বাদাম খেলে কি উপকার হয় ও অতিরিক্ত খেলে যে ক্ষতি হবে

অনেকেই বাদাম খেতে পছন্দ করে, তাই বাদাম খেলে কি উপকার হয়? বাদাম শরীরে কি উপকার করে সেটা জানা প্রয়োজন। চলুন, বাদাম খাওয়ার কারণে আমাদের কি উপকার হবে সে সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
ছবি
ছোট থেকে বড় সবাই বাদাম খেতে পছন্দ করে থাকে, কেননা বাদাম এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি থাকে, যা আপনার শরীরে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করবে। তাই বাদাম খেলে কি উপকার হয়? সম্পর্কে জানতে আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।

পোস্টসূচিপত্রঃবাদাম খেলে কি উপকার হয় ও অতিরিক্ত খেলে যে ক্ষতি হবে

বাদাম খেলে কি উপকার হয়

অনেকেই বাদাম পছন্দ করেন কিন্তু বাদামের উপকারিতা সম্পর্কে জানেনা। তাই বাদাম খেলে কি উপকার হয়? সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। চলুন এ সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করা যাক।

বাদামের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন থাকে যেমন ভিটামিন এ, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, তাছাড়া বাদামের মধ্যে থাকে মনো ও পলি অ্যানস্যাচুরেটেড, ফ্যাটস, প্রোটিন ও ডায়েটারি ফাইবার। যা রক্তের খারাপ কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে এবং ভালো কোলেস্টেরল বৃদ্ধি করতে পারে।

তাছাড়া বাদামের মধ্যে আরো থাকে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, ফসফরাস, আয়রন, জিংক, কপার, ম্যাঙ্গানিজ সেলেনিয়াম সহ আরো অনেক কিছু থাকে। যা আমাদের শরীরের জন্য উপকার।

বাদামের মধ্যে ফাইবার থাকার কারণে এটা আমাদের হৃদপিণ্ড ভালো রাখে। তাই প্রতিদিন যদি আপনি ১০ গ্রাম করে বাদাম খেতে পারেন। তাহলে আপনার হৃদরোগ এর ঝুঁকি থেকে অনেকটাই কমে যাবে।

বাদামের মধ্যে থাকা ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, ভিটামিন ই যা আমাদের শরীরের হাড় কে শক্ত করতে পারে এবং শক্তিশালী করবে।

বাদামের মধ্যে থাকে টাইটোফন যা এমাইনো এসিড হিসেবে কাজ করবে। এই উপাদানটি আমাদের শরীরের হরমোনের ক্ষরণকে নিয়ন্ত্রণ করবে এবং মানসিক চিন্তা থেকে অনেকটা দূর করবে। তাছাড়া গর্ভবতীদের জন্য এটা খুবই উপকার করে থাকে।

ওজন নিয়ন্ত্রণঃ আপনি যদি বাদাম নিয়মিত খেতে থাকেন, তাহলে আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকবে। এক গবেষণায় দেখা গেছে বাদামের মধ্যে কার্বোহাইড্রেট ও ফ্যাট, প্রোটিন থাকার কারণে ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণঃ বাদামের মধ্যে ও ফাইটিক অ্যাসিড থাকার কারণে কোলন ক্যান্সারের মতো রোগ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে থাকে।
ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়ঃ এক গবেষণায় দেখা গেছে বাদামের মধ্যে যে উপাদানটি রয়েছে, তা রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। যার কারণে নিয়মিত যদি ডায়াবেটিসের রোগী পরিমাণ মত বাদাম খায়, তাহলে ৩০% ডায়াবেটিস কমিয়ে নিয়ে আসতে পারে।

দাঁতের যত্নঃ আপনি যদি দাঁতের ক্ষয় রোগ থেকে মুক্তি পেতে চান তাহলে নিয়মিত বাদাম খেতে পারেন। কারন বিশেষজ্ঞরা বলেছে দাঁতের যত্নের বাদাম সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এর মধ্য ম্যাঙ্গানিজ থাকার কারণে দাঁতের যেকোনো ধরনের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করবে।

ভালো কোলেস্টেরল বৃদ্ধি করেঃ বাদামের মধ্যে এমন কিছু উপাদান আছে যা খারাপ কোলেস্টেরলকে বের করে দেয় এবং কমিয়ে রাখে, যার কারণে হার্টের সমস্যা থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। এছাড়া ভালো কোলেস্টেরল বৃদ্ধি পাবে তাই নিয়মিত ভাবে আপনি বাদাম খেতে পারেন।

মস্তিষ্ক সুরক্ষাঃ আপনার মস্তিষ্ককে সুরক্ষা রাখতে বাদাম খেতে পারেন, কারণ এই চীনা বাদামের মধ্যে থাকে ভিটামিন এ, ডি, বি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, স্বাস্থ্যকর চর্বি, ম্যাগনেসিয়াম এছাড়াও আরো অনেক পুষ্টি থাকে যা মস্তিষ্ককে ভালো রাখতে পারে এবং স্ট্রোকের ঝুকি কমায়।

চুলের যত্নঃ আপনার চুলের যত্নের জন্য নিয়মিতভাবে বাদাম খেতে পারেন, কারণ খুশকি দূর করার জন্য বাদাম খাওয়া যেতে পারে। নতুন চুল গজাতেও বাদাম ভালো কাজ করে থাকে, সেইসঙ্গে চুলকে ঘন করে তোলে এবং কালো করে।

ত্বকের সৌন্দর্যঃ বাদামের মধ্যে ভিটামিন ই ও এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকার কারণে ত্বক কে উজ্জ্বল করতে পারে এবং বয়সের ছাপকে দূরে রাখতে সাহায্য করে।

পিত্তথলির পাথরঃ বাদামের মধ্যে এমন কিছু গুনাগুন রয়েছে যা পিত্তথলির পাথর কমাতে সাহায্য করবে। তাই আপনি নিয়মিত ভাবে এক মুঠো করে বাদাম খেতে পারেন। তবে বাদাম এর এত উপকারিতা তারপরও এটা অতিরিক্ত খেলে আপনার শরীরের ক্ষতি হতে পারে। তাই নিয়মিতভাবে পরিমাণমতো খেতে হবে।

অতিরিক্ত বাদাম খেলে কি হয়

বাদাম আমাদের শরীরে অনেক উপকার করে থাকে কিন্তু অতিরিক্ত খাওয়ার কারণে ক্ষতি হবে। তাই অতিরিক্ত বাদাম খেলে কি হয়? এ সম্পর্কে জেনে তারপরে বাদাম খাবেন। তাহলে আপনার উপকার হবে। চলুন, এ বিষয়ে বিস্তারিতভাবে জেনে নেই।

বাদাম খেলে যে আমাদের শরীরে নানা উপকার হবে এ কথা সবাই জানে কিন্তু প্রতিদিন বাদাম খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই কিছু পরামর্শ এর প্রয়োজন। অনেকে হালকা পুষ্টি হিসেবে ভাজা বাদাম বা প্রসেস করা বাদাম খেয়ে থাকে। এতে পুষ্টি পাওয়া যায় সেই সাথে ক্ষুধাও দূর হবে।

আবার অনেকেই গল্প করতে করতে অনেক সময় চিন্তা বাদাম খেতে থাকে, বাদামে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান থাকে তার মধ্যে যেমন উপকারী ফ্যাট থাকে, এছাড়াও প্রচুর পরিমাণ ওমেগা-৬, ফ্যাটি এসিড থাকে। এসব উপাদান একাধিক অসুখ থেকে মুক্তি দেয় যেমন হার্টের সমস্যা, ডায়াবেটিস, ক্যান্সার এগুলোর বিরুদ্ধে কাজ করে থাকে। তাই আপনার প্রতিদিনের খাবারের সাথে এই বাদাম রাখতে পারেন।

বাদামের উপকারী ফ্যাটের পাশাপাশি এর মধ্যে প্রোটিন, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম ইত্যাদি থাকে যা আপনার শরীরকে ভালো রাখবে। যদি আপনি অতিরিক্ত বাদাম না খান তাহলে শরীরের উপকার হবে। চলুন অতিরিক্ত খাওয়ার কারণে কি সমস্যা হতে পারে সে সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

ওজন বেড়ে যায়ঃ আপনি যদি অতিরিক্ত বাদাম খান তাহলে আপনার ওজন বাড়বে। কারণ এর মধ্যে ফ্যাট থাকে যা আপনার চর্বি বৃদ্ধি করবে। একমুঠো বাদামের মধ্যে ১৭০ ক্যালোরের মতো রয়েছে। 

আপনি যদি প্রতিদিন আপনার শরীরের প্রয়োজন এর চেয়ে বেশি খান, তাহলে অবশ্যই আপনার ওজন বাড়তে থাকবে। আমরা যদি অতিরিক্ত ক্যালরি গ্রহণ করি তাহলে অবশ্যই ক্যালরি ওজন বাড়াতে সাহায্য করে থাকে, তাই ওজন বৃদ্ধি পাবে।

মিনারেলের শোষণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ঃ আপনি যদি অতিরিক্ত বাদাম খেয়ে থাকেন তাহলে আপনার শরীরের মিনারেলের শোষণ কমে যাবে। বাদামে উপস্থিতি ফাইটিন অ্যাসিড থাকার কারণে শরীরের মিনারেল শোষণ করে নেয়। এছাড়াও শরীরে ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, ক্যালসিয়াম প্রবেশ বাধা দিতে পারে। যে কারণে এলার্জি হতে পারে এবং খাদ্যনালীতে জ্বালাপোড়া সমস্যা দেখা দিবে।

উচ্চ রক্তচাপের সমস্যাঃ অতিরিক্ত বাদাম খাওয়ার কারণে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা হতে পারে। বাদামে সোডিয়াম থাকে তার পরিমাণ কম আছে বাদাম খাওয়ার সময় অনেকেই সামান্য লবণ মিশিয়ে খায়। এই লবন আপনার উচ্চ রক্তচাপ বাড়িয়ে দেবে। সোডিয়াম রক্ত প্রবাহ থেকে পানি এবং ফ্লুইড শোষণ করে নেবে, এর ফলে উচ্চ রক্তচাপ হয়।

প্রদাহ সৃষ্টি করেঃ আপনি যদি অল্প করে বাদাম খান তাহলে সমস্যা হবে না কিন্তু যদি অতিরিক্ত খেয়ে ফেলেন, তাহলে সমস্যা হবে। বাদামের মধ্যে থাকে ওমেগা-৬, ফ্যাটি অ্যাসিড কিন্তু ওমেগা-৩ এর মধ্যে থাকে না। যা ভারসাম্য ঠিক না রাখলে শরীরের প্রদাহ সৃষ্টি হবে।

এলার্জির সমস্যাঃ যাদের পূর্বে থেকে এলার্জির সমস্যা রয়েছে তারা এই খাবার অতিরিক্ত খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন। কেননা বাদাম খাওয়ার কারণে সমস্যা বৃদ্ধি হতে পারে, ত্বকের চুলকানি, শ্বাসকষ্ট ডায়রিয়ার মত সমস্যা দেখা যেতে পারে।

চিনা বাদাম খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা

অনেকে বাদাম খান কিন্তু নিয়ম জানেন না। তাই চিনা বাদাম খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। তাহলে অবশ্যই আপনার শরীরে উপকার হবে। চলুন, এ বিষয়ে বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক।

বাদামের বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি রয়েছেন, বিশেষ করে প্রোটিন, ফ্যাট, ফাইবার, রক্তের খারাপ কোলেস্টেরলকে কমিয়ে দিবে এবং ভালো কোলেস্টেরল বৃদ্ধি করবে।

এছাড়া এর মধ্যে ভিটামিন ই ভিটামিন বি কমপ্লেক্স আরো অনেক ধরনের ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ফসফরাসিয়াম সহ আরো অনেক ধরনের উপাদান রয়েছে।
যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকার করে থাকে। এটা আমাদের হৃদপিণ্ড ভালো রাখে, চোখ, ত্বক হাড় ও দাঁতের গঠন ও মজবুত করতে সাহায্য করবে।

হজম প্রক্রিয়ায় ভালো কাজ করে, মস্তিষ্কের বিকাশ বৃদ্ধি করে, স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ রাখে, ওজন কমাতে সাহায্য করবে।

এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের ইনফেকশন প্রতিরোধ করতে পারে এবং ক্যান্সার প্রতিরোধের সাহায্য করে থাকে। তবে পরিমান মত খেতে হবে। আপনি প্রতিদিনের কতটুকু বাদাম খাবেন যা আপনার শরীরের জন্য উপকার হবে। চলুন জেনে নেওয়া যাক, বিভিন্ন পুষ্টিবিদ বলেছেন যে একজন ব্যক্তির প্রতিদিন ৩০ গ্রাম করে বাদাম খেতে পারবেন, এর বেশি যদি খেয়ে থাকে তাহলে শরীরের ক্ষতি হবে।

কাচা বাদাম ভিজিয়ে খাওয়ার উপকারিতা

আমরা প্রায় সবাই ভাজা বাদাম খেতে পছন্দ করি কিন্তু কাচা বাদামের উপকারিতা অনেক। তাই কাচা বাদাম ভিজিয়ে খাওয়ার উপকারিতা রয়েছে। এ সম্পর্কে জানা প্রয়োজন, চলুন বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
ছবি
অনেকের বাদাম খাওয়ার কারণে পেটের সমস্যা হয় এবং হজমের সমস্যা দেখা যায়, পেট ফাঁপা, ফুলে যাওয়া, পেটে ব্যথা আর কোন ধরনের সমস্যা হয়ে থাকে। তাই পুষ্টিবিদরা সাধারণত বাদাম ভিজিয়ে খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। বাদাম কেন ভিজিয়ে খাবেন সে সম্পর্কে আসলে জানা প্রয়োজন। চলুন জেনে নেওয়া যাক শরীরের জন্য কি উপকার করে থাকে।

এটা ভিতর থেকে শক্তি যোগাতে পারে শরীরকে ভালো রাখতে সাহায্য করে, শরীরের চর্চা করবেন, নিয়মিত বাদাম খাবেন। তবে বাদাম খেলে অনেকের হজমের সমস্যা হতে পারে, সেজন্য বাদাম ভিজিয়ে খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন পুষ্টিবিদরা।

বাদামের মধ্যে ফেনোলিক যৌগ ট্যানিন থাকার কারণে হজম করতে সমস্যা হয়। ফলে বাদাম খাওয়ার কারণে বদহজমের সমস্যা দেখা যায়। এই ট্যানিন শরীরে প্রোটিন পরিপাক এর ক্ষেত্রে অসুবিধা করে দেয়। তাই আগে থেকে এটা ভিজিয়ে রাখলে বাদামের ট্যানিন অনেকটাই কমে যেতে থাকে।

বাদামে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ফাইটিক অ্যাসিড শরীরে আয়রন, জিংকের সাথে বিক্রিয়ায় যে লবণ তৈরি করে। তা খাদ্যনালীতে দ্রবীভূত করতে পারে না। এই ফাইটি এসিড শরীরে পেপসিন ট্রিপিন উৎসেচকের পরিমাণ কমিয়ে দেয়, এর কারণে প্রোটিন পরিপাক করতে বাধা দিয়ে থাকে। তাই পানিতে ভিজিয়ে রাখলে বাদামের এই ফাইটি এসিড নষ্ট হয়ে যাবে।

এছাড়াও কাঠবাদাম একটু শক্ত হয়ে থাকে তাই হজম করতে কঠিন হয়। এজন্য ভিজিয়ে রাখলে বাদাম গুলো নরম হয়ে যাবে, সহজে ভাঙতে পারবে এবং হজম করতে সমস্যা হবে না।

সব বাদাম বেশিক্ষণ ভেজানো প্রয়োজন হয় না, কাঠ বাদাম খাওয়ার আগে অন্তত ১২ ঘণ্টা ভেজানো দরকার, তবে অন্যান্য বাদামগুলো সাধারণত ৮ ঘণ্টা ভিজিয়ে খেতে পারেন। তবে কাজু বাদামের ক্ষেত্রে ৬ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে।

খালি পেটে বাদাম খাওয়ার উপকারিতা

ইতিমধ্যে আমরা জেনেছি বাদাম খেলে কি উপকার হয়? এখন জানবো খালি পেটে বাদাম এর উপকারিতা সম্পর্কে। চলুন, বাদাম খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা যাক।

খালি পেটে বাদাম খাওয়া যেতে পারে তবে এর সঠিক নিয়ম অনুযায়ী খেতে হবে, তা না হলে যাদের পেটের সমস্যা আছে তাদের সমস্যা হতে পারে। যাদের হজমের সমস্যা আছে তারা বাদাম ভিজিয়ে খাবেন, তাহলে উপকার পাবেন। প্রতিদিন শরীরে কতটুকু পরিমাণ ম্যাগনেসিয়াম প্রয়োজন হয় তা আমরা হয়তো জানি না।

তাই সেই পরিমাণ আপনাকে বাদাম খেতে হবে। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য আপনি দিনে ১৪ টা কাঠ বাদাম খেতে পারেন। এই কাঠ বাদাম খালি পেটে খেলে কি উপকার হবে চলুন জেনে নেওয়া যাক।

কাঠ বাদাম খালি পেটে খেলে অনেক উপকার হয়, এতে ভিটামিন ই, প্রোটিন, ফাইবার এছাড়াও ভালো ফ্যাট থাকার কারণে আপনার শক্তি বৃদ্ধি করবে এবং হজম শক্তিও ভালো করবে।

আখরোটঃ এর মধ্যে থাকে ওমেগা-৩, ফ্যাটি অ্যাসিড, যা মস্তিষ্কের জন্য ভালো কাজ করে থাকে। তাই এটি সকালবেলা খালি পেটে ভালো কাজ করবে, মস্তিষ্কের কার্য ক্ষমতা বৃদ্ধি করবে। আখরোট ফ্যাটের পরিমাণ ৬৫ শতাংশ এবং প্রোটিন ১৫ শতাংশ থাকে।
এছাড়া বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন খনিজ পদার্থ থাকে যা আপনার হার্টের জন্য উপকার করবে। এছাড়াও আখরোট খেলে ক্যান্সার আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে কিন্তু এটা দিনের ৪টির বেশি খাওয়া যাবেনা।

পেস্তা বাদামঃ পেস্তা বাদাম খালি পেটে খেলে হজমের ভালো কাজ করবে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা শরীরের টক্সিন দূর করবে, ওষুধ ছাড়াই এই পেস্তা বাদাম হৃদযন্ত্রের জন্য ভালো কাজ করে। রক্তবাহিকা স্বাস্থ্য ভালো রাখে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট, ফাইবার, প্রোটিন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন বি-৬।

এছাড়া আরো বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান থাকে তাই পুষ্টিবিদরা বলেছেন সারা দিনে ২০টা পেস্তা বাদাম খেলে আপনার অনেক উপকার পাবেন।

কাজু বাদামঃ কাজু বাদাম এর মধ্যে প্রোটিন, ভালো ফ্যাট, ফাইবার থাকে যা খালি পেটে খেলে শক্তি যোগাবে এবং ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে রাখবে। কাজু বাদামের মধ্যে এনাকার্ডিক অ্যাসিড থাকে, যা মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করবে। এছাড়া দাঁতের এবং মাড়ির স্বাস্থ্য ভালো রাখবে। তাই সারাদিনে আপনি ১১টার বেশি কাজু বাদাম খাবেন না।

বাদাম কি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ভালো

ডায়াবেটিস রোগীরা বিভিন্ন খাবার খেতে খুবই সচেতন থাকে, তাই তারা প্রশ্ন করে থাকে যে বাদাম কি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ভালো? আসলে বাদাম খাওয়া যাবে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য কিন্তু পরিমাণ মতো খেতে হবে। সেটা আপনাকে জানতে হবে চলুন জেনে নেওয়া যাক।

পুষ্টির ভালো উৎসব বাদাম এর মধ্যে রয়েছে ভিটামিন, মিনারেল, ক্যালসিয়াম সুস্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকার করে। তাই পুষ্টিবিদরা সাধারণত দিনে এক মুঠো বাদাম খেতে বলেন। তবে আপনি ডায়াবেটিস রোগী যদি হয়ে থাকেন সেই ক্ষেত্রে সাবধানতার সাথে বাদাম খেতে হবে, সব ধরনের বাদাম আপনার স্বাস্থ্যের জন্য ভালো হবে না।

তবে কিছু বাদাম রয়েছে যেগুলো ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকার করে থাকে। বাদাম সচেতন ভাবে খেলে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ রাখবে। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী তিন ধরনের বাদামের কথা বিশেষজ্ঞরা বলেছেন।

কাঠবাদামঃ গবেষণায় দেখা গেছে যে কাঠবাদাম ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও এটি দৈনিক ম্যাগনেসিয়ামের চাহিদা পূরণ করবে। তবে কাঠবাদাম খাওয়ার ক্ষেত্রে লবণ হীন ও ভাজা যাবে না।

ওয়ালনাটঃ ওয়ালনাটের মধ্যে থাকে উচ্চ পরিমাণ ক্যালরি তবে এটি তেমন ওজন বাড়াবে না। গবেষণায় দেখা গেছে যে খাওয়ার কারণে ওয়ালনাট হওয়ার কারণে পেট ভরা থাকে। এতে অন্য খাবার খাওয়ার আগ্রহ থাকে না। এছাড়া আর একটি গবেষণায় দেখা গেছে এটি ইনসুলিন এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।

চিনাবাদামঃ এ বাদামে আঁশ ও প্রোটিন থাকার কারণে টাইপ টু ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে ভালো কাজ করে থাকে। এটি রক্তের সুগারকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। প্রতিদিন ২৮ থেকে ৩০ টি কাঁচা বাদাম খাওয়া খাবেন। তবে ভাজা বাদাম খাওয়া যাবে না।

বাচ্চাদের জন্য বাদামের উপকারিতা

বাচ্চাদের এ সময় বাদাম খাওয়ানো যেতে পারে। কারণ এর মাঝে প্রচুর পুষ্টি থাকে। তাই বাচ্চাদের জন্য বাদামের উপকারিতা সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। চলুন, এ বিষয়ে বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক।
ছবি
শিশুদের ব্রেন বাদাম খেলে ভালো থাকে। কেননা পুষ্টিবিদরা বলেছেন বাদামের মধ্যে ওমেগা থ্রি, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, ক্যালসিয়াম এছাড়াও আরো অনেক পুষ্টি উপাদান থাকে।

যা একটি শিশুর খাদ্য থেকে যে পুষ্টি উপাদান পাওয়া দরকার তা বাদামের মধ্যে রয়েছে। তাই অনেক সময় বাদাম খাওয়ানো যেতে পারে, তবে অনেক সময় বাদামে এলার্জি হতে পারে।

যদি সমস্যা দেখা দিতে পারে আবার অনেক শিশুর বাদাম খেলে হজমের সমস্যা হয়ে থাকে। তাই শিশুদের খাওয়ার ক্ষেত্রে একটু সতর্কতা থাকতে হবে এবং পরিমাণমতো খাওয়াতে হবে। তাই শিশুকে কতটুকু বাদাম খাওয়ানো যাবে। সে সম্পর্কে চলুন বিস্তারিতভাবে জানা যাক।

৬ মাস থেকে ১ বছর পর্যন্ত শিশুদের খাবারের খাওয়ানোর পর ১ থেকে দেড় গ্রাম বাদামের গুরা খাওয়ানো যেতে পারে। এভাবে খাওয়ানোর পরে যদি শিশুদের কোন সমস্যা না দেখা যায়।

তাহলে নিয়মিতভাবে এই বাদামের গুড়া খাবারের সাথে মিশিয়ে খাওয়ানো যেতে পারে। প্রতি সপ্তাহে ৩ থেকে ৪দিন এক বেলার খাবারের সাথে শিশুকে এই বাদামের গুড়া খাওয়ানো যাবে।
১ বছর থেকে শিশু যখন চিবিয়ে খাওয়া শিখবে তখন বাদামের খোসা ছাড়িয়ে শিশুর সামনে দিলে সে একটি দুটি করে খেতে পারে সে খাবে। এভাবে ১ গ্রাম বা ২ গ্রাম করে দিনে ৫ থেকে ৭ গ্রাম পর্যন্ত খাওয়ানো যেতে পারে। বাজারে অনেক ধরনের বাদাম থাকে যে কোন বাদাম আপনি খাওয়াতে পারবেন।

শুধু খেয়াল রাখতে হবে যাতে এলার্জি যদি দেখা যায় তাহলে খাওয়া বন্ধ করে দিতে হবে এবং কোন বাদাম খাওয়ার পরে এলার্জির সমস্যা হয়, সেটা বাদ দিতে হবে। শিশুদের আবহাওয়া এবং খাদ্যের সাথে সমালোচনা করে আপনাকে খাওয়ানো লাগতে পারে। বাদাম খেলে যদি অ্যালার্জি বেড়ে যায় তাহলে বাদাম খাওয়া পুরোপুরি বন্ধ করে দিবেন এবং ১৫-২০ দিন পরে আবার খাওয়ানো শুরু করবেন।

এতে আপনার শিশুর আস্তে আস্তে শরীরে সহনীয় পর্যায়ে চলে আসবে। ২ বছর পরেও যদি বাচ্চার এই বাদাম খাওয়ার কারণে অ্যালার্জি সমস্যা দেখা যায় তাহলে বাদাম খাওয়া বাদ দিতে হবে। সব ধরনের বাদাম একসঙ্গে করে রেখেও শিশুকে খাওয়ানো যেতে পারে।

এর ফলে প্রয়োজনীয় ফ্যাট মিনারেল শিশুর খাদ্য তালিকা যুক্ত হবে। ২ বছর বয়সের পর সুতরাং ৬ মাস বয়স থেকেই শিশুকে বাদাম খাওয়ানো যেতে পারে। তবে সাবধানতার সাথে খাওয়াতে হবে।

শেষ কথাঃ বাদাম খেলে কি উপকার হয় ও অতিরিক্ত খেলে যে ক্ষতি হবে

পরিশেষে বলা যায় যে যাদের বাদাম খাওয়াতে পেটের কোন সমস্যা হয় না এবং গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা নেই তারা নিয়মিতভাবে ৩০ গ্রাম করে বাদাম খেতে পারবেন। এতে আপনার শরীরে পুষ্টির চাহিদা পূরণ করবে। তাছাড়া আরো অনেক উপকার রয়েছে, তাই বাদাম খেলে কি উপকার হয়? সম্পর্কে আর্টিকেলে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে, আশা করি আপনার উপকার হবে। পোস্টটি ভালো লাগলে আপনার বন্ধু-বান্ধবের নিকট শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এম আর মাহমুদ ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪