গর্ভবতী মহিলাদের কোমর ব্যথার কারণ ও করণীয় সম্পর্কে জানুন
গর্ভবতী নারীদের সাধারণত গর্ভাবস্থায় কোমরে ব্যথা হয়ে থাকে, তাই গর্ভবতী মহিলাদের কোমর ব্যথার কারণ সম্পর্কে আগে জানতে হবে। তারপর চিকিৎসা নিতে হবে, চলুন গর্ভাবস্থায় কোমর ব্যাথা হলে কি করবেন সম্পর্কে জানা যাক।
গর্ভাবস্থায় অধিকাংশ মহিলারা তাদের কোমর ব্যাথা হয়, তবে যদি অতিরিক্ত হয় সে ক্ষেত্রে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। তাই গর্ভবতী মহিলাদের কোমর ব্যথার কারণ সম্পর্কে জানতে পোস্টটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
পোস্টসূচিপত্রঃগর্ভবতী মহিলাদের কোমর ব্যথার কারণ ও করণীয় সম্পর্কে জানুন
গর্ভবতী মহিলাদের কোমর ব্যথার কারণ
গর্ভবতী মায়েদের সাধারণত বিভিন্ন কারণে কোমর ব্যাথা হয়ে থাকে। তাই গর্ভবতী মহিলাদের কোমর ব্যথার কারণ সম্পর্কে জেনে চিকিৎসা নিলে সুস্থ হয়ে যাবেন। চলুন, কোমর ব্যথা কি কারনে হয়ে থাকে সে সম্পর্কে জানা যাক।
প্রায় সব গর্ভবতী মায়েদের কোমর ব্যাথা হয়ে থাকে, অনেক গর্ভবতী মায়েরা এই সমস্যার কথা বলে থাকে। তাছাড়া আরো অনেক কিছু সমস্যা দেখা দেয়, সাধারণত এসব ব্যথাগুলো মাতৃত্বকালীন সময়ে বেশি হয়ে থাকে।
গবেষণায় দেখা গেছে যে প্রতি ৪জন নারীর মধ্যে ৩জন নারীর গর্ভাবস্থায় কোমর ব্যথায় ভুগে থাকে। এই সমস্যা সাধারণত গর্ভাবস্থায় শেষের দিকে বেশি হয়ে থাকে। কারণ এই সময়ে গর্ভবতী মায়ের জরায়ুর যে পাশে বাচ্চা অবস্থান করে সেদিকেই বেশি ব্যথা করে থাকে।
গর্ভাবস্থায় কোমরে ব্যথা কারো কারো ক্ষেত্রে সমস্যা হয় না। আবার অনেকের ক্ষেত্রে মারাত্মক সমস্যা হয়ে দেখা যায়। গর্ভাবস্থায় কোমরে ব্যথার কারণ সম্পর্কে চলুন বিস্তারিত জানা যাক।
গর্ভধারণের শুরু থেকেই শরীরে কিছু হরমোনের নিঃসরণ বাড়তে থাকে, এর মধ্যে প্রজেস্টরন এবং রিলাক্সেন হরমোন সন্তান জন্মদানের প্রস্তুতি হিসেবে কোমরের বিভিন্ন জায়গায় জয়েন্টে এবং লিগামেন্টসকে নরম এবং ঢিলা করে দিতে পারে।
যার কারণে মায়ের শরীর ব্যথা হতে পারে, জয়েন্টের ভার বহন করা ক্ষমতা কমে যেতে থাকে এবং হাঁটার সময় অনেকক্ষণ বসে থাকলে নিচে চেয়ার থেকে ওঠার সময় কোন কিছু তোলার সময় এই ব্যথাগুলো সাধারণত দেখা দেয়।
গর্ভাবস্থায় জরায়ু বড় হওয়ার সাথে সাথে অন্তঃসত্তার শরীরে ভরকেন্দ্রকেও পরিবর্তিত হয়ে থাকে এবং পেটের পেশীগুলো সম্প্রসারিত ও দুর্বল হতে থাকে। যার কারণে মায়ের Posutre আক্রান্ত হয়ে থাকে এবং পিঠের উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে, যার কারণে অনেক সময় ব্যথা করে থাকে।
যেহেতু গর্ভবতী মায়ের শরীর এই সময় অতিরিক্ত ওজন বহন করে, তাই এই সময়ে মায়ের শরীরের পেশী এবং জয়েন্টগুলোর উপর বেশি চাপ সৃষ্টি হয়। এর কারণে গর্ভাবস্থায় কোমর ব্যথা হতে পারে।
নারীদের পেলভিসের একজোড়া লিগামেন্ট থাকে যার রাউন্ড লিগামেন্ট বলা হয়। এগুলোর কাজ হল জরায়ুর সঠিক স্থানে ধরে রাখবে।
গর্ভধারণের আগে এই লিগামেন্টগুলো পুরু এবং ছোট হয়ে যায়। গর্ভধারণের পরে জরায়ুর আকার বাড়ার সাথে সাথে এই লিগামেন্টগুলো রাবার ব্যান্ডের মত প্রসারিত হতে থাকে এবং পাতলা হয়।
গর্ভাবস্থায় লিগামেন্ট গুলো টানটান থাকে এবং হঠাৎ করে কোন চাপ পড়লেই ব্যথা হতে থাকে। এই ধরনের ব্যথাকে সাধারণত রাউন্ড লিগামেন্ট ব্যথা বলা হয়।
গর্ভবতী নারীরা যখন জায়গা পরিবর্তন করে তখন রাউন্ড লিগামেন্ট গুলো ব্যাথা হয়ে থাকে। যেমন বিছানা বা চেয়ার থেকে ওঠার সময় ব্যথা হতে পারে। আবার কাশি দেওয়ার সময় করার সময় এই ব্যথা হয়ে থাকে। রাউন্ড লিগামেন্ট ব্যাথার কারণে শারীরিক ধকল খেলেও সাধারণত ব্যথা হতে পারে।
গর্ভাবস্থায় কোমরে ব্যথা হওয়ার অন্যতম কারণ হলো সায়াটিক নার্ভের উপর অতিরিক্ত চাপ পরে। গর্ভাবস্থায় জরায়ু বড় হয়ে যাওয়ার কারণে জরায়ুর চাপ যখন শরীরের দুটি সায়াটিক নার্ভের উপরে পড়ে তখন কোমরে এবং নিতম্বে বা উরুতে ব্যথা করতে থাকে। এই ধরনের ব্যথাকে সায়াটিক ব্যথা বলা হয়ে থাকে।
এই ধরনের ব্যথা কোমর বা কোমরের উপরে পিঠের মাঝখানে ব্যথা হয়ে থাকে। এই ব্যথা কখনো কখনো পায়ের দিকে যায়। আবার কিছু কারণে হয়তো ব্যথা বৃদ্ধি পায় যেমন একটানা অনেকক্ষণ যদি কোথাও বসে থাকেন বা দাঁড়িয়ে থাকেন বা ভারি কিছু যদি তুলতে যান সে ক্ষেত্রে ব্যথা হতে পারে।
এই ব্যথাগুলো রাত্রিতে আরো বৃদ্ধি পেতে থাকে, গর্ভাবস্থায় সারাটিকার হওয়াটাই হতে পারে এটাই স্বাভাবিক বিষয় তারপরও এ ধরনের ব্যথা হলে সাধারণত ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত। কারণ মারাত্মক কোন কিছু হলে সমস্যা দেখা দিতে পারে।
গর্ভকালীন সময়ে নারীদের ওজন বাড়তে থাকে এ বাড়তি ওজন বহন করার কারণে কোমরে ব্যথা হতে পারে।
উপরোক্ত কারণগুলো সাধারণত কোমর ব্যথা হতে পারে, তাই এ বিষয়গুলোর থেকে আপনাকে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে এবং এই সময় আপনাকে ধৈর্য ধারণ করতে হবে তাহলে ঠিক হয়ে যাবে।
গর্ভাবস্থায় কোমর ব্যথা হলে করণীয়
বেশিরভাগ গর্ভবতী মহিলাদের এই সময় কোমর ব্যথা হয়ে থাকে, তাই গর্ভাবস্থায় কোমর ব্যথা হলে করণীয় সম্পর্কে জানলে আপনার এই ব্যথা অনেকটাই কমে যাবে। তাই চলুন, এ বিষয়ে বিস্তারিত হবে আলোচনা করা যাক।
গর্ভাবস্থায় কখনো ভারী জিনিস উঠানোর চেষ্টা করবেন না। কারণ এতে আপনার সমস্যা দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে নিচ থেকে কোন জিনিস তোলা লাগে সে ক্ষেত্রে না ঝুকে আপনি হাঁটু ভেঙে বসবেন এর পরে জিনিসটা তুলবেন। তাছাড়া বাজারের কোন ব্যাগ বা কিছু বহন করার ক্ষেত্রে দুই হাতের সমান ভর দেয়ার চেষ্টা করবেন।
এক হাতে ওজন যদি বেশি নেন সে ক্ষেত্রে শরীরে ভারসাম্য বজায় রাখা কষ্টকর হবে এবং তাতে মেরুদন্ড চাপ লাগতে পারে। আপনি কিভাবে ঘুমাচ্ছেন তার ওপরে নির্ভর করবে আপনার মেরুদন্ডের উপর চাপ করছে কিনা বা কোমর ব্যথা হবে। গর্ভাবস্থায় বাম পাশ ফিরে শোয়ার চেষ্টা করবেন, এতে আপনার মেরুদন্ডের উপর চাপ কম পড়বে।
শরীরের রক্ত প্রবাহ বাধাগ্রস্থ হবে না, এছাড়াও ঘুমানোর সময় দুই পায়ের মাঝখানে বালিশ ব্যবহার করবেন। এতে করে উপরের পায়ের ভর বালিশের উপরে পড়বে। পেটের নিচে বালিশ ব্যবহার করা যেতে পারে বা পিঠের দিকে বালিশ দিয়ে সাপোর্ট হিসাবে রাখতে পারেন।
গর্ভাবস্থায় কোমর ব্যথায় তেমন একটা ক্ষতি নাও হতে পারে তবে এটা বিরক্তিকর সমস্যা। তাই অবহেলাও করা যাবে না। এ বিষয়ে যে কাজগুলো করতে পারেন। চলুন জেনে নেওয়া যাক,
গর্ভাবস্থায় কোমর ব্যথা দূর করার জন্য সবচেয়ে ভালো উপায় হলো ব্যায়াম করা। যার নিজের পেশি শক্তিশালী করা ও গর্ভস্থ শিশুর শক্তিও যোগাবে। গর্ভবতী নারীদের শ্রেষ্ঠ ব্যায়াম হলো হাটা, সাঁতার কাটা এবং সম্ভব হলে ধীরে ধীরে সাইকেল চালাতে পারেন। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ করে ব্যায়াম করা যেতে পারে।
স্ট্রেচিং ব্যায়াম যদি করতে পারেন তাহলে কিছুটা ভালো ফলাফল পাবেন। তবে এ ধরনের ব্যায়াম দ্রুত করা যাবে না এবং বেশিও করতে পারবেন না। ব্যায়ামের সময় ব্যথা বা অন্য কোন অসুবিধা যদি মনে করেন তাহলে ব্যায়াম বন্ধ করে দিবেন।
ব্যথার স্থানে গরম ও ঠান্ডা সেক দেওয়া যেতে পারে কিছুক্ষণের জন্য হলেও ব্যাথা কমে থাকবে। চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে প্রথমে ২-৩ দিন ব্যথাযুক্ত স্থানে ২০ মিনিট করে ঠান্ডা কমপ্রেস এরপর কয়েকদিন একই স্থানে গরম কমপ্রেস দেওয়া যেতে পারে। তবে গর্ভাবস্থায় পেটে কখনোই এ ধরনের কম্প্রেস করা যাবে না।
গর্ভাবস্থায় মেরুদন্ডের উপর বেশি চাপ দেওয়া যাবে না এবং অতিরিক্ত ওজন বহন করা যাবে না। তাই যখন বসে কাজ করবেন তখন একটি ছোট তোয়ালে নিবেন। তা ব্যথার স্থানে লাগিয়ে রাখবেন যতক্ষণ বসে থাকবেন ততক্ষণে সোজা হয়ে থাকার চেষ্টা করবেন, এতে আপনার ব্যথা অনেকটা কমে যাবে।
সাধারণত গর্ভবতী মায়েরা ঝুকে থাকতে পছন্দ করে যার কারনে মেরুদন্ডের খুব চাপ করতে পারে। তাই মাঝে মাঝে সোজা হয়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করতে হবে, ঘাড় পিছনের দিকে থাকবে, বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা যাবে না, কিছুক্ষণ পরপর বিশ্রাম নেওয়া লাগবে।
গর্ভাবস্থায় পায়ে ব্যথার কারণ
গর্ভবতী মায়েদের সাধারণত গর্ভাবস্থায় পায়ে ব্যাথা হয়ে থাকে, তাই গর্ভাবস্থায় পায়ে ব্যথার কারণ সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। চলুন, নিম্নে এ বিষয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা যাক।
গর্ভাবস্থায় একজন মায়ের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে এবং অনেক কিছুই পরিবর্তন হতে পারে। তবে এই সময় তাকে মানসিকভাবে সন্তুষ্টি থাকতে হবে, তাহলেই শরীর ভালো থাকবে এবং এই অবস্থায় কাজকর্ম করতে গিয়েও সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। এ বিষয়ে বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ পরামর্শ দিয়েছেন।
এ সময় সাধারণত গর্ভবতীর পায়ে ব্যথা বাড়তে পারে এবং অনেক ওষুধ কাজ হয় না। অনেক সময় ওষুধ তাদেরকে খাওয়ানো যাবে না। গর্ভাবস্থায় হঠাৎ করে শরীরে ওজন বেড়ে যেতে পারে। যার কারণে পায়ের উপর চাপ পড়ে এই কারণে পায়ের ব্যথা করে।
আর একবার এই ধরনের সমস্যা যদি আক্রান্ত হয় তাহলে অনেক কষ্ট হয়। এমনকি হাঁটা চলাফেরা করাও কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।
এ সময় ঘরোয়া কৌশল গুলো ব্যবহার করতে পারেন। এতে আপনার অনেকটাই ব্যথা কমে যাবে। চলুন, সেই পদ্ধতি গুলো জেনে নেওয়া যাক।
১। এ সময় পা ঝুলিয়ে বসা যাবে না, এতে পায়ের উপর চাপ পড়বে বরং তার পরিবর্তে চেয়ারে বসার পরের ছোট একটা টুল নিতে পারেন। এই কাজটি করলে আপনার কিন্তু অনেক উপকার হবে।
২। অনেকেই বলেন এসয় নড়াচড়া করা যাবে না, তবে এটা ঠিক না। এই সময় ব্যায়ামের প্রয়োজন আছে। এতে পায়ের রক্ত চলাচল স্বাভাবিক থাকবে এমন কি পেশী ও হাড়ের শক্তি বৃদ্ধি পাবে। তার সাথে অস্থির সন্ধির নমনীয়তা ফিরে পাবে। আর এইসব কারণে আপনার পায়ের ব্যথা অনেকটা কমে যাবে।
৩। অনেক গর্ভবতীর ব্যথা যখন বেশি হয় তখন হাঁটা চলাফেরা বন্ধ করে দেয়। যার কারণে ব্যথা আরো বৃদ্ধি পায় এবং যন্ত্রণার প্রকপ বেড়ে যায়। তাই যতই ব্যথা বা যন্ত্রণা থাকুক না কেন অল্প করে হলেও হাঁটতে হবে। একা একা হাঁটতে যদি সমস্যা হয় তাহলে একজনের সাহায্য নিতে পারেন।
৪। গর্ভবতী যদি ব্যথা হয় তাহলে তেল মালিশ করা যেতে পারে, এক কাপ তেল ১-২ বার গরম করে নিবেন। তারপরে সেই তেল পায়ে লাগাতে পারেন, এভাবে যদি নিয়মিতভাবে করতে পারেন ব্যথা অনেকটাই কমে যাবে।
গর্ভাবস্থায় পিঠে ব্যথা হলে করণীয়
অনেক গর্ভবতীর সাধারণত পিঠে ব্যথা করে থাকে, তাই গর্ভাবস্থায় পিঠে ব্যথা হলে করণীয় সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। তাহলে আপনার ব্যথা অনেকটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। চলুন এ সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে সাধারণত পিঠে ব্যথা হয়। প্রায় অর্ধেক থেকে তিন চতুর্থ অংশ গর্ভবতী মহিলারা এই ধরনের পিঠের ব্যথায় ভুগতে থাকে। যদিও ব্যথাটা বিভিন্ন ধরনের হতে পারে প্রাথমিক বা গর্ব অবস্থায় অগ্রগতির সাথে এই বৃদ্ধি টা দেখা যেতে পারে।
দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকের সময় কারো কারো এটা আরো খারাপ অবস্থায় হয়ে থাকে। এ ব্যথা গর্ভাবস্থার পরে অনেকের পরেও হতে পারে আবার কয়েক মাসের মধ্যেও সেরে যেতে পারে।
প্রথম অবস্থায় এটি সামান্য ব্যথা হয় গর্ব অবস্থায় প্রথম দিকে প্রসবের জন্য শরীরকে প্রস্তুত করতে হবে প্রস্তুত করতে লিগামেন্ট গুলি নরম হয়ে যায় এবং প্রসারিত হতে থাকে জরায়ুর ক্রমবর্ধমান আকার মন্ত্র এবং পেলভিস এর উপর চাপ তৈরি করে এর কারণে প্রথম দিকে শরীরে পিঠের নিচের অংশে ব্যথা শুরু হয় গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে ক্র্যাম্পিং ও পিঠের ব্যথার অন্যতম কারণ হতে পারে
প্রোজেস্টরন বাড়ার কারণে পিলভিস নরম হয় যা সম্পূর্ণ শরীরকে প্রভাবিত করে এবং পিঠের নিচের অংশ ব্যথা শুরু হয়। প্রথম দিকে পিঠে ব্যথা, মানসিক চাপ উদ্বেগ, ওজন বৃদ্ধি এবং হরমোনের পরিবর্তনের কারণেও দেখা দিতে পারে।
যখন গর্ভাবস্থার সময় এগিয়ে আসে তার সঙ্গে ক্রমবর্ধমান পেট ওজন বৃদ্ধির কারণে নিচের অংশের চাপ তৈরি হয়। যার কারণে পিঠে ব্যথা হতে পারে এটা সাধারণত শেষের দিক পর্যন্ত থাকে।
শেষের দিকে পিঠে ব্যথা, অকাল প্রসব বা মূত্রনালের সংক্রমণ কে নির্দেশ করে থাকে। আপনি যখন সন্তান প্রসবের সময়ের কাছাকাছি আসবেন তখন আপনার শরীরের প্রতিটি অংশ ব্যথা শুরু হবে। এই সময় শরীর অস্বস্তিকর লাগবে এবং বেদনা-দায়ক হবে।
এমনটা শুধু সাধারণ বলেই কষ্ট পাওয়ার কথা তাই এগুলো উপসর্গ থাকলে বা পিঠের ব্যথা দূর করার জন্য যে প্রাথমিক যত্নগুলো নিতে পারেন সে সম্পর্কে চলুন জেনে নেওয়া যাক।
ধ্যান এবং যোগব্যায়াম করুনঃ ধ্যান ও মন শরীরকে শান্ত করতে সাহায্য করবে এবং ব্যথা অনেকটা সেরে যাবে। ধ্যান অনুশীলন করার বিভিন্ন উপায় আছে, শুধুমাত্র শুয়ে পড়তে পারেন অথবা গান শুনেও করা যাবে। আর একটি উপায় হল নিঃশ্বাস নেওয়া এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের কৌশল গুলো অনুসরণ করতে পারেন।
আপনার শরীরের যোগব্যায়াম, শরীরের নমনীয়তা এবং শক্তির উপর ভিত্তিশীল হবে। যা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য এই ব্যথাটা অনেকটাই কমে যাবে। প্রসাদপূর্ব যোগ ব্যায়াম গর্ভাবস্থায় পিঠ জয়েন্ট এবং পেশীর সমস্যাযুক্ত গুলো সমাধান করবে। তাছাড়াও এটি শরীরে অঙ্গভঙ্গি উন্নত করতে সাহায্য করে এবং ঘুম ভালো হয়।
ঘুমের অবস্থান এবং সমর্থনঃ সব সময় পাশ ফিরে ঘুমানোর কথা বলা হয়। এর কারণে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পাবে এবং গর্ভাবস্থার আপনার পিঠে ভর দিয়ে শুয়ে থাকা অনুপযুক্ত হবে। একটি নির্দিষ্ট ঘুমের সময় বজায় রাখতে হবে।
সঠিকভাবে ঘুমের অভ্যাস করতে হবে, ঘুমানোর দুই থেকে তিন ঘন্টা আগে অতিরিক্ত না খাওয়া ও শোয়ার মধ্যে একটি নির্দিষ্ট ব্যবধান বজায় রাখতে হবে। প্রতিদিন কমপক্ষে সাত ঘন্টা ঘুমানোর চেষ্টা করতে হবে। ব্যথা উপশম করতে সাহায্য করার জন্য আপনার বিছানার গদি দৃঢ় এবং সহায়ক হতে হবে।
গর্ভাবস্থায় সাহায্যকারী বেল্ট এবং বালিশঃ একটি ভালো সহায়ক বালিশ রাখতে পারে। বালিশ হিসেবে ব্যবহার করা যাবে এটি পিঠের চারপাশের অঞ্চলকে শিথিল করবে এবং অতিরিক্ত সাহায্য করবে। মাতৃত্বকালীন বেল্ট বা সাপোর্ট বেল্টগুলো পাওয়া যায়।
সেটা পিঠের নিচে দিতে পারেন তার পিঠের ব্যথা কমাতে সাহায্য করবে। মেরুদণ্ডকে আঘাত থেকে রোধ করার চেষ্টা করবে এবং পিঠের অংশের চারপাশে ওজন দ্বারা প্রতিস্থাপিত হবে।
শারীরিক ভঙ্গির উন্নতিঃ গর্ভাবস্থায় শারীরিক পরিবর্তন হয়ে থাকে। পিঠের দিকে ঝুঁকে পড়ে যার ফলে পিঠে ব্যথা হয়ে থাকে, সোজা হয়ে দাঁড়ান এবং আপনার বুককে সামনে ও কাধকে পিছনে ধরে রাখার চেষ্টা করবেন।
আপনার পিঠের অতিরিক্ত মেদ কে সামনের দিকে ফেলা যাবে না। বসার সময় সোজা হয়ে বসতে হবে, বালিশের সাহায্য নিতে পারেন অথবা বালিশের সাহায্য নিতে পারেন। এটা পিঠের নিচের অংশের চাপ দূর করবে এবং বেশিগুলোকে আরো শক্তিশালী করতে পারে।
নিয়মিত সামান্য ব্যায়াম করবেনঃ গর্ভাবস্থায় বিশ্রামের জন্য হালকা ব্যায়াম করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে স্ট্রেসিং ব্যথা করবে, তারপর প্রতিদিনের রুটিনে স্ট্রেসিং এর ব্যায়াম রাখতে পারেন। এতে পিঠের ব্যথা কমাতে সাহায্য করবে এবং শারীরিক নমনীয়তা উন্নত করবে। এছাড়াও পাইলেস এবং যোগব্যায়াম করা যেতে পারে।
গর্ভাবস্থায় হালকা মালিশ নিনঃ এটাকে প্রসব পূর্ব মালিশ বলা হয়ে থাকে, মালিশ পিঠের ব্যথা উঠবে এবং বিষন্নতা কমাতে সাহায্য করবে। এটা তাৎক্ষণিক আরামদায়ক হতে পারে, এটা পেশীকে সংকোচন করবে। যা আপনার মস্তিষ্কের ব্যথার সংকেত পাঠাবে এটি আপনার শরীরের জন্য খুবই আরামদায়ক হবে। তবে সম্পন্ন নিরাপদ থাকার জন্য অবশ্য চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
সাঁতার কাটার চেষ্টা করবেনঃ সাঁতার কাটা প্রসব পূর্ব ব্যায়ামের অন্যতম সেরা হিসাবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। আপনি যখন জলে থাকবেন তখন কোন মাধ্যাকর্ষণ শক্তি কাজ করবে না। সুতরাং আপনি তখন ওজন হীনতা অনুভব করতে থাকেন।
এমনটা যেহেতু মেরুদন্ডকেস ডিকম্প্রেস করলে ফলে পিঠে চাপ লাগে না। সাঁতার কাটার আপনার পেশী পা এবং বাহুগুলোকে শক্ত করবে। যাই হোক অবশ্যই সাঁতার কাটার সময় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
গর্ভাবস্থায় বুকে ব্যথা
গর্ভাবস্থায় অনেক নারীর বুকে ব্যথা হয়ে থাকে, তাই গর্ভাবস্থায় বুকে ব্যথা হলে কি করবেন সে সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। বুকে ব্যাথা হলে কি করা যায়, আপনাকে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
নিশ্চিতভাবে যখন আপনি দাঁড়াবেন সে সময় আপনার ভঙ্গীটি যেন সোজা হয়। এতে আপনার ফুসফুসে অক্সিজেনের সরবরাহ ঠিক থাকবে।
দেহের উপরের অংশ সামান্য উঁচুতে রাখবেন এবং শুয়ে থাকার সময় কুশন ব্যবহার করা যেতে পারে।
ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন এবং আয়রন জাতীয় খাবার গুলো খেতে হবে।
স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ করা লাগবে এবং যাতে করে আপনি চর্বি কম ও পুষ্টি বেশি পান সেই জাতীয় খাদ্য খেতে হবে।
দেহের ওজন নিয়ন্ত্রণ রাখতে হবে তাহলে আপনার দেহের হরমোনের পরিবর্তন সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
ভিটামিন বি৬, ভিটামিন বি১ এবং ভিটামিন ই এসব জাতীয় খাবার গুলো খাবেন। কারণ আপনার এইসব জাতীয় খাবার গুলো শরীরের জন্য প্রয়োজন।
অতিরিক্ত মসলা জাতীয় খাবার গুলো এড়িয়ে চলতে হবে এবং অ্যালকোহল ও ক্যাফিন জাতীয় খাবার খাবার থেকে বিরত থাকতে হবে।
কিছু সময় পর পর অল্প করে খাবার খাওয়ার সাথে সাথে শুয়ে পড়বেন না।
জরায়ুটি রক্তনালী গুলি এবং অন্যান্য অঙ্গ গুলোর উপর যেন চাপ তৈরি না হয়, সেদিকে আপনার খেয়াল রাখতে হবে সেজন্য আপনার বাম দিক ফিরে ঘুমাতে হবে।
চিন্তা মুক্ত এবং স্ট্রেস থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ধ্যান ও যোগ ব্যায়াম করতে পারবেন।
ব্যথা কমানোর জন্য ঘরোয়া পদ্ধতিঃ বুকের ব্যথা কমানোর জন্য অনেক ওষুধ খাওয়া যেতে পারে। তবে ঘরোয়া পদ্ধতিতে চেষ্টা করলে সবচেয়ে ভালো হবে। কারণ গর্ব অবস্থায় সাধারণত সব ওষুধ খাওয়া যায় না। এর কারণে কারণ শিশুর উপরের প্রভাবটা করতে পারে, তাই আপনি ঘরোয়া পদ্ধতি করলে সবচেয়ে ভালো হবে। চলুন, ঘরোয়া পদ্ধতি সম্পর্কে জানা যাক।
প্রতিদিন একগ্লাস গরম দুধের সাথে এক চামচ মধু খেতে পারেন।
এছাড়াও আদা চা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তাই আপনি নিয়মিতভাবে আদা চা খেতে পারেন।
হজম সমস্যা সহায়তা করার জন্য আপনি নিয়মিতভাবে বাদাম খেতে পারেন।
নিয়মিতভাবে ডাবের পানি খাওয়া যেতে পারে কারণ এটি প্রাকৃতিক অ্যাসিড প্রশমনকারী হিসেবে উপকার করবে।
পেটের এসিড যেন বৃদ্ধি না পায় সেজন্য আপেল সিডার ভিনেগার খেতে পারে।
উপরোক্ত ঘরোয়া পদ্ধতি গুলো অবলম্বন করলে আপনার বুকের ব্যথা অনেকটাই কমে যাবে। তাই এই ঘরোয়া পদ্ধতির ব্যবহার করতে পারেন। কারণ এর কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই বরঞ্চ এটা আপনার অনেক উপকার হবে।
গর্ভাবস্থায় ব্যাক পেইন
অনেক গর্ভবতী মহিলার ব্যাক পেইনের সমস্যা থাকে, তাই গর্ভাবস্থায় ব্যাক পেইন ব্যথা কমানোর জন্য যা করবেন। তা নিম্নে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করা হলো। চলুন জেনে নেওয়া যাক,
গর্ভবতী মহিলাদের সাধারণত ব্যাকপেইনের সমস্যা বেশি দেখা যায়। এর কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন সন্তান ধারণের পর ধীরে ধীরে মহিলাদের পেট সামনের দিকে ঝুকে যায়। যার কারণেই মেরুদন্ডের হাড় বেকে যায় এ কারণে শতকরা ৬০ ভাগ মহিলার ব্যাক পেইন সমস্যা দেখা দেয়।
আর এই তথ্যটি দিয়েছেন একজন খ্যাতিমান গাইনি বিশেষজ্ঞ। তিনি বলেছেন, গর্ভবতী মহিলাদের ব্যাক পেইন চিকিৎসার ওষুধের পরিবর্তে এক্সারসাইজ করা সবচাইতে ভালো। কারণ প্রেগনেন্সিতে নানা ধরনের শরীরবৃত্তীয় বা অ্যানোটোমিক্যাল ও ফিজিওলিকাল পরিবর্তন হওয়ার কারণে এক্সারসাইজ করলে ব্যাক পেইন এর সমস্যা সমাধান হবে।
তবে কোন বড় ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ ব্যায়াম করা যাবে না, শুধুমাত্র দাঁড়িয়ে স্পাইন পিছনের দিকে খানিকটা বাঁকানো যেতে পারে। ঘরের মেঝেতে হাঁটা যাবে দেওয়ালে পিঠ লাগিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে পারবেন অথবা বসে বা শুয়ে হাঁটু বাঁকানোর ব্যায়াম করা যাবে।
এছাড়া গর্ভাবস্থায় হাঁটা, সুইমিং হালকা সাইক্লিং করা যেতে পারে। তবে গর্ভাবস্থায় উচ্চ রক্তচাপ সহ নানা ধরনের জটিল সমস্যা আছে, তাদের ক্ষেত্রে ব্যাকপেইনের এক্সারসাইজ না করাই উত্তম। এক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
শেষ কথাঃ গর্ভবতী মহিলাদের কোমর ব্যথার কারণ ও করণীয় সম্পর্কে জানুন
পরিশেষে বলা যায় যে একজন গর্ভবতী মহিলার সাধারণত শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ব্যথা হয়ে থাকে। বিশেষ করে কোমর ব্যথা হয়ে থাকে। তাই আপনার যদি বড় ধরনের কোন রোগ ব্যাধি না থাকে, তাহলে শারীরিক ব্যায়াম করা সবচাইতে উত্তম। তবে হালকা ধরনের শারীরিক ব্যায়াম করতে পারেন।
তাই আজকের আর্টিকেলে গর্ভবতী মহিলাদের কোমর ব্যথার কারণ ও করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি আপনার উপকার হবে। পোস্টটি ভাল লাগলে আপনার বন্ধু-বান্ধবের নিকট শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ
এম আর মাহমুদ ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url