গর্ভাবস্থায় আপেল খেলে কি হয়, উপকারিতা ও ঝুঁকি সম্পর্কে জানুন
সাধারণত গর্ভাবস্থায় নারীরা বেশিরভাগ ফল খেতে পছন্দ করে, তার মধ্যে আপেল অন্যতম। তাই গর্ভাবস্থায় আপেল খেলে কি হয়? এ সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। চলুন, আপেল খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
গর্ভাবস্থায় বিভিন্ন ধরনের ফল খেতে হবে, তাই আপেল খেতে পারেন। কেননা এর মাঝে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি রয়েছে। যা আপনার শরীরে পুষ্টির চাহিদা পূরণ করবে। তাই গর্ভাবস্থায় আপেল খেলে কি হয়? সম্পর্কে জানতে আর্টিকেল মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
পোস্টসূচিপত্রঃগর্ভাবস্থায় আপেল খেলে কি হয়, উপকারিতা ও ঝুঁকি সম্পর্কে জানুন
গর্ভাবস্থায় আপেল খেলে কি হয়
গর্ভাবস্থায় পুষ্টির চাহিদা পূরণ করার জন্য বিভিন্ন ধরনের ফল খেতে হয়। তাই গর্ভাবস্থায় আপেল খেলে কি হয়? সম্পর্কে জানার প্রয়োজন। কেননা অনেক গর্ভবতী নারী এই ফল খেতে পছন্দ করে। নিম্নে আপেল এর উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হলো;
আয়রনের অভাব পূরণ করেঃ গর্ভবতী নারীদের সাধারণত এই সময়ে আয়রনের ঘাটতি দেখা যায়। কেননা এই আয়রনের অভাবে গর্ভস্থ শিশুর সমস্যা দেখা দিতে পারে এবং জন্মগত ত্রুটি হতে পারে। এই সকল সমস্যার সমাধান করার জন্য আপনি নিয়মিতভাবে আপেল খেতে পারেন।
তাহলে আপনার পর্যাপ্ত পরিমাণ আয়রন এর ঘাটতি পূরণ হবে এবং রক্ত স্বল্পতা দূর হবে। এজন্য চিকিৎসকরা সাধারণত গর্ভাবস্থায় রক্তস্বল্পতা দূর করার জন্য আয়রন জাতীয় খাবার এবং সাপ্লিমেন্ট খেতে বলেন।
শরীর ও হাড় গঠন করতে সাহায্য করেঃ গর্ভস্থ শিশুর হাড় গঠনের জন্য প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়ামের প্রয়োজন হয়। আর এই সময়ে গর্ভবতী মাকে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম এবং ক্যালসিয়াম জাতীয় ফল বা সবজি খেতে হবে।
সেজন্য আপনি আপেল খেতে পারেন। কেননা এর মধ্যে ক্যালসিয়াম রয়েছে। কেননা এই সময়ে শিশুর বৃদ্ধির জন্য দৈনিক ১০০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম প্রয়োজন। তাই নিয়মিত এক থেকে দুটি আপেল খেতে পারেন। তাহলে আপনার দৈনিক ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণ হবে।
গর্ভস্থ শিশুর মস্তিষ্ক বিকাশ ঘটায়ঃ আপেল এর মধ্যে খনিজ মিনারেল ভিটামিন ইত্যাদি পুষ্টি উপাদান থাকে। যা গর্ভস্থ শিশুর মস্তিষ্ক বিকাশ ঘটাতে পারবে, তাই নিয়মিতভাবে আপেল খেলে গর্ভস্থ শিশুর বুদ্ধি বিকাশ ঘটবে।
হজম শক্তি বৃদ্ধি করেঃ আপেলের মধ্যে ফাইবার বা আঁশ থাকে, যার কারণে আপনার খাদ্য হজম শক্তিকে বৃদ্ধি করবে এবং গ্যাস্টিকের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করবে। যাদের এই হজমের সমস্যা রয়েছে এবং গ্যাসের সমস্যা আছে। তারা নিয়মিত ভাবে ফাইবার যুক্ত খাবার গুলো খেতে পারেন। তার মধ্যে অন্যতম আপেল রয়েছে, তাই দৈনিক একটি আপেল খেতে পারেন।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করেঃ গর্ভাবস্থায় বিভিন্ন ধরনের হরমোনের পরিবর্তন হয়। যার কারণে গর্ভবতীদের সাধারণত কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়। তাই আপেল খেলে এই কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হবে এবং হজম এর ক্ষেত্রে ভালো কাজ করবে। কেননা এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার আছে। যা মল নরম করে দেয় যার কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হবে। তাই নিয়মিতভাবে এক থেকে দুইটি আপেল খাওয়া যেতে পারে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ এর মধ্যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন সি রয়েছে। যা আপনার শরীরের বিভিন্ন ধরনের রোগের বিরুদ্ধে কাজ করবে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেবে।
যেহেতু গর্ভবতী অবস্থায় সাধারণত তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা খুবই কম থাকে। তাই এই জাতীয় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যুক্ত খাবার গুলো খাওয়ার চেষ্টা করবেন। সে ক্ষেত্রে আপেল খাওয়া যেতে পারে। তাই আপনি ১ থেকে ২ টি আপেল খেতে পারেন।
শরীরের শক্তি যেভাবে যোগাবেঃ গর্ভাবস্থায় সাধারণত নারীদের শক্তি অনেকটা কমে যায়। তাই এই শক্তি বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন ধরনের খাদ্য খাওয়া যেতে পারে। তার মধ্যে অন্যতম আপেল খেতে পারেন। কেননা এর মাঝে শর্করা থাকে যা শক্তি বৃদ্ধি করে। কিন্তু যদি আপনার ডায়াবেটিস এর সমস্যা থাকে সেক্ষেত্রে বেশি খাবেন না।
স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করেঃ যদি আপনি নিয়মিত ভাবে আপেল খেতে পারেন, তাহলে আপেলের যে পুষ্টি রয়েছে। তা গর্ভস্থ শিশুর মস্তিষ্ক বিকাশের ক্ষেত্রে বিকাশ ঘটাবে এবং তাদের স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পাবে।
হার্টের সমস্যা দূর করেঃ যদি গর্ভবতী মা নিয়মিত ভাবে আপেল খেতে পারে, তাহলে তার হার্টের সমস্যা দূর হবে। কেননা এটা বুকের জ্বালাপোড়া কমিয়ে দেয়। তাছাড়া শ্বাসকষ্ট দূর করতে সাহায্য করে।
কারণ আপেলের মধ্যে থাকে দ্রবণীয় ফাইবার যা খারাপ কোলেস্টেরলকে নিয়ন্ত্রণ করবে। এই খারাপ কোলেস্টেরল গুলো নিয়ন্ত্রণ করার কারণে হার্টের সমস্যা অনেকটাই দূর হয়ে যাবে। এজন্য হার্টের সমস্যা দূর করার জন্য আপেল খাওয়া যেতে পারে।
গর্ভস্থ শিশুর ওজন বৃদ্ধিঃ যদি গর্ভবতী মায়ের এই সময়ে পুষ্টিকর খাবার না দেওয়া হয়। তাহলে গর্ভস্থ শিশুর ওজন কম হবে। এর কারণে সেই বাচ্চা সাধারণত নিউমোনিয়া নিয়ে জন্মগ্রহণ করে এবং এই বাচ্চা বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে যায়। তাই কমপক্ষে একটি শিশুর ওজন ২ কেজি ৫০০ গ্রাম হতে হবে। এর নিচে হলে সে বাচ্চা কম ওজন হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে।
এজন্য গর্ভস্থ শিশুর ওজন বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন ধরনের ফলমূল খেতে হবে। তার মধ্যে অন্যতম আপেল খাওয়া যেতে পারে। কেননা এর মধ্যে যে পুষ্টি উপাদান থাকে তা খাওয়ার কারণে ওজন বৃদ্ধি পাবে। তাই একজন গর্ভবতী মায়ের দিনে দুটি করে আপেল খাওয়া যেতে পারে।
জন্মগত ত্রুটি সমস্যা কমায়ঃ অনেক গর্ভবতীর গর্ভস্থ শিশুর পুষ্টির অভাবের কারণে সন্তান প্রতিবন্ধী হয়। এজন্য গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মায়েদের ফলেট গ্রহণ করতে হবে। তাই এই ফলেট গ্রহণ করার জন্য আপনি আপেল খেতে পারেন। কেননা এর মধ্যে ফলেট থাকে। যা এক থেকে দুইটি খেলে ফলেটের চাহিদা পূরণ করবে। এতে জন্মগত ত্রুটি সন্তান হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।
গর্ভকালীন ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করেঃ যদি কোন গর্ভবতী মা নিয়মিতভাবে আপেল খেতে পারেন। তাহলে রক্তের শর্করার নিয়ন্ত্রণ থাকবে। কেননা এই সময় সাধারণত অনেকের ডায়াবেটিস হয়ে থাকে। এটাকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য আপেল খাওয়া যেতে পারে। এর মাঝে এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা খাদ্য হজম করতে সাহায্য করবে।
এছাড়াও শর্করার মাত্রা কমিয়ে দিবে, গবেষণায় দেখা গেছে যে সকল গর্ভবতী মায়েদের ডায়াবেটিস টাইপ-২ আছে। তাদের আপেল খাওয়ানোর কারণে অনেকটাই ডায়াবেটিস কমে গেছে। কেননা আপেল ব্লাড সুগারকে স্থিতিশীল করতে পারে।
কারণ এর মাঝে ফাইবার এবং ফ্ল্যাভোনয়েড থাকে। যা গর্ভকালীন ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করবে। তাই আপনি গর্ভকালীন অবস্থায় ডায়াবেটিস কে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য আপেল খেতে পারেন।
শ্বাসকষ্ট বা অ্যাজমা কমিয়ে দেয়ঃ আপেলের মধ্যে প্রচুর পরিমাণ এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা ফুসফুস কে শক্তিশালী করতে সাহায্য করবে। তাই গর্ভাবস্থায় যদি শ্বাসকষ্ট থাকে তা দূর করার জন্য আপনি আপেল খেতে পারেন। এতে ফুসফুসকে শক্তিশালী করবে এবং হাঁপানি হওয়ার কম সম্ভাবনা থাকবে।
ক্যান্সার প্রতিরোধঃ আপেলের মধ্যে রয়েছে ফাইটোকেমিক্যাল যা ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। এছাড়া এটা নিয়মিত খাওয়ার কারণে ফুসফুস কোলোরেক্টাল, পরিপাকতন্ত্র এবং স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে পারে। তাই আপনি নিয়মিত ভাবে এটা খেতে পারেন।
আপেল খাওয়ার অপকারিতা
আপেলের মধ্যে প্রচুর পুষ্টি থাকে এজন্য অনেক উপকার আছে, তবে অতিরিক্ত খেলে ক্ষতি হতে পারে। তাই আপেল খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানা প্রয়োজন। চলুন এ নিয়ে আলোচনা করা যাক।
হজমের সমস্যাঃ অতিরিক্ত আপেল খাওয়ার কারণে হজমের সমস্যা হতে পারে। কেননা এর মাঝে অধিক পরিমাণে ফাইবার থাকে, এজন্য অতিরিক্ত খাওয়ার কারণে গ্যাসের সমস্যা হতে পারে, পেট ফাঁপা, পেট ব্যথা করে, সর্বশেষ খাদ্য হজম করতে কষ্ট হয়।
তাই পুষ্টিবিদদের মতে দিনে ২০ থেকে ৩০ গ্রাম এর মত ফাইবার খাওয়া যেতে পারে। বিশেষ করে গর্ভবতীদের ক্ষেত্রে এর বেশি খেলে পেটের সমস্যা দেখা দিতে পারে এবং হজমের সমস্যা হতে পারে।
রক্তের শর্করার মাত্রা বাড়তে পারেঃ এর মধ্যে পটাশিয়াম, আয়রন, ফাইবার, কার্বোহাইড্রেট, ম্যাগনেসিয়াম থাকে যা গর্ভবতী মা যদি অতিরিক্ত খেয়ে ফেলে, তাহলে তার রক্তের শর্করা বেড়ে যাবে এতে গর্ভস্থ শিশুর ক্ষতি হবে।
এলার্জি সমস্যাঃ গবেষণায় দেখা গেছে আপেলে কীটনাশক উপাদান দেখা যায়। যা ডেফিনিলামাইন নামের রাসায়নিক যৌগ আছে। যা আপনার এলার্জির সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। এজন্য অতিরিক্ত খাওয়া যাবে না। বিশেষ করে গর্ভবতীদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত খেলে তাদের এলার্জি এবং চুলকানি সমস্যা বৃদ্ধি পেতে পারে।
ওজন কমাতে সাহায্য করেঃ অনেক গর্ভবতী মায়ের এই সময়ে অনেক ওজন বৃদ্ধি পেতে থাকে। এতে গর্ভস্থ শিশুর ক্ষতি হতে পারে। যে কারণে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য আপেল খাওয়া যেতে পারে। কেননা এর মধ্যে কার্বোহাইড্রেট খুবই কম থাকে এবং ফাইবার আছে যার কারণে ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করবে।
দাঁতের সমস্যাঃ এর মধ্যে যে পুষ্টি বা যে বিশেষ উপাদান গুলো রয়েছে তা যদি কোন গর্ভবতী মা পরিমাণে বেশি খায়। তাহলে দাঁতের ক্ষতি হতে পারে। তাই সুস্থ রাখার জন্য অতিরিক্ত খাওয়া যাবে না।
বমির সমস্যাঃ গর্ভবতী মায়েদের সাধারণত প্রথম দিকে এমনিতেই অনেক বমি হয়, এক্ষেত্রে ভারী খাবার খেলে আরো বেশি বমি হতে পারে। তাই প্রথম দিকে আপেল না খাওয়াই ভালো। কেননা এটা গ্যাস পেট ফাঁপা দেওয়া এমন কি বমি হতে পারে। তাই এর কারণে আপনি বিভিন্ন ধরনের রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। এজন্য প্রথম দিকে আপেল খাওয়া বিরত থাকবেন।
আপেল খাওয়ার নিয়ম
ইতোমধ্যে আমরা জেনেছি গর্ভাবস্থায় আপেল খেলে কি হয়? এখন জানবো এর নিয়ম সম্পর্কে।আপেলের মধ্যে প্রচুর পুষ্টি থাকে কিন্তু তাই বলে নিয়মের বাইরে খাওয়া যাবেনা। তাই এটা নিয়ম অনুযায়ী খেলে শরীরে পুষ্টি পাওয়া যাবে। চলুন, কিভাবে আপেল খাবেন সে সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
আপেল এক ধরনের অম্লীয় বৃদ্ধি করতে পারে। এর পিএইচ মাত্রা ৩.৫ যা লেবু ও অন্যান্য সাইট্রাস ফলের তুলনায় অম্লীয় কম থাকে। তাছাড়া কলা ও আঙ্গুরের চেয়ে আপেলে বেশি অ্যাসিডিটি থাকে। এই অবস্থায় গর্ভবতী মায়েদের অতিরিক্ত খাওয়া যাবে না। এই ফলটি অতিরিক্ত খাওয়া যাবে না, এছাড়াও এই আপেলের মধ্যে দুই ধরনের এসিড থাকে।
মালিক এসিড ও অ্যাসক্যারোবিক অ্যাসিড যাকে ভিটামিন সি বলা হয়ে থাকে। এই আপেল খাওয়ার আগে তাই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। আপনার যদি আগে থেকেই এসিডিটির সমস্যা থাকে, সেক্ষেত্রে খালি পেটে কখনো আপেল খাবেন না। যে কোন ভারী খাবার খাওয়ার অন্ততে দুই ঘণ্টা পরে আপেল খাওয়া যেতে পারে।
দুধ, দই এবং দুগ্ধ জাতীয় খাবার গুলো খাওয়ার সাথে আপেল খাবেন না। কারণ এর মধ্যে সাইট্রিক অ্যাসিড এবং দুধের মধ্যে ল্যাকটিক অ্যাসিড থাকার কারণে দুইটা একসাথে বিক্রিয়া করে আপনার বিপাকীয় বর্জ্য অর্থাৎ হজমের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
এজন্য গর্ভাবস্থায় এই দুটি খাবার একসাথে খাবেন না। এছাড়াও অনেকে আপেলের মিল্ক খেতে পছন্দ করে যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতি হতে পারে, হজমের সমস্যা হয়। গর্ভবতীরা আপেল থেকে খোসা ছাড়িয়ে খাওয়ার চেষ্টা করবেন, কারণ এতে কীটনাশক বা রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়ে থাকে তাই খোসা ছাড়িয়ে খেলে এই সমস্যা হবেন না।
বাচ্চাদের টিফিনে আপেল অনেকেই দিতে পারেন তবে ছোট ছোট টুকরা করে দেবেন। এর সাথে এক চিমটি লবণ দিয়ে গরম পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। যতক্ষণে আপেলের বাদামী রং না হয় ততক্ষণ ভিজিয়ে রাখবেন। এভাবে আপিলের পিএইচ লেভেল কমাতে হবে।
কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় যারা ভুগছেন তারা কাঁচা আপেল খাবেন না। কারণ এর মধ্যে এস্ট্রেনজেন্ট গুনাগুন পরিপাকতন্ত্র এবং কোলনকে শুষ্ক করে দেবে। যার কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা বৃদ্ধি পাবে। এক্ষেত্রে কোষ্ঠকাঠিন্যের যাদের সমস্যা রয়েছে। তারা আপেল সিদ্ধ করে খেতে পারেন।
আপেল খেলে কি ওজন কমে
অনেকে ওজন কমানোর জন্য বিভিন্ন ডায়েট করে থাকেন, তাই আপনার ডায়েটের তালিকায় আপেল রাখতে পারেন। অনেকেই জানতে চায় যে আপেল খেলে কি ওজন কমে? এ সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। চলুন নিম্ন বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক।
যাদের ওজন একবার বৃদ্ধি পেয়ে যায় তাদের ওজন কমাতে খুবই কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। এক্ষেত্রে তাদের বাড়তি মেদ কমানোর জন্য দৈনিক খাদ্য তালিকায় বিভিন্ন ধরনের ফলমূল যোগ করতে হয়। তার মাঝে আপনি আপেলটা রাখতে পারেন। কেননা এটি ওজন কমাতে অনেক সহযোগিতা করে।
পুষ্টিবিদরা বলেন দিনে একটা করে আপেল খেলে এতে আপনার পেটের চর্বি অনেকটাই কমে যাবে। কেননা এর ভিতরে ফাইবার থাকে যা চর্বি গলাতে সাহায্য করে। এছাড়াও আপেল কোলেস্টেরল কমাতে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এছাড়া পেটের সমস্যাগুলো দূর করতে সাহায্য করে। যার কারণে পেটের চর্বি কমাতে পারে। তাই নিয়মিতভাবে আপেল খাওয়া যেতে পারে।
অনেক গর্ভবতী মায়েদের সাধারণত পেটে চর্বি থাকে যার কারণে তাদের অনেক সময় সিজার করতে হয়। এতে চর্বিগুলো বের হওয়ার কারণে পেটে ইনফেকশন হতে পারে। তাই চর্বি কমানোর জন্য আপেল খাওয়া যেতে পারে।
কেননা আপেল খাওয়ার কারণে পেটে অনেকক্ষণ খিদা লাগে না। যার কারণে অন্য কোনো খাবারের প্রতি আগ্রহ হয় না, এতে বাড়তি ক্যালোরি ও চিনি জাতীয় খাবার গুলো খাওয়া থেকে অনেকটাই দূরে থাকা যায়। এতে ওজন অনেক কমে যাবে।
আপেলের মধ্যে পলিফেনাল অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকার কারণে যা ওজন কমাতে সাহায্য করে এবং নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। বাড়তি ওজন যাদের রয়েছে তারা ওজন কমানোর জন্য এই আপেল খেতে পারেন। অনেকে গর্ভবতীরা সাধারণত মিষ্টি জাতীয় খাবার খেতে পছন্দ করে কিন্তু মিষ্টি খাবার খেলে পেটের চর্বি হতে পারে।
তাই মিষ্টি জাতীয় খাবার পরিবর্তে আপেল খাওয়া যেতে পারে। যেহেতু প্রতিদিন মিষ্টি জাতীয় খাবার থেকে বিরত থাকতে হবে আবার অনেকে আপেল খেতে মন চায় না। সে ক্ষেত্রে তারা ওটমিল খেতে পারেন। এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে আঁশ থাকে যা আপনার ওজন কমাতে সাহায্য করবে।
আপেল খাওয়ার সঠিক সময়
সব সময় এই ফল খেলেই যে আপনার স্বাস্থ্য ভালো থাকবে তা কিন্তু নয় তাই সঠিক সময়ে আপেল খেতে হবে। তাই আপেল খাওয়ার সঠিক সময় সম্পর্কে আপনাকে জানতে হবে। চলুন কোন সময় আপেল খেলে আপনার স্বাস্থ্য ঠিক থাকবে সে সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
গবেষণায় দেখা গেছে গর্ভবতী মায়েরা যদি পরিমাণমতো আপেল খায় তাহলে রক্তের ক্ষতিকর কোলেস্টেল কমাতে সাহায্য করবে। এর মধ্যে শর্করা, চিনি, ফলিক এসিড, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন বি, লোহা, ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে।
যা আপনার রক্তচাপ ও শর্করা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করবে। তাছাড়া খাদ্য হজম এর ক্ষেত্রে যে ভালো ব্যাকটেরিয়া প্রয়োজন হয়, সেটাও উৎপাদন করতে পারবে। এতে খাদ্য হজম হবে, তবে আপেলের খোসা খাবেন না, এক্ষেত্রে গর্ভবতী মায়েদের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
আপনাকে জানতে চায় যে সকালে ও বিকালে আপেল খাওয়া যাবে কিনা। আবার অনেকে বলে আপেলের খাওয়ার ক্ষেত্রে কোন নির্দিষ্ট সময় নেই। অনেকে দুধ ও আপেল একসাথে খেতে পছন্দ করে।
এটা আসলে করা যাবে না এতে দুটি এসিড একসাথে বিক্রিয়া করে আপনার গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হতে পারে। কেননা আপেলের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে যার কারণে সকালবেলা খেলে ভালো হবে। সারাদিনে হজম হতে থাকবে এবং এর মাধ্যমে পুষ্টি পাওয়া যাবে।
এছাড়াও কিছু পুষ্টিবিদরা বলেছেন প্রত্যেকটা ফল খাওয়ার নির্দিষ্ট সময় থাকে। সেই সময় খেলে ভালো কাজ করে থাকে। তাই আপেল খাওয়ারও একটি নির্দিষ্ট সময় আছে। পুষ্টিবিজ্ঞানীদের মতে সকাল বেলা আপেল খাওয়া সবচাইতে ভালো। কারণ আপেলের খোসা আঁশ ও পেকটিন থাকে।
অনেকের অপর্যাপ্ত ঘুম, দেরিতে ঘুম ইত্যাদির কারণে হজমের সমস্যা হতে পারে। তাই সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে কিছু একটা ভারী খাবার খাওয়ার পরে আপেল খাওয়া যেতে পারে। এতে সকালবেলা আপেল খাওয়ার কারণে পেটের বিভিন্ন ধরনের সমস্যাগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করবে।
এতে পেকটিন, ল্যাকট্রিক এসিড থাকার কারণে ভালো ব্যাকটেরিয়া উৎপাদন করতে পারে। যা পরবর্তীতে পেটের বা হজমের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়াও পাচনতন্ত্রের ক্ষেত্রে ভালো কাজ করে থাকে। তাছাড়া পেকটিন খারাপ টক্সিন কমাতে পারে, ক্যান্সার সৃষ্টিকারী উপাদানকে নষ্ট করে দিতে পারে। বিকাল বেলায় আপেল খাওয়া যাবে না, কেননা এতে হজম এর সমস্যা দেখা দিতে পারে।
এছাড়াও রাতে আপেল খাওয়ার কারণে পেটে গ্যাস হতে পারে। আপেলের মধ্যে এসিড ও জৈব এসিড থাকে যা আপনার পাকস্থলির এসিডকে বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই সকালে ঘুম থেকে উঠে অথবা দুপুরে খাবারের পরে আগে নাস্তা হিসেবে আপেল খাওয়া যেতে পারে। এতে ভালো উপকার পাওয়া যাবে। এছাড়াও ওজন কমাতে ভালো রাখতে হজম এর ক্ষেত্রে ভালো কাজ করে থাকে।
শেষ কথাঃ গর্ভাবস্থায় আপেল খেলে কি হয়, উপকারিতা ও ঝুঁকি সম্পর্কে জানুন
পরিশেষে বলা যায় যে এর মধ্যে অনেক পুষ্টিগণ আছে যা আপনার শরীরের জন্য উপকার করবে। বিশেষ করে গর্ভবতীদের জন্য আপেল খাওয়া অত্যন্ত পুষ্টির চাহিদা পূরণ করবে। তাই তাই গর্ভাবস্থায় আপেল খেলে কি হয়? এ সম্পর্কে আর্টিকেলে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে, আশা করি উপকার হবে। পোস্টটি ভালো লাগলে আপনার বন্ধু-বান্ধবের নিকট শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ
এম আর মাহমুদ ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url