বডি স্প্রে বা পারফিউম ব্যবহার করলে কি নামাজ হবে, বিস্তারিত জানুন

যারা নিয়মিত নামাজ পড়েন তারা জানতে চেয়েছেন যে, পারফিউম ব্যবহার করলে কি নামাজ হবে? যে সব পারফিউম ব্যবহার করলে নামাজ পড়তে পারবেন না, সে সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। চলুন, এ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
ছবি
অনেকেই বডি স্প্রে বা পারফিউম ব্যবহার করতে পছন্দ করে থাকেন, তাই পারফিউম বা বডি স্প্রে ব্যবহার করে নামাজ পড়ার সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। তাই পারফিউম ব্যবহার করলে কি নামাজ হবে? সম্পর্কে জানতে পোস্টটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।

পোস্টসূচিপত্রঃবডি স্প্রে বা পারফিউম ব্যবহার করলে কি নামাজ হবে, বিস্তারিত জানুন

পারফিউম ব্যবহার করা কি হারাম

অনেকে পারফিউম ব্যবহার করতে পছন্দ করে কিন্তু এটা ইসলামের দৃষ্টিকোণে ব্যবহার করা যাবে কিনা। তাই পারফিউম ব্যবহার করা কি হারাম? সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। চলুন ইসলামের দৃষ্টিকোণ এটা জায়েজ কিনা সে সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

সুগন্ধি বা আতর রাসুল সাঃ পছন্দ করতেন তাই তিনি ব্যবহার করতেন এবং সাহাবীদেরকেও ব্যবহার করার উৎসাহিত করেছেন। এ ব্যাপারে হাদিস বর্ণনা আছে হযরত আনাস ইবনে মালেক রাঃ বর্ণনা করেছেন 'রাসূল সাঃ এর সুরভী চেয়ে হৃদয়ে কারা কোন ঘ্রান আমি কখনো গ্রহণ করিনি।' মুসলিম শরীফ 

অন্য একটি হাদিসে হযরত আনাস ইবনে মালেক রাঃ বর্ণনা করেছেন রাসুল সাঃ বলেছেন, তোমার পৃথিবীর সুগন্ধি আমার কাছে এবং নামাজের ভেতর আমার চোখের শীতলতা রাখা আছে। নাসাঈ হাদিস নং ৩৯৩৯

অন্য আরেকটি হাদিসে এসেছে রাসূল সাঃ কে যদি কেউ সুগন্ধি উপহার দিত, তিনি সাদরে গ্রহণ করতেন। কেউ সুগন্ধি দিলে ফিরে দেননি, সাহাবীদেরকেও ফেরত দেওয়ার জন্য নিষেধ করেছেন। বুখারী শরীফ হাদিস নং ৫৫৮৫

উপরোক্ত হাদিসগুলো দ্বারা প্রমাণিত হয় যে রাসূল সাঃ ও সুগন্ধি ব্যবহার করেছেন। তবে সেই সুগন্ধি গুলো কোন হারাম বস্তু দ্বারা তৈরি করা হয়নি। তাই তিনি ব্যবহার করেছেন এবং এটা জায়েজ রয়েছে।
তবে বর্তমানে যে সুগন্ধি বস্তু যেমন সেন্ট, বডি স্প্রে পারফিউম এ সকলগুলো অ্যালকোহল ছাড়া তারা তৈরি করতে পারে না। তাই এ বিষয়ে ইসলামের বিধান হল যে সকল পারফিউম গুলোর অ্যালকোহল আঙ্গুর, খেজুর অথবা কিসমিস থেকে তৈরি করা হয়।

তাহলে সেই সকল অ্যালকোহল এর তৈরি পারফিউম গুলো ব্যবহার করা হারাম। এ ধরনের অ্যালকোহল মিশানো সুগন্ধি ব্যবহার করবেন না। কেননা মহানবী সাঃ বলেছেন নেশা সৃষ্টিকারী প্রতিটি বস্তুই হারাম হবে। বুখারী শরীফ হাদিস নং ৪৩৪৩

উপরোক্ত তিনটি বস্তু ছাড়া যে সকল অ্যালকোহল তৈরি হয়, সেগুলো ব্যবহার করা যাবে। তাই এখনকার সেন্ট বা বডি স্প্রে গুলোর মধ্যে সাধারণত আঙ্গুর, খেজুর বা কিসমিস থেকে প্রস্তুত করা অ্যালকোহল দেখা যায়নি।

বরং বিভিন্ন শস্য দানা গাছ পালার ছাল মধু শস্য যব, আনারসের রস, গন্ধক ও সালফেট এছাড়া আরো অন্যান্য রাসায়নিক উপাদান দিয়ে থেকে প্রস্তুতকৃত অ্যালকোহল মিশানো যায়। তাই এই সকল নাপাক হবে না, এগুলো নেশার উদ্যোগ না হলে পরিমাণ মতো ব্যবহার করা যাবে।

যেহেতু যেহেতু সেন্ট বা বডি স্প্রে গুলোতে সামান্য পরিমাণ পরিশোধিত অ্যালকোহল ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তাই শরীরের অভ্যন্তরে কোন প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে না। তাই এগুলো ব্যবহার করা যাবে তবে এরূপ না করাই ভালো।

পারফিউম ব্যবহার করলে কি নামাজ হবে

অনেকে জানতে চায় যে পারফিউম ব্যবহার করলে কি নামাজ হবে? আসলে এটা নির্ভর করবে পারফিউমের ভিতর কি পরিমান অ্যালকোহল আছে। তাই চলুন এ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।

বর্তমানে যে সকল বডি স্প্রে বা পারফিউম বাজারে দেখতে পান সেগুলো সাধারণত আঙ্গুর বা খেজুরের থেকে প্রস্তুত করা হয় না। বিভিন্ন শস্য দানা গাছ পালার ডাল ইত্যাদি দিয়ে তৈরি করা হয়ে থাকে। হাইড্রোক্সিম মূলকের সংখ্যার উপর ভিত্তি করে এক শ্রেনীর অ্যালকোহল তৈরি হয়।

যাকে আমরা হাইড্রিক অ্যালকোহল বলে থাকি যেমন মিথানল, ইথানল আতরস এর পারফিউম সকল ধরনের প্রসাধনী বা কসমেটিক পণ্য গুলোর মধ্যে ব্যবহার করা হয়। প্রাচীনকাল থেকেই ইথানল অ্যালকোহল, আখের রস, গ্রাজুয়েট তৈরি করা যায়।

বর্তমানে ওপরে লিখিত জিনিস অ্যালকোহল বৃক্ষরসের পাশাপাশি মিষ্টি করা হয়ে থাকে এগুলো সবই পবিত্র আর এগুলো থেকে যদি বডি স্প্রে তৈরি করা হয় তাহলে সেটা পবিত্র।

এ সকল জিনিস থেকে যদি প্রস্তুত অ্যালকোহল মেশানো হয়ে থাকে তাহলে সেটা নাপাক হবে না। সুতরাং তা ব্যবহার করা জায়েজ হয়ে যাবে।

পারফিউম বডি স্প্রে বা ডিওডোরেন্ট এই সকল যদি অ্যালকোহলের মাত্রা সামান্য পরিমাণ থাকে তাহলে সেটা ব্যবহার করা যাবে। অ্যালকোহলের মাত্রা ১ শতাংশ বা ২ শতাংশ যদি হয় সেটি ব্যবহার করা জায়েজ বা নামাজ হবে কিন্তু এটি নির্ভর করছে অ্যালকোহলের মাত্রা কোন পর্যায়ে তার উপরে।

বডি স্প্রে অ্যালকোহল নয় এর লক্ষ্য হলো দুর্গন্ধ থেকে দূর করা। একজন ওলামায়ে কেরাম তার ফতোয়ার মধ্যে বলছেন কোন জিনিস যে উদ্দেশ্যে ব্যবহার করেন এবং সেই উপাদানের মধ্যে যদি তাহলে সেটা যদিও পাঠানের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন কিছুই না হয়ে থাকে। তাহলে এ জিনিস ব্যবহার করা ইসলামের শরীয়ত মতে তেমন বাধা নেই।

এটা জায়েজ হবে যেমন সাবান, এহরাম অবস্থায় সুগন্ধি ব্যবহার করা যাবে না। সাবান ব্যবহার করছেন সাবানের মধ্যে এক শতাংশ সুগন্ধি আছে, তাই এটি ব্যবহার করা যাবে। কারণ আপনি তো সুগন্ধি ব্যবহার করছেন আপনার উদ্দেশ্য ভালো সে হিসেবে আপনার সমস্যা হবে না।

সুতরাং ব্যবহার করা যাবে তবে অ্যালকোহলের মাত্রা অতিরিক্ত যদি হয় সে ক্ষেত্রে এটা ব্যবহার করা যাবে না কিন্তু এমনটি মনে হলে আপনি ব্যবহার করবেন না। অ্যালকোহল যুক্ত যেসব সুগন্ধি বা পারফিউম পাওয়া যায় সেগুলো ব্যবহার করা অ্যালকোহল যুক্ত সুগন্ধি ব্যবহার করা জায়েজ আছে কিনা তা জানার জন্য মদ ও অ্যালকোহলের বিধান জানতে হবে।

ইমাম আবু হানিফা রঃ এর মতে মদ বা অ্যালকোহল হল আঙ্গুরের কাঁচা রস থেকে তৈরি করা হয়ে থাকে যখন এটা ভালোভাবে সিদ্ধ হয় তখন সেটা মদ হয়ে যায়।

এক কথায় যে মদ বা অ্যালকোহলের উপাদান আঙ্গুর সেটাই আসলে মদ বলা হয়, যদি এটা অপবিত্র বিক্রয় ব্যবহার অল্প বা বেশি নেশা হোক বা না হোক এগুলো সবই হারাম করা হয়েছে। সবাই এক নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

আরও একটি কথা হলো সেটা এমন ধরনের মত যেটা যার মধ্যে খেজুর বা কিসমিস করেছেন। যদিও এটাও কিন্তু হারাম অল্প হোক তবে এর নিষেধাজ্ঞ া প্রথমটার মতো আরেকটি অকার্য ধরে দিয়েছেন।

তবে আপনার যদি একটা মেডিসিনের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয় তাহলে সে ক্ষেত্রে এটা খারাপ হবে না, হারাম হবে না। কারণ এর মধ্যে যে অ্যালকোহলগুলো আছে সেটার উপাদান হলো গম জব এবং মধু

আসলে অ্যালকোহলের বিধান হল নেশা ও দূরত্ব দিয়ে না করে, সেই ক্ষেত্রে এটা বৈধ হয় নেশা উদ্ধার করা পরিমাণ ব্যবহার করা কিন্তু বৈধ হবে না। আবু হানিফা রঃ ও ইমাম ইউসুফ রঃ একই অভিমত ব্যক্ত করেছেন।

এ বিষয়ে আরেকজন মুফতি বলেন বর্তমান বিশ্বে বিভিন্ন দেশে অ্যালকোহল ব্যবহার করছে। বিভিন্ন ওষুধ তৈরিতে ব্যবহার করে থাকে রাসায়নিক বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করেন। বহু শিল্প কারখানায় অ্যালকোহলের ব্যবহার করা ছাড়া এবং চলাটাই কঠিন। এক কথায় বর্তমান সময়ে বহু মানুষ এর সাথে জড়িত হয়ে গেছে বরং এর প্রচণ্ড প্রয়োজনীয়তা আছে।

এখন আমাদের তবে আমাদের সমাজের লোকজন যদি নেশাগ্রস্ত জাতীয় কোন কিছু খেয়ে থাকে। তাহলে সেই ক্ষেত্রে এটা আমাদেরকে তাদের সতর্ক করতে হবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। বর্তমানে যে অবস্থা সেই হিসেবে তারা আঙ্গুরের কাঁচা রস থেকে তৈরি না হয় তাহলে সেটা বৈধ হবে না।

মূল কথায় আসি ইমাম আবু হানিফা রঃ বলেছেন সবার মতামতের ভিত্তিতে বলা যেতে পারে যে, কখন জাতীয় খেজুর ও আঙ্গুর থেকে প্রস্তুত না হয়ে থাকে তবে সেটা বৈধ হবে কারণ নেশার অধ্যায় হবে না এবং পরিমাণে কম করে খেতে পারবেন।

এটা সত্য যে বর্তমান বেশিরভাগ লালগোলাপ খেজুর থেকে তৈরি হচ্ছেনা সুতরাং এটা বৈধ হিসেবেই ভিসা ধরা হবে।

অ্যালকোহল মিশ্রিত পারফিউম ব্যবহার কি জায়েজ

অনেকে প্রশ্ন করে থাকে অ্যালকোহল মিশ্রিত পারফিউম ব্যবহার কি জায়েজ? তাই এই বিষয়ে আমাদের জানা প্রয়োজন। চলুন, এ বিষয়ে ইসলাম কি বলেছে সে সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক।
ছবি
প্রচলিত অধিকাংশ বডি স্প্রে ও পারফিউম বা সেন্ট কিছু শর্তসাপেক্ষে ব্যবহার ও বিক্রয় করা যেতে পারে। তবে অ্যালকোহল যুক্ত পারফিউম ব্যবহার না করাই ভালো, এর বিপরীতে অ্যালকোহল মুক্ত ব্যবহার করতে হবে। অ্যালকোহল মিশ্রিত পারফিউম নিয়ে চলুন কিছু কথা জেনে নেওয়া যাক।

যে অ্যালকোহল খেজুর বা আঙ্গুর দ্বারা তৈরি করা হয় না, সেগুলো মৌলিকভাবে অপবিত্র হবে না এবং যদি এটা ব্যবহার করলে নেশা উদ্বেগ না হয়, তাহলে ব্যবহার করা জায়েজ হবে। এ বিষয়টি ইমাম আবু হানিফা রঃ ও ইমাম আবু ইউসুফ রঃ মতামত দিয়েছেন।

বর্তমানে সুগন্ধী যুক্ত অনেক বস্তু আছে যেমন সেন্ট, বডি স্প্রে এগুলো অ্যালকোহল ছাড়া প্রস্তুত করা অসম্ভব হয়েছে। এজন্য সেন্ড বা বডি স্প্রে গুলোতে সাধারণত আঙ্গুর বা খেজুর বা কিসমিস থেকে প্রস্তুত করে।

অ্যালকোহল থাকে না বরং এগুলোর ভিতরে এই অ্যালকোহলের মধ্যে বিভিন্ন শস্যদানা গাছপালার ছাল, ভাত মধু শস্য আনারসের রস গন্ধক ও অন্যান্য রাসায়নিক উপাদান নিয়ে প্রস্তুত করা হয়। সেগুলো ব্যবহার করা জায়েজ আছে।
সুতরাং এইসব বৈধ উদ্দেশ্য ক্রয় বিক্রয় করতে পারবেন অথবা ওষুধ তৈরিতে বা চিকিৎসার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যেতে পারে, এছাড়া আরো অন্যান্য কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে।

বিভিন্ন হালাল-হারাম উপাদান মিক্সড করে যদি রাসায়নিক বিক্রিয়ায় রিফাইন করার মাধ্যমে মৌলিকত্ব নিঃশেষ করা হয়ে থাকে, তাহলে সেটাকেও হারাম বলা যায় না। আর যদি যেসব হারাম বস্তুর মৌলিকত্ব থেকেই যায় তাহলে সেই বস্তু মিশ্রিত যদি করা হয় সেটা জায়েজ হবে না।

কেননা রাসূল সাঃ বলেছেন 'নেশা সৃষ্টিকারী প্রতিটি বস্তু হারাম হবে' বুখারী শরীফ হাদিস নাম্বার ৪৩৪৩

মদকে যখন লবণ বা অন্য কিছু দ্বারা সিরকা বানানো হয় তখন আমাদের এটা হালাল হবে, কারণ এতে ইমাম আবু হানিফা রঃ মতামত দিয়েছেন।

তাই যে বডি স্প্রে গুলোর মধ্যে এই উপাদান গুলো থাকবে সেটা অপবিত্র হবে না। আর যেগুলোর মধ্যে নেশার উদ্যোগ থাকবে সেগুলো অপবিত্র হবে। এক কথায় আপনি যে বডি স্প্রে বা পারফিউম ব্যবহার করেন না কেন সেটা যদি নেশার উদ্যোগ না হয়, তাহলে সেটা ব্যবহার করা জায়েজ হবে।

উপরোক্ত এইসব উপাদানগুলো রিফাইন করা যদি হয় এবং শরীরে কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখা যায়, তাহলে এগুলো ব্যবহার করা যাবে। তবে যদি এ সমস্যাগুলো থেকে যায় সে ক্ষেত্রে আপনার ব্যবহার না করাই ভালো।

তাছাড়া হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহারের ক্ষেত্রেও এই একই বিধান প্রযোজ্য হবে, যেমন হ্যাক্সিসল যদিও শতকরা ৭০ বা অ্যালকোহল এর ভিতর আছে।

সুগন্ধি ব্যবহারের নিয়ম

ইতিমধ্যে আমরা জেনেছি পারফিউম ব্যবহার করলে কি নামাজ হবে? এখন জানবো এটা ব্যবহারের নিয়ম সম্পর্কে। তাই ব্যবহারের নিয়ম সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। চলুন এ সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক।

প্রচন্ড গরমে ঘামের বিব্রতকর দুর্গন্ধ দূর করার জন্য সুগন্ধি আমরা ব্যবহার করে থাকি। তাই এটা ব্যবহারের একটি নিয়ম রয়েছে আর সেটা আপনাকে জানতে হবে। এছাড়াও এটা নিজেকে প্রফুল্ল রাখার জন্য অনেকে পছন্দ করে থাকে।

তবে অনেক সময় আমাদের একটা ভুল হয়ে থাকে ব্যবহারের ক্ষেত্রে আবার পোশাক অনেক সময় নষ্ট হয়ে যেতে পারে ভুল ব্যবহার কারণে। এছাড়া এই সুগন্ধিটা ধরে রাখার জন্য কিছু টিপস আছে সে সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। চলুন জেনে নেওয়া যাক,

পোশাকের উপর ডিওডোরেন্ট ব্যবহার করবেন না, এতে পোশাক নষ্ট হতে পারে। ডিওডোরেন্ট শরীরে স্প্রে করা যাবে এতে অনেকক্ষণ গন্ধ থাকে। পারফিউম পোশাকে দেওয়া যাবে তবে গলায়, হাতের কূনই এর নিচে এবং বাহু মূলে দেওয়া যাবে না।

গোসলের পরপরই সুগন্ধি ব্যবহার করবেন, গোসলের পর ত্বক পরিষ্কার ও ভেজা থাকার কারণে লোমকূপ গুলো ময়লা থাকে না। ফলে এই সময় ব্যবহার করলে ত্বকে ভালো সুগন্ধি শোষণ করে নেবে।

যে ব্র্যান্ডের ডিওডোরেন্ট ব্যবহার করবেন চেষ্টা করবেন সেই কোম্পানির সাবান বা বডি ওয়াশ ব্যবহার করতে পারেন, এতে সারাদিন আপনার সুগন্ধ টা স্থায়ী থাকবে।

ত্বকে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা ও সুগন্ধি স্প্রে করতে পারেন এ তো অনেকক্ষণ সুগন্ধ থাকবে।

এ পারফিউম অতিরিক্ত ব্যবহার করা যাবে না, এক অথবা দুইবার স্প্রে করতে পারেন এর বেশি ব্যবহার করলে সৌরভ আর থাকবে না।

দীর্ঘক্ষণ সৌরভ ধরে রাখার জন্য কবজির ত্বকে স্প্রে করতে হবে শরীরের এই অংশে রক্তনালী গুলো ত্বকের সবচাইতে কাছাকাছি রয়েছে, যার কারণে অনেকক্ষণ সুগন্ধি থাকবে।

এই গরমে তীব্র সুগন্ধি ব্যবহার করা যাবে না এতে অস্বস্তিকর লাগতে পারে।

সুগন্ধি স্প্রে করার পর মিশিয়ে দেওয়ার জন্য ঘষাঘষি করবেন না, প্রাকৃতিকভাবে নিজেই শুকিয়ে যাবে এবং সুরভি অনেকক্ষণ থাকবে।

মেয়েরা পারফিউম ব্যবহার করতে পারবে

অনেক মেয়েরা প্রশ্ন করে থাকে যে মেয়েরা পারফিউম ব্যবহার করতে পারবে? আসলে তারা পারফিউম ব্যবহার করতে পারবে কিনা সে সম্পর্কে আমাদের জানা প্রয়োজন। চলুন বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক।

এই ধরনের প্রসাধনী ব্যবহার করা নারীদের সাজসজ্জা জন্য প্রয়োজন হয়। নারীরা সাধারণত সাজসজ্জা করবে এবং এ ধরনের পারফিউম ব্যবহার করতে পারবে তবে নিজেদের ঘরের জন্য, যেখানে আপনার মাহরাম ব্যক্তিরা থাকবে। আতর ব্যবহার করা যাবে কিন্তু আতর ব্যবহার করে বাহিরে বের হওয়া যাবে না।
এক কথায় নারীরা সুগন্ধি ব্যবহার করতে পারবে তবে যাদের সাথে দেখা করা জায়েজ আছে তাদের সামনে যাওয়া যাবে অথবা ঘরের ভিতরে থাকাই উত্তম হবে। যখন বাহিরে বের হবেন তখন আতর ব্যবহার করা যাবে না বা যেকোনো সুগন্ধি ব্যবহার করা যাবে না।

কারণ এই ধরনের সুগন্ধি অনেক সময় মানুষকে আকর্ষণ করতে পারে, সেখানে ফেতনা হওয়ার আশঙ্কা থাকবে। যেসব জায়গায় গেলে কোন না কোন ভাবে ফেতনার আশঙ্কা থাকবে সেখানে ইসলামী শরীয়ত মতে এগুলো এড়িয়ে চলার নির্দেশ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ইসলাম এইজন্য নিষেধ করেছে যে যাতে করে এই ধরনের পারফিউম ব্যবহার করার কারণে অন্য মানুষের খারাপ চিন্তা না আসে এবং তার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে খারাপ কাজের জন্য লিপ্ত না হয়। তাই নারীদেরকে আতর অথবা সেন্ট বা পারফিউম এক কথায় যে কোন সুগন্ধি ব্যবহার করে বাহিরে যাওয়া যাবে না।

রোজা রেখে সুগন্ধি ব্যবহার করা যাবে কি

অনেকে প্রশ্ন করে থাকে যে রোজা রেখে সুগন্ধি ব্যবহার করা যাবে কি? রোজা খুবই একটি সচেতন বিষয় এমন কিছু ব্যবহার করবেন না যেটাতে আপনার রোজা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। চলুন রোজা রেখে পারফর্ম ব্যবহার করা ঠিক হবে কিনা সে সম্পর্কে জানা যাক।

রোজা ভঙ্গের কারণের মধ্যে অন্যতম হলো যে কোন কিছু খেয়ে ফেললে পেটের ভিতরে প্রবেশ করলে সেই ধরনের বিষয়কে নিষেধ করা হয়েছে। তাই পারফিউম এর ঘ্রাণ নেওয়ার কারণে সরাসরি পেটে প্রবেশ করবে না। তাই রোজা রেখে আতর বা সুগন্ধি ব্যবহার করা যাবে।

হাদিস শরীফে বর্ণিত আছে যে নবী করীম সাঃ রোজাদারদেরকে সুগন্ধি দিয়ে মেহমানদারীর কথা বলা হয়েছে। যে সকল আতরের মধ্যে এলকোহল নাই সেগুলো ব্যবহার করা যাবে কিন্তু পারফিউমের মাঝে অধিকাংশ অ্যালকোহল থাকে যার কারণে এটা ব্যবহার করা থেকে দূরে থাকতে হবে।

কারণ এই সম্পর্কে আপনাকে আগে জানতে হবে নিশ্চিত হতে হবে যে এই পারফরমের ভিতর অ্যালকোহল আছে কিনা। যেমন খেজুর বা আঙ্গুরের রস থেকে যদি অ্যালকোহল জাতীয় তৈরি হয় সেটা অপবিত্র হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং সেটা ব্যবহার করা জায়েজ হবে না।

যদি অন্য কোন জিনিস দিয়ে তৈরি করা হয় সে ক্ষেত্রে এটা জায়েজ হবে। আজকাল পারফিউমের সাধারণত অ্যালকোহল ব্যবহার করে থাকে তা খেজুর বা আঙ্গুর থেকে প্রস্তুত যদিও সরাসরি করে না এগুলো তৈরি হয় সাধারণত চাল, গম, আলু দিয়ে তাই ব্যবহার করা যাবে।

সুগন্ধি ব্যবহারের ঝুঁকি বাড়ছে বন্ধ্যাত্বের

সুগন্ধি ব্যবহারের ঝুঁকি বাড়ছে বন্ধ্যাত্বের। আসলে সুগন্ধি ব্যবহার করলে সন্তানাদি হয় না এটা আমাদের জানা প্রয়োজন। চলুন কি কারনে সুগন্ধে ব্যবহার করলে বাচ্চা হবে না সে সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানা যাক।
ছবি
বর্তমানে অফিস কিংবা অনুষ্ঠানে যেখানে যান না কেন সুগন্ধি ব্যবহার করবেন। এটা সবারই একটা সচরাচর সংস্কৃতির মত হয়ে গেছে। এটা যেন আমাদের একটা ব্যক্তিত্ব বিশেষ প্রভাব ফেলে শুধু তাই নয় আত্মবিশ্বাস বজায় রাখতে পারে। তবে আপনি কি জানেন এই পারফিউম ব্যবহার করার কারণে জীবনে কতটা মারাত্মক ফেলতে পারবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন সুগন্ধি ব্যবহারের ক্ষতির মূল কারণ হলো রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা হয়। এর রাসায়নিক গুলো শরীরে প্রবেশ করে এলার্জির মত সমস্যা হতে পারে। বেশিরভাগ পারফিউম ইথানল ও আইসোপ্রোপাইল এলকোহল দিয়ে তৈরি হয়ে থাকে, যা অত্যন্ত বিষাক্তকর কখনো কখনো এর ব্যবহারের ডার্মাটাইটিস এর সমস্যা সৃষ্টি কর হতে পারে।

এর ফলে তাকে চুলকানি, লাল ফুসকুড়ি বা চুলকানি হয়ে থাকে অনেকে পারফিউম লাগালে শরীরের চুলকানি শুরু হয়ে যায়। এতে চিকিৎসকের ভাষায় বলা হয়ে থাকে ইরিট্যান্ট কন্টাক্ট ডার্মাটাইটিস। অনেকেরই ধরনের এলার্জি ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টার মতো দেখা দিতে পারে একে বলা হয় অ্যালার্জি কন্টাক্ট ডারমাটাইটিস।

কি কি সমস্যা হতে পারে জেনে নেওয়া যাক আপনি যদি ঘড়ি পড়েন এরপর সুগন্ধি ব্যবহার করবেন এটা আসলে ঠিক হবে না। কারণ এতে ঘড়ির রংটা নষ্ট হয়ে যাবে, একটি সুগন্ধি যা একটি ঘড়িকে যদি নষ্ট করে দিতে পারে তাহলে আপনার ত্বকের কতটা ক্ষতি করবে একটু বিবেচনা করেন।
চর্মরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে আমরা প্রায়শই ঘড়ি বা গহনা পড়ে থাকি এবং পারফিউম ব্যবহার করি তবে এটি একটি ধাতব প্রক্রিয়া সৃষ্টি করবে এবং সেই ব্যক্তিটি ডার্মাটাইটিস এর শিকার হবে।

কখনো কখনো এটি ফোসকা ও ফোলা সৃষ্টি করবে। পারফিউমের গন্ধ পেলেই কারো কারো মাথাব্যথা শুরু হতে পারে কেউ কেউ আবার বমিও করে দেয়।

অনেক সময় পারফিউম লাগানোর সময় এক ফোটা মুখেও যেতে পারে এতে অনেকের পেট খারাপ হতে পারে, বমি ও ডায়রিয়া দেখা যায়। শিশুরা ভুল করে যদি এটি পান করে ফেলে তাহলে রক্ত শর্করা হঠাৎ করে কমে যেতে পারে। যত তাড়াতাড়ি এই ধরনের উপসর্গ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

পারফিউমের আগ্নেয়গিরির জৈব যৌগ থাকে দেখা যায়। এর রাসায়নিক ও পেইন্টিং এর ক্ষেত্রে দেখা যায়। এই কণাগুলো যাদের ফুসফুস দুর্বল তাদের অনেক ক্ষতি করবে। একই সঙ্গে হাঁপানীর মতো শ্বাসকষ্ট জড়িত যারা ভুগছেন তাদেরও এই পারফিউম লাগানো যাবে না।

বিশ্বের অনেক গবেষণায় দেখা গেছে সুগন্ধ জিনিস হরমোন প্রভাবিত করতে পারে। যখন পারফিউমের সুগন্ধি নিঃশ্বাসের মধ্য দিয়ে মস্তিষ্কে যায় তখন নিউরনগুলো এন্ডোক্রাইন সিস্টেম এর সংকেত পাঠাতে থাকে। যার ফলে হরমোনগুলো দ্রুত নিঃসৃত হওয়া শুরু করবে।

যখন শরীরের হরমোন অত্যাধিক ওঠা নামা করতে থাকে তখন তারা ভারসাম্যহীন হতে পারে। এর ফলে ক্লান্তি থাইরয়েড পিসিওএস অনিয়মিত পিরিয়ড এবং লিবিডর এর অভাবের মত সমস্যা দেখা দিতে পারে।

পারফিউম এ থাকা বিষাক্ত রাসায়নিক মানুষের উর্বরতাকে প্রভাবিত করতে পারে। এক গবেষণায় দেখা গেছে এটি পুরুষত্বের বন্ধ্যাত্বের কারণ হতে পারে। গবেষণায় আরো বলা হয়েছে গর্ভবতী গর্ভাবস্থায় যদি নিয়মিতভাবে সুগন্ধি ব্যবহার করতে থাকে, তাহলে সরাসরি সন্তানের উপর প্রভাব ফেলতে পারে।

যদি শিশুটি ছেলে হয় তাহলে গর্ভাবস্থার ৮ থেকে ১২ সপ্তাহের মধ্যে তার প্রজনন ব্যবস্থা প্রভাবিত হওয়া শুরু করবে। যা তাকে ভবিষ্যতে বন্ধ্যাত্বের দিকে ঠেলে দিতে পারে। আসলে পারফিউম শুক্রানুর সংখ্যা কমিয়ে দিতে পারে। তাই এসব সুগন্ধি ব্যবহার করার ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা থাকতে হবে।

শেষ কথাঃ বডি স্প্রে বা পারফিউম ব্যবহার করলে কি নামাজ হবে, বিস্তারিত জানুন

পরিশেষে বলা যায় যে পারফিউম ব্যবহার করতে অনেকেই পছন্দ করে কিন্তু এটার কি ক্ষতি হতে পারে সে সম্পর্কেও জানা প্রয়োজন এবং ইসলামের দৃষ্টিকোণে এটা ব্যবহার করা যাবে কিনা সে সম্পর্কেও জানা প্রয়োজন। তাই পারফিউম ব্যবহার করলে কি নামাজ হবে? এ সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে আর্টিকেল আলোচনা করা হয়েছে আশা করি আপনার উপকার হবে। পোস্টটা ভালো লাগে আপনার বন্ধু-বান্ধবের নিকট শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এম আর মাহমুদ ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪