আঙ্গুর খেলে কি উপকার হয় তা বিস্তারিত জেনে নিন
অনেকে জানতে চায় যে, আঙ্গুর খেলে কি উপকার হয়? তবে আঙ্গুর খেলে অনেক ধরনের উপকার হয়। কিন্তু অতিরিক্ত খাওয়া যাবে না এতে ক্ষতি হবে। চলুন, আঙ্গুর খেলে যে উপকার পাবেন, সে সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
আঙ্গুরের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টির উপাদান থাকে, যা আমাদের শরীরের জন্য উপকার করে থাকে। তবে অতিরিক্ত খাওয়া যাবে না। তাই আঙ্গুর খেলে কি উপকার হয়? এ সম্পর্কে জানতে পোস্টটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
পোস্টসূচিপত্রঃআঙ্গুর খেলে কি উপকার হয় তা বিস্তারিত জেনে নিন
আঙ্গুর ফল
আঙ্গুর ফল ছোট থেকে থেকে শুরু করে সবার পছন্দের একটি ফল। এই ফলের গাছ সাধারণত লতা জাতীয় হয়ে থাকে। এই গাছের ৬ থেকে ৩০০ টির মত আঙ্গুর একসাথে একটি থোকায় ধরে থাকে। দেখতে খুবই সুন্দর লাগে এবং সুস্বাদু একটি ফল। যা আপনি খেতে পারেন হাজার বছর ধরেই মানুষ এই আঙ্গুর ফল খেতে পছন্দ করে এবং চাষ করে।
ধারণা করা হয় যে প্রাচীন সভ্যতাও যুগে মদ তৈরি করার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হতো। এজন্য আঙ্গুর চাষ করেছে, পরে সবাই সুস্বাদু মিষ্টি ফল হওয়ার কারণে অনেকে এমনি খাওয়া শুরু করে। তারপর সবুজ, লাল, কালো, হলুদ গোলাপি বিভিন্ন ধরনের আঙ্গুর চাষ করা শুরু করে।
বর্তমানে আঙ্গুর দিয়ে কিসমিস, জেলি থেকে জুস বিভিন্ন ধরনের খাদ্য তৈরি করে থাকে। বিভিন্ন আঙ্গুর ফল শুকিয়ে কিসমিস বানানো হয়।
এই অল্প জায়গার মধ্যেই আঙ্গুর চাষ করা যায় বসতবাড়ির আঙ্গিনায় যে কোন স্থানে ও যেখানে সকাল বিকাল রোদ লাগে সেখানে বা পানি দাঁড়ায় না জমে থাকে না সেই সকল জায়গায় আঙ্গুর চাষের জন্য উপযুক্ত।
এছাড়া বাড়ির আশেপাশে আঙ্গিনায় যদি না থাকে সে ক্ষেত্রে শহর অঞ্চল হয়ে থাকে, তাহলে বাড়ির ছাদে টবে আঙ্গুর চাষ করা যেতে পারে। আঙ্গুরের পুষ্টিগুন সম্পর্কে বলতে গেলে এর মধ্যে বছরপুষ্টিগুণ আছে। বিশেষ করে রোগীদের ক্ষেত্রে এই আঙ্গুর ফলটা বেশি ব্যবহার করা হয়।
আমাদের দেশের রোগীদের জন্য পথ্য হিসাবে এই আঙ্গুল নিয়ে যাওয়া হয় বা প্রচলন আছে আঙ্গুরের মধ্যে প্রোটিন, শর্করা, চর্বি, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, লৌহ খনিজ পটাশিয়াম, থায়ামিন রিভোফ্লাভিন, ভিটামিন-এ, বি, সি এছাড়া আরও বিভিন্ন ধরনের পুষ্টিগুণ আছে। প্রতি ১০০ গ্রাম আঙ্গুরের মধ্যে প্রায় ৪৫০ ক্যালোরি শক্তি শক্তি আছে।
আঙ্গুর খেলে কি উপকার হয়
আঙ্গুর হলো সুস্বাদু ও মিষ্টি জাতীয় ফল, এটা অনেকেই পছন্দ করে। তাই আঙ্গুর খেলে কি উপকার হয়? এ সম্পর্কে নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
আঙ্গুর প্রায় সারা বছরই বাজারে দেখা যায়,যদিও আমাদের দেশে পাওয়া যায় না বেশি একটা। তবুও আমাদের ফলের তালিকায় আমরা এই আঙ্গুর ফলটি রাখি। আঙ্গুরের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান থাকে। যা আমাদের শরীরকে ভালো রাখে, নিয়মিতভাবে আঙ্গুর খেলে আমাদের শরীর অনেক উপকার হবে। এটা সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুরঃ আঙ্গুরের মধ্যে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। যা শরীরের জন্য ভালো কাজ করে এটি খাওয়ার কারণে হার্ট ভালো থাকে। তাছাড়া ক্যান্সারের হওয়ার আশঙ্কা কম থাকে, এছাড়াও রক্ত সঞ্চালনের ক্ষেত্রে ভালো কাজ করে থাকে এবং রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণ করে, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকার কারণে আঙ্গুরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ফল।
ত্বকের সমস্যা সমাধান করেঃ গবেষণায় দেখা গেছে আঙ্গুর ফল ত্বকের জন্য ভালো কাজ করে থাকে। বিশেষ করে তারণ্য ধরে রাখে। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে যে আঙ্গুরের মধ্যে রেসভ্যারেট্রল থাকে।
যা আমাদের অ্যাকনের ওষুধ বেঞ্জল পার অক্সাইডের সাথে মিক্সড করে ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করে থাকে। বিশেষ করে ব্রণ হওয়ার ক্ষেত্রে এই ব্যাকটেরিয়া দায়ী, তাই ব্রণ দূর করার জন্য আঙ্গুর খেতে পারেন।
প্রচুর পটাশিয়ামঃ ১০০ গ্রাম আঙ্গুরে ১৯১ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম থাকে। যার কারণে হার্টের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে এবং কোলেস্টেরল দূর হবে। তার জন্য প্রচুর পরিমাণ পটাশিয়াম গ্রহণ করতে হবে। এজন্য আঙ্গুর খেতে পারেন, এছাড়া পেটের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।
চোখ ভালো রাখেঃ যাদের চোখের সমস্যা রয়েছে তারা নিয়মিতভাবে আঙ্গুর খেতে পারেন। ভিটামিন-এ, আছে যা চোখকে ভালো রাখতে সাহায্য করে। এছাড়া এক গবেষণায় দেখা গেছে এর মধ্যে রেটিনায় প্রটেকটিভ প্রোটিনের মাত্রা বৃদ্ধি করতে পারে, এজন্য নিয়মিতভাবে আঙ্গুর খেতে পারেন।
মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ এক গবেষণায় দেখা গেছে যে রেসভারেট্রল মস্তিষ্কের রক্তের প্রবাহ বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এজন্য স্মৃতিশক্তি জনিত যদি কারো সমস্যা থাকে তাহলে তারা নিয়মিতভাবে আঙ্গুর খেতে পারেন। এতে ভালো কাজ করে থাকে।
কালো আঙ্গুর খাওয়ার উপকারিতা
আঙ্গুর ফলটি সবার কাছে প্রিয় তবে অনেকে কালো আঙ্গুর খেতে পছন্দ করে। তাই কালো আঙ্গুর খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
আঙ্গুর ফল সব শ্রেণীর মানুষ প্রায় সবাইকে খেয়ে থাকে তবে একটু অভিজাত শ্রেণীর মানুষ বেশি খেয়ে থাকে। আঙ্গুর ফল বিভিন্ন ধরনের রঙের হয়ে থাকে লাল, কালো, রঙ্গিন সবুজ বিভিন্ন ধরনের উপকার করে থাকে। তবে কালো আঙ্গুর স্বাস্থ্যের জন্য ভালো উপকার করে।
কালো আঙ্গুরের মধ্যে মিষ্টি গুণ বেশি আছে। যা ত্বকের ক্ষেত্রে চুল, স্বাস্থ্য চোখ সবকিছুর ক্ষেত্রে ভালো উপকার করে থাকে। কারণ এর মধ্যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকার কারণে এটি বেশি কাজ করে থাকে। এজন্য কালো আঙ্গুর কে বলা হয় ফলের রানী হিসেবে ধরে নেওয়া হয়।
ক্যান্সারের মতো রোগের ক্ষেত্রে ভালো কাজ করে, ব্রেস্ট ক্যান্সার, প্রস্টেট ক্যান্সার ইত্যাদি বিরুদ্ধে কাজ করে। হার্ট ভালো রাখতে আঙ্গুর যদি নিয়মিত খেতে পারেন, এতে হৃদপিণ্ড রক্ত চলাচল দ্রুত করতে পারে। কারণ এর মধ্যে এছাড়াও কেমিক্যাল হার্টের কেমিক্যাল হাই হার্টের পিসিকে ভালো রাখতে পারে পাশাপাশি কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
এজন্য বিশেষজ্ঞরা আঙ্গুর খাওয়ার জন্য উপদেশ দিয়ে থাকেন। তাছাড়া যদি সত্যিই ভালো রাখে স্মৃতিশক্তি ভালো রাখে, এই কালো আঙ্গুর মস্তিষ্কের ক্রিয়া কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে। তাছাড়া ব্লাড সুগারকে নিয়ন্ত্রণ করে, শরীরে ইনসুলিন এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। যার কারণে ডায়াবেটিস কন্ট্রোলে থাকে এজন্য আপনি নিয়মিত কালো আঙ্গুর খেতে পারেন।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে কালো আঙ্গুর ভাল কাজ করে থাকে। কারণ এর মধ্যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারে। তাছাড়া এর মধ্যে রিবোফ্লাভিন, খনিজ পদার্থ অর্গানিক এসিড যা কোষ্ঠকাঠিন্য এবং হজমের সমস্যার ক্ষেত্রে ভালো কাজ করে।
এর মধ্যে ভিটামিন সি থাকার কারণে এবং এন্টি এক্সিডেন্ট থাকার কারণে ত্বকের ক্ষেত্রে ভালো কাজ করে। বিশেষ করে রক্ত সঞ্চল করে, ত্বকের বলি রেখা, কালো ছোপ, শুষ্ক ত্বকের জন্য ভালো কাজ করে থাকে। এর জন্য আপনি ত্বকে ১৫ মিনিটের মধ্যে মেখে নিবেন, এর পরে ধুয়ে ফেলবেন। দেখবেন অনেক ভালো কাজ করেছে।
কালো আঙ্গুর এর বীজ পেস্ট করে নিবেন তারপর অলিভ অয়েল তেল মিশিয়ে মেসেজ করতে পারেন। এরপরে তেল দেওয়ার কারণে আপনার চুল খুবই সুন্দর উজ্জ্বল দেখাবে। কারণ এর মধ্যে কালো আঙ্গুরের মধ্যে থাকে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন আর ভিটামিন ই থাকে যা চুল পড়া রোধ করতে সাহায্য করে এবং চুল সাদা হওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিরোধ করতে পারে।
কালো আঙ্গুর ওজন কমাতে সাহায্য করে কারণ এর মধ্যে আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। যা শরীরের অপ্রয়োজনীয় টক্সিন সরিয়ে ফেলতে পারে এতে আপনার ওজন কমতে থাকবে।
এটা শরীরের ইনসুলিন বৃদ্ধি করতে পারে এতে রেসভিট্রল নামের এক ধরনের পদার্থ থাকার কারণে ইনসুলিন বৃদ্ধি পায়। তবে গবেষকরা বলেছেন এটা খেলে অনেক উপকার পাবেন কিন্তু অতিরিক্ত খাওয়া যাবে না। এতে ক্ষতি হতে পারে, এজন্য কালো আঙ্গুর খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে।
কারণ অতিরিক্ত খাওয়ার কারণে দাঁত বা মাড়ি থেকে রক্ত পড়ার মতো সমস্যা হয়। যদি আপনার আগে থেকেই গ্যাস থাকে তাহলে আঙ্গুর খাবেন না, এটা ক্ষতি হবে। তাছাড়া আপনার রক্ত যদি পাতলা হয় এজন্য যদি ওষুধ খেয়ে থাকেন। সে ক্ষেত্রেও কালো আঙ্গুর খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন।
লাল আঙ্গুর খাওয়ার উপকারিতা
এতক্ষণে আমরা জেনেছি আঙ্গুর খেলে কি উপকার হয়? এখন জানবো লাল আঙ্গুর খেলে কি উপকার পাওয়া যাবে। সে সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
আঙ্গুরের মধ্যে ভিটামিন সি থাকে এছাড়া এন্টি অক্সিডেন্ট, ভিটামিন কে, ভিটামিন-এ, ক্যালসিয়াম, আয়রন এবং পটাশিয়ামের মত গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি থাকে এবং লাল আঙ্গুরের মধ্যে আরও বিভিন্ন ধরনের উপকারী পাওয়া যায়।
হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়ঃ লাল আঙ্গুরের মধ্যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কার্ডিও ভাসকুলার সিস্টেমকে সাহায্য করতে পারে। এছাড়া অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পলিফিনাল নামে বলা হয়ে থাকে,যা রক্তনালী কে শিথিল করতে পারে এবং প্রদাহ দূর করতে পারে, প্লেটলেটের জমাট বাধার ক্ষেত্রে ভালো উপকার করে থাকে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করেঃ কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্স যে ফলগুলোর মধ্যে রয়েছে তা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ভালো কাজ করে থাকে। এর মধ্যে এই লাল আঙ্গুরের মধ্যে এই ধরনের উপাদান আছে। যার কারণে এই ফলটি রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখে।
ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে পারেঃ আঙ্গুরের মধ্যে পানি ও ফাইবার থাকে এর জন্য দীর্ঘক্ষণ পেটের মধ্যে থাকার কারণে ক্ষুধা কম লাগে। তাছাড়া এর মধ্যে চিনি জাতীয় উপাদান থাকে না এজন্য ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। তবে আঙ্গুরের রস খাবেন না, পুরো আঙ্গুর ফল খাবেন এতে অনেক উপকার পাবেন।
তারন্য ধরে রাখেঃ লাল আঙ্গুরের বাইরের আবরণ ও বীজ এর মধ্যে ভারিসট্রল নামের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকার কারণে আমাদের শরীরের ত্বক ও শরীরের বয়সের ছাপকে বাধা দিতে পারে এবং তারন্য ধরে রাখে।
মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ভালো রাখেঃ লাল আঙ্গুরের মধ্যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকার কারণে মস্তিষ্কে সমস্যা দূর করে, অ্যালজাইমার এর মত রোগের থেকেও রক্ষা করতে পারে।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করেঃ রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে লাল আঙ্গুর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কারণ এর মধ্যে রিসভারেট্রল পলিফেনাল ও ফ্লাভোনয়েড নামের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যার কারণে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারে।
শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্য আপনি আঙ্গুর খেতে পারেন। কেননা আঙ্গুরের মধ্যে আন্টি এক্সিডেন্ট ও ভিটামিন সি থাকে যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পারে।
হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো থাকেঃ যাদের হাড়ের স্বাস্থ্য সমস্যা রয়েছে তারা নিয়মিতভাবে আঙ্গুর খেতে পারেন। কারণ এর মধ্যে ভিটামিন কে, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং পটাশিয়াম এর মত খনিজ পদার্থ থাকে। যা শক্তিশালী হাড় কে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।
অনিদ্রার সমস্যা দূর করেঃ আঙ্গুরের মধ্যে মেলাটোনিন থাকে আর মেলাটোনিন এমন একটি হরমোন যা আমাদের ঘুম হওয়ার ক্ষেত্রে কাজ করে থাকে। তাই নিয়মিতভাবে আঙ্গুর খেতে পারেন এটা আপনার সুন্দর ঘুম হবে, স্বাস্থ্য ভালো থাকবে।
সবুজ আঙ্গুর খাওয়ার উপকারিতা
আঙ্গুর বিভিন্ন রঙের হয়ে থাকে তার মধ্যে সবুজ আঙ্গুর খাওয়ার উপকারিতা রয়েছে। নিম্নে সবুজ আঙ্গুরের গুণাগুণ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
আঙ্গুরের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে বিভিন্ন রঙের হয়ে থাকে। কেউ কালো আঙ্গুর খেতে পছন্দ করে কেউ বা লাল আবার কেউ সবুজ আঙ্গুর খেতে পছন্দ করে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে সবুজ আঙ্গুর টা বেশি দেখা যায় এবং এর দামও একটু কম হয়।
এজন্য শিশুরা সাধারণত বেশি খেয়ে থাকেন তবে কোন আঙ্গুরের মধ্যে কি পরিমান উপকার আছে সে সম্পর্কে মতান্য রয়েছে। তবে এই ফলটির শরীরে পানি ঘাটতি পূরণ করতে ভালো কাজ করে থাকে।
সবুজ আঙ্গুর হৃদরোগের ক্ষেত্রে ভালো কাজ করে, কারণ এর মধ্যে পাওয়া যায় এক ধরনের ফাইটোকেমিক্যাল যা আমাদের মস্তিষ্কের সমস্যাকে দূর করতে পারে।
আপনি যদি রক্তস্বল্পতায় ভোগে থাকেন সেই ক্ষেত্রে খেতে পারেন। কারণ এর মধ্যে হিমোগ্লোবিন এর মাত্রা বৃদ্ধি করতে পারেন। কারণ এর মধ্যে আয়রন, ফলিক, এসিড থাকে যা শরীরের রক্ত বৃদ্ধি করতে ভালো কাজ করে থাকে।
সবুজ আঙ্গুরের মধ্যে এসিডিটি থাকে যা আপনার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করবে এবং এই ধরনের সমস্যা দূর করতে ভালো কাজ করে থাকে।
সবুজ আঙ্গুরের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে, যা আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে ভালো কাজ করবে এবং মলত্যাগ এর ক্ষেত্রে ভালো কাজ করে।
এক গবেষণায় দেখা গেছে যাদের চোখের সমস্যা হয়েছে, তাদেরকে আঙ্গুর খাওয়ানো হয়েছিল। পরবর্তীতে পরীক্ষা করে দেখা হয় তাদের চোখের সমস্যা অনেকটাই দূর হয়ে গেছে। বিশেষ করে চোখের রেটিনায় প্রোটেকটিভ প্রোটিনের মাত্রা বৃদ্ধি করতে পারে। যার কারণে নিয়মিতভাবে আঙ্গুর খেলে চোখ ভালো থাকবে।
তবে বিশেষজ্ঞদের মতে কালো এবং সবুজ আঙ্গুরের মধ্যে কিছুটা পার্থক্য আছে কালো আঙ্গুরের মধ্যে অ্যান্থোসায়ানিন বেশি রয়েছে এবং কালো আঙ্গুরের রঙ্গিন কেমিক্যাল বেশি থাকার কারণে এই উপাদানটি বেশি থাকে। তবে লাল বা কালো আঙ্গুর যেটাই বলেন না কেন উভয়ের মধ্যেই কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, এরকম উপাদান তার মধ্যে আছে।
বেশি আঙ্গুর খেলে কি হয়
ইতোমধ্যে আমরা জেনেছি আঙ্গুর খেলে কি উপকার হয়? এখন আমরা জানবো অতিরিক্ত আঙ্গুর খাওয়ার কারণে কি সমস্যা হতে পারে। চলুন, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
পেটের সমস্যা দেখা দিতে পারেঃ অনেকের পূর্বে থেকেই গ্যাস্টিকের সমস্যা থাকতে পারে। আর এটা সাধারণত এসিডিটি বৃদ্ধি পেলেই গ্যাস্ট্রিকের প্রবলেম দেখা যায়। আর এই আঙ্গুরের মধ্যেও এক ধরনের এসিড রয়েছে যা আপনার আরো পেটের ভিতরে যাওয়ার পর এসিডিটি বৃদ্ধি পাবে। এর কারণে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
এছাড়াও পেটের ব্যথা করতে পারে, পেট ফুলে যেতে পারে অনেকের আবার ডায়রিয়া ও হতে পারে। তাই অতিরিক্ত খাওয়া যাবে না। এছাড়া আর একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে যদি আপনার হজমের সমস্যা থাকে। যেমন আইবিএস এর সমস্যা থাকে এই ধরনের রোগীরা যদি আঙ্গুর খায় তাহলে সে ক্ষেত্রে পেটের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই অতিরিক্ত খাওয়া যাবে না।
ডায়রিয়া হতে পারেঃ এক গবেষণায় দেখা গেছে যে চিনির অ্যালকোহল চিনিতে পাওয়া যৌগ গুলো ডায়রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। তবে আঙ্গুরের মধ্যে চিনির অ্যালকোহল আছে তা এখন পর্যন্ত প্রমাণিত হয়নি। এই ক্ষেত্রে আঙ্গুরের রস খেলে সমস্যা বেশি দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে ডায়রিয়ার সমস্যা হতে পারে, কারণ এর মধ্যে সাধারণত শর্করা থাকে।
ওজন বৃদ্ধি পায়ঃ এই আঙ্গুর ফলটি দেখতে ছোট হলেও এটা যদি অতিরিক্ত খেয়ে ফেলেন সেই ক্ষেত্রে আপনার ওজন বৃদ্ধি পেতে পারে। কারণ একটি আঙ্গুরের মধ্যে ১০৪ কিলোক্যালরি থাকে এতে আপনার যদি অতিরিক্ত খান। তাহলে প্রচুর ক্যালরি হওয়ার কারণে ওজন বৃদ্ধি পাবে।
তাছাড়াও এই আঙ্গুর ফলকে কিসমিস বানানোর কারণে এটি একটি মুখোরোচক খাবার হয়ে যায়। যার কারণে অনেকেই অতিরিক্ত খেয়ে ফেলে এতে ওজন বৃদ্ধি পায়। তাই দিনে ৮ থেকে ১০ টি আঙ্গুরের বেশি খাওয়া যাবে না।
বাচ্চাদের শ্বাসরোধের ক্ষেত্রে সমস্যাঃ আঙ্গুরের মধ্যে যে উপাদানটি থাকে তা হতে পারে শ্বাসরুদ্ধ সমস্যা দেখা দিতে পারে। বিষয়টি যদিও অনেকেরই অজানা তারপরেও এই সমস্যাটি দেখা দিতে পারে। কারণ ৬ মাস থেকে ১২ মাস বয়সী শিশুরা সাধারণত চিবিয়ে খেতে পারে না।
এ সময় যদি একটি সম্পন্ন আঙ্গুর মুখের ভিতরে দিয়ে দেন। সেই ক্ষেত্রে শিশুর শ্বাসনালীতে আটকে গিয়ে দম বন্ধ হয়ে যেতে পারে। যদি এরকম সমস্যা দেখা দেয় তাহলে সেই ক্ষেত্রে দ্রুত শিশুটির মুখে হাত দিয়ে তা বের করে দিতে হবে। না হলে বড় ধরনের বিপদ হতে পারে।
এলার্জির সমস্যা হতে পারেঃ আপনার এলার্জি সমস্যা দেখা দিতে পারে কারণে এই আঙ্গুরের মধ্যে সেই ধরনের একটি নির্দিষ্ট প্রোটিন পাওয়া যায়। এ আঙ্গুরের মধ্যে লিপিড ট্রান্সফার প্রোটিন থাকে। যা আপনার ত্বকের এলার্জির পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসেবে তৈরি করতে পারে।
এর মধ্যে ফ্লাগজিস্টফ্লাক্সিস নামের বা কারণ হতে পারে যে জন্য জীবন হুমকি সরব দেখা দিতে পারে। যদি আপনার ইতিমধ্যে এলার্জির সমস্যা আগে থেকেই থাকে, সে ক্ষেত্রে আঙ্গুর খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা থাকতে হবে।
কিডনির সমস্যাঃ এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, একটি কুকুর আঙ্গুর খাওয়ার পর তীব্র কিডনির সমস্যা শুরু হয়। এরপরে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ডায়াবেটিস এন্ড ডাইজেস্টিভ এন্ড কিডনি ডিজিজ এর একটি প্রতিবেদনের পরামর্শক্রমে দেওয়া হলো যে, দীর্ঘদিনের কিডনি ও ডায়াবেটিস যারা আক্রান্ত আছেন। তারা অতিরিক্ত আঙ্গুর খাবেন না, এক্ষেত্রে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে খেতে হবে।
যদিও গবেষণায় মানুষের কিডনির প্রতিকূল প্রভাবের সাথে সরাসরি খুঁজে পাওয়া যায় না। তার পরেও আপনাকে সতর্ক অবলম্বন করাই ভালো, আপনার যদি কোন ধরনের কিডনি বিকল থাকে, ডায়ালোসিস দিতে হয়। সেই ক্ষেত্রে অবশ্যই আঙ্গুর বা বিভিন্ন ধরনের ফল খাওয়া নিষিদ্ধ হতে পারে। এজন্য আপনার চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে তারপরে এই ফলটি খেতে পারেন।
গর্ভাবস্থায় আঙ্গুর খেলে কি হয়
গর্ভবতী মায়েরা গর্ভাবস্থায় ফল খেতে পছন্দ করে, তাই গর্ভাবস্থায় আঙ্গুর খেলে কি হয়? এ সম্পর্কে তারা জানার জন্য আগ্রহী বেশি। চলুন, গর্ভাবস্থায় ফল খাওয়ার কারণে কি হতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা যাক।
একজন গর্ভবতী নারী তার সন্তান প্রসব করার আগ পর্যন্ত প্রতিটা মুহূর্ত তার সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এজন্য শারীরিকভাবে ও মানসিকভাবে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা আছে।
মায়েদের ক্ষেত্রে এই সময় একটু এদিক সেদিক হলেই বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে শিশুদের ওপরে প্রভাবটা পড়ে থাকে সচেতন থাকতে হবে এবং নিজেকে যত্ন নিতে হবে।
প্রত্যেক গর্ভবতী নারীকেই চিকিৎসকের পরামর্শ পুষ্টিকর খাবার খাওয়া দরকার। এজন্য অবশ্যই আপনার চিকিৎসক যে পরামর্শ দিবে সে অনুযায়ী জীবন যাপন করবেন। কারণ গর্ভস্থ শিশু ও মায়ের সুস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া খুবই প্রয়োজন। এজন্য গর্ভাবস্থায় যে সকল খাবার খাওয়া প্রয়োজন এবং কোনগুলো খাওয়া যাবে না সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে এবং সতর্ক থাকতে হবে।
গর্ভাবস্থায় অনেকে আঙ্গুর খেতে পছন্দ করে, এতে অনেক ধরনের পুষ্টি থাকে। তবে অতিরিক্ত খাওয়া যাবে না এতে শিশু জন্য ক্ষতি হতে পারে।
তবে এই ক্ষেত্রে অনেকেই জিজ্ঞেস করে থাকে কোন রঙের আঙ্গুর খাওয়া ভালো। চলুন, সে সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। আঙ্গুরের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের রং হতে পারে, তবে সকলকে আঙ্গুরের মধ্যে প্রায় একই পুষ্টি উপাদান থাকে।
তাই এটা নিয়ে চিন্তা করার কারণ নেই। আঙ্গুরের এর মধ্যে ভিটামিন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অর্গানিক এসিড, ফাইবার, ফলিক এসিড, পেকটিন বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি পাওয়া যেতে পারে। তাছাড়া আঙ্গুরের মধ্যে ম্যাগনেসিয়াম যা গর্ভবতীদের খুবই দরকার বিশেষ করে গর্ভস্থ শিশুর উপকার হবে।
গর্ভাবস্থায় সবুজ আঙ্গুর খাওয়া ঠিক হবে না। কারণ এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণ এসিড থাকে, যা গর্ব অবস্থায় একজন নারীর এসিডিটি এমনি বেশি থাকে। তারপরে আঙ্গুর যদি খাওয়া হয় তাহলে আরও এসিডিটির পরিমাণ বেশি থাকার কারণে সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই এই সবুজ আঙ্গুর খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন।
এখন আসি কালো আঙ্গুরের ক্ষেত্রে এর বাইরের চামড়া একটু শক্ত দেখা যায়। এজন্য গর্ভবতী নারীদের এটা হজম করতে সমস্যা হতে পারে। কারণ গর্ভাবস্থায় নারীদের হজম প্রক্রিয়া দুর্বল হয়, এজন্য কালো আঙ্গুর খেলে হজমের ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে। তাই আপনি খোসা ছাড়িয়ে খেতে পারেন।
গর্ভাবস্থায় লাল আঙ্গুর খাওয়া সবচাইতে উপকার পাওয়া যায়। এতে তেমন একটি ক্ষতি নেই, কারণ এর মধ্যে ভিটামিন কে, ক্যালসিয়াম, আয়রন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পুষ্টি উপাদান থাকে। যা খেলে রক্ত সমস্যা দূর হবে, রক্তের হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধি পাবে এবং পাশাপাশি পেশী ও হাড় মজবুত করতে সাহায্য করে। তবে অতিরিক্ত খাওয়া যাবে না, খেলে আরো ক্ষতি হতে পারে।
লেখকের শেষ কথা
পরিশেষে বলা যায় যে, আঙ্গুর একটি পুষ্টিকর এবং সুস্বাদু ও মিষ্টি ফল। যা আমাদের শরীরের জন্য উপকার করে থাকে। তবে গর্ভবতীদের ক্ষেত্রে এবং বড় ধরনের রোগের ক্ষেত্রে একটু সতর্কতা থাকতে হবে। আশা করি আঙ্গুর খেলে কি উপকার হয়? এ সম্পর্কে এই পোষ্টের মাধ্যমে বুঝতে পেরেছেন। যদি পোস্টটি ভালো লাগে, তাহলে আপনার বন্ধু-বান্ধবের নিকট শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ
এম আর মাহমুদ ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url