মহিলাদের চুল পড়া বন্ধ করার ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে জানুন
অনেক মহিলা চুল পড়া নিয়ে টেনশনে থাকে তাই অনেকে জানতে চায়, মহিলাদের চুল পড়া বন্ধ করার ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে। তাই তাদের জানা প্রয়োজন। চলুন, চুল পড়া বন্ধ করতে ঘরোয়া পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক।
অধিকাংশ নারী তারা চুলের যত্ন নেয় না এবং চুলের পুষ্টি সম্পর্কে সচেতন নয়। যার কারণে তাদের চুল পড়তে থাকে, তারা বুঝতে পারে না। তাই মহিলাদের চুল পড়া বন্ধ করার ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে জানতে আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
পোস্টসূচিপত্রঃমহিলাদের চুল পড়া বন্ধ করার ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে জানুন
অতিরিক্ত চুল পড়ার কারণ
অনেকের প্রচুর পরিমাণে চুল পড়তে থাকে। হয়তো জানে না কি জন্য চুল পড়ছে। তাই অতিরিক্ত চুল পড়ার কারণ গুলো জানা প্রয়োজন। নিম্নে কি কারণে চুল পড়ছে সে সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
চুল পড়ার সমস্যায় অনেকেই ভূগে থাকে, একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে প্রতিদিন ৯০ থেকে ১০০ টি চুল পড়া স্বাভাবিক বিষয়। কখনো ঘুমের অভাব বা অতিরিক্ত চিন্তাভাবনার কারণে হয়তো চুল পড়ে থাকে। আবার অনেকের বংশগত কারণেও চুল পড়ে থাকে।
তাছাড়া মেয়েদের মানসিক চাপ, চুলে প্রসাধনী ব্যবহার করা, মাথার ত্বকের সংক্রমণ, হরমোনের প্রভাব, ফাইব্রয়েড, থাইরয়েড, ডায়াবেটিস, ক্যান্সারের চিকিৎসা এই ধরনের সমস্যাগুলো দেখা দিলে সাধারণত মাথার চুল পড়তে পারে। তবে ৭টি কারণে সাধারণত মানুষের বেশি চুল পড়ে থাকে। চলুন, সে ৭টি কারণ সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
বংশগত কারণঃ বংশগত কারণে চুল পড়ে থাকে, মূলত এটা একটি জেনেটিক সমস্যা। বিশেষ করে পুরুষদের ক্ষেত্রে মাথার উপরের অংশ থেকে চুল কমে যায় এবং নারীদের ক্ষেত্রে সাধারণত মাথার চুল পাতলা হয়ে থাকে।
বয়স বাড়ার সাথে সাথে আরো বেশি চুল পড়তে থাকে। তাছাড়া অনেক নারীর হরমোনের সমস্যার কারণেও এই ধরনের সমস্যা হতে পারে। এছাড়া বয়ঃসন্ধিকালের জন্য অথবা মেনোপজের সময়ও হতে পারে।
অধিকাংশ নারী চুল স্ট্রেট করার জন্য তাপ দিয়ে থাকে, তাছাড়া দৈনিক চুলে যদি হিট দেওয়া হয়। সে কারণে চুলের ক্যারাটিনের ক্ষতি হয়ে থাকে, যার কারণে চুল ভঙ্গুর হতে পারে।
চুল সাধারণত খুব বেশি করে আঁটসাট করে বাধার কারণেও চুলের ফলিকলগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যার কারণে চুল পড়া সমস্যা আরো বৃদ্ধি পাবে। কখনো কখনো এটা ট্রাকশন এলোপাসিয়াও হয়ে থাকে। এর কারণেও নতুন চুল গজাতে পারে না, এজন্য চুলের স্টাইল পরিবর্তন করা লাগবে।
আবার অনেক বেশি যদি শ্যাম্পু করেন সে ক্ষেত্রে চুলের ক্ষতি হতে পারে। এর কারণে মাথার ত্বকে তৈলাক্ত বেশি হয় এজন্য চুল পড়তে পারে।
শুধুমাত্র চুল আঁচড়ানো যদি দরকার হয়, তাহলে আঁচড়াবেন। তাছাড়া অতিরিক্ত কখনোই চুল আঁচড়ানো ঠিক নয়, ভেজা চুলের জন্য চওড়া চিরুনি এবং শুষ্ক চুলের জন্য ব্রিসলস ব্যবহার করতে পারেন।
নিয়মিত চুল ট্রিম করতে পারেন, ৬ থেকে ৮ সপ্তাহে অন্তর অন্তর ট্রিম করবেন। এতে চুল বড় হবে তাছাড়া মাঝে মাঝে চুল হালকা ছাঁটাই করা লাগবে, তাছাড়া চুল বড় হবে না।
সালফেট, প্যারাবেন্স, অ্যালকোহল যুক্ত চুলে পণ্য ব্যবহার করা যাবে না। এ সকল প্রসাধনী ব্যবহার করার কারণে অধিকাংশ মানুষের চুল-সুষ্ক ও ভেঙ্গে যায়। তাই অর্গানিক পণ্য ব্যবহার করা চুলের যত্নের জন্য ভালো হবে।
বর্তমানে কর্মব্যস্ত থাকার কারণে সবাই দুশ্চিন্তায় থাকে, এটা স্ট্রেস বাড়তে থাকে। আর স্ট্রেস বাড়ার কারণে কর্টিসল হরমোন নিঃসরণ হয়। এর কারণে প্রদাহ সৃষ্টি হতে পারে, চুলও পড়তে থাকে।
ঔষধঃ কিছু ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার কারণে চুল পড়তে পারে। এ জাতীয় ওষুধের উদাহরণ গুলোর মধ্যে হতে পারে, নির্দিষ্ট ধরনের ওষুধ এন্টিফাঙ্গাল, ডিপ্রেশনস, বিটা ব্লকার, কোলেস্টেরল কমানোর জন্য যে সকল ওষুধ অথবা হরমোন যুক্ত ঔষধ বা থাইরয়েড ওষুধ খাওয়ার জন্য এই সমস্যাগুলো চুল পড়তে পারে।
জন্মনিয়ন্ত্রণের পিলঃ জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল ব্যবহার করার কারণে চুল পড়তে পারে। জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল খেতে চাইলে এমন ধরনের পিল বেছে নেওয়া জরুরী। যার মধ্যে কম অ্যাস্ট্রোজেন আছে, এটি চুল পড়া ঝুঁকি কমাতে পারবে।
জন্মনিয়ন্ত্রণের অন্যান্য রূপ বা হরমোন গুলোকে প্রবাহিত করতে থাকে। যেমন ইমপ্লান্ট ঘটাতে পারে, যাদের জেনেটিক চুল পড়ার সম্ভাবনা আছে। তাদের নন হরমোনাল ধরনের জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল খেতে হবে।
পুষ্টির ঘাটতিঃ বায়োটিনের অপর্যাপ্ত মাত্রার কারণে চুল ভেঙে যেতে পারে এবং পড়ে যায়। আপনি যদি পর্যাপ্ত ভিটামিন সি সমৃদ্ধ এবং শাকসবজি না খেয়ে থাকেন। তবে শরীরের জন্য আয়রন শোষণ করা কঠিন হয়ে যাবে, আয়রনের ঘাটতি চুল পড়ার ক্ষেত্রে বৃদ্ধি পেতে পারে এবং সম্পূরক খাবার খেতে হবে, তাহলে চুল পড়া বন্ধ হবে।
দাদ সমস্যাঃ দাদ একটি ছত্রাক সংক্রমণ যা চুল পড়ার কারণ ধরা যেতে পারে। টিনিয়া ক্যাপিটিস মাথার ত্বকে দাদ হলে চুল পড়ার কারণ হতে পারে। এর সম্ভাব্য লক্ষণ গুলোর মধ্যে হলো মাথার ত্বকে যুক্ত এবং রিংয়ের মতো ফোসকা, চুলকানি দেখা যেতে পারে।
মহিলাদের চুল পড়া বন্ধ করার ঘরোয়া উপায়
সাধারণত মহিলাদের প্রচুর পরিমাণে চুল পড়তে পারে। তাই মহিলাদের চুল পড়া বন্ধ করার ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে জেনে নেওয়া প্রয়োজন। নিম্নে কেন অতিরিক্ত চুল পড়ে সে সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো।
আমাদের মাথায় প্রচুর পরিমাণে চুল থাকে, যদি দিনে ৫০ থেকে ১০০ টার মত চুল পড়ে যায়। এতে তেমন একটা সমস্যা নাই কিন্তু এর থেকে যদি বেশি চুল পড়ে। তাহলে এই বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করা যেতে পারে, এক্ষেত্রে যত শীঘ্রই সম্ভব প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া লাগবে। তা না হলে মাথা ফাঁকা হয়ে যেতে পারে।
বিভিন্ন কারণে চুল পড়তে পারে যেমন পরিবেশ দূষণ, বয়স, স্মোকিং ব্যালেন্স জেনেটিক কারণ। ইনফেকশন হিয়ার প্রোডাক্ট এর মাত্রার অধিকার ব্যবহার এবং কিছু ওষুধ চুল পড়ার কারণ। উপরে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে, চলুন জেনে নেওয়া যাক। এই চুল পড়া বন্ধের জন্য ঘরোয়া উপায় গুলো সম্পর্কে জানা যাক।
দইঃ ২ চামচের সাথে ১ চামচ মধু এবং এক চামচ লেবুর রশ মিশিয়ে নিতে হবে। যখন দেখবেন প্রতিটি উপাদান ঠিকমতো মিশে যাবে। আর তখন মিশ্রণটা ভালো করে চুলে লাগাবেন কমপক্ষে ৩০ মিনিট রাখতে হবে। ৩০ মিনিট পর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এভাবে সপ্তাহে একবার ব্যবহার করলে আপনার চুল পড়া বন্ধ কম করবে।
নারিকেল দুধঃ এক কাপ নারিকেল দুধ আর নিবেন এবং ধীরে ধীরে স্ক্যাল্পে লাগাবেন। তারপর একটা টাওয়াল দিয়ে মাথাটা বেঁধে রাখবেন। ২০ মিনিটের মত বেধে রাখার পরে চুল ধুয়ে ফেলবেন, এভাবে সপ্তাহে কয়েকবার করলেই দেখবেন চুল পড়া কমে যাবে। নারিকেল দুধের মধ্যে থাকে ভিটামিন ই যা চুলের মশ্চারাইজার করতে ঘাটতি দূর করবে। যার কারণে চুল পড়ার হার কমে যায়।
পেঁয়াজের রসঃ রসের মধ্যে থাকে সালফার হেয়ার ফলিক্যালস রক্ত চলাচল বাড়িয়ে দিতে পারে। এতে চুল পড়াও বন্ধ করতে সাহায্য করবে। তাছাড়া পিয়াজ রসের মধ্যে আছে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল প্রপার্টিজ, যা স্কাল্পে থাকা জীবানু গুলো মেরে ফেলতে পারবে। ইনফেকশন এর সঙ্গে চুল পড়ার হারও কমে যাবে।
যেভাবে লাগাতে পারেন তাহলে একটা পিয়াজ থেকে রস বের করে নিবেন। তারপরে সেই রস সরাসরি মাথায় লাগাতে পারেন। ৩০ মিনিট রাখার পরে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার এইভাবে পরিচর্যা করলে ভালো ফলাফল পাবেন।
বিটরুটঃ এর মধ্যে থাকে পটাশিয়াম, প্রোটিন, ভিটামিন বি এবং সি যা চুল পড়া কমাতে সাহায্য করবে। এক্ষেত্রে পরিমাণ মতো বিটরুট পাতা নেওয়া লাগবে, পানিতে সিদ্ধ করতে হবে। এরপরে পাতাগুলো গুড়ো করে মেথির সাথে মিশাতে হবে এবং লাগাতে হবে।
স্কালপে লাগাবেন ২০ মিনিট রাখার পরে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলবেন। এতে আপনি চুল পড়া কমে যাবে সপ্তাহে তিনবার এভাবে ব্যবহার করলে আপনার চুল পড়া অনেকটা বন্ধ হবে।
মেথিঃ চুল পড়া বন্ধ করতে মেথি ভালো কাজ করে থাকে এবং চুল বৃদ্ধি করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো উপকার করে। যখন দেখবেন আপনার চুল পড়ার হার খুবই বেড়ে গেছে। তখন অল্প করে মেথি নিয়ে এক গ্লাস পানিতে এক রাত ভিজিয়ে রাখতে হবে।
বীজগুলো বেটে নিয়ে একটি পেস্ট বানাতে পারেন। সেই পেয়াজ টা ভালো করে মাথায় লাগাবেন। ৪০ মিনিট রেখে দেওয়ার পর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এভাবে ১ মাস প্রতিদিন মাথায় লাগাতে পারেন, এতে চুল পড়া কমবে সেই সাথে চুল ঘন হয়ে উঠবে।
নিম পাতাঃ এটা কি প্রাকৃতিক এন্টি ব্যাকটেরিয়াল প্রপার্টিজ, যা চুলের গোড়ায় বিভিন্ন ধরনের সংক্রমনের হাত থেকে রক্ষা করবে। আবার খুশকি দূর করতেও সাহায্য করবে, তাছাড়া চুল কে বিভিন্ন রোগের হাত থেকে মুক্তি দেবে।
এটা আপনার চুল পড়া এমনি অনেকটাই কমে যাবে, যখন দেখবেন বেশি মাত্রা হেয়ার ফল হচ্ছে তখনই ১০ থেকে ১২ টা নিমপাতা নিয়ে পানিতে ফুটাতে হবে। এরপর সেই পানিটুকু দিয়ে চুল ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে, এভাবে করলে আপনার উপকার পাবেন।
তেল মাসাজঃ চুল পড়া বন্ধ করতে প্রতিদিন আপনার তেল মাসাজ করতে হবে। এভাবে যদি আপনি তেল মাসাজ করতে থাকেন, তাহলে স্কাল্পের রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পাবে। এতে চুল পড়া চুলের গোড়া শক্ত হবে। চুল গোড়া মজবুত হয়ে গেলে, চুল পড়া স্বাভাবিকভাবে বন্ধ হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে নারিকেলের তেল, বাদামের তেল, অলিভ অয়েল অথবা আমলকির তেল ব্যবহার করা যেতে পারে।
অ্যালোভেরাঃ অ্যালোভেরার মধ্যে আছে এনজাইম যা চুলের বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। ফলে চুল পড়ার বাধার ক্ষেত্রেও সাহায্য করে থাকে এবং মাথা ফাঁকা হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও কম থাকে। এর মধ্যে অ্যালকালাইন প্রপার্টিজ যা স্কেল পিএইচ ঠিক রাখবে। এতে চুল পড়া কমে যাবে, এখন আসুন এই অ্যালোভেরা জেল আপনি কিভাবে ব্যবহার করবেন।
পরিমাণ মতো এলোভেরা জেল নিয়ে স্কাল্প লাগাতে হবে। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে হালকা গরম পানি দিয়ে মাথাটা ধুয়ে ফেলবেন। দেখবেন ভালো উপকার পাবেন, সপ্তাহে তিন থেকে চার বার এইভাবে এলোভেরা জেল মাথায় লাগালে উপকার পাবেন।
আমলকিঃ চুল পড়া বন্ধ করার জন্য আমলকি ব্যবহার করতে পারেন। কারণ এর মধ্যে থাকে ভিটামিন সি, যা চুলের পুষ্টি বৃদ্ধি করবে। সেই সাথে স্কাল্পের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটাবে। এতে চুল পড়া অনেকটাই কমে যাবে। ভিটামিন সি ঘাটতি হলে চুল পড়তে পারে, তাই ভিটামিন সি এর যেন ঘাটতি না হয়।
সেদিকে আপনার খেয়াল রাখতে হবে। এক্ষেত্রে প্রথমে ১ চামচ আমলকির রস নিবেন এর সাথে এক চামচ লেবুর রস নিতে হবে। এই দুটো মিশ্রণ মিশিয়ে নেওয়ার পরে ভালো করে চুলে লাগাবেন। সারারাত রেখে দিতে হবে পরের দিন সকালবেলা ধুয়ে ফেলবেন, এভাবে কিছুদিন ব্যবহার করলে উপকার পাবেন।
ডিমঃ ডিমের মধ্যে থাকে অ্যামাইনো এসিড, যা ডায়েটের অংশ হিসেবে ডিম খাওয়ার পাশাপাশি আপনি মাথায় ব্যবহার করতে পারেন। তাছাড়া এক ধরনের ফ্যাটি এসিড, ল্যাসিথিনের উপস্থিতির কারণে চুল পড়া বন্ধ হবে।
ডিমের কুসুম পানিতে দ্রবনীয় পেপটাইপ থাকে যা চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে। ডিমে থাকা ফ্যাটি এসিড ভাঙ্গা জনিত চুল পড়া বন্ধ হবে। ডিমের পেস্ট তৈরির জন্য ডিমের সাদা অংশ সাথে এক চামচ অলিভ অয়েল নেবেন। মিশ্রণটি মিশানোর পরে চুলে লাগাবেন, শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলবেন।
অতিরিক্ত চুল পড়া বন্ধ করার উপায়
বিভিন্ন কারণে অতিরিক্ত চুল পড়তে পারে, সেই কারণগুলো আপনাকে নির্দিষ্ট করে সেবা নিতে হবে। তাই অতিরিক্ত চুল পড়া বন্ধ করার উপায় সম্পর্কে জানলে আপনার চুল পড়া সহজে বন্ধ হবে। নিম্নে এ বিষয়ে আলোচনা করা হলো,
বংশগত কারণ ছাড়াও খাদ্য অভ্যাস বা জীবন যাপনের প্রভাবের কারণে চুল পড়ে থাকে। তাই বেশি চুল পড়লে নিজের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। চলুন, অতিরিক্ত চুল পড়লে কি করবেন সে সম্পর্কে জানা যাক।
কন্ডিশনারঃ ভালো মানের কন্ডিশনার চুলের জন্য উপকার করে থাকে। এর মধ্যে থাকে অ্যামাইনো এসিড যা আপনার চুলকে মসৃণ করবে এবং চুল পড়া বন্ধ করবে।
শ্যাম্পুঃ চুলের যত্নের জন্য বা মাথার ত্বকের ধরন বুঝে সে অনুযায়ী সঠিক শ্যাম্পু আপনাকে বেছে নিতে হবে এবং মাথার ত্বকের চুল পরিষ্কার করতে হবে। সেই ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ধোয়ার কারণে চুল পড়তে পারে।
আবার মাথার ত্বক যদি তৈলাক্ত হয় সে ক্ষেত্রে কমপক্ষে সপ্তাহে তিনবার পরিষ্কার করতে হবে। অতিরিক্ত রাসায়নিক উপাদান শ্যাম্পু যেমন সালফেট, প্যারাবেন ও সিলিকন চুলকে রুক্ষ এবং ভঙ্গরতা করতে পারে।
খাদ্য অভ্যাস ও শরীরচর্চাঃ যত ভালো পণ্যই আপনি ব্যবহার করেন না কেন, আপনার খাদ্য অভ্যাস ঠিক না থাকলে চুল পড়তেই থাকবে। এতে কোন কাজ হবে না, তাই শরীরচর্চার পাশাপাশি আপনাকে অবশ্যই খাদ্যের দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন ও লৌহ যে খাবারগুলোতে রয়েছে, সেগুলো প্রতিদিন খেলে চুলের পুষ্টি বৃদ্ধি পাবে। শরীরচর্চার ক্ষেত্রে ব্যায়াম করা যেতে পারে এতে আপনার চুল পড়া অনেকটাই কমে যাবে, বিশেষ করে যোগ ব্যায়াম করা যেতে পারে।
রাসায়নিক উপাদান ব্যবহারঃ ট্রেড করা রং করা ইত্যাদি চুলের ক্ষতি হতে পারে। যদি কোন কারনে চুলে তাপ দেয়ার প্রয়োজন হয়। সে ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন তাপমাত্র প্রয়োগ করা লাগবে। তবে এর আগে অবশ্যই সুরক্ষার স্তর তৈরি করতে হবে। এজন্য লিভ ইন কন্ডিশনার ব্যবহার করা যেতে পারে। আর এই কাজ শেষ করেই প্রোটেকটিভ স্প্রে ব্যবহার করা লাগবে।
নিয়মিত চুল ছাটাঃ চুলের নিচের অংশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে থাকে, যদি ক্ষতিগ্রস্ত চুল দেখতে পান সে ক্ষেত্রে এটা না কেটে দেন, তাহলে আগা ফাটার সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই চুল ছাটা খুবই জরুরী বিষয়।
তেল ব্যবহারঃ মাথার ত্বকের রক্ত সঞ্চালন বাড়ানোর জন্য অবশ্যই তেল ব্যবহার করা লাগবে। আপনার মাথার ত্বকের জন্য তেল দিয়ে সপ্তাহে একবার মালিশ করতে পারেন। শাওয়ার ক্যাপ ব্যবহার করতে পারেন, তারপর হালকা শ্যাম্পু দিয়ে ফেলবেন।
চুল পড়া বন্ধ করার ভিটামিন
ইতোমধ্যে আমরা জেনেছি মহিলাদের চুল পড়া বন্ধ করার ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে। এখন জানবো চুল পড়ার জন্য ভিটামিন দায়ী কিনা, বিশেষ করে ভিটামিনের অভাবেও হতে পারে। তাই ভিটামিন সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। চলুন, সে সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
ডিমঃ চুলের যত্নে করার জন্য আপনি ডিম খেতে পারেন। কারণ এর মধ্যে থাকে প্রোটিন, বায়োটিন ভিটামিন বি১২ আয়রন, জিংক এবং ওমেগা-৬ ফ্যাটি এসিড ইত্যাদি থাকার কারণে এগুলোর অভাব যদি দেখা দেয়। তাহলে সাধারণত চুল পড়তে পারে তাই আপনি প্রতিদিন অবশ্যই ডিম খেতে পারেন। তাহলে আপনার চুল পড়া বন্ধ হবে।
গাজরঃ গাজর শুধুমাত্র চোখের জন্য যে উপকার করে তা কিন্তু নয় ত্বক এবং চুলের জন্য ভালো উপকার করে ভিটামিন এ থাকে। যার কারণে স্কাল্পে পুষ্টি জোগাতে পারে, চুলের গোড়া শক্ত করতে পারে এবং চুলকে মশ্চারাইজ করতে পারবে। তাই গাজর অবশ্যই আপনি খেতে পারেন।
পালং শাকঃ পালং শাক ভিটামিন এ থাকে ভিটামিন সি এবং ফলেট, আয়রন ইত্যাদি থাকে যার কারণে চুলের স্বাভাবিক বৃদ্ধি করতে পারে এবং চুল পড়া বন্ধ করতে পারে। তাই পালং শাক আপনি নিয়মিতভাবে খেতে পারেন।
লো ফ্যাট ডেইরি প্রোডাক্টঃ চুলের বৃদ্ধির জন্য এবং চুল পড়া রোধ করতে প্রোটিন ক্যালসিয়াম এর প্রয়োজন হয়। তাই আপনার খাদ্য তালিকায় দই কিংবা পনির এই জাতীয় খাবার গুলো খেতে পারেন। এছাড়াও জিংক এবং ওমেগা ৩ এসিড সমৃদ্ধ আখরট খেতে পারেন।
মিষ্টি আলুঃ মিষ্টি আলুতে সাধারণত ভিটামিন এ শোষণ করে নিতে পারে। তাছাড়া এর মধ্যে বিটা ক্যারোটিন থাকে, চুলের ঘনত্ব এবং সিবাম উৎপাদনের ক্ষেত্রে ভিটামিন এ উপকার করে থাকে। চুলকে সুস্থ রাখে এবং প্রাকৃতিকভাবে আদ্রতা রাখতে পারবে। তাই আপনি নিয়মিতভাবে মিষ্টি আলু খেতে পারেন।
ভিটামিন ইঃ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ভিটামিন-এ চুলের জন্য অনেক উপকার করে থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে একটানা ৮ মাস যদি কেউ ভিটামিন এ যুক্ত খাবার খেতে পারে। তাহলে চুলের বৃদ্ধি পাবে প্রায় ৩৪.৫ শতাংশ এছাড়াও কাঠ বাদাম, সূর্যমুখী, ভুট্টা, জলপাইয়ের তেল ইত্যাদি ক্যাপসুল গ্রহণ করে তুলে দিতে পারবেন।
ভিটামিন ডিঃ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং হার মজবুত করে তাছাড়া ত্বক সুস্থ করে পাশাপাশি চুলের ফলিকল গঠন করতে পারে। এজন্য আপনি ভিটামিন ডি গ্রহণ করতে পারেন। এর মাধ্যম হলো সূর্যালোক ভিটামিন ডি এর ভালো উৎস করে থাকে। এটা চুল পড়া কমাতে পারবে এবং মাথার ত্বকের সুস্থতা কমাতে পারবে চুলকে ভালো রাখবে।
চিয়া বীজঃ এর মধ্যে প্রোটিন, ফসফরাস এবং কপালে থাকে যা চুলকে ঘন এবং লম্বা করতে পারবে। এই বীজ আমাদের চুলকে ক্যারাটিন সরবরাহ করবে। তাছাড়া চুল ভেঙে যাওয়া রোধ করতে পারবে। চুলের বৃদ্ধি করতে পারবে তাই আপনি খাবারের তালিকায় রাখতে পারেন।
চুল পড়া বন্ধ করার প্যাক
অনেকে চুল পড়া বন্ধ করার জন্য বিভিন্ন ধরনের প্যাক তৈরি করে। তাই চুল পড়া বন্ধ করার প্যাক তৈরি করবেন কিভাবে এ সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। চুল পড়া বন্ধ করার জন্য সে সম্পর্কে নিম্নে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করা হলো।
তেল মালিশের জন্য সহজ নিয়ম জানতে হবে, তাহলে একটি স্টিলের বাটিতে তেল নিবেন অন্য একটি বড় পাত্রে গরম পানি নেওয়া লাগবে। এরপর তেলের বাটি টা গরম পানির বাটির উপরে রেখে দিবেন হালকা গরম হলে নামিয়ে ফেলবেন। চাইলে লেবুর রস দিতে পারেন সব ধরনের চুলের জন্য লেবুর রস অনেক উপকার।
খুশকি থাকলে ভালো উপকার পাবেন তারপরে তেল ভালোভাবে মালিশ করবেন। তেল মালিশ করার পর গরম পানিতে ভেজানো মাথায় জড়িয়ে রাখতে হবে। ২০ মিনিট রেখে দিবেন এরপরে সরিয়ে নিয়ে তেল মালিশ করা যেতে পারে।
স্বাভাবিক চুলের জন্যঃ ত্রিফলা গুড়া এক চামচ এর সাথে এক চামচ মেথি আধা কাপ টক দই এবং একটি ডিম নিতে হবে। এ সকল উপকরণ গুলো মিশিয়ে ব্লেন্ডার করা লাগবে। একটি প্যাক তৈরি করবেন, লাগানোর আধা ঘন্টা পর চুল ধুয়ে শ্যাম্পু দিয়ে ফেলবেন। কন্ডিশনার ও ব্যবহার করতে পারেন।
শুষ্ক চুলের জন্যঃ ত্রিফলার গুড়া এক চামচ, এক চামচ টক দই আধা কাপ অ্যালোভেরা নির্যাস আধা কাপ দিবেন সঙ্গে একটি ডিমও নিতে পারেন। আর সব উপকরণ ব্লেন্ডার করে প্যাক বানাতে হবে। এই প্যাকটি আধাঘন্টা মাথায় রেখে দিয়ে তারপরে ধুয়ে ফেলবেন। শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলবেন সব শেষে কন্ডিশনার ব্যবহার করবেন।
কলা ও মধুঃ পাকা কলা একটি বাটিতে ভালোভাবে চটকে নেওয়া লাগবে। তারপরে দুই চামচ মধু দিবেন এবার চলে আলগা করে লাগাতে হবে। আগা থেকে গোড়া পর্যন্ত লাগিয়ে রাখবেন ৩০ মিনিট রাখার পরে কলা মাথার ত্বকে আদ্রতা রাখতে পারে এবং চুলের আগা মজবুত করতে পারবে। অন্যদিকে মধু চুল ঝরঝরা কমাতে সাহায্য করবে।
এলোভেরা এবং ডিমঃ এলোভেরা গাছ থেকে ভেতরের সাদা অংশ বের করে নিবেন। একটি ডিমের সাদা অংশের সাথে মেশাবেন ব্লেন্ডার করে নিতে পারেন। তারপরে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলবেন, এনজাইম চুলকে স্বাস্থ্যকর করবে আর ডিমের প্রোটিন চুলের আগা ফেটে যাওয়া থেকে রক্ষা করতে পারবে।
মেয়েদের চুল পড়া বন্ধ করার তেলের নাম
মেয়েরা সাধারণত চুল পড়া নিয়ে অনেক টেনশনে থাকে। তাই বিভিন্ন ধরনের তেল দিয়ে থাকে আর এজন্য মেয়েদের চুল পড়া বন্ধ করার তেলের নাম জানতে চায়। চলুন, ব্যবহার করলে আপনার চুল পড়া বন্ধ হবে সে সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
নারিকেলের তেলঃ নারিকেল তেল সাধারণত ব্যাকটেরিয়া এবং ছত্রাক প্রতিরোধী করতে পারে। স্কাল্পকে কোমল রাখে, এক গবেষণায় দেখা গেছে যে নারিকেলের তেল থেকে কোনরকম প্রদাহ সৃষ্টি হয় না। চুল ওঠার সমস্যা থাকলে এই তেল ব্যবহার করলে চুল পড়া বন্ধ হয়ে যাবে। নারিকেলের তেল মশ্চারাইজার হিসাবে ভালো কাজ করে থাকে এবং চুলের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে।
বাদাম তেলঃ বাদাম চুলকে পুষ্টি দিবে এর মধ্যে আছে ভিটামিন বি ৭ এবং ভিটামিন ই মাথার ত্বককে গভীর থেকে মশ্চারাইজার করে। বাদাম তেলের মধ্যে থাকে এন্টিঅক্সিডেন্ট যার চুলের বাহ্যিক ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে পারবে।
পাশাপাশি ভিটামিন ই থাকার কারণে চলাচল বৃদ্ধি পাবে। যার কারণে চুল ও বৃদ্ধি পাবে, বাদাম তেলের সঙ্গে কয়েক ফোঁটা সরিষার তেল মিশিয়ে দিতে পারেন। এতে আপনার চুল ঝলমল করবে।
রোজমেরি তেলঃ চুলে পুষ্টি জোগাতে রোজমেরি তেল ব্যবহার করতে পারেন। খুশকি সহ মাথার ত্বকের গভীর থেকে সমস্যাগুলো দূর করতে পারে এবং চুলের বৃদ্ধি করতে পারবে। কয়েক ফোঁটা রোজমেরি তেলের সাথে নারিকেল বা বাদাম তেল মিশিয়ে দিতে পারবেন।
এর সাথে অ্যালোভেরা জেল দিতে পারেন এটা মাথার ত্বকে লাগালে অনেক উপকার পাবেন চুল পড়া বন্ধ হয়ে যাবে।
ক্যাস্টর অয়েলঃ ক্যাস্টর অয়েলের মধ্যে প্রচুর পুষ্টি রয়েছে। এতে ভিটামিন ই, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রিসিনোলিক এসিড সহ আরো বিভিন্ন ধরনের উপাদান আছে। এছাড়া ওমেগা ৬ এবং ওমেগা ৯, ফ্যাটি এসিড উপাদান থাকার কারণে চুলের আর্দ্রতা রক্ষা করতে পারে।
এছাড়াও ভিটামিন ই শক্তিশালী আন্টি অক্সিডেন্ট থাকার কারণে চুল পড়া বন্ধ করতে পারবে। নারিকেল তেলের সাথে ক্যাস্টর অয়েল মিশিয়ে তুলে দিতে পারেন কয়েক ঘন্টা পর শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলবেন।
জলপাই তেলঃ জলপাই তেলের মধ্যে থাকে ভিটামিন ই ভিটামিন এ এবং অন্যান্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট চুলের ফলিকল এসব শক্তিশালী করতে পারে। অলিভ অয়েল চুল মশ্চারাইড করতে পারে, এর মধ্যে অলিক অ্যাসিড থাকার কারণে ডিএইচটি হরমোনকে বাধা দিতে পারবে।
এছাড়াও এই অলিভ অয়েলের মধ্যে এন্টি এক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি থাকার কারণে চুলের খুশকি দূর হবে এবং চুলের শুষ্কতা কমাবে চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখবে।
শেষ কথাঃ মহিলাদের চুল পড়া বন্ধ করার ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে জানুন
পরিশেষে বলা যায় যে মহিলাদের চুল পড়া বন্ধ করার ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে জানার আগে আগে কি কারণে চুল পড়ে থাকে সেই বিষয়ে জানা লাগবে। যদি হরমোনাল সমস্যা থাকে অথবা থাইরয়েড হরমোনাল বা বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা থাকে সে কারণে চুল পড়তে পারে। তাই এ বিষয়গুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তারপরে আপনি উপরোক্ত ঘরোয়া পদ্ধতি গুলো ব্যবহার করতে পারেন। পোস্টটি ভালো লাগলে আপনার বন্ধু-বান্ধবের নিকট শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ
এম আর মাহমুদ ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url