গর্ভাবস্থায় রক্তপাত হলে কি করনীয় ও চিকিৎসা সম্পর্কে জানুন
অনেকে জানতে চায় যে গর্ভাবস্থায় রক্তপাত হলে কি করনীয়? গর্ভাবস্থায় রক্তপাত হলেই যে বাচ্চা নষ্ট হয়ে যাবে তা কিন্তু নয়। তাই এই সময়ে রক্তপাত হলে কি সমস্যা হতে পারে, সে সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। চলুন, গর্ভবতীদের রক্তপাত হলে কি করতে হবে সে সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
অধিকাংশ গর্ভবতীর প্রথম দিকে অল্প অল্প রক্ত বের হতে থাকে। এতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই কিছুদিন পর ঠিক হয়ে যাবে। তাই গর্ভাবস্থায় রক্তপাত হলে কি করনীয়? সম্পর্কে জানতে আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
পোস্টসূচিপত্রঃগর্ভাবস্থায় রক্তপাত হলে কি করনীয় ও চিকিৎসা সম্পর্কে জানুন
গর্ভাবস্থায় রক্তপাত হওয়ার কারণ কি
গর্ভবতীদের প্রথম দিকে এবং শেষের দিকে বিভিন্ন ধরনের সমস্যার কারণে রক্তপাত হয়ে থাকে। তাই গর্ভাবস্থায় রক্তপাত হওয়ার কারণ কি? সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। চলুন, নিম্নে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করা যাক।
প্রথম তিন মাসের রক্তক্ষরণের কারণঃ বেশিরভাগ গর্ভবতী নারীদের প্রায় ২০ থেকে ৩০ শতাংশ গর্ভবতী নারীদের প্রথম তিন মাসে রক্তক্ষরণ হয়ে থাকে। এর মধ্যে অর্ধেকের বাচ্চা কোন সমস্যা হয় না। পুরো অবস্থায় কাটিয়ে উঠতে পারে এবং পরিপূর্ণ সন্তান প্রসব করে থাকে।
তবে বাচ্চা নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা প্রথম তিন মাসেই হয়ে থাকে। এর জন্য প্রধান কারণ হলো রক্তক্ষরণ। অনেক সময় অল্প রক্তক্ষরণ হয় কিন্তু ঠিকমতো চিকিৎসা ব্যবস্থা নিলে তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাবে এবং শেষ পর্যন্ত বাচ্চা প্রসব করতে সম্ভব হবে।
একটোপিক প্রেগনেন্সিঃ জরায়ু ছাড়া পেটের ভিতর অন্য যে কোন জায়গায় যেমন টিউব, ডিম্বাশয় যদি ভ্রণ স্থাপিত হয়ে থাকে। তাকে সাধারণত একটোপিক প্রেগনেন্সি বলা হয়। নিয়মিত পিরিয়ড বন্ধ হওয়ার পর পেটে ব্যথার সাথে সাথে হালকা রক্তপাত হতে পারে। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা করলে এই ধরনের প্রেগনেন্সি গুলো কি সমস্যা সেটা জানা যাবে এবং চিকিৎসা করা যাবে।
ইমপ্লেন্টেশন রক্তপাতঃ বাচ্চা নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা ছাড়াও কোন কোন রোগীর ক্ষেত্রে জরায়ুতে ভ্রণ স্থাপিত বা ইমপ্ল্যান্টেশনের সময় রক্তপাত হয়ে থাকে। এছাড়াও আরো কিছু কারণ রয়েছে যা প্রথম তিন মাসে পিরিয়েডের রাস্তায় রক্ত ক্ষরণ হয়ে থাকে।
তাই মোলার প্রেগনেন্সি হলো জরায়ুতে ভ্রণের পরিবর্তে টিউমার মতো হয়ে থাকে এবং এই অবস্থায় রক্তক্ষরণ আঙ্গুরের থোকার মতো বের হয়। তবে একটা ব্যাপার জেনে রাখা ভালো যে সব ধরনের রক্তপাতে সাধারণত বাচ্চা নষ্ট হবে না।
গর্ভাবস্থায় শেষের দিকে রক্ত ক্ষরণঃ শেষের দিকে রক্তক্ষরণে দুটি কারণ থাকে একটি হল গর্ভফুল নিচের দিকে থাকা, জরায়ুর মুখের কাছাকাছি থাকা, যাকে বলা হয় প্লানসেন্টা প্রিভিয়া। যাদের আগে জরায়ুতে অপারেশন করা হয়েছে।
যেমন ডিএনসি করা, সিজারিয়ান অপারেশন বা যাদের জমজ বাচ্চা হয় তাদের এই সম্ভাবনা বেশি দেখে দেখা যায়। আরেকটি হলো গর্ভফুল জরায়ুর স্বাভাবিক অবস্থা থেকে একটু আলাদা হয়ে থাকে। বিভিন্ন কারণে সমস্যা দেখা যায় যেমন প্রেসার বেশি থাকার কারণে আঘাত পেলে এইরকম ধরনের সমস্যা হয়।
এছাড়া আরো একটি কারণ রয়েছে শেষের দিকে রক্তপাত হওয়ার ব্যাপারে তা হল সময়ের আগেই যদি ডেলিভারি হয়ে যায় বা ব্যথা হতে ব্যথা ওঠে সেক্ষেত্রে এই ধরনের সমস্যা হয়ে থাকে অর্থাৎ জ্বরের মুখের কোন সমস্যার কারণেই গর্ভাবস্থার রক্তপাত হতে পারে।
সেপটিক অ্যাবোরশনঃ এটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ আমাদের মাতৃমৃত্যু হাড়ের ১০ ভাগ এই সেফটি কে এবরশন হয়ে থাকে। এর সাথে সংক্রমণ আছে এই গর্ভপাতের সাথে জরায়ুর আশেপাশের সংক্রমণ হয়ে থাকে। এতে করে জ্বর নিয়ে আসে তলপেটে ব্যথা হয়। রোগীগুলো খুবই রোগা সাধারণত দেখা যায় এই রোগ গুলোকে অবশ্যই সাথে সাথে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে
এবং হাসপাতালে চিকিৎসা করা লাগবে। দেখা যায় হঠাৎ করে সেচ্ছায় গর্ভপাত করে থাকে সঠিক জায়গায় গিয়ে না সঠিক উপায় না করার কারণে সেখানে যদি পূর্ণ হয়ে যায়। এজন্য যারা বাচ্চা না রাখতে চাইলে তারা অবশ্যই চিকিৎসা পরামর্শ নিতে হবে যেটাই করবেন সেই হিসেবে পরামর্শ নিবেন।
গর্ভপাতের কারণ গুরুতর হলেও হলে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে এবং চিকিৎসা নিতে হবে। কেননা এতে ডাক্তারও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী আপনাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণ করবে। এছাড়াও হঠাৎ করে চিকিৎসার প্রয়োজন হয়ে থাকে। তাহলে তুলনামূলক দ্রুত আপনারও উপযুক্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা করবে।
আপনার লক্ষণগুলো যদি গুরুতর না হয় এবং বাচ্চা হওয়ার সময় এগুলো অনেক সময় দূরে থাকে। তাহলে আপনাকে শুধুমাত্র পর্যবেক্ষণ রাখা দরকার। এজন্য ডাক্তার আপনাকে বাড়িতে এক থেকে দুই সপ্তাহ পর আবার দেখা করতে হবে। এই সময়ের মধ্যে অনেকের রক্তপাত বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
গর্ভাবস্থায় রক্তপাত হলে কি করনীয়
অনেক গর্ভবতী মহিলারা এই সময় রক্তপাত হওয়ার কারণে টেনশনে পড়ে যান। তাই গর্ভাবস্থায় রক্তপাত হলে কি করনীয়? এ সম্পর্কে জানার প্রয়োজন। কেননা এর বাচ্চা নষ্ট হয়ে যেতে পারে, তাই চলুন বিষয়ে যে জায়গায় যাক।
যদি কোন গর্ভবতী নারীর এক ফোঁটা রক্তপাত হয় তাহলেও গর্ভকালীন রক্তপাত জড়িত সমস্যা বলা হয়ে থাকে। এটি একটি বিশেষ স্বাস্থ্য সমস্যা যা হতে গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাস মাঝের ৩ মাস একেবারে শেষ সময় বা সন্তান নিতে হবে অথবা ডেলিভারির সময় নেওয়া যাবে। তবে সময় মত সঠিক চিকিৎসা নিলে জটিলতা ঠিক হয়ে যাবে।
- হঠাৎ রক্তপাত হতে পারে যা সামান্য হতে পারে আবার বেশিও হয়।
- অনেকের ব্যথা অনুভূত হয়ে থাকে।
- ব্যথা ও রক্তপাত এক সঙ্গেও অনেকের হয়ে থাকে।
পরীক্ষা ও চিকিৎসাঃ গর্ভাবস্থায় সামান্য রক্তপাত হলেও অবহেলা করবেন না। এর যথাযথ চিকিৎসা রয়েছে এবং প্রতিকারও আছে তবে মনে রাখবেন গর্ভকালীন রক্তপাত মানেই কিন্তু আবরশন নাও হতে পারে। চিকিৎসার প্রথম ধাপে রোগের ইতিহাস জেনে নেওয়া হয়। তার প্রথম থেকে একটা কিরকম হয়েছিল এবং সকল কিছু সঠিকভাবে আছে কিনা সেগুলো জানতে চাওয়া হয়।
আগের কোন আলট্রাসনোগ্রাম থাকলে সেটা একজন চিকিৎসা করে দেখানো যেতে পারে। এতে সন্তানের সঠিক বয়স অনুমান করা যাবে রক্তপাত ঘটার পর চিকিৎসার স্বাস্থ্যের চিকিৎসকদের শরণাপন্ন হতে হবে।
রক্তপাত করার পর চিকিৎসকের সারাটা পূর্ণ হওয়া লাগবে এবং প্রথম আলট্রাসনোগ্রাম করা লাগবে। এর মাধ্যমিক সন্তান জীবিত নাকি মৃত সেটা জানা যাবে। জীবিত সন্তান গর্ভ থাকার পরেও রক্তপাত হতে পারে যাকে বলে থ্রেটেন্ট মিস্ক্যারেজ হিসাব ক্ষেত্রে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে।
চিকিৎসার মাধ্যমে রক্তপাত বন্ধ করতে হবে এবং শুধু তাহলেই সুস্থ ভূমিষ্ঠ বাচ্চা হবে আলট্রাসনোগ্রাম ছাড়াও রক্ত পরীক্ষা করেও দেখা যেতে পারে। গর্ভস্থ সন্তান ঠিক আছে কিনা অনেকের জরায়ু মুখে ধারণ ক্ষমতা কম রয়েছে। যেসব ক্ষেত্রে সহায়ক চিকিৎসা হিসাবে সেলাই করে থাকে পাশাপাশি অন্যান্য ওষুধ দেওয়া যেতে পারে।
গর্ভাবস্থায় অবস্থায় ছয়-সাত মাস পর রক্তপাত হলে অনেকে বেশ ঘাবড়ে যান। এক্ষেত্রে ঘাবড়ানোর কিছুই নেই সঠিক চিকিৎসা দিয়ে গর্ভস্থ সন্তানকে ভালো রাখা যাবে আবার ডেলিভারির কাছাকাছি সময় রক্তপাত হলে তেমন কোন সমস্যা থাকে না।
সতর্কতাঃ গর্ভাবস্থায় একটু অল্প রক্তপাত হলে অনেকে তেমন পাত্তা দেবে না বা বিষয়টিকে হালকা মনে করবে। এটা কিন্তু ঠিক নয় মনে রাখতে হবে। গর্ভাবস্থায় সামান্য পরিমাণ রক্ত বের হলেও গর্ভাবস্থায় একফোঁটা রক্ত যাওয়া অস্বাভাবিক বিষয় নয়। তাই সামান্য রক্ত গেলে বা আপনা আপনি বিরক্ত বন্ধ হয়ে গেলেও চিকিৎসা করা।
প্রতিরোধে করণীয়ঃ গর্ভাবস্থায় পূর্ণ বিশ্রাম নেওয়া লাগবে
- ভারী কাজকর্ম করা যাবে না
- দুশ্চিন্তা মুক্ত ও সাদা হাসিখুশি থাকা লাগবে
- তলপেটে আঘাত লাগলে বা চাপা লাগলে এমন কোন কাজ করা যায় না।
- দূরবর্তী স্থানে এই সময় ঝুঁকিপূর্ণ ভ্রমণ করা ঠিক হবে না, বিপদের সম্মুখীন হতে পারে।
- থাইরয়েড ডায়াবেটিস ইনফেকশন ইত্যাদি থাকলে তার চিকিৎসা অন্যায় নেওয়া লাগে।
- নিয়মিত চেকআপ করাতে হবে এবং চিকিৎসার পরামর্শ নেওয়া লাগবে।
সবারই আশা থাকে যে একটি সুস্থ সন্তান জন্মগ্রহণ করুক কোন আনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি কারো কাম্য হয় না। তাই গর্ভাবস্থায় রক্তপাত বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। এরকম পরিস্থিতিতে দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসা পরামর্শ নিতে হবে।
প্রথমের দিকে অল্প অল্প করে গেলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী বিশ্রাম চিকিৎসা নিলে ভ্রুণের অনেক সময় ক্ষতি নাও হতে পারে। আবার কিছু খেতে রক্ত দেওয়ার সাথে সাথে বেশি পেট ব্যথা থাকলে বাচ্চা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। রক্ত বেশি গেলেই সঙ্গে সঙ্গে রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া লাগবে।
এই সময় যে কোন সময় রোগীর রক্তের প্রয়োজন অনুযায়ী কাজ করবে। তাই এই সময় রক্তের ডলার ডলার রেডি রাখা লাগবে এবং কোন বিশ্রামে থাকতে হবে ভারী কাজ করা ভ্রমন করা এগুলো থেকে বিরত থাকা লাগবে।
গর্ভবতীর ৫টি বিপদ চিহ্ন
গর্ভাবস্থায় গর্ভবতীদের বিভিন্ন ধরনের বিপদচিহ্ন দেখা যায়। তাই গর্ভবতীর ৫টি বিপদ চিহ্ন সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। চলুন, নিম্ন বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করা যাক।
হঠাৎ রক্তপাত শুরু হলেঃ প্রসবের সময় ছাড়া গর্ভাবস্থায় যদি রক্তক্ষরণ হয়ে থাকে বা প্রসবের পরে বেশি রক্তপাত হয় অথবা গর্ভফুল না পড়ার মূলত বিপদের লক্ষণ বুঝে থাকে। তাই এরকম পরিস্থিতি যদি দেখতে পারেন, সে ক্ষেত্রে অবশ্যই দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে। তাছাড়া বাচ্চা এবং মাকে বাঁচানো কঠিন হয়ে যাবে।
খিচুনি হওয়াঃ গর্ভাবস্থায় প্রসবের সময়, প্রসবের পরে যে কোন সময় যদি খিচুনি হয়। সে ক্ষেত্রে দেরি না করে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। খিচুনি একলামসিয়ার লক্ষণ তাই দ্রুত পদক্ষেপ ও চিকিৎসা জন্য হাসপাতালে নিতে হবে। তাহলেই গর্ভবতী মা এবং শিশু সুস্থ থাকবে, তা না হলে দুজনে মারা যেতে পারে।
তীব্র মাথাব্যথাঃ গর্ভাবস্থায় অনেক সময় শরীরে পানি আসে প্রচন্ড পরিমাণে মাথা ব্যাথা, চোখে ঝাপসা দেখা এই ধরনের সমস্যা গুলো দেখা যায়। এটা একটি পাঁচটি বিপদের মধ্যে অন্যতম। তাই এ ব্যাপারে মায়েদেরকে সতর্ক থাকা লাগবে।
যদিও গর্ভাবস্থায় মায়েদের পায়ে পানি আসে এটা একটি স্বাভাবিক বিষয় তবে এক্ষেত্রে একটু হাঁটা চলাফেরা বেশি করলেই পানিটা চলে যাবে কিন্তু যদি পায় অতিরিক্ত পানি আসে এবং অস্বস্তিকার সৃষ্টি হয় বা ভুলে যায় বা ভারি হয়ে যায় সে ক্ষেত্রে চিকিৎসার পরামর্শ নিতে হবে।
ভীষণ জ্বর হলেঃ গর্ভাবস্থায় অনেকের তিন দিনের বেশি যদি জ্বর হয়, তাহলে এটাও একটি বিপদের অন্যতম লক্ষণ। বিশেষ করে গর্ভাবস্থায় যদি কেঁপে কেপে ভীষণ জ্বর আসে এবং প্রসাবের সময় জ্বালাপোড়া হয়। তাহলে অনেক সময় মূত্রনালীর সংক্রমণের সমস্যা দেখা দিতে পারে। সময়মতো চিকিৎসা না করলে জটিল হয়ে যাবে।
বিলম্বিত প্রসবঃ যদি প্রসব ব্যথা যদি ১২ ঘণ্টার বেশি হয়ে যায় অথবা প্রসবের সময় যদি বাচ্চার মাথা ছাড়া অন্য কোন অঙ্গ বের হয়ে আসে। তবে তাড়াতাড়ি বাড়িতে আর চেষ্টা না করে অতিসত্বর নিকটস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্র অথবা হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।
গর্ভাবস্থায় প্রথম ৩ মাসের সর্তকতা
গর্ভাবস্থায় সবচাইতে জটিল সময় হলো প্রথম তিন মাস তাই এই সময় সতর্ক থাকতে হবে। তাই গর্ভাবস্থায় প্রথম ৩ মাসের সর্তকতা সম্পর্কে চিকিৎসকরা পরামর্শ দিয়ে থাকে। চলুন, এ বিষয়ে আলোচনা করা যাক।
গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাস অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভবতী মায়েদের জন্য প্রথম থেকেই একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে চলতে হবে।
চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে হালকা কিছু ব্যায়াম করা যেতে পারে।
নিয়মিত ব্লাডের সুগার প্রেসার পরীক্ষা করা লাগবে।
নিয়মিত হাঁটা চলাফেরা ঘরের সাধারণত কাজ করতে কোন সমস্যা হবে না।
তবে অতিরিক্ত কাজ করা সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করা যাবে না।
নিজের সুস্থতা ও গর্ভস্থ থাকা শিশুর বিকাশের জন্য ভিটামিন এবং মিনারেল বিশেষ করে ফলিক এসিড ক্যালসিয়াম, আয়রন জাতীয় খাবার গুলো খেতে হবে। পুঁইশাক, পাট শাক, মলার শাক সরিষা শাক পেপে লেবু মটর শুটির বাঁধাকপি গাজর এগুলো নিয়মিত ভাবে খাওয়া যেতে পারে।
তাছাড়া ভাত রুটি আর দুধ, দই, মাছ মাংস ডিম অল্প অল্প করে বারবার খাওয়া যেতে পারে, কখনোই খালি পেটে রাখা যাবে না।
ওজন স্বাভাবিক থাকলে গর্ভাবস্থায় ২৫ থেকে ৩৫ পাউন্ড ওজন বাড়লে কোন সমস্যা হবেনা, দুই মাস পর পর অবশ্যই ওজন মাপা লাগবে।
গর্ভাবস্থায় নিজেকে ও ব্যবহারের পোশাক বিছানা বাথরুম পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা লাগবে।
গর্ভবতী নারীদের প্রতিদিন ৬ থেকে ৮ ঘন্টা ঘুমানোর চেষ্টা করতে হবে। সঙ্গে দিনের বেলায় যে কোন এক সময় এক ঘন্টা বিশ্রাম নেওয়া লাগবে।
অতিরিক্ত চিন্তা ভাবনা ও উত্তেজনা সময় মানসিক চাপ বাড়িয়ে দিতে পারে, এজন্য মানসিক টেনশন থেকে দূরে থাকতে হবে।
পরিবারের অনেক বড় একটা ভূমিকা হল গর্ভবতী ও গর্ভের শিশু যেন ভালো থাকে। তাই পরিবারের সকলকে সহযোগিতা করতে হবে। এই সময় নারীদের বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তন হয়ে থাকে, এগুলোকে স্বাভাবিক গ্রহণ করা পরিবারের দরকার ডাক্তারের পরামর্শ না নিয়ে এই সময় কোন ওষুধ খাওয়াবেন না। এটা কোন অসুস্থতা নয় গর্ভাবস্থায় সুস্থ থেকে পুরো সময়টাই উপভোগ করতে পারবেন।
গর্ভকালীন ত্বকের সমস্যায় কী করবেন
গর্ভবতী নারীদের সাধারণত গর্ভে বাচ্চা আসার সাথে সাথে শরীরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। বিশেষ করে ত্বকের সমস্যা হয় গর্ভকালীন ত্বকের সমস্যায় কী করবেন? নিম্ন বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করা হলো।
গর্ভাবস্থায় শারীরিক ও মানসিক নানা পরিবর্তন হয়, কি পরিবর্তন ত্বকে দেখা দিতে পারে। সাধারণত হরমোন জনিত প্রভাব ও গর্বের শিশুর আকারে গর্ভের শিশুর আকার বেড়ে যায়। এ কারণেও এই সমস্যা হয়ে থাকে, গর্ভাবস্থায় ত্বকে যে পরিবর্তনগুলো হয়। চলুন, জেনে নেওয়া যাক,
গর্ভের শিশু আকারে বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে পেটের ত্বকে টান লাগে, যার কারণে ত্বক ফেটে দাগ হয়ে যায়।
গর্ভকালীন হরমোন জনিত কারণে ত্বকের তৈলাক্ততা বৃদ্ধি পায়, মুখের ত্বকের তাব বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে ব্রণ হয়ে থাকে।
হরমোন জনিত কারণে মুখে মেছতা দেখা যায়, গলা ঘাড় ও ত্বকের বিভিন্ন ভাজে গাঢ়ো দাগ দেখা যায়।
যাদের অ্যালার্জি সমস্যা আছে তাদের এলার্জিজনিত চুলকানি হতে পারে বা একজিমা দেখা দেয়।
চুলকানির ফলে ত্বক লালচে ফুলে যায় তবে গর্ভকালীন জন্ডিসের কারণে চুলকানি হলেও ত্বকের পরিবর্তন দেখা যায় না।
যা করতে পারেনঃ সাধারণত প্রসব পরবর্তী ৬ মাসের মধ্যে গর্ভকালীন তাদের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা নিজ থেকেই সেরে যাবে। তবে গর্ভাবস্থায় ত্বকের যত্নে কিছু বিষয় মেনে চলতে হবে। তাহলে সমস্যাটা তীব্রতা আকার ধারণ করবে না এবং অল্প সময়ের মধ্যে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে।
ত্বকের তৈলাক্ততা দূর করতে নিয়মিত ক্লিনজার দিয়ে পরিষ্কার করা যেতে পারে, ত্বকের মসৃণতা ঠিক রাখার জন্য ইমুলেট বা ময়েশ্চারাইজার ক্রিম বা লোশন ব্যবহার করা যেতে পারে।
পেটের ফাটা দাগ নিয়ন্ত্রণ রাখার জন্য নিয়মিত গ্লিসারিন, পেট্রোলিয়াম জেলি ভার্জিন নারিকেল তেল ব্যবহার করা যাবে।
গর্ভাবস্থায় ত্বক সংবেদনশীল হতে পারে ঘরের বাইরে গেলে সানস্ক্রিন ক্রিম লোশন ব্যবহার করতে পারেন। গর্ভাবস্থায় শরীরে পানির চাহিদা বৃদ্ধি পেয়ে থাকে, সেজন্য পর্যাপ্ত পানি ও পানীয় পান করা যেতে পারে।
গর্ভকালীন ত্বকের এই সমস্যাগুলো আসলে রোগ নয়, প্রসবের পর এগুলো একাই সেরে যায়। তবে অন্তঃসত্ত্বা মায়ের ত্বকে লক্ষণগুলো তীব্রতা বেশি হলে কিংবা প্রসবের ছয় মাস পরে যদি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে না আসে, তাহলে দেখানো যেতে পারে।
গর্ভাবস্থায় বাচ্চার নড়াচড়া কখন বোঝা যায়
গর্ভাবস্থায় বাচ্চা নড়াচড়া করে কিনা সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। তাই গর্ভাবস্থায় বাচ্চার নড়াচড়া কখন বোঝা যায় সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। চলুন, নিম্নে বিস্তারিত ভাবে জেনে নেওয়া যাক।
গর্ভস্থ শিশুর নড়াচড়া আর সাধারণত অন্তঃসত্ত্ব মায়েরা টের পেয়ে থাকে, সেদিনকার অভিজ্ঞতা আসলে অন্যরকম এই আনন্দময় মুহূর্তের জন্য মা অপেক্ষা করে চিকিৎসকরা। এই নড়াচড়াকে দরখাস্ত শিশুর সুস্থতার সবচেয়ে বড় লক্ষণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
তারা তাই বলে দেন যে সারা দিনের নড়াচড়া খেয়াল করতে হবে। কোন বার্তা ঘটলে ডাক্তারের কাছে যদি কোন সমস্যা হয়, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
সাধারণত ১৮ থেকে ২৪ সপ্তাহ পর্যন্ত মা প্রথম পেটের ভিতর শিশু নড়াচড়া টের পায়, এই সময় মৃদু কম্পন বা ধাক্কার মত অনুভূতি হয় ক্রমে মা নড়াচড়া ভালো টের পেতে শুরু করে। প্রথমে মা অভিজ্ঞতার কারণে ১৮ সপ্তাহে তা নাও বুঝতে পারবে, এতে ভয়ের কিছু হবে না।
গর্ভাবস্থায় মধ্যেও শিশু বিশ্রাম নিয়ে থাকে ঘুমাতে থাকে। তবে সবাই একটানা ৯০ মিনিটের বেশি থাকবে না, ঘুমাবে না আমাকে বুঝে নিতে হবে। তার শিশু কখন কতক্ষণ নড়াচড়া করে এবং কখন ঘুমায়।
২৮ থেকে ৩৬ সপ্তাহ গর্ভকালে সবচেয়ে বেশি নড়াচড়া করে কিন্তু মায়েরা অভ্যস্ত হয়ে যায়, সাধারণত খাওয়া দাওয়ার পর বেশি নড়াচড়া করে থাকে।
৩৬ থেকে ৪২ সপ্তাহ গর্ভকালে গর্ভস্থ শিশুর আকারে বেশ বড় হয় ও তার নড়াচড়ার স্থান কমে যায়। নড়াচড়া কমে যেতে থাকে কিন্তু তারপরও নড়াচড়া করতে থাকে না।
নড়াচড়া গণনা করার সবচাইতে ভালো সময় হলো দুপুরে ভর পেটে খেয়ে বাঁ কাতে শুয়ে বিশ্রাম নেওয়া যেতে পারে। এদের প্রতি দুই ঘণ্টায় বাচ্চা কতবার নড়ে সেটা হিসাব করতে হবে। দুই ঘন্টায় অন্তত ১০ বার পর্যন্ত নড়াচড়া করে।
কিছু কিছু কারণে বাচ্চার নড়াচড়া কমে যায় বা দীর্ঘ সময় ধরে না। এরকম হতে পারে এগুলো হলো গর্ভফুল সামনের দিকে থাকে ঘুমের ওষুধ খাওয়ার কারণে আসক্ত হলে মা যদি অ্যালকোহল জাতীয় কোন নেশা দ্রব্য খেয়ে থাকে অথবা ধূমপাই হয় জরায়ুতের পানি অতিরিক্ত কমে যাওয়ার কারণে মায়ের যে কোন জটিলতা শারীরিক মানসিক সমস্যা হলে শিশুর শ্বাসকষ্ট দেখা যায়।
নড়াচড়া হঠাৎ করে কমে যাওয়া মানেই গর্ভস্থ শিশুর যেকোন সমস্যায় পড়েছে কিক কাউন্ট কমে গেলে মৃত সন্তান প্রসবের ঝুঁকি থাকে। তাই গর্ভকালে বিশেষ করে শেষের দিকে কিক কাউন্ট করা ও যথাসময়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরী।
শেষ কথাঃ গর্ভাবস্থায় রক্তপাত হলে কি করনীয় ও চিকিৎসা সম্পর্কে জানুন
পরিশেষে বলা যায় যে গর্ভাবস্থায় একজন গর্ভবতী মাকে খুবই সতর্ক থাকতে হবে। কেননা এই সময় শরীরের প্রতি যত্ন নিতে হবে এবং বিশেষ করে প্রথম তিন মাসে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কেননা এই সময় অনেক গর্ভবতী মায়ের রক্তপাত হতে থাকে। তাই গর্ভাবস্থায় রক্তপাত হলে কি করনীয়? সম্পর্কে আজকের আর্টিকেলে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে, আশা করি আপনার উপকার হবে। পোস্টটি ভালো লাগলে আপনার বন্ধু-বান্ধবের নিকট শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ
এম আর মাহমুদ ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url