গর্ভাবস্থায় পেয়ারা খেলে কি হয় ও কতটা নিরাপদ জেনে নিন
অনেক গর্ভবতী মহিলারা সাধারণত পেয়ারা খেতে বেশি পছন্দ করে। তাই গর্ভাবস্থায় পেয়ারা খেলে কি হয়? এ সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। তাহলে শরীরে ক্ষতি হবে না। চলুন, পেয়ারা খাওয়ার কারণে কি উপকার হবে সে সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
অধিকাংশ গর্ভবতী নারীরা ফল খাওয়ার উপর আকর্ষণ বেশি থাকে, তাই আপনি দেশীয় ফল পেয়ারা খেতে পারেন। এতে অনেক পুষ্টি রয়েছে যা গর্ভস্থ শিশুর অনেক উপকার পাওয়া যাবে। তাই গর্ভাবস্থায় পেয়ারা খেলে কি হয়? সম্পর্কে জানতে আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
পোস্টসূচিপত্রঃগর্ভাবস্থায় পেয়ারা খেলে কি হয় ও কতটা নিরাপদ জেনে নিন
গর্ভাবস্থায় পেয়ারা খেলে কি হয়
গর্ভবতী মায়েরা এই সময় সাধারণত বেশি ফল খেয়ে থাকে, তাই গর্ভাবস্থায় পেয়ারা খেলে কি হয়? সম্পর্কে জানতে চায় ,তাই পেয়ারা খাওয়ার উপকারিতা আছে। চলুন , সে সম্পর্কে নিম্নে বিস্তারিত ভাবে জেনে নেওয়া যাক।
সাধারণত অনেক গর্ভবতী মায়েরা ফাস্টফুড জাতীয় খাবার বা বাহিরের খাবার খেতে বেশি পছন্দ করে। এই খাবার গুলো খাওয়ার কারণে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হতে পারে। তাই চিকিৎসকরা বলেন, একজন গর্ভবতী মহিলারা ফলমূল শাকসবজি বেশি খাবে।
পেয়ারা অত্যন্ত সুস্বাদু এবং স্বাস্থ্য উপযোগী ফল যা গর্ভবতীর জন্য উপকার করে থাকে। তাই এটা খেতে অনেকেই পছন্দ করে থাকে এবং দামও কম হয়, এটা সবাই কিনতে পারে।
এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণ পুষ্টি আছে যার কারণে অনেক চিকিৎসকরা গর্ভাবস্থায় পেয়ারা খেতে বলেন। এর মধ্যে সাধারণত ভিটামিন সি এবং খনিজ পদার্থ থাকে যা গর্ভাবস্থায় পেয়ারা খেলে অনেক উপকার করবে। চলুন এটা সম্পর্কে জানা যাক।
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করেঃ সাধারণত গর্ভাবস্থায় অনেকের উচ্চ রক্তচাপ হয়ে থাকে। এটি একটি জটিল অবস্থা সৃষ্টি করতে পারে, তাই গর্ভবতী মহিলারা যদি রোজ একটি করে পেয়ারা খেতে পারেন। তাহলে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ থাকবে। কেননা পেয়ারার মধ্যে প্রচুর পটাশিয়াম থাকে যা উচ্চ রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।
কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণঃ পেয়ারার মধ্যে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার থাকে, যার কারণে রক্তের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। কোলেস্টরের বৃদ্ধি পেলে কার্ডিওভাস্কুলার জনিত সমস্যা হতে পারে এজন্য কোলেস্টেরল বৃদ্ধি পেলে গর্ভাবস্থায় বিপদজনক হতে পারে। তাই এই কোলেস্টেরল কমানোর জন্য নিয়মিতভাবে পেয়ারা খেতে পারেন, তাহলে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ থাকবে।
অ্যানিমিয়া বা রক্তস্বল্পতাঃ গর্ভবতী মায়েদের সাধারনত রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়। কারণ তাদের আয়রনের অভাব দেখা দিতে পারে। আয়রনের অভাবজনিত রক্তস্বল্পতার কারণে শরীরে পর্যাপ্ত অক্সিজেন বহন করতে পারে না। এতে মা ও শিশু দুজনের ক্ষতি হতে পারে। তবে পেয়ারার মতো ভিটামিন সি জাতীয় খাবার যদি খেতে পারেন। তাহলে আয়রন রক্তস্বল্পতার সম্ভাবনা দূর করবে।
পেশি হাড় শক্ত করেঃ এর মধ্যে থাকে ম্যাগনেসিয়াম যা আপনার পেশি এবং স্নায়ুকে শক্তিশালী করতে পারে। এর কারণে মাথা ঠান্ডা থাকবে এবং শরীরে কোন অবসাদ হবে না।
ইনফেকশন প্রতিরোধঃ এর মধ্যে থাকে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দিতে পারে। এছাড়াও এর মধ্যে ভিটামিন এ, সি এবং ই থাকে। যা বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে কাজ করে।
গর্ভকালীন ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণঃ অনেক গর্ভবতী মহিলার সাধারণত গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস বেশি দেখা যায়। সে ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য প্রাকৃতিকগত খাবার পেয়ারা খেতে পারেন। কেননা এর মধ্যে যে পুষ্টি উপাদান আছে তা রক্তের শর্করার মাত্রা কমাতে পারবে। কেননা এর মধ্যে কার্বোহাইড্রেট এবং ফাইবার বেশি রয়েছে যা রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করবে।
হজম শক্তি বৃদ্ধি করেঃ পেয়ারার মধ্যে কিছু উপাদান আছে, যা হজম সমস্যা দূর করতে সাহায্য করবে। এছাড়াও এটা এসিডিটির সমস্যা দূর করতে পারে।
শিশুর বৃদ্ধিতেঃ পেয়ারার মধ্যে থাকে ফলিক এসিড, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন বি৯ যা শিশুর মস্তিষ্ক এবং হাড়ের সুস্থতা বিকাশ পাবে।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করেঃ গর্ভবতী মহিলাদের সাধারণত এই সময়ে বেশি কোষ্ঠকাঠিন্য এবং হেমরয়েড এর সমস্যা বেশি দেখা যায়। হরমোনের পরিবর্তনের কারণে এই ধরনের সমস্যা গুলো হয়। তবে আপনি যদি নিয়মিতভাবে খেতে পারেন তাহলে এই সমস্যা দূর হবে। কেননা এর মধ্যে ফাইবার থাকে যা কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা দূর করবে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করবেঃ এর মধ্যে থাকে ভিটামিন সি, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেবে। গর্ভবতী মহিলাদের এই সময়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে, এজন্য পেয়ারা খাওয়া যেতে পারে। কেননা মেটাবলিজম ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পেলে, শরীর সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পাবে।
রক্তের শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণঃ গর্ভাবস্থায় সাধারণত গর্ভবতী মায়েদের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হয়ে থাকে। বিশেষ করে বিভিন্ন পুষ্টি ও আয়রনের স্বল্পতা দেখা যায়। তাই এই সময় পেয়ারা খেতে পারেন কেননা এর মধ্যে আয়রন ও ফলিক এসিড থাকে, যা আপনার রক্তস্বল্পতা দূর করবে। এছাড়াও এর মধ্যে কার্বোহাইড্রেট ও ফাইবার থাকে যা আপনার শরীরের শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করবে।
ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়ঃ গর্ভবতী মহিলাদের সাধারণত স্তন ক্যান্সার বেশি হয়ে থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে ১ হাজার জনের মধ্যে প্রায় একজন গর্ভবতী মহিলা ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে থাকে। তবে নিরাময়ের জন্য বেশি করে পেয়ারা খাওয়া যেতে পারে। কেননা এর মধ্যে থাকে এন্টি অক্সিডেন্ট যা ক্যান্সারের বিরুদ্ধে মোকাবেলা করতে সাহায্য করে। এর মধ্যে ভিটামিন সি থাকে যা শরীরকে ভালো রাখতে পারে।
দৃষ্টি শক্তি ভালো করেঃ পেয়ারার মধ্যে থাকে ভিটামিন-এ, যা অন্ধুত্ব প্রতিরোধ করবে এবং পাশাপাশি গর্ভস্থ ভ্রনের ও মায়ের দৃষ্টি শক্তি ভালো রাখবে।
জীবাণু ও সংক্রমনের মোকাবেলাঃ এর মধ্যে থাকে ভিটামিন সি, ই এছাড়াও কেরোটিন আন্টি অক্সিডেন্ট এর মত আরো কিছু উপাদান থাকে। যা বিভিন্ন জীবাণু ও সংক্রমনের বিরুদ্ধে মোকাবেলা করে থাকে।
মস্তিষ্ক ঠান্ডা রাখেঃ এ সময় সাধারণত কার্টিসলের সম্ভাবনা দেখা যায়। এ ধরনের সমস্যা দূর করার জন্য ম্যাগনেসিয়ামের প্রয়োজন। তাই গর্ভবতীদের যদি এই ধরনের সমস্যা হয়, তাহলে পেয়ারা খাওয়া যেতে পারে। কেননা এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণ ম্যাগনেসিয়াম থাকে। যা স্নায়ু ও মস্তিষ্ককে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে।
ক্যান্সারের ঝুঁকি কম থাকেঃ গর্ভবতী মহিলাদের সাধারণত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে। তাই খুব সহজে বিভিন্ন ধরনের রোগ ব্যাধি তাদেরকে আক্রমণ করতে পারে। তবে যদি কোনো মহিলা ক্যান্সার আক্রমণের শিকার হয় সে ক্ষেত্রে নিরাময়ের জন্য পেয়ারা খাওয়া যেতে পারে।
কেননা এর মধ্যে এন্টি অক্সিডেন্ট থাকে যা ক্যান্সার মোকাবেলায় সাহায্য করবে। এছাড়াও এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণ লাইকোপিন ও ভিটামিন সি থাকে যা শরীরকে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দিবে।
শিশুর স্নায়ুতন্ত্র উন্নত করেঃ গর্ভস্থ শিশুর মেধা শক্তি বিকাশের জন্য ফলিক এসিড ও ভিটামিন বি-৯ প্রয়োজন। তাই নিয়মিত পেয়ারা খাওয়া যেতে পারে। কেননা এর মধ্যে ফলিক এসিড ভিটামিন বি সহ ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে। যা শিশুর মেধা শক্তি বিকাশ ঘটবে।
মস্তিষ্ক শান্ত রাখবেঃ গর্ভবতী মহিলার এই সময়ে মানসিক টেনশন বেশি থাকে, সেই ক্ষেত্রে তার শরীরে প্রভাব ফেলতে পারে। যার কারণে তার মানসিক টেনশন গর্ভস্থ শিশুর উপর প্রভাব ফেলে। সেজন্য তাকে মানসিকভাবে শান্ত থাকতে হবে।
এজন্য নিয়মিতভাবে পেয়ারা খাওয়া যেতে পারে। কারণ এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে। যা স্নায়ু ও পেশি শক্তিকে শক্তিশালী করতে পারে ও মস্তিষ্ক ভালো থাকে।
ঠান্ডা জনিত সমস্যা সমাধান করেঃ যাদের ঘন ঘন ঠান্ডা লাগে সর্দি কাশি লেগেই থাকে। তাদের ভিটামিন সি এর প্রয়োজন হয়। সে ক্ষেত্রে গর্ভবতী মায়েদের এই সময়ে ঠান্ডা লাগানো যাবে না। যদি তাদের সর্দি কাশি লেগে থাকে তাহলে তারা সব ওষুধ খেতে পারেন না। সে ক্ষেত্রে পেয়ারা খাওয়া যেতে পারে, এর কারণে ঠান্ডা অনেকটা কমে যাবে।
ত্বক ও চুল ভালো থাকবেঃ গর্ভবতী মহিলাদের এই সময় ত্বকের বিভিন্ন ধরনের ব্রণ বা ত্বকের সমস্যা হয়ে থাকে এবং চুলের ক্ষেত্রেও বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। সেজন্য প্রচুর পরিমাণে পানি খাওয়া লাগবে। এজন্য পিয়ারা খাওয়া যেতে পারে, কেননা এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে পানি আছে যা পানির চাহিদা পূরণ করে। এতে চুল ও ত্বক কে ভালো রাখবে।
পেয়ারা খাওয়ার অপকারিতা
পেয়ারার খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। তবে এর কিছু অপকারিতা আছে। তাই পেয়ারা খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। চলুন, নিম্নে বিস্তারিত ভাবে জেনে নেওয়া যাক।
এক গবেষণায় দেখা গেছে পেয়ারা গর্ভবতী নারীদের জন্য অনেক উপকার করে থাকে। তবে যদি অতিরিক্ত খেয়ে ফেলেন সে ক্ষেত্রে ক্ষতি হবে। এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার থাকে, যা হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে পারে।
এছাড়াও এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে পানি থাকে যা আপনার পানির চাহিদাকে পূরণ করতে পারবে কিন্তু এটা আমাদের আসলে কি ক্ষতি করতে পারে। সে সম্পর্কে জানা প্রয়োজন চলুন জেনে নেওয়া যাক।
আপনার যদি আগে থেকে ঠান্ডা লেগে থাকে সে ক্ষেত্রে পেয়ারা খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে। কেননা এটা ঠান্ডা ফল যা অতিরিক্ত খেলে আপনার সর্দি কাশির সমস্যাটা বেড়ে যাবে। তাই খুবই কম পরিমাণ খেতে হবে। বিশেষ করে গর্ভবতীদের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কেননা তাদের ঠান্ডা লাগলে গর্ভস্থ শিশুর নিউমোনিয়া হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
গর্ভবতী মায়েদের এই সময়ে প্রচুর পরিমাণে পেয়ারা খাওয়া যাবেনা, এর কারণে ফাইবার বৃদ্ধি পাবে। এতে হজমের সমস্যা দেখা দিবে। কেননা গর্ভবতী মহিলাদের হজমের সমস্যা এমনিতেই দেখা যায়। তাই অল্প পরিমাণ খাওয়া যাবে।
যাদের ডায়রিয়া বা আমাশয় সমস্যা রয়েছে তারা এই সময়ে এই ফল খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন। কেননা পেয়ারার মধ্যে পটাশিয়াম এবং ফাইবার থাকার কারণে ডায়রিয়া বা আমাশার সমস্যাটা বৃদ্ধি করতে পারে। তাই গর্ভবতী মহিলাদের যদি ডায়রিয়া বা আমাশয় এর সমস্যা হয়, এই ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
অনেকে পেয়ারা পাতার রস খেতে পছন্দ করে কিন্তু গর্ভাবস্থায় পেয়ারা পাতা খাওয়া যাবে না। কেননা এতে মাথাব্যথা এবং কিডনির সমস্যা দেখা দিতে পারে।
গর্ভাবস্থায় সাধারণত পেটে গ্যাস থাকে বেশি এবং পেট ফাঁপা, পেটব্যথা হয়ে থাকে। এই অবস্থায় পেয়ারা অতিরিক্ত খাওয়া যাবে না। কেননা এর মাঝে ফ্রুক্টোজ থাকে যার কারণে হজম করতে কষ্ট হবে। এতে পেট ব্যথা এবং ফুলে যেতে পারে। এছাড়া গ্যাস্ট্রিকের সমস্যাও দেখা যেতে পারে, তাই অতিরিক্ত পেয়ারা খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
দাঁতে ব্যথা হতে পারেঃ গর্ভবতী মহিলারা সাধারণত অনেকেই পাকা পেয়ারা খেয়ে থাকে কিন্তু এটা বেশি খাওয়া যাবে না। এর কারণে দাতের ব্যথা বা দাঁতের যে কোন ধরনের রোগ বৃদ্ধি পেতে পারে।
এর মধ্যে পটাশিয়াম থাকে যা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে কিন্তু কিডনির সমস্যা বৃদ্ধি পেতে পারে। তাই গর্ভাবস্থায় যেহেতু আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, সে ক্ষেত্রে যদি অতিরিক্ত পেয়ারা খেয়ে ফেলেন সে ক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপ এর সমস্যা দেখা দিতে পারে। এছাড়াও এর মধ্যে অক্সলেট থাকার কারণে আপনার কিডনিতে পাথর জমা হওয়ার সমস্যা দেখা দিতে পারে।
পেয়ারা খাওয়ার নিয়ম
পেয়ারা খেলে যেমন উপকার পাওয়া যায় কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী খেতে হবে। তাই পেয়ারা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আপনাকে জানতে হবে। চলুন, এ বিষয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা যাক।
পেয়ারার মধ্যে যথেষ্ট পরিমাণ পুষ্টি রয়েছে এবং এর মধ্যে গ্লুকোজের মাত্রা বেশি থাকে। সে ক্ষেত্রে এটা একটি ভারী খাবারের মধ্যেই পড়ে যায়। এজন্য আপনার ব্যায়াম করার পূর্বে এই পেয়ারা খাওয়া যেতে পারে। তাছাড়া রাত্রিতে কখনো পেয়ারা খাবেন না, এতে ঠান্ডা কাশি সমস্যা হতে পারে। এজন্য গর্ভবতী মহিলারা এ সময় পরিমাণ মতো খেতে হবে, তা না হলে ঠান্ডা সর্দি লাগতে পারে।
গর্ভবতীদের এই সময়ে অনেকের পেট ফাপা দিয়ে থাকে এবং পেটে গ্যাস, পেট ফুলে যায়। তাই তারা অল্প পরিমাণে খাবেন। কেননা এটা আপনার সমস্যাটা আরো বেশি হবে।
এর মাঝে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি এবং ফ্রুকটুস থাকে যা আপনার এই সমস্যারও বেড়ে যেতে পারে এবং অনেক গর্ভবতীর বড় ধরনের সমস্যা হতে পারে। এছাড়াও এর মধ্যে যে প্রাকৃতিক চিনি থাকে যা আপনার খাদ্য হজম করতে কষ্ট হবে।
যাদের আইবিএস সমস্যা আছে তারা অতিরিক্ত এই ফল খাবেন না। কারণ এতে খাদ্যের হজমের সমস্যা হতে পারে। এর মাঝে ফাইবার থাকে যা আপনার পেটের ব্যথা হতে পারে। তাই গর্ভবতীর যদি আইবিএস থাকে তাহলে এটা খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন।
এর মধ্যে শর্করা কম থাকলেও এর মধ্যে প্রাকৃতিক ভাবে চিনি বেশি থাকে, যা ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষতি করতে পারে সেই ক্ষেত্রে অল্প পরিমানে খাওয়া যেতে পারে।
ওজন কমাতে পেয়ারা
যারা ওজনের সমস্যায় ভুগছেন তারা প্রাকৃতিক ভাবে ওজন কমানোর জন্য পেয়ারা খেতে পারেন। তাই ওজন কমাতে পেয়ারা কতটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সে সম্পর্কে চলুন বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক।
ওজন কমানোর ক্ষেত্রে আমরা বিভিন্ন ধরনের ডায়েট করে থাকি এবং প্রাকৃতিক অনেক খাবার খেয়ে থাকি। তবে আপনি কিছুদিন পেয়ারা খেয়ে দেখতে পারেন আপনার অনেকটাই ওজন নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। কেননা এর মধ্যে থাকে প্রোটিন এবং ফাইবার যা খাদ্য হজম করতে অনেক সময় নেয়।
এর কারণে খিদা লাগে কম এবং যার কারণে অতিরিক্ত বাহিরের বা প্রসেসিং খাবার খাওয়ার প্রতি আগ্রহ থাকে না। এজন্য দেখা যায় স্বাভাবিকভাবে অনেকটাই ওজন কমে যেতে পারে। এর মধ্যে যে ফাইবার থাকে সেটা আপনার মেটাবলিজম নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করবে।
এই পেয়ারা খাওয়ার কারণে আপনার অতিরিক্ত মেদ ভুরি যদি থাকে তাহলে সেটা অনেকটাই কমে যাবে। কেননা এর মধ্যে ফাইবার থাকার কারণে আপনার এই ধরনের বাড়তি চর্বি বা ওজন কমে যাবে। কেননা পেয়ারার মধ্যে অনেক কম ক্যালোরি থাকে সেটা আপনার শরীরের ভিতরে বেশি ক্যালরিকে নষ্ট করে দিতে পারবে।
এছাড়াও পেয়ারার মধ্যে আরো অনেক ধরনের পুষ্টিগুণ রয়েছে যেমন ভিটামিন সি, লাইকোপেন, অ্যান্টি অক্সিডেন্ট যা আমাদের ত্বকের জন্য এবং বিভিন্ন ধরনের রোগের ক্ষেত্রেও কাজ করে থাকে। গর্ভবতী মায়েদের যাদের ওজন বেশি রয়েছে এতে গর্ভস্থ শিশুর ক্ষতি হতে পারে। তাই তাদের ওজন নিয়ন্ত্রণ করার জন্য পরিমাণমতো পেয়ারা খাওয়া যেতে পারে, এতে ওজন নিয়ন্ত্রণ থাকবে।
কাঁচা না পাকা পেয়ারার পুষ্টিগুণ বেশি
অনেকে প্রশ্ন করে থাকে যে পাকা না কাঁচা পেয়ারা খাবে, এতে কোনটা পুষ্টি বেশি তাই কাঁচা না পাকা পেয়ারার পুষ্টিগুণ বেশি এ সম্পর্কে জানলে আপনার উপকার হবে। চলুন বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
পেয়ারার মধ্যে ভিটামিন খনিজ প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায় এবং এটি একটি সুস্বাদু ফল দামেও খুবই কম। যার কারণে সবাই খেতে পারে কিন্তু অতিরিক্ত খাওয়া যাবে না এবং পাকা পেয়ারা বেশি খাওয়া যাবে না।
এর চেয়ে কাঁচা পেয়ারা খাওয়া সুস্বাদু এবং অনেক উপকার। কাঁচা বা পাকা পিয়ারা মধ্যে অবশ্যই কাঁচা পেয়ারা সবচাইতে বেশি উপকার করে থাকে। এ বিষয়ে গবেষকগণ গবেষণা করে দেখেছেন যে পাকা পেয়ারার চাইতে কাঁচা পেয়ারার সবচাইতে পুষ্টি বেশি।
কাঁচা পেয়ারার মধ্যে ট্যানিন এর পরিমাণ বেশি থাকে আর এটা শরীরে বিভিন্ন ধরনের উপকার করবে। অনেকে ডায়রিয়ার সমস্যা থেকেও কেটে উঠতে পারবে, পেট খারাপের সমস্যা থাকলেও এক টুকরা পেয়ারা খাওয়া যেতে পারে। এছাড়াও গর্ভবতী মহিলারা পাকা পেয়ারা খাওয়া থেকে বিরত থাকাই ভালো। কারণ এতে গর্ভস্থ শিশুর ক্ষতি হতে পারে।
সুগার থাকে বেশিঃ পাকা পেয়ারার মধ্যে প্রচুর পরিমাণ সুগার থাকে যা আপনার গ্লাইসেমিক ইনডেক্স অনেক বেশি হবে। এজন্য নিয়মিত যদি পাকা পেয়ারা খাওয়া হয়, সে ক্ষেত্রে সুগারের মাত্রা বৃদ্ধি পাবে। এজন্য এটা ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
তাই তারা এক টুকরো পরিমাণ কাঁচা পেয়ারা খেতে পারবেন। এর কারণে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স অনেকটাই কমবে। তাই নিয়মিতভাবে আপনি পাকা পেয়ারার চাইতে কাঁচা পেয়ারা খেতে পারেন। এতে ডায়াবেটিস অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ থাকবে।
ডায়াবেটিসে পেয়ারা খাওয়া যাবে কি
ডায়াবেটিস রোগীরা বিভিন্ন ধরনের ফল খেতে নিষেধ থাকে। তাদেরকে বিভিন্ন ধরনের ফল পরিমাণ মতো খেতে হয়। তাই ডায়াবেটিসে পেয়ারা খাওয়া যাবে কি? এ সম্পর্কে তাদের জানা প্রয়োজন। চলুন, কতটুকু পরিমাণে পেয়ারা খাওয়া যাবে সে সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
ডায়াবেটিস কে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কাঁচা পেয়ারা খেতে পারেন, এক্ষেত্রে ডায়াবেটিস টাইপ-২ যাদের রয়েছে। তারা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। এর মধ্যে হাইপোগ্লাইসামিক বা গ্লুকোজ কে কমাতে পারে এই ধরনের উপাদান থাকে।
যেটা আপনার রক্তের শর্করা এবং কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করবে। তাছাড়া এর মধ্যে এসকরবীক এসিড থাকে যা আপনার রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করবে।
এর মধ্যে এক ধরনের বিটা ক্যারোটিন, লাইকোপিন, গ্লুটিন, গামা ক্যারোটিন, ফ্লাভিন ইত্যাদি ধরনের পুষ্টি উপাদান থাকে। যা আপনার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করবে। ফাইবার, লোহা, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ইত্যাদি রয়েছে।
যা আপনার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে সহযোগিতা করবে। গবেষণায় দেখা গেছে যে উপরোক্ত এই উপাদানগুলো পেয়ারার মধ্যে থাকার কারণে ডায়াবেটিস এর ঝুঁকি অনেকটা কমে যায়।
আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে ডায়াবেটিস রোগীরা যদি পরিমাণ মতো এই ফল খেতে পারে, তাহলে তাদের রক্তের শর্করা মাত্রা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে থাকবে। সাথে কোলেস্টরেল নিয়ন্ত্রণ থাকবে। এতে হৃদরোগের সমস্যাটাও কমে যাবে।
এছাড়াও পেয়ারা এর মাঝে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের রোগব্যাধি সংক্রমণ করতে পারে না। এছাড়াও আন্টিঅক্সিডেন্ট শরীরে ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়াতে সাহায্য করে।
এক গবেষণায় দেখা গেছে ১০০ গ্রাম এর মধ্যে ২২ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে। যা ইনসুলিন নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করবে। এছাড়াও রক্তের শর্করার মাত্রা কমিয়ে দিবে, যার কারণে ডায়াবেটিস অনেকটাই কমে থাকবে। তাই ডায়াবেটিসের রোগীদের পরিমাণমতো পেয়ারা খাওয়া যেতে পারে।
গর্ভবতী মহিলাদের অনেকের গর্ভবতী হওয়ার পরে ডায়াবেটিস বৃদ্ধি পেতে পারে। সে ক্ষেত্রে পেয়ারা খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা থাকতে হবে, অল্প পরিমাণে খেলে আপনার ডায়াবেটিস অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
শেষ কথাঃ গর্ভাবস্থায় পেয়ারা খেলে কি হয় ও কতটা নিরাপদ জেনে নিন
পরিশেষে বলা যায় যে গর্ভবতী মায়েরা এ সময় প্রচুর পরিমাণে পুষ্টির প্রয়োজন হয়। যার কারণে বিভিন্ন ধরনের ফল খেতে বলেন চিকিৎসকরা। সেই ক্ষেত্রে প্রচুর পরিমাণে পেয়ারা বাজারে পাওয়া যায় এবং খুবই কম দাম। এর মাঝে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম আরও বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান থাকে।
যা আপনার গর্ভস্থ শিশুর অনেক উপকার করবে। এজন্য গর্ভাবস্থায় পেয়ারা খেলে কি হয় ও কতটা নিরাপদ এ সম্পর্কে আর্টিকেলে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে, আশা করি আপনার উপকার হবে। পোস্টটি ভালো লাগলে আপনার বন্ধু-বান্ধবের নিকট শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ
এম আর মাহমুদ ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url