সম্রাট জাহাঙ্গীরের রাজত্বকাল এর বিবরণ দাও এবং তার উপর নুরজাহানের প্রভাব

অনেকে জানতে চায় সম্রাট জাহাঙ্গীরের রাজত্বকাল এর বিবরণ দাও? সম্পর্কে। তাই সম্রাট জাহাঙ্গীর এর সম্পর্কে তাদের জানা খুবই প্রয়োজন। চলুন, সম্রাট জাহাঙ্গীরের রাজত্বকাল সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করা যাক।
ছবি
সম্রাট জাহাঙ্গীরের বুদ্ধিমত্তা এবং সঠিক গাইড লাইনের মাধ্যমে তিনি রাজত্ব পরিচালনা করেছিলেন কিন্তু পরবর্তীতে নুরজাহানের প্রতি দায়িত্ব দেওয়ার কারণে রাজ্যের সমস্যা হয়। তাই সম্রাট জাহাঙ্গীরের রাজত্বকাল এর বিবরণ দাও? সম্পর্কে জানতে আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।

পোস্টসূচিপত্রঃসম্রাট জাহাঙ্গীরের রাজত্বকাল এর বিবরণ দাও এবং তার উপর নুরজাহানের প্রভাব

সম্রাট জাহাঙ্গীরের পরিচয়

মোগল সম্রাট আকবরের পুত্র সম্রাট জাহাঙ্গীর, তাই সম্রাট জাহাঙ্গীরের পরিচয় সম্পর্কে নিম্নে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করা হলো।

সম্রাট জাহাঙ্গীরের আসল নাম ছিল শাহাজাদা সেলিম। তিনি ১৫৬৯ সালে ৩১শে আগস্ট ফতেপুর সিক্রিতে জন্মেছিলেন। তার পিতা সম্রাট আকবর এবং তার মাতা মরিয়ম উজ জামান। সম্রাট আকবরের আগের সন্তানগুলো শিশুকালে মারা গেছে।

তিনি একটি পুত্র সন্তানের জন্য পবিত্র লোকদের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেছিল। তারপর এই সম্রাট জাহাঙ্গীর জন্ম হয়। তার পিতা তাকে শেখ সেলিম নাম দিয়েছিলেন এবং তাকে শেখ বাবু বলে ডাকত।
সম্রাট জাহাঙ্গীর প্রথমে তার পিতা আকবরের মতাদর্শী পালন করতেন। ওই সময় সম্রাট আকবর দক্ষিণ ভারত নিয়ে ব্যস্ত ছিল যার কারণে তিনি হেরে গেলেও পরবর্তীতে তার সৎ মা রুকাইয়া সুলতান বেগম ও সেলিমা সুলতান বেগমের সমর্থনে ১৬০৫ খ্রিস্টাব্দে রাজা হওয়ার জন্য সমর্থন পায়।

প্রথম বছরের তার বড় ছেলে খসরুর বিদ্রোহের মোকাবেলা করতে হয়েছিল এবং সেখানে তিনি সফল হয়। খসরুকে যারা সমর্থন করেছিল, প্রায় দুই হাজার লোককে মৃত্যুদণ্ড দেয় ও খসরুকে অন্ধ করে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে তিনি ক্ষমতা গ্রহণ করার পর বাবার মতই প্রশাসন সাজিয়েছিল। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ছিল এবং শক্তিশালী অর্থনীতি, সাংস্কৃতিক মনা ছিলেন।

সম্রাট জাহাঙ্গীরের রাজত্বকাল এর বিবরণ দাও

সম্রাট জাহাঙ্গীরের রাজত্বকাল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই সম্রাট জাহাঙ্গীরের রাজত্বকাল এর বিবরণ দাও? এই প্রশ্নের আলোকে নিম্নে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো।

খসরুর বিদ্রোহ দমনঃ জাহাঙ্গীরের শাসনামলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ছিল খসরুর বিদ্রোহ। তাকে কঠোর হস্তে দমন করেছিলেন। যুবরাজ খসরু পাঞ্জাব বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলেন সম্রাট জাহাঙ্গীর তার এই বিদ্রোহ দমন করার জন্য বের হন এবং জলন্ধরে উভয় দলের মধ্যে যুদ্ধ হয় এতে খসরু জাহাঙ্গীর কাছে পরাজিত হয়েছিল।

বাংলার বিদ্রোহ দমনঃ ১৫৭৫ খ্রিস্টাব্দে বাংলায় মুঘলদের দ্বারা বিজিত হয়, এরপর আফগান দলনেতারা মেনে নেয়নি। যার কারণে সম্রাট জাহাঙ্গীরের রাজত্বকালে ওসমান খাঁ ও মুসা খা এই মুঘল সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু করেছিলেন। বাংলার রাজধানী রাজমহল থেকে ঢাকা স্থানান্তর করেছিলেন এবং এর নাম দিয়েছিল জাহাঙ্গীরনগর।

কান্দাহার পুনরুদ্ধারের ব্যর্থতাঃ সম্রাট আকবরের সময় পারস্যের শাহ আব্বাস অনেক চেষ্টা করেছিল কান্দাহার উদ্ধার করার জন্য কিন্তু উদ্ধার করতে পারে নাই। তিনি জাহাঙ্গীরের সাথে বন্ধুত্বের অভিনয় করেছিল ১৬১২ সালে কৌশলে আকস্মিকভাবে কান্দাহার জয় করেছিল। পরবর্তীতে সম্রাট জাহাঙ্গীর শত চেষ্টা করে এটা উদ্ধার করতে পারে নাই।

মেবার অভিযানঃ মেবার বিজয় লাভ করার সম্রাট জাহাঙ্গীরের শাসনামলে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। জাহাঙ্গীর মেবার দখল করার জন্য তিনি সেখানে আক্রমণ করেন। আক্রমণের ফলে মেবার সৈন্যবাহিনীকে পরাজিত করেছিল এবং এর রাজধানী চিতোর হস্তগত করতে পারে নাই। এরপর ১৬১৫ সালের যুবরাজ খুররমের নেতৃত্বে মেবার দখল করে মুঘল সম্রাজ্য ভুক্ত করেছিল।

কাংরা দুর্গ বিজয়ঃ শতদ্র ও রাভী নদীর মোহনায় অবস্থিত কাংরা দুর্গ, সেনাপতি মোর্তজা খা এই দুর্গ বিজয় করতে ব্যর্থ হয়। তখন যুবরাজ খুররম বিশাল বাহিনী নিয়ে এই দুর্গ জয় করেছিল। দীর্ঘ ১৪ মাস অপরোধ করে রাখছিল, অবশেষে ১৬২০ খ্রিস্টাব্দে এই দুর্গটি জয় করে।

দাক্ষিণাত্য অভিযানঃ জাহাঙ্গীরের ক্ষমতা লাভ করার ফলে দাক্ষিণাতের দখল করার জন্য চিন্তা ভাবনা করেছিলেন কিন্তু তিনি ব্যর্থ হয়। শেষে ১৬১৭ সালের যুবরাজ খুররম এর নেতৃত্বে আহমদনগর দিকে রওনা হয়, খুররম কৃতিত্বের সাথে এই অভিযান পরিচালনা করে তিনি আহমেদনগর দুর্গ ও বালাঘাট অধিকার করেছিল কিন্তু এই অভিযানের ফল দীর্ঘদিন থাকে নাই।

মহব্বত খানের বিদ্রোহঃ সম্রাট জাহাঙ্গীরের রাজত্বকালে সেনাপতি মহম্মদ খান শক্তিশালী হচ্ছিল। তখন সম্রাট জাহাঙ্গীরের স্ত্রী নুরজাহান তিনি সাম্রাজ্যের বিপদজনক মনে করেছিল। তাই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সম্রাট কে পরামর্শ দিয়েছিলেন। সম্রাট জাহাঙ্গীর ও তার স্ত্রী নুরজাহান কে বন্দি করেছিল নুরজাহান কৌশলে বন্দি থাকা অবস্থায় সম্রাট সহ মুক্ত হওয়ায়, মহব্বত খান পলায়ন করার জন্য বাধ্য হয়েছিল।

খুররমের বিদ্রোহ দমনঃ ঐতিহাসিক আর সি মজুমদার বলেন, সম্রাট জাহাঙ্গীর রাজত্বকালে একটি স্মরণীয় ঘটনা হলো যুবরাজপুরের বিদ্রোহী করা। নুরজাহান চেয়েছিল জামাতা এবং সম্রাটের কনিষ্ঠ পুত্র শাহরিয়ার কে সিংহাসনে বসাবেন কিন্তু খুররম ওরফে শাহজাহান অত্যন্ত প্রতিভাবান ছিল। তিনি পিতার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে তবে রাজকীয় বাহিনীর সাথে যুদ্ধে পরাজিত হয়েছিল। পরবর্তীতে ফিরে আসে পিতার নিকট ক্ষমা চায় এতে পিতা ক্ষমা করে দেন।

ন্যায় বিচারকঃ সম্রাট জাহাঙ্গীর বিচার ব্যবস্থা সঠিকভাবে করতেন ধনী-দরিদ্র সবাই যেন সরাসরি তার নিকট বিচার প্রার্থনা করতে পারে সে ব্যবস্থা তিনি করেছিলেন। এতে তিনি ৬০ টি ঘন্টাযুক্ত একটি শিকল প্রাসাদের থেকে যমুনা নদীর তীর পর্যন্ত ঝুলিয়ে দিয়েছিল।

সাহিত্য অনুরাগীঃ সম্রাট জাহাঙ্গীর শিল্প সাহিত্যের প্রতি গভীর আগ্রহ ছিল এবং এগুলো তিনি পছন্দ করতেন। ফারসি ভাষায় আত্মজীবনী 'তুজুকে জাহাঙ্গীরী' তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তিনি ইতিহাস ভূগোল জীবনচরিত ইত্যাদি বিষয়ে অনেক পারদর্শী ছিলেন।

সঙ্গীতা অনুরাগীঃ সম্রাট জাহাঙ্গীর সংগীতের প্রতি অনেক আগ্রহ ছিল। বিখ্যাত সংগীত লালন খান ও তানসেনের পুত্র বিলাস খান তার দরবারে সংগীতে আয়োজন করা হতো।

সম্রাট জাহাঙ্গীরের জীবনী

মোগল সাম্রাজ্যের অন্যতম সম্রাট জাহাঙ্গীর, তাই সম্রাট জাহাঙ্গীরের জীবনী সম্পর্কে জানা প্রয়োজন নিম্নে তার জীবনী সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।

সম্রাট জাহাঙ্গীর ১৬০৫ খ্রিস্টাব্দে চতুর্থ সম্রাট হিসেবে সিংহাসন বসেছিলেন তিনি জয়পুরের রাজপুত্র রাজকন্যা ও সম্রাট আকবরের প্রথম পুত্র ছিলেন। তার নাম রাখা হয়েছিল সেলিম তিনি পিতার উত্তরাধিকার হিসাবে নুরু উদ্দিন মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর উপাধি গ্রহণ করেছিলেন।

ক্ষমতা গ্রহণের পর তিনি জনকল্যাণমূলক বারটি অনুজ্ঞ তৈরি করেছিলেন এবং তিনি ন্যায় বিচারের শিকল ঝুলিয়ে দিয়েছিল। পিতার বিরুদ্ধে বিদ্রোহের সময় যারা বিরোধিতা করেছিল তাদের সবাইকে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। নুরজাহানের সঙ্গে জাহাঙ্গীরের বিয়ে অত্যন্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল। 

নুরজাহানের পূর্ব নাম ছিল মেহেরুন্নেসা তিনি বর্ধমান এর জায়গীর সের আফগান বাংলার গভর্নর কুতুবুদ্দিন খান কোকার হাতে নিহত হন। ১৬০৭ খ্রিস্টাব্দে তার স্ত্রী মেহেরুন্নেসাকে দরবারে নিয়ে যান এবং ১৬১১ খ্রিস্টাব্দে জাহাঙ্গীরের সাথে বিবাহ হয়। বিয়ের পর তাকে নুরজাহান উপাধি দেওয়া হয়েছিল। 
তিনি একজন জ্ঞানী রমনী নারী ছিলেন যার স্বামীর উপরে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনি সাম্রাজ্যের যৌথ শাসকের পরিণত করেছিল নুরজাহানের নাম বাদশার সাথে যৌথভাবে সকল কিছু কাগজ-কলম এবং সকল ক্ষেত্রেই স্বাক্ষরিত হয়।

জাহাঙ্গীরের অধীনে সম্রাজ্য উত্তর পূর্ব দিকে ব্যাপক বিস্তার লাভ কোচবিহার ত্রিপুরা, কামরূপ সকল অঞ্চলগুলোয় মুঘলদের হাতে চলে আসে। জাহাঙ্গীর প্রধান সামরিক অর্জন করেছিলেন এবং বাংলার বারো ভূঁইয়া এদেরকে দমন করেছিলেন। মোগল কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা এবং স্থানীয় বাধা বিপত্তি সম্রাট এর দুধ ভাই আলাউদ্দিনের কৃতিত্ব আলাউদ্দিনকে ইসলাম খান উপাধি দেওয়া হয়েছিল।

তিনি ১৬০৮ খ্রিস্টাব্দে থেকে ১৬১৩ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বাংলার দায়িত্ব পালন করে। ইসলাম খান বাংলা রাজধানী রাজমহল থেকে ঢাকা স্থানান্তর করেছিলেন এবং বাদশার নামের নাম দিয়েছিল জাহাঙ্গীরনগর। সীমান্ত এলাকায় মগদের আকর্ষিক আক্রমণ আশঙ্কার কারণে তিনি যথার্থ সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।

১৬১৩ খ্রিস্টাব্দে ইসলাম খানের মৃত্যু হয়েছে যখন হয় তখন তার স্থলাভিষিক্ত তার ভাই কাশিম খান কে নিযুক্ত করা হয়। কিছু জমিদার শাসনের বিরুদ্ধে শুরু করে কাসেম খানের পরবর্তী। যাহোক তিনি বিদ্রোহী শাহজাদা শাজাহান এর সঙ্গে যুদ্ধ করতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করেন। শাহাজাদা কিছু সময়ের জন্য বাংলায় কর্তৃত্ব স্থাপন করেছিলেন কিন্তু পরে পরাজিত হয়ে দাক্ষিণাত্যে নেতার নিকট আশ্রয় গ্রহণ করেন।

শাহজাদা খুররমের বিদ্রোহ দমন করার জন্য জাহাঙ্গীর মোহাব্বত খান, ফিদার খান বাংলার সুবেদার নিযুক্ত করেছিল। তার শাসনকাল ছিল সংক্ষিপ্ত এবং ১৬২৭ খ্রিস্টাব্দে কাশ্মীর থেকে ফিরে আসার পথে জাহাঙ্গীরের মৃত্যু হয় এবং লাহোরের নিকটে তাকে সমাধিত করা হয়েছিল।

সম্রাট জাহাঙ্গীরের প্রেম কাহিনী

সম্রাট জাহাঙ্গীর নুরজাহানের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন। তাই সম্রাট জাহাঙ্গীরের প্রেম কাহিনী সম্পর্কে অল্প পরিসরে আলোচনা করা হলো।
ছবি
প্যারিসের বাসিন্দা মির্জা গিয়াস উদ্দিন বেগ ও আসমাত বেগমের কন্যা নুরজাহান। তার নাম ছিল মেহেরুন্নেসা। মেহেরুন্নেসা ১৫৭৭ খ্রিস্টাব্দে কান্দাহার জন্মগ্রহণ করেছিলেন, এরপরে তিনি তার পিতা সহ ভারতে চলে আসে।

শেখ মামুদ নামের ধর্মপ্রাণ মুসলমানের সহায়তা আকবরের রাজপ্রাসাদের চাকরি নেন। সম্রাট আকবর তাকে ইতিমাদ দোলা উপাধি দিয়েছিলেন। মির্জা গিয়াস বেগ এর কন্যা মেহেরুন্নেসা আকবরের রাজপ্রাসাদে যাতায়াত করতেন।

আলী কলি বেগ এর সাথে বিবাহঃ আকবরের পুত্র সেলিম মোগল প্রাসাদের মেহেরুন্নেসা কে দেখে তার রূপের মুগ্ধ হয়ে যায়। সেলিম শীঘ্রই অপরূপ সৌন্দর্যের অধিকার প্রেমে পড়ে যায় এবং তাকে বিবাহ করার জন্য ইচ্ছা পোষণ করেন।

কিন্তু সম্রাট সেলিম ওরফে জাহাঙ্গীর এর বাবা সম্রাট আকবর এই বিবাহ তে অসম্মতি ছিল। যার কারণে ১৭ বছরের মেয়ের সাথে সম্রাট জাহাঙ্গীরকে জোর করে বিবাহ দেয়। মেহেরুন নেসাকে তাড়াতাড়ি করে বর্ধমানের জায়গীরদার আলী কুলি বেগ এর সাথে বিবাহ দিয়েছিল।

জাহাঙ্গীরের সঙ্গে মেহেরুন্নেসার বিবাহঃ জাহাঙ্গীরের পিতা আকবর মেহেরুন্নেসা কে দিল্লি থেকে বহু দূরে বিবাহ দিয়েছিল। যেন তাকে সেলিমের চোখে আড়াল করা যায় কিন্তু সেলিম প্রমাণ করেছিল চোখের আড়াল হলেও তাকে তো আর ভোলা যায় না। তাই অপরূপ মেহেরুন মন থেকে তিনি কখনোই ভুলতে পারে নাই।

সম্রাট আকবরের মৃত্যুর পর তার পুত্র সেলিম সিংহাসনে বসে জাহাঙ্গীর নাম দিয়েছিল। এরপর ১৬০৭ খ্রিস্টাব্দে মেহেরুন্নেসার স্বামী বর্ধমান জায়গিরদার আলী কুলি বেগ কে হত্যা করেছিল। যার কারণে তার পরিবার অর্থনৈতিক দিক দিয়ে অনেকটাই সমস্যার মধ্যে ছিল।

এরপর ১৬১১ খ্রিস্টাব্দে বসন্তকালের নববর্ষের সময় মোগল প্রাসাদে জাহাঙ্গীর ও মেহেরুন্নেসার সাক্ষাৎ হয়েছিল। তার রূপে মহা আবিষ্ট জাহাঙ্গীর অতি দ্রুত তাকে বিবাহ করার প্রস্তাব দেয়। ১৬১১ খ্রিস্টাব্দে ২৫ শে মে মেহেরুন্নিসা কে বিবাহ করেছিলেন সম্রাট জাহাঙ্গীর এবং তার ১২ জন বেগমের মধ্যে প্রধান বেগমের মর্যাদা দিয়েছিল।

স্ত্রীর নাম দিয়েছিলেন নুরজাহান যার অর্থ জগতের আলো, সেই আলোয় জাহাঙ্গীর নিজেকে উজ্জ্বল মনে করেছিল। সম্রাট জাহাঙ্গীর মুদ্রায় তার নামের সাথে নূরজাহানের নাম খোদাই করার জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন।

সম্রাট জাহাঙ্গীরের উপর নূরজাহানের প্রভাব

ইতোমধ্যে আমরা জেনেছি সম্রাট জাহাঙ্গীরের রাজত্বকাল এর বিবরণ দাও? সম্পর্কে এখন জানবো তার ওপর নুরজাহানের কি প্রভাব ছিল। চলুন, নুরজাহানের কি প্রভাব ছিল সে সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানা যাক।
ছবি
নুরজাহান শুধু রূপবতী ছিল না, তিনি ফারসি সাহিত্য কবিতা প্রগতিতে অসাধারণ জ্ঞানের অধিকারী ছিল। শিল্পের প্রতি অনুরাগী ছিল, বুদ্ধিমত্তা ছিল বহুমুখী প্রতিবার অধিকারী ছিলেন। তিনি নিত্যনতুন ডিজাইনের পোশাক ও অলংকার আবিষ্কার করতে পারতেন।

৩৪ বছর বয়সেও তার সৌন্দর্য মুঘল দরবারে অবদান ছিল। অসহায় ও নির্যাতিত বালিকাদের আশ্রয় দিয়েছিল, অনথা মেয়েদেরকে বিবাহর ব্যবস্থা করতেন, তিনি নিজে অর্থ দান করত, সম্রাটের সাথে তিনি প্রায়ই বাঘ শিকারেও যেতেন রাজনৈতিক দৃষ্টি এবং প্রত্যাাকাঙ্ক্ষা ছিল তার চরিত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।

সম্রাট জাহাঙ্গীরের উপর তার প্রভাবঃ নুরজাহান নিজস্ব রূপ লাবণ্য ও বুদ্ধিমত্তার দ্বারা সম্রাট জাহাঙ্গীরের উপর পুরাপুরি প্রভাব খাটিয়েছিল। জাহাঙ্গীরের সাম্রাজ্যের নুরজাহানের ক্ষমতায় সর্বোচ্চ হয়ে উঠেছিল নুরজাহানের ভাই আসফ খান এবং পিতা মির্জা গিয়াস বেগ রাজ দরবারে উচ্চপদে চাকরি নিয়েছিল পিতা গিয়াস অত্যন্ত প্রভাবশালী মন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

যার কারণে জাহাঙ্গীর ক্রমশ আরাম প্রিয় হয়ে বিলাসিতায় ব্যস্ত ছিল। অন্যদিকে নুরজাহান তার অভিজ্ঞতা ও শক্তির অধিকারী হয়ে ওঠেন এবং সম্রাটের নামে তার নামও মুদ্রায় অঙ্কিত করেছিল। এমনকি সব সরকারি ফরমানে জাহাঙ্গীরের স্বাক্ষরের সাথে নুরজাহানের স্বাক্ষর থাকতো।
শেষ পর্যন্ত জাহাঙ্গীর নুরজাহানের হাতের কিরণকে পরে পরিণত হয়েছিল। সম্রাট জাহাঙ্গীর বলেছিলেন আমি তো এক পেয়ালা মদ এবং এক ডিশ সুপের বিনিময় আমার সাম্রাজ্য প্রিয়তম স্ত্রীর কাছে বিক্রি করে দিয়ে দিলাম।

নুরজাহান তার প্রথম পক্ষের কন্যা লাডলী বেগম এর সাথে কনিষ্ঠ যুবরাজ শাহরিয়ারের বিবাহ দিয়ে ভবিষ্যৎ সম্রাটের পদ অর্জন করার চেষ্টা করেছিল। এদিকে ১৬১২ সালে নুরজাহানের ভাতা আসফ খান তার কন্যা আরজুমান্দ বেগম এর সাথে যুবরাজ খুররম শাজাহানের সাথে বিবাহ দিয়েছিল। যার কারণে ভবিষ্যতে সম্রাটের পথটি দখল করার জন্য ভাই বোনের দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়।

ঐতিহাসিক রিসেন্ট স্মিথ নুরজাহান কে সিংহাসনের পশ্চাতে শক্তি বলে অবহিত করেছিল। নুরজাহান ও তার আত্মীয়-স্বজনদের প্রভাব প্রতিপত্তির ফলে রাজসভার অন্যান্য অভিজাত বর্গের মনে অসন্তুষ্টি দেখা দেয় এবং সম্রাট জাহাঙ্গীর নানাবিদ বিপদের সম্মুখীন হয়ে পড়ে।

রাজনীতি থেকে অবসর ও মৃত্যুঃ নুরজাহানের অতিরিক্ত ক্ষমতা কারণে সেনাপতি মহাব্বত খান এবং শাজাহানের সাথে তার মনোমালিন্য সৃষ্টি হয় মোগল সাম্রাজ্যের ভবিষ্যৎ উত্তর অধিকারী নিয়ে শাহারিয়ার এবং শাজাহানের ভ্রাতৃদ্বন্দ্ব সৃষ্টি করে। আসফ খানের সহায়তায় খুররম তথা শাজাহান এই দ্বন্দ্বে বিজয় লাভ করে।

১৬২৭ সালে শাহজাহানের মৃত্যুর পর নুরজাহান রাজনীতি থেকে অবসর নিয়ে নেন। অতঃপর কন্যা লাডলী বেগম কে নিয়ে তিনি লাহোর গিয়ে সাধারণ জীবন যাপন শুরু করে। ১৬৪৫ সালে নুরজাহান বেগম মৃত্যুবরণ করেন।

লেখকের শেষ কথাঃ

পরিশেষে বলা যায় যে সম্রাট জাহাঙ্গীর এর দক্ষতা এবং বিচক্ষণতা বাবার মতই ছিল কিন্তু তিনি তার স্ত্রী নুরজাহান বেগমের প্রতি বেশি আকৃষ্ট হয়। তার উপর নির্ভর করার কারণে পরবর্তীতে তার সম্রাজ্য চালাতে বিশৃঙ্খলা দেখা যায়। আশা করি সম্রাট জাহাঙ্গীরের রাজত্বকাল এর বিবরণ দাও? সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করা হয়েছে। পোস্টটি ভালো লাগলে আপনার বন্ধু-বান্ধবের নিকট শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এম আর মাহমুদ ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪