গলায় টনসিল হলে কি করতে হবে ও কখন অস্ত্রোপচার করবেন
অনেকের দীর্ঘদিন যাবৎ টনসিল হয়ে থাকে তাই গলায় টনসিল হলে কি করতে হবে? এ সম্পর্কে জানতে চায়। টনসিল দীর্ঘদিন যাবত থাকার পর যদি ইনফেকশন হয়ে যায় সে ক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসা নিতে হবে। চলুন, টনসিল হওয়ার পরে কি করতে হবে সে সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
অধিকাংশ মানুষ শীতের সময় ঠান্ডা জনিত কারণে গলায় টনসিল হয়। বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে বেশি হয়ে থাকে। এজন্য এটা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য কি ব্যবস্থা নিতে হবে তা জানা প্রয়োজন। তাই গলায় টনসিল হলে কি করতে হবে? সম্পর্কে জানতে আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
পোস্টসূচিপত্রঃগলায় টনসিল হলে কি করতে হবে ও কখন অস্ত্রোপচার করবেন
গলায় টনসিল হলে কি করতে হবে
অনেকের ঘন ঘন টনসিলের সমস্যা হয় তাই গলায় টনসিল হলে কি করতে হবে? সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। তাহলে আপনার টনসিল হলে কি করবেন সে সম্পর্কে বুঝতে পারবেন। নিম্নে এ সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো।
টনসিল হলো আমাদের শরীরের মুখের ভিতরে চারটি গ্রুপে থাকে। যেমন লিঙ্গুয়াল,প্যালাটাইন, টিউবাল ও অ্যাডেনয়েড। এই চারটি টনসিলের মধ্যে যদি একটা প্রদাহ সৃষ্টি করে তাহলে টনসিলাইটিস্ট বলা হয়। টনসিল হলো ভাইরাস জনিত রোগ, টনসিল আক্রান্ত শিশুর শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা সৃষ্টি করে। দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকলে তাদের হৃদযন্ত্রের বিভিন্ন রোগ হবে।
টনসিল ও এডিনয়েড শিশুদের ৪ থেকে ১০ বছর বয়সের মধ্যেই বেশি হয়ে থাকে। শীত আসলেই মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা স্বাভাবিকভাবে কমতে শুরু করে। যে কারণে অন্যান্য সময় রোগ জীবাণু বেশি আক্রান্ত না হলে এই সময় বেশি হয়ে থাকে। শিশুরা এই শীতকালে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে।
এছাড়াও বয়ঃসন্ধিকালের সময় বিভিন্ন ধরনের শরীরে পরিবর্তন হয় এ সময় টনসিল এর প্রদাহ হতে পারে এছাড়াও নানা জটিল রোগের ভুগতে পারে।
১। গলা ব্যথা দূর করার জন্য কার্যকরী পদ্ধতি হলো হালকা গরম পানি দিয়ে কুলকুচি করতে হবে। টনসিলের সংক্রমণ রোধ করার জন্য ও ব্যথা কমাতে ভালো কাজ করে থাকে। এছাড়া বারবার গরম পানি দিয়ে কুলকুচি করার কারণে গলার মধ্যে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমনের আশঙ্কা কম হয়।
২। গ্রিন টি এর সাথে মধু মিশিয়ে খেতে পারেন এতে গলা ব্যথা কমে যাবে। গ্রিন টি এর মধ্যে থাকে এন্টিঅক্সিডেন্ট যা ক্ষতিকর জীবাণু ধ্বংস করতে পারবে। ভালো ফলাফল পাওয়ার জন্য দিনে ৩-৪ কাপ এই মধু-চা পান করতে পারেন।
৩। এক কাপ গরম দুধের সাথে সামান্য হলুদের গুঁড়া মিশিয়ে খেতে পারেন। কারণ হলুদের মধ্যে আন্টি এন্টি ইনফ্লামেটরি, এন্টিবায়োটিক এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকার কারণে গলা ব্যথা কমে যায় এবং টনসিলের সংক্রমণ দূর করবে।
৪। দেড় কাপ পানির মধ্যে এক চামচ আদা কুচি করে ভালো করে ফুটিয়ে নিতে হবে। এরপর মধু মিশিয়ে খেতে পারেন।
আদার মধ্যে থাকা অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল, এন্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ কে বাধা দিতে পারে। সেই সাথে গলা ব্যথা কমাতে ভালো কাজ করবে। দিনে ২ থেকে ৩বার পান করলে গলা ব্যথা কমে যাবে।
৫। ২০০ মিলিগ্রাম গরম পানির মধ্যে লেবুর রস এক চামচ মধু আধা চামচ লবণ ভালো করে মিশিয়ে নিতে হবে। যতদিন গলা ব্যথা ভালো না হয় ততদিন পর্যন্ত এটি খাওয়া যেতে পারে। টনসিলের সমস্যা দূর করার জন্য ভালো কাজ করে থাকে।
৬। মেথি টনসিলের ব্যথার দূর করার জন্য ভালো কাজ করবে, এক লিটার পানির মধ্যে ৩চামচ মেথি মিশিয়ে জ্বাল দিবেন ৩০ থেকে ৩৫ মিনিট জ্বাল দিতে হবে। কুসুম গরম থাকা অবস্থায় কুলকুচি করবেন। মেথি গলা ফোলা এবং ব্যথা কমাতে সাহায্য করবে।
৭। সাধারণত প্রাথমিক পর্যায়ে ঠান্ডা পানি ও ঠান্ডা খাবার কি বিরত থাকবেন। গোসলের সময় পানি হালকা গরম পানি করে নিতে পারেন। সঠিকভাবে দাঁত ও মুখের পরিচর্যা করবেন। রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে ঠান্ডা খাওয়া পরিহার করা লাগবে। সুস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস করার চেষ্টা করবেন। সঠিকভাবে পরিচর্যা করা লাগবে। ৭ দিনের বেশি সময় হয়ে গেলে অবশ্য চিকিৎসার পরামর্শ নিবেন।
৮। দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ ও প্রতিবন্ধকতা জনিত সমস্যায় টনসিল ও এডিনয়েড অপারেশনের মাধ্যমে ফেলে দেওয়া লাগে। টনসিলের সমস্যা হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া লাগবে। এছাড়া চাহিদা মাফিক পানি পান করা, সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত বিশ্রামে থাকতে হবে। মুখের হাইজিন বা ওরাল হাইজিন ঠিক রাখা লাগবে। এছাড়াও মাউথ ওয়াশ ব্যবহার করা যেতে পারে। এটা দিয়ে বারবার কুলি করা যাবে।
সাধারণ স্যালাইন বা লবণ মিশ্রিত গরম পানিতে বারবার কুলি করা লাগবে। চা ও খাওয়া যেতে পারে গলায় ঠান্ডা লাগাবেন না। যেহেতু তীব্র ব্যথা হওয়ার কারণে জ্বর আসতে পারে সেজন্য জ্বরের ওষুধ হিসেবে প্যারাসিটামল খাওয়া যেতে পারে।
এছাড়াও আপনার ব্যাকটেরিয়া জনিত ইনফেকশন হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে এবং এন্টিবায়োটিক খাওয়া লাগতে পারে। ওষুধ নিয়মিত খাওয়ার কারণে ব্যাকটেরিয়া গুলো মুক্ত হয়ে আপনি সুস্থ হয়ে যাবেন।
টনসিল রোগের লক্ষণ
অনেকের ঠান্ডা লাগার পরে টনসিলের সমস্যা হয়ে থাকে কিন্তু টনসিল রোগের লক্ষণ এগুলো সম্পর্কে বুঝতে পারে না। তাই এ লক্ষণ গুলো জানা থাকলে আপনি বুঝতে পারবেন। চলুন, সেগুলো সম্পর্কে জানা যাক।
- তীব্র গলা ব্যথা হবে
- খাবার খেতে কষ্ট ও মুখ হা করা অসুবিধা হয়
- মাথা ব্যথা, উচ্চ তাপমাত্রা দেখা দেয়
- মুখ দিয়ে লালা বের হয় ও কণ্ঠস্বর ভারী হয়ে যায়
- কানে ব্যথা অনেকের হয়ে থাকে
- মুখ থেকে দুর্গন্ধ বের হয়।
সরভঙ্গ গলায় টনসিল থাকার কারণে ঢোগ গিলতে কষ্ট হবে। আইসক্রিম ফ্রিজে রাখা শীতল পানি যদি আপনি বেশি করে খান তাহলে টনসিলের জন্য সবচেয়ে ক্ষতির কারণ হবে। বসবাস করা স্থান, আবহাওয়ার পরিবর্তন। বাহির থেকে এসে ফ্রিজের পারে ঠান্ডা পানি খাওয়া, গরমে ঘাম বসে গেলে টনসিলের এই সমস্যাগুলো দেখা দিতে পারে।
টনসিল হলে কখন অস্ত্রোপচার করবেন
অনেকের টনসিল হলে তেমন ঠিক চিকিৎসা নেন না। শেষ পর্যায়ে ইনফেকশন হয়ে যায় তাই টনসিল হলে কখন অস্ত্রোপচার করবেন? এ সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। তাহলে আপনি বুঝতে পারবেন কখন আপনার অপারেশন করতে হবে চলুন জেনে নেওয়া যাক।
আপনার টনসিল কোন ধরনের হয়েছে সেটা আগে চেঞ্জ হতে করা লাগবে। তার মধ্যে এ কিউট নাকি অনেক ক্রনিক টনসিলাইটিস এখানে সেটা চিহ্নিত করা লাগবে। অস্ত্র প্রচারের জন্য কিছু শর্ত থাকে চলুন সেগুলো জেনে নেওয়া যাক।
১। যদি আপনার বছরের ৭বার বা তারও বেশি টনসিলের ইনফেকশন দেখা যায়।
২। যদি আপনার দুই বছরে ১০বারের মতো টনসিলের ইনফেকশন হয়ে থাকে।
৩। আবার অনেকের প্রতিবছরে পাঁচ বার বা তারও বেশি টনসিলের সমস্যা দেখা দেয়।
৪। যদি কারো তিন বছরের মধ্যে প্রত্যেক বছরে তিনবার করে অনেকের টনসিলের সমস্যা হয়।
৫। টনসিল যদি অনেক বড় হয়ে যায় শ্বাস নিতে কষ্ট হয় খাওয়া-দাওয়া সমস্যা হয়।
৬। টনসিলের মধ্যে দিয়ে অনেকের পুজ জমে যায়।
৭। অনেকের টনসিলে পাথর হয়ে থাকে।
৮। শিশুদের টনসিলের সাথে যদি এডিনয়েডের হয়ে থাকে, সে ক্ষেত্রে রাতের বেলায় হা করে শ্বাস নিতে হয়। দাঁত উঁচু হয়ে যেতে পারে, ঘনঘন ঠান্ডা কাশি লাগবে সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। তারপরে যদি অস্ত্র পাচার করা লাগে তাহলে করতে হবে।
টনসিলের অপারেশনের ক্ষেত্রে অনেকের ভয় পেয়ে থাকেন। তবে চলুন কিভাবে অপারেশন করা যায় সে সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানা যাক, টনসিল অপারেশনের বিভিন্ন পদ্ধতি থাকে যেমন ডিসেকশন মেথড এর ট্রাক ইলেকট্রকটা লেজার কমলেশন আল্ট্রাস লগে থাকে।
এই সকল মেশিনের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের কাজ করে থাকে, এগুলো অনেকটাই ব্যয়বহল চিকিৎসা এতে তেমন একটা কষ্ট হয় না। অপারেশন করার পরে রোগী মুখের মাধ্যমে খাওয়া শুরু করতে পারে দ্রুত গতিতে সুস্থ হবে এবং দৈনন্দিন কার্যকর ফিরে আসতে পারবে।
ওষুধ ছাড়াই দূর করুন টনসিলের ব্যথা
ইতোমধ্যে আমরা জেনেছি, গলায় টনসিল হলে কি করতে হবে? এখন জানব ছাড়া কিভাবে টনসিল সারাবেন। অনেকে টনসিলের ব্যথা ভূগতে থাকে তাই কিভাবে ওষুধ ছাড়াই টনসিলের ব্যথা দূর করবেন। চলুন, এর সম্পর্কে নিম্ন বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করা যাক।
আমাদের জিহ্বার পিছনের দিকে গলার দুই পাশে যে গোলাকার পিণ্ডটি দেখা যায়। সেটাই হলো টনসিল নাক মুখ গলা দিয়ে রোগ জীবাণু যেন শরীরে প্রবেশ করতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখে টনসিল কিন্তু ঠান্ডা লাগলে টনসিলে সংক্রমণ হয়ে যায়। এই সময় ঢোক গিলতে গিয়ে বা কথা বলতে অসুবিধা হয়ে থাকে, প্রচণ্ড পরিবারে গলায় ব্যথা হয়।
অনেকের কাশি দিল কষ্ট হয়ে থাকে, টনসিলের ব্যথা কমানোর জন্য বাজারে বিভিন্ন ধরনের ওষুধ পাওয়া যায় কিন্তু এই ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। তাই কিভাবে ঘরোয়া পদ্ধতিতে আপনি টনসিলের ব্যথা দূর করবেন সে সম্পর্কে চলুন জেনে নেওয়া যাক।
লবণ পানিঃ একগ্লাস গরম পানির মধ্যে একটু লবণ দিবেন, এরপরে এই পানির ভাপ টা নিয়ে নিবেন। দেখবেন টনসিলের ব্যথা অনেকটা কমে যাবে। ভাপ নেওয়ার সময় কান মাথা জড়িয়ে বসতে হবে অথবা কোন গামছা বা অন্যকিছু দিয়ে মাথাটা মুড়িয়ে নিতে হবে। যেন ফ্যানের বাতাস না লাগে সেদিকেও খেয়াল রাখবে।
গ্রিন টি ও মধুঃ আধা চামচ গ্রিন টি ও এক চামচ মধু নিয়ে দশ মিনিট ফুটিয়ে নিতে হবে। এভাবে এই পানিটুকু দিনে তিনবার খেতে পারেন। কারণ এর মধ্যে এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা জীবাণুর সাথে লড়াই করতে পারবে। মধুর মধ্যে এন্টিব্যাকটেরিয়াল থাকে যা আপনার টনসিলের সংক্রমণকে প্রতিরোধ করবে।
আদা চাঃ যেকোনো ধরনের সংক্রমণ প্রতিরোধ করার জন্য আদা খুবই ভালো কাজ করবে। দেড় কাপ পানির মধ্যে এক চামচ আদা কুচি করে নেবেন। পরিমাণ মতো চা দিয়ে ১০ মিনিটের মতো ফুটাবেন এই চা দিনে দুই থেকে তিনবার পান করবেন। আদার মধ্যে থাকে এক ধরনের অ্যান্টিব্যাক্টরিয়াল ও এন্টি ইনফ্লামেটরি যা আপনার সংক্রমণ প্রতিরোধ করবে।
লেবু ও মধুঃ এক গ্লাস হালকা গরম পানিতে একটি লেবুর রস দিবেন। এক চামচ মধু ও একটুখানি লবণ দিয়ে মেশাবেন এবং এরপরে এই পানিটুকু খেয়ে নেবেন। এতে টনসিলের ব্যথা অনেকটাই দূর হয়ে যাবে।
হলুদঃ হলুদ কে বলা হয় প্রাকৃতিক এন্টিবায়োটিক, তাই এটা কাজ করে থাকে খুবই দ্রুতগতিতে। এর মাঝে প্রচুর পুষ্টি রয়েছে, হলুদ সাধারণ জীবাণুর বিরুদ্ধে কাজ করে থাকে এবং শরীরের টিস্যুকে প্রদাহ থেকে রক্ষা করবে। এক গ্লাস দুধের মধ্যে এক চামচ হলুদ মিশিয়ে নিতে হবে এবং এটা ফুটাতে হবে এরপরে গরম খেয়ে নিবেন এতে আপনার অনেক উপকার হবে।
টনসিল হলে কি কি খাওয়া যাবে না
অনেকেই প্রশ্ন করে থাকে যে টনসিল হলে কি কি খাওয়া যাবে না? তাই আপনার জানা উচিত কোন কোন খাবার খেলে আপনার টনসিলের ব্যথা আরো বৃদ্ধি পাবে অথবা কোন খাবার খেলে ব্যাথা হবে না। চলুন সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাক।
টনসিলের সমস্যা থাকার কারণে অনেক কিছু খাবার খাওয়া যায় না। এর কারণে টনসিলের সমস্যারও বৃদ্ধি পাবে যে খাবারগুলো খাওয়া যাবে না। চলুন জানা যাক,
১। চিপস, চানাচুর, ফুচকা, চটপটি, কমল পানীয় জাতীয় জাঙ্ক ফুড খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন।
২। টক জাতীয় খাবার খাওয়ার কারণে গলা ব্যাথা আরো বাড়তে থাকে। তাই টনসিলের ব্যথা কমানোর জন্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট জাতীয় খাবার খাওয়া লাগবে। এই অবস্থায় কোন মতে টক জাতীয় খাবার খাওয়া যাবে না।
৩। অতিরিক্ত মসলা যুক্ত খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। তেল ও চর্বি জাতীয় খাবার থেকে বিরত থাকতে হবে।
৪। দুধ ও দুগ্ধতার খাবার যেমন পনির, চিজ এগুলো খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
৫। মূলা, মিষ্টি আলু, চিনা বাদাম এগুলো খাবেন না।
৬। বাঁধাকপি, ফুলকপি, ব্রকলি এই জাতীয় খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন। কারণ এগুলো খাবারের টনসিলের সমস্যা আরো বৃদ্ধি পাবে।
৭। চিনি, রান্না করা গাজর, পাকা কলা, শুকনা ফলমূল, ময়দার রুটি, মধু, মিষ্টি কম খাওয়া লাগবে। এই খাবারগুলো শরীরে কার্বোহাইড্রেট এর মাত্রা বৃদ্ধি করবে।
তাছাড়া হজমের সমস্যা ও দেখা দিতে পারে, তাই এই খাবারগুলো বাদ দিবেন। যতটা সম্ভব উপরে উল্লেখিত এই খাবারগুলো খাওয়া থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করবেন। তাহলে আপনার টনসিলের ব্যথা অল্প সময়ের মধ্যে কমে যাবে।
টনসিল ফোলা কমানোর উপায়
অনেকের টনসিল হয়ে গোলাপ ফুলে যায় এবং খাওয়া-দাওয়া করতে পারে না। তাই টনসিল ফোলা কমানোর উপায় সম্পর্কে জানলে আপনার সুবিধা হবে। চলুন, এর সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
গরমে অনেকের শরীর ঘামতে থাকে যার কারণে ও এই ঘাম থেকে টনসিল ফুলে যেতে পারে এবং ভিতরে লাল হয়ে যায়, ব্যাথা হবে। টনসিলের ব্যথা খুবই কষ্টদায়ক এতে নাক, মুখ, গলা ফুলে যেতে পারে। যদি বেশি হয়ে যায় তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। এছাড়াও ঘরোয়া পদ্ধতির মাধ্যমেও এটা চিকিৎসা করা যেতে পারে।
হালকা গরম পানি খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। যেমন মাঝে মধ্যে চা তাছাড়া মধু আদা দিয়ে চা খাওয়া যেতে পারে। এছাড়া আপনার হালকা গরম পানি দিয়ে গলায় শেক লাগানো যেতে পারে। এতে ব্যথা অনেকটাই কমে যাবে।
অতিরিক্ত টনসিলের ব্যাথা হওয়ার কারণে নরম জাতীয় খাবার খাওয়া যেতে পারে। এটা আপনার গলা ব্যথা অনেকটাই কমে যাবে। সে সঙ্গে পুদিনা পাতার জুস খাওয়া যেতে পারে। এতে আপনার গলা ব্যথা দূর করতে সাহায্য করবে।
টনসিলের ব্যথা হওয়ার কারণে শক্ত খাবার অনেকেই খেতে পারে না। তাই ফলমূল, শসা, গাজর এই ধরনের খাবারগুলো খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। এতে গলা ব্যথা আরো বৃদ্ধি পাবে টনসিলের ব্যথা কমানোর জন্য লবণ পানি দিয়ে কুলি কুচি করা যায়। এতে অনেকটাই ব্যথা কমে যায় গলার ভিতরে যদি ফোলা ভাপ থাকে।
তাহলে অবশ্যই কমে যাবে, কেননা এই লবণ তেমন কাজ করবে। যা ভিতরে ব্যাকটেরিয়াকে মেরে ফেলতে সাহায্য করবে। এছাড়াও টনসিলের ব্যথা কমাতে হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করতে পারবেন। যদি না থাকে তাহলে গরম পানির ভাপ নেওয়া যেতে পারে কিন্তু অনেকটাই আরাম লাগবে। এতেও যদি টনসিলের ব্যথা না কমে তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
বাচ্চাদের টনসিল ফোলা কমানোর উপায়
অনেক বাচ্চার ঠান্ডার কারণে টনসিল ফুলে অনেক কান্নাকাটি করে। তাই বাচ্চাদের টনসিল ফোলা কমানোর উপায় সম্পর্কে জানলে আপনার বাচ্চা অনেকটাই সুস্থ হবে। চলুন জেনে নেওয়া যাক,
টনসিল এক ধরনের টনসিল হল গ্রন্থি মুখ হা করে গলার ভিতরে ডান বা বা দিকে ছোট্ট বলের মত একটি টিস্যু দেখা যায় মূলত এটাই টনসিল বলা হয়ে থাকে। ৪ বছর বয়স থেকে ১০ বছর বয়স পর্যন্ত টনসিল অনেকের বড় হয় ১২ বছরের দিকে ছোট হয়ে যায়।
এটা স্বাভাবিক একটি ধারাবাহিকতা শিশুর মুখ ও নাক হয়ে রোগ জীবাণু শরীরের ভিতরে প্রবেশ যেন করতে না পারে। সেজন্য গলার চারপাশে আংটির মতো টনসিল দেখা যায় কিন্তু কখনো কখনো ভাইরাস ব্যাকটেরিয়া অনুযায়ী গুলো এদের আক্রমণ করে থাকে। এক্ষেত্রে অনেক এই ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের কারণে প্রদাহ সৃষ্টি হয়।
টনসিল এর প্রদাহ কিভাবে বুঝবেন; খাবার খাওয়ার ও তরল পানের সময় ব্যাথা লাগতে পারে সঙ্গে যে কোন একটি উপসর্গ থাকবে। যেমন
১০০.৯ ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশি তাপমাত্রা দেখা যায় এবং জ্বর আসে।
গলার চারপাশে গ্রন্থগুলো ফুলে যাবে।
টনসিলের উপর হলুদ বা সাদা আস্তরণ দেখা যাবে।
গ্রুপে এ বিটা হিমোলাইটিস কালচার পজেটিভ হলে এই সমস্যা দেখা যায়।
চিকিৎসা ব্যবস্থাপনাঃ বিষয়গুলো দেখতে পান তাহলে যেভাবে আপনি চিকিৎসা নিতে পারেন। চলুন জেনে নেওয়া যাক।
জিহবা সামান্য নিচে চেপে ধরতে হবে টনসিল দুটো ভালোভাবে পরীক্ষা করে স্ট্রেপ থ্রোট হয়েছে কিনা সেটা বুঝতে বোঝা লাগবে। এক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে।
নাক কান গলা পরীক্ষা করে কোথাও সংক্রমণ হয়েছে কিনা সেটা দেখা লাগবে।
সাধারণত টনসিল গুলো লাল হয়ে যায় তখন অবশ্যই চিকিৎসকের এন্টিবায়োটিক দিয়ে থাকেন। চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে ওষুধ গুলো খেলে সুস্থ হয়ে যাবেন।
ভাইরা জনিত টনসিলের প্রদাহের জন্য শিশুকে লবণ পানির কুলকুচি করবেন। এতে গরম পানিতে লেবুর রস মিশিয়েও খাওয়ানো যাবে। স্বাভাবিক খাবার খাওয়াতে হবে এই সমস্যা সপ্তাহখানেকের মধ্যেই সেরে যাবে। এক্ষেত্রে আপনার অ্যান্টিবায়োটিক লাগবে না।
যদি টনসিল বেশি হয়ে যায় সে ক্ষেত্রে তরল খাবার ও পানীয় খাওয়া লাগবে, গিলতে সমস্যা হলে নরম করে রান্না করে খাবার গ্রহণ করা যায়।
শিশু বছরে বা দুই বছর কমপক্ষে তিনবার করে টানা তিন বছর টনসিলের সমস্যায় ভুগতে থাকে। এই ধরনের শিশু যদি ভুগে থাকে তাহলে নাক কান গলা বিশেষজ্ঞ ও শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শক্রমে অস্ত্রোপচার মাধ্যমে চিকিৎসা নিতে হবে।
শেষ কথাঃ গলায় টনসিল হলে কি করতে হবে ও কখন অস্ত্রোপচার করবেন
পরিশেষে বলা যায় যে টনসিলের ব্যথা কম বেশি সবাই ভুগতে থাকে। সাধারণত শীতকালে ঠান্ডা লাগার কারণে এই টনসিলের ব্যথা বেশি হয়ে থাকে। এটা মূলত ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া এর কারণে হয়ে থাকে। এগুলো সাধারণত গরম পানি বা প্রাথমিক ঘরোয়া পদ্ধতিতে চিকিৎসা করলে সেরে যায়।
যদি অতিরিক্ত দেখতে পান তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন। তাই গলায় টনসিল হলে কি করতে হবে? এ সম্পর্কে আর্টিকেলে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে, আশা করি আপনার উপকার হবে। পোস্টটি ভালো লাগলে আপনার বন্ধু-বান্ধবের নিকট শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ
এম আর মাহমুদ ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url