জন্মকালীন স্বল্প ওজনের পরিণতি ও কারণ সম্পর্কে জানুন
অনেকে জানেনা জন্মকালীন স্বল্প ওজনের পরিণতি সম্পর্কে। বিশেষ করে গ্রাম অঞ্চলের অনেক গর্ভবতী মায়েরা এ বিষয়ে সচেতন হয় না। পরবর্তীতে শিশুর ওজন কম হয়। চলুন, শিশুর ওজন কম সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
একটি শিশু জন্মগ্রহণ করার পর তার এক ঘণ্টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই সময় তার ওজন যদি কম হয়, সেই ক্ষেত্রে অনেক শিশু মারা যেতে পারে। তাই জন্মকালীন স্বল্প ওজনের পরিণতি সম্পর্কে জানতে আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
পোস্টসূচিপত্রঃজন্মকালীন স্বল্প ওজনের পরিণতি ও কারণ সম্পর্কে জানুন
জন্মকালীন স্বল্প ওজনের কারণ কি
জন্মের সময় বাচ্চাদের ওজন কম হওয়ার কারণ জানা প্রয়োজন। তাই জন্মকালীন স্বল্প ওজনের কারণ কি? নিম্নে বিস্তারিত ভাবে বর্ণনা করা হলো,
একটি সুস্থ বাচ্চার জন্মের পর তার স্বাভাবিক ওজন হতে হবে ২. ৮ থেকে ২.৯ কেজি। তবে উন্নত বিশ্বগুলোতে ৩.৪ কেজির মতো হয়। নবজাতকের ওজন যেসব কারণে কম হতে পারে, তাহলো;
গর্ভ-পূর্ব মায়ের পুষ্টিঃ গর্ভাবস্থায় মায়ের ওজন ৪৫ কেজির কম হলে শিশুর ওজন কম হতে পারে।
গর্ভবতীর উচ্চতা ১৪৫ সেন্টিমিটারের কম যদি হয়, সে ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে।
আপনার হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ৮ গ্রামের কম হয়ে থাকে, সে ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে।
রক্তে এলবুমিন ২.৫ গ্রাম এর কম যদি হয় সে ক্ষেত্রে নবজাতকের কম ওজন হবে।
এজন্য একজন গর্ভবতী মা এই সমস্যার জন্য থাকে। যদি থাকে তাহলে তার বাচ্চার ওজন ২.৫ কেজির হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
গর্ভাবস্থায় মায়ের সংক্রমণ যেমন ধূমপান অ্যালকোহল বা অন্যান্য মাদকাসক্ত রেডিয়েশন এর সংস্পর্শে পার্বত্য এলাকায় বসবাস করার কারণে নবজাতকের কম ওজন হতে পারে।
গর্ভস্থ ভ্রনের ক্রোমোজোমের বিচ্যুতি হওয়ার কারণে নবজাতকের ওজন কম হতে পারে।
একসঙ্গে আরো অনেক বাচ্চা প্রসব করলে বাচ্চার ওজন কম হবে। গর্ভবতী মায়ের টক্সিমিয়া উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ এ ধরনের রোগ যদি থাকে তাহলে বাচ্চার ওজন কম হতে পারে।
তবে ডায়াবেটিস আক্রান্ত মায়ের সন্তানটি সাধারণ গড় ওজনের চাইতে বেশি ওজন হতে হবে।
একটি পূর্ণ গর্ভকাল শিশুর দৈর্ঘ্য ৫০ সেন্টিমিটার এর মতো হতে হবে। তাছাড়া নবজাতকের মাথার বেড়ের পরিমাণ ৩৫ থেকে ৩৭ সেন্টিমিটারের মতো হতে হবে। শরীরের তুলনায় মাথা বড় মুখ মন্ডলে ছোট ও গোলাকার, বুকের খাঁচাগুলা আকৃতি পেট উঁচু হতে পারে।
হাত পা ছোট হবে নাভি দেহের মধ্যবিন্দু ধরে শরীরের উপরের অংশ এবং শরীরের নিচের অংশ হচ্ছে বড় দেখা যাবে। মূলত এগুলোই শিশুর লক্ষণ গুলো দেখা দিতে পারে।
জন্মকালীন স্বল্প ওজনের পরিণতি
গর্ভাবস্থায় প্রত্যেকটা মায়ের শরীরের যত্ন না নিলে, শিশুর ওজন কম হতে পারে। তাই জন্মকালীন স্বল্প ওজনের পরিণতি সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা যাক।
স্বল্প ওজনের বাচ্চা দুটি কারণে স্বল্প ওজন কম হতে পারে। এক শিশুর জন্ম যদি গর্ভকাল পূর্ণ না হওয়ার আগেই সন্তান জন্মগ্রহণ করে। আবার শিশু গর্ভাবস্থায় বৃদ্ধির স্বাভাবিক মাত্রা আছে কম হতে থাকে। প্রকৃতপক্ষে গর্ভবতীর সমস্যা হওয়ার কারণে বাচ্চার সমস্যা হতে পারে।
দেখা যায় নবজাতকের বেঁচে থাকবে কিনা এবং ঠিকমতো বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য জন্মের সময় ওজন নিতে হবে। কারণ জন্মের এক ঘন্টার মধ্যে ওজন নেওয়া প্রয়োজন। আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী যেসব নবজাতকের ওজন ২.৫ কিলোগ্রাম এরকম হবে।
তাকে মূলত শিশু স্বল্প ওজনের শিশু হিসেবে বিবেচিত করা হবে। আসলে শিশুর ওজনটা নবজাতকের গর্ভকালীন অবস্থায় ধরে দিতে হবে।
স্বল্পজনের ওজনের নবজাতক মাতৃত্ব ও শিশু শাস্ত্রের জন্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হয়ে থাকে। শিশু মৃত্যুর অন্যতম কারণ হলো জন্মকালীন ওজন কম হলে শিশুর নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিবে। শিশুর বেশিরভাগ ধীরে ধীরে প্রোটিনের অভাবজনিত অপুষ্টির শিকার হতে পারে এবং এর সাথে নানা ধরনের সংক্রমণের রোগের কারণে এক বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই মারা যেতে পারে।
তাই স্বল্প ওজনের শিশুর জন্মের জন্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তার মায়ের অপুষ্টি থাকার কারণে হয়ে থাকে। তবে কিছুটা ব্যতিক্রমও হতে পারে যেমন ভ্রনের জিনগত সমস্যা, গর্ভফুলের সমস্যা ছাড়াও মায়ের পুষ্টির সাথে গর্ভধারণের সময়কাল ও নবজাতকের ওজনের সরাসরি কাজ করে থাকে।
কম ওজনের শিশুদের সমস্যা মূলত সময় হওয়ার আগেই জন্মগ্রহণ করা এবং ২৮ থেকে ৩৭ সপ্তাহের মধ্যে কোন শিশুর জন্ম নিলে যাকে সময় হওয়ার আগেই জন্মানো শিশু বলা হয়ে থাকে। গর্ভকালীন অবস্থায় শিশুর বৃদ্ধি ওজন ঠিক যদি থাকে, তারপরেও জন্মানোর জন্য শিশুটি নির্দিষ্ট অর্জনে অনেক সময় সমস্যা দেখা দেয়।
এতে শিশুর পরিচর্যা ঠিক মতো করলে দু-তিন বছরের মধ্যে শিশু ভালো হয়ে যাবে। আবার কিছু শিশুর গর্ভাবস্থায় স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে অনেক কম গর্ভাবস্থায় ভ্রনের ঠিকমতো বৃদ্ধি পায় না। তাছাড়া গর্ভবতীর বিভিন্ন ধরনের সমস্যা থাকতে পারে যেমন রক্তস্বল্পতা কম, বয়সে গর্ভধারণ করে ঘন ঘন গর্ভধারণ করা মায়ের দুর্বল শরীর বহু সন্তান জন্ম দেয়ার কারণে নবজাতকের ওজন কম হতে পারে।
তাছাড়া অশিক্ষা দারিদ্রতা নিম্ন মানের খাবার ও বাসস্থান অতিরিক্ত পরিশ্রম করলে, উচ্চ রক্তচাপ ধূমপান ম্যালেরিয়া কৃমি সংক্রমণের কারণেও এই সমস্যাগুলো দেখা দিতে পারে। তাছাড়া কম ওজনের শিশুদের জন্মের কিছুদিনের মধ্যেও প্রোটিনের অভাব দেখা যায়।
তার সঙ্গে নানা সংক্রমনের হওয়ার কারণে সৎ প্রয়োজন হতে পারে। তাই এই ফল প্রয়োজনের বাচ্চাদেরকে ওজন বাড়ানোর জন্য ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। এজন্য আপনাকে দ্রুত চিহ্নিত করতে হবে যে সমস্যাগুলো আপনার মাঝে আছে কিনা। যদি থাকে তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ মতে চলতে হবে।
জন্মের সময় শিশুর ওজন কম হলে করনীয়
জন্মের সময় শিশুর ওজন ঠিক রাখা প্রয়োজন তবে যদি কম হয়, তাহলে জন্মের সময় শিশুর ওজন কম হলে করনীয় সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। নিম্নে শিশুর ওজন কম হলে কি করতে হবে সে সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
ওজন কম যদি হয়ে থাকে সে ক্ষেত্রে দ্রুত মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো শুরু করতে হবে। তাতেই বাচ্চা অনেকটাই সুস্থ হবে।
শিশুর বুকের দুধ খাওয়ানোর ক্ষেত্রে যদি সমস্যা হয় সেক্ষেত্রের নলের সাহায্য হলেও মায়ের বুকের দুধ খাওয়াতে হবে কিন্তু তোলা দুধ বা বাজার থেকে যে কোন কেনা দুধ খাওয়ানো যাবে না। এতে শিশুর ক্ষতি হতে পারে।
স্বাভাবিক ওজনের শিশুর মত কম ওজনের নবজাতকের সময়সূচী মেনে তার টিকা দিতে হবে। ওজন কম বলে দেওয়া যাবে না, এতে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
এদের সংক্রমণ বেশি হয়ে থাকে তাই শিশুর পরিচর্যা ও পরিচ্ছন্নতা রাখতে হবে। কেউ বাইরে থেকে আসলে অবশ্যই তাকে পরিষ্কার হয়ে আসতে হবে এবং শিশুকে তারপরে ধরবে।
এসব শিশুর ঘন ঘন সংক্রমণ রক্তশূন্যতা বুদ্ধির বিকাশ দৃষ্টি ও শ্রবণ শক্তি কম হয়। প্রয়োজনে তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে ১২ থেকে ১৮ মাস বয়স পর্যন্ত এই ধরনের সমস্যাগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা লাগবে।
কোথায় কোন দিকে সমস্যা হচ্ছে কিনা সেদিকে নজর রাখা প্রয়োজন। তবে যথাযথ পুষ্টি ও যত্ন যদি নেওয়া যায় সে ক্ষেত্রে নবজাতকের মতই এরা দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকবে।
কমপক্ষে ১২ মাস বয়স পর্যন্ত এই সকল শিশুদেরকে বাড়তি ভিটামিন ডি ক্যালসিয়াম ও আয়রন এই ধরনের সাপ্লিমেন্ট দিতে হবে।
গর্ভাবস্থায় বাচ্চার ওজন কম হওয়ার কারণ
প্রত্যেক গর্ভবতীর জানা প্রয়োজন, গর্ভাবস্থায় বাচ্চার ওজন কম হওয়ার কারণ সম্পর্কে গর্ভাবস্থায় শিশুর ওজন কম যেসব কারণে তা নিম্নে আলোচনা করা হলো।
গর্ভাবস্থায় পর্যাপ্ত পরিমাণ সুষম খাবার খেতে হবে, তা না হলে বাচ্চার ওজন কম হবে। তাই প্রতিটা গর্ভবতীর মাকে পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। গবেষণায় দেখা গেছে একটি এলাকার অন্তঃসত্ত্ব নারীদের উপর গবেষণা করা হয়েছে, শহরের তুলনায় গ্রামের পরিবারের অন্তঃসত্ত্ব নারীরা প্রাণিজ, আমিষ জিংক ও স্নেহ না খাওয়ার কারণে শিশুর ওজন কম হয়।
গর্ভাবস্থায় সুষম খাবার না খাওয়ার কারণে গর্ভের শিশুর উপর প্রভাব ফেলতে পারে। এতে শিশু গায়ে খর্বকায় ও কম বুদ্ধি সম্পন্ন হতে পারে। দারিদ্র অসচেতনতার কারণে পুষ্টির অভাবে গর্ভকালীন মায়েদের ওজন কম হয় যার কারণে শিশুর ওজন কম হতে থাকে।
এতে সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে, এই সকল শিশুরা পরিণত বয়স হলেও পুষ্টির অভাব ঢুকতে থাকে, পরে তখন সে যদি আবার মা হয় সে ক্ষেত্রেও তার সন্তানও অপুষ্টি নিয়ে জন্ম নেবে।
গবেষণায় দেখা গেছে যে পুষ্টির ক্ষেত্রে অন্তঃসত্ত্বা নারীদের মধ্যে ১৮৮৩ জনের উপর গবেষণা করা হয়, তাতে দেখা গেছে ৫৪% অন্তঃসত্ত্বা নারীর গর্ভকালে যতটুকু ওজন বাড়ানো উচিত তা বৃদ্ধি পায়নি। প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত ওজনের অন্তঃসত্তা নারীদের সিজারিয়ান সেকশন শিশু জন্ম নেয়। অতিরিক্ত ওজনের শিশু জন্ম এবং অপরিনিত শিশু জন্ম দুটোই সমস্যা এবং ঝুঁকি আছে।
শহরের তুলনায় গ্রামের নিম্ন মান মানুষের নারীদের সাধারণত প্রাণীর আমিষ জিংক স্নেহ জাতীয় খাবার খাওয়া হয় খুবই কম। তবে শহরের অন্তঃসত্ত্বা নারীরা গ্রামের তুলনায় একটু ভাত বেশি খেয়ে থাকে। শহরের অন্তঃসত্তা নারীরা ২৬ শতাংশ ক্যালসিয়াম ৪২ শতাংশ ৩১ শতাংশ ভিটামিন এ যুক্ত খাবার খেয়ে থাকে।
একজন নারী দিনে ১৯০০ কিলোক্যালরি সমান খাবার খেতে হবে। অন্তঃসত্ত্বা নারীদের ৩০০ কিলোক্যালোরি খাবার খাওয়া লাগবে। ভাত কম খেতে হবে এবং পুষ্টিকর খাবার বেশি খেতে হবে। অন্তঃসত্ত্বা নারীদের পরিবারে অনেকেই সদস্যরা কিছু ভুল বুঝে থাকে যেমন তারা মনে করে যে ওজন কম হলে গর্ভের শিশু বাড়তে থাকবে। এতে সহজে স্বাভাবিক প্রসব হবে।
কি খেলে গর্ভের বাচ্চার ওজন বাড়ে
ইতোমধ্যে আমরা জেনেছি যে, জন্মকালীন স্বল্প ওজনের পরিণতি সম্পর্কে। এখন বাচ্চার ওজন বাড়ার সম্পর্কে যে খাবারগুলো খাওয়া প্রয়োজন। একজন গর্ভবতী মায়ের তা নিম্ন আলোচনা করা হলো।
প্রোটিন যুক্ত খাবারঃ প্রোটিন শিশুর মাংসপেশি ও কোষ গঠনে সাহায্য করে, গর্ভাবস্থায় প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে যেমন মাছ, মাংস দুধ ডিম পনির ইত্যাদি এগুলো খাবার প্রয়োজন। এতে প্রচুর প্রোটিন পাওয়া যায়, এতে বাচ্চার বৃদ্ধি পাবে এবং ওজন ভালো হবে ওজন বৃদ্ধি পাবে।
ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডঃ ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড খাওয়ার কারণে শিশুর মস্তিষ্ক বৃদ্ধি পাবে এবং নার্ভাস সিস্টেম উন্নত করতে সাহায্য করবে। যেমন স্যামন, সারডিন এবং ম্যাকারেল জাতীয় মাছের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ফ্যাটি এসিড থাকে, ফ্লাক্সসিডস, চিয়া সিডস এবং আখরোট এর মধ্যে উৎস ওমেগা-৩ থাকে। তাই এগুলো গর্ভবতী মায়েরা খেতে পারবেন।
আয়রন যুক্ত খাবারঃ একজন গর্ভবতী মায়ের এ সময় প্রচুর পরিমাণে আয়রন যুক্ত খাবার খেতে হবে। কারণ এই আয়রন যুক্ত খাবার খাওয়ার কারণে গর্ভস্থ শিশুর রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পাবে এবং তার ওজনও বৃদ্ধি পাবে। এজন্য আপনি লাল মাংস, পালং শাক বিট এবং লেনটিনে আয়রনের প্রচুর পরিমাণ আছে।
দুধ ও দুগ্ধ জাত খাবারঃ দুধ ও দুগ্ধ জাত খাবার এর মধ্যে যেমন দই, পনির এর মাঝে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম থাকে। এইগুলো খাওয়ার কারণে শিশুর হাড় গঠনের সাহায্য করে, পাশাপাশি ওজন উচ্চতা শারীরিক গঠন ঠিক করতে পারে।
ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণের জন্য আপনি আরো খেতে পারেন ডিমের কুসুম, কলিজা কমলা কচু শাক ছোট মাছ এগুলো বেশি বেশি খাবেন। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ মতে সাপ্লিমেন্ট খেতে পারেন ক্যালসিয়াম। যদি ভালোভাবে কাজ করতে না পারে সে ক্ষেত্রে ভিটামিন ডি রাখা যাবে না। এজন্য প্রতিদিন শরীরে সূর্যের আলো লাগানো প্রয়োজন।
ভিটামিন সি যুক্ত খাবারঃ ভিটামিন সি শরীরের আয়রন শোষণ করতে সাহায্য করে। যা শিশুর স্বাস্থ্যের ওজন বৃদ্ধি পেতে পারে। এজন্য আপনি কমলা স্ট্রবেরি বেলপেপার, ব্রুকলি এই ধরনের খাবারগুলো খেতে পারেন। এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি থাকে।
ফল এবং শাকসবজিঃ ফল ও সবজির মধ্যে থাকে ভিটামিন মিনারেল ও আঁশ যা শিশুর বৃদ্ধি এবং বিকাশে সাহায্য করতে পারে। এজন্য আপনি খেতে পারেন কলা, আপেল পাকা পিয়ারা এই ধরনের খাবারগুলো খেতে পারবেন। তাছাড়া ভিটামিন সি জাতীয় ফলগুলো খেতে পারবেন এবং বেশি বেশি তাজা শাক-সবজি খাবেন এতে অনেক ভিটামিন পাবেন।
পানিঃ একজন অন্তঃসত্তা মায়ের পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করা লাগবে, পাশাপাশি শরীরের পুষ্টি শোষণ ঠিক থাকবে। তাই প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ গ্লাস পানি পান করা লাগবে।
নবজাতক শিশুর ওজন বৃদ্ধির উপায়
যে সকল নবজাতকের ওজন কম তাদের বৃদ্ধি করার প্রয়োজন। তাই নবজাতক শিশুর ওজন বৃদ্ধির উপায় সম্পর্কে জানা প্রয়োজন, নিম্নে আলোচনা করা হলো;
খিদের সংকেত লক্ষ করাঃ নবজাতক যখন ক্ষুধার্ত হয় তখন সে কিছু বোঝানোর চেষ্টা করে যেমন আঙ্গুল চোষা, ছটফট করা, কান্না করা মাথা নাড়ানো এই ধরনের কাজগুলো করতে থাকে। এই বিষয়ে বেশ নজর দিতে হবে, নবজাতকের মধ্যে এই ধরনের লক্ষণগুলো যদি দেখতে পান।
সে ক্ষেত্রে অবশ্যই খাবার প্রস্তুত করতে হবে এবং তাকে খাওয়ানো শুরু করতে হবে। বাচ্চার যদি খিদে লাগে তখন যদি খাওয়াতে পারেন, তাহলে ওজন বাড়তে থাকবে। অনেকে ভাবে যে শিশু কাঁদবে তারপরে খাওয়াবেন।
এটা আসলে ভুল প্রক্রিয়া, কান্না করা অবধি অপেক্ষা করা ঠিক নয়। তাছাড়া শিশু ক্ষুধার্ত থাকলে তাকে খাওয়াবার চেষ্টা করা বাদ দিয়ে তার সাথে খেলা করা যাবে না। এতে তার ক্ষুধার ইচ্ছাটা আবার রুচিটা কমতে থাকবে।
বুকের দুধঃ নবজাতক বাচ্চাদের শুধু মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো উচিত, কমপক্ষে ছয় মাস বয়স হওয়া পর্যন্ত অনেক চিকিৎসকরা পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তবে এই ক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হবে বুকে পর্যাপ্ত পরিমাণ দুধ আছে কিনা বা বৃদ্ধি পাচ্ছে কিনা। তাছাড়া বুকের দুধ বাড়ানোর জন্য চেষ্টা করতে হবে।
চাহিদা অনুযায়ী খাবার খাওয়ানোঃ নবজাতকের প্রতিদিন দুই থেকে তিন ঘন্টা পর পর খাওয়ানো প্রয়োজন। এতে শিশুর খাবারের রুচি থাকবে, নবজাতকের ওজন বাড়ানোর জন্য যখন বাচ্চার ক্ষুধা লাগবে তখনই বুকের দুধ খাওয়াতে হবে।
ঘুমন্ত অবস্থায় শিশুর সাথে আচরণঃ অনেক শিশু আছে যারা খাওয়ার জন্য কোন রকমের সংকেত দিতে চায় না। শুধু ঘুমায় আবার ঘুম থেকে উঠেও খেতে চায় না বা ঘুম থেকে উঠতেও চায় না। এই ধরনের শিশু মা-বাবাকে নিজের দায়িত্বে উঠিয়ে শিশুকে খাওয়াতে হবে। তা না হলে ওজন বৃদ্ধি করতে পারবেন না।
নবজাতকের ওজন বৃদ্ধির জন্য বাবা-মায়ের বেশি সচেতন হতে হবে। কেননা একমাত্র সন্তানের ভালো-মন্দ তারাই বুঝে থাকে। তাই উপরোক্ত এই বিষয়গুলো যদি আপনি মেনে চলেন তাহলে আপনার শিশুর ওজন বৃদ্ধি পেতে থাকবে।
বাচ্চার ওজন বৃদ্ধির খাবার
ইতিপূর্বে আমরা জেনেছি জন্মকালীন স্বল্প ওজনের পরিণতি সম্পর্কে। এখন শিশুর ওজন বৃদ্ধি কিভাবে পাওয়া যায়। সে ধরনের খাবার সম্পর্কে জানা প্রয়োজন নিম্নে তা উল্লেখ করা হলো,
প্রতিটা শিশুর একটি আদর্শ ওজন থাকে আর অতিরিক্ত ওজন যেমন ক্ষতিকর আবার স্বাভাবিকের চেয়ে যদি কম ওজন হয়। সেটাও ক্ষতিকর তাই ওজন বৃদ্ধির জন্য অনেক ক্ষেত্রে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে।
সেজন্য ওজন বৃদ্ধি পায় না, কারণ ছোটবেলার প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকার কারণে ছোট ছোট রোগগুলো দেখা দিতে পারে। ওজন বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ক্ষতি হতে পারে, আরো কম ওজনের শিশুদেরকে প্রয়োজনে পুষ্টিকর খাবার এবং সঠিক জীবন যাপন করানো প্রয়োজন।
শিশুরা সাধারণত মুখরাচক খাবার পছন্দ করে থাকে, আর এই ধরনের খাবার খাওয়ার কারণে বাচ্চারা খাওয়া অন্য কোন খাবার খেতে চাইবে না। আর মুখ খাবার গুলোর মধ্যে যেমন জ্যাঙ্ক ফুড ভাজা ভুজি চকলেট পেস্ট্রির এই ধরনের খাবারের দিকে নজর দিতে হবে। এসব খাবারের প্রচুর পরিমাণ ক্যালরি থাকলেও পুষ্টি থাকে না। তাই আপনার শিশুর পুষ্টির দিকে নজর রাখতে হবে।
দুধঃ শিশুর ওজন বৃদ্ধির ক্ষেত্রে আপনার শিশুকে দুধ খাওয়াতে পারেন। এতে অনেক উপকার পাওয়া যাবে। কারণ এর মধ্যে প্রাকৃতিক প্রোটিন কার্বোহাইড্রেট এগুলো থাকে। যার কারণে শিশুকে যদি প্রতিদিন দুই গ্লাস দুধ খাওয়াতে পারেন। তাছাড়া দুধের সাথে দুধের সর ক্রিম খাওয়ানো যেতে পারে। এতে আপনার শিশুর ওজন বৃদ্ধি পাবে।
কলাঃ কলার মধ্যে থাকে ফাইবার, পটাশিয়াম ভিটামিন সি ভিটামিন বি-৬। তাছাড়া এইগুলো পুষ্টি উপাদান শিশুর খাবার কারণে তার পুষ্টি চাহিদা পূরণ করবে। শিশুর ওজন বৃদ্ধি পাবে তাছাড়া কলা দিয়ে আপনি মিল্কশেক তৈরি করতে পারেন। এটা যদি খাওয়াতে পারেন সেইক্ষেত্রে আপনার শিশুর ওজন বৃদ্ধি করবে।
ডিমঃ ডিমের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন আছে আপনার শিশুকে যদি ওজন বৃদ্ধি করতে চান, সে ক্ষেত্রে প্রোটিনের দরকার। এজন্য প্রতিদিন আপনার শিশুকে শরীরে প্রোটিন ভিটামিন মিনারেল সকল চাহিদা পূরণ করার জন্য ডিম খাওয়াতে পারেন।
প্রায় শিশুই ডিম খেতে পছন্দ করে, তাই তাদেরকে প্রতিদিন একটি করে সিদ্ধ ডিম খাওয়ানোর চেষ্টা করবেন। এতে ওজন বৃদ্ধি পাবে অথবা ডিমের পথ অমলেট করেও খাওয়ানো যেতে পারে।
আলুঃ শিশুর ওজন বাড়ানোর ক্ষেত্রে প্রতিদিন খাদ্য তালিকা আপনার ৪০ ভাগ। কার্বোহাইড্রেট রাখা প্রয়োজন সবচেয়ে ভালো বেশি থাকে হলো আলুতে। তাই আপনি তাছাড়া আলু মধ্যে থাকে এমাইনো এসিড যা শিশুর ওজন বৃদ্ধি করতে পারবে।
মুরগির মাংসঃ প্রোটিনের জন্য মুরগির মাংস খাওয়ানো যেতে পারে, এতে শিশুর পেশী মজবুত করবে এবং ওজন বৃদ্ধি পাবে। তাই প্রতিদিন খাবার এর মধ্যে আপনি মুরগির মাংস রাখতে পারেন। সপ্তাহে তিন দিন থেকে চারদিন খাওয়ানো যেতে পারে।
লেখকের শেষ কথা
পরিশেষে বলা যায় যে জন্মকালীন শিশুর ওজন যদি কম হয়, সে ক্ষেত্রে অনেক সমস্যা দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে এই সকল বাচ্চাদের নিউমোনিয়া বেশি হয়ে থাকে। এতে পিতা-মাতার অনেক সমস্যা হয়। তাই জন্মকালীন স্বল্প ওজনের পরিণতি অনেক সময় শিশুকে মৃত্যুর দিকে নিয়ে যায়। এজন্য এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। পোস্টটি ভালো লাগলে আপনার বন্ধু-বান্ধবের নিকট শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ
এম আর মাহমুদ ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url