জানাজার নামাজ পড়ার সঠিক নিয়ম ও ফজিলত সম্পর্কে জানুন
অনেকে জানাজার নামাজ সম্পর্কে জানতে চায়, তাই জানাজার নামাজ পড়ার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে মুসলমান হিসেবে জানা প্রয়োজন। চলুন, জানাজার নামাজ কিভাবে পড়তে হয় সে সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক।
অধিকাংশ মুসলমান আমরা জানাজা নামাজ সম্পর্কে জানি না। কারণ এই নামাজটি প্রতিদিন পড়তে হয় না, এই জন্য এ সম্পর্কে আমাদের জানা প্রয়োজন। তাই জানাজার নামাজ পড়ার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে জানতে পোস্টটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
পোস্টসূচিপত্রঃজানাজা নামাজ পড়ার নিয়ম ও ফজিলত সম্পর্কে জানুন
জানাজার নামাজ পড়ার সঠিক নিয়ম
অনেকেই জানাজার নামাজ সম্পর্কে জানেনা, তাই জানাজার নামাজ পড়ার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে একজন মুসলিম হিসেবে জানা খুবই প্রয়োজন। চলুন, এই সম্পর্কে নিম্নে বিস্তারিত ভাবে জেনে নেওয়া যাক।
মুসলমানদের জন্য জানাজা নামাজ পড়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। জানাজার বাংলা হলো মৃতদেহ, আর এই মরদেহ সামনে নিয়ে যে নামাজ আদায় করা হয় তাকে জানাযা নামাজ বলা হয়। এই নামাজ একটি পাড়া থেকে দুই একজন মানুষ আদায় করলেই সবার হয়ে যাবে। আর কেউ যদি আদায় না করে তাহলে সবাই গুনাগার হতে হবে।
এই নামাজ শুধু পুরুষরা পড়তে পারবে, নারীদের জন্য পড়ার প্রয়োজন নাই। এই নামাজ পড়ার জন্য ওযু করতে হবে ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা হতে হবে।
সংক্ষেপে এই নামাজের নিয়ম হল; মুসল্লিদের অবশ্যই ৫ ওয়াক্ত নামাজের মত করেই অজু করতে হবে, এরপর ইমামের পিছনে দাঁড়াতে হবে।
মৃত ব্যক্তিকে সামনে রাখতে হবে এবং মৃত ব্যক্তির মাঝ বরাবর যিনি এই নামাজ পড়াবেন তিনি দাঁড়াবেন এবং পিছনে মুসল্লিরা দাঁড়াবেন।
এরপর এই নামাজের নিয়ত করা লাগবে অবশ্যই মনে মনে করবেন। নিয়ত বাংলাতে করলেও চলবে, তারপরে হাত উচু করে আল্লাহু আকবার বলে নিয়ত বাধবেন।
প্রথম তাকবীর বলে উভয় হাত উঠাতে হয়। হাত বাধার পরে ছানা পড়তে হয়, ছানার মধ্যে একটু অতিরিক্ত শব্দ যোগ করা লাগে তাহল; "ওয়া জাল্লা সানাউকা" পড়ে দ্বিতীয় তাকবীর বলতে হবে।
দরুদ পড়তে হবে, নামাজের মধ্যে আমরা যে দুরুদ শরীফ পড়ে থাকি সেটাই পড়তে হবে। তবে এই তাকবীরে হাত উঠানো লাগবেনা। জানাজার নামাজের দোয়া পড়তে হবে। এরপর তৃতীয় তাকবীর দিতে হবে, এরপর চতুর্থ তাকবীর দিবেন, তখনো হাত উঠাতে হবে না। এরপরে সালাম ফিরে নামাজ শেষ করবেন।
ইমাম সাহেব তাকবীর গুলো উচ্চস্বরে বলে থাকে, আর পিছনে মুসল্লিরা মনে মনে বলবে। এরপরে দোয়া দরুদ যত আছে সকল কিছুই মুসল্লীরা মনে মনে বলবেন। আপনি যদি নামাজে শরিক হন তাহলে অনেক সওয়াব পাবেন এবং আপনার যদি কোন আত্মীয়-স্বজন কবরে থেকে থাকে তাদের জন্য দোয়া করবেন, তাই নামাজটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
জানাযার নামাজের গুরুত্ব
এই নামাজ একজন মুসলিম হিসাবে জানা খুবই প্রয়োজন, কেননা জানাযার নামাজের গুরুত্ব রয়েছে। তাই আমাদের এই নামাজ সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানা প্রয়োজন। চলুন এ নামাজের এর গুরুত্ব সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
আপনি যেহেতু মুসলমান তাই কোন মানুষ যদি মারা যায় সে ক্ষেত্রে জানাজার নামাজে উপস্থিত হবেন। তার জন্য দোয়া ও কবর জিয়ারত করবেন, এগুলো কাজ করতে পারলে আপনি অনেক সওয়াব পাবেন।
কেননা যদি কোন পাপী মুসলমান মারা যায় সে ক্ষেত্রেও জানাযা নামাজে উপস্থিত হওয়া লাগবে। রাসূল সাঃ বলেছেন, "প্রত্যেক মুসলমানের উপর এই নামাজ পড়া ওয়াজিব করা হয়েছে, তাই যদি কোন খারাপ বা পাপী ব্যক্তি মারা যায়, যদি সে কবিরা গুনাহ করেও থাকে।" আবু দাউদঃ ৩৫০
ইসলামী শরীয়ত মতে আপনার কোন প্রতিবেশী বা আত্মীয়-স্বজন মারা যায়, তার দাফন কাফন যাবতীয় কাজগুলো আপনাদের করতে হবে। এটা একজন মুসলমান হিসেবে আপনার উপর মৃত ব্যক্তির অধিকার রয়েছে।
এই নামাযে যদি কোন মহল্লার কোন একজন ব্যক্তি অংশগ্রহণ করে, তাহলে সবাই গুনাহ থেকে রক্ষা পাবে। আর যদি কেউ এই নামাজে অংশগ্রহণ না করে তাহলে সবাই গুনাগার হবে।
আবু হুরায়রা রাঃ হতে বর্ণিত রাসূল সাঃ বলেছেন, "একজন মুসলমানের উপর অন্য মুসলমানের ছয়টি দায়িত্ব আছে। একঃ যদি কোন মুসলমানের সঙ্গে দেখা হয়, তাহলে সালাম দিতে হবে। দুই, কোন মুসলমান যদি আপনাকে ডাকে তাহলে সারা দেওয়া লাগবে। তিন, যদি কোন মুসলমান আপনাকে সৎ পরামর্শ দেয়, তাহলে আপনিও তাকে সৎ পরামর্শ দিবেন।
চার, যদি কেউ হাচি দেয় এবং আলহামদুলিল্লাহ বলে, তাহলে জবাবে আপনাকে ইয়ারহামুকাল্লাহ বলতে হবে। নাম্বার ৫, যদি কোন মুসলমান অসুস্থ হয় তাহলে তার সেবা যত্ন করতে হবে। ছয়, যদি কোন মুসলমান মৃত্যুবরণ করে তাহলে তার জানাজার নামাজে অংশগ্রহণ করা লাগবে।" সহীহ মুসলিমঃ ২১৬২
এছাড়াও যদি কোন মুসলমান এই নামাজে উপস্থিত হয় এবং মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া করে, তাহলে তার এই দোয়া আল্লাহর কাছে খুবই পছন্দ হয় এবং অনেক মূল্য রয়েছে। রাসূল সাঃ বলেছেন, "কোন মুসলমান যদি মারা যায়, তার জানাজার নামাজে ৪০ জন মানুষ হয় সে ক্ষেত্রে আল্লাহর সাথে যদি তারা কোন শরীক না করে, তাহলে মহান আল্লাহতালা তার এই প্রার্থনা কবুল করবেন। মুসলিম শরীফঃ ২০৮৮
জানাজার নামাজের ফজিলত
আপনি যদি মুসলমান হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই একজন মৃত ব্যক্তির জানাজায় উপস্থিত হতে হবে। কেননা জানাজার নামাজের ফজিলত রয়েছে। তাই এ সম্পর্কে আপনার জানা প্রয়োজন, চলুন এ বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
রাসূল সাঃ এই নামাজ সম্পর্কে মুসলমানদেরকে অংশগ্রহণ করতে বলেছেন। তিনি বলেন, "যে ব্যক্তি এই নামাজ আদায় করা পর্যন্ত অপেক্ষা করবে, তার জন্য এক কিরাত আর দাফন করা পর্যন্ত অপেক্ষা করবে তার জন্য তার জন্য দুই কিরাত সওয়াব। তখন জিজ্ঞেস করলেন দুই কিরাত কি? তখন তিনি বললেন দুটি বিশাল পর্বত সমতুল্য সওয়াবকে বুঝানো হয়েছে।" সহীহ বুখারীঃ ১৩২৫
যদি আপনি এই নামাজে উপস্থিত হন, তাহলে আপনার ভিতরে মৃত্যুর কথা মনে পড়বে। আর এই মৃত্যুর কথা মনে পড়লেই মানুষ পাপ কাজ থেকে বিরত থাকে। তাই বারা রাঃ তিনি বলেছেন, 'আমরা রাসূল সাঃ এর সাথে একটি জানাযায় উপস্থিত ছিলাম, তিনি কবরের কিনারায় বসে কাঁদছিলেন এমনকি তার চোখের পানি মাটিতে ভিজে যাচ্ছিল, এই সময় তিনি বললেন আমার ভাইয়েরা তোমার অবস্থা এদের মতই হবে,তাই আগে থেকেই প্রস্তুতি নিতে থাকো। ইবনে মাজহাঃ ৪১৯৫
এই নামাজের ফজিলত অনেক রয়েছে, এজন্য একজন মুসলমান হিসাবে এই নামাজে অংশগ্রহণ করা আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। তাছাড়া কবরস্থানে গেলে আমাদের পিতা-মাতা আত্মীয়-স্বজন যারা রয়েছেন তাদের কথাও স্মরণ হয় এবং তাদের জন্য আমরা দোয়া করি।
তাছাড়া আমাদের মধ্যেও মৃত্যুর ভয় কাজ করে, যার কারণে আমরা ভালো কাজ করে থাকি। যে কাজের বিনিময়ে আমরা আখেরাতে জান্নাত পাব, তাই এই নামাজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
জুতা পায়ে জানাজার নামাজ
অনেকে জানতে চায় যে জুতা পায়ে জানাজার নামাজ পড়া যাবে কিনা? এ সম্পর্কে আমাদের জানা প্রয়োজন। কারণ অনেকেই জুতা পড়ে এই নামাজ পড়বে কি পড়বে না এটা নিয়ে দ্বিধা দ্বন্দ্বে থাকেন। চলুন এ বিষয় বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক।
আপনি যদি জুতা পায়ে এই নামাজে অংশগ্রহণ করে থাকেন, সেক্ষেত্রে নামাজ হবে কিন্তু যদি আপনার জুতার নিচে কোন অপবিত্র জিনিসপত্র থাকে, তাহলে আপনি এই জুতা পায়ে দিয়ে নামাজ পড়তে পারবেন না।
তবে জুতা পড়া অবস্থায় যদি দাঁড়ান সে ক্ষেত্রে আপনার স্থানটি পরিষ্কার হতে হবে, জুতার নিচে যদি অপবিত্র জিনিসপত্র থাকে তাহলে জুতা খুলে রেখে দিতে হবে। এক্ষেত্রে জুতা পড়ে নামাজ পড়া যাবে না।
জানাজার নামাজে রুকু সেজদা নেই কেন
অনেকেই প্রশ্ন করে থাকে যে, জানাজার নামাজে রুকু সেজদা নেই কেন? আসলে প্রশ্নটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই আমাদের ইসলামের দৃষ্টিকোণে এই বিষয়টি জানতে হবে। চলুন, এ বিষয়ে জেনে নেওয়া যাক।
আমরা সাধারণত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের মধ্যে রুকু সেজদা করে থাকি। এই রুকু সিজদা করার উদ্দেশ্য হলো; আল্লাহকে সর্বশ্রেষ্ঠ এবং তাঁর মর্যাদা, বড়ত্ব, মহত্ব প্রকাশ করা হয়। এছাড়া ওই নামাজের মধ্যে আল্লাহতালার প্রশংসা করে থাকি এবং আমরা তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি।
কিন্তু জানাযা নামাজে মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকেই তার জন্য আমরা দোয়া করে থাকি এবং তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে থাকি। যার কারণে এখানে রুকু সিজদার প্রয়োজন নেই। এজন্যই এই নামাজে রুকু সিজদার বিধান রাখা হয়নি।
এই নামাজটি পড়ার সময় মৃত ব্যক্তি সামনে থাকে। তাই অন্যান্য নামাজের মত যদি আমরা রুকুর সেজদা করে থাকি, তাহলে সাধারণ মানুষজন মনে করবে যে মৃত ব্যক্তির উদ্দেশ্য রুকু সিজদা করা হচ্ছে।
যা এটা বৈধ মনে করবে, মৃত ব্যক্তিকে সামনে রাখার পরে রুকু সেজদা করলে শিরকের সম্ভাবনা রয়েছে। যা মুসলমানদের মধ্যে একটি বিভ্রান্ত সৃষ্টি হবে। আর এই জন্যই এই নামাজের মধ্যে রুকু সিজদার রাখার বিধান নাই।
জানাজা নামাজের গুরুত্ব
এই নামাজ এর ফজিলত অনেক আবার এর গুরুত্ব আছে, তাই জানাজা নামাজের গুরুত্ব সম্পর্কে আমাদের জানা প্রয়োজন। চলুন, এর গুরুত্ব সম্পর্কে নিম্নে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা যাক।
মৃত ব্যক্তির জন্য সুপারিশঃ সাধারণত কোন একটা প্রতিষ্ঠানে বা রাজ দরবারে যদি কোন নতুন কেউ আগমন করে, সে ক্ষেত্রে তাকে অন্যান্য সদস্যরা স্বাগত জানায়। তেমনিভাবে কোন মুসলমান যদি মৃত্যুবরণ করেন তখন আল্লাহর দরবারে হাজির হতে হয়।
সেক্ষেত্রে মৃত্যু ব্যক্তির জানাজার নামাজে তার জন্য প্রার্থনা করে থাকে এবং পরকালের জীবন যেন ভালো হয় সেজন্য দোয়া করে। তাই এই নামাজের অনেক গুরুত্ব রয়েছে।
আমৃত্যু ভাতৃত্বঃ আমরা পৃথিবীতে যেমন একে অপরের সহযোগিতা করে থাকি এবং ভাতৃত্ব বন্ধনে অটুট থাকি, ঠিক তেমনি মৃত্যুর পরেও যেন তার সাথে বন্ধুত্ব এবং ভ্রাতৃত্ব বজায় থাকে। সেজন্য মৃত ব্যক্তির জানাজা নামাজে উপস্থিত হয়ে তার জন্য দোয়া করা এবং তার পরকালীন কল্যাণ কামনা করা।
ক্ষমার শিক্ষাঃ জানাযা নামাজে সাধারণত যারা ভালো মানুষ তারা মৃত ব্যক্তিকে ক্ষমা করে দেয়। তাই মৃত ব্যক্তির প্রতি যদি কারো খুব কষ্ট থেকে থাকে এই দিনের উছিলায় তাকে ক্ষমা করে দেবে। যার কারণে তার পরকালে শাস্তি ভোগ করতে হবে না।
শেষ কথাঃ জানাজার নামাজ পড়ার সঠিক নিয়ম ও ফজিলত সম্পর্কে জানুন
পরিশেষে বলা যায় যে মৃত্যু সবার জন্য নির্ধারিত। তাই এই জানাজার নামাজ আমাদের শিক্ষা দেয় যে আপনিও মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি নিন। এজন্য আমাদেরকে জানাজার নামাজ সম্পর্কে জানতে হবে। অনেকেই হয়তো এ জানাযা নামাজ সঠিকভাবে পড়তে পারেন না।
তাই তারা জানাজার নামাজ পড়ার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে আজকে আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন, তাহলে বুঝতে পারবেন। পোস্টটি ভাল লাগলে আপনার বন্ধু-বান্ধবের নিকট শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ
এম আর মাহমুদ ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url