মাগরিবের নামাজ কয় রাকাত ও কিভাবে পড়তে হয় জেনে নিন
মাগরিবের নামাজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তাই মাগরিবের নামাজ কয় রাকাত ও কিভাবে পড়তে হয়? এ সম্পর্কে একজন মুসলমান হিসেবে জানা খুবই জরুরী। চলুন, মাগরিবের নামাজ কত রাকাত ও কিভাবে পড়বেন সে সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
আমাদের মাঝে অনেকেই মাগরিবের নামাজ সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানেনা এবং মাগরিবের নামাজ পড়লে কত যে ফজিলত রয়েছে, সে সম্পর্কে জানেনা। তাই মাগরিবের নামাজ কয় রাকাত ও কিভাবে পড়তে হয়? এ সম্পর্কে জানতে আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
পোস্টসূচিপত্রঃমাগরিবের নামাজ কত রাকাত ও কিভাবে পড়বেন তা জেনে নিন
মাগরিবের নামাজ কয় রাকাত ও কিভাবে পড়তে হয়
অনেকে মাগরিবের নামাজ সম্পর্কে জানতে চায়, তাই মাগরিবের নামাজ কয় রাকাত ও কিভাবে পড়তে হয়? এ সম্পর্কে চলুন বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক। নিম্নে এ বিষয়ে আলোচনা করা হলো।
মাগরিবের নামাজ দিনের মধ্যে চতুর্থ ওয়াক্তে পড়তে হয় এবং খুবই কম সময়ের মধ্যেই পড়া লাগে। আযানের সাথে সাথে এই নামাজ আদায় করতে হয়। তাই এই নামাজের সময়ের প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। কেননা সূর্য যখন সম্পন্ন ডুবে যায় তখন এই নামাজ শুরু হয়।
এই নামাজ অতি তাড়াতাড়ি পড়তে হয়, বিলম্ব না পড়ে তাড়াতাড়ি আদায় করা মুস্তাহাব। সালমা রাঃ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন 'সূর্য ডুবে যাওয়ার সাথে সাথেই নবী করীম সাঃ মাগরিবের নামাযের ইমামতিতে দাঁড়িয়ে যেতেন এবং মাগরিবের নামাজ পড়াতেন।' বুখারী শরীফ হাদিসঃ ৫৬১
আরো একটি হাদিসে রাসুল সাঃ বলেছেন, 'আমার উম্মত ততদিন কল্যাণের মধ্যে থাকবে যতদিন তারা মাগরিবের নামাজ বিলম্ব না করে তাড়াতাড়ি পড়ে নেবে।' আবু দাউদ হাদিসঃ ৪১৮
উপরোক্ত হাদিসের আলোকে বলা যেতে পারে যে সূর্য ডোবার সাথে সাথে মাগরিবের নামাজ পড়তে হবে বিলম্ব করা যাবে না।
এই নামাজ কত রাকাতঃ এই নামাজ মূলত ফরজ সুন্নত সব মিলিয়ে ৭ রাকাত যেমন তা হল;
ফরজ তিন রাকাত পড়তে হয়
এরপর সুন্নত দুই রাকাত পড়তে হবে।
তারপরে দুই রাকাত নফল পড়তে হয়।
আবার পাঁচ রাকাতও পড়তে পারেন যেমন;
তিন রাকাত ফরজ পড়া লাগে এটা সবার জন্য বাধ্যতামূলক।
এরপরে দুই রাকাত সুন্নত যা রাসূল সাঃ পড়তেন। তাই এটা আমাদের পড়া সুন্নতে মুয়াক্কাদা।
মাগরিবের নামাজ যেভাবে আদায় করবেনঃ মাগরিবের নামাজ সঠিকভাবে আদায় করার জন্য কিছু নিয়ম রয়েছে। নিম্নে কিভাবে এই নামাজটা পড়বেন সে সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হলো।
তিন রাকাত ফরজ নামাজঃ মাগরিবের নামাজ প্রথমে তিন রাকাত ফরজ পড়তে হয়। প্রথম দুই রাকাত সূরা ফাতিহার সাথে অন্য একটি সূরা মিলিয়ে পড়তে হবে এবং দ্বিতীয় রাকাত শুধুমাত্র পড়ে রুকু সেজদা করে অন্যান্য নামাজের মতই তাশাহুদ, দরুদ শরীফ, দোয়া পড়ে সালাম ফিরে নামাজ শেষ করবেন।
দু রাকাত সুন্নতঃ ফরজ নামাজের পরে দুই রাকাত সুন্নত নামাজ পড়তে হবে। কেননা রাসুল সাঃ এই দুই রাকাত সুন্নত নিয়মিত পড়েছেন। তাই মুসলমান হিসেবে এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং সুন্নত হিসেবে পড়তে হবে।
নামাজ পড়ার নিয়ম হল অন্যান্য নামাজের মতই সুরা ফাতেহার সাথে অন্যান্য সূরা মিলিয়ে দুই রাকাত আদায় করতে হবে এবং পরিশেষে তাশাহুদ, দুরুদ শরীফ, দোয়া মাসুরা পড়ে সালাম ফিরে শেষ করতে হবে।
মাগরিবের দুই রাকাত সুন্নত এর ফজিলতঃ কোরআন ও হাদিসের আলোকে বলা হয়ে থাকে যে, সকাল সন্ধ্যা এবাদতের ক্ষেত্রে আল্লাহতালা অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছেন এবং এর ফজিলত বেশি। এছাড়া উপরোক্ত হাদিস থেকে বোঝা যায় যে, মাগরিবের নামাজের পরে দুই রাকাত সুন্নত অত্যন্ত বরকতময় এর কথা বলা হয়েছে।
কেননা রাসূল সঃ এই দুই রাকাত সুন্নত পড়েছেন যা আমাদের মুসলমানদের উপর এই দুই রাকাত সুন্নত জরুরী। তাই এই দুই রাকাত সুন্নত খুবই গুরুত্বপূর্ণ যেহেতু হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে এবং এর ফজিলত অনেক রয়েছে। 'যে ব্যক্তি মাগরিবের পরে এই দুই রাকাত সুন্নত নামাজ পড়ল সে যেন জান্নাতের একটি ঘর নির্মাণ করল।' তিরমিজীর শরীফ হাদিসঃ ৬৩৬২
মাগরিবের নামাজের সময় কতক্ষণ থাকে
অনেকেই জানে না যে মাগরিবের নামাজের সময় কতক্ষণ থাকে? এ সম্পর্কে আমাদের জানা প্রয়োজন কেননা এর জন্য অনেকে জামাতে নামাজ পড়তে পারে না। চলুন এ বিষয়ে জেনে নেওয়া যাক।
এই নামাজ প্রায় ১ ঘন্টা ৫-১০ মিনিটের মতো সময় পাবেন। এটা বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। তবে এই সময় দেরিতে নামাজ পড়া যাবে না। এই নামাজ তাড়াতাড়ি আদায় করা সুন্নত এবং গ্রহণযোগ্য হবে। সূর্যাস্তর পরেই কোনরকম দেরি করবেন না, মাগরিবের নামাজ সাথে সাথেই এই নামাজ পড়ে নিতে হবে। তাই আগে থেকেই আপনাকে প্রস্তুতি নিতে হবে।
এই নামাজ সাধারণত সূর্য ডোবার পরেই শুরু হবে যার কারণে দেরি না করে আগে থেকে প্রস্তুত নিতে হবে। যদি কোন কারণে আপনি পড়তে না পারেন, সে ক্ষেত্রে সূর্য অস্তর পরেও পড়া যাবে। তবে সঙ্গে সঙ্গে পড়াটাই সবচাইতে ভালো এবং আল্লাহ তা'আলা পছন্দ করে থাকেন। কেননা রাসূলুল্লাহ সাঃ মাগরিবের নামাজ অতি তাড়াতাড়ি পড়েছেন।
মাগরিবের নামাজে যেসব সওয়াব
মাগরিবের নামাজ এর ক্ষেত্রে কোরআন ও হাদিস অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছেন। তাই মাগরিবের নামাজে যেসব সওয়াব পাওয়া যায়, সে সম্পর্কে চলুন নিম্নে বিস্তারিত ভাবে জেনে নেওয়া যাক।
প্রত্যেক মুসলমান প্রতিদিন নামাজ পড়ে থাকে তার মধ্যে মাগরিবের নামাজটা গুরুত্বপূর্ণ রয়েছে। সূর্য যখন ডুবে যায় তখন মাগরিবের নামাজ শুরু হয়। মাগরিবের নামাজ পড়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে এই নামাজ দেরিতে পড়া যায় না। আজানের সাথে সাথেই পড়ে নিতে হয়।
আল্লাহ তা'লা বলেছেন 'আপনি আপনার প্রতিপালককে স্মরণ করুন আর সকাল সন্ধ্যা তার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করবেন।' সূরা আল ইমরান আয়াত নাম্বার ৪১
তাফসীর কারক গণ এই আয়াতের ব্যাখ্যা করেছেন যে আল্লাহ তাআলার পবিত্রতা এবং মহিমা প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এজন্য নামাজ পড়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই আয়াত দ্বারা ফজর ও মাগরিবের নামাজের প্রতি ইঙ্গিত দিয়েছেন। তাই এই দুই নামাজের দুটি পরিবর্তন আছে একটি হল দিন শুরু হয় আরেকটি রাত শুরু হয়।
হযরত আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণনা করা হয়েছে রাসূল সাঃ বলেছেন, 'যে ব্যক্তি সকাল সন্ধ্যা মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়লো যতবার সে আল্লাহতালাকে স্মরণ করলো, ততবার জান্নাতের মধ্যে সে মেহমানদারীর উপকরণ পেল।' বুখারী শরীফঃ ৬২২
এ বর্ণিত হাদিস দ্বারা বোঝানো হয়েছে যে সকাল সন্ধ্যা নামাজটা খুবই গুরুত্ব দেয়া হয়েছে এবং এর ফজিলত সম্পর্কে বলা হয়েছে। এই হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে মাগরিবের নামাজ হলো বরকতময় ও ফজিলত সম্পর্কে বলা হয়েছে।
রাসূল সাঃ বলেছেন, 'তোমাদের কারো বাড়ির সামনে যদি একটি নদী থাকে এবং সেই নদীতে দৈনিক পাঁচবার যদি গোসল করা হয়, তাহলে তার শরীরকে আর কোন ময়লা থাকবে? সাহাবায়ে কেরাম বললেন যে না, তার শরীরে কোন ময়লা থাকার কথা না অথবা তিনি বললেন এটাই হল পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের গুনাগুন এবং আল্লাহ তা'আলা এই বান্দার গুনাহ মাফ করে দিবেন। মুসলিম শরীফ হাদিসঃ ৬৬৭
পরকালের সাফল্য চাবিকাঠি বলা হয়ে থাকে নামাজকে। পরকালে যদি আপনি জান্নাত পেতে চান, তাহলে এই দুনিয়াতে নামাজ পড়তে হবে। নামাজী ব্যক্তিরা পরকালে জান্নাত পাবে। এজন্য পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, 'নিশ্চয় সফলতা অর্জন করছে সেই মুমিনগণ যারা তাদের নামাজের প্রতি আন্তরিকতা ছিল।' সূরা মুমিনুল আয়াত নাম্বার ১-২
এই নামাজ সম্পর্কে রাসূল সাঃ বলেছেন, 'যে ব্যক্তি মাগরিবের নামাজের পর ৬ রাকাত নামাজ পড়লো সে ১২ বছরের নফল ইবাদতের সমান সওয়াব পেল।' তিরমিজির শরীফ ৪৩৭
হাদিস এর ভাষায় যে ছয় রাকাতের কথা বলা হয়েছে তা মূলত আওয়াবীনের নামাজ সম্পর্কে। এটা হল ফরজ নামাজের পর সুন্নত সহ ছয় রাকাত নামাজ পড়লে আওয়াবীন নামাজ হিসেবে গণ্য করা হয়ে থাকে। আবার আরো একটি হাদিসে বর্ণনা আছে যে সুন্নতের পরে ছয় রাকাত পড়তে হবে। সুতরাং যে কোন একটা হাদিস আমল করলেই আল্লাহ তায়ালা নেক আমল হিসেবে কবুল করবেন।
মাগরিবের জামাতে যে কোন রাকাত ছুটে গেলে বাকি নামাজ পড়ার নিয়ম
মাগরিবের জামাত তাড়াতাড়ি পড়ার কারণে হয়তো দুই এক রাকাত নাও পেতে পারেন। তাই মাগরিবের জামাতে যে কোন রাকাত ছুটে গেলে বাকি নামাজ পড়ার নিয়ম সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। তাহলে বাকি নামাজ পড়তে অসুবিধা হবে না। চলুন, জেনে নেওয়া যাক।
যারা নতুন নামাজ পড়ে থাকেন তারা মাগরিবের ফরজ নামাজ যদি এক রাকাত ছুটে যায় সে ক্ষেত্রে কিভাবে পড়বে তা বুঝতে পারে না। তাই অনেকে দুই রাকাত ছুটে গেলে কেমনে পড়বে সেটা হয়তো জানে না। এ বিষয়ে জানা খুবই প্রয়োজন, তা না হলে ভুল হতে পারে। চলুন, জেনে নেওয়া যাক।
যদি কারো মাগরিবের নামাজ দুই রাকাত ছুটে যায় সে ক্ষেত্রে যা করবেন যা করবেন; যেহেতু মাগরিবের নামাজ তিন রাকাত যদি আপনি এক রাকাত পান তাহলে এই এক রাকাতের সাথে আরো এক রাকাত পড়ে মিলাবেন।
এরপরে তাশাহুদ পড়ে প্রথম বৈঠক শেষ করে আবার দাঁড়িয়ে যাবেন। বাকি এক রাকাত পড়ে দ্বিতীয় বৈঠকে তাশাহুদ, দরুদ শরীফ দোয়া পড়ে সালাম ফিরাবেন।
আর যদি এক রাকাত ছুটে যায় সে ক্ষেত্রে আপনি ইমামের সাথে দুই রাকাত পড়েছেন। ইমামের সঙ্গে শেষ বৈঠকে তাশাহুদ পড়ে বসে থাকবেন। এর পরে ইমাম উভয় দিকে যখন সালাম ফিরাবে তখন আপনি দাঁড়িয়ে যাবেন। সালাম ফেরানো আপনার প্রয়োজন নেই।
এরপরে যে রাকাত ছুটে গেছে সেটা পড়ে নিবেন। এক্ষেত্রে প্রথম রাকাত যদি ছুটে যায়, সে ক্ষেত্রে সানা,সুরা ফাতেহা এবং অন্য আরেকটি সূরা মিলিয়ে পড়তে হবে। তারপরে আপনি দ্বিতীয় বৈঠকে বসে রুকু ও সেজদা করে শেষ বৈঠক শেষ করবেন।
শেষ কথাঃ মাগরিবের নামাজ কয় রাকাত ও কিভাবে পড়তে হয় জেনে নিন
পরিশেষে বলা যায় যে মাগরিবের নামাজ কত রাকাত পড়তে হয় এবং কিভাবে পড়তে হয় এটা আসলে আমাদের মুসলিম হিসেবে জানা প্রয়োজন। তাই এ বিষয়ে হয়তো অনেকেই জানেন না তার জন্য মাগরিবের নামাজ কয় রাকাত ও কিভাবে পড়তে হয় ? এ সম্পর্কে আর্টিকেলে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে, আশা করি আপনার বুঝতে কোন সমস্যা হবে না। পোস্টটি ভালো লাগলে আপনার বন্ধু-বান্ধবের নিকট শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ
এম আর মাহমুদ ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url