বাংলাদেশের উন্নয়নে কারিগরি শিক্ষার গুরুত্ব এবং সুবিধা ও অসুবিধা সম্পর্কে জানুন
বাংলাদেশের উন্নয়নে কারিগরি শিক্ষার গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। কারণ কারিগরি শিক্ষার মাধ্যমে উৎপাদনশীল দেশ হলে উন্নত দেশ হবে। চলুন, কারিগরি শিক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
সকল শিক্ষার্থীরদের সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি টেকনিক্যালি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। এতে তারা পড়াশোনা শেষ করে বেকার থাকতে হবে না। তাই বাংলাদেশের উন্নয়নে কারিগরি শিক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে জানতে পোস্টটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
পোস্টসূচিপত্রঃবাংলাদেশের উন্নয়নে কারিগরি শিক্ষার গুরুত্ব এবং সুবিধা ও অসুবিধা সম্পর্কে জানুন
কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা কি
কারিগরি শিক্ষা গ্রহণ করা সবার প্রয়োজন। চলুন কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা কি, এ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
কারিগরি শিক্ষা কিঃ যে শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষার্থীদের কে নির্দিষ্ট শিল্প ও পেশাগত ব্যস্ততায় লিপ্ত করে এবং হাতে-কলমে শিক্ষা দেওয়া হয় তাকে কারিগরি শিক্ষা বলা হয়। কারিগরি শিক্ষা হল ইঞ্জিনিয়ারিং এবং মেডিকেলের মত শিক্ষা ব্যবস্থা। তাছাড়া হাতে-কলমে যে শিক্ষা দেওয়া হয় পরবর্তীতে দক্ষতা অর্জন করে উৎপাদনশীল কাজে লাগাতে পারে সেটাকেই মূলত কারিগরি শিক্ষা বলে।
সহজ ভাষায় বলতে গেলে কারিগরি শিক্ষা হলো প্রযুক্তি এবং শিল্প বিষয়ক দক্ষতা প্রদানকারী শিক্ষা পদ্ধতি যেমন ছাত্রদের জন্য শিক্ষা ব্যবস্থা যা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে চায় কিন্তু ভালো কোন প্রতিষ্ঠান খুঁজে পায় না বা ভর্তি হতে পারে না।
আরো পড়ুনঃ ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর অবদান ও গুরুত্ব বা তাৎপর্য সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন
এ সকল শিক্ষার্থীগুলোর জন্যই এই ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর মাধ্যমেই অনেক শিক্ষার্থী ইঞ্জিনিয়ারিং পেশাকে গড়ে তুলতে পারে। তাছাড়া কারিগরি শিক্ষা ব্যবস্থা এমন একটি শিক্ষা ব্যবস্থা যেখানে শিক্ষার্থীদের কে প্রযুক্তি এবং কারো শিল্পের কাজের ক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জন করে তোলে।
বৃত্তিমূলক শিক্ষাঃ বৃত্তিমূলক শিক্ষা হলো যা শিক্ষার্থীদের কে হাতে-কলমে বাস্তবে কাজের মাধ্যমে দেখিয়ে দেওয়া হয়। এর মাধ্যমে বৃত্তি সম্পর্কে জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন করতে পারে। এ শিক্ষার উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে কৃষিকাজ ক্ষুদ্র ও বৃহৎ নানা শিল্পের কাজ যন্ত্র চালানোর কাজ এছাড়া আরো অন্য কাজ রয়েছে।
অর্থাৎ যে শিক্ষা শিক্ষার্থীদের কে কোন কাজের মাধ্যমে জীবিকা উপার্জনের ব্যবস্থা করে দেয় এবং দক্ষতা অর্জন করতে পারে তাকে বৃত্তিমূলক শিক্ষা বলা হয়ে থাকে। যেমন আইনবিদ্যা, সাংবাদিকতা, সেবামূলক ভিত্তিক, কুটির শিল্প হস্তশিল্প এ ধরনের কাজগুলোকে বৃত্তিমূলক কাজ বলা।
বাংলাদেশের উন্নয়নে কারিগরি শিক্ষার গুরুত্ব
বাংলাদেশের উন্নয়নে কারিগরি শিক্ষার গুরুত্ব রয়েছে। তাই বর্তমান সময়ের প্রযুক্তি বিষয়ক কাজগুলো শিখতে হবে এবং হাতে-কলমে শিক্ষা করার মাধ্যমে কারিগরি শিক্ষা বলা হয়ে থাকে। আর যে শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীকে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প কৃষি এখানে যন্ত্রপাতি ব্যবহার করার জন্য আধুনিক জ্ঞান বিজ্ঞান এর মাধ্যমে যে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় সেটাই মূলত কারিগরি শিক্ষা বলা হয়ে থাকে।
আমাদের শ্রমবাজারের বর্তমানে আধুনিক মাধ্যমে দক্ষ শ্রমিক রূপান্তর করা দেশের কারিগরি শিক্ষার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। বর্তমানে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের যুগে আমাদের দেশে কারিগরি শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। এতে শতভাগ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে।
আমাদের দক্ষতার প্রয়োজন রয়েছে এজন্য কারিগরি ও দক্ষ অপারেটর। সবাইকে সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষা প্রতি দক্ষতা অর্জন করতে হবে। কারণ এই ধরনের সার্টিফিকেট চাকরি অনেক রয়েছে কিন্তু সাধারণ শিক্ষার অনেক ছাত্র বেকার রয়েছে। তাদের তেমন কোন চাকরি বর্তমান দেশে নেই এজন্য প্রশিক্ষণের কোন বিকল্প নাই।
বর্তমান সারা বিশ্বে চাকরির ক্ষেত্রে উৎপাদনশীল খাতকেই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাই বাংলাদেশ উন্নত করতে হলে শিল্পায়নের প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে এবং উৎপাদনশীল দেশ হতে হবে। কেননা বড় বড় রাষ্ট্রগুলোতে পণ্য সেবা উৎপাদন করেই তারা আজ অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছে। সেই ক্ষেত্রে বর্তমানে কারিগরি শিক্ষার গুরুত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে।
আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থার ক্ষেত্রে উন্নত দেশগুলো কারিগরি শিক্ষা অর্জনের ক্ষেত্রে গুরুত্ব দিয়ে থাকে বেশি। কেননা এর মাধ্যমে উৎপাদন মূলক কাজে দক্ষতা অর্জন করা যায় এবং আধুনিক যন্ত্রপাতি ও উপকরণ ব্যবহার এগুলো কৌশল প্রয়োগ করে কৃষিতে বিপ্লব ঘটানো যাবে।
আধুনিক বিশ্বগুলো এভাবেই উন্নত হচ্ছে, টেকনিক্যাল ভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থা করা দরকার যাতে দেশের জাতীয় আয় বৃদ্ধি পাবে। কারিগরি শিক্ষা শ্রমিকের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করতে হবে, এতে করে শ্রমিক সহজে দেশীয় আন্তর্জাতিক শ্রম বাজারে দক্ষতার সাথে কাজ করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারবে।
কারিগরি শিক্ষার মাধ্যমে মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পাবে, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে জীবনযাত্রা মান উন্নত করতে পারবে এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটাতে পারবে। শিক্ষার মাধ্যমে চীন তার বিশাল জনগোষ্ঠীকে কাজে লাগিয়েছে অর্থাৎ মানব সম্পদে রূপান্তর করেছে।
ইউরোপের সাথে প্রতিযোগিতায় তারা এগিয়ে রয়েছে, কর্মসংস্থানের সুযোগ সুবিধা আর সৃষ্টি করতে পেরেছে। আত্মকর্মসংস্থান তৈরি করেছে উদ্যোক্তা তৈরি করেছে। তাছাড়া উৎপাদনশীলতা দেশ হওয়ার কারণে তারা অর্থনৈতিকভাবে বিশ্বের বুকে স্থান করে নিয়েছে তাই কারিগরি শিক্ষার গুরুত্ব।
কারিগরি শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণের প্রয়োজনীয়তা ব্যবস্থা করতে হবে, তাহলেই আমাদের দেশ ও জাতি উন্নতির দিকে অগ্রসর হবে।
উৎপাদনশীলতাঃ কারিগরি শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কে উৎপাদন মূলক কাজের প্রতি দক্ষতা অর্জন করতে হবে এবং সমাজ ও দেশের উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হবে।
স্বনির্ভরতাঃ কারিগরি শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা স্বনির্ভর হতে হবে এবং নিজেরা উদ্যোক্ত হতে হবে। তাহলে কোন চাকরি পিছনে না খুঁজে তারা নিজেরাই উৎপাদন মূলক কাজের প্রতি দক্ষতা অর্জন করে নিজেই উদ্যোক্তা হবে তাহলে দেশ উন্নতি হতে পারবে।
জাতীয় আয় বৃদ্ধিঃ কারিগরি শিক্ষার মাধ্যমে উৎপাদন শিক্ষা করার মাধ্যমে দেশের জাতীয় আয় বৃদ্ধি পাবে এবং দেশের উন্নয়ন হবে।
শ্রমের প্রতি মর্যাদাঃ শিক্ষার্থীদের যেহেতু পরিশ্রম হবে এবং এর মাধ্যমে তারা উপার্জন করতে পারবে সেজন্য তাদের শ্রমের প্রতি মর্যাদাবোধ সৃষ্টি হতে হবে।
জীবনে প্রতিষ্ঠা লাভঃ বৃত্তিমূলক বা কারিগরি শিক্ষার মাধ্যমে জীবনের প্রতিষ্ঠা লাভ করতে পারবে এবং শিশুদের এই ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থা করার মাধ্যমে তারা উৎপাদন মূলক কাজের ক্ষেত্রে নিজেকে দক্ষতা অর্জন এবং অর্থ উপার্জন করতে সক্ষম হবে।
কর্মের সুযোগঃ বৃত্তিমূলক ও কারিগরি শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা কর্মের দক্ষতা অর্জন করতে পারবে। চাকরি ও কর্মসংস্থানের সৃষ্টি ও তারা করতে পারবে এজন্য কারিগরি শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা গুরুত্ব অপরিসীম। এর মাধ্যমে জনগোষ্ঠীর জনসম্পদের রূপান্তরের হবে এবং তারা কারিগরি শিক্ষার গুরুত্ব বুঝতে পারবে।
এজন্য দক্ষ মানব সম্পদ গুলো কাজে লাগিয়ে দেশ ও জাতি উন্নত হতে পারবে। সর্বোপরি কথা হলো কারিগরি ও প্রযুক্তি নির্ভর প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দেশের শিল্পায়ন ও অর্থনৈতিক উন্নত করতে হবে। যদি তারা কারিগরি শিক্ষা অর্জন করে তাহলে দেশ ও জাতি উন্নত হবে।
কারিগরি শিক্ষার সুবিধা ও অসুবিধা
কারিগরি শিক্ষার সুবিধা ও অসুবিধা দুটোই রয়েছে তবে অসুবিধার চাইতে সুবিধা বেশি। নিম্নে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো,
কারিগরি শিক্ষার সুবিধাঃ শিক্ষার মাধ্যমে যে সকল সুবিধা পাওয়া যায় তা নিম্নে আলোচনা করা হলো,
- কম খরচে ভালো শিক্ষা ব্যবস্থা করা যায়।
- কারিগরি শিক্ষার মাধ্যমে দেশের বেকার থাকবে না।
- নিজে উদ্যোক্তা হয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারবে।
- অর্থনৈতিকভাবে দেশ উন্নত হবে এবং দেশ এগিয়ে যাবে।
- বাংলাদেশের প্রযুক্তির সমস্যার সমাধান হবে।
- দেশে যে পরিমাণ বিদ্যুতের ঘাটতি রয়েছে সেটা পূরণ হবে।
- দেশের বিভিন্ন ধরনের উন্নয়নের ক্ষেত্রে রাজধানী এবং মান উন্নয়ন ঘটবে।
- শিক্ষার্থীদের মধ্যে উন্নয়নের প্রেরণা বা তারা উৎসাহিত পাবে।
- শিক্ষার্থীরা নিজেদের ক্যারিয়ার গড়তে পারবে এবং নিজেকে পেশায় নিয়োজিত করতে পারবে।
- যারা লেখাপড়ায় একটু দুর্বল রয়েছে তারা পেশাগতভাবে এই শিক্ষা অর্জন করলে যে কোন পেশায় তারা দক্ষতার সাথে কাজ করে দেশের শিল্প উন্নয়ন ঘটাতে পারবে।
- এক কথায় কারিগরি শিক্ষার সুবিধার শিক্ষার্থীরা পাবে দেশের উন্নয়ন করবে এবং দেশকেও তাদের সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে। তাহলেই তারা এই কাজের কারিগরি শিক্ষার মাধ্যমে তারা দক্ষতা অর্জন করে নিজের এবং দেশের জন্য উন্নত করতে পারবে।
সুপরিকল্পনার অভাবঃ দেশের যে সমস্ত শিল্প কাল কারখানা রয়েছে সেই শিল্পকাল কারখানার দক্ষ লোকের অভাব। আর কোন কাজের চাহিদা বেশি সেই অনুযায়ী দক্ষ কারিগর পরিকল্পনা ভাবে তৈরি করতে হবে। তাহলেই দেশের শিল্পায়ন উন্নত হবে এবং দক্ষ কারিগর তৈরি হবে।
এজন্য যে ধরনের কাজের চাহিদা বেশি এবং বহির্বিশ্বের সাথে প্রতিযোগিতা করা যাবে। সেই ক্ষেত্রে কাজের দক্ষতা বা শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে কিন্তু আমাদের দেশে এই ধরনের শিক্ষার ব্যবস্থার প্রতি তেমন আগ্রহ নেই।
উপযুক্ত শিক্ষকের অভাবঃ কারিগরি শিক্ষার ক্ষেত্রে শিক্ষকদের তেমন বেতন দেওয়া হয় না। বেতনের হার খুবই কম যার কারণে দক্ষ শিক্ষক পাওয়া যায় না। আর দক্ষ শিক্ষক ছাড়া দক্ষ ছাত্র বের হবে না। এজন্য শিক্ষকদের সুযোগ-সুবিধা অভাব আছে। গবেষণাগারের ও পরীক্ষাগার এই ধরনের সমস্যা থাকার কারণে শিক্ষকরা এই পেশায় আসতে চায় না।
ভাষাগত সমস্যাঃ বৃদ্ধি ও কারিগরি শিক্ষার ক্ষেত্রে ভাষাগত সমস্যা অন্যতম একটি অসুবিধা। কারণ এই শিক্ষার বইগুলো সাধারণত ইংরেজিতে লেখা এ কারণে শিক্ষার্থীরা তেমন একটা বুঝতে পারে না।
অর্থ অভাবঃ বর্তমান প্রযুক্তির যোগ হওয়ার কারণে প্রযুক্তির পণ্যগুলো ক্রয় করতে অনেক টাকা লাগে। কিন্তু এই সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে অর্থের অভাবে ল্যাবরেটরী না থাকার কারণে শিক্ষার্থীরা আধুনিক জ্ঞান লাভ করতে অসুবিধা হয়। অর্থের অভাবে শিক্ষার্থীরা প্র্যাকটিক্যালি তেমন একটা কাজ করতে পারে না।
কর্মরত শিক্ষকের প্রশিক্ষণের অভাবঃ কর্মরত যে শিক্ষকগুলো রয়েছে তাদের প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে সচেতন হতে হবে। কারণ তাদের প্রশিক্ষণ তেমন একটা দেওয়া হয় না। প্রতিদিন বিজ্ঞানের সাথে তাল মিলিয়ে নতুন নতুন প্রশিক্ষণ দেওয়া উচিত।
এছাড়াও এই শিক্ষকগণ প্রতিদিনের এই আধুনিকতা জ্ঞান না থাকার কারণে শিক্ষার্থীরা দক্ষতা অর্জন করতে পারে না। যার কারণে তারা শিল্প কলকারখানায় সেই দক্ষতা গুলো প্রয়োগ করতে না পারার কারণে শিল্প উন্নয়নের ক্ষেত্রে অসুবিধা হচ্ছে।
আধুনিকীকরণের অভাবঃ বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির সাথে চলতে হলে কিছু নতুন আবিষ্কৃত যন্ত্রপাত প্রয়োজন হবে। যা শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে উপকার হবে কিন্তু এখন পর্যন্ত আমাদের দেশে সেই পুরানা আমলের যন্ত্রপাতি দিয়েই কাজ করানো হচ্ছে।
কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য
ইতিপূর্বে আমরা বাংলাদেশের উন্নয়নে কারিগরি শিক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে জেনেছি। এখন আমরা জানবো এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে চলুন এ বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
কারিগরি শিক্ষার লক্ষ্য হলো যুগ উপযোগ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে এবং মানবসম্পদকে কাজে লাগাতে হবে। তাহলেই অর্থনৈতিক জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন হবে। কারিগরি শিক্ষার লক্ষ্য উদ্দেশ্যসমূহ আমাদের কাজে লাগাতে হবে আর এই লক্ষ্য উদ্দেশ্য হলো,
- কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা প্রশিক্ষণের সকল ক্ষেত্রেই সমতা নীতি প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
- দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক শ্রম বাজারে জন্য উপযোগী করে তুলতে হবে।
- মানসম্মত কারিগরী শিক্ষার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।
- শিক্ষা ব্যবস্থায় আরো বেশি সুশাসনের দিকে নজর দিতে হবে।
- দেশের যে সকল বেকার ছেলেমেয়ে রয়েছে তাদের বেকারত্ব দূর করার ব্যবস্থা করা।
- প্রযুক্তি নির্ভর হিসেবে গড়ে তোলা এবং প্রযুক্তির দক্ষতা অর্জন করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।
- বেকার ছেলে মেয়েদেরকে বেকারত্ব কমিয়ে নিয়ে এসে শিল্প উন্নয়নের দিকে মনোনিবেশ করতে হবে।
- অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে দেশকে উন্নত করা এবং উন্নত করার জন্য শিল্পের ব্যবস্থা করতে হবে এবং শিল্পের মাধ্যমেই করতে হবে।
শিল্প ব্যবস্থার উন্নতির জন্য নিত্যনতুন শিল্প পদ্ধতি ব্যবস্থা করা যোগাযোগের ক্ষেত্রে প্রযুক্তি মেকানিক্যাল টেকনিক্যাল কাজগুলো আবিষ্কার করা এবং দেশকে উন্নয়নের দিকে নিয়ে যাওয়া।
মেডিকেল এবং টেকনিক্যাল কাজের ক্ষেত্রে দেশের বেকার ছেলে মেয়েদেরকে বেকারত্বের হার কমাতে হবে। এছাড়াও কারিগরি শিক্ষার উদ্দেশ্য উপলক্ষে বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করতে পারলেই এর লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন হবে।
দেশ কারিগরি শিক্ষার মাধ্যমে উন্নয়নের দিকে অগ্রগতি হবে দেশে শিল্প কলকারখানা ও দক্ষ লোকের মাধ্যমে অর্থনীতিভাবে স্বাবলম্বী হবে এবং উন্নয়নমূলক কাজ করলেই দেশ উন্নতির দিকে যাবে।
কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার পার্থক্য
কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার পার্থক্য এর ক্ষেত্রে সম্পর্ক নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। এই দুই ধরনের শিক্ষায় মানুষকে আত্মনির্ভরশীল করে তোলে। এই শিক্ষার মাধ্যমে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে বৃত্তিমুখী শিক্ষা ব্যক্তিকে দক্ষতা অর্জন করতে পারে এবং টেকনিক্যালি কাজের মাধ্যমে তারা অন্যদের দিকে অগ্রসর হয়।
শিক্ষার লক্ষ্যঃ এই দুই শিক্ষার লক্ষ্য হলো একজন ব্যক্তিকে যেন আত্মনির্ভরশীল হয় এবং ব্যক্তিকে দক্ষতা অর্জন করার ক্ষেত্রে সকল ধরনের ব্যবস্থা করা।
পাঠক্রমঃ এই দুই শিক্ষার মূল লক্ষ্য বা পাঠ্যক্রম আলাদা রয়েছে তবে দক্ষতা বা বৃত্তি অনুযায়ী পাঠ্যক্রমও ভিন্ন।
দক্ষতা অর্জনঃ উভয়প্রকার শিক্ষার মাধ্যমে মানুষকে দক্ষ কর্মী হিসেবে গড়ে তোলা হয়। যেন মানুষ আত্মনির্ভরশীল হতে পারে এবং দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে জীবন মান উন্নত করতে পারে।
চাহিদা নির্ভরঃ দুই ধরনের শিক্ষার মাধ্যমেই ব্যক্তির চাহিদা পূরণ হবে এবং উভয় শিক্ষার মাধ্যমে তারা আত্মনির্ভরশীল হবে।
ব্যবহারিক জ্ঞানঃ উভয় শিক্ষার মাধ্যমেই ব্যক্তিকে ব্যবহারিক দক্ষতা অর্জন করার জন্য সকল প্রকার সুযোগ সুবিধা দিয়ে থাকে এবং ব্যবহার জ্ঞানের মাধ্যমে তারা দক্ষতা অর্জন করতে পারে।
জাতীয় উন্নয়নমুখীঃ এই দুই শিক্ষার মাধ্যমেই জাতীয়ভাবে উন্নয়ন হবে, কারণ তারা অভিজ্ঞতার আলোকে দেশ ও জাতিকে উৎপাদন মুখী কাজ করে জাতীয় উন্নয়ন ঘটাবে।
ব্যতিক্রম শিশুদের সুযোগঃ বৃত্তিমূলক শিক্ষার মাধ্যমে শিশুরা উৎপাদন মূলক কাজ করতে পারে। যা দিয়ে তারা স্বনির্ভরশীল হতে পারে তবে কিছু কারিগরি শিক্ষার মাধ্যমে ব্যতিক্রম শিক্ষার্থী দের ক্ষেত্রেই সফলতা অর্জন হয়।
আর্থিক উন্নতিঃ এই দুই পদ্ধতি শিক্ষার মাধ্যমেই ভবিষ্যতে কাজের সুযোগ তৈরি হয় এবং অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছলতা দেখা দেয়।
জাতীয় সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহারঃ শিক্ষার মাধ্যমে সুদক্ষ কারিগর গড়ে তোলা হয় এর ফলে জাতীয় সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার হওয়ার কারণে শিল্প উৎপাদন বৃদ্ধি পায় এবং জাতীয় সম্পদের উন্নতি ঘটে।
শ্রমের প্রতি মর্যাদাঃ উভয় শিক্ষার মাধ্যমে শ্রমের প্রতি সম্মান বৃদ্ধি পায় এবং শ্রদ্ধাবোধ বৃদ্ধি পেতে থাকে যার কারণে জাতীয়ভাবে উন্নত ঘটাতে পারে।
সৃজনশীলতার বিকাশঃ এই দুই ধরনের শিক্ষা অর্জন করার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মাঝে নতুন কিছু আবিষ্কার করার প্রবণতা সৃষ্টি হয়। যার কারণে তাদের মাঝে সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটে।
আমাদের শেষ কথাঃ বাংলাদেশের উন্নয়নে কারিগরি শিক্ষার গুরুত্ব এবং সুবিধা ও অসুবিধা সম্পর্কে জানুন
সর্বশেষ বলা যেতে পারে যে, একটি দেশ তখনই উন্নত হবে যখন তার কারিগরি শিক্ষার ক্ষেত্রে উন্নত ঘটবে। উৎপাদনশীল দেশ হলে সে দেশ উন্নত হবে, তাই বাংলাদেশের উন্নয়নে কারিগরি শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। এজন্য প্রত্যেকটা শিক্ষার্থীর সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষার গুরুত্ব দেওয়া উচিত। যদি পোস্টে ভালো লাগে তাহলে আপনার বন্ধু-বান্ধবের নিকটে শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ
এম আর মাহমুদ ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url