রক্ত দিলে কি উপকার হয় ও পরবর্তীতে যা করণীয়

কাউকে যদি রক্ত দেন সে ক্ষেত্রে আপনি একটি মহৎ কাজ করলেন। তাই রক্ত দিলে কি উপকার হয়? আসলে রক্ত দিলে আমাদের শরীরের বিভিন্ন ধরনের উপকার হয়। চলুন, রক্ত দিলে আমাদের কি উপকার হবে সে সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
ছবি
আপনি যখন কাউকে রক্ত দিতে যাবেন সেক্ষেত্রে আপনার শরীরের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়ে থাকে। এটা আপনার বিনামূল্যে রক্তের সকল কিছু বিশ্লেষণ হয়ে গেল। তাই রক্ত দিলে কি উপকার হয়? সম্পর্কে জানতে আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।

পোস্টসূচিপত্রঃরক্ত দিলে কি উপকার হয় ও পরবর্তীতে যা করণীয়

রক্ত দিলে কি উপকার হয়

রক্তদান করা একটি ভালো কাজ, এটা আমাদের শরীরের জন্য উপকার। তাই রক্ত দিলে কি উপকার হয়? সম্পর্কে যদি আপনি জানতে পারেন, তাহলে নিশ্চয়ই রক্ত দিতে দ্বিধাবোধ করবেন না। চলুন রক্ত দিলে আমাদের শরীরের যে ধরনের উপকার হবে সে সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

রক্ত দিলে আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ভালো আছে ঠিক আছে কিনা সে সম্পর্কে জানতে পারি এছাড়াও যাকে রক্ত দেওয়া হয় তার জীবন রক্ষার্থে উপকার হয়ে থাকে এছাড়াও আমাদের শরীরের আবার নতুন করে রক্ত জমা হতে থাকে এতে দুজনেরই উপকার রয়েছে চলুন জেনে নেওয়া যাক

মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখেঃ রক্ত দিলে যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো একজনের জীবন রক্ষা হল আপনি যখন একজন মানুষকে উপকার করলেন রক্ত দিয়ে সে ক্ষেত্রে আপনার মনের মধ্যে প্রশান্তি সৃষ্টি হবে এটা এক ধরনের নিঃস্বার্থ ভালোবাসা যার বিনিময়ে কেউ কখনো কাউকে টাকা পয়সা দিতে হবে না এটা একটি মানসিক ভাবে যারা সন্তুষ্ট থাকে এবং অন্যকে উপকার করতে চায় তার এই রক্ত দিয়ে থাকে তাছাড়া কাউকে যদি রক্ত দেওয়া হয় তাহলে আপনার মানসিক চাপ অনেকটাই কমে যাবে তার সাথে আপনার এক ধরনের আত্মীয়তার সম্পর্ক সৃষ্টি করে এটা আপনার মানসিক প্রশান্তি পাবেন

মিনি স্বাস্থ্য স্ক্যানিংঃ আপনি যখন কাউকে রক্ত দিতে যাবেন সেক্ষেত্রে অবশ্যই আপনার শারীরিক পরীক্ষা করা হবে এবং স্ক্যানিং করা হবে ক্লিনিং করা হবে স্ক্রীনিং করা হবে এতে আপনার শরীরের রক্তচাপ তাপমাত্রা হিমোগ্লোবিন এছাড়া বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয় এটা একজন চিকিৎসক আপনার সকল কিছু জেনে স্বাস্থ্য মূল্যায়ন করে তারপরে রক্ত দেওয়ার জন্য অনুমতি দিয়ে থাকে যাতে করে যাকে আপনি যেন যাকে রক্ত দিচ্ছেন তার যেন শরীরের ক্ষতি না হয় এবং অন্য কোন রোগ আক্রমণ করতে না পারে

বিনামূল্যে রক্ত বিশ্লেষণঃ আপনি যখন একজন মানুষকে বিনা মূল্যে রক্ত দিবেন সে ক্ষেত্রে লোকটি অনেক খুশি হবে এই ক্ষেত্রে আপনার বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা করা হয়ে থাকে যেমন এইচআইভি হেপাটাইটিস বি ছি ঢাকা হেপাটাইটিস সি এ ধরনের রোগ যেন আক্রমণ করতে না পারে অথবা সিফিলিস এই সকল রোগগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয় যাতে করে যাকে রক্ত দেবেন তার ভিতরে এই ধরনের রোগ প্রবেশ করতে না পারে তাহলে আপনার বিনামূল্যে রক্তকে বিভিন্নভাবে বিশ্লেষণ করা হয়ে গেল এবং আপনার শরীরের এক ধরনের বিনামূল্যে পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয়ে গেল এই পরীক্ষাগুলো আপনি যদি করতে যেতেন তাহলে আপনার অনেক টাকা খরচ হতো

হৃদরোগ প্রতিরোধঃ আপনি যদি নিয়মিত কাউকে রক্ত দেন তার রক্ত দিতে থাকেন সেক্ষেত্রে আপনার আয়রনের মাত্রা কমে যেতে পারে এটা আপনার হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি থেকে অনেকটাই কম হবে সহযোগিতা করবে এটা আপনার কার্ডিও ভাসকুলার সিস্টেমের ক্ষতি থেকে রক্ষা করবে গবেষণায় দেখা গেছে যে যিনি রক্ত দিয়ে থাকেন তাদের হৃদরোগের বিরুদ্ধে অনেকটাই সংগ্রাম করে থাকে তাছাড়া হৃদরোগের ঝুকি কম থাকে এজন্য আপনার এ বিষয়ে অনেকেই উচ্চ গবেষণা করেছেন

ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়ঃ ক্যান্সার ইন্সটিটিউট থেকে গবেষণায় দেখা গেছে যে রক্তে আয়রনের মাত্রা কমে গেলে ক্যান্সারের ঝুঁকি সম্ভাবনা হয় এক্ষেত্রে গবেষকরা বলেছেন আর যে আয়রন রিডাকশন থেরাপি আর করার কারণে তাদের কন্ট্রোল গ্রুপের তুলনায় নতুন করে আর ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি থাকে না রক্তদানকারী শরীরে আয়রন সঞ্চয় কমিয়ে দিতে পারে এটা আপনার আয়রনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ যদি রাখতে পারেন তাহলে ক্যান্সার ঝুকি কম হবে

আপনি যদি এক বছরে ৩ বার রক্ত দেন সে ক্ষেত্রে আপনার শরীর থেকে লোহিত রক্ত কণিকা তৈরি হবে এবং এতে আপনার রক্তস্বল্পতা দূর হবে সেটা আপনার মন মস্তিষ্ক এবং অস্থিমজ্জা ভালো থাকবে

রক্তের কোলেস্টেরল যদি ঠিক থাকতে চান সেক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবং হৃদরোগ হার্টের সমস্যা ও ঝুঁকি কমানোর জন্য রক্ত দান করা প্রয়োজন

আপনি যদি নিয়মিত ভাবে রক্ত দিতে পারেন সে ক্ষেত্রে আপনার শরীরের হেপাটাইটিস বি জন্ডিস ম্যালেরিয়া সিফিলিস এইচআইভি এই ধরনের যত ধরনের রোগ রয়েছে সেগুলো সম্পর্কেও জানা যাবে

আপনি নিয়মিত রক্ত দেওয়ার কারণে আপনার শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দিবে

রক্ত দিলে আপনার শরীরে ক্যালোরি খরচ হবে সেটা ওজন কমানোর ক্ষেত্রে এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে ভালো কাজ করবে এছাড়া আপনার শরীর সুস্থ এবং ভারসাম্য ঠিক রাখবে

আপনি যখন কাউকে রক্ত দিয়ে যাবেন সেক্ষেত্রে আপনাকে কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা দেওয়া হবে এটা আপনার শরীরের ভিতরে বিভিন্ন ধরনের জীবাণু আছে কিনা সেটা পরীক্ষা করার মাধ্যমে জানতে পারবেন তাহলেই আপনার রক্তে আর কোন রোগব্যাধি না থাকলে আপনি সুস্থ থাকবেন

আপনার যদি রক্তে আয়রন বেশি জমা থাকার সম্ভাবনা থাকে সে ক্ষেত্রে রক্ত দিয়ে খুব কমিয়ে নিতে পারেন এবং নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন এতে শরীর ভালো থাকবে

আপনার শরীরের রক্তের গ্রুপ কি সেটা যদি আপনি না জানেন সে ক্ষেত্রে রক্ত দিতে গেলে আপনার অবশ্যই এটা গ্রুপিং করে নেবে তাহলে আপনি জানতে পারবেন এতে আপনার টাও জানা হয়ে গেল

আপনি যদি কোন সংস্থার মাধ্যমে রক্ত দিয়ে থাকেন সেক্ষেত্রে আপনাকে একটি ডলার কার্ড দেবে যার মাধ্যমে আপনি বিভিন্ন জায়গায় আপনি নিজের জন্য হলেও বা পরিবারের জন্য হলেও সেই সংস্থা থেকে সারা জীবন রক্ত নিতে পারবেন

আমাদের ধর্মীয় ক্ষেত্রে রক্ত কাউকে যদি দেওয়া হয় সে ক্ষেত্রে একটি ভালো কাজ বা পুণ্যের কাজ করা হলো কেন একজন মানুষকে জীবন রক্ষার্থে সহযোগিতা করা একটা মহৎ কাজ

এছাড়াও এটা একটি মানবিক সামাজিক এবং ধর্মীয় দিক দিয়ে সকল কিছু বিবেচনা করলে আপনি একটি সৎ এবং মহৎ কাজ করেছেন যা সারা জীবন আপনাকে রক্ত গ্রহণকারী মনে রাখবে এবং তার কাছে আপনার কাছে সে সারা জীবন ঋণী থাকবেন এবং আপনার জন্য দোয়া করবেন এতে আনন্দের চেয়ে বড় আর আনন্দের বিষয় কি হতে পারে

রক্ত দেওয়ার পর যা করণীয়ঃ আপনি যখন কাউকে রক্ত দিবেন সেই ক্ষেত্রে কিছু কাজ রয়েছে এজন্য রক্ত দেয়ার পরে যে কাজগুলো আপনাকে করতে হবে এতে আপনি সুস্থ থাকবেন এবং ভালো থাকবেন চলুন সেই বিষয়গুলো সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক

বিশ্রাম নিনঃ রক্ত দেয়ার পরে অবশ্যই কিছুক্ষণ আপনাকে বিশ্রাম নিতে হবে সাথে সাথেই আপনি বেরিয়ে চলে যাবেন না এবং গাড়ি চালানো ঠিক হবে না এতে আপনার অসুস্থ হয়ে পড়বেন এবং দুর্ঘটনা ঘটতে পারে

প্রচুর পানি পান করুনঃ রক্ত দেওয়ার কারণে শরীর থেকে আপনার অনেক পানি কমে যায় এজন্য 50 ভাগ পানি রক্ত রস থাকার কারণে পানি প্রয়োজন হবে 90 ভাগ আসলে পানি থাকে এজন্য রক্ত দেওয়ার পর অবশ্যই পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি খেতে হবে অর্থাৎ যত টুকু রক্ত দিয়েছেন তার কম করে হলেও অর্ধেক পানি খেতে হবে এজন্য আপনি অবশ্যই রক্ত দেওয়ার পরে কমপক্ষে 500 মিলি লিটার পানি খাওয়া লাগবে আপনার যে পানিটুকু অপচয় হবে যে পানিটুকু চলে গেছে তাও পূরণ হবে

প্রোটিন ও শর্করা জাতীয় খাবারঃ এই সময়ে আপনাকে প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন শর্করা জাতীয় খাবার গুলো খেতে হবে এবং তরল জাতীয় খাবার গুলো কোথায় বিশেষ করে গ্লুকোজ শরবত বুঝ এ জাতীয় খাবার গুলো বেশি করে খাবেন

রক্ত দেওয়ার পর অবশ্যই আপনি ভারী পরিশ্রম করবেন না এবং শারীরিক ব্যায়াম করা যাবে না কিছুটা শরীর দুর্বল রাখতে পারে এবং মাথা ব্যাথা করতে পারে আপনার মাথা ঘুরাতে পারে এইজন্য এইসব ভারী কাজ করা এবং ব্যায়াম করা থেকে বিরত থাকতে হবে তা না হলে আপনি মাথা ঘুরাবে দুর্বলতা এমনকি অজ্ঞান হয়ে যেতে পারেন তাই 24 ঘন্টার মধ্যে শারীরিক শক্তির কাজগুলো না করাই ভালো

ধূমপান করবেন নাঃ রক্ত দেওয়ার পর সাধারণত শরীরের তরল এবং অক্সিজেনের পরিমাণ অনেকটাই কমে যায় যার কারণে ধূমপান এবং নেশা জাতীয় কোন খাবার খাওয়া যাবে না এতে রক্তচাপ সমস্যা এবং শরীর দুর্বল লাগতে পারে এজন্য রক্ত দেওয়ার আগে এবং এরপরে ২৪ ঘন্টার মধ্যে এই ধরনের ধূমপান করা যাবে না

রক্ত দেওয়ার পর কখনোই খালি পেটে থাকা ঠিক হবে না পর্যাপ্ত পরিমাণ জাতীয় খাবারের পানি খাওয়া লাগতে পারে খেতে হবে এজন্য খালি পেটে থাকলে আপনার শরীরে আরও দুর্বল রাখতে পারে সেই পানি যুক্ত খাবার গুলো খাবেন তাহলে আপনার ডি হাইড্রেশন মাথা ঘোরা এবং ক্লান্তি লাগবেনা এই সকল সমস্যা অপুষ্টিকর খাবার খেতে পারেন

জ্ঞান হারিয়ে ফেললেঃ রক্ত দেওয়ার পরে অনেকেই অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে আর শরীর দুর্বল হওয়ার কারণে অথবা পেশার কমে যাওয়ার কারণে এজন্য কেউ যদি এই ধরনের সমস্যা হয় সে ক্ষেত্রে অবশ্যই উঠে দাঁড়ানো এবং হাঁটতে দ্রুত হাঁটতে থাকেন তাহলে রক্তচাপ নেমে যাবে না শরীরটা হালকা মনে হবে এতে অজ্ঞান হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে

এজন্য আপনাকে অবশ্যই কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিতে হবে এবং বিছানায় শুয়ে থাকা লাগতে পারে খেয়াল করুন মাথার নিচে যেন কোন বালিশ না থাকে এছাড়া মাথাটাকে একটু হার্টের লেভেল বরাবর রাখার চেষ্টা করবেন যাতে আপনার ব্রেইনটে রক্ত চলাচল করতে পারেন এছাড়াও কিছুক্ষণ নামাজ ঝুলিয়ে রাখা জানার উপর থেকে ঝুলিয়ে রাখতে পারেন

রক্তদানের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াঃ অনেকেই এই রক্ত দিতে ভয় পেয়ে থাকে আবার অনেকে মনে করে স্বার্থের প্রতি হতে পারে শরীর দুর্বল রাখতে পারে বিভিন্ন রোগব্যাধি হতে পারে আবার অনেকে মনে করে যে রক্তচাপ কমে যাবে এছাড়াও সামাজিক এবং ধর্মীয় কিছু কুসংস্কার থাকার কারণে রক্ত দিতে চায় না কিন্তু 

এতে অনেক উপকারী রয়েছে কেউ ধরনের দোহাই দিয়ে রক্ত দিতে নিষিদ্ধ করে থাকে যা কখনোই ঠিক নয় অবশ্যই যদি কোন মুসলিম ব্যক্তি রক্তের প্রয়োজন হয় সে ক্ষেত্রে হিন্দু লোকও দিতে পারবে এতে কোন সমস্যা নাই এই জন্য ধর্মীয় ভিত্তিতে এই ধরনের কোন সমস্যা দেখা যেন না যায় প্রতিক্রিয়া হিসেবে তেমন কিছু দেখা যায়নি তবে এগুলো সামাজিক এবং ধর্মীয় কিছু প্রতিক্রিয়ার সমস্যা আপনি অনুভব করতে পারেন

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এম আর মাহমুদ ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪