা অবস্থায় মক্কায় পৌঁছায়ে ওমরা করার মাধ্যমে ইহরাম খুলে স্বাভাবিক অবস্থায় হজের জন্য অপেক্ষা করবে এবং ৮ জিলহজ ইহরাম বেধে হজ সম্পন্ন করাকে হজে তামাত্ত বলা হয়।

৮ থেকে ১২ জিলহজ পর্যন্ত কিরান ও ইফরাদ হজের মতই তামাত্তু হজ এর সকল বিধান একই ভাবে পালন করবে। এই ক্ষেত্রে পার্থক্য হল তামাত্ত হজে কিরান ইফরাদ এর মত তাওয়াফেক কুদুম করা লাগবে না।

হজ্জ কার উপর ফরজ

এতক্ষণে আমরা জেনেছি হজের গুরুত্ব ও তাৎপর্য লেখ? সম্পর্কে। চলুন, এখন জেনে নেওয়া যাক হজ কাদের উপর ফরজ এই সম্পর্কে।

প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ ও মক্কায় যাওয়া ও আসার মত শক্তি ও সামর্থ্য আছে এমন মুসলিম নর-নারীর উপর জীবনে একবার হলেও হজ ফরজ। তবে নারীদের জন্য স্বামী বা মাহরম পুরুষদের সাথে যাওয়া জরুরী।

মাহরম হলেন যাদেরকে বিবাহ করা যাবে না যেমন পিতা, পুত্র, আপন ভাই দাদা নানা আপন চাচা ও মামা ছেলে বা নাতি জামাতা শশুর দুধ ভাই দুধ ছেলে এই সকল মানুষদেরকে সাথে নিয়ে হজে যাওয়া যাবে। তবে একা একা দুধ ভাইয়ের সঙ্গে এবং যুবতী শাশুড়ির সাথে জামাতা যাওয়া যাবেনা।

এখন জেনে নেওয়া যাক হজ ফরজ হওয়ার জন্য কয়টি শর্ত থাকে তা হল।

১। মুসলমান হতে হবে

২। বিবেকবান ব্যক্তি হতে হবে যার জ্ঞান বুদ্ধি আছে পাগল ব্যক্তির উপর হজ ফরজ না

৩। বালেগ হওয়া অর্থাৎ প্রাপ্তবয়স্ক হতে হবে, অপ্রাপ্তবয়স্কের উপর হজ ফরজ না।

৪। স্বাধীন ব্যক্তি হতে হবে কারো অধীনে গোলাম বা দাস হয়ে আছে এরকম ব্যক্তির হজ পালন করা যাবে না।

৫। শারীরিকভাবে ও আর্থিকভাবে সামর্থ্য হতে হবে

সাধারণত উপরোক্ত বিষয়গুলোর যাদের সামর্থ্য বা এইগুলো রয়েছে। তারাই শুধু হজ করতে পারবেন। তবে ধনীদের ক্ষেত্রে হজ ফরজ হওয়ার কারণ কি চলুন সে সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। ইসলামী শরীয়তের মতে আর্থিক ও শারীরিক সক্ষম ব্যক্তি, প্রাপ্তবয়স্ক যদি হয় সেই ক্ষেত্রে জীবনে একবার হলেও তার ওপর হজ করা ফরজ।

হজ হলো ধনীদের জন্য গরিবের জন্য এটা এবাদত নয় কারণ, ধনীদের ক্ষেত্রে বিলাসিতা ও অহংকার করা এটা যেন একটা রোগের মত। তাছাড়া তাদের উপর হজের বিধান ফরজ করা হয়েছে যেন তাদের মাঝে কোন অহংকার না থাকে এবং আত্মিক উৎসর্গ মন মানসিকতা হয়।

এছাড়া দূর-দূরান্তে ভ্রমণ করা বন্ধু-বান্ধব ও স্বজনদের ত্যাগ করা, ঠান্ডা গরম সহ্য করা বিভিন্ন দেশ সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা এবং অলসতা দূর হয় এছাড়া আরো অনেক কারণ রয়েছে।

হজের ক্ষেত্রে অহংকার ও গর্বের যেন শত্রুতুলের মত এতে করে সাজসজ্জা বর্জন করা যায় মুসাফিরদের সঙ্গে উন্মুক্তভাবে চলাফেরা করা যাবে। বৃত্তশালীদের বিলাসিতার জন্য সাহসিকতা তৈরি হয় এক কথায় হজ এমন একটি জিনিস যা মুসলমানদের অভিজ্ঞ ও সচেতন করতে পারে।

নিঃসন্দেহে এক দেশের কল্যাণ এবং অন্য দেশে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বিত্তশালী লোকরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে, যা দরিদ্র লোক গুলো আসলে করতে পারেনা।

ধনীদের মধ্যে অনেকেই পাপের কাজ বেশি করে থাকে, সে ক্ষেত্রে এই পাপ মাত্রা যদি বেশি হয়ে যায়। তাহলে সে যদি বুঝতে পারে সে ক্ষেত্রে হজ পালন করার ক্ষেত্রে আল্লাহতালা এই পাপগুলো ক্ষমা করে দেন।

হজ মূলত ফরজ হয়েছে ধনীদের জন্যই কারণ হলো কিছু দরিদ্র লোক আল্লাহতালার ভালোবাসার টানে সেখানে যেতে চায় কিন্তু তাদের সামর্থ্য না থাকার কারণে তারা যেতে পারে না। আর ধনী ব্যক্তিগণ যখন তারা অন্য দেশে চলে যায় তাদের মাঝে ভালোবাসার টান থাকে এবং ইসলামের প্রতি পরিপূর্ণ বিশ্বাস এবং মজবুত ঈমান তৈরি হয়।

যার কারণে ধনী গরিব নির্বিশেষে সবাই ঐক্য মনে করে এবং একে অপরের পরিপূরক মনে করে। এর কারণেই একজন বিলাসিতা প্রিয় মানুষ যখন হজ করতে যায় সে ক্ষেত্রে তার সকল অলংকার পোশাক জিনিসপত্র সকল কিছুই রেখে যেতে হয়।

এই ক্ষেত্রে তিনি দারিদ্রতা বা জামা বিহীন খালি মাথায় তাদেরকে হজ পালন করতে হয় যার কারণে তারা গরিবদের দুঃখ কষ্ট গুলো বুঝতে পারে এজন্যই এই হজ তাদের জন্য ফরজ করা হয়েছে।

হজ্জ না করার শাস্তি

ইতিপূর্বে আমরা হজের গুরুত্ব ও তাৎপর্য লেখ? সম্পর্কে জেনেছি এখন জানবো হজ না করলে কি শাস্তি হতে পারে। চলুন, এ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।

হজ ইসলামের পাঁচটি স্তম্বের মধ্যে অন্যতম তাই নির্দিষ্ট সময়ে বাইতুল্লাহ শরীফ জিয়ারত করা সাধারণত হজ্জ বলা হয়ে থাকে। দৈহিক ও আর্থিক সামর্থ যাদের রয়েছে যে সকল মুসলিম নারী পুরুষের উপর এই হজ একবার হলেও জীবনে পালন করা ফরজ।
ছবি
আল্লাহতালা বলেছেন, মানুষের মধ্যে যারা বাইতুল্লা যাওয়ার মত সামর্থ্য আছে তারা যেন আল্লাহর উদ্দেশ্যে এই গৃহে হজ করে এবং তাদের উপর হজ করা ফরজ। সূরা আল ইমরান আয়াত নাম্বার ৯৭

হজ জীবনে একবার ফরজ হয় এই এবাদতটা শুধু একবারই করতে হয়। তাই যদি একাধিক বার করে সে ক্ষেত্রে নফল হজ হবে। বুখারী শরীফ

যাদের উপর হজ্জ ফরজ হয়েছে তারা যেন অতি তাড়াতাড়ি হজ্জ আদায় করে নেয়। মানুষের জীবন মরণের যে কোন মুহূর্তে মৃত্যু হতে পারে। সেজন্য অতি দ্রুত গতিতে হজ করে নেয়। সুনানে আবু দাউদ
আর্থিক ও শারীরিক সামর্থ্য থাকার পরও যারা হজ করে না তাদের শাস্তি ভয়াবহ হতে পারে। কেননা হাদিস বর্ণনা আছে যে ব্যক্তি বাইতুল্লাহ শরীফের যাওয়া-আসার সামর্থ্য রয়েছে সে যদি পালন না করে সে যেন ইহুদী-খ্রিস্টান এর মত মৃত্যুবরণ করে, এতে কারো যায় আসে না। তিরমিজি শরীফ

হাদিস অনুযায়ী ফরজ হজ অবশ্যই পালন করা লাগবে, এক্ষেত্রে তিনটি কারণে হজে যেতে অপারক হলে তা আল্লাতালা ক্ষমা করে দিবেন। ১। পরিবহন সমস্যা ২। অত্যাচারী বাদশা বা সরকারের দ্বারা ক্ষতির আশঙ্কা থাকলে।

৩। বড় ধরনের রোগ ব্যাধি হলে যেখানে হজ্জ যাওয়ার ক্ষেত্রে অপারগ দেখা দিলে। তা ছাড়া কেউ হজ্জ পালনে বিরত থেকে তার মৃত্যু হলে তার মৃত্যুকে ইহুদি খ্রিষ্টানের মৃত্যুর সাথে তুলনা করা হয়েছে।

এমনকি ফরজ হজ দ্রুত সম্পাদনের নির্দেশনা দিয়েছে হাদিস শরীফে এভাবেই বর্ণনা করা হয়েছে আবু সাঈদ খুদিরী রাঃ হতে বর্ণনা করা হয়েছে রাসুল সাঃ বলেন, আল্লাহতালা বলেছেন আমি আমার বান্দার শরীরকে সুস্থ রাখলাম, তার আয় উপার্জনে বৃদ্ধি করে দিলাম, পাঁচ বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পরও যদি সে আমার ঘরের উদ্দেশ্যে আগমন না করে। তাহলে সে যেন হতভাগ্য এবং আমার থেকে বঞ্চিত।

হজ ওমরাহ না করে সন্ন্যাসী হওয়ার চেষ্টা ও ইসলামের অনুমোদন করবে না। হজরত আব্বাস রাঃ বর্ণনা করেছেন রাসূল সাঃ বলেছেন, ইসলামে বৈরাগীর স্থান নাই। আবু দাউদ

উপরে উল্লেখিত বক্তব্যের মাধ্যমে সামর্থ্য থাকার পরও যেসব মুসলমান হজ করলো না। কেয়ামতের দিন তারা কঠিন অবস্থায় সম্মুখীন হতে হবে। তাদের আর হজ পালনের সুযোগ থাকবে না, কারণ নির্ধারণ শাস্তি ভোগ করতে হবে।

মোটকথা হজ পালনের ব্যাপারে সামান্য উদাসীনতা করলেই শাস্তি ও আজাবের ব্যবস্থা করা হবে। হজ ত্যাগকারীর বিরুদ্ধে রাসুল সাঃ যেখানে বিধর্মী হয়ে মৃত্যুবরণ করার বলেছেন। সেই ক্ষেত্রে ঈমানদার গণ ফরজ হজের ব্যাপারে দেরি না করে অতী শীঘ্র হজ পালন করা উচিত।

লেখকের শেষ কথা

পরিশেষে বলা যায় যে, ধনীদের উপরে ফরজ করা হয়েছে। তাই শারীরিক শক্তি ও আর্থিক সামর্থ্য থাকলে অবশ্যই তাকে হজ পালন করতে হবে। অন্যথায় সে গুনাগার হবে, তাই হজের গুরুত্ব ও তাৎপর্য লেখ, এ সম্পর্কে উপরে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি আপনার উপকার হবে। তাই পোস্টটি যদি ভালো লাগে তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধু-বান্ধবের নিকট শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এম আর মাহমুদ ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪