হাঁসের ডিম খেলে কি ক্ষতি হয় ও উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন
অনেকে জানতে চায় যে, হাঁসের ডিম খেলে কি ক্ষতি হয়? তারা আজকের এই পোষ্টের মাধ্যমে হাঁসের ডিমের উপকারিতা ও ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে জানতে পারবেন। চলুন, হাঁসের ডিম খাওয়ার কারণে কি ক্ষতি হতে পারে, সে সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
অনেকে হাঁসের ডিম খেতে তেমন একটা পছন্দ করে না। কারণ এতে অনেক ক্ষতি হতে পারে এই চিন্তা করে কিন্তু হাঁসের ডিমের অনেক উপকারিতা আছে। তাই হাঁসের ডিম খেলে কি ক্ষতি হয় ও উপকারিতা সম্পর্কে জানতে পোস্টে মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
পোস্টসূচিপত্রঃহাঁসের ডিম খেলে কি ক্ষতি হয় ও উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন
হাঁসের ডিম খাওয়ার উপকারিতা
অনেকেই হাঁসের ডিম খেতে পছন্দ করে এবং হাঁসের ডিম বিভিন্ন ধরনের উপকার করে থাকে। তাই হাঁসের ডিম খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
হাঁসের ডিমের মধ্যে চর্বি ও কোলেস্টেরল থাকে, এছাড়াও কার্বোহাইড্রেট, খনিজ পরিমাণ বেশি থাকে। তাছাড়া হাঁসের ডিমের মধ্যে প্রোটিন ও ওমেগা ৩, ফ্যাটি এসিড এ ধরনের আরো অনেক ভিটামিন রয়েছে।
বিশেষ করে যারা ডায়েট করতে চান সে ক্ষেত্রে তারা হাঁসের ডিম খেতে পারেন। হাঁসের ডিমের প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ আছে। এর মধ্যে অতিরিক্ত ভিটামিন ১২, লোহিত রক্ত কণিকা গঠন করতে পারে এবং স্বাস্থ্যকর স্নায়ুর উপকার করে থাকে।
হাঁসের ডিমের মধ্যে ভিটামিন বি ১২ থাকার কারণে হৃদরোগ, ক্যান্সারের ঝুঁকি থেকে রক্ষা করতে পারে। তাছাড়া হাঁসের ডিমের মাঝে ভিটামিন-এ আছে, যা দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করতে পারে এবং রক্ত ও ত্বকের ক্ষেত্রে ভালো উপকার করে থাকে। এছাড়া এর মধ্যে সেলেনিয়াম থাকায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পারে। হাঁসের ডিমের মধ্যে রিবোফ্লাভিন নামের শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে।
হাঁসের ডিমের মধ্যে প্রচুর পরিমাণ পুষ্টি থাকার কারণে এটার গুরুত্ব বেশি। অনেকেই এই হাসের ডিম খেয়ে থাকে কারণ হাঁসের ডিমের মধ্যে ম্যাগনেসিয়াম আর ক্যালসিয়াম, আয়রন, ভিটামিন বি ১২ ভিটামিন-এ, থায়ামিন আছে। এছাড়াও ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড পাওয়া যায়, যা মানুষের স্বাভাবিক বিপাকের ক্ষেত্রে ভালো উপকার করে থাকে।
চলুন, হাঁসের ডিম খাওয়ার কারণে যেসব রোগ ব্যাধি থেকে মুক্তি পেতে পারেন, সে সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
হাঁসের ডিম খাওয়ার কারণে শরীরের শক্তি পাওয়া যায়, কারণ এর মধ্যে ভিটামিন ও ক্যালরি থাকে। যার কারণে শক্তি পাওয়া যেতে পারে, তাছাড়া এর মধ্যে ভিটামিন বি, থাকার কারণে শক্তিতে রূপান্তরিত হয় খাদ্যগুলো। তাই প্রতিদিন সকালে একটি করে সিদ্ধ ডিম খেতে পারেন।
হাঁসের ডিমের মধ্যে ভিটামিন-এ থাকে যা দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করতে পারে। এছাড়া ডিমের মধ্যে করোটিন এড এবং লুটেন থাকার কারণে বয়স্ক হয়ে গেলে দেখা যায় চোখের সমস্যা হতে পারে। সে ক্ষেত্রে এটা ম্যাকুলার ডিজেনারেশন এই সমস্যা কমিয়ে রাখে।
হাঁসের ডিমের মধ্যে ভিটামিন ই থাকার কারণে কোষ এবং ত্বকে যে ফ্রি রেডিকেল থাকে তা ধ্বংস করতে পারে। তাই ক্যান্সারের ক্ষেত্রে অনেকটাই সমস্যা প্রতিরোধ করতে পারে। তাছাড়া নতুন কোষ বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে, এজন্য নিয়মিত ডিম খেতে পারেন। এক্ষেত্রে বেস্ট ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।
অনেকের পেশি, কোমরে ব্যথা করে, হাটুর ভিতরে ব্যথা করে। এই ধরনের ব্যথার জন্য ভিটামিন ডি ভালো কাজ করে থাকে। এজন্য হাঁসের ডিম খেতে পারেন, এর মধ্যে ভিটামিন ডি থাকে এবং ক্যালসিয়াম থাকে যা আপনার এই ধরনের ব্যথা দূর করতে সাহায্য করবে। তাছাড়াও নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম করবেন এবং পাশাপাশি হাঁসের ডিম খেতে পারেন।
অনেকের নখ ভেঙ্গে যায় আর এই ধরনের সমস্যা সাধারণত সালফারের অভাবের কারণে হয়ে থাকে। আর হাঁসের ডিমের মধ্যে সালফার থাকে, তাই নখ সুন্দর ও সাদা রাখতে হলে এই সালফারের প্রয়োজন। সেজন্য নিয়মিত ভাবে হাঁসের ডিম খেতে পারেন।
অ্যানিমিয়া বা রক্তস্বল্পতার সাধারণত নারীরাই বেশি ভুগতে থাকে এবং শিশুর শরীরের পর্যাপ্ত আয়রন না থাকলে এই ধরনের সমস্যা হতে পারে। তাই হাঁসের ডিমের মধ্যে প্রচুর পরিমাণ আয়রন থাকে, যদি আপনি এটা খেতে পারেন তাহলে আপনার রক্তস্বল্পতা দূর হবে।
শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দূর করতে হাঁসের ডিম খেতে পারেন। কারণ এর মধ্যে জিংক থাকার কারণে ইমিউনিটি সিস্টেমকে অতি দ্রুত বৃদ্ধি করতে পারে। তাছাড়া অনেকেই সর্দি কাশি ঠান্ডা এগুলোতে ভুগতে থাকেন তারা এই হাঁসের ডিম খেতে পারেন।
আপনার দাঁত ও হাড় মজবুত করার জন্য ফসফরাসের প্রয়োজন, যা হাঁসের ডিমের মধ্যে রয়েছে। তাই আপনার দাঁত ও হাড় মজবুত করার জন্য নিয়মিতভাবে হাঁসের ডিম খেতে পারেন।
নারীরা সাধারণত স্বাস্থ্যের উন্নতি করার জন্য ৫০ শতাংশ প্রোটিন প্রয়োজন হয়। যা ডিম থেকে পাওয়া যেতে পারে, কারণ একটি হাঁসের ডিমের মধ্যে ৬.৫ গ্রাম প্রোটিন থাকে। তাই নিয়মিতভাবে ডিম খেতে পারেন।
হাঁসের ডিম খেলে কি ক্ষতি হয়
হাঁসের ডিম আমাদের শরীরে অনেক উপকার করে থাকে। তাছাড়া অতিরিক্ত হাঁসের ডিম খেলে কি ক্ষতি হয়। চলুন, এ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
ডিমের দুই তৃতীয় অংশ সাদা অংশ থাকে আর এক তৃতীয় অংশও হলুদ বা কুসুম থাকে। সাদা অংশের মধ্যে মূলত প্রোটিন থাকে আর হলুদ অংশের মধ্যে বা কুসুমে ফ্যাট, প্রোটিন ও কোলেস্টেরল থাকে। তাই অতিরিক্ত ডিম খেলে যে সমস্যাগুলো দেখা দিতে পারে তা বর্ণনা করা হলো।
বেশি ডিম খাওয়ার কারণে বিশেষ করে ডিমের কুসুম যদি খান, সে ক্ষেত্রে রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি পাবে। রক্তের কোলেস্টেরল যদি বেড়ে যায় সে ক্ষেত্রে হার্টের সমস্যা হতে পারে, স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়তে থাকে। এজন্য হাঁসের ডিমের কিছু ভালো ফ্যাটও আছে যা স্যাচুয়েটেড ফ্যাট বলা হয়ে থাকে।
যা আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর এজন্য হার্টের রোগীরা বা যাদের হাই কোলেস্টেরল আছে। তারা ডিমের কুসুম না খাওয়াই ভালো, এদিকে বিশেষ সতর্ক থাকতে হবে। এমনকি ডায়াবেটিস ও কিডনি রোগীদের ক্ষেত্রে একই কথা প্রযোজ্য।
অনেকে ডিমের সাদা অংশ খুব ভালো প্রোটিন, এলবুমিন থাকে এজন্য মানুষ বেশি করে খেয়ে থাকেন। মাংসপেশি বাড়ানোর জন্য অনেকে একদিনে বেশ কয়েকটি ডিম খেয়ে থাকে। এজন্য দৈনন্দিন ডিমের সাদা অংশ খাওয়া ভালো কিন্তু অতিরিক্ত এলবুমিন গ্রহণ করার কারণে শরীরে ভিটামিনের অভাব দেখা দিতে পারে।
হাঁসের ডিমের অনেকের এলার্জি সমস্যা থাকতে পারে, অতিরিক্ত ভাবে এই ডিম খেলে এলার্জি সমস্যা আরো বেশি হতে পারে।
বেশি হাঁসের ডিম খাওয়ার কারণে অনেকের পেটে গ্যাস হতে পারে বা অস্বস্তিকর লাগতে পারে পেট ফাপা দিতে পারে।
হাঁসের ডিম ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে হাঁসের ডিমের কুসুম ক্ষতি করতে পারে। এজন্য যাদের ডায়াবেটিসের সমস্যা হয়েছে তারা হাঁসের ডিম না খাওয়াই ভালো।
যারা ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে চাচ্ছেন তারা অতিরিক্ত হাঁসের ডিম খাওয়া থেকে বিরত থাকুন, নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না।
অতিরিক্ত হাঁসের ডিম খাওয়ার কারণে অনেকের ডায়রিয়া বা বমির মতো সমস্যা হতে পারে।
আপনি যদি হাঁসের ডিম পরিমাণ মত খেতে পারেন তাহলে আপনার বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য ঝুকি থেকে বেঁচে থাকবেন কিন্তু যদি অতিরিক্ত পরিমাণে হাঁসের ডিম খান সে ক্ষেত্রে ক্ষতি হতে পারে।
সপ্তাহে তিন থেকে চারটি বেশি হাঁসের ডিম না খাওয়াই ভালো তাহলে স্বাস্থ্য ভালো থাকবে। তা না হলে স্বাস্থ্য ঝুকি বৃদ্ধি পেতে পারে।
অতিরিক্ত হাঁসের ডিম খাওয়ার ফলে পেটে গ্যাস হতে পারে, ফুলে যেতে পারে, পেট ব্যথা হতে পারে ইত্যাদি সমস্যা দেখা যায়।
হাঁসের ডিম খেলে কি প্রেসার বাড়ে
এতক্ষণে আমরা জেনেছি হাঁসের ডিম খেলে কি ক্ষতি হয়? এখন জানবো হাঁসের ডিম খাওয়াতে প্রেশার বাড়ে কিনা, এ সম্পর্কে নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
হাঁসের ডিম খাওয়ার কারণে রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। তবে খুবই কম এজন্য একজন প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ মানুষের দৈনিক গড়ে ৩০০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত কোলেস্টেরল খেতে পারবে। আর ডিমের মধ্যে আছে ২০০ মিলিগ্রাম কোলেস্টেরল এজন্য সমস্যা হওয়ার কথা না।
গবেষণায় দেখা গেছে যে ডিম খাওয়া কখনোই নীরৎসাহিত করে নাই, যে কোন ব্যক্তি ডিমের সাদা অংশ খেলে তেমন কোনো সমস্যা হবে না। তাছাড়া সম্পূর্ণ ডিম খাওয়া হয় সে ক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপ কোলেস্ট্রল ওর হৃদ রোগের ঝুঁকি থাকে না।
আরো একটি গবেষণায় দেখা গেছে সপ্তাহে পাঁচ থেকে ছয়টি ডিম খাওয়া হৃদরোগের মতো স্ট্রোকের কোন ক্ষতি হয় না, এর কারণে কোন রোগের সমস্যা দেখা যায় না।
ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নাল বলা হয়েছে যে দিনে একটি মাত্র ডিম খাওয়ার কারণে হার্টের জন্য তেমন ক্ষতি হবে না। সকালের নাস্তায় একটি সিদ্ধ ডিম খাওয়ার কারণে কোলেস্টেরল উপর তেমন প্রভাব পড়ে না। যতটা না প্রভাব ফেলে সকালের নাস্তায় মিষ্টি খাওয়ার কারণে বা চর্বি জাতীয় খাবার কারণে।
হাঁসের ডিমের মধ্যে প্রোটিন, ভিটামিন ১২, রিবোফ্লাভিন, ফলেট ও ভিটামিন ডি আছে। যা কোলেস্টেরল বৃদ্ধির ক্ষতিকর প্রভাবকে কমাতে পারে। এমনকি ফ্রিজে দীর্ঘদিন সংরক্ষিত রাখার পর যদি কোন মাংস খাওয়া হয় এতে যে ক্ষতি হয়, তার চেয়ে মুরগির ডিম খাওয়া তেমন একটা ক্ষতি হবে না।
অনেকে চিন্তা পড়ে যায় যে হাঁস বা মুরগির ডিম সাদা বা লালচে ডিম খাওয়া সমস্যা হতে পারে। আসলে এই ধরনের ধারণাটা খুবই ভুল, ডিমের পুষ্টিগণ সব একই কেউকে আবার কাচা ডিম খেতে পছন্দ করেন। এমনকি কাচা ডিমের পুষ্টিগুণ বেশি মনে করেন এ ধারণাটাও ভুল বরং খেলে কাঁচা ডিম খেলে সালমানেলা জাতীয় ব্যাকটেরিয়া আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
তরুণেরা এবং যারা বেশি কায়িক পরিশ্রম করে, তারা নিয়মিতভাবে ডিম খাওয়া দরকার। এমনকি বয়স্করাও সপ্তাহে কয়েকটি ডিম খেতে পারবে। আর যারা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত দুর্বল হয়ে গেছে, তাদের সুস্থতা নেয়ার জন্য নিয়মিত হাঁস মুরগির ডিম খাওয়া প্রয়োজন।
এছাড়া যাদের কিডনি অকেজো বা রেনাল ফেইলার সমস্যায় ভুগছেন। তারা ডিম খাওয়া একান্ত প্রয়োজন। তবে কিডনি প্রোটিন জাতীয় খাবার কম খাওয়াই ভালো, এক্ষেত্রে কারো ক্ষেত্রে ডিম খাওয়ার ফলে এলার্জির সমস্যা থাকতে পারে। সেজন্য চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে খেতে হবে।
যারা উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় ভুগছেন, তারা সাধারণত মনে করে ডিম খেলে উচ্চ রক্তচাপ বেড়ে যাবে। এ ধারণাটা একদমই ভুল কারণ চিকিৎসকরা কখনোই ডিম এবং ডিম খেতে মানা করেনা। বর্তমানে চিকিৎসকরা গবেষণা করে বলছেন ডিমের সাদা অংশ রক্ত চাপ বাড়ায় না বরং এটা আরো কমাতে পারে।
পুরো ডিম না খেলে ডিমের সাদা অংশটা খেতে পারেন। ডিমের সাদা অংশ খেলে সমস্যা হবে না। এতে ক্ষারীয় এবং শতকরা প্রোটিন থাকে ডিমের সাদা অংশের প্রোটিন উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। কেননা ডিমের সাদা অংশে থাকে পেপটাইড যে সকল উপাদান নিয়ে আমিষ গঠিত হয়। তার মধ্যে অন্যতম হলো পেপটাইড।
চীনের বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষণা করেছেন যে, উচ্চ রক্তচাপ কমানোর জন্য ক্যাপ্টপ্রিল নামের এক ধরনের ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে। তাছাড়া গবেষণায় আরো দেখা গেছে নিম্নমাত্রায় ক্যাপ্টপ্রিল ব্যবহার করার কারণে রক্তচাপ যতটুকু কমেছে, তার চেয়ে উচ্চ রক্তচাপ কমছে ডিমের সাদা অংশ খাওয়ার কারণে।
আমাদের শরীরে রক্তের মধ্যে এসিই নামের এক ধরনের উপাদান থাকে, রক্তচাপ বৃদ্ধির জন্য এই উপাদানটি কাজ করে থাকে। তাই চিকিৎসকরা মনে করেন ডিমের সাদা অংশ নিয়মিত ভাবে যদি খেতে পারেন। তাহলে এসিই নামের এই উপাদানটি নিয়ন্ত্রণ থাকবে এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করবে।
হাঁসের ডিম খাওয়ার নিয়ম
হাঁসের ডিম বিভিন্ন ধরনের উপকার করে থাকে, তবে হাঁসের ডিম খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আমাদের জানা প্রয়োজন। নিম্নে এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
হাঁসের ডিম বিভিন্নভাবে আপনি খেতে পারেন, চলুন কিভাবে হাঁসের ডিম খাওয়া যেতে পারে এবং নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
ডিম ভাজাঃ ডিম ভাজার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত তেল ব্যবহার সাধারণত করা হয়ে থাকে, এক্ষেত্রে এটা শরীরের জন্য ক্ষতি হতে পারে। এজন্য তেল দিয়ে যদি ডিম ভাজা হয় সেক্ষেত্রে পুষ্টিও থাকে না। এটা আরো অস্বাস্থ্যকর ফ্যাট বেড়ে যেতে পারে। যা শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর, এক্ষেত্রে একটু বাটার ব্রাশ করে ডিম ভাজে খেতে পারেন এতে সমস্যা হবে না।
ডিম পোচঃ এর ক্ষেত্রে অতিরিক্ত তেল দেওয়া যাবে না, এতে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা দিতে পারে। যাদের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা আগে থেকেই রয়েছে, তাদের পেট ব্যথা শুরু হয়, এতে ডিম পোচ করার সময় অল্প তেল ব্রাশ করে বা ওয়াটার পোচ বা চামুচ যে স্টিমের মাধ্যমে পোচ করা যেতে পারে সে ক্ষেত্রে ভালো উপকার পাওয়া যাবে।
সিদ্ধ ডিমঃ সিদ্ধ ডিম খাওয়া স্বাস্থ্যসম্মত এবং শরীরের জন্য উপকার। কারণ এর মধ্যে তেল ব্যবহার করা প্রয়োজন হয় না। ডিম অল্প সিদ্ধ যেভাবেই খান না কেন এতে পুষ্টি ঠিকই থাকবে, তবে কাঁচা ডিম খাওয়া ঠিক হবে না।
এতে ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে, অল্প সিদ্ধ অর্থাৎ তিন থেকে চার মিনিট সিদ্ধ করলে অনেক সময় ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে। তাই একটি ডিম সিদ্ধ কমপক্ষে ৭ থেকে ৮ মিনিট সিদ্ধ করা খেলে ভালো উপকার পাওয়া যায়। আবার কেউ যদি ১০ থেকে ১২ মিনিট সিদ্ধ করে খেতে চায় সে ক্ষেত্রে কোন সমস্যা নেই।
তাছাড়া ডিম পোচ, ভাজা, সিদ্ধ যেভাবে খাওয়া হোক না কেন পুষ্টির সমৃদ্ধ ভাবে খেতে হবে। তাছাড়াও আরো বিভিন্ন উপায়ে ডিম খাওয়া যেতে পারে, এতে পুষ্টিমূল্য ভালো থাকবে যেমন অনেক সময় বাচ্চারা ডিম খাওয়ার জন্য বলতে থাকে।
এরকম সিদ্ধ বা পোচ যদি খেতে তারা না চায় সে ক্ষেত্রে ডিমের সাথে অন্য সবজি করে ভাজতে পারেন। এর সাথে পনির এক কাপ দুধ দিয়ে সুন্দর করে মিক্সড করে খেতে ভালো লাগবে।
এখন জেনে নেওয়া যাক একজন মানুষ দিনে কতটি ডিম খেতে পারবে এবং কুসুমসহ খাওয়া যাবে কিনা এ সম্পর্কে চলুন বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
একজন মানুষ দিনে কয়টা ডিম খাবে সেটা নির্ভর করবে, তার শরীরের অবস্থার উপর ভিত্তি করে, পুরোপুরি সুস্থ মানুষ প্রতিদিন একটা ডিম খেলে তেমন সমস্যা হবে না। ৩৫ বছর বয়স পর্যন্ত একজন একটা করে ডিম খাওয়া যেতে পারে তেমন ক্ষতি হবে না।
সাদা অংশ খেলে তেমন ক্ষতি হয় না, তবে ৪০ বছর বয়সের বেশি যদি হয়ে যায় সে ক্ষেত্রে সতর্কতা থাকতে হবে। চারদিন ডিমের কুসুমসহ এবং বাকি তিন দিন ডিমের কুসুম ছাড়া সাদা অংশ খাওয়া দরকার।
যাদের রক্তের চর্বি আছে বেশি কোলেস্টেরলের মাত্রা কিডনির সমস্যা এই ধরনের সমস্যা যদি থাকে সে ক্ষেত্রে শরীরের অবস্থার ওপর নির্ভর করে কয়টা ডিম খাবে সেটা একজন চিকিৎসকের মাধ্যমে পরামর্শ নিতে হবে।
অনেক সময় রোগীদেরকে শুধুমাত্র ডিমের কুসুম বাদ দিয়ে সাদা অংশ খাওয়ানোর কথা বলা হয় আবার কিছুদিন ডিমের কুসুমসহ খাওয়ার কথা বলে এসব একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মাধ্যমে আপনাকে খেতে হবে।
যারা জিম করেন অথবা অ্যাথলেটার তারা দিনে অতিরিক্ত সাত থেকে আটটা পর্যন্ত ডিমের সাদা অংশ খেলে সমস্যা নেই। ডিমের কুসুমসহ কম খাওয়ার চেষ্টা করবেন কারণ এর মধ্যে কোলেস্টেরল বৃদ্ধি পেতে পারে। ডিমের সাদা অংশ এলবুমিন থাকে যার কারণে শরীরের জন্য উপকার করে থাকে।
গর্ভাবস্থায় হাঁসের ডিম খাওয়া যাবে কি
ইতিমধ্যে আমরা জেনেছি হাঁসের ডিম খেলে কি ক্ষতি হয়? এখন জানবো গর্ভাবস্থায় হাঁসের ডিম খেলে কি হবে, এ সম্পর্কে বিস্তারিত নিম্নে আলোচনা করা হলো।
হাঁসের ডিমের মধ্যে ভিটামিন, খনিজ, ফ্যাট ইত্যাদি থাকার কারণে গর্ভবতী নারীরা সিদ্ধ করে ডিম খেতে পারবেন। এতে শিশুর গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টির বৃদ্ধি পাবে।
নিয়মিতভাবে ১ থেকে ২টি সিদ্ধ ডিম খাওয়া যেতে পারে, এতে প্রায় ১৮৫ মিলিগ্রাম কোলেস্টেরল এর চাহিদা মিটবে। যা একজন সুস্থ মানুষের জন্য দৈনিক প্রায় ৩০০ মিলিগ্রাম দরকার। এজন্য গর্ভবতী মায়েদের কোলেস্টেরল বৃদ্ধি করার জন্য সিদ্ধ ডিম খাওয়া যেতে পারে।
আরো পড়ুনঃhabibvi তেঁতুল খেলে কি প্রেসার কমে ও উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন
তাছাড়া সিদ্ধ ডিম শিশুর বৃদ্ধির করতে সাহায্য করে, প্রোটিন সরবরাহ করার মাধ্যমে ডিমে কলিন থাকে যা মস্তিষ্কের বৃদ্ধি এবং বুদ্ধি বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে থাকে। সিদ্ধ ডিম খাওয়ার কারণে শিশুর অনেক রোগ থেকে রক্ষা পেতে পারে।
প্রতিটি ডিমের মধ্যে প্রায় ৭০ রকমের ক্যালরি থাকার কারণে শিশুর মায়ের প্রতিদিনের ক্যালোরি অভাব পূরণ করে। তাই নিয়মিত ভাবে গর্ভবতী একটি করে ডিম অবশ্যই খাবেন।
হাঁসের ডিমের পুষ্টিগুণ
অনেকেই হাঁসের ডিম খেতে পছন্দ করে কেননা এতে অনেক উপকার আছে। বিশেষ করে হাঁসের ডিমের পুষ্টিগুণ অন্যান্য ডিমের সাথে থেকে সবচেয়ে বেশি। নিম্নে এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
হাঁসের ডিমের মধ্যে প্রোটিন অন্যান্য ডিমের চাইতে বেশি রয়েছে। ১০০ গ্রাম হাঁসের ডিমের মধ্যে প্রোটিন ১৩.৫ গ্রাম এর মত থাকে। এরমধ্যে চর্বি কম রয়েছে ১০০ গ্রাম। হাঁসের ডিমের চর্বি মাত্র ১৩.৭ গ্রামের মতো। তাছাড়া ১০০ গ্রাম হাঁসের ডিমের মধ্যে ১৮১ গ্রাম ক্যালরি থাকে।
এছাড়াও হাঁসের ডিমের মধ্যে ক্যালসিয়াম থাকে ৭০ মিলিগ্রামের মত, তাছাড়া হাঁসের ডিমের মধ্যে আয়রন আছে ৩ মিলিগ্রামের মত। ১০০ গ্রাম হাঁসের ডিমের মধ্যে ভিটামিন-এ ২৬৯ মাইক্রগ্রাম থাকে।
হাঁসের ডিমের মধ্যে ফ্যাটের বেশি থাকে এক্ষেত্রে ১০ গ্রাম ফ্যাট থাকে। যা হার্টের জন্য তেমন একটা ক্ষতি করে না। এছাড়াও হাঁসের ডিমের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন খনিজ থাকে। ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড থাকে।
যা হার্টের মস্তিষ্ক ভালো থাকে, তাছাড়া কোলেস্টেরলের মাত্রা হাঁসের ডিমের মধ্যে বেশি থাকলেও এটা তেমন একটা ক্ষতি করে না বরং খারাপ কোলেস্টেরলকে দূর করতে পারে। এক্ষেত্রে হার্টের রোগীদের তেমন সমস্যা হয় না। তবুও এক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে।
১০০ গ্রাম হাঁসের ডিমের মধ্যে খাদ্য শক্তি, আমিষ, চর্বি, শর্করা, লৌহ, ক্যালসিয়াম ইত্যাদি রয়েছে। এর মধ্যে আরো বিভিন্ন ধরনের উপদান থাকে, আপনি নিয়মিত ভাবে এই পুষ্টিগণ হাঁসের ডিমটা খেতে পারেন।
আমাদের শেষ কথা
পরিশেষে বলা যেতে পারে হাঁসের ডিমের খাওয়ার কারণে অনেক উপকার হয়ে থাকে। তবে অতিরিক্ত যদি খান সে ক্ষেত্রে ক্ষতি হতে পারে। তাই হাঁসের ডিম খেলে কি ক্ষতি হয়? সম্পর্কে আজকের এই পোস্টটিতে আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি উপকার হবে, যদি পোস্টটা ভাল লাগে তাহলে আপনার বন্ধু-বান্ধবের নিকট শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ
এম আর মাহমুদ ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url