নিম পাতা চুলে দেওয়ার নিয়ম ও ব্রণের জন্য উপকারিতা সম্পর্কে জানুন

অনেকে নিম পাতা চুলে ব্যবহার করে থাকে, তবে নিম পাতা চুলে দেওয়ার নিয়ম ও পরিমাণমতো ব্যবহার করতে হবে। তাহলে উপকার পাওয়া যাবে। চলুন, নিমপাতা কিভাবে চুলে দিতে হয় সে সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
ছবি
নিম পাতার প্রাকৃতিক গুনাগুন রয়েছে, তাই চর্মরোগ ও ত্বকের বিভিন্ন ধরনের কাজ করে থাকে। তাছাড়া চুলে ব্যবহার করা যায়, তাই নিম পাতা চুলে দেওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানতে আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।

পোস্টসূচিপত্রঃনিম পাতা চুলে দেওয়ার নিয়ম ও ব্রণের জন্য উপকারিতা সম্পর্কে জানুন

নিম পাতার উপকারিতা

নিমপাতা বিভিন্ন রোগ সারাতে কাজ করে থাকে। তাই নিম পাতার উপকারিতা রয়েছে। নিম পাতা শরীরের জন্য অনেক উপকার করে থাকে। বিশেষ করে চর্ম রোগের ক্ষেত্রে ভালো কাজ করে থাকে। নিম্নে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো,

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়ঃ যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম রয়েছে, তারা নিমপাতা ব্যবহার করতে পারেন। এতে অনেক উপকার পাবেন, কারণ এর মাঝে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকার জন্য নিম পাতা গুড়া করে এক গ্লাস পানির সাথে খেয়ে নিতে পারেন এতে প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে।

ওজন কমায়ঃ নিম গাছের ফুল ওজন কমাতে সাহায্য করে, এতে শরীরের জন্য মেটাবলিজম বৃদ্ধি করে অতিরিক্ত চর্বি দূর করতে পারে। এটা তলপেটের চর্বি কমাতে পারে, এজন্য এক মুঠো নিম গাছের ফুল চুর্ণের সাথে এক চামচ মধু আধা চামচ লেবুর রস করে খেতে পারেন। যদি সকালবেলা খালি পেটে খেতে পারেন এতে আপনার ওজন অনেক কমে যাবে।

ভাইরাস প্রতিরোধ করেঃ ভারতীয় উপমহাদেশে ভাইরাস প্রতিরোধ করার জন্য নিমের পাতায় ব্যবহার করা হতো। আধুনিক চিকিৎসার উন্নতির আগে চিকেন পক্স, হাম ও অন্যান্য চর্ম রোগের ক্ষেত্রে নিম পাতা বেটে ব্যবহার করা হতো। নিম পাতা পানিতে সিদ্ধ করেও গোসল করে ত্বকের জ্বালাপোড়া চুলকানি দূর করতো।

এলার্জি দূর করেঃ অনেকের এলার্জির সমস্যা থাকতে পারে এটা এক ধরনের চর্ম রোগ। আর এ চর্ম রোগের ক্ষেত্রে নিম পাতা দারুন কাজ করে থাকে। তাই আপনি প্রতিদিন গোসল করার পূর্বে নিম পাতা এবং পানি গরম করে সেই পানি যদি গোসল করতে পারেন। তাহলে আপনার চর্মরোগ সমস্যা দূর হবে।
ম্যালেরিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করেঃ নিম পাতা সিদ্ধ করে ঠান্ডা করে স্প্রে করে যদি বোতলে রাখা যায়। এক্ষেত্রে নিয়মিত ঘরে যদি স্প্রে করতে পারেন তাহলে মশা কমে যাবে। আর মশা কামড়ানো অনেকটাই কমে যাবে। মশার কামড়াবে না যার কারণে ম্যালেরাও হবে না।

পোকামাকড়ের কামড়ের ব্যথা দূর করেঃ বিশেষ করে ছোট বাচ্চাদের সাধারণত পোকামাকড় কামড় দিয়ে থাকে। আর যে জায়গায় কামড় দিয়েছে সেখানে নিম গাছের মূল ছাল অথবা পাতা বেটে যদি লাগাতে পারেন। তাহলে ব্যথা কমে যাবে তবে এই ক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখবেন পোকামাকড় যদি বিষাক্ত হয় সে ক্ষেত্রে অসুবিধা হতে পারে। তখন চিকিৎসকের নিকট নিয়ে যেতে হবে।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করেঃ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে ভালো কাজ করে থাকে নিম পাতা। নিমপাতা রক্তের শর্করা কমাতে পারে নিয়মিত সকালবেলা দশটি নিমপাতা বেটে যদি আপনি খেতে পারেন। সে ক্ষেত্রে ডায়াবেটিস অনেকটা নিয়ন্ত্রণে থাকবে। এ নিম পাতার রক্তনালি কেউ প্রসারিত করতে পারে এতে রক্ত চলাচল ভালো থাকে।

উকুন দূর করেঃ যাদের উকুনের সমস্যা রয়েছে তারা সপ্তাহের তিনবার দুই মাস নিমের পাতার পেস্ট বানিয়ে মাথায় দিতে পারেন। এরপর আপনি শ্যাম্পু দিয়ে ফেলবেন, এতে আপনার উকুন চলে যাবে।

দাঁতের রোগ নিরাময় করেঃ নিমের পাতা বা ছাল, বাকলের গুড়া অথবা ঢাল দিয়ে যদি নিয়মিত দাঁত মাজতে পারেন। সে ক্ষেত্রে আপনার দাঁত শক্ত হবে এবং বিভিন্ন রোগ থেকে নিরাময় পাবেন।

বাত ব্যথা নিয়ন্ত্রণ করেঃ যাতের বাতের ব্যথা রয়েছে তারা নিমের তেল দিয়ে মেসেজ করতে পারেন। এতে আপনার ব্যথা অনেকটা চলে যাবে অথবা নিমপাতা, নিমের বীজ, বাকল ব্যবহার করতে পারেন। এতে আপনার বাতের ব্যথা অনেকটাই কমে যাবে।

চর্মরোগ নিরাময়ঃ নিমপাতা চর্ম রোগের ক্ষেত্রে ভালো কাজ করে থাকে, বিশেষ করে ব্রণ ফোড়া সহ বিভিন্ন ধরনের যারা সমস্যায় আছেন। তারা এ নিম পাতা ব্যবহার করতে পারেন। ত্বকের যে স্থানে এই সমস্যা রয়েছে তারা নিমপাতা বেটে সেখানে লাগিয়ে দেবেন এতে উপকার পাবেন।

নিম পাতা চুলে দেওয়ার নিয়ম

যাদের চুলের বিভিন্ন ধরনের সমস্যায় রয়েছে, তারা নিম পাতা চুলে দেওয়ার নিয়ম অনুযায়ী পরিমাণ মতো ব্যবহার করলে উপকার পাবেন। নিম্নে এ বিষয়ে আলোচনা করা হলো,

নিম পাতা চুল পড়া কমাতেঃ চুল পড়া সমস্যা অনেকেরই হয়ে থাকে, আর চুল পড়া বন্ধ করার জন্য নানা রকম ব্যবস্থাও নিয়ে থাকেন কিন্তু কোনটা কার্যকর হয় আবার কোনটা আরো ক্ষতি হয়। তবে কোন পদ্ধতিতে ব্যবহার করলে কোন পদ্ধতিটা মেনে চললে বা কিভাবে ব্যবহার করলে এটা উপকার পাওয়া যাবে।

সে সম্পর্কে জেনে রাখা ভালো, আপনি যদি নিয়মিত ভাবে নিমের প্যাক বানিয়ে ব্যবহার করতে পারেন তাহলে চুল পড়া বন্ধ হয়ে যাবে। এক চামচ আমলকির রস, এক চামচ নিম পাতার রস এক চামচ লেবুর রস এবং প্রয়োজন অনুযায়ী টক দই নিয়ে সকল কিছু মিক্স করে সপ্তাহে দুইদিন যদি চুলে দিতে পারেন। আধা ঘন্টা পর শ্যাম্পু দিয়ে পরিষ্কার করে নিবেন, এভাবে ব্যবহার করলে অনেক উপকার পাবেন।

নিমপাতা ব্যবহারে চুল করে নরম ঝলমলেঃ নিম পাতার রস ও মধু মিশিয়ে সপ্তাহ তিন দিন চুলের গোড়ায় যদি লাগাতে পারেন, ২০ মিনিটে রাখার পরে শ্যাম্পু দিয়ে পরিষ্কার করবেন। এতে আপনার চুল তুলতুলে হবে ও নরম ও ঝলমল হবে। সপ্তাহে তিন দিন ব্যবহার করতে পারেন।

নিম পাতা খুশকি দূর করেঃ সপ্তাহে দুইদিন এক চামচ নিম পাতার রস আমলকির রস ও লেবুর রস, সাথে টক দই নিয়ে মিক্সড করে চুলে লাগান, আধা ঘন্টা পর শ্যাম্পু দিয়ে পরিষ্কার করেন। তাহলে দেখবেন এভাবে ব্যবহার করলে আপনার খুশকি দূর হয়ে যাবে। এছাড়া চুল পড়া বন্ধ হতে সাহায্য করবে।

ব্রণের জন্য নিম পাতার ব্যবহার

যারা ব্রণের সমস্যায় ভুগছেন তারা ব্রণের জন্য নিম পাতার ব্যবহার করতে পারেন। এতে দারুন উপকার পাওয়া যায় এবং ব্রণ দূর হয়ে যায়। নিম্নে এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো,
ছবি
নিম পাতার প্যাকঃ প্রথমে এক মুঠো পরিষ্কার নিম পাতা নিবেন, এরপরে ভালো করে বেটে নিবেন। এরপরে এই পেস্ট টার সাথে লেবুর রস মিশাবেন, অল্প গোলাপ জল দিতে পারেন। এই পেস্ট টা বেশি একটা পাতলা করবেন না। এরপর মিশ্রণটা মুখে ভালো করে লাগিয়ে দিতে পারেন।

মুখের পাশাপাশি ঘাড়ে বগলে কনুই এই সকল জায়গাগুলোতে লাগাতে পারেন। কিছুক্ষণ রাখার পর শুকিয়ে গেলে পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে পারেন। এভাবে যদি আপনি ব্যবহার করেন তাহলে অবশ্যই ব্রণ দূর হয়ে যাবে।
নিমপাতা ও অ্যালোভেরা জেলঃ ত্বকের যত্নের জন্য সবচাইতে উপকার করে থাকে। এলোভেরা জেল এর সাথে যদি নিমপাতা মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে আরো ভালো উপকার পাবেন, ত্বকের ব্রণ ও কোন দাগ থাকলে সেগুলো দূর করার জন্য এই নিম পাতা শুকিয়ে গুড়া করে নিতে পারেন।

এরপরে সেই গুড়া গুলোর সাথে অ্যালোভেরা জেল মিশিয়ে মুখে লাগাতে পারেন। এতে ১০ থেকে ১৫ মিনিট রেখে দিবেন এরপরে পরিষ্কার পানি ধুয়ে ফেলবেন। তারপর সামান্য লেবু দিয়ে মুখটা পরিষ্কার করে নিবেন, তারপরে ধুয়ে ফেলবেন দেখবেন এতে আপনার ত্বক উজ্জল হবে।

নিমপাতা চন্দন বা হলুদঃ ব্রণ দূর করার জন্য আপনি নিমপাতার সাথে চন্দন মিশিয়ে একটি প্যাক তৈরি করবেন। তবে যাদের ঠান্ডা লাগার সমস্যা রয়েছে তারা চন্দনের বদলে হলুদ দিতে পারেন। এইভাবে পেস্ট তৈরি করে আপনার ব্রণের সমস্যার জন্য সবচেয়ে ভালো কাজ করবে।

চন্দন আর এই দুইটি উপাদান মিক্স করে আপনার মুখে লাগিয়ে রাখবেন ১০ মিনিটের মত রেখে দেওয়ার পর শুকিয়ে গেলে মুখ পরিষ্কার করে নেবেন। এরপরে শুকনো তোয়ালে দিয়ে আলতোভাবে মুখটা মুছে নিবেন। তারপর গোলাপ জল লাগিয়ে দিতে পারেন, এতে দেখবেন আপনার ব্রণ চলে যাবে।

নিম পাতার ক্ষতিকর দিক

নিম পাতার যেমন বহু গুণ রয়েছে তেমনি নিম পাতার ক্ষতিকর দিক রয়েছে। তাই নিমপাতা কিভাবে আমাদের ক্ষতি করতে পারে সে সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

খালি পেটে কেউ যদি নিমপাতা দীর্ঘদিন যাবত খেয়ে থাকে, তাহলে এত ক্ষতি হতে পারে। এজন্য দীর্ঘদিন যাবত এই নিমপাতা খাওয়া যাবে না এতে শরীরের ক্ষতি হবে।

নিম পাতা খাওয়ার পর যদি কারো বমি বমি ভাব বা বমি হয়, ডায়রিয়া মাথাব্যথার মত সমস্যা দেখা দেয়। তাহলে সে ক্ষেত্রে এটা খাওয়া বন্ধ করতে হবে তা না হলে শরীরের ক্ষতি হবে।

নিমপাতা মাঝে মাঝে বন্ধ্যাত্বতার সমস্যা দেখা দিতে পারে, তাই যারা সন্তান নিতে চাচ্ছেন তারা নিম পাতা না খাওয়াই ভালো। এতে অনেকের সন্তান নাও হতে পারে।

যদি আপনি কোন ধরনের অপারেশন করতে চাচ্ছেন তাহলে দুই সপ্তাহ আগে থেকে নিমপাতার ব্যবহার করবেন না। তাছাড়া অপারেশন করার পরই নিমপাতা খাওয়া যাবে না বা ব্যবহার করা যাবে না।

গর্ভবতী মায়েরা নিম পাতা খেলে শরীরে ক্ষতি হতে পারে এবং গর্ভপাত হতে পারে। এই জন্য গর্ভাবস্থায় নিমপাতা না খাওয়াই ভালো।

যাদের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা আছে তারা নিমপাতা না খাওয়াই ভালো, সেক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপ বৃদ্ধি পেতে পারে।

তবে যদি কেউ একটানা নিম পাতা ব্যবহার করতে চান, সেক্ষেত্রে একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী আপনি নিম পাতা খেতে পারেন বা ব্যবহার করতে পারেন। এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া তেমন একটি নেই তারপরও সতর্কতা থাকতে হবে।

চুলকানিতে নিম পাতার ব্যবহার

এতক্ষণে আমরা জেনেছি নিম পাতা চুলে দেওয়ার নিয়ম সম্পর্কে, এখন জানবো চুলকানিতে নিম পাতার ব্যবহার সম্পর্কে, তাই নিম্নে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।

নিমপাতা চুলকানির ক্ষেত্রে ভালো কাজ করে থাকে, প্রাচীন কাল থেকেই লোকজন ব্যবহার করে আসছে এবং ঔষধি গুনাগুন থাকার কারণে নিমপাতা ব্যবহার করলে বিভিন্ন ধরনের রোগ ব্যাধি থেকে নিরাময় পাওয়া যায়। যাদের চোখে চুলকানি হয়।

তারা নিম পাতার পানি ১০ মিনিট সিদ্ধ করে সেই পানি ঠান্ডা করে যদি চোখ ঝাপটা রেখে চোখে লাগানো যায়। সে ক্ষেত্রে চোখের চুলকানি দূর হতে পারে।

আবার যাদের এলার্জির সমস্যা রয়েছে তারা নিম পাতা পানিতে ফুটিয়ে নিয়ে সেই পানি দিয়ে যদি গোসল করতে পারে, তাহলে এলার্জি দূর হয়ে যাবে। নিমপাতা বাটা পুরো শরীরের যদি লাগাতে পারে সে ক্ষেত্রে অ্যালার্জি দূর হবে। যাদের গায়ের চুলকানির ফলে রেশ হয় জ্বালাপোড়া করে তারা নিম পাতার পানি দিয়ে গোসল করতে পারেন, সে ক্ষেত্রে ভালো উপকার পাওয়া যাবে।
গরম পানির মধ্যে নিমপাতা ভালো করে সিদ্ধ করে নেবেন এরপর সেই পানিতে যদি গোসল করতে পারেন। তাহলে আপনার চুলকানি আর থাকবে না, যাদের খুশকি আছে তারাও এটা ব্যবহার করতে পারেন। আমরা চুলে নিম পাতার ব্যবহার সম্পর্কে আলোচনা করেছি, সেখান থেকে পুরোটুকু জেনে নেবেন।

মাথার ভিতরে যদি কোন কারো খুশি থাকে এবং ব্যাকটেরিয়া হয় সে ক্ষেত্রে ভালো কাজ করে থাকে। ওষুধ হিসাবে ব্যবহার করে থাকে এই ক্ষেত্রে চুলকানি ছাড়া নানা ধরনের রোগব্যাধি দূর করতে সাহায্য করে। তাই চুলকানি দূর করার জন্য এই নিমপাতা ব্যবহার করতে পারেন। এতে খুব দ্রুতগতিতে আপনার চুলকানি বা চর্মরোগ ভালো হয়ে যাবে এবং শরীর থেকে জীবাণু মারা যাবে।

খালি পেটে নিম পাতার রস খেলে কি হয়

অনেকেই জানতে চায় খালি পেটে নিম পাতার রস খেলে কি হয়, তাই চলুন জেনে নেওয়া যাক খালি পেটে নিম পাতা খেলে শরীরে কি হতে পারে। নিম্নে আলোচনা করা হলো,

নিম পাতা প্রকৃতপক্ষে একটি ঔষধি গাছ হিসেবে পরিচিত, তার ডাল পাতা ফুল ফল বীজ সবকিছুর উপকার রয়েছে। তাই নিম গাছের হাওয়াও আমাদের শরীরের জন্য উপকার করে থাকে। এক্ষেত্রে এর গুণাবলী শেষ করা যাবে না। নিম গাছের পাতার বিশেষত্ব হল একটি আন্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য নিয়ে গঠিত।

এই পাতার মাঝে রয়েছে এন্টিফাঙ্গাল এবং অ্যান্টিভাইরাল বৈশিষ্ট্য যা আমাদের শরীরকে অনেকটাই শক্তিশালী করতে পারে ভাইরাসের বিরুদ্ধে কাজ করতে পারে, নিম পাতা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, এছাড়া বিভিন্ন রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে নিমপাতা ব্যবহার করা হয়।

গবেষণায় দেখা গেছে নিম পাতার নির্যাসে এস মিটানস, ই ফ্যাকালিস এবং এস অরিয়াস এর মত অনেক ধরনের উপাদান থাকে। যা ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করতে পারে এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দিতে পারে।

অনেকেই রক্ত সমস্যায় ভুগতেছেন তারাও এই নিম পাতার ব্যবহার করতে পারেন। নিম পাতার নির্যাস শরীরের রক্তকে পরিষ্কার করতে পারে এবং শরীরে বিভিন্ন ধরনের ভিতর থেকে পরিষ্কার করতে পারে। তাই নিয়মিত যদি নিমপাতা খেতে পারেন, সে ক্ষেত্রে রক্ত চলাচল এরপর পরিষ্কার ও প্রশস্ত হবে এবং উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা দূর হবে।

দৈনিক খালি পেটে এক কাপ পানিতে যদি নিমপাতার রস এবং মধু মিশিয়ে খেতে পারেন। নিম পাতা গ্রহণ করার ফলে শরীরে হরমোনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করবে।

নিমের পাতার মধ্যে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে এবং দ্রুত গতিতে খাদ্য হজম করতে সাহায্য করে। নিম পাতার রস ব্যবহার করার কারণে হজম জনিত সমস্যায় যারা ভুগছেন, তারা এই নিম পাতার রস খেতে পারেন। কারণ এর মধ্যে যে ইনফ্লেমেটরি উপাদান আছে তা গ্যাস্ট্রিকের এবং হজমজনিত সমস্যার সমাধান করে থাকে।

তাছাড়া রক্তের কোলেস্টেরলের হ্রাস করতে পারে এবং কোলেস্টেরলের সমস্যায় যারা ভূগছেন তারা রোজ নিয়মিত নিম পাতার রস খেতে পারেন। এতে পানিতে ফুটিয়ে নিয়ে নিম পাতার রস মিক্স করে খেলে কোলেস্টেরলের মাত্রা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

প্রতিদিন এক চামচ পরিমাণ নিম পাতার রস সকালে খালি পেটে আর তিন মাস যদি কেউ খেতে পারেন। তাহলে তার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ থাকবে, তাছাড়া ৩০ থেকে ৭০% ইনসুলিন নেওয়ার প্রবণতা কমতে থাকে। ৩০ ফোটা নিম পাতার রস যদি একটু মধুর সাথে মিক্সড করে সকাল বেলা খালি পেটে খেতে পারেন তাহলে জন্ডিসের মতো রোগ থেকে মুক্তি পাবেন।

নিম পাতার রসের গুনাগুন অনেক রয়েছে তাই নিয়মিত ভাবে পরিকল্পিতভাবে যদি আপনি খেতে পারেন। তাহলে আপনার শরীরে অনেক উপকার করে থাকবে, তবে এটা খাওয়ার পর অবশ্যই একজন চিকিৎসার পরামর্শ ক্রমে খাবেন। অতিরিক্ত ব্যবহার করা যাবে না ক্ষতি হতে পারে।

নিম পাতা দিয়ে ফর্সা হওয়ার উপায়

আমরা পূর্বে নিম পাতা চুলে দেওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জেনেছি। চলুন, এখন জেনে নেওয়া যাক নিম পাতা দিয়ে কিভাবে ফর্সা হওয়া যায়। তাই এ সম্পর্কে বিস্তারিত নিম্নে আলোচনা করা হলো,
ছবি
নিম পাতায় আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান এন্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান থাকার কারণে চুলের জন্য ভালো কাজ করে থাকে। চুলের যত্নে নিম পাতা ব্যবহার করার জন্য বিভিন্ন ধরনের নিয়ম রয়েছে। সেই সম্পর্কে জেনে নিয়ে ব্যবহার করতে পারেন।

ত্বকের যত্নে নিম পাতা খুবই উপকার করে থাকে। এটি ত্বকের ব্ল্যাকহেডস ও রোদে পড়ার দাগ দূর করতে সাহায্য করে। তাছাড়া ত্বক উজ্জ্বল সুন্দর করতে নিয়মিত এটা ব্যবহার করলে অনেক উপকার পাবেন। তবে এক্ষেত্রে নিম পাতার ফেসপ্যাক ব্যবহার করবেন।

এক মুঠো নিম পাতা পানিতে ভিজিয়ে রাখবেন, এক ঘন্টা পর এই পাতা বেটে নিবেন তারপর এক ঘন্টা ত্বকে লাগিয়ে রাখবেন, তারপর পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে ফেলবেন।
তিনটি তুলসী পাতা, দুটি নিমপাতা, দুটি পুতিনা পাতা ও একটি লেবুর রস মিস করে বেলেন্ডার করতে পারেন। এরপরে পাতলা মিশ্রণ তৈরি হলে হলুদের পরিমাণ বা হলুদের গুঁড়া একটু দিতে পারেন। মিশ্রণটি যখন মুখে লাগাবেন তারপরে ১৫ মিনিট লাগিয়ে রাখার পর পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলবেন।

নিম পাতা শুকানোর পর গুড়া করে নিতে পারেন, এরপর পরিমাণ মতো গোলাপজল মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করতে পারেন। সেই ফেসপ্যাক টি ১৫ মিনিট ত্বকে লাগানোর পর পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে ফেলবেন।

এক চামচ নিম পাতার গুড়া এক চামচ বেসন ও পরিমান মত টক দই নিয়ে একটি প্যাক তৈরি করুন। সেটা মুখে লাগানোর পর ১৫ মিনিট পর পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে ফেলবেন।

এক চামচ মধু মিশিয়ে নিমপাতা এক মুঠো নিম পাতা বেটে নিবেন, এরপরের সাথে এক চামচ মধু মিক্স করবেন। তারপরে ত্বকে লাগানোর পর পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলবেন।

নিম পাতার গুড়া ও অ্যালোভেরা জেল মিক্সড করে আপনি ফেসপ্যাক তৈরি করতে পারেন এবং সেটা মুখে লাগানোর ২০ মিনিট পর পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলবেন, তাহলে অনেক উপকার পাবেন।

লেখকের শেষ মন্তব্য,

পরিশেষে বলা যায় যে নিমপাতা আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের উপকার করে থাকে। বিশেষ করে বিভিন্ন ধরনের চর্ম রোগের ক্ষেত্রে ভালো কাজ করে থাকে। তাছাড়া ত্বকের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা এবং চুলেও ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে নিম পাতা চুলে দেওয়ার নিয়ম অনুযায়ী ও পরিমান মত ব্যবহার করতে হবে। তাহলে উপকার পাবেন, এই পোস্টটি যদি ভালো লাগে তাহলে আপনার বন্ধু-বান্ধবের নিকট শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এম আর মাহমুদ ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪